Thursday, 12 August 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। রমেশ চন্দ্র দত্ত। ১৩.০৮.২০২১. VOL -463. The blogger in literature e-magazine.


 রমেশ চন্দ্র দত্ত 

"Companion of the Order of the Indian Empire " সম্মাননায় সম্মানিত যিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী , সুসাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক চিন্তাবিদ এবং পন্ডিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। 

১৩ আগস্ট ১৮৪৮ সালে বিশিষ্ট বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পরিবারের প্রায় সবাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত৷ তাঁর বাবা ছিলেন ঈসাম চন্দ্র দত্ত এবং মা ছিলেন ঠাকামাণী৷ তাঁর বাবা ঈসাম চন্দ্র তৎকালীন বাংলার ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন৷ অফিস চলাকালীন সময়ে রমেশ চন্দ্র দত্ত তার সঙ্গে থাকতেন৷ রমেশ চন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী মথুরানাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশুনা করেছেন। এছাড়াও তিনি ডেভিড হেয়ার প্রতিষ্ঠিত হেয়ার স্কুলে পড়াশোনা করেন৷ নৌকা দূর্ঘটনায় তার বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ১৮৬১ সালে তার কাকা শশী চন্দ্র দত্ত, যিনি একজন প্রখ্যাত লেখক ছিলেন, তার অভিভাবকত্ত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ রমেশ চন্দ্র তার চাচা সম্পর্কে লিখেছেন যে রাতের বেলা তিনি পরিবারের অন্যান্যদের সাথে বসতেন এবং তাদের প্রিয় বিষয় ছিল ইংরেজি কবিদের কবিতা চর্চা করা৷

১৮৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন৷ পরে ১৮৬৬ সালে তিনি মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে এবং স্কলারশীপ অর্জনের মাধ্যমে আর্টস পরীক্ষায় পাস করেন৷ ১৮৬৮ সালে বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় পরিবারের অনুমতি না নিয়ে তিনি এবং তার দুই বন্ধু বিহারী লাল গুপ্ত এবং সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান৷ রমেশ চন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ সে সময় দীর্ঘ সময় ধরে ১৮৫৩ সালের আগে ও পরে, যখন ইংল্যান্ডে আইসিএস পরীক্ষা চালু করা হয়, তার পূর্বে মূলত বিট্রিশ কর্মকর্তারাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন৷ ১৮৬০ সালের দিকে ভারতীয়রা, বিশেষ করে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন হতে ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে আসীন হতে শুরু করেন৷ জীবনসঙ্গিনী মনোমোহিনি দত্ত । বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৮৬৪ সালে। সন্তান  কমলা দত্ত। 

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এ রমেশ ব্রিটিশ লেখকদের নিয়ে পড়াশোনা করেন৷ তিনি লন্ডনের মিডল ট্যাম্পল এ আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন৷ তিনি ১৮৬৯ সালের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এর ওপেন এক্সামিনেশন এ তৃতীয় স্থান লাভের মাধ্যমে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন৷


১৮৭১ সালে রমেশ চন্দ্র দত্ত আলীপুরের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আইসিএস(ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) এ যোগদান করেন৷ পদটিতে তার নিয়োগ ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর রাণী ভিক্টোরিয়ার রঙ ও ধর্মমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমান সুযোগের ঘোষণার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে৷
ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের কারণে ১৮৭৪ সালে নদীয়া জেলার মেহেরপুরে এবং ১৮৭৬ সালে ভোলা জেলার দক্ষিণ শাহবাজপুরে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়৷ এলাকাগুলোতে জরুরী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়ে৷ রমেশ চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে এ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়৷ ১৮৮২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রমেশ চন্দ্রকে সার্ভিসের নির্বাহী শাখায় নিয়োগ দেয়া হয়৷ তিনিই প্রথম ভারতীয়, যাকে নির্বাহী পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়৷ ১৮৯৩ সালে তিনি বর্ধমান জেলার জেলা অফিসার এবং ১৮৯৪ সালে বর্ধমান বিভাগের কমিশনার হন৷ রমেশ চন্দ্র ১৮৯৫ সালে উড়িষ্যার বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব লাভ করেন৷ ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি বিভাগীয় কমিশনার পদে আসীন হন৷


রমেশ চন্দ্র নরমপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন৷ কংগ্রেসের শুরুর দিকে তিনি কংগ্রেসের সাথে জড়িত ছিলেন৷ ১৮৯৯ সালে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷


১৮৯৪ সালে রমেশ চন্দ্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নবীনচন্দ্র সেন পরিষদটির সহ-সভাপতি ছিলেন৷ বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৮৯৩ সালে পরিষদটি গঠন করা হয়৷

সূদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন৷ এছাড়াও তিনি মহাভারত ও রামায়ণ অনুবাদও করেছেন৷ গুণী এ মনীষী ১৯০৯ সালের ৩০এ নভেম্বর মারা যান৷

রচনা কর্ম।

রমেশচন্দ্রের চারটি 

ঐতিহাসিক উপন্যাস 

বঙ্গবিজেতা (১৮৭৪), 

মাধবীকঙ্কণ (১৮৭৭), 

জীবন-প্রভাত (১৮৭৮) এবং 

জীবন-সন্ধ্যা (১৮৭৯) 

যথাক্রমে আকবর, শাজাহান এবং আওরঙ্গজেব এবং জাহাঙ্গীরের সময়ের ঘটনা অবলম্বনে রচিত হয়েছিল । মুঘল সাম্রাজ্যের শতবর্ষের ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে এই উপন্যাসগুলি রচিত হয়েছিল বলে এগুলি একসাথে শতবর্ষ (১৮৭৯) নামে সঙ্কলিত হয়েছিল ।

সংসার (১৮৮৬)

 এবং সমাজ (১৮৯৩) 

রমেশচন্দ্রের দুটি সামাজিক উপন্যাস ।

 সুকুমার সেনের মতে এই দুটি সামাজিক উপন্যাস তার ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলির থেকে উপাদেয় ছিল ।

  • শতবর্ষ, (বঙ্গবিজেতারাজপুত জীবন-সন্ধ্যামাধবীকঙ্কণ ও মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত একত্রে, ১৮৭৯)
  • সংসার কথা – (সংসার উপন্যাসের পরিবর্তিত সংস্করণ, ১৯১০) 

 তিনটি প্রকাশনায় প্রাধান্য পেয়েছিল ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা। এ প্রকাশনাগুলি হলো: 
England and India (১৮৯৭), 
Famines in India (১৯০০) এবং দুখন্ডে Economic History of India

               Economic History of India ছিল তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ। এতে তিনি ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক প্রশাসনের বিভিন্ন দিক, ইংল্যান্ডের কলকারখানায় প্রস্ত্তত পণ্য-সামগ্রীর সঙ্গে অন্যায্য প্রতিযোগিতায় ভারতের শিল্পের ধ্বংস সাধন, কৃষি ও শিল্পের বিকাশে অবহেলা, ভূমি-রাজস্বের উচ্চ হার এবং তজ্জনিত কারণে কৃষক সমাজের দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের প্রকোপ, ‘হোম চার্জ’ আদায়ের মাধ্যমে ভারত থেকে সম্পদ পাচার, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ভারত সীমান্তের বাইরে যুদ্ধের ব্যয় বহন প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এ সকল গ্রন্থে যে মত প্রকাশ করা হয়েছিল এককভাবে তা আর.সি দত্তের মত নয়, এক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎও ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সমালোচনা সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। ইংল্যান্ড ও ভারতে তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সূত্রপাত হয় তা এর প্রমাণ।

 ১৮৯৯ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ঐ বছর ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। আর.সি দত্তের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ভারতের অর্থনীতিতে ইংরেজ শাসনের প্রভাব সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণের চেয়ে অনেক কম সংস্কারধর্মী ছিল। দাদাভাই নওরোজী, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, উমেশচন্দ্র ব্যানার্জী, জাস্টিস রানা দে প্রভৃতি ‘নরমপন্থী’ নেতাদের ন্যায় আর.সি দত্ত বিশ্বাস করতেন যে, ইংরেজ শাসন মূলত দেশের জন্য কল্যাণকর হয়েছে। তাঁর লক্ষ্য ছিল লেখা ও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে ইংল্যান্ড ও ভারতে উপযুক্ত জনমত গড়ে তোলা এবং এভাবে ইংরেজ শাসনের সংস্কার করা। দ্বিতীয়ত, তিনি চেয়েছিলেন এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি যাতে অব্যাহত না থাকে সে জন্য প্রশাসনের সকল পর্যায়ে ভারতীয়দের অধিকতর সম্পৃক্ত করা হোক। Economic History of India গ্রন্থে তিনি প্রায় সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, উপনিবেশিক শাসন শাসিতের স্বার্থের পরিপন্থী হতে বাধ্য। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জে.এস মিলের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেন যে, কোন জাতির ওপর চাপানো অপরের দ্বারা পরিচালিত সরকার কোন দিন টিকে থাকে না এবং টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ভারতের জন্য স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেন নি। ব্রিটিশ শাসনের অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা রাজনীতিতে চরম মতবাদের জন্ম দিলেও তিনি নিজে এ চরমপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না।

Economic History of India গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর আর.সি দত্ত ইংল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৯০৪ সালের আগস্ট মাসে বরোদা রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এ পদে তিন বছর বহাল থাকার পর তিনি বরোদা ত্যাগ করেন এবং Royal Decentralisation Commission-এর সদস্য নিযুক্ত হন। এ কমিশনের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর তিনি বরোদায় ফিরে যান এবং এ রাজ্যের দেওয়ান পদে অধিষ্ঠিত হন। 


দেওয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে  ১৯০৯ সালের ৩০ নভেম্বর  তাঁর মৃত্যু হয়।


========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆=========





No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...