"এক যে আছে মজার দেশ, সব রকমে ভালো,
রাত্তিরেতে বেজায় রোদ, দিনে চাঁদের আলো !
আকাশ সেথা সবুজবরণ গাছের পাতা নীল;
ডাঙ্গায় চরে রুই কাতলা জলের মাঝে চিল !
সেই দেশেতে বেড়াল পালায়, নেংটি-ইঁদুর দেখে;
ছেলেরা খায় ‘ক্যাস্টর-অয়েল’ -রসগোল্লা রেখে !
মণ্ডা-মিঠাই তেতো সেথা, ওষুধ লাগে ভালো;
অন্ধকারটা সাদা দেখায়, সাদা জিনিস কালো !
ছেলেরা সব খেলা ফেলে বই নে বসে পড়ে;
মুখে লাগাম দিয়ে ঘোড়া লোকের পিঠে চড়ে !
ঘুড়ির হাতে বাঁশের লাটাই, উড়তে থাকে ছেলে;
বড়শি দিয়ে মানুষ গাঁথে, মাছেরা ছিপ্ ফেলে !
জিলিপি সে তেড়ে এসে, কামড় দিতে চায়;
কচুরি আর রসগোল্লা ছেলে ধরে খায় !
পায়ে ছাতি দিয়ে লোকে হাতে হেঁটে চলে !
ডাঙ্গায় ভাসে নৌকা-জাহাজ, গাড়ি ছোটে জলে !"
(মজার দেশ)
বা
‘অ-য়ে অজগর আসছে তেড়ে
আমটি আমি খাবো পেড়ে
ইঁদুরছানা ভয়ে মরে
ঈগল পাখি পাছে ধরে’।
ঈশ্বরচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথ যেমন শুধু ‘বর্ণপরিচয়’ বা ‘সহজ পাঠে’র জন্যেই পরিচিত নন তেমনই ‘হাসিখুশি’র স্রষ্টা যোগীন্দ্রনাথ সরকারও কিন্তু ‘হাসিখুশি’র জন্যেই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নন। শিশুসাহিত্যের গম্ভীর আকাশে তিনি সত্যি যেন চাঁদের হাসি ঢেলে দিতে পেরেছিলেন প্রথম। আর তাই তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি আজও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার।দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৮ অক্টোবর ১৮৬৬ (১২ কার্তিক ১২৭৩ বঙ্গাব্দ) । তাঁর আদি নিবাস যশোহর। তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সরকার । নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ নীলরতন সরকার যোগীন্দ্রনাথ সরকারের দাদা। যোগীন্দ্রনাথ সরকার ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। দেওঘর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি নিজের প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি।
সিটি কলেজিয়েট স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করেন মাত্র পনের টাকা বেতনে। এ সময় থেকেই তিনি শিশু সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হন এবং শিশুসাহিত্য রচনা আরম্ভ করেন। আজগুবী ছড়া রচনায় তিনি খুব দক্ষ ছিলেন। তার সঙ্কলিত বই হাসি ও খেলা ১৮৯১ সালে প্রকাশিত হয় । তিনি সখা, সখী, মুকুল, বালকবন্ধু, বালক, সন্দেশ প্রভৃতি ছোটদের পত্রিকায় লিখতেন। তিনি মুকুল পত্রিকাটি সম্পাদনাও করেছিলেন ।
তিনি ছবির সাহায্য অক্ষর চেনাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তার কবিতাগুলির সাথে সুন্দর ছবি থাকত যা ছোটদের মনে এক কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করত। ছোটদের জন্য লেখা বিদেশী উদ্ভট ছন্দ ও ছড়ার অনুসরনে তিনি হাসি রাশি নামে একটি সচিত্র বই প্রকাশ করেন। এর সাথে সাথেই ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার সংগৃহিত খুকুমনির ছড়া প্রকাশিত হয়। তার রচিত হাসিখুসি (১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত) বইটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। তার রচিত ও সঙ্কলিত ৩০টি ছোটদের গল্প ও ছড়ার বইয়ের মধ্যে ছড়া ও ছবি, রাঙাছবি, হাসির গল্প, পশুপক্ষী, বনে জঙ্গলে, গল্পসঞ্চয়, শিশু চয়নিকা হিজিবিজি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার সম্বন্ধে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, “বাংলার মাটিতে এমন একজন মানুষ অন্ততঃ জন্মেছেন, যিনি একান্তভাবে ছোটদের লেখক, সেই সব ছোটদের, যারা কেঁদে কেঁদে পড়তে শিখে, পরে হেসে হেসে বই পড়ে।”
ছোটদের উপযোগী ২১টি পৌরানিক বই এইসময় তিনি রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল, ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৯০৯), ‘শকুন্তলা’, ‘সাবিত্রী সত্যবান’, ‘সীতা’ (১৯১০), ‘ধ্রুব’ (১৯১৫), ‘ছোটদের রামায়ণ’ (১৯১৮), ‘ছোটদের মহাভারত’ (১৯১৯), ‘দৈত্য ও দানব’ (১৯২০) প্রভৃতি। এছাড়াও জ্ঞানমুকুল, সাহিত্য, চারুপাঠ, শিক্ষাসঞ্চয় প্রভৃতি ১৩-১৪টি স্কুলপাঠ্য বই তিনি রচনা করেছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বন্দেমাতরম্ বলে একটি জাতীয় সঙ্গীত সংগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সিটি বুক সোসাইটি নামে প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন। এই প্রকাশনা সংস্থা থেকেই উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রথম বই ছেলেদের রামায়ণ প্রকাশিত হয়েছিল। নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর শিশুদের বই ‘টুকটুকে রামায়ণ’ এবং কুলদারঞ্জন রায়ের লেখা ‘ইলিয়াড’ এই পাবলিকেশন থেকেই প্রকাশিত হয়।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল কর্মব্যস্ততার ফলে উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে মস্তিষ্কের শিরা ছিঁড়ে জ্ঞান হারান তিনি। বহু চিকিৎসার পর প্রাণরক্ষা পেলেও শরীরের ডান ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। কিন্তু অসুস্থতার মধ্যেও তিনি তাঁর রচনা ও প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৩৬ সালে তাঁর শেষ সংকলন 'গল্প সঞ্চয়' প্রকাশিত হয়। তার রচিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৭৮টি।
যোগীন্দ্রনাথের কালজয়ী বই ‘হাসিখুশি’। যদিও মনে রাখা প্রয়োজন যে এটাই ওনার প্রথম বই নয়। ১৮৯১ সালে তাঁর সংকলিত ‘হাসি ও খেলা’ বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সচিত্র শিশুপাঠ্য বই। ‘হাসি ও খেলা’ বইটার নিবেদন অংশটা দৃষ্টি আকর্ষণ করে এখনও। যোগীন্দ্রনাথ সেখানে লিখেছেন, “আমাদের দেশে বালক বালিকাদের উপযোগী স্কুলপাঠ্য পুস্তকের নিতান্ত অভাব না থাকিলেও গৃহপাঠ্য ও পুরস্কার-প্রসাদযোগ্য সচিত্র পুস্তক একখানিও দেখা যায় না। এই অভাব কিঞ্চিৎ পরিমাণে দূর করিবার জন্যে হাসি ও খেলা প্রকাশিত হইল।”
‘হাসি ও খেলা’ প্রকাশের আগে যে এরকম বইয়ের সত্যি অভাব ছিল তা বোঝা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্যে, যা প্রকাশিত হয়েছিল ‘সাধনা’ পত্রের ১৩০১-এর ফাল্গুন সংখ্যায়। “...ছোট ছেলেদের জন্যে যে সকল বই আছে তাহা স্কুলে পড়িবার বই; তাহাতে স্নেহের বা সৌন্দর্যের লেশমাত্র নাই, তাহাতে যে পরিমাণ উৎপীড়ন হয় সে পরিমাণ উপকার হয় না।”
১৮৯২-এ যোগীন্দ্রনাথের বিবাহ হয়েছিল বৈকুন্ঠ রায়ের আঠারো বছরের মেয়ে গিরিবালা দেবীর সাথে। এই বিবাহে আচার্য্যের কর্তব্য পালন করেছিলেন স্বনামধন্য পন্ডিত শ্রী শিবনাথ শাস্ত্রী। ক্রমে তিনি ছয়টি সন্তানের পিতা হন।
শিক্ষক যোগীন্দ্রনাথ ছিলেন ছাত্রসমাজে বিপুল জনপ্রিয়। শিক্ষকতার সাথে সাথে ছাত্রদের জন্য সঙ্গীতাভিনয়ের ব্যবস্থা করা, ‘মুকুল’ পত্রিকার কার্য্যাধ্যক্ষ পদে আসীন থাকার দায়িত্ব নির্বাহ করা ইত্যাদি নানারকম কাজে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। ‘মুকুল’-এর ছবির জন্য তাঁকে সে সময়ের একমাত্র উড ব্লক প্রস্তুতকারক প্রিয়গোপাল দাসের কাছে প্রায়ই যেতে হত। এসব কারণে নিয়মিত সময়ে প্রতিদিন তিনি স্কুলে পৌঁছোতে পারতেন না, আর যার ফলে তাঁর একমাত্র রোজগার পনেরো টাকার বড়ো অংশটাই কাটা যেত। আর তাই তিনি নিজে স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নেমেছিলেন বই প্রকাশনার জগতে। ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজস্ব প্রকাশনালয় ‘সিটি বুক সোসাইটি’। সেই একই সালে প্রকাশিত হয় শিশুগদ্য পাঠের সচিত্র বই ‘রাঙাছবি’। ছোটোদের বইয়ের প্রকাশক হিসেবে তিনি অতুলনীয় ছিলেন। সেই যোগীন্দ্রনাথ তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর সহায়তায় ‘সখা’ পত্রিকার সমস্ত ব্লকগুলো কিনে নিয়েছিলেন যা তাঁকে পুস্তক প্রকাশনা ব্যবসায়ে বিশেষ প্রেরণা দিয়েছিল। পরের বছর ১৮৯৭-এ ওই প্রকাশনা সংস্থা থেকেই প্রকাশিত হল যুগান্তকারী ওই প্রাইমার ‘হাসিখুশি’। ‘হাসিখুশি’ প্রকাশিত হল দুটি ভাগে। প্রথম ভাগ ১৮৯৭ সালে ও দ্বিতীয় ভাগ ১৯০৪ সালে।বলা বাহুল্য, প্রথম ভাগটির জনপ্রিয়তা ছিল অনেক বেশি। পরবর্তীকালে ‘হাসিখুশি’র জনপ্রিয়তা অনেকটাই পেছনে ফেলে দিয়েছিল বিয়াল্লিশ বছর আগে প্রকাশিত বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’কে। ‘হাসিখুশি’র শুরু হয়েছে ছড়া দিয়ে। তাই ছোটোদের কোমল মনে রেখাপাত করতে অসুবিধা হয়নি। তাছাড়া প্রত্যেকটা ছড়ার শুরুতেই সেই বর্ণটি দেওয়া আছে। সহজবোধ্য ছবির মাধ্যমে বর্ণটিকে সহজে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলা বর্ণমালার কিছু কিছু বর্ণের শব্দের প্রথমে না আসার অসুবিধার জন্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে বর্ণটিকে ছবির মধ্যে আলগাভাবে বসানো হয়েছে। যেমন ণ, ড়, ঢ়, ৎ, য় ইত্যাদি। তাতে অবশ্য পড়ার বা বোঝার কোনও অসুবিধা হয় না। কয়েকটা বর্ণ আবার নিজের ছবির প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে যেমন, লৃ-কারের ছবির বালকটার শরীরটাকে অক্ষরটার মতন করেই আঁকা হয়েছে, কিংবা বলা যায় ‘ৎ’ হল বেড়ালের লেজ! এছাড়া ‘হাসিখুশি’ বর্ণমালায় ছড়ায় ব্যবহৃত শব্দগুলো শিশুদের কাছে অনেক বেশি শ্রুতিমধুর ও কাছের। মনে হয় সবসময় ওই শব্দগুলো পালটে দিলে যেন কোনও মানানসইতাই থাকবে না, হয়ে যাবে এলোমেলো। তৎকালীন অন্যান্য শিশুশিক্ষার বইয়ে ব্যবহৃত কিছু শব্দ যেমন ঊষা, একতারা, ঐরাবত, থানা ইত্যাদি শব্দ অক্ষরজ্ঞানহীন সাধারণ ঘরের শিশুদের কাছে সহজবোধ্য নয় বলেই ‘হাসিখুশি’তে সেগুলোর জায়গায় অনেক বেশি প্রচলিত ও চলতি শব্দ ব্যবহার করেছেন যোগীন্দ্রনাথ। থানার সাহায্যে ‘থ’ চেনানোর চাইতে ‘থালা ভরা আছে মিঠাই’ অনেক মনোগ্রাহী।১৯৩৭-এ জীবনের শেষবেলায় রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় সমৃদ্ধ ‘গল্প সঞ্চয়ন’ সংকলনটি প্রকাশিত হয়। এছাড়াও প্রকাশিত হয় আরও দুটি শিশুপাঠ্য সংকলন – ‘ছোটদের উপকথা’ এবং ‘আগমনী’। জীবন পশ্চিমের পটে চলে আসার সময় যোগীন্দ্রনাথের জীবনে ঘটে যায় আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা। তাঁকে জীবদ্দশায় দেখে যেতে হল নিজের মেয়ের মৃত্যু। এর একমাসের মধ্যেই দুরারোগ্য নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে একাত্তর বছর বয়সে ১৯৩৭-এর ২৬শে জুন ইহলোক ত্যাগ করেন শিশুসাহিত্যের এই প্রাণপুরুষ। যোগীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন স্নেহবৎসল কোমল মানুষ, যিনি সারাজীবন শিশুসাহিত্যকে পরিপুষ্ট করে তুলতে নিয়োজিত ছিলেন। অনেক শিশুসাহিত্যিক পাওয়া যাবে, কিন্তু যোগীন্দ্রনাথ সরকারের অবদান বাংলা শিশুসাহিত্য কোনওদিন ভুলবে না। আজ থেকে ১০০ বছর পরও হয়তো দেখা যাবে একটি চার বছরের শিশু দুলে দুলে ইন্টারনেট খুলে পাঠ করছে –
কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি
খেঁকশেয়ালি পালায় ছুটি
গরু বাছুর দাঁড়িয়ে আছে
ঘুঘু পাখি ডাকছে গাছে।
১৯৩৭ সালের ২৭শে জুন (মতান্তরে ২৬শে জুন) ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের।
ছড়া ১
হারাধনের দশটি ছেলে
হারাধনের দশটি ছেলে
ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
রইল বাকি নয়।
হারাধনের নয়টি ছেলে
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দু’খান হল
রইল বাকি আট।
হারাধনের আটটি ছেলে
বসলো খেতে ভাত,
একটির পেট ফেটে গেল
রইল বাকি সাত।
হারাধনের সাতটি ছেলে
গেল জলাশয়,
একটি সেথা ডুবে ম’ল
রইল বাকি ছয়।
হারাধনের ছয়টি ছেলে
চ’ড়তে গেল গাছ,
একটি ম’ল পিছলে পড়ে
রইল বাকি পাঁচ।
হারাধনের পাঁচটি ছেলে
গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে
রইল বাকি চার।
হারাধনের চারটি ছেলে
নাচে ধিন ধিন,
একটি ম’ল আছাড় খেয়ে
রইল বাকি তিন।
হারাধনের তিনটি ছেলে
ধরতে গেল রুই,
একটি খেলো বোয়াল মাছে
রইল বাকি দুই।
হারাধনের দুইটি ছেলে
মারতে গেল ভেক,
একটি ম’ল সাপের বিষে
রইল বাকি এক।
হারাধনের একটি ছেলে
কাঁদে ভেউ ভেউ,
মনের দুঃখে বনে গেল
রইল না আর কেউ।
ছড়া ২
তোতাপাখি
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ,
কথা কও না কেন বউ ?
কথা কব কী ছলে,
কথা কইতে গা জ্বলে !
ছড়া ৩
কাকাতুয়া
কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুমণি,
সোনার ঘড়ি কি বলিছে, বল দেখি শুনি ?
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্,
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক।
সময় চলিয়া যায়-
নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।”
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্।”
কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুধন,
অন্য কোন কথা ঘড়ি বলে কি কখন ?
মাঝে মাঝে বল ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্,
মানুষ হইয়ে যেন হয়ো না ক সঙ।
ফিটফিটে বাবু হলে,
ভেবেছ কি লবে কোলে ?
পলাশে কে ভালবাসে দেখে রাঙা রঙ্।”
মাঝে মাঝে বলে ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্।”
ছড়া ৪
প্রার্থনা সঙ্গীত
ছোটো শিশু মোরা তোমার করুণা হৃদয়ে মাগিয়া লব
জগতের কাজে জগতের মাঝে আপনা ভুলিয়া রব।
ছোটো তারা হাসে আকাশের গায়ে ছোটো ফুল ফুটে গাছে;
ছোটো বটে তবু তোমার জগতে আমাদেরো কাজ আছে।
দাও তবে প্রভু হেন শুভমতি প্রাণে দাও নব আশা;
জগত মাঝারে যেন সবাকারে দিতে পারি ভালবাসা।
সুখে দুখে শোকে অপরের লাগি যেন এ জীবন ধরি;
অশ্রু মুছায়ে বেদনা ঘুচায়ে জীবন সফল করি।।
ছড়া ৫
কাজের ছেলে
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল,চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,”
” ছিঁড়ে দেবে চুল।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।
ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।
==========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆==========
No comments:
Post a Comment