Monday, 1 November 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। সাহিত্যিক আবু ইসহাক। ০১.১১.২০২১. Vol -543. The blogger in literature e-magazine.


আবু ইসহাক 


বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লা ও আতহারুন্নিসা দম্পত্তির ছয় সন্তানের মধ্যে আবু ইসহাক ছিলেন পঞ্চম । ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের খণ্ডচিত্র যেমন স্থান পেয়েছে তার লেখনিতে তেমনি বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী চিত্রও তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যকর্মে । আবু ইসহাক বাংলা ভাষার নতুন ধরনের অভিধান প্রণেতা হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ।

জন্ম: ১ নভেম্বর, ১৯২৬ ইংরেজি; ১৫ কার্তিক, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ নড়িয়া থানার শিরঙ্গল গ্রামে,। পরে উপসী বিজারি তারাপ্রসন্ন ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে মেট্রিক এবং ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আই.এ পাশ করেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি আমলা পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিদেশে কূটনৈতিক পদে নিয়োজিত ছিলেন।


আবু ইসহাক প্রথমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শক পদে যোগদান করেন। দেশবিভাগের পরে ১৯৪৯ সালে তিনি পুলিশ বিভাগে সহকারি পরিদর্শক হন এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকায় এসে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক হন। পরের বছর বার্মার আকিয়াবে বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসে ভাইস-কনসাল এবং ১৯৭৬ সালে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সেক্রেটারি পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার খুলনা বিভাগের প্রধান হয়ে ১৯৮৪ সালে অবসার গ্রহণ করেন।[২]

অভিধান প্রণেতা হিসেবেও আবু ইসহাকের একটি বিশিষ্ট পরিচয় আছে। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান (২ খন্ড, ১৯৯৩, ১৯৯৮) রচনা করে বাংলা কোষগ্রন্থের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলেছেন। তাঁর প্রণীত অভিধানের বিশেষত্ব হলো শব্দের শুধু অর্থ নয়, সব ধরনের প্রতিশব্দ বা সমর্থক প্রদান। তাঁর অভিধানে ‘অন্ধকার’ শব্দের ১২৭টি সমর্থক শব্দ আছে।

গ্রন্থ

উপন্যাস 
সূর্য দীঘল বাড়ি (১৯৫৫)[৩] - চলচ্চিত্ররূপ - ১৯৭৯[৪]
পদ্মার পলিদ্বীপ (১৯৮৬, সামাজিক উপন্যাস)
জাল (১৯৮৮, গোয়েন্দা উপন্যাস)
গল্প 
হারেম (১৯৬২)
মহাপতঙ্গ (১৯৬৩)
জোঁক



পুরস্কার

বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২-৬৩)
সুন্দরবন সাহিত্যপদক (১৯৮১)
একুশে পদক (১৯৯৭)
স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) ২০০৪

তিনি ১৯৪৬ সালে, মাত্র বিশ বছর বয়সে রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস 'সূর্য দীঘল বাড়ী' এবং এটি প্রকাশ করা হয় ১৯৫৫ সালে কলকাতা থেকে, এটি একটি সামাজিক উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ও দেশের বাইরে আকিয়াব ও কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাইস-কনসাল ও ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবু ইসহাকের প্রথম প্রকাশিত রচনার নাম – ১৯৪০ সালে নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অভিশাপ’ গল্পটি ।

’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন – শেখ নিয়ামত আলী ও মসীহউদ্দিন শাকের (১৯৭৯) সালে ।

পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত, খুন, হিংসা বিদ্বেষ, স্বার্থপর মানুষের সম্পদের লোভ প্রভৃতি যে উপন্যাসের আলোচ্য বিষয় – আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের ।

’পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – প্রথমে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘মুখর মাটি’ নামে (১৯৮৬) সালে । এই উপন্যাসে প্রধান প্রধান চরিত্রের মধ্যে রয়েছে – জরিনা, রূপজাল, ফজল, এরফান মাতবর, জঙ্গুরুল্লা প্রভৃতি ।

লেখক যখন পুলিশ ছিলেন তখন বেশ কিছু জাল নোটের মামলা তদন্ত করেছিলেন সেই আলোকে রচনা করেছিলেন – ‘জাল’ উপন্যাস ।

আবু ইসহাকের উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – আনন্দ পত্র পত্রিকায় (১৯৮৮ সালে) । ”লাঠির জোরে মাটি, লাঠালাঠি কাটাকাটি, আদালতে হাঁটাহাঁটি, এই না হলে চরের মাটি, হয় কবে খাঁটি”- উক্তিটি যে উপন্যাসের – আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের ।

আবু ইসহাকের গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – হারেম (১৯৬২) ও মহাপতঙ্গ (১৯৬৩) । নিজের জীবনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন তাঁর নকশাধর্মী রচনা – ‘স্মৃতিবিচিত্র’ নামক স্মৃতিকথায় ।

’জয়ধ্বনি’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা – একমাত্র নাটক (ধানশালিকের দেশ পত্রিকায় ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়) ।

’একটি ময়নার আত্মকাহিনী’ তাঁর যে শ্রেণির রচনা – ছোট গল্প (লেখকের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার কাহিনী) ।

’সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ আবু ইসাহকের যে শ্রেণির রচনা – বাংলা ভাষার অভিধান ।

আবু ইসহাক রচিত ‘ সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ ‘অন্ধকার’ শব্দের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করেছেন – ১২৭ টি ।

’বারে বা, বড় পাখির বড় রং, আণ্ডা পাড়ার দেখ ঢং, উক্তিটি আবু ইসহাকের যে রচনার – ‘মহাপতঙ্গ’ নামক ছোট গল্পের ।

তাঁর মহাপতঙ্গ গল্পে যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন – একজোড়া চড়ুই পাখির জবানিতে একদিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ অন্যদিকে বিজ্ঞানের অভিশাপ ।

’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা – সামাজিক উপন্যাস ।

ওসমান, তোতা মিয়া, টুনি, করিম গাজী, নবুখা প্রভৃতি যে গল্পের চরিত্র – আবু ইসহাকের ‘জোক’ নামক ছোট গল্পের ।


কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় – আবু ইসহাককে ১৯৭৬ সালে ।

স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও বিশিষ্ট অভিধান প্রণেতা আবু ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন – ২০০৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি (মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়) ।


মৃত্যু: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩, ঢাকা।
======={{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}====

No comments: