১৯১৩ সালের ৭ই নভেম্বর ফরাসী আলজেরিয়ার (বর্তমান ড্রিয়ান) মন্ডোভিতে এক শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা, ক্যাথারিন হেলেন কাম্যু জাতিতে ছিলেন একজন ফরাসী; যদিও পৈতৃক সূত্রে তিনি স্প্যানিশ-বালেয়ারিক। তাঁর বাবা, লুসিয়েন কাম্যু, ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষিজীবী; ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্নের যুদ্ধে তিনি মারা যান। কাম্যু তাঁর বাবাকে কোনোদিনও দেখেননি। তাঁর ছোটবেলায় কাম্যু, তাঁর মা এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনরা অনেক ন্যুনতম উপকরণ ছাড়াই আলজিয়ারের বেলকোর্ট অঞ্চলে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তিনি আলজেরিয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের ফরাসি ছিলেন; আলজেরিয়া ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ফরাসিদের দখলে ছিল। তাঁর ঠাকুরদাদা এবং তাঁর প্রজন্মের অনেকেই ১৯শ শতকের প্রথম দশকের সময় ভালোভাবে জীবন কাটাবার জন্য আলজেরিয়াতে চলে আসেন। তাই তাঁকে বলা হত পাইড-নোয়া, ‘কালো পায়ের পাতা’ – এটা একটা ইতর শব্দ যা দ্বারা সেইসকল ফরাসিদের বোঝানো হত যারা আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিল – আর তাঁর পরিচয় এবং দরিদ্র অবস্থা তাঁর পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তৎসত্ত্বেও, কাম্যু ছিলেন একজন ফরাসি নাগরিক, আলজেরিয়ার আরব বা বর্বর অধিবাসীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা যাদের আইনগত অবস্থানটাই নীচু ছিল। ছোটবেলায়, কাম্যুর ফুটবল এবং সাঁতারের প্রতি অনুরাগ ছিল।
তাঁর শিক্ষক লুই জার্মেইনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাম্যু ১৯২৪ সালে বৃত্তি লাভ করেন এবং আলজিয়ার্সের কাছে একটি প্রথিতযশা লাইসিয়ামে (উচ্চশিক্ষার স্কুল) পড়াশুনো শুরু করেন।১৯৩০ সালে তাঁর যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ে।রোগটি সংক্রামক হওয়ার কারণে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন এবং তাঁর কাকা গুস্তাভ আকল্টের কাছে তিনি বাস করেন। কাকা পেশায় ছিলেন একজন কসাই; তরুণ আলবের কাম্যুকে তিনি প্রভাবিত করেছিলেন। এই সময় কাম্যু তাঁর দর্শনের শিক্ষক জ্যঁ গ্রেনিয়ারের সংস্রবে এসে দর্শনের দিকে আকৃষ্ট হন। তিনি প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এবং ফ্রেডারিক নিটশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।এই সময় তিনি পড়াশুনোর জন্য কেবলমাত্র কিছু সময় ব্যয় করতে পারতেন। অর্থ রোজগারের জন্য, তিনি নানা ধরনের পেশা অবলম্বন করেন; ব্যক্তিগত শিক্ষক, গাড়ির সরঞ্জামের করণিক, এবং আবহাওয়া সংস্থার সহকারী হিসেবেও তিনি কাজ করেছিলেন।
১৯৩৩ সালে কাম্যু আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৩৬ সালে তাঁর লাইসেন্স ডি ফিলোসফি (বি.এ) ডিগ্রী লাভ করেন; প্লোটিনাসের ওপর তত্ত্ব রচনা করে। খ্রীষ্টান দার্শনিকদের প্রতি কাম্যুর একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু নিটশে এবং আর্থার শোপেনহাওয়ারের প্রভাবে তিনি নৈরাশ্যবাদ এবং নাস্তিকতার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি স্তাঁদাল, হেরম্যান মেলভিল, ফিওডোর দস্তয়েভস্কি, এবং ফ্রান্ৎস কাফকা প্রভৃতি ঔপন্যাসিক-দার্শনিকের লেখা পাঠ করেন। ১৯৩৩ সালে, সিমোন হাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন যিনি কাম্যুর এক বন্ধুর সঙ্গী ছিলেন; পরে সিমোন কাম্যুর প্রথম স্ত্রী হন।
১৯২৮ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত কাম্যু রেসিং ইউনিভার্সেটেয়ার ডি’আলজেরের গোলরক্ষক ছিলেন।খেলার টিম-স্পিরিট, ভ্রাতৃত্ববোধ, এবং উদ্দেশ্যগত ঐক্যবোধ কাম্যুকে অত্যন্ত নাড়া দিয়েছিল। খেলার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গভীর আবেগ এবং সাহসিকতার সাথে খেলার জন্য তিনি প্রায়ই প্রশংসিত হতেন। ১৭ বছর বয়সে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁর ফুটবলের প্রতি সমস্ত আশাই অন্তর্হিত হয়.কাম্যু ফুটবল, মানব-অস্তিত্ব, নৈতিকতা এবং ব্যক্তিগত পরিচয়ের মধ্যে সমান্তরাল সম্পর্ক এঁকেছেন। তাঁর কাছে, ফুটবলের সরল নৈতিকতা এবং গীর্জা ও রাষ্ট্রের মত কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরোপিত জটিল নৈতিকতার মধ্যে একটা বিরোধ বর্তমান।
১৯৩৪ সালে ২০ বছর বয়সে কাম্যু সিমোন হাইয়ের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। সিমোন মরফিনে আসক্ত ছিলেন; ঋতুকালীন বেদনা প্রশমনের জন্য সিমোন এই ড্রাগ ব্যবহার করতেন। কাকা গুস্তাভ এই সম্পর্ক মেনে না নিলেও আসক্তি থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করার জন্য কাম্যু হাইকে বিয়ে করেন। এরপরেই তিনি আবিষ্কার করেন সিমোন ইতিমধ্যেই তাঁর ডাক্তারের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ এবং এর ফলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। কাম্যু সারাজীবন ধরে একজন নারীলোলুপ ছিলেন।
১৯৩৫ সালের প্রথম দিকেই কাম্যু ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। যদিও তিনি মার্ক্সবাদী ছিলেন না, তবুও তিনি একে “আলজেরিয়ার ‘অধিবাসী’দের সাথে ইউরোপিয়দের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের” একটা পথ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমরা সাম্যবাদকে একটা স্প্রিংবোর্ড এবং নান্দনিকবাদ হিসেবে দেখতে পারি যা গভীরতর আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি প্রস্তুত করতে পারে।” পরের বছর কাম্যু উক্ত পার্টি ত্যাগ করেন। ১৯৩৬ সালে স্বাধীনতাকামী আলজেরিয় কমিউনিস্ট পার্টি (পি.সি.এ) প্রতিষ্ঠা হয়, এবং কাম্যু তাঁর পরামর্শদাতা গ্রেনিয়ারের কথায় সেই পার্টিতে যোগদান করেন। পিসিএতে কাম্যুর মুখ্য ভূমিকা ছিল থিয়েটার ডু ট্রাভাইল (শ্রমিকদের থিয়েটার) পরিচালনা করা। কাম্যু পার্টি ডু পিউপল আলজেরিয়ান (আলজেরিয়ান পিপলস পার্টি (পিপিএ)) পার্টির সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন; এই পার্টি ছিল একটা মধ্যপন্থী ঔপনিবেশিক/জাতীয়তাদী-বিরোধী দল। যুদ্ধমধ্যবর্তীকালীন, উদ্বেগ যতই বাড়তে লাগল, স্ট্যালিনপন্থী পিসিএ এবং পিপিএ তাদের যোগসূত্র ছিন্ন করে। পার্টির কথামতো না চলার জন্য কাম্যুকে পিসিএ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এইসকল ঘটনাগুলোর ফলে মানুষের মর্যাদাবোধ সম্বন্ধে কাম্যুর ধারণাগুলো আরো পরিশীলিত হয়। আমলাতন্ত্রের ওপর কাম্যুর অবিশ্বাস বেড়েই চলে; কারণ আমলাতন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল বিচার নয়, দক্ষতা। তবে তিনি তাঁর থিয়েটারে কাজ বজায় রেখে যান এবং তাঁর দলের নতুন নামকরণ করেন থিয়েটার ডি ল’ইক্যুইপ (“দলের থিয়েটার”)। তাঁর পরবর্তীকালের লেখা উপন্যাসের অবলম্বনেই তিনি তাঁর কিছু নাটক রচনা করেন।
জ্যঁর এবং চক্র অনুসারে কাম্যুর সাহিত্যকর্ম, ম্যাথিউ শার্পের মতানুযায়ী
বছর পৌত্তলিক বিশ্বাস বাইবেল প্রসঙ্গ উপন্যাস নাটক
১৯৩৭-৪২ সিসিফাস বিচ্ছিন্নতা, নির্বাসন অপরিচিত (The Stranger) ক্যালিগুলা,
দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেনটেন্ডু)
১৯৪৩-৫২ প্রমেথিউস বিদ্রোহ দি প্লেগ (লা পেস্টে) দি স্টেজ অফ সিজ (ল'এটাট ডি সিজ)
দ্য জাস্ট (লেস জাস্টেস)
১৯৫২-৫৮ অপরাধ, পতন; নির্বাসন এবং রাজত্ব;
জন দি ব্যাপটিস্ট, খ্রিস্ট
দি ফল (লা চ্যুট) পজেজড (দস্তয়েভস্কি) পুনর্নিমাণ;
ফকনারের রিক্যুয়েম ফর আ নান
১৯৫৮– নেমেসিস রাজত্ব দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ের হোম্মে)
১৯৩৮ সালে কাম্যু বামপন্থী সংবাদপত্র আলজের রিপাবলিকেইনের (পাস্ক্যাল পিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) হয়ে কাজ করেন; কারণ তাঁর প্রভূত পরিমাণে ফ্যাসিবিরোধী মনোভাব ছিল, এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের উত্থান তাঁকে চিন্তিত করেছিল। এইসময়, কাম্যু কর্তৃত্বপূর্ণ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন, কারণ তিনি ফরাসি শাসকদের দ্বারা আরব এবং বর্বরদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের সাক্ষী ছিলেন। আলজের রিপাবলিকেইনকে ১৯৪০ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং কাম্যু প্যারিসে পালিয়ে গিয়ে প্যারিস-সয়রের প্রধান সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন। প্যারিসে এসে তিনি অলীক এবং অর্থশূন্যতা নিয়ে তাঁর কাজের ‘প্রথম চক্র’ প্রায় শেষ করেন – উপন্যাস ল’ইট্রেঞ্জার (দি আউটসাইডার (ইউকে), অথবা দি স্ট্রেঞ্জার (ইউএস)), লে মিথ ডি সিসিফি (দি মিথ অফ সিসিফাস) নামক দার্শনিক প্রবন্ধ এবং নাটক দি ক্যালিগুলা। প্রতিটি চক্রেই একটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধ ও একটি নাটক রয়েছে।
উপন্যাস
আ হ্যাপি ডেথ (লা মর্ট হেউরেউস) (১৯৩৬-৩৮এ লিখিত, ১৯৭১সালে প্রকাশিত)
দি স্ট্রেঞ্জার (ল’এট্রেঞ্জার, দি আউটসাইডার হিসেবেও অনুদিত। “ল’এট্রেঞ্জারের বিকল্প অর্থ হল বিদেশী) (১৯৪২)
দি প্লেগ (লা পেস্টে) (১৯৪৭)
দি ফল (লা চ্যুট) (১৯৫৬)
দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ার হোম্মে) (অসমাপ্ত, ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত)
ছোটগল্প
এক্সাইল অ্যান্ড দি কিংডম (ল’এক্সিল এট লে রয়মে) (সংকলন, ১৯৫৭), নিম্নলিখিত ছোটগল্পগুলো এর মধ্যে আছেঃ
“দি অ্যাডালটারাস ওম্যান” (লা ফেম্মে অ্যাডালটিয়ার)
“দি রেনেগেড অর অ্যা কনফিউজড স্পিরিট” (লে রেনিগাট ওয়ু আন এস্প্রিট কনফুস)
“দি সাইলেন্ট মেন” (লেস ম্যুয়েটস্)
“দি গেস্ট” (ল’হোটে)
“জোনাস, অর দি আর্টিস্ট অ্যাট ওয়ার্ক” (জোনাস, ওয়ু ল’আরটিস্টে আউ ট্রাভাইল)
“দি গ্রোয়িং স্টোন” (লা পিয়ের ক্যুই পৌসসে)
গবেষণামূলক প্রবন্ধ সম্পাদনা
ক্রিশ্চিয়ান মেটাফিজিক্স অ্যান্ড নিওপ্লেটোনিজম (মেটাফিজিক ক্রেটিয়েন্নে এট নিওপ্লেটোনিসমে) (১৯৩৫) – এই প্রবন্ধ লিখেই কাম্যু ফ্রান্সের উচ্চতর স্কুলে পড়াবার সুযোগ পেয়েছিলেন
নন-ফিকশন বই সম্পাদনা
বেটুয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন (ল’এনভারস এট ল’এন্ড্রয়েট, দি রং সাইড অ্যান্ড দি রাইট সাইড নামেও অনুদিত) (সংকলন, ১৯৩৭)
ন্যুপশিয়ালস (নোসেস) (১৯৩৮)
দি মিথ অফ সিসিফাস (লে মিথ ডি সিসিফি) (১৯৪২)
দি রেবেল (ল’হোম্মে রিভোল্টে) (১৯৫১)
আলজেরিয়ান ক্রনিকল্স্ (ক্রনিক্যুইস আলজেরিয়ানেস্) (১৯৫৮, এর প্রথম ইংরেজি অনুবাদটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে)
নোটবুকস্ ১৯৩৫ – ১৯৪২ (কার্নেটস্, মাই ১৯৩৫ – ফেব্রিয়ার ১৯৪২) (১৯৬২)
নোটবুকস ১৯৪২ – ১৯৫১ (কার্নেটস II : জানভিয়ের ১৯৪২ – মার্স ১৯৫১) (১৯৬৫)
আমেরিকান জার্নালস (জার্নক্স ডি ভয়েজ) (১৯৭৮)
নোটবুকস ১৯৫১ – ১৯৫৯ (২০০৮)। কার্নেটস টোম III: মার্স ১৯৫১ – ডিসেম্বর ১৯৫৯ (১৯৮৯) হিসেবে প্রকাশিত
করেসপণ্ডেস (১৯৪৪ – ১৯৫৯)। কাম্যুর কন্যা ক্যাথারিন কাম্যুর ভূমিকাসহ আলবের কাম্যু এবং মারিয়া কাসারেসের মধ্যেকার বার্তালাপ (২০১৭)।
নাটক
ক্যালিগুলা (১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত, ১৯৩৮ সালে রচিত)
দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেন্টেন্ডু) (১৯৪৪)
দি স্টেট অফ সিজ (ল’এটাট ডি সিজ্) (১৯৪৮)
দি জাস্ট অ্যাসাসিনস (লেস জাস্টেস) (১৯৪৯)
রিক্যুয়েম ফর আ নান (রিক্যুয়েম পোর উনে নোন, একই নামে রচিত উইলিয়ামফকনারের উপন্যাস অবলম্বনে রচিত) (১৯৫৬)
দি পজেজড্ (লেস পজিডিস, ফিওডোর দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ডেমনস্ অবলম্বনে রচিত)
প্রবন্ধ সম্পাদনা
দি ক্রাইসিস অফ ম্যান (কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণ) (২৮শে মার্চ, ১৯৪৬)
নাইদার ভিক্টিমস্ নর এক্সেকিউশনারস্ (কোঁবা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধাবলী) (১৯৪৬)
হোয়াই স্পেন? (ল’এটাট ডি সিজ নাটকটির জন্য লিখিত প্রবন্ধ) (১৯৪৮)
সামার (ল’এটে) (১৯৫৪)
রিফ্লেকশন্স অন দি গিলোটিন (রিফ্লেকশন্স সুর লা গিলোটিন) (বিবর্ধিত প্রবন্ধ, ১৯৫৭)
ক্রিয়েট ডেঞ্জারাসলি (বাস্তববাদ এবং শৈল্পিক সৃষ্টির ওপর রচিত প্রবন্ধ, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ভাষণ) (১৯৫৭)
কাম্যুর প্যারিসে যাওয়ার পরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ায় ফ্রান্সের ক্ষতি হতে শুরু হল। কাম্যু সৈন্যবিভাগে স্বেচ্ছায় যোগদানের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত থাকায় তাঁকে বাতিল করা হয়। জার্মান সৈন্যবাহিনী প্যারিসের দিকে এগোতে থাকলে কাম্যু প্যারিস ত্যাগ করেন। প্যারিস-সয়রের চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় এবং শেষমেশ লিওঁতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৯৪০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তিনি পিয়ানোবাদক এবং গণিতবিদ ফ্রান্সিন ফ’রের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। কাম্যু ও ফ’রে এরপর আলজেরিয়ায় (ওরান) ফিরে যান এবং সেখানকার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।যক্ষ্মারোগের কারণে, ডাক্তারি পরামর্শে তাঁকে আবার ফ্রান্সের আল্পসে ফিরে যেতে হয়। সেখানে তিনি তাঁর লেখালিখি শুরু করেন এবং তাঁর কাজের দ্বিতীয় চক্র শুরু হয়। এই কাজগুলো ছিল বিদ্রোহ সংক্রান্ত – একটা উপন্যাস লা পেস্টে (দি প্লেগ) এবং একটি নাটক লা মালেটেন্ডু (দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং)। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর পূর্বেকার কাজের জন্যই পরিচিত ছিলেন। এরপর তিনি প্যারিসে চলে যান এবং জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর পরিচিত এবং বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়। এছাড়া তিনি সিমোন ডি বোভেয়ার, আঁদ্রে ব্রেটনসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত বুদ্ধিজীবী মহলেও অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন মারিয়া কাসারেস, যাঁর সাথে পরে কাম্যুর প্রণয়সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ফ্রেঞ্চ অকুপেশনের সময়ে (ফ্রান্স দখল) জার্মানদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গুপ্ত প্রতিরোধ আন্দোলনে কাম্যু সক্রিয় ভূমিকা নেন। প্যারিসে এসে তিনি নিষিদ্ধ সংবাদপত্র কোঁবার সাংবাদিক হন এবং সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ফ্রান্স মুক্ত হবার পরেও তিনি এই পত্রিকার জন্য লেখালিখি করতেন। কোঁবার নিবন্ধ লেখার জন্য কাম্যু ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার থেকে বাঁচতে তিনি জাল পরিচয় পত্র ব্যবহার করতেন। এইসময়ে তিনি চারটে লেটার’স্ অউন এমি এলেমান্ড (লেটারস্ টু আ জার্মান ফ্রেন্ড) লিখেছিলেন যাতে তিনি এই প্রতিরোধের কী প্রয়োজন আছে তা ব্যাখ্যা করেছিলেন।
যুদ্ধের পরে কাম্যু ফ’রের সঙ্গে প্যারিসে বাস করতে লাগলেন; ১৯৪৫ সালে জ্যঁ এবং ক্যাথারিন নামে তাঁদের দুটি যমজ কন্যা হয়।কাম্যু এইসময় একজন খ্যাতনামা লেখক হয়ে ওঠেন; তাঁর খ্যাতির মুখ্য কারণ ছিল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। দুটি পৃথক ভ্রমণে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেন। তিনি আরো একবার আলজেরিয়াতে ভ্রমণ করেন; কিন্তু সেখানকার অত্যাচারী ঔপনিবেশিক নীতি দেখে তিনি হতাশ হন; তিনি এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে বহুবার সোচ্চার হয়েছিলেন। এই সময় প্রবন্ধ ল’হোম্মি রিভোল্টি (দি রেবেল) লেখার মধ্যে দিয়ে তাঁর সাহিত্যকর্মের দ্বিতীয় চক্র সম্পূর্ণ হয়। এই বইয়ে কাম্যু সর্বগ্রাসী সাম্যবাদকে আক্রমণ করেন এবং স্বাধীনতাপন্থী সমাজতন্ত্র ও ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদের পক্ষে সোচ্চার হন।]কমিউনিজমকে বাতিল করার জন্য তিনি তাঁর অনেক ফরাসি সহকর্মী ও সমসাময়িকদের বিরাগভাজন হন এবং এই বইটির কারণে তাঁর সার্ত্রের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ হয়। আলজেরিয় যুদ্ধের সময় থেকে মার্ক্সবাদী বামপন্থীদের সাথে তাঁর সম্পর্কের আরো অবনতি হয়.
কাম্যু বিভিন্ন প্রান্তিক সংস্থার ইউরোপীয় সংহতির জোরালো সমর্থক ছিলেন।১৯৪৪ সালে তিনি কমিটি ফ্রান্সিস পোর লা ফেডেরেশন ইউরোপিন্নে – (সিএফএফই (ফ্রেঞ্চ কমিটি ফর দি ইউরোপিয়ান ফেডেরেশন)) – প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঘোষণা করেন ইউরোপ “একমাত্র তখনই অর্থনৈতিক উন্নতি, গণতন্ত্র এবং শান্তির পথে এগোবে যখন এর রাষ্ট্রগুলো একটা যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠবে।”১৯৪৭-৪৮ সালে তিনি গ্রুপস্ ডি লিজ্যঁ ইন্টারন্যাশেনেল (জি.এল.আই) প্রতিষ্ঠা করেন যেটি ছিল একটি বৈপ্লবিক ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক আন্দোলন।আঁদ্রে ব্রেটনের নেতিবাচকতা এবং শূন্যতাবাদকে পরিত্যাগ করে পরাবাস্তবতা এবং অস্তিত্ববাদের ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রকাশ করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল। কাম্যু হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত হানার বিরুদ্ধে এবং স্পেনে ফ্রাঙ্কোর শাসনব্যবস্থার সর্বগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কাম্যু অনেকগুলো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, বিশেষত স্পেনদেশীয় অভিনেত্রী মারিয়া কাসারেসের সঙ্গে তাঁর অনিয়মিত সম্পর্ক ছিল যা শেষমেশ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়; এই অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রচুর চিঠিপত্রের আদানপ্রদান হয়েছিল।ফ’রে এই সম্পর্ককে হাল্কাভাবে নিতে পারেননি। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং ১৯৫০এর দশকের প্রথমদিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কাম্যু এই ঘটনায় অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন; তিনি জনসমক্ষ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন এবং কিছু সময়ের জন্য তিনি সামান্য অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
১৯৫৭ সালে কাম্যু খবর পান যে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করতে চলেছেন। এটা তাঁর কাছে একটা বড়ো ধাক্কার মত ছিল। তিনি মনে করেছিলেন আঁদ্রে ম্যালরক্স এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের অধিকারী হবেন। ৪৪ বছর বয়সে তিনি দ্বিতীয়-সর্বকনিষ্ঠ প্রাপক হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন; এক্ষেত্রে ৪২ বছর বয়সী প্রাপক রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের পরেই ছিলেন তিনি। এরপরেই তিনি তাঁর আত্মজীবনী লে প্রিমিয়ার হোম্মে (দি ফার্স্ট ম্যান) নামক তাঁর আত্মজীবনী লিখতে শুরু করেন এবং এইভাবে তিনি “নৈতিক শিক্ষা” নিয়ে পরীক্ষার করতে উদ্যোগী হন। তিনি আরো একবার থিয়েটারের দিকে ঘুরে দাঁড়ান. নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ডেমনস্-এর নাট্যরূপায়ণ এবং পরিচালনা করেন। নাটকটি ১৯৫৯ সালের জানুয়ারীতে প্যারিসের আন্তোইন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।
এই সময়কালে তিনি দার্শনিক সিমোন ওয়েলের সাহিত্যকর্মগুলোকে তাঁর মৃত্যু-পরবর্তীকালে প্রকাশ করেন; এস্পোর (হোপ) নামক ধারাবাহিক হিসাবে সেই লেখাসমূহ এডিশনস গালিমার্ড প্রকাশ করে। ওয়েলের কাজ কাম্যুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে. এবং কাম্যু মনে করতেন ওয়েলসের লেখা শূন্যতাবাদের যোগ্য প্রত্যুত্তর।কাম্যু তাঁকে "আমাদের সময়ের একমাত্র মহান ব্যক্তিত্ব" বলে বর্ণনা করেছেন।
কাম্যু ১৯৬০ সালের ৪ঠা জানুয়ারী, ৪৬ বছর বয়সে ভিল্লেব্লেভিন নামক ছোট শহরের লে গ্রাঁদ ফসার্ডে সেন্সের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি ১৯৬০ সালে পরিবারের সাথে তাঁর লোরমারিন, ভ’ক্লুজের বাড়িতে ইংরেজি নববর্ষের ছুটি কাটিয়েছিলেন; সেখানে তাঁর এডিশন গালিমার্ডের প্রকাশক মাইকেল গালিমার্ড, গালিমার্ডের স্ত্রী জানাইন এবং তাদের কন্যাও ছিল। কাম্যুর স্ত্রী এবং মেয়েরা ২রা জানুয়ারী ট্রেনে করে প্যারিসে ফিরে যায়, কিন্তু কাম্যু গালিমার্ডের বিলাসবহুল ফাসেল ভেগা এইচ.কে ৫০০তে ফিরবেন বলে ঠিক করেন। রুট ন্যাশানাল ৫ (বর্তমান আর.এন ৬)এর দীর্ঘ সোজা রাস্তায় চলার পথে গাড়িটি একটি প্লেন গাছে ধাক্কা মারে। কাম্যু তৎক্ষণাত মারা যান; তিনি আরোহীর আসনে বসেছিলেন এবং সিট বেল্ট পরেননি। গালিমার্ড কয়েকদিন বাদে মারা যান, যদিও তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা অক্ষত ছিলেন। অনেকে মনে করেন, কেজিবির গুপ্তচর বাহিনীই কাম্যুকে হত্যা করে, কারণ তিনি সোভিয়েত অত্যাচারের প্রবল সমালোচক ছিলেন।
==={{{{{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}=
No comments:
Post a Comment