ইছামতীর ওপারে খুলনা জেলার কালীগঞ্জ থানা, এপারে হাসনাবাদ, তারপর নানা দ্বীপ, সাতজেলিয়া, ছোট মোল্লাখালি। সমস্ত দিন গেছে দালালের সঙ্গে উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে। পড়তে পড়তে টের পাওয়া যায় তারা দালালের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এক জেলেদের গ্রামে পৌঁছেছে অনেক রাতে। ভাদ্র মাস। সমস্ত দিন টিপটিপ বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। কাদা আর জল ভেঙে তাদের নিয়ে এলো দালাল এক জেলেবাড়িতে। মৃন্ময়ী সমস্ত দিন ধরে ভেঙেছে শুধু ভেঙেছে। তারা ওপারের মানুষ। পার্টিশনের পর এপারে এসেছিল  দেশ ছেড়ে ।

মৃন্ময়ী এত দিন বাদে, এই একুশ বছর বয়সে জেনেছে তার মা-বাবা তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিল জল কাদার ভেতরে সেই গোয়ালন্দ জাহাজঘাটায়। তখন অগণিত মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে ইন্ডিয়ায় আসছে। ওখান থেকে ট্রেন ধরবে। উদ্ভ্রান্ত মানুষের পায়ের নিচে পিষ্ট হতে যাচ্ছিল সেই বছর দেড়ের শিশু। কোনো হতভাগী মায়ের কোল থেকে পড়া হৃৎপিণ্ড। তখন জলকাদা থেকে তুলে সেই শিশুকে এই মায়ের কোলে দিয়েছিলেন মৃন্ময়ীর বাবা। তার পর থেকে তার শিকড়ের সন্ধান করে যাচ্ছিল এই পরিবার মৃন্ময়ীর অজান্তে। তার ঊরুর নিচে আছে এক জন্ম জড়ুল। কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান, সে মাটির মতো। মৃত্তিকা। সে যেন জনক রাজার কুড়িয়ে পাওয়া সীতা। তাকে জীবন দিয়েছে এই পরিবার। আচমকা পাওয়া গেছে মৃন্ময়ীর শিকড়ের সন্ধান। মৃন্ময়ী চায় না সেই শিকড়ের মুখোমুখি হতে।


======={{{{{{{=========={{{{{=========