জিম মরিসন
স্বাধীনতা টিকে আছে
তুমি কি জানতে স্বাধীনতা টিকে আছে
পাঠ্য পুস্তকগুলোতে
তুমি কি জানতে উন্মাদেরা পরিচালনা করছে
আমাদের কারাগারগুলো
জেলখানার ভেতর, গন্তব্যের মধ্যে,
শ্বেতাঙ্গ স্বাধীন প্রোটেস্টান্টের অন্তরে
জলঘূর্ণি দহ
আমরা বিশ্রামরত মাথাব্যথা
একঘেয়েমির প্রান্তদেশে
মৃত্যুর জন্য আমরা পৌঁছে যাচ্ছি
একটা মোমবাতির শেষাংশে
আমরা কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছি
যা এরই মধ্যে খুঁজে পেয়েছে আমাদেরকে
পাথর ঝলমলে
তোমাকে এটাই বলবো...
এই প্রত্যূষ অপচয়ের কারণে
অনন্তকালের কোনও প্রসাদই এখন ক্ষমা করবে না আমাদের।
ওইসব দিনে ফিরে গেলে সবকিছুই সরল আর বিভ্রান্তিতে ভরা।
একটা গ্রীষ্মরাত্রি , সৈকতের টংঘরের দিকে ছুটছে।
দুই যুবতির পেছনে ছুটছি আমি।
ফর্সা যুবতিটির নাম স্বাধীনতা।
কালোটা, ব্যবসায় প্রকল্প।
আলাপ হলো আমাদের আর ওরা আমাকে গল্পটা শোনালো।
এখন শোনো এটা...
টেক্সাস রেডিও আর বিপুল বাদ্যস্পন্দনের কথা বলবো তোমাকে।
কোমলে চালিত , ধীর ও পাগল-করা।
নতুন কোনও ভাষার মতো।
সেই শীতলতা দিয়ে তোমার মাথায় ঢুকছি, ঐশ্বরিক দূতের আকস্মিক ক্রোধের মতো।
হৃৎপিণ্ডের যন্ত্রণা ও ঈশ্বর হারানোর কথা বলতে দাও আমাকে।
ঘুরে বেড়াচ্ছি , ঘুরছি আশাহীন রাত্রির ভেতর।
এখানে এই বৃত্তের ভেতর কোনও নক্ষত্র নেই।
এখানে আমরা একটাই পাথর।
ঝলমলে।
ক্ষমতা
পৃথিবীকে এর গতিপথেই থামিয়ে দিতে
পারি। চলে যেতে দিতে পারি
নীল গাড়িগুলোকে ।
নিজেই নিজেকে অদৃশ্য করতে বা ছোট্ট বানিয়ে ফেলতে পারি।
দৈত্যাকার হয়ে উঠতে পারি আর পৌঁছে যেতে পারি
বহুদূরের জিনিসগুলোর কাছে। বদলে দিতে পারি
প্রকৃতির গতি-প্রকৃতি ।
যে কোনওখানেই স্থাপন করতে পারি নিজেকে
মহাশূন্যে বা মহাকালে।
তলব করতে পারি মৃত্যুকে।
অপরাপর জগতসমূহের ঘটনাবলীকে বোধগম্য করতে পারি
নিজের মনগহনে ,
বা অন্যদের অন্তরাত্মায়।
আমি পারি।
আমি।
' জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর, ফ্লোরিডায়৷বাবা ও মা: জর্জ স্টিফেন মরিসন, ক্লারা ক্লার্ক মরিসন। ছোটবেলা থেকেই পড়ার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ৷ ১২ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় তাঁর কাব্য রচনা৷ তিনি ছিলেন একজন মেধাবি ছাত্র৷ অসংখ্য খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিক, লেখক ও বিশেষ করে জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিশ নিৎশে'র প্রভাব পড়ে তাঁর জীবনে৷ ১৯৬৪ সালে লস এঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘থিয়েটার আর্টস' বিভাগের ‘সিনেমাটোগ্রাফি' থেকে সাফল্যের সাথে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ এ সময় চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তাঁর পরিচয় হয় অর্গান বাদক রে মেনজারেক'এর সাথে৷ মেনজারেক জিম'এর অসাধারণ গীতিকবিতা ও তাঁর উদাত্ত কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হন৷ ৬৫ সালে তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত গোষ্ঠী ‘দ্য ডোরস'৷
খুব ছোটবেলা থেকেই পিয়ানো বাজাতাম। তবে সেটি বেশি দীর্ঘ হয়নি। এই ধরুন, থার্ড গ্রেড বুক পর্যন্ত। রেওয়াজ করার মতো মনমানসিকতা ছিল না, তাই ছেড়ে দিয়েছি। আর যখন ফিফথ কি সিক্সথ গ্রেডে পড়ি, 'দ্য পনি এক্সপ্রেস' নামে একটা কবিতা লিখতে শুরু করি। এটিই আমার প্রথম লেখা। কবিতাটি ছিল এক ধরনের শোকগাথা। লেখাটা যদিও কোনোদিনই শেষ করতে পারিনি! লেখালেখি করার ইচ্ছে বরাবরই প্রবল ছিল। কিন্তু হাতে কাগজ-কলম নেওয়ার পরই মনে হলো- কিছুই যেন নিয়ন্ত্রণে নেই আমার। লেখা যেন নিজেই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে। তবে সবসময় এমন হয়নি। তাই কয়েকটা কবিতা লিখে আর সেদিকে আগাইনি।
বইয়ের উদ্ধৃতির মতো...
হাইস্কুল ও কলেজে পড়ার সময় বেশ কয়েকটা নোটবুক ছিল আমার। তারপর সবগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম। সিদ্ধান্তটা সম্ভবত ভালোই ছিল। আমার ধারণা, সেই হারিয়ে ফেলা দুই-তিনটি নোটবুকের মধ্যে বলার মতো ভালো লেখা একটাও ছিল না। বরং মনে হয়েছিল, সম্মোহনগ্রস্ত কিংবা নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া মানুষের মতো রাতের পর রাত জেগে অহেতুকই লিখে গেছি কী সব! ফলে সেই লেখাগুলো যদি ফেলে না দিতাম, তাহলে হয়তো মৌলিক কোনো লেখা লিখতে পারা কোনোদিনই সম্ভব হতো না আমার পক্ষে। কেননা, সেগুলো মূলত ছিল অন্যের লেখা পড়ে প্রভাবিত হয়ে সৃষ্ট; ঠিক যেন কোনো বইয়ের উদ্ৃব্দতির মতো। ফেলে না দিলে কোনোদিনই সেগুলো থেকে মুক্তি পেতাম বলে মনে হয় না আমার।
পড়াশোনা ছেড়ে সৈকতে এলোমেলো ঘুরছিলাম। এর আগে টানা ১৫ বছর স্কুল-কলেজে যেতে হয়েছে আমাকে। অথচ এখন থেকে আর করার মতো কোনো কাজ নেই। সেদিনই প্রথমবারের মতো মনে হলো, বাহ্, আমি তো মুক্ত! চমৎকার উষ্ণ এক গ্রীষ্ফ্মের দিন ছিল সেটি। সাত-পাঁচ না ভেবেই গান শুনতে শুরু করে দিলাম। যে গানগুলো সেদিন লিখেছিলাম, সেই নোটবুকটি সম্ভবত এখনও রয়ে গেছে আমার কাছে। এক ধরনের কিংবদন্তিতুল্য কনসার্ট সেদিন শুনতে পেয়েছিলাম আমি। আর সেটিকেই নিজের মতো লিপিবদ্ধ করে রাখার প্রয়াস ছিল সে আমার। সৈকতে সেদিন যা শুনেছি, তার এক ধরনের পুনঃসৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। এভাবেই গানের জগতে ঢুকে পড়া।
ক্লাব এবং করসার্ট
মানুষকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাই না আমি। তাই কনসার্টে সবসময়ই চেষ্টা করি দর্শকদের আসন থেকে দাঁড় করিয়ে দিতে আর তাদের এমন এক অনুভূতি দিতে, যেন ভাবতে পারে, যেখানে যেতে চায়, সেখানে পৌঁছানোর মতো তারা স্বাধীন। মনে পড়ে, এ পর্যন্ত আমাদের 'দ্য ডোরস' ব্যান্ডের করা সেরা মিউজিক্যাল ট্রিপগুলো হয়েছে ক্লাবে। কোনো কনসার্টে নয়। কনসার্ট বিশাল ব্যাপার; কিন্তু সেখানে বিপুল দর্শকের সামনে গান দিয়ে আসলে ক্লাবের তুলনায় তেমন প্রভাব ছড়ানো সম্ভব নয়। ক্লাবের পরিবেশ এর চেয়ে একেবারেই আলাদা। এখানকার দর্শকরা আপনার ঘাম দেখতে পাবে; আপনিও দেখতে পাবেন তাদের সবাইকে। কনসার্টে অসংখ্য মানুষকে একসঙ্গে সামনে পাবেন। কিন্তু তাতে আপনি আসলে করছেনটা কী, সেটির তেমন প্রভাব পড়বে না। অথচ ক্লাবে আপনার পক্ষে মিউজিক দিয়ে সবাইকে সম্মোহন করে ফেলা সম্ভব।
স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধের দ্বৈরথ
নিজের কাজ খুবই উপভোগ করি আমি। দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে মিউজিক করার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। রিহার্সেলে হয়তো আপনি ইমপ্রোভাইজ করতে পারবেন। কিন্তু সেটি এক ধরনের মৃত পরিবেশ! দর্শক নেই, তাই তাদের ফিডব্যাকও নেই। কোনো টেনশনও নেই। অথচ ক্লাবে দর্শকের সংখ্যা অল্প থাকায়, আপনার পক্ষে ইচ্ছামতো যে কোনো কিছু করা সম্ভব। যেহেতু মানুষ দেখছে, তাই শেষ পর্যন্ত নিজেকে একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলা যাবে না। ফলে এ ধরনের পারফরম্যান্সের মধ্যে চমৎকার এক টেনশন কাজ করে। একইসঙ্গে স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধের একটা দ্বৈরথ চলতে থাকে।
জিম মরিসন রচিত সমাজ সম্পৃক্ত সংগীত আজও আকর্ষণ করে বিশ্বের তরুণ সমাজকে৷ ছ'টি হিট অ্যালবাম সহ প্রায় দু'শরও বেশি কনসার্ট পরিবেশন করেছেন তিনি৷ পাশাপাশি তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর৷ বহুমুখি প্রতিভার অধিকারি জিম'এর কবিতাই ছিল গান – আবার গানই যেন কবিতা৷ কিন্তু সংগীত ও কবিতার পাশাপাশি অতিরিক্ত মাদকাসক্তির কারণে ১৯৭১ সালের ৩রা জুলাই, মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যারিসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রক সংগীতের প্রতীক পুরুষ জিম মরিসন। কবর: ৭ জুলাই, ১৯৭১, সিমতিয়ের দু পের লাশেজ, প্যারিস, ফ্রান্স।
=================================
No comments:
Post a Comment