কৃষ্ণ ধর
জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ লা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জের কমলপুর গ্রামে। পিতা উপেন্দ্রচন্দ্র ধর ও চিন্ময়ী ধর - মাতা। তিনি কিশোরগঞ্জেরই বাজিতপুর এইচ ই হাই স্কুল থেকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আই. এ পাশ করে কলকাতায় আসেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থশাস্ত্রে স্নাতক হন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত্যে [কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়] থেকে এম.এ পাশ করেন।
কলকাতার দেশবন্ধু গার্লস কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা হতে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক "যুগান্তর" পত্রিকার সহ-সম্পাদক হন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি দৈনিক বসুমতীর সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যাপনা ও করেছেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ভারতীয় বিদ্যাভবনে।
দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন কল্পনা ধর। সন্তান- নীলাঞ্জনা চৌধুরী (কন্যা)- সুরঞ্জনা চৌধুরী (কন্যা)
বাংলা সাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনার সময়ই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এম.এ পাশের আগেই ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অঙ্গীকার" প্রকাশিত হয়। তারপর অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতার সাথে সাথে সাহিত্যচর্চা করেছেন সমানভাবে। কবিতার পাশাপাশি কাব্যনাটক, ভ্রমণকাহিনী, সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিজের ধারণা রচনাসম্ভারে ঠাঁই হয়েছে। কৃষ্ণ ধরের রচনা সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক শিশির কুমার দাশ মন্তব্য করেছেন -" সুমিত শব্দচয়ন, রূপময় চিত্রকল্প রচনা এবং সূক্ষ্ম ভাবাবেশ কবিতাগুলির প্রধান আকর্ষণ। কাব্যনাট্যে তার বিশিষ্টতা বিদগ্ধ মহলে স্বীকৃত।"
রচনা কর্ম ;
কবি কৃষ্ণ ধর গত শতাব্দীর পাঁচের ও ছয়ের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। ওই সময়কালের মধ্যে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘প্রথম ধরেছে কলি’ (১৯৫৫), ‘এ জন্মের নায়ক’ (১৯৬২), ‘এক রাত্রির জন্য’ (১৯৬০), ‘আমার হাতে রক্ত’ (১৯৬৭), ‘কালের নিসর্গ দৃশ্য’ (১৯৬৮) ‘দুঃসময় কবিতার লেখকের কাছে’ (১৯৭০) প্রভৃতি। পরবর্তী কালে প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে আছে ‘কালের রাখাল তুমি ভিয়েতনাম’ (১৯৭২), ‘যে যেখানে আছো’ (১৯৭৬), ‘শব্দহীন শোভাযাত্রা’ (১৯৮১), ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’ (১৯৯১), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (১৯৯৬), ‘প্রিয় বাক্ কথা রাখো’ (২০০১), ‘গাঙচিলের স্বপ্ন ও সাতরঙা রামধনু’ (২০০৫), ‘হাঁটব থামব না’ (২০০৮), ‘জোনাকপরি হোমাপাখি’ (২০০৮), ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (সংকলনগ্রন্থ) (২০১৬), ‘কবিতা সংগ্রহ’ (২০১৯) প্রভৃতি। কবিতার পাশাপাশি তিনি অনেক কাব্যনাটক রচনা করেছেন। তাঁর কাব্যনাটকগুলি হল ‘নির্বাচিত কাব্যনাটক’ (১৯৮৪), ‘বিরুদ্ধ বাতাস’ (১৯৮৯), ‘কাব্যনাটক সংগ্রহ’ (২০০৯) (‘ভোরের মানুষেরা’, ‘সিন্ধুপারের পাখি’, ‘আমি নচিকেতা’, ‘ডানা’, ‘অভিমন্যু’, ‘জেগে আছো বর্ণমালা’, ‘খড়কুটো’, ‘বিরুদ্ধ বাতাস’, ‘বিকেলের বারান্দা পেরিয়ে’, ‘পায়ের শব্দ শোনা যায়’, ‘প্রচ্ছদে লেগেছে ধুলো’, ‘কেয়া ফুলের গন্ধ’, ‘পদধ্বনি কার’, ‘যাই উৎসের দিকে’, ‘একটাই জীবন’, ‘নদীতেই প্রতীক’, ‘গোলাপের যুদ্ধ’, ‘ঘরে ফেরার দিন’, ‘যদিও সন্ধ্যা, ‘পাহাড় ডেকেছিল’, ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’, ‘নিহত গোধূলি’, ‘বধ্যভূমিতে বাসর’, ‘করুণ রঙীন পথ’, ‘অন্ধকারে জুঁই ফুলের গন্ধ’, ‘বনজ্যোৎস্না’, ‘সমবেত করতালি’, ‘বাতিঘর’, ‘পদধ্বনি পলাতক’)। অপ্রকাশিত কাব্যনাটক ‘ফুলওয়ালি’ ১৯৬৮/৬৯ সালে গন্ধর্ব নাট্যগোষ্ঠীর দ্বারা মঞ্চস্থ হয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।তাঁর লেখা দুটো অত্যন্ত সুখপাঠ্য ভ্রমণকাহিনী হল ‘মস্কো থেকে ফেরা’ (১৯৭৪), এবং ‘অন্য দেশ অন্য নগর’ (১৯৮১)।আজ থেকে চার বছর আগে বেরিয়েছে তাঁর স্মৃতিচারণামূলক বই ‘আট দশক সাত কাহন'(২০১৬)। গত বছর ‘ঝাঁকিদর্শন’ (২০১৯) শিরোনামে তাঁর আর একটা স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দুটোই বেশ সুখপাঠ্য।সাহিত্য নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ের মধ্যে আছে ‘আধুনিক কবিতার উৎস'(১৯৬৯) ও ‘সাহিত্যের সাজঘর'(২০১৫)।
তার ইতিহাসমূলক লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ’ (১৯৭১), ‘ভারতের মুক্তি সংগ্রামে বাংলা’ (১৯৯৭) ও ‘কলকাতা তিন শতক’ (প্রথম সংস্করণ ১৯৮৯, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৯৪)।
তাঁর লেখা জীবনীগুলি হল ‘দেশনায়ক সুভাষ’ (প্রথম সংস্করণ ১৯৯৭, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৭), এবং ‘সংগ্রামী সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়’ (২০০৭)।
সাংবাদিকতা নিয়ে লিখেছেন ‘সাংবাদিকতার দর্শন : আদর্শ ও বিচ্যুতি’ (প্রথম সংস্করণ ২০০৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৫)।
এ ছাড়াও অন্যান্য ধরনের তাঁর দুটো উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলো হল ‘বই পড়ুয়ার দেখা মানুষ’ (২০১৪) ও ‘পুরানো আখরগুলি’ (২০১৩)।
স্বনামে লেখার পাশাপাশি তিনি মল্লিনাথ, বিদুর ও অন্যদর্শী ছদ্মনামেও লিখেছেন।
সারাজীবনে তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুধা বসু পুরস্কার, পোয়েট্রি ইন্ডিয়া পুরস্কার, শিশির কুমার পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির নজরুল পুরস্কার, মুজফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, অমৃত পুরস্কার, ত্রিবৃত্ত পুরস্কার, গৌরী ঘোষাল স্মৃতি পুরস্কার, সারঙ্গ সাহিত্য পত্রিকার সারঙ্গ অর্ঘ্য নিবেদন ও গ্রেট বেঙ্গল পুরস্কার।
তাঁর কবিতার ভাষা বড়ো মোলায়েম। ব্যক্তি জীবনের মতো কবিতাতেও তিনি মৃুদুভাষী। অনুচ্চ কণ্ঠে মৃদু পদক্ষেপে তাঁর কবিতা আমাদের অজান্তেই আমাদের নিয়ে চলে যায় তাঁর কবিতার নিজস্ব ভুবনে। কঠোর বাস্তবের লড়াই সংগ্রামের কথা বলার সময়েও কৃষ্ণদা বরাবর অনুত্তেজিত থেকেছেন। তাই তাঁর কবিতা পড়ে পাঠকেরাও অনুত্তেজিত চিত্তে সমকালে তাঁদের কৃত্যাকৃত্য নির্ধারণের দিশা খুঁজে পান। ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’ কাব্যগ্রন্থের নীচের কবিতাটি পড়লেই এটা বুঝতে পারা যাবে।
অশ্বমেধের ঘোড়া
মারহাট্টা ডিচের ওপারে থমকে দাঁড়িয়ে যায়
যত অশ্বমেধের ঘোড়া
এমনি শহর ওরা বানিয়ে রেখেছে।
মহারাজ, তবে আজ তুমিও যজ্ঞের আশা ছাড়ো
ওই দ্যাখো কালিগুলার দামাল ঘোড়াটা
ইতিহাসে পাথর সেজেছে।
এ শহরকে তুমি চেনো না মহারাজ
হাততালি দিলে পিল পিল করে
বেরিয়ে পড়ে অক্ষৌহিণী সেনা
এরা সব সংসপ্তক।
হাজার বছর ধরে মার খেতে খেতে
এ মাটি এখন পাথর
এ বড় কঠিন শহর মহারাজ,
দ্যাখো কী বেইজ্জত, অশ্বমেধের ঘোড়া
ময়দানে গিয়ে মুখ দেয় অর্বাচীন ঘাসে।
কিংবা তাঁর ‘কবিতা সংগ্রহ’-এর নীচের কবিতাটি।
সব দিতে পারি
দিতে পারি আমাদের সব গোপন অহংকার
ভাষার মালা গেঁথে অনিঃশেষে
দিতে পারি আমাদের দিন ফুরোবার আশা ও নিরাশা
বিনাশর্তে হলুদ খামেতে পুরে ডাকবাক্সে
দিতে পারি বাহান্ন বিঘার ছায়াবীথির কুসুমবাস
চৈত্র দিনের খ্যাপা হাওয়া বিজন দুপুরে
দিতে পারি ঘাট বাঁধানো পুকুরের শান্ত শীতলতা
তৃষ্ণার্তের প্রহরে অযাচিতে।
দিতে পারি অভিমানী হৃদয়ের মৌনভাষ।
অনিদ্রাকাতর রাত্রির নিঃসঙ্গ মুহূর্তে
দিতে পারি আমাদের নিকানো দাওয়ার আলপনা
মাঘমণ্ডলের ব্রতকথা, আশ্বিনের ঘ্রাণ
দিতে পারি এই জেনে, তোমার শিয়রে ওরা জেগে থেকে
আমাদের শিকড়ে দেবে জল আর রৌদ্রের খবর।
বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক শিশিরকুমার দাশ কৃষ্ণ ধরের কবিতা সম্পর্কে যা লিখেছেন তা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘সুমিত শব্দচয়ন, রূপময় চিত্রকল্প রচনা, এবং সূক্ষ্ম ভাবাবেশ তাঁর কবিতাগুলির প্রধান আকর্ষণ।’
কবির বয়স এখন বিরানব্বই বছর। এখনো তাঁর চিন্তা ও মনন আগের মতোই সক্রিয়। এখনো তিনি আগের মতোই প্রেরণাদায়ী কবিতা লিখে যাচ্ছেন। এশিয়াটিক সোসাইটির এপ্রিল, ২০২০ সংখ্যার বুলেটিনে প্রকাশিত তাঁর কবিতাটি পড়লেই পাঠক সে কথা বুঝতে পারবেন।
নির্ভয়
ব্যাঙ্গমা বলছে ব্যাঙ্গমিকে
শোনো শোনো কান পেতে শোনো
ব্যাঙ্গমি বলে কী আর শুনবো
সবই তো পুরনো পুথির বাক্য একই ছাঁদে ঢালা
সবারই এক কথা-- পালা পালা পালা
কোথায় পালাবে তারা? কার কাছে যাবে?
কে আছে ডেকে নিতে ছাদহীন ঘুঘুচরা ভিটেতে তাদের
একদিন শিখেছিল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে থাকো
এখন ত্রস্ত তারা দিশেহারা পরিযায়ী পাখিদের মতো।
ব্যাঙ্গমা বলছে, এত ঘৃণা, এত বিষ, জমা ছিল
তবে কেন একদিন জেনেছিল মানুষ মানুষের জন্য
মানুষের মাপেই সব কিছুর বাছ ও বিচার
মৃত্যুনীল বিষের অক্ষরে ধ্বংস ও বিনাশের ভয়
আকাশে বাতাসে ছড়ায়
ব্যর্থ করো ব্যর্থ করো তারে
মানুষই ফেরাবে তাকে শুভ চেতনায়
১৪২৭-এর শারদীয় ‘কালান্তর’ পত্রিকায় কবি আলোর পথযাত্রীদের ফিরে আসার ডাক দিচ্ছেন। ফিরে এসো নামের এই কবিতায় তিনি স্বভাবসুলভ মৃদু স্বরে আর একবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করলেন তাঁর বুকের মধ্যে আজীবন সযত্নে লালিত গভীর প্রত্যয়। কবি বলছেন, ‘ওদের ফিরিয়ে আন/ আমরা আবার ওদের সঙ্গে অনেক দূর হাঁটব’
যাবার আগে বলেছিল, আসি
যেমন মেঘ ফিরে আসে নদীজলে
উৎসে ফিরে যাবার এই আকুলতা
কোনো বাধা মানে না
মাঝখানে অনেক বদলে যাওয়া -- ভুলে যাওয়া
সময় ঢুকে যায় সময়ের নিবিড় বুকে
কেউ কি জানতে চায় কোথায় হারিয়ে গেল
সেনেট হলের ডোরিক কলামগুলো
ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে শুয়ে যে স্বপ্ন দেখ
সে আজ কোথায়
গোলদিঘির বুকে বিচ্ছুরিত হত কত রৌদ নীলিমা
হাওয়ায় উড়ে আসত কতশত পাণ্ডুলিপির পাতা
ওদের ফিরিয়ে আন
আমরা আবার ওদের সঙ্গে অনেক দূর হাঁটব .
বিভিন্ন সময়ে তিনি সাম্মানিক পদে থেকে বহুবিধ দায়িত্ব পালন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রথম কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাস মিডিয়া সেন্টারের সভাপতি। ছিলেন কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের রিনেমিং কমিটির সদস্য। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্র সদনের উপাদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।
কবিতা ১.
এক অলীক শহরের গপ্পো।
এ যেন এক অলীক শহরের গপ্পো
তার ঘর বাড়িগুলো দেখতে ঝকঝকে
যেন বা ডানা মেলে এখুনি উড়ে এসেছে
অন্য গ্রহ থেকে।
তাদের এক ঝুল-বারান্দায় লম্বা জোব্বা আর মেঘের টুপি পরে
দাঁড়িয়ে শিস দিচ্ছেন শহরের মেয়র।
রাস্তায় রাস্তায় উজ্জ্বল রূপোলি আলােগুলাে
কামরাঙা ফলের মতাে
হেলমেটপরা ট্রাফিক পুলিশের মাথায় চুমু খাচ্ছে।
শহরের টুরিস্ট নারীদের দিকে না তাকানােই এখন ভব্যতা
কেননা ওরা জন্মদিনের পােশাকে
স্নান করতে নেমেছেন নদীতে।
আশ্বিনের মেঘ দেখলেই
ওদের বাড়ির কথা মনে পড়ে যাবে।
তখন ভিনাস ডি মিলোর ভঙ্গিতে জল থেকে উঠে এসে
নিজস্ব স্বর্গে ফিরে যাবেন লক্ষ্মী মেয়ের মতাে
সবার হাঁ-করা মুখের ওপর দিয়ে।
অলীক শহরটা সেদিন খুব বেজার হবে তাদের ব্যবহারে
তার বুকটা টনটন করে উঠবে ব্যথায়।
ওরা ভাবতে থাকবে
কবে আবার পাখিরা আসবে তার সাজানো বাগানে
কবে তার গাছপালাগুলো আবার সবুজের কনসার্ট বাজাবে ভােরবেলা।
শুধু ফুটপাতের ভিখিরি শিশুটা
খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠবে তিনবার।
শহরের মেয়র তিন সত্যি করেছিলেন
ওকে এবার শীতে একটা কম্বল দেওয়া হবে।
সেদিন থেকে সে স্বপ্ন দেখে
সবার গায়ে রঙ-বেরঙের পশমের পােশাক
সেই শুধু ঠকঠক করে কাঁপছে বােকার মতাে
মেয়রের ম্যাজিকে যদি তার সেই কাপুনিটা থেমে যায়
তাই সে হাততালি দিয়ে উঠল খুশিতে।
কবিতা ২.
আরে ধ্যুৎ! আরে ধ্যুৎ!
লােডশেডিং-এ ঘটনাটা ঘটলাে অদ্ভুত
গােবিনমামার চোখের সামনে।
আস্ত একটা ভূত!
(আরে ধ্যুত! আরে ধ্যুৎ !)
শােনাই না গল্পটা তার
ঘটলাে যা তা চমৎকার
বারান্দায় ঘােরে ফেরে কেটা?
নিশ্চয় হবে কোনাে পেত্নির বেটা।
আসে যায় হাত নাড়ে, হঠাৎ সটকে পড়ে
সুরুৎ সুরুৎ ?
(আরে ধ্যুৎ! আরে ধ্যুৎ!)
কী যে বলো আজগুবি
হাসি পায় শুনে খুবই
তবু বলা চাই তার গল্পটা ভূতের
যেন বা নামতা পড়ে ছয়ের সাতের।
এইসব কালাে ছায়া বিতিকিচ্ছিরি
ভূতেরা নৃত্য করে কী বা তার ছিরি
ভূতের শরীর কেমন ? নরম, লােমশ ?
মুখটা দেখেছে তার কিংবা মুখােশ?
ক’টা হাত? ক’টা পা?
আছে নাকি রণপা ?
নাকিসুরে কাঁদে, নাকি
বাজে জগঝম্পা?
বলাে বলাে সাফ কথা
ভূত নিয়ে মাথাব্যথা
হাসালে গােবিনমামার কাহিনী কিম্ভুত
ভূতেরাও শুনে হাসে।
ছিল যারা আশেপাশে
হঠাৎ চমকে উঠে,
জ্বলেছে বিদ্যুৎ!
কোথা ভূত? কোথা ভূত?
(আরে ধ্যুৎ! আরে ধ্যুৎ!)
কবিতা ৩
তোমার বসন্ত
বসন্তে ফোটাই ফুল, কথা দিচ্ছি এই ফুল
তুলে তোমাকে একগুচ্ছ দেবো চুলে।
দিয়ো। কিন্তু বিহ্বলতা এনো না কখনো চোখে
তার চেয়ে স্বপ্ন দেখো, কে জাগাল চৈত্রদিনে
কে জাগাল আকস্মিকতায়?
আমি কি বসন্ত হ’বো তোমার বসন্ত
স্পর্ধা নিয়ে দোলাবো কি তোমার যৌবন
নতুন বৃষ্টির মতো ধানচারা তোমার শরীর
আমাকে জড়াতে চায়, আমি কিন্তু
বিপন্নের মত তখন লুকোবো মুখ
দুঃখিত হয়োনা অরুন্ধতী।
তোমার বক্ষের স্বর্গ করতলে দিয়েছে
উত্তাপ, চাই না চাই না আমি, ওই দুটি
বিস্মিত আপেল কোনো চিত্রশিল্পীকে দিয়ে।
অনাবৃত উপহার সে আঁকবে আশ্চর্য তুলিতে
আমি হ’বো বিমুগ্ধ দর্শক।
==========={{{{{{{{{{================