"বাড়ি আমার ভাঙ্গনধরা অজয় নদীর বাঁকে,
জল সেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে"
বর্ধমানে কুনুর নদীর উপর কুমুদ সেতু পার হয়ে ডান দিকে গেলে কিছু দূরেই কোগ্রামে পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের জন্মভিটে।
কুমুদরঞ্জনের আমবাগানকে বাঁয়ে রেখে ক্রমশ এগোলে দুদিকে রয়েছে অজয় নদ আর কুনুর নদী । ছোট্ট কুনুর কোগ্রামের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অজয়ে মিশেছে। অজয়ের এ পারে বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, ওপারে বীরভূমের নানুর। মঙ্গলকাব্যের উল্লেখিত উজানী নগর আজকের কোগ্রাম। এখানেই পল্লীকবি কুমুদ রঞ্জনের জন্ম। নদী ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন কবি কুমুদ রঞ্জন।
তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য নদী এবং প্রকৃতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন তাঁকে কবি হতে সহায়তা করেছে।
পল্লীকবির রচিত একাধিক কবিতায় রয়েছে প্রকৃতি ও গ্রাম্য পরিবেশে সৌন্দর্যের বর্ণনা। শিশু বয়সে বেশীরভাগ মানুষই পড়েছে কবি রচিত কবিতা-
আমাদের সঙ্গী
গুটি ছয় পায়রা ও গুটিকত হাঁস রে,
আমাদের ঘরে করে একসাথে বাস রে।
আসে কাক এক ঝাঁক
করে খুব হাঁক ডাক।
কোকিলের কনসার্ট শুনবি তো যাস রে।
দল বেঁধে টুনটুনি আসে হেথা চরতে
বাবুইরা তালগাছে লাগে বাসা গড়তে।
বেনেবুড়ি মারে ডুব
পুণ্যটা করে খুব,
ফিঙে আসে বেছে বছে শুয়োপোকা ধরতে।
ঝাঁক বেঁধে বনটিয়া, কভু আসে মুনিয়া
বলাকার সারি শেষ হয় নাকো গুনিয়া
উড়ে বাজপক্ষী
কত যেন লক্ষী!
কবি কুমুদ রঞ্জন ১৮৮৩ সালের ১লা মার্চ এক বৈদ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পূর্ণচন্দ্র মল্লিক ছিলেন কাশ্মীর রাজসরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাতা ছিলেন সুরেশকুমারী দেবী। তাঁদের পূর্বপুরুষ বাংলার নবাবের থেকে মল্লিক উপাধি লাভ করেন। তাদের পদবী সেন শর্মা বা সেনগুপ্ত।
ছাত্র হিসাবে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। ১৯০৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং বঙ্কিম চন্দ্র স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন ।
বর্ধমান জেলার মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরূপে তিনি কর্মজীবন শুরু.
বর্ধমান জেলার মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় এই স্কুলে পড়তেন বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।
পল্লীকবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলঃ
শতদল (১৯০৬ - ০৭)
বনতুলসী (১৯১১)
উজানী (১৯১১)
একতারা (১৯১৪)
বীথি (১৯১৫)
চুন ও কালি (১৯১৬)
বীণা (১৯১৬)
বনমল্লিকা (১৯১৮)
কাব্যনাট্য দ্বারাবতী (১৯২০)
রজনীগন্ধা (১৯২১)
নূপুর (১৯২২)
অজয় (১৯২৭)
তূণীর (১৯২৮)
স্বর্ণসন্ধ্যা (১৯৪৮)
কবি হিসেবে তিনি সম্মানিত হয়েছেন সর্বত্র।
স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পল্লীকবির বিষয় উল্লেখ করে বলেছেন-কুমুদরঞ্জনের কবিতা পড়লে বাংলার গ্রামের তুলসীমঞ্চ, সন্ধ্যাপ্রদীপ, মঙ্গলশঙ্খের কথা মনে পড়ে।"
তিনি 'জগতারিণী' স্বর্ণপদক লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক 'পদ্মশ্রী' উপাধিতে ভূষিত হন।
আবার বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিষ্ঠান - 'সাহিত্যতীর্থ' এর তীর্থপতি ছিলেন কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক।
১৯৭০ সালের আজকের দিনে (১৪ ডিসেম্বর) সমস্ত সাহিত্য কবিতা অনুরাগী মানুষকে গভীর শোকের নিমজ্জিত করে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
আজও তাঁর কবিতায় সৃষ্ট প্রাকৃতিক রূপ, রস, অনুভূতি, বাংলা সাহিত্যের পরোতে পরোতে তাকে চিরঞ্জীবী করে রেখেছে। অজয় নদ, কুনুর নদীর স্রোত তাঁর উপস্থিতি অনুভব করায়।
তিনি 'জগতারিণী' স্বর্ণপদক লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক 'পদ্মশ্রী' উপাধিতে ভূষিত হন। ।
========={{{{{{=======}}}}}==========
No comments:
Post a Comment