আশাপূর্ণা দেবী
১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই আশাপূর্ণা দেবীর মৃত্যু হয়৷।
আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কারসহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। বিশ্বভারতীর শ্রেষ্ঠ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ থেকে অজস্র সম্মানিক ডক্টরেট আর সোনার মেডেল পেয়েছেন তিনি৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৬৬ সালে ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসের জন্য তাঁকে প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার । ১৯৫৪ সালে তিনি ‘লীনা পুরস্কার’ পান৷ ১৯৬৩ সালে ‘ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন ৷ ১৯৭৬ সালে তিনি ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ পেয়েছেন এবং একই বছর তিনি ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত হন৷ ১৯৭৪ সালে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করেন।
১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার পটলডাঙ্গায় মামাবাড়িতে আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, তখনকার বিখ্যাত বাংলা পত্রিকাগুলিতে তিনি ছবি আঁকতেন। তৎকালীন বিখ্যাত সি. ল্যাজারাস কোম্পানিতে নক্শা আঁকার কাজ করতেন তাঁর বাবা। মা সরলাসুন্দরী দেবীর কাছে সাহিত্যপাঠই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র উপভোগ্য। তিনি ছিলেন স্বনামধন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জ্ঞানপ্রকাশ লাইব্রেরি ও চৈতন্য লাইব্রেরির সদস্যা। আশাপূর্ণা দেবী তাঁর বাবা-মায়ের নয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান ছিলেন। তাঁর চার বোন যথাক্রমে স্নেহলতা, রত্নমালা, সম্পূর্ণা ও লেখা এবং চার ভাই যথাক্রমে বীরেন্দ্রনাথ, ধীরেন্দ্রনাথ, হীরেন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথ। আশাপূর্ণার আদি বাড়ি ছিল হুগলির বেগমপুরে। তবে কলকাতায় তাঁরা থাকতেন আপার সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে। ১৯২৪ সালে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয়৷ তাঁদের তিন সন্তান যথাক্রমে পুষ্পরেণু, প্রশান্ত ও সুশান্ত।
আশাপূর্ণা দেবীর পড়াশোনা প্রথাগতভাবে এগোয়নি। আশাপূর্ণা একটি দিনের জন্যও কোন ইস্কুলে পড়েন নি। তার নিজের কথায়,- "আমাদের বাড়ি খুব রক্ষণশীল ছিল। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পাট ছিল না। স্কুলে যাওয়ার সুযােগ হয়নি। তবে পড়েছি সর্বদাই। সেই পড়াটি বাড়িতে এবং শুধুই গল্প উপন্যাস।" তাঁর এই সাহিত্যপ্রীতির ব্যাপারে মায়ের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। কেননা আশাপূর্ণার মায়ের ছিল ভীষণ সাহিত্যপ্রীতি। তখনকার দিনে প্রকাশিত সমস্ত গ্রন্থাবলীই তাঁর ছিল এবং প্রতিনিধি-স্থানীয় সমস্ত পত্রিকাও তার বাড়িতে আসত। অতএব আশাপূর্ণা মায়ের দৌলতেই পেয়ে যেতেন অফুরন্ত মনের খােরাক।
তাঁর ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর কঠোর অনুশাসনে পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনার পথ বন্ধ ছিল। পড়াশোনা করলে মেয়েরা বাচাল হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁর ঠাকুরমা কোনোদিন নারীশিক্ষাকে প্রশ্রয় দেননি এবং তাঁর দাপটের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষমতা পরিবারে আর কারো ছিলও না। তবুও এই পরিবেশেও মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে দাদাদের পড়া শুনে শুনে তিনি নানা পাঠ আয়ত্ত করেছিলেন। তাঁর মা সরলাসুন্দরী দেবী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সূত্রে ‘সাধনা’, ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘সবুজপত্র’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘বসুমতী’, ‘সাহিত্য’, ‘বালক’, ‘শিশুসাথী’, ‘সন্দেশ’ প্রভৃতি ষোলো-সতেরোটি পত্রিকা এবং দৈনিক পত্রিকা ‘হিতবাদী’ প্রভৃতি পত্রিকা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আশাপূর্ণা। তাছাড়াও বাড়িতে সেযুগের সমস্ত বিখ্যাত বইয়ের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। সাহিত্যের এই আবহেই মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই মায়ের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনা করেন আশাপূর্ণা দেবী।
সাহিত্য জগতে তাঁর পদার্পণ ১৯২২ সাল থেকে৷ তেরো কিংবা চোদ্দ বছর বয়সে তিনি ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় ‘বাইরের ডাক’ নামে একটি কবিতা পাঠান৷ এই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পরই তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ শুরু হয়৷ এটিই ছিল তাঁর লেখা প্রথম কবিতা। তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘পাশাপাশি’। ‘শিশুসাথী’র পাশাপাশি ‘মৌচাক’, ‘রংমশাল’, ‘খোকাখুকু’ ইত্যাদি সমস্ত পত্রিকায় তিনি লিখতে থাকেন। ‘খোকাখুকু’ পত্রিকায় একবার ‘স্নেহ’ বিষয়ে কবিতা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় যেখানে আশাপূর্ণা নিজে ‘স্নেহ’ নামে একটি কবিতা পাঠান। এই কবিতা লেখার জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। মন্মথ সান্যালের অনুরোধে শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম বড়োদের গল্প লেখেন তিনি। কমলা পাবলিশিং থেকে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘প্রেম ও প্রয়োজন’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। ‘কথাসাহিত্য’ পত্রিকার পক্ষ থেকে ধারাবাহিক উপন্যাস লেখার জন্য সুযোগ আসে তাঁর কাছে। এমনকি ‘মিত্র ও ঘোষ’ প্রকাশনা থেকে শ্রী ভানু রায় তাঁকে একটি বড় উপন্যাস লেখার অনুরোধ করেন। এই সব তাগিদেই তিনি লিখে ফেলেন যুগান্তকারী উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’। ১৯৬৪ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়। আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বিখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাসের প্রথম উপন্যাস এটিই। ১৯৬৫তে এই উপন্যাসটি রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হয়। তবে তাঁর প্রথম গ্রন্থ ছিল ‘ছোটঠাকুর্দার কাশীযাত্রা’ যা ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বৃন্দাবন ধর এণ্ড সন্স পাবলিশিং থেকে। এই বইটি আসলে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ছোটদের গল্পসমূহের সংকলন ছিল।
আশাপূর্ণা দেবীর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ১৭৬টি উপন্যাস। এছাড়াও ছোটগল্প সংকলন, ছোটদের বই সহ মোট তেষট্টিটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছিলেন তিনি। কবিতা, রম্য রচনা, স্মৃতিমূলক রচনায় তিনি পারদর্শিতার নিদর্শন রেখেছেন। তাঁর রচনার মধ্য দিয়ে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেগেছেন তিনি। ছোটো থেকে বড় যেকোনো বয়সের মানুষের মনেই তাঁর লেখা ছাপ ফেলেছে। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- প্রেম ও প্রয়োজন, মিত্তির বাড়ি, অগ্নিপরীক্ষা, যোগ বিয়োগ, ছাড়পত্র, নবজন্ম, সমুদ্র নীল আকাশের নীল, নদী দিকহারা, মেঘ পাহাড়, তিন ছন্দ, নির্জন পৃথিবী, কল্যাণী, শশীবাবুর সংসার প্রভৃতি। সমাজে মেয়েদের অবরোধ, বন্দীদশা ঘোচাতে তাঁর উদ্বেগ ছিল মাত্রাধিক। তিনি দেখেছেন সমাজে সর্বত্রই নারীর অনধিকারের অস্তিত্ব আর এই অনধিকারের প্রশ্ন থেকেই তিনি লেখেন ট্রিলজি — ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’ এবং সবশেষে ‘বকুলকথা’ যা আজও সমাদৃত। তিনটি যুগের চিত্র যেন তিনটি প্রজন্মের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে এই লেখাগুলিতে। আবার সর্বত্রই মেয়েদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি তিনি, ঠিক এবং ভুলের তফাতটুকু তুলে ধরেছেন তিনি৷ এক জায়গায় লিখছেন, ‘‘মেয়েরা সবের প্রতিই বড় বেশি আসক্ত। তুচ্ছ বস্তুর প্রতিও আসক্তি। আবার মানুষের প্রতিও এক ধরনের তীব্র আসক্তি। স্বামী-সন্তান এরা একান্তই ‘আমার হোক’। …যত দিন না তারা এই ‘আসক্তি’ ত্যাগ করতে পারবে, ততোদিন মুক্তি আসবে না।’’ তাঁর স্মৃতিকথামূলক রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার সাহিত্যচিন্তা’, প্রভৃতি।
তাঁর লেখা ছোটগল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ছিন্নমস্তা’ যেখানে নতুন যুবতী বউয়ের ছেলেকে ক্রমশ দখল করে নেওয়ার রাগে একমাত্র সন্তানের মৃত্যুকামনা করে বসে বিধবা মা জয়াবতী। আবার ‘স্থিরচিত্র’ গল্পটিতে বিমান দুর্ঘটনায় সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া একমাত্র ছেলের মৃত্যুসংবাদে শোকে পাথর মা ছেলের চিঠি পেয়ে যখন জানতে পারেন দুর্ঘটনায় চার হাত পায়ের তিনটিই সে হারিয়েছে, তখন তিনি অপরিচিত অদ্ভুত জীব হিসেবে তাঁকে কল্পনা করেন৷ এভাবেই তাঁর লেখা ‘কসাই’, ‘পদাতিক’, ‘ভয়’, ‘ইজিচেয়ার’ ইত্যাদি ছোটগল্পগুলিতে চেনা সম্পর্কের ওপরে সাঁটা অদৃশ্য মুখোশগুলো তিনি খুলে দিতে চেয়েছেন। ভারতের নানা প্রাদেশিক ভাষায় তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্পগুলি অনূদিত হয়েছে। হিন্দির পাশাপাশি ওড়িয়া, মালয়ালম, অসমিয়া, মারাঠি এবং ইংরেজিতেও তাঁর লেখার অনুবাদ হয়েছে। আশাপূর্ণা দেবীর লেখা সব থেকে বেশি অনূদিত উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ যা প্রথম ১৯৭২ সালে হিন্দিতে অনূদিত হয়। তাঁর ‘শশীবাবুর সংসার’, ‘যোগবিয়োগ’, ‘কল্যাণী’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘ছায়াসূর্য’, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘বকুল কথা’, ‘বলয়গ্রাস’ ইত্যাদি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। হিন্দিতে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ অবলম্বনে উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত ছবি ‘ছোটি সি মুলাকাত’। পরিসংখ্যানের বিচারে ১৭৯টি উপন্যাস, ৩২টি ছোটগল্প সংকলন, ৪৯টি ছোটদের বই লিখেছেন আশাপূর্ণা। এগুলির মধ্যে ১৬টি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, ৭টি উপন্যাসের নাট্যরূপ মঞ্চে উপস্থাপিত হয়েছে। অনুবাদের মধ্যে ৪৯টি উপন্যাস হিন্দিতে, ১টি অসমিয়ায়, ওড়িয়া ভাষায় ৪টি, মালয়ালম ভাষায় ৫টি এবং ইংরেজিতে ২টি উপন্যাসের অনুবাদ হয়েছে এখনও পর্যন্ত।
সমালােচক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, "আমাদের সাহিত্যে ঐ ছন্দটিকে সর্বপ্রথম ধরিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পগুচ্ছের গল্পের মধ্যে। ... .. মনের এ্যালকেমি-গুণে চোখে দেখা, কানে শােনা সামান্যটুকু অসামান্য রূপ পরিগ্রহ করেছে। সেখানেই প্রতিভার প্রকাশ। আমরা যাকে পঞ্চেন্দ্রিয় বলি তার প্রত্যেকটিই অশেষজ্ঞানের উৎস। যাঁরা জাত লিখিয়ে, জাত শিল্পী, তাঁদের শিক্ষা একদিকে ইন্দ্রিয়গত, অপরদিকে হুদয়গত।..একথা আশাপূর্ণা দেবীর বেলায় যতখানি সত্য এমন সকলের বেলায় নয়।"
বাঙালী পাঠক সমাজে শরৎচন্দ্র এবং পরবর্তীকালে তারাশংকর এবং বিভূতিভূষণ যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিক কালে আশাপূর্ণা দেবী সেই জনপ্রিয়তার অধিকারিণী। বলা বাহুল্য জনপ্রিয়তাই সার্থকতার একমাত্র প্রমাণ নয়। জনপ্রিয়তার সঙ্গে উৎকর্ষ যুক্ত হলে তবেই সে জনপ্রিয়তা স্থায়িত্ব লাভ করে। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, রাজারাজড়ার জয়-পরাজয়, রাজত্বকাল, কর্মকাণ্ডের সন-তারিখের জটিলতায় প্রকৃত ইতিহাসের অনুসন্ধান নিষ্ফল। ঘরে বসে মানুষ যেখানে সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় নিত্যদিনের জীবন যাপন করছে সেখানেই মানুষের সত্যিকার ইতিহাস রচিত হচ্ছে। আমরা যাকে কথাসাহিত্য বলি তার উপকরণ সেই যথার্থ জীবনের ইতিহাস থেকেই সংগ্রহ করতে হয়।
আশাপূর্ণার ছােটোগল্পে সমাজই মুখ্য। সামাজিক নানা সংস্কারের অনর্থক অত্যাচারের দিকটি তিনি তুলে ধরেন তার গল্পে। যে নারীরা অত্যাচারিত হয়, তারা সংস্কার-মুক্ত নয়। সমাজশৃঙ্খলিত অবস্থাই তাদের বিনষ্টির কারণ হয়ে ওঠে। যেমন দেখি 'একটি মৃত্যু ও আরেকটি', 'পরাজিত হুদয়', 'কার্বন কপি' প্রভৃতি গল্পে। 'কার্বন কপি', গল্পে নির্জন প্রবাসগৃহে পুরােনাে প্রণয়ীর উপস্থিতিতে রাত্রিবাস অর্ণব হয় আধুনিকা উত্তর-ত্রিশ ডিভাের্সীর পক্ষে। 'পরাজিত হুদয়' গল্পে ধর্ষিতা সন্তানকে কোল নিতে সাহস পান না আধুনিক বাবা-মা। কিংবা 'বঞ্চক' গল্পে জামাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েও মা তরুণী কন্যাকে সংবাদ না দিয়ে তাকে উপহার দেন বিয়েবাড়ির একটি সন্ধ্যা। বাহ্যিক দিক থেকে আধুনিক হয়েও আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ যে এখনও পুরােনাে সংস্কারের সীমানা পেরােতে পারেনি, তার নানা দৃষ্টান্ত আশাপূর্ণা তুলে ধরেন কখনাে কৌতুকে, কখনাে নির্মমতার সঙ্গে 'সবদিক বজায় রেখে’, ‘বে-আ’, ‘স্বর্গের টিকিট', 'বড় রাস্তা হারিয়ে', 'ঘূর্ণমান পৃথিবী' প্রভৃতি গল্পে। আশাপূর্ণা দেবীর ছোট গল্প সম্পর্কে সাম্প্রতিক কালের কথাসাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন মন্তব্য করেছেন— "বড়াে কথা ছােটো করে বলায় তিনি ওস্তাদ, মনুষ্যজীবনের বড় বড়াে ধাক্কাগুলিকে ছােটোগল্পের ছােটো পরিসরের মধ্যে ধরে ফেলায় তার অনায়াস নৈপুণ্য।"
=={{{{{{{{{{{((({∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}})}}}=====
No comments:
Post a Comment