Monday, 11 July 2022

পত্র পত্রিকা সম্বাদ। নবযুগ। ১৯২০ এর ১২ জুলাই। Vol -793. Dt -12.07.2022. ২৬ আষাঢ়,১৪২৯ . মঙ্গলবার। The blogger in literature e-magazine.

নবযুগ 

সে সময়ে সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতা ছিল না। তা সত্তেও নজরুলের সংবাদ তৈরির কাজ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং নজরুলের সংবাদ লেখন এবং শিরোনামের গুণে পত্রিকাটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

একটি সান্ধ্য-দৈনিক রাজনৈতিক পত্রিকা।

কাজী নজরুল ইসলাম ও রাজনীতিবিদ কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি নিজ অর্থে এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। তবে পত্রিকাটিতে সম্পাদকের নাম থাকার বদলে পরিচালকের নাম থাকতো।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের প্রথম দিকে, ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটস্থ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'র অফিসঘরে থাকতেন কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদ। এঁরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে নিজেদের মতো একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। সে সময়ে এঁদের প্রধান পরামর্শক ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী। এছাড়া সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী ও মঈনুদ্দীন হোসাইন-এর সাথে পরামর্শ করেছিলেন।

একই সময়ে ফজলুল হক তাঁর কৃষক-প্রজা পার্টি'র মুখপত্র হিসেবে একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা এই সময়ে ভাবছিলেন। ফজলুল হকের সমস্যা ছিল পত্রিকা পরিচালনা এবং লেখার জন্য উপযুক্ত লেখক। এই অবস্থায় তিনি- বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হকের শরণাপন্ন হন এবং ফজলুল হক তাঁর ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে মোজাম্মেল হককে ডেকে পাঠান। তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশের সম্পাদনা এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য উপযুক্ত লোকের অভাবের কথা বলেন। এই আলোচনায় মোজাম্মেল হক পত্রিকার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম, মুজাফ্ফর আহমদ-সহ আরও কিছু লোকের কথা বলেন। এরপর এঁদের সবাইকে নিয়ে ফজলুল হক একটি সভা ডাকেন।

ফজলুল হক তাঁর ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে নতুন পত্রিকার জন্য আলোচনা সভায় উপস্থিত হন কাজী নজরুল ইসলাম, মুজাফ্ফর আহমদ, মোজাম্মেল হক, নবনূর পত্রিকার প্রাক্তন ম্যানেজার উমেদ আলী মিয়া, নূর লাইব্রেরির মালিক মঈনুদ্দীন হোসাইন, সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী ও করুণা বাঁশদোহার। মোজাম্মেল হক ছাড়া বাকি ছয় জনকে সম্পাদক পদে নেওয়া হয়েছিল। এঁদের প্রত্যেকের বেতন নির্ধারিত হয়েছিল মাসিক ৬০ টাকা। এর ভিতরে ওয়াজিদ আলী'র নামে পত্রিকার ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছিল।

এই আলোচনা শেষে পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদকে। প্রথম পত্রিকার নাম নির্বাচন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। শেষপর্যন্ত নজরুলের প্রস্তাব অনুযায়ী পত্রিকার নাম রাখা হয় 'নবযুগ'।

এই পত্রিকা প্রকাশের জন্য তিনি একটি প্রেস কিনেছিলেন। তবে এই প্রেসটি পত্রিকা প্রকাশের উপযোগী ছিল না। তাই ফজলুল হক অনেক টাকা করে প্রেসটিকে পত্রিকা প্রকাশের উপযুক্ত করে তোলেন। এই সময় লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে এই পত্রিকার সংশ্রব ত্যাগ করেন। তবে তিনি তাঁর নামে পত্রিকার ছাড়পত্র গ্রহণে আপত্তি করেন নি।

পত্রিকা প্রকাশের বড় অসুবিধা ছিল সংবাদসমূহ পত্রিকার উপযোগী বাংলা ভাষায় লেখা। এরূপ লেখায় ফজলুল হক অভ্যস্ত ছিলেন না। এই সমস্যা অন্যান্য সম্পাদকদেরও ছিল। এই কারণে সে সময়ে সম্পাদকীয় লেখার জন্য সে সময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ভাবা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদের পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়েছিল। তবে সম্পাদক হিসেবে এঁদের নাম পত্রিকায় থাকতো না। কিন্তু প্রধান পরিচালক হিসেবে ফজলুল হকের নাম ছাপ হতো।

তবে এই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের লেখা সম্পাদকীয় সরকারে রুদ্র রোষে পড়ে। ভারতের স্বাধীনতা ও গণজাগরণ-বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হওয়ার জন্য, ব্রিটিশ সরকার পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সতর্ক করে দেয়। তারপরেও এই জাতীয় লেখা প্রকাশের কারণে, এক পর্যায়ে পত্রিকার জামানতের জন্য প্রদেয় ২,০০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২,০০০ টাকা জামানত দিয়ে নবযুগ পুনরায় প্রকাশিত হতে থাকে।

কিন্তু এর কিছুদিন পর ফজলুল হকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে এক বছরের মধ্যে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

এই পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়গুলো নজরুলের যুগবাণী নামক প্রবন্ধ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো-

আমাদের শক্তি স্থায়ী হয় না কেন?
উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন
কালা আদমিকে গুলি মারা
গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ
ছুতমার্গ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় শিক্ষা
ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ
ধর্মঘট
বাংলা সাহিত্যে মুসলমান
বাঙালির ব্যবসাদারি
ভাব ও কাজ
মুখ বন্ধ
মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?
রোজ কেয়ামত- বা প্রলয় দিন
লাট-প্রেমিক আলি ইমাম
লোকমান্য তিলকের মৃত্যুতে বেদনাতুর কলিকাতার দৃশ্য (স্মৃতি)
সত্য-শিক্ষা
শ্যাম রাখি না কুল রাখি

এর দুটি প্রবন্ধ দুটি 'বকুল পত্রিকা'য় প্রকাশিত হয়েছিল।
জাগরণী [বকুল পত্রিকা। আষাঢ় ১৩২৭]
নবযুগ [বকুল পত্রিকা। আষাঢ় ১৩২৭]



১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর উদ্যোগে এবং কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় পুনরায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে খুলনার মাওলানা আহমদ আলী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুবছর পত্রিকাটি চালু থাকার পর, ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

একবার ইরাকের রাজা ফয়সালকে নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল সেই সংবাদের শিরোনাম করেছিলেন,

‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরান সখা ফয়সুল হে আমার।’

=={{{{{{{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}}}}}===

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...