মৃত্যু সেপ্টেম্বর ১১, ১৯৫৮ বিখ্যাত কানাডীয় কবি।
জন্ম জানুয়ারি ১৬, ১৮৭৪ তাকে ইউকনের চারণকবি বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কানাডার উত্তরাঞ্চলের পটভূমিতে লেখা বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে, "The Shooting of Dan McGrew", "The Law of the Yukon", এবং "The Cremation of Sam McGee" শিরোনামের কবিতা। তার লেখার প্রাঞ্জল বর্ণনাশৈলীর কারণে পাঠকেরা অনেক সময় তাকে ক্লনডাইকের স্বর্ণখনির অভিযাত্রী বলে ভেবে বসতো, যদিও বাস্তবে তিনি ছিলেন একজন ব্যাংক কেরানী।
সমাধিস্থল - লেনচিয়াক্স, কোটেস ডি’আর্মোর, ফ্রান্স।
দাম্পত্যসঙ্গী জার্মেইন বোর্গোইন
সন্তান আইরিশ সার্ভিস।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -হিলহেড হাই স্কুল, গ্লাসগো; গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়.
ইউকনের পটভূমিতে লেখা কবিতা ছাড়াও সার্ভিস দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, এবং নিউজিল্যান্ডের পটভূমিতে কবিতা লিখেছেন।
তাঁর বিখ্যাত দুটি কবিতা ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউ’ এবং ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম ম্যাকগি’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘সঙ্স অব সরডো’ নামক কাব্যগ্রন্থে যেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৭ সালে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, গ্রন্থটির লন্ডন সংস্করণের তেমন নাম থাকলেও আমেরিকা সংস্করণে সেটির নাম ছিল ‘দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন অ্যান্ড আদার ভার্সেস’। ১৯৬০ সালে টরন্টো থেকে প্রকাশিত ‘কালেকটেড পোয়েমস অব রবার্ট সার্ভিস’ গ্রন্থের আয়তন সাতশ পৃষ্ঠার বেশি। পরিমাণগত এই বিষয়টি উল্লেখ করছি এ জন্য যে লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী, কানাডায় অভিবাসী এই কবির সারা জীবনে সামগ্রিক কাব্যপ্রয়াস কিন্তু বিশাল। মোট ষোলোটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন তিনি। কথাসাহিত্যের সংখ্যা সাত। এর বাইরেও তিনটি গদ্যগ্রন্থ রয়েছে, যার দুটি হলো স্মৃতিকথামূলক। ১৯৪৫ এবং ১৯৪৮ সালে কবি রবার্ট সে দুটি লিখেছিলেন ‘প্লাওম্যান অব দ্য মুন: অ্যান অ্যাডভেঞ্চার ইনটু মেমরি’ এবং ‘হারপার অব হেভেন: অ্যা রেকর্ড অব রেডিয়ান্ট লিভিং’ শিরোনামে। বলে রাখা যেতে পারে, সে গ্রন্থ দুটিও প্রকাশিত হয়েছিল আমেরিকা থেকেই। ১৯৭৬ সালে রবার্টকে নিয়ে প্রথম জীবনী লিখেছিলেন কার্ল এফ ক্লিঙ্ক। টরন্টো থেকে প্রকাশিত সে বইটি ছাড়াও ২০০৬ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ইনিদ মলোরি রচিত গবেষণালব্ধ জীবনীগ্রন্থ ‘রবার্ট সার্ভিস: আন্ডার দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন’।
একুশ বছর বয়সে রবার্ট সার্ভিস কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভ্যাঙ্কুভারে আসেন। সেখানে কাজও করতে শুরু করেন তিনি। কাজের ফাঁকে শুরু করেন কবিতা লিখতে। দু-চারটি করে কবিতা পত্র-পত্রিকায় পাঠাতেও শুরু করেন একসময়। যদিও জানা যায়, নিজের ষষ্ঠ জন্মদিনে প্রথম কবিতাটি লিখেছিলেন রবার্ট।
১৮৯৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে কানাডার ইউকন অঞ্চলে সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়। সে ঘটনা সারা উত্তর আমেরিকা এমনকি ইউরোপেও এমন আলোড়ন তুলেছিল যে প্রায় লোকবসতিহীন ছোট্ট এই বরফাচ্ছাদিত এলাকায় কিছুদিনের মধ্যেই ভিড় জমায় লক্ষাধিক মানুষ। লক্ষ্য ছিল তাদের একটাই – সোনা আহরণ। ‘দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন’ গ্রন্থের প্রথম কবিতাটিই কিন্তু নামকবিতা। প্রথম পঙ্ক্তিতেই বক্তার সহজ স্বীকারোক্তি ‘I wanted the gold, and I sought it’। ইউকনের স্থানীয় এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোকে তাঁর কবিতায় ধরেছেন রবার্ট সার্ভিস। আর তাই তাঁর স্বীকৃতি ‘ঞযব নধৎফ ড়ভ ণঁশড়হ’। উপন্যাস ‘দ্য ট্রেইল অব নাইনটি এইট’ এবং আত্মজীবনীতেও রবার্ট কিন্তু সেকালের ইউকনের মানুষ এবং তাদের প্রতিবেশকেও চিহ্নিত করেছেন।
ধরা যাক বর্তমান লেখার শুরুতে উল্লিখিত রবার্টের কবিতা ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউয়ের কথা। রবার্টের সে কবিতাটি আসলে একটি গল্প। কবিতার ছলে গল্প বলা , যে গল্পের ট্রাজিক নায়ক ড্যান ম্যাকগ্রিউ। সোনা খুঁজে-ফেরা মানুষ ড্যান সন্ধ্যার পর বারের পেছনের দিকে বসে পান করছিল। আর দেখছিল তাঁর প্রেমাস্পদ লোও নামের নারীটিকে।
আর সে সময় বারে ঢুকল অচেনা এক পুরুষ। অস্বাভাবিক এক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল সে। নিভে গেল পানশালার বাতি। গুলির শব্দ হলো কয়েকবার। আলো জ্বললে দেখা গেল ম্যাকগিউ এবং ওই অচেনা আগন্তুক দুজনেই মরে পরে আছে। কিন্তু সেই পর্যন্ত মেনে নেওয়া গেলেও, হঠাৎ পাঠক চমকে উঠেন, যখন ওই লোও নামের নারী ম্যাকের পকেট থেকে সোনার থলিটা নিয়ে সটকে যায়।
পড়ে পাঠক চমকে যান এবং সোনার খনির এলাকার দৈনন্দিন এই চিত্রটি কবি রবার্ট সার্ভিসকে করে তোলে তুমুল জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা এতই তুঙ্গে উঠে গিয়েছিল যে ১৯২১ সালে যখন কবিতাটিকে সিনেমা বানানোর প্রস্তাবে তিনি সম্মত হন, তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ডলারের একটি চেক যা তাকে এবং তার পরিবারকে বিহŸল করে তুলেছিল।
এবারে কবিতাটি রচনার পেছনের ঘটনা বলি। সেটি হলো যে পত্রিকায় রবার্ট কবিতা ছাপতেন তার সম্পাদক একদিন তাঁকে বললেন, Give us something about our own bit of earth, we sure would appreciate it. There’s a rich pay streak waiting for someone to work. Why don’t you go in and stake it?’ (আন্ডার দ্য স্পেল অব ইউকন, পৃ. ৬৩) সে কথা শুনে বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি পানশালা অতিক্রম করেন এবং কবিতার গল্পটি তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে। সে রাতেই প্রসবিত হয় কবিতাটি। এই শোকগাথাটির মাসখানিক পর রবার্ট রচনা করেন তাঁর অন্য বিখ্যাত আরেকটি শোকগাথা ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম মাকগি’। জীবনীকার কার্ল জানাচ্ছেন, ঘটনাচক্রে দ্বিতীয় ব্যালাডাটি রচনা হয়েছিল। এক পার্টিতে রবার্ট উপস্থিত হয়েছিলেন অনাহূতভাবে। সেখানে তাঁর প্রিয় যে ধরন অর্থাৎ দর্শকের ভ‚মিকায় ছিলেন তিনি। সেখানে সোনার খনির মোটাসোটা একজন মানুষ গল্প শোনাচ্ছিল, তাঁর বন্ধুর শেষকৃত্যের কথা নিয়ে। আর তেমন সময়েই রবার্টের মাথায় ভাবনাটি আসে।
কবিতাটির শুরু এবং শেষে কবি আট পঙ্ক্তির একটি অসাধারণ স্তবক ব্যবহার করেছেন। দার্শনিক বোধে পুষ্ট সে পঙ্ক্তিগুলো সমকালের চিত্রণ করেও কীভাবে যেন শাশ্বত হয়ে যায়।
কানাডিয়ান পোয়েট্রি’ পত্রিকার ৫৮তম সংখ্যায় (স্প্রিং-সামার ২০০৬) জোয়েল বেটজের প্রবন্ধ রবার্ট সার্ভিসের ‘ওয়ার করেসপনডেন্স অ্যান্ড পোয়েট্রি’ সমকালীন প্রেক্ষাপটে কবির যুদ্ধবিবরণ বুঝতে ভীষণভাবে সহায়ক। জোয়েল জানিয়েছেন, রবার্টের পাঠানো বিবরণ এত বেশি লোমহর্ষক ছিল যে ‘টরন্টো স্টার’ পত্রিকা তাঁর পাঠানো সংবাদের ওপর ছুরি-কাঁচি চালাতে বাধ্য হতেন। অটোয়া থেকে প্রকাশিত ‘জার্নাল’ পত্রিকার সম্পাদক পি ডি রস জানাছেন যে সে বিবরণ বেশি ভয়ঙ্কর হওয়ার কারণে তা হুবহু ছাপানো অসুবিধা হয়ে পড়ে। কারণ সে বিবরণ যুদ্ধে নিহত-আহত সৈনিকদের বাবা-মার জন্য হতে পারতো কঠিন এক বেদনার কারণ।
‘রাইমস অব রেডক্রস ম্যান’ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের বেদনার কথা বলে। তাদের গভীর প্রেমবোধের কথা বলে। শক্ত আবরণের আড়ালে লুকানো সৈনিকদের চোখের জলের কথাও বলে। ‘ফ্লুরেট’ নামে একটি কবিতা আছে বইটিতে। একজন আহত কানাডীয় সৈনিকের বয়ানে কবিতাটি বলা হয়েছে।
বইতে ‘দ্য কল’ নামে একটি কবিতা আছে। যুদ্ধের দামামা যে কীভাবে পুরো সমাজকে, দেশকে, বিশ্বকে পুড়িয়ে দিয়েছে সেটির ছবি পাওয়া যায়। তবে যেমনটি ঘটে সার্ভিসের ক্ষেত্রে সেটি ঘটতে দেরি ঘটল না। রবার্ট সার্ভিসের কবিতা যথার্থ অর্থেই ‘কবিতা’ হয়ে উঠেছে নাকি সেগুলোর সাধারণ ‘পদ্য’ মাত্র সেই প্রশ্ন তুলতে লাগলেন কিছু সমালোচক। কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন প্রত্যক্ষ বিবরণে পটুত্ব থাকলেও রবার্টের কবিতা শিল্পোত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই সমালোচনা থেকে পরের গ্রন্থ ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান’ও রক্ষা পায়নি।
প্যারিসে থাকা স্টিফেন পোওর নামে একজন আমেরিকান বোহেমিয়ান কবির বয়ানে এই রচনা। শুরু হয়েছে যুদ্ধের আগে থেকে, চলেছে যুদ্ধ জুড়ে, শেষ হয়েছে যুদ্ধ-পরবর্তী অভিজ্ঞতা দিয়ে। পুরো বইটি আসলে একটি দীর্ঘ কবিতা, সেটিকে কবি ভাগ করেছেন মোট চারটি ভাগে- বুক ওয়ান, বুক টু ইত্যাদি। শিরোনাম দিয়েছেন: স্প্রিং, আর্লি সামার, লেইট সামার, উইন্টার। বইটির শেষ অংশে ‘দ্য সাইটলেস ম্যান’, ‘দ্য লেগলেস ম্যান’ এবং ‘দ্য ফেসলেস ম্যান’ নামের তিনটি ছোটো কবিতা আছে, যে তিনটিকে সমালোচকেরা যুদ্ধ নিয়ে লেখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কবিতা হিসেবে বিবেচনা করেন।
প্রথম বন্ধনীতে রাখা এই পঙ্ক্তি যুদ্ধ নিয়ে যেকোনো কালের, যেকোনো পক্ষের চ‚ড়ান্ত মূল্যায়ন। যদিও বইটি বিক্রির দৃষ্টিকোণ থেকে অসফল ছিল, এমনটিই জানিয়েছেন ইনিদ রবার্ট সার্ভিসের বরাত দিয়ে। এবং ঠিক এমন একটি সময়েই রবার্টের কবিতার চলচিত্রায়নের আহবান আসতে শুরু করল। ১৯২১ সালেই তিনি প্রথম প্রস্তাব পেলেন ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউ’ কবিতার জন্য। পেয়ে গেলেন পাঁচ হাজার ডলারের চেক (ইনিদ পৃ. ১৭৮)। এরপর তিনি নিমগ্ন হয়ে গেলেন সিনেমার জন্য থ্রিলার লিখতে। ‘শুটিং’-এর পর ‘দ্য রাফনেক’, ‘দ্য পয়জনড প্যারাডাইস’, ‘অ্যা রোমান্স অব মন্ট কার্লো’ সিনেমায় রূপান্তরিত হলো।
১৯৩০ এর দশকটা কবি রবার্ট সার্ভিসের কাব্যকীর্তিতে প্রায় কিছুই যোগ করতে পারেনি। দশকশেষে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘টুয়েনটি বাথ-টাব ব্যালাডস’, ১৯৪০ সালে ‘বাররুম ব্যালাডস’। এরপর আবার এক দশকের বিরতি। ‘সঙ্স অব অ্যা সান লাভার’ (১৯৪৯), ‘রাইমস অব অ্যা রাফনেক (১৯৫০), লিরিকস অব লো-ব্রান্ড’ (১৯৫১), ‘রাইমস অব অ্যা রিবেল’ (১৯৫২), ‘সঙ্স অব মাই সাপার’ (১৯৫৩), ‘ক্যারল অব অ্যান ওল্ড কজার’ (১৯৫৫) এবং ‘রাইমস ফর মাই র্যাগস’ (১৯৫৬) হলো রবার্টের জীবনের শেষ দশকের সৃষ্টি।
চুরাশি বছরের জীবনে রবার্ট সার্ভিস এক হাজারের বেশি কবিতা লিখেছেন। সঙ্গে ছিল ছয়টি উপন্যাস এবং তিনটি গদ্যগ্রন্থ। তিনিই হলেন এমন একজন কানাডীয় কবি যিনি কবিতা লিখে এক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছিলেন। যদিও আমরা আগেই বলেছি, নিজের প্রথম বই প্রকাশের জন্য তিনি নিজের টাকা খরচ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে আলাস্কা যখন রবার্টকে ‘পোয়েট লরিয়েট’ ঘোষণা দেয় তখন যথেষ্ট প্রতিবাদ জানাতে দেরি করেনি কানাডার মানুষ। ১৯৭৬ সালে ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম মাকগি’র ছবি নিয়ে স্ট্যাম্প প্রকাশ করে কানাডা কবি রবার্ট সার্ভিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিল।
ইউকনের ডওসন শহরে রবার্ট সার্ভিসের ব্যবহৃত কেবিনটি ১৯৭১ সালে সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কেবিন হলো সেই ঘর যেখানে রবার্ট সার্ভিস ১৯০৯ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ইংরেজি ভাষায় রচিত সামগ্রিক কাব্যসাহিত্যে তাঁর স্থান কোথায়? ‘দ্য ওয়ার রাইমস অব রবার্ট সার্ভিস, ফোক পোয়েট’ প্রবন্ধে এ্যাডওয়ার্ড জে কওয়ান লিখেছেন: ‘Robert Service is one of the best known, best selling and critically most ignored English language writers of the twentieth century (Studies in Scottish literature, Vol 28,।
There are strange things done in the midnight sun
By the men who moil for gold;
পাঠকের স্মরণে থাকতে পারে ইউকন এমন একটি জায়গা যেখানে বছরের কয়েক মাস মধ্যরাতে আকাশে সূর্য জ্বলজ্বল করে।
১৯০৬ সালে চাকরিস্থলে রবার্ট ক্রিসমাস উপলক্ষে একশ ডলার বোনাস পান। তিনি সে টাকাটি টরন্টোতে অবস্থানরত তাঁর বাবাকে পাঠিয়ে অনুরোধ করেন, বাবা যেন কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেখকের টাকায় বইটি ছাপানোর উদ্যোগ নেন। যদিও পরে আমরা জানতে পারি, প্রকাশক চেকটি ফেরত দেন এবং কবিকে লেখক-সম্মানী দেওয়ার কথা জানিয়ে পত্র লেখেন (আন্ডার দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন, পৃ. ৭২)। ইনিদের জীবনীগ্রন্থে আরও জানা যায়, রবার্ট সার্ভিস জীবনভর এত বেশি লেখক সম্মানী পেয়েছেন, যেটি কানাডায় কবিতার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রবার্টের দ্বিতীয় কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯০৯ সালে। ‘ব্যালাডস অব চিকাগো’ নামের সে বই অল্প দিনেই তাঁর জন্য নিয়ে এসেছিল তিন হাজার ডলারের চেক (ইনিদ, পৃ. ৯৪)। মোট একুশটি কবিতার এই সংকলনের প্রতিটি কবিতাই ভীষণভাবে ইউকনের প্রতিবেশ, সময় এবং মানুষকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি।
১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় ‘রাইমস অব অ্যা রোলিং স্টোন’। ইনিদ জানিয়েছেন, প্রথম বই ছিল রবার্টের কাছে একটি দুর্ঘটনার মতো। দ্বিতীয়টি অনেক খাটুনির ফসল এবং এই তৃতীয় গ্রন্থে এসে তিনি সত্যিকারের আনন্দিত চিত্তে বই লিখলেন (পৃ. ১৪৯)। বইটি বছরের শেষদিকে নিউইয়র্ক এবং টরন্টো থেকে একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়। একই সময়ে রবার্ট ইউকন ছেড়ে ভ্যাঙ্কুভারে চলে যান। বইটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় পরের বছর। এরপর তিনি প্যারিস চলে যান এবং পনের বছর সেখানেই অতিবাহিত করেন।
১৯১৩ সালে রবার্ট প্যারিস যান। এরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৬-তে প্রকাশিত হয় ‘রাইম অব অ্যা রেডক্রস ম্যান’। পরের বইটি আসতে বেশ দেরি হয়েছিল, ১৯২১ সালে। ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান। দুটি কাব্যগ্রন্থই যুদ্ধের অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
ইনিদ জানাচ্ছেন রবার্টের ভাই লেফটেন্যান্ট আলবার্ট সার্ভিস কাজ করতেন ৫২ ব্যাটেলিয়নে, ম্যানিটোবা রেজিমেন্টে (পৃ. ১৭১)। ইনিদ আরও জানিয়েছেন, পত্রিকার লোকেরা যখন যুদ্ধ নিয়ে কবিতা খুঁজছেন ঠিক সে সময় ১৯১৭ এবং ১৯১৮ সালে বুকম্যান সাময়িকীর বেস্ট সেলার লিস্টের শীর্ষে চলে আসে সার্ভিসের বইটি (পৃ. ১৭২)। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৮৯৫ সালে এই বুকম্যান পত্রিকাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমেরিকান বেস্ট সেলার তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল। যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাবের কথা, মৃত মানুষদের জন্য পরিবারের স্বজনদের বিলাপ এবং আহত মানুষদের আর্তনাদে যেন গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা ভার হয়ে আছে। কিন্তু আমাদের জানা আছে, এরপর রবার্ট ‘ওয়ার উইনার্স’ নামে একটি পান্ডুলিপি তৈরি শেষ করেন। সে সময় একদিন একটি আনন্দ উৎসবের পর ফিরে তিনি সেই পান্ডুলিপি ছিড়ে ফেলেন। কারণ যুদ্ধের স্মৃতিকে তিনি তাঁর রচনা থেকে দূরে রাখতে চাইছিলেন। যদিও তারও কয়েক বছর পর ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় রবার্টের মোটাসোটা বই ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান’। সেখানেও আমরা দেখছি রবার্ট সার্ভিস যুদ্ধের দুঃখগাথাকেই বহন করে চলেছেন। সার্ভিসের পক্ষে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই সম্ভব ছিল খুব কাছ থেকে দেখা চিত্রগুলোকে কবিতায় ধারণ করা। কানাডার পত্রিকার জন্য যুদ্ধের সংবাদ প্রেরণের কাজে ফ্রান্সে নিয়োজিত ছিলেন বলেই তিনি সেটি বেশি করে পারছিলেন।
===={{{}={{={={={{=}{{{}}{{={{{{{{{=={{{{{={{