Saturday, 10 September 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। রবার্ট সার্ভিস কানাডীয় উল্লেখযোগ্য কবি। Vol -856. dt -11.09.2022. ২৫ শা ভাদ্র,১৪২৯. রবিবার। The bolgger in litareture e-magazine




রবার্ট সার্ভিস
 

মৃত্যু সেপ্টেম্বর ১১, ১৯৫৮ বিখ্যাত কানাডীয় কবি। 

জন্ম জানুয়ারি ১৬, ১৮৭৪ তাকে ইউকনের চারণকবি বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কানাডার উত্তরাঞ্চলের পটভূমিতে লেখা বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে, "The Shooting of Dan McGrew", "The Law of the Yukon", এবং "The Cremation of Sam McGee" শিরোনামের কবিতা। তার লেখার প্রাঞ্জল বর্ণনাশৈলীর কারণে পাঠকেরা অনেক সময় তাকে ক্লনডাইকের স্বর্ণখনির অভিযাত্রী বলে ভেবে বসতো, যদিও বাস্তবে তিনি ছিলেন একজন ব্যাংক কেরানী।

সমাধিস্থল - লেনচিয়াক্স, কোটেস ডি’আর্মোর, ফ্রান্স।
দাম্পত্যসঙ্গী জার্মেইন বোর্গোইন
সন্তান আইরিশ সার্ভিস।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -হিলহেড হাই স্কুল, গ্লাসগো; গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়.






ইউকনের পটভূমিতে লেখা কবিতা ছাড়াও সার্ভিস দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, এবং নিউজিল্যান্ডের পটভূমিতে কবিতা লিখেছেন।

 তাঁর বিখ্যাত দুটি কবিতা ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউ’ এবং ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম ম্যাকগি’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘সঙ্স অব সরডো’ নামক কাব্যগ্রন্থে যেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৭ সালে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, গ্রন্থটির লন্ডন সংস্করণের তেমন নাম থাকলেও আমেরিকা সংস্করণে সেটির নাম ছিল ‘দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন অ্যান্ড আদার ভার্সেস’। ১৯৬০ সালে টরন্টো থেকে প্রকাশিত ‘কালেকটেড পোয়েমস অব রবার্ট সার্ভিস’ গ্রন্থের আয়তন সাতশ পৃষ্ঠার বেশি। পরিমাণগত এই বিষয়টি উল্লেখ করছি এ জন্য যে লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী, কানাডায় অভিবাসী এই কবির সারা জীবনে সামগ্রিক কাব্যপ্রয়াস কিন্তু বিশাল। মোট ষোলোটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন তিনি। কথাসাহিত্যের সংখ্যা সাত। এর বাইরেও তিনটি গদ্যগ্রন্থ রয়েছে, যার দুটি হলো স্মৃতিকথামূলক। ১৯৪৫ এবং ১৯৪৮ সালে কবি রবার্ট সে দুটি লিখেছিলেন ‘প্লাওম্যান অব দ্য মুন: অ্যান অ্যাডভেঞ্চার ইনটু মেমরি’ এবং ‘হারপার অব হেভেন: অ্যা রেকর্ড অব রেডিয়ান্ট লিভিং’ শিরোনামে। বলে রাখা যেতে পারে, সে গ্রন্থ দুটিও প্রকাশিত হয়েছিল আমেরিকা থেকেই। ১৯৭৬ সালে রবার্টকে নিয়ে প্রথম জীবনী লিখেছিলেন কার্ল এফ ক্লিঙ্ক। টরন্টো থেকে প্রকাশিত সে বইটি ছাড়াও ২০০৬ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ইনিদ মলোরি রচিত গবেষণালব্ধ জীবনীগ্রন্থ ‘রবার্ট সার্ভিস: আন্ডার দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন’।

একুশ বছর বয়সে রবার্ট সার্ভিস কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভ্যাঙ্কুভারে আসেন। সেখানে কাজও করতে শুরু করেন তিনি। কাজের ফাঁকে শুরু করেন কবিতা লিখতে। দু-চারটি করে কবিতা পত্র-পত্রিকায় পাঠাতেও শুরু করেন একসময়। যদিও জানা যায়, নিজের ষষ্ঠ জন্মদিনে প্রথম কবিতাটি লিখেছিলেন রবার্ট।

১৮৯৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে কানাডার ইউকন অঞ্চলে সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়। সে ঘটনা সারা উত্তর আমেরিকা এমনকি ইউরোপেও এমন আলোড়ন তুলেছিল যে প্রায় লোকবসতিহীন ছোট্ট এই বরফাচ্ছাদিত এলাকায় কিছুদিনের মধ্যেই ভিড় জমায় লক্ষাধিক মানুষ। লক্ষ্য ছিল তাদের একটাই – সোনা আহরণ। ‘দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন’ গ্রন্থের প্রথম কবিতাটিই কিন্তু নামকবিতা। প্রথম পঙ্ক্তিতেই বক্তার সহজ স্বীকারোক্তি ‘I wanted the gold, and I sought it’। ইউকনের স্থানীয় এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোকে তাঁর কবিতায় ধরেছেন রবার্ট সার্ভিস। আর তাই তাঁর স্বীকৃতি ‘ঞযব নধৎফ ড়ভ ণঁশড়হ’। উপন্যাস ‘দ্য ট্রেইল অব নাইনটি এইট’ এবং আত্মজীবনীতেও রবার্ট কিন্তু সেকালের ইউকনের মানুষ এবং তাদের প্রতিবেশকেও চিহ্নিত করেছেন।

ধরা যাক বর্তমান লেখার শুরুতে উল্লিখিত রবার্টের কবিতা ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউয়ের কথা। রবার্টের সে কবিতাটি আসলে একটি গল্প। কবিতার ছলে গল্প বলা , যে গল্পের ট্রাজিক নায়ক ড্যান ম্যাকগ্রিউ। সোনা খুঁজে-ফেরা মানুষ ড্যান সন্ধ্যার পর বারের পেছনের দিকে বসে পান করছিল। আর দেখছিল তাঁর প্রেমাস্পদ লোও নামের নারীটিকে।

আর সে সময় বারে ঢুকল অচেনা এক পুরুষ। অস্বাভাবিক এক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল সে। নিভে গেল পানশালার বাতি। গুলির শব্দ হলো কয়েকবার। আলো জ্বললে দেখা গেল ম্যাকগিউ এবং ওই অচেনা আগন্তুক দুজনেই মরে পরে আছে। কিন্তু সেই পর্যন্ত মেনে নেওয়া গেলেও, হঠাৎ পাঠক চমকে উঠেন, যখন ওই লোও নামের নারী ম্যাকের পকেট থেকে সোনার থলিটা নিয়ে সটকে যায়।

পড়ে পাঠক চমকে যান এবং সোনার খনির এলাকার দৈনন্দিন এই চিত্রটি কবি রবার্ট সার্ভিসকে করে তোলে তুমুল জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা এতই তুঙ্গে উঠে গিয়েছিল যে ১৯২১ সালে যখন কবিতাটিকে সিনেমা বানানোর প্রস্তাবে তিনি সম্মত হন, তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ডলারের একটি চেক যা তাকে এবং তার পরিবারকে বিহŸল করে তুলেছিল।

এবারে কবিতাটি রচনার পেছনের ঘটনা বলি। সেটি হলো যে পত্রিকায় রবার্ট কবিতা ছাপতেন তার সম্পাদক একদিন তাঁকে বললেন, Give us something about our own bit of earth, we sure would appreciate it. There’s a rich pay streak waiting for someone to work. Why don’t you go in and stake it?’ (আন্ডার দ্য স্পেল অব ইউকন, পৃ. ৬৩) সে কথা শুনে বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি পানশালা অতিক্রম করেন এবং কবিতার গল্পটি তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে। সে রাতেই প্রসবিত হয় কবিতাটি। এই শোকগাথাটির মাসখানিক পর রবার্ট রচনা করেন তাঁর অন্য বিখ্যাত আরেকটি শোকগাথা ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম মাকগি’। জীবনীকার কার্ল জানাচ্ছেন, ঘটনাচক্রে দ্বিতীয় ব্যালাডাটি রচনা হয়েছিল। এক পার্টিতে রবার্ট উপস্থিত হয়েছিলেন অনাহূতভাবে। সেখানে তাঁর প্রিয় যে ধরন অর্থাৎ দর্শকের ভ‚মিকায় ছিলেন তিনি। সেখানে সোনার খনির মোটাসোটা একজন মানুষ গল্প শোনাচ্ছিল, তাঁর বন্ধুর শেষকৃত্যের কথা নিয়ে। আর তেমন সময়েই রবার্টের মাথায় ভাবনাটি আসে।
কবিতাটির শুরু এবং শেষে কবি আট পঙ্ক্তির একটি অসাধারণ স্তবক ব্যবহার করেছেন। দার্শনিক বোধে পুষ্ট সে পঙ্ক্তিগুলো সমকালের চিত্রণ করেও কীভাবে যেন শাশ্বত হয়ে যায়।

কানাডিয়ান পোয়েট্রি’ পত্রিকার ৫৮তম সংখ্যায় (স্প্রিং-সামার ২০০৬) জোয়েল বেটজের প্রবন্ধ রবার্ট সার্ভিসের ‘ওয়ার করেসপনডেন্স অ্যান্ড পোয়েট্রি’ সমকালীন প্রেক্ষাপটে কবির যুদ্ধবিবরণ বুঝতে ভীষণভাবে সহায়ক। জোয়েল জানিয়েছেন, রবার্টের পাঠানো বিবরণ এত বেশি লোমহর্ষক ছিল যে ‘টরন্টো স্টার’ পত্রিকা তাঁর পাঠানো সংবাদের ওপর ছুরি-কাঁচি চালাতে বাধ্য হতেন। অটোয়া থেকে প্রকাশিত ‘জার্নাল’ পত্রিকার সম্পাদক পি ডি রস জানাছেন যে সে বিবরণ বেশি ভয়ঙ্কর হওয়ার কারণে তা হুবহু ছাপানো অসুবিধা হয়ে পড়ে। কারণ সে বিবরণ যুদ্ধে নিহত-আহত সৈনিকদের বাবা-মার জন্য হতে পারতো কঠিন এক বেদনার কারণ।

‘রাইমস অব রেডক্রস ম্যান’ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের বেদনার কথা বলে। তাদের গভীর প্রেমবোধের কথা বলে। শক্ত আবরণের আড়ালে লুকানো সৈনিকদের চোখের জলের কথাও বলে। ‘ফ্লুরেট’ নামে একটি কবিতা আছে বইটিতে। একজন আহত কানাডীয় সৈনিকের বয়ানে কবিতাটি বলা হয়েছে।

 

বইতে ‘দ্য কল’ নামে একটি কবিতা আছে। যুদ্ধের দামামা যে কীভাবে পুরো সমাজকে, দেশকে, বিশ্বকে পুড়িয়ে দিয়েছে সেটির ছবি পাওয়া যায়। তবে যেমনটি ঘটে সার্ভিসের ক্ষেত্রে সেটি ঘটতে দেরি ঘটল না। রবার্ট সার্ভিসের কবিতা যথার্থ অর্থেই ‘কবিতা’ হয়ে উঠেছে নাকি সেগুলোর সাধারণ ‘পদ্য’ মাত্র সেই প্রশ্ন তুলতে লাগলেন কিছু সমালোচক। কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন প্রত্যক্ষ বিবরণে পটুত্ব থাকলেও রবার্টের কবিতা শিল্পোত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই সমালোচনা থেকে পরের গ্রন্থ ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান’ও রক্ষা পায়নি।

প্যারিসে থাকা স্টিফেন পোওর নামে একজন আমেরিকান বোহেমিয়ান কবির বয়ানে এই রচনা। শুরু হয়েছে যুদ্ধের আগে থেকে, চলেছে যুদ্ধ জুড়ে, শেষ হয়েছে যুদ্ধ-পরবর্তী অভিজ্ঞতা দিয়ে। পুরো বইটি আসলে একটি দীর্ঘ কবিতা, সেটিকে কবি ভাগ করেছেন মোট চারটি ভাগে- বুক ওয়ান, বুক টু ইত্যাদি। শিরোনাম দিয়েছেন: স্প্রিং, আর্লি সামার, লেইট সামার, উইন্টার। বইটির শেষ অংশে ‘দ্য সাইটলেস ম্যান’, ‘দ্য লেগলেস ম্যান’ এবং ‘দ্য ফেসলেস ম্যান’ নামের তিনটি ছোটো কবিতা আছে, যে তিনটিকে সমালোচকেরা যুদ্ধ নিয়ে লেখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কবিতা হিসেবে বিবেচনা করেন।

প্রথম বন্ধনীতে রাখা এই পঙ্ক্তি যুদ্ধ নিয়ে যেকোনো কালের, যেকোনো পক্ষের চ‚ড়ান্ত মূল্যায়ন। যদিও বইটি বিক্রির দৃষ্টিকোণ থেকে অসফল ছিল, এমনটিই জানিয়েছেন ইনিদ রবার্ট সার্ভিসের বরাত দিয়ে। এবং ঠিক এমন একটি সময়েই রবার্টের কবিতার চলচিত্রায়নের আহবান আসতে শুরু করল। ১৯২১ সালেই তিনি প্রথম প্রস্তাব পেলেন ‘দ্য শুটিং অব ড্যান ম্যাকগ্রিউ’ কবিতার জন্য। পেয়ে গেলেন পাঁচ হাজার ডলারের চেক (ইনিদ পৃ. ১৭৮)। এরপর তিনি নিমগ্ন হয়ে গেলেন সিনেমার জন্য থ্রিলার লিখতে। ‘শুটিং’-এর পর ‘দ্য রাফনেক’, ‘দ্য পয়জনড প্যারাডাইস’, ‘অ্যা রোমান্স অব মন্ট কার্লো’ সিনেমায় রূপান্তরিত হলো।

১৯৩০ এর দশকটা কবি রবার্ট সার্ভিসের কাব্যকীর্তিতে প্রায় কিছুই যোগ করতে পারেনি। দশকশেষে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘টুয়েনটি বাথ-টাব ব্যালাডস’, ১৯৪০ সালে ‘বাররুম ব্যালাডস’। এরপর আবার এক দশকের বিরতি। ‘সঙ্স অব অ্যা সান লাভার’ (১৯৪৯), ‘রাইমস অব অ্যা রাফনেক (১৯৫০), লিরিকস অব লো-ব্রান্ড’ (১৯৫১), ‘রাইমস অব অ্যা রিবেল’ (১৯৫২), ‘সঙ্স অব মাই সাপার’ (১৯৫৩), ‘ক্যারল অব অ্যান ওল্ড কজার’ (১৯৫৫) এবং ‘রাইমস ফর মাই র‌্যাগস’ (১৯৫৬) হলো রবার্টের জীবনের শেষ দশকের সৃষ্টি।

চুরাশি বছরের জীবনে রবার্ট সার্ভিস এক হাজারের বেশি কবিতা লিখেছেন। সঙ্গে ছিল ছয়টি উপন্যাস এবং তিনটি গদ্যগ্রন্থ। তিনিই হলেন এমন একজন কানাডীয় কবি যিনি কবিতা লিখে এক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছিলেন। যদিও আমরা আগেই বলেছি, নিজের প্রথম বই প্রকাশের জন্য তিনি নিজের টাকা খরচ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে আলাস্কা যখন রবার্টকে ‘পোয়েট লরিয়েট’ ঘোষণা দেয় তখন যথেষ্ট প্রতিবাদ জানাতে দেরি করেনি কানাডার মানুষ। ১৯৭৬ সালে ‘দ্য ক্রিয়েশান অব স্যাম মাকগি’র ছবি নিয়ে স্ট্যাম্প প্রকাশ করে কানাডা কবি রবার্ট সার্ভিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিল।

ইউকনের ডওসন শহরে রবার্ট সার্ভিসের ব্যবহৃত কেবিনটি ১৯৭১ সালে সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কেবিন হলো সেই ঘর যেখানে রবার্ট সার্ভিস ১৯০৯ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ইংরেজি ভাষায় রচিত সামগ্রিক কাব্যসাহিত্যে তাঁর স্থান কোথায়? ‘দ্য ওয়ার রাইমস অব রবার্ট সার্ভিস, ফোক পোয়েট’ প্রবন্ধে এ্যাডওয়ার্ড জে কওয়ান লিখেছেন: ‘Robert Service is one of the best known, best selling and critically most ignored English language writers of the twentieth century (Studies in Scottish literature, Vol 28,।

There are strange things done in the midnight sun

By the men who moil for gold;

পাঠকের স্মরণে থাকতে পারে ইউকন এমন একটি জায়গা যেখানে বছরের কয়েক মাস মধ্যরাতে আকাশে সূর্য জ্বলজ্বল করে।

১৯০৬ সালে চাকরিস্থলে রবার্ট ক্রিসমাস উপলক্ষে একশ ডলার বোনাস পান। তিনি সে টাকাটি টরন্টোতে অবস্থানরত তাঁর বাবাকে পাঠিয়ে অনুরোধ করেন, বাবা যেন কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেখকের টাকায় বইটি ছাপানোর উদ্যোগ নেন। যদিও পরে আমরা জানতে পারি, প্রকাশক চেকটি ফেরত দেন এবং কবিকে লেখক-সম্মানী দেওয়ার কথা জানিয়ে পত্র লেখেন (আন্ডার দ্য স্পেল অব দ্য ইউকন, পৃ. ৭২)। ইনিদের জীবনীগ্রন্থে আরও জানা যায়, রবার্ট সার্ভিস জীবনভর এত বেশি লেখক সম্মানী পেয়েছেন, যেটি কানাডায় কবিতার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রবার্টের দ্বিতীয় কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯০৯ সালে। ‘ব্যালাডস অব চিকাগো’ নামের সে বই অল্প দিনেই তাঁর জন্য নিয়ে এসেছিল তিন হাজার ডলারের চেক (ইনিদ, পৃ. ৯৪)। মোট একুশটি কবিতার এই সংকলনের প্রতিটি কবিতাই ভীষণভাবে ইউকনের প্রতিবেশ, সময় এবং মানুষকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি।

১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় ‘রাইমস অব অ্যা রোলিং স্টোন’। ইনিদ জানিয়েছেন, প্রথম বই ছিল রবার্টের কাছে একটি দুর্ঘটনার মতো। দ্বিতীয়টি অনেক খাটুনির ফসল এবং এই তৃতীয় গ্রন্থে এসে তিনি সত্যিকারের আনন্দিত চিত্তে বই লিখলেন (পৃ. ১৪৯)। বইটি বছরের শেষদিকে নিউইয়র্ক এবং টরন্টো থেকে একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়। একই সময়ে রবার্ট ইউকন ছেড়ে ভ্যাঙ্কুভারে চলে যান। বইটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় পরের বছর। এরপর তিনি প্যারিস চলে যান এবং পনের বছর সেখানেই অতিবাহিত করেন।

১৯১৩ সালে রবার্ট প্যারিস যান। এরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৬-তে প্রকাশিত হয় ‘রাইম অব অ্যা রেডক্রস ম্যান’। পরের বইটি আসতে বেশ দেরি হয়েছিল, ১৯২১ সালে। ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান। দুটি কাব্যগ্রন্থই যুদ্ধের অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।

ইনিদ জানাচ্ছেন রবার্টের ভাই লেফটেন্যান্ট আলবার্ট সার্ভিস কাজ করতেন ৫২ ব্যাটেলিয়নে, ম্যানিটোবা রেজিমেন্টে (পৃ. ১৭১)। ইনিদ আরও জানিয়েছেন, পত্রিকার লোকেরা যখন যুদ্ধ নিয়ে কবিতা খুঁজছেন ঠিক সে সময় ১৯১৭ এবং ১৯১৮ সালে বুকম্যান সাময়িকীর বেস্ট সেলার লিস্টের শীর্ষে চলে আসে সার্ভিসের বইটি (পৃ. ১৭২)। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৮৯৫ সালে এই বুকম্যান পত্রিকাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমেরিকান বেস্ট সেলার তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল। যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাবের কথা, মৃত মানুষদের জন্য পরিবারের স্বজনদের বিলাপ এবং আহত মানুষদের আর্তনাদে যেন গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা ভার হয়ে আছে। কিন্তু আমাদের জানা আছে, এরপর রবার্ট ‘ওয়ার উইনার্স’ নামে একটি পান্ডুলিপি তৈরি শেষ করেন। সে সময় একদিন একটি আনন্দ উৎসবের পর ফিরে তিনি সেই পান্ডুলিপি ছিড়ে ফেলেন। কারণ যুদ্ধের স্মৃতিকে তিনি তাঁর রচনা থেকে দূরে রাখতে চাইছিলেন। যদিও তারও কয়েক বছর পর ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় রবার্টের মোটাসোটা বই ‘ব্যালাডস অব অ্যা বোহেমিয়ান’। সেখানেও আমরা দেখছি রবার্ট সার্ভিস যুদ্ধের দুঃখগাথাকেই বহন করে চলেছেন। সার্ভিসের পক্ষে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই সম্ভব ছিল খুব কাছ থেকে দেখা চিত্রগুলোকে কবিতায় ধারণ করা। কানাডার পত্রিকার জন্য যুদ্ধের সংবাদ প্রেরণের কাজে ফ্রান্সে নিয়োজিত ছিলেন বলেই তিনি সেটি বেশি করে পারছিলেন।

===={{{}={{={={={{=}{{{}}{{={{{{{{{=={{{{{={{

Friday, 9 September 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। সুকুমার রায়,একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স্ রাইমের" প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার ও নাট্যকার। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।Vol -855. Dt 10.09.2022. ২৪ শা ভাদ্র,১৪২৯. শনিবার

সুকুমার রায়।


"সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে
আকাশ-ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে।
মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে-
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে."

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ১০ ই সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না।


রচনাবলি

আবোল তাবোল
পাগলা দাশু
হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি
খাই-খাই
অবাক জলপান
লক্ষ্মণের শক্তিশেল
ঝালাপালা ও অনান্য নাটক
হ য ব র ল
শব্দ কল্প দ্রুম
চলচ্চিত্তচঞ্চরী
বহুরুপী
ভাষার অত্যাচার। 
সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর কলকাতার এক দক্ষিণ রাঢ়ীয় কায়স্থ বংশীয়[৬] ব্রাহ্ম পরিবারে। সুকুমার ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র। সুকুমারের মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে। তার আদিনিবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। মসূয়াতে বসবাসের আগে তাঁর পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত চাকদহে৷[৭] সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তার দুই ভাই। এ ছাড়াও তার তিন বোন ছিল, তারা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা।

সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তার মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।
তিনি গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এস.সি. (অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান।[৯] সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন।
সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা, 'সন্দেশ', এই সময় প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোটভাই এই কাজে তার সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনেক সদস্য 'সন্দেশ'-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাদের পাশে দাড়ান।

সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।

প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়বার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তার আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মানডে ক্লাব (ইংরেজি ভাষা: Monday Club) নামে একই ধরনের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। মনডে ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা 'জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ' পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি।

ইংলান্ডে থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বিষয়ে কয়েকটি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখনও নোবেল পুরস্কার পাননি। ইতিমধ্যে সুকুমার লেখচিত্রী/প্রচ্ছদশিল্পীরূপেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি আর ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক রচনাগুলো থেকে।

সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা। ব্রাহ্ম সমাজ, রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত একেশ্বরবাদী, অদ্বৈতে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মের এক শাখা যারা ৭ম শতকের অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ঈশ-উপনিষদ মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুকুমার রায় 'অতীতের কথা' নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে - ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষে এই কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তার ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুকুমারের নাটকের শখ বাড়ে। ছেলেবেলায় অন্যের লেখা কবিতা বা গল্পের নাট্যরূপ দিয়ে ভাইবোন, আত্মীয়, বন্ধুদের নিয়ে অভিনয় করা হত, এ বার নিজে নাটিকা লেখা ধরলেন। শেখাতে লাগলেন অভিনয়ও। ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়েই দিব্যি তৈরি হয়ে গেল প্রপ— কম্বলের ধারের ঝালর, ছেঁড়া মোজা, ধোপার পুঁটলি, খড়ি, গোমাটি, চুনকালি ইত্যাদি। আর নাটিকার বিষয়? কৈশোরে রচিত ‘রামধন-বধ’ নাটকের বিষয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। ‘নেটিভ নিগার’ দেখলেই নাক সিঁটকানো র‌্যাম্‌প্‌ডেন সাহেবকে কী করে পাড়ার ছেলেরা জব্দ করল, সে গল্পই হল ‘রামধন-বধ’। তাকে দেখলেই ছেলেরা ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দেয়, আর সাহেব তেড়ে মারতে আসে, বিদ্‌ঘুটে গালি দেয়, পুলিশ ডাকে। আবার স্বদেশি জিনিস নিয়ে বাড়াবাড়িতেও ঠাট্টা করতে ছাড়েননি সুকুমার। ভাই সুবিনয় যখন অলিগলি, বাজার খুঁজে জাপানি বা বিলিতি দ্রব্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে দেশি জিনিস কিনছে, তখন দাদা গান বাঁধলেন— “আমরা দিশি পাগলার দল,/ দেশের জন্য ভেবে ভেবে হয়েছি পাগল!/ (যদিও) দেখতে খারাপ, টিকবে কম, দামটা একটু বেশি,/ (তা হক না) তাতে দেশের-ই মঙ্গল!”

ছাত্রাবস্থাতেই লিখছেন ‘ঝালাপালা’, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’। অভিনয়ের লোক জোগাড় করতে হবে, অতএব বন্ধুবান্ধব নিয়ে তৈরি হয়ে গেল ‘ননসেন্স ক্লাব’। সাদাসিধে অনাড়ম্বর ভাবে আয়োজিত নাটকগুলি স্রেফ নাটকের গুণেই উতরে যেত। প্রায় প্রত্যেকটি নাটকেরই কেন্দ্রে থাকত কিঞ্চিৎ হাঁদা-প্রকৃতির একটি চরিত্র, যে আসলে নাটকের খুঁটি। ওই ভূমিকায় সুকুমার নিজেই অভিনয় করতেন। ‘তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকা’র বিমলাংশুপ্রকাশ রায়ের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, “তাঁর দল গড়ে উঠেছিল অতি সহজ, স্বাভাবিকভাবে, যেমন জলাশয়ের মধ্যেকার একটা খুঁটিকে আশ্রয় করে ভাসমান পানার দল গিয়ে জমাট বাঁধে। সত্যই তিনি খুঁটিস্বরূপ, আমাদের অনেকের আশ্রয়।”
পুণ্যলতার খুদে গল্পগুলি মাতিয়ে রাখত খুদে পাঠকদের। পরের ভাই সুবিনয় (মণি) কয়েক বছর ‘সন্দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। মজার গল্প লিখতেন, খেলাধুলো আর ধাঁধা নিয়ে বই প্রকাশ করেন। ছোট ভাই সুবিমলও লেখক। তাঁর ‘বেড়ালের হারমোনিয়াম’ তো সবার মন ভাল করা একখানা গল্প। সবচেয়ে ছোট বোন শান্তিলতাও (টুনী) ছোটবেলায় ‘সন্দেশ’-এ কবিতা লিখেছিলেন। তবে বলতেই হয়, এঁদের সকলের চেয়ে প্রতিভায় আলাদা ছিলেন সুকুমার।

প্রবল চঞ্চল, ফুর্তিবাজ। সব কিছুতে উৎসাহ, খেলাধুলোর পাণ্ডা। কলের খেলনা ঠুকে ঠুকে দেখত সে, কী করে চলে। বাজনা ভেঙে দেখত, কোথা থেকে আওয়াজ বেরোয়। অসীম কৌতূহল যে! ও দিকে, ছোট লাঠি হাতে ছাদময় তাড়া করে বেড়াত বোর্ডিংয়ের মেয়েদের। বিশাল তিনতলার ছাদের উঁচুতে একটা গোল ফুটো ছিল, এক বার সেটা গলে কার্নিসে নামার চেষ্টা করেছিল! সেই বয়সেই চমৎকার গল্প বলতে পারত তাতা। উপেন্দ্রকিশোরের প্রকাণ্ড একটি বই থেকে জীবজন্তুর ছবি দেখিয়ে টুনি, মণি আর খুসীকে আশ্চর্য মজার গল্প বলত। বই শেষ হয়ে গেলে জীবজন্তুর গল্প বানাত— মোটা ভবন্দোলা কেমন দুলে থপথপিয়ে চলে, ‘মন্তু পাইন’ তার সরু গলাটা কেমন গিঁট পাকিয়ে রাখে, গোলমুখে ভ্যাবাচোখ কম্পু অন্ধকার বারান্দার কোণে দেওয়ালের পেরেকে বাদুড়ের মতো ঝুলে থাকে ইত্যাদি। হেমন্তকুমার আঢ্য লিখছেন, “অসূয়াশূন্য, আঘাতশূন্য, উজ্জ্বল হাস্যরস সৃষ্টিতে আপামর বাঙালীকে যিনি মুগ্ধ করেছেন বাল্যকালের একটি নির্দোষ ক্রীড়া-কৌতুকের মধ্যে তাঁর ভাবী পরিচয় ফুটে ওঠে।”

‘রাগ বানাই’ বলে একটা খেলা ছিল তাতার। তার নিজেরই তৈরি। হয়তো কারও উপরে রাগ হয়েছে, কিন্তু শোধ নেওয়ারও উপায় নেই। তখন সে ‘আয়, রাগ বানাই’ বলে সেই লোকটার সম্পর্কে অদ্ভুত অদ্ভুত সব গল্প বানিয়ে বলতে থাকত। তার মধ্যে বিদ্বেষ বা হিংস্রভাব থাকত না, অনিষ্ট করার কথাও থাকত না, কেবল মজার কথা। তার মধ্য দিয়েই রাগটাগ জল হয়ে যেত। ‘হ য ব র ল’র হিজিবিজবিজের কথা মনে পড়তে পারে। উদ্ভট সব কল্পনা করে নিজেই হেসে গড়িয়ে পড়ত হিজিবিজবিজ!

মজা করতে যেমন পারত, তেমনই নানা বিষয়ের— বিশেষত ভাষার উপরে অসামান্য দখল ছিল ছোটবেলা থেকেই। ‘কবিতায় গল্প বলা’ নামে এক খেলা চলত তাদের বাড়িতে। বড়রাও যোগ দিতেন। কোনও একটা জানা গল্প কেউ কবিতায় বলবে, শুধু প্রথম লাইনটা। পরের জন দ্বিতীয় লাইন। এ রকম ভাবে চলতে থাকবে। না পারলে ‘পাস’। এক দিন হচ্ছে ‘বাঘ ও বক-এর গল্প’— “একদা এক বাঘের গলায় ফুটিয়াছিল অস্থি।/ যন্ত্রণায় কিছুতেই নাহি তার স্বস্তি।/ তিনদিন তিন রাত নাহি তার নিদ্রা।/ সেঁক দেয় তেল মাখে লাগায় হরিদ্রা।” কিন্তু সুন্দরকাকা মুক্তিদারঞ্জন রায় যেই বললেন ‘ভিতরে ঢুকায়ে দিল দীর্ঘ তার চঞ্চু’, অমনি সবাই চুপ। চঞ্চুর সঙ্গে মিল দিয়ে কী শব্দ হয়? ‘পাস’ হতে হতে তাতার পালা আসতেই সে বলল, “বক সে চালাক অতি চিকিৎসক চুঞ্চু।” ভাইবোনরা রাগারাগি করল, ভাবল তাতা শব্দ বানাচ্ছে। কাকা ওর পিঠ চাপড়ে বললেন, “চুঞ্চু মানে ওস্তাদ, এক্সপার্ট।”

প্রবোধচন্দ্র সেনের মত, “কবি মধুসূদনের পর বাংলার প্রধান ছন্দশিল্পী তিনজন— রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১), দ্বিজেন্দ্রলাল (১৮৬৩-১৯১৩) এবং সত্যেন্দ্রনাথ (১৮৮২-১৯২২)। এই তিন ছন্দ শিল্পী কবির পরেই উল্লেখ করতে হয় কবি সুকুমার রায়ের (১৮৮৭-১৯২৩) নাম।” মাত্র আট বছর বয়সে শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘মুকুল’ পত্রিকায় তাতার ‘নদী’ কবিতা প্রকাশিত হয়। পরের বছর দ্বিতীয় কবিতা ‘টিক্ টিক্ টং’ (মুকুল, জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৪)।

শিবনাথ শাস্ত্রীর পরিকল্পনা করা ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ে ১২ বছর বয়স অবধি পড়তে পারত ছেলেরাও। সব ভাইবোনের মতো তাতাও ওখানেই পড়ত। পুণ্যলতা লিখছেন— “বাড়ির মধ্যেই স্কুল। এ দরজা দিয়ে বেরিয়ে ও দরজা দিয়ে ঢুকলেই হল।” সে কেমন স্কুল? শিবনাথ শাস্ত্রীর ভাবনায়— “ব্রাহ্ম পাড়ায় ছোট ছেলেমেয়েদিগকে সর্বদা সমাজের মাঠে খেলিতে দেখিয়া মনে চিন্তা করিতে লাগিলাম, ইহাদিগকে বেথুন স্কুল প্রভৃতি বিদ্যালয়ে না পাঠাইয়া এদের জন্য একটি ছোটো স্কুল করা যাক্।” দ্বারকানাথের পুত্র তথা সাংবাদিক প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় (জংলী গাঙ্গুলী), দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, বিজ্ঞানী তথা বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবেন্দ্রমোহন বসু প্রমুখ এই স্কুল থেকে পাশ করেছেন।

লাল গানে নীল সুর

১৮৯৫-এ উপেন্দ্রকিশোরেরা সপরিবার বাড়ি বদল করে ৩৮/১ শিবনারায়ণ দাস লেনের বাড়িতে চলে এলে তাতা ভর্তি হল সিটি কলেজিয়েট স্কুলে। তাতা বড় হল, ‘সুকুমার’ নামটা পরিচিত হতে শুরু করল। লীলা মজুমদার লিখছেন, “তাই বলে যে তিনি হাঁড়িমুখো গম্ভীর হয়ে উঠবেন, সে-আশা করলে ভুল হবে। বরং তাঁর রসবোধ আরও পাকাপোক্ত সুদূরব্যাপী হতে থাকল।” পণ্ডিত বলতেই যে ভারিক্কি বোঝায় তা তো নয়, তা নির্ভর করে জ্ঞান-বুদ্ধির উপরে। এ সময় থেকেই সুচিন্তিত মতামত তৈরি হল সুকুমারের।

তাঁর এক মাস্টারমশাই ছিলেন বড় ভাল মানুষ, কিন্তু কড়া বায়োস্কোপ-বিরোধী। একদিনের ক্লাসে সে বিষয়ে নিজের যুক্তি সাজানোর পরে প্রিয় ছাত্র সুকুমারকেও কিছু বলতে অনুরোধ করেন মাস্টারমশাই। সুকুমার বলেন, কিছু ছবি খারাপ, সেগুলো না দেখাই ভাল, কিন্তু ভাল ছবিও আছে, আর সে সব দেখলে অনেক কিছু শেখা যায়। মাস্টারমশাই মনঃক্ষুণ্ণ হন। সুকুমার জানতে চান, আপনি বায়োস্কোপ দেখেছেন? “আমি ওসব দেখি না”— কড়া জবাব। জোর করে মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটা ভাল ছবি দেখতে যান সুকুমার। ছবিশেষে মাস্টারমশাই জানান, “তুমি আমার একটা মস্ত ভুল ভাঙিয়ে দিলে।”

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুকুমারের নাটকের শখ বাড়ে। ছেলেবেলায় অন্যের লেখা কবিতা বা গল্পের নাট্যরূপ দিয়ে ভাইবোন, আত্মীয়, বন্ধুদের নিয়ে অভিনয় করা হত, এ বার নিজে নাটিকা লেখা ধরলেন। শেখাতে লাগলেন অভিনয়ও। ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়েই দিব্যি তৈরি হয়ে গেল প্রপ— কম্বলের ধারের ঝালর, ছেঁড়া মোজা, ধোপার পুঁটলি, খড়ি, গোমাটি, চুনকালি ইত্যাদি। আর নাটিকার বিষয়? কৈশোরে রচিত ‘রামধন-বধ’ নাটকের বিষয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। ‘নেটিভ নিগার’ দেখলেই নাক সিঁটকানো র‌্যাম্‌প্‌ডেন সাহেবকে কী করে পাড়ার ছেলেরা জব্দ করল, সে গল্পই হল ‘রামধন-বধ’। তাকে দেখলেই ছেলেরা ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দেয়, আর সাহেব তেড়ে মারতে আসে, বিদ্‌ঘুটে গালি দেয়, পুলিশ ডাকে। আবার স্বদেশি জিনিস নিয়ে বাড়াবাড়িতেও ঠাট্টা করতে ছাড়েননি সুকুমার। ভাই সুবিনয় যখন অলিগলি, বাজার খুঁজে জাপানি বা বিলিতি দ্রব্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে দেশি জিনিস কিনছে, তখন দাদা গান বাঁধলেন— “আমরা দিশি পাগলার দল,/ দেশের জন্য ভেবে ভেবে হয়েছি পাগল!/ (যদিও) দেখতে খারাপ, টিকবে কম, দামটা একটু বেশি,/ (তা হক না) তাতে দেশের-ই মঙ্গল!”

ছাত্রাবস্থাতেই লিখছেন ‘ঝালাপালা’, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’। অভিনয়ের লোক জোগাড় করতে হবে, অতএব বন্ধুবান্ধব নিয়ে তৈরি হয়ে গেল ‘ননসেন্স ক্লাব’। সাদাসিধে অনাড়ম্বর ভাবে আয়োজিত নাটকগুলি স্রেফ নাটকের গুণেই উতরে যেত। প্রায় প্রত্যেকটি নাটকেরই কেন্দ্রে থাকত কিঞ্চিৎ হাঁদা-প্রকৃতির একটি চরিত্র, যে আসলে নাটকের খুঁটি। ওই ভূমিকায় সুকুমার নিজেই অভিনয় করতেন। ‘তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকা’র বিমলাংশুপ্রকাশ রায়ের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, “তাঁর দল গড়ে উঠেছিল অতি সহজ, স্বাভাবিকভাবে, যেমন জলাশয়ের মধ্যেকার একটা খুঁটিকে আশ্রয় করে ভাসমান পানার দল গিয়ে জমাট বাঁধে। সত্যই তিনি খুঁটিস্বরূপ, আমাদের অনেকের আশ্রয়।”

ক্লাবের একটি হাতে লেখা পত্রিকাও বার করেছিলেন সুকুমার: ‘সাড়ে-বত্রিশ ভাজা’। বত্রিশ রকমের ভাজাভুজি আর তার উপরে আধখানা লঙ্কা বসানো, তাই সাড়ে বত্রিশ। অতি উপাদেয়। সম্পাদক সুকুমার, মলাট ও অধিকাংশ অলঙ্করণ তাঁর, বেশির ভাগ লেখাও। সম্পাদকের পাতা ‘পঞ্চতিক্তপাঁচন’ বড়রাও আগ্রহ নিয়ে পড়তেন। ঠাট্টা থাকত, তবে খোঁচা নয়। মজা আর নির্মল আনন্দ।

ও দিকে, সিটি স্কুল পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেন সুকুমার। গম্ভীর লেখাতেও হাত দিলেন। বাঁধলেন দেশপ্রেমের গান: ‘টুটিল কি আজি ঘুমের ঘোর’। ১৯১০ সালে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম যুবসমিতির মুখপত্র ‘আলোক’ প্রকাশ করলেন। কিন্তু বেশি দূর এগোনোর আগেই জীবন অন্য দিকে বাঁক নিয়ে নিল। ফিজ়িক্স ও কেমিস্ট্রিতে ডাবল অনার্স নিয়ে বি এ পাশ করার পরের বছর গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি পেলেন সুকুমার। ফোটোগ্রাফি ও ছাপাখানার প্রযুক্তিবিদ্যায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতযাত্রা করলেন। ১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে ‘এরেবিয়া’ স্টিমারে চড়ে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হলেন সুকুমার।

এর আগে বাড়ি বদলের কথা বলা হল। তার প্রধান কারণ ছিল উপেন্দ্রকিশোরের ফোটোগ্রাফি ও ছাপাখানার প্রযুক্তি নিয়ে উৎসাহ। বঙ্গদেশে তিনিই প্রথম হাফটোন প্রযুক্তিতে ছবি ছাপার ব্যবস্থা করেন। তার সরঞ্জাম সাজানো এবং তা নিয়ে কাজকর্মের মতো করেই বাড়িটার পরিকল্পনা ছিল। তবে শিবনারায়ণ দাস লেনের বাড়িতেও পাঁচ বছরের বেশি থাকা হয়নি তাঁদের। ১৯০০ সালে উঠে যান ২২ নং সুকিয়া স্ট্রিটে। ১৩ বছর পরে আবার ১০০ নং গড়পার রোডে।

এ সময়ে লন্ডন থেকে নিয়মিত চিঠি লিখছেন সুকুমার। বোঝা যায়, তাঁর ভাবনাচিন্তার ধারা তখনও পাল্টায়নি। দু’-একটি চিঠির দিকে চোখ রাখতে হয়। মাকে লিখছেন— “এখানে মাঘোৎসব হয়ে গেল। শুক্রবার ওয়ালডর্ফ হোটেলে মস্ত পার্টি হল। প্রায় ২৫০ লোক হয়েছিল। আমি চোগা চাপকান পরে গিয়েছিলাম। তাই দেখে অনেকে আমাকে পাদ্রি মনে করেছিল।” দিদি সুখলতাকে লিখছেন— “গত দু’বার মেল ভেতে আর্ট গ্যালারি আর মিউজিয়ম দেখতে বেরিয়েছিলাম।... খ্রীস্টমাসের ছুটিতে খুব ফুর্তি করা গেল।” আরও অনেককে লিখছেন কাজের কথা, পড়াশোনার কথা, কলেজের কথা, নতুন কাজ শেখার কথা। বাড়ির সকলের কুশল নিচ্ছেন। সে কালে বাঙালি ছেলেরা ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে কেমন জীবন যাপন করতেন, সুকুমারের চিঠিগুলিতে তার একটি স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়।

বিলেতে গিয়ে ছাপার প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন সুকুমার। ১৯১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ফেলো অব দ্য রয়্যাল ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি’ উপাধি নিয়ে দেশে ফেরেন। এমনই চেয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। সুকুমার বাংলা সাহিত্য জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন, সে আমরা জানি। কিন্তু বাংলা মুদ্রণ জগৎকেও অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বিলেত থেকে তাঁর অর্জিত পাঠ।

ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর

বিলেত থেকে ফেরার পরে ১৯১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকানিবাসী সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় সুকুমারের। ফের কলকাতায় থিতু হয়ে বসা। ১০০ নং গড়পার রোডে জমে ওঠে আড্ডার ঠেক। কখনও রসের আলাপ, কখনও গম্ভীর কথাবার্তা। তবে বাধ্যতামূলক ছিল ভাল খাওয়াদাওয়া। সোমবারে আসর বসত তাই নাম ‘মান্ডে ক্লাব’। খাওয়ার বাহার দেখে কেউ একটু বেঁকিয়ে বলতেন ‘মণ্ডা ক্লাব’। কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় পাওয়া যায়— “Monday Club নামে তিনি এক সাহিত্য-আসর প্রতিষ্ঠা করেন। বহু গণ্যমান্য লোক এই ক্লাবের সভ্য ছিলেন। যেমন: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, নির্মলকুমার সিদ্ধান্ত, অতুলপ্রসাদ সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কালিদাস নাগ, অজিতকুমার চক্রবর্তী, সুবিনয় রায়, জীবনময় রায়, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কিরণশঙ্কর রায়, ইত্যাদি।” মান্ডে ক্লাব নিয়ে লীলা মজুমদার লিখছেন, “একটা প্রবাদ আছে যে যারা সবচাইতে বেশি কাজ করে, তাদেরই হাতে বাড়তি ফালতু কাজ করার সবচাইতে বেশি সময়ও থাকে। এ-কথাটি যে কত সত্যি, সুকুমারের জীবনই তার প্রমাণ।”

====={{{=={}={}={{}=}=}=}=}={{}=}{}=}{===


Friday, 2 September 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। আদর্শ শিক্ষক বেনীমাধব দাস । শরৎচন্দ্র বসু ,সুভাষচন্দ্র বসু সব প্রমুখদের আদর্শ গুরু ছিলেন। Vol -847. Dt -02.09.2022. ১৬ ই ভাদ্র,১৪২৯. শুক্রবার। The blogger in literature e-magazine



বেণীমাধব দাস


তিনি ১৯৫২ সালের ২রা সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন।

জন্ম ২২ নভেম্বর ১৮৮৬ সালে  বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার শেওড়াতলী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কৃষ্ণ চন্দ্র দাস। দর্শন শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার পর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। তাঁর হাতে এটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। চট্টগ্রামের পর তিনি ঢাকা, কটক র‍্যাভেনশ স্কুল, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল ও কলকাতার স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ব্রাহ্ম নেতা মনীষী কেশবচন্দ্র সেনের প্রভাবে তিনি ব্রাহ্ম সমাজে যোগ দেন, এবং ব্রাহ্ম সমাজের প্রকাশনা ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার ও নববিধান-এর সাথে যুক্ত ছিলেন।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা তিনি। সেই চট্টগ্রাম, যা একসময় ব্রিটিশ শক্তির মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। দর্শন, অর্থনীতি, ইতিহাস— এই সমস্ত নিয়েই ছিল তাঁর পাণ্ডিত্যের জগৎ। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। প্রায় একার চেষ্টায় চট্টগ্রাম কলেজকে শিখরে তুলে ধরেছিলেন। অনেকের মতো একটা সময় আকৃষ্ট হন ব্রাহ্ম ধর্মে। ‘নববিধান’ এবং ‘ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার’— ব্রাহ্মদের এই দুটো পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন তিনি। ভাগ্যের ফেরে কলকাতা, চট্টগ্রাম থেকে হাজির হওয়া ওড়িশার কটকে। তখনও কি ভেবেছিলেন, জীবনের সেরা ছাত্রটিকে এখানে পাবেন… 


দেশপ্রেম ও শিক্ষকতায় নিবেদিতপ্রাণ বেণী মাধব ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। দর্শন ছাড়াও তিনি অর্থনীতি ও ইতিহাসে পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কাকিনাদায় (বর্তমানে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ এ ) অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া থেইস্টিক কনফারেন্সের সভাপতিত্ব করেন। সভাপতি হিসাবে তার ভাষণ পরে মডার্ন থেইস্টিক মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া নামক পুস্তিকায় প্রকাশ করা হয়। তার প্রবন্ধ সংকলন পিলগ্রিমেজ থ্রু প্রেয়ার্স (প্রার্থনার মাধ্যমে তীর্থযাত্রা) সমালোচকদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছিল। সুভাষচন্দ্র তার ভারত পথিক গ্রন্থে তার কথা উল্লেখ করেছেন।

কটক ও কৃষ্ণনগরে বেণীমাধবের সংস্পর্শে আসা আরেকজন পণ্ডিত, নিরঞ্জন নিয়োগী লিখেছেন - here was no harshness in his administration, no pompous display surrounding it – his cool and charming behaviour used to have a remarkable impact on his students. Even those who were turbulent calmed down, became respectful towards him and were endeared to his affections. (এখানে তার প্রশাসনে কোন কঠোরতা ছিল না, এর চারপাশে কোনও আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শন ছিল না - তার কোমল ও মনোমুগ্ধকর আচরণ তার শিক্ষার্থীদের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলত। এমনকি যারা অস্থির ছিল তারা শান্ত, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং তার স্নেহের পাত্রে পরিণত হয়।)"


বেণী মাধব দাসের পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার মেজছেলে কারাবরণ করেন। পত্নী সারদা দেবী ছিলেন মধূসূদন সেনের কন্যা। মধুসূদন সেন কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক হিসাবে কাজ করার পর অবসর নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। সারদা দেবী সমাজ সেবায় সক্রিয় ছিলেন। তাদের দুই কন্যার নাম কল্যাণী দাস (ভট্টাচার্য) এবং বীণা দাস (ভৌমিক)। কল্যাণী দাস সমাজ সেবা ও বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রী সংঘের উদ্যোক্তা ছিলেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতির জন্য কারাবরণ করেন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য ৯ বছর কারা বরণ করেন। মেয়ের বিপ্লবী কার্যকলাপে বাধাদান তো দূরস্থান, দেশপ্রেমিক বেনীমাধব রীতিমতো উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।


শুধু কি ছাত্রদের মধ্যেই প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি? বাড়ির ভেতরেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশাত্মবোধ। সন্তানরা যখন বিপ্লবী কাজকর্মে জড়িয়ে ফেলে নিজেদের, তখনও সম্পূর্ণ সমর্থন করে এসেছেন তিনি। মেজছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় বেণীমাধব দাসের দুই মেয়ের কথা। বড়ো মেয়ে কল্যাণী দাস তো যুক্ত ছিলেনই নানা বিপ্লবী কাজের সঙ্গে। তবে সবথেকে দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তাঁর ছোটো মেয়ে বীণা দাস। ১৯৩২ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। মঞ্চে উপস্থিত তৎকালীন গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন। মঞ্চে উঠে পুরস্কার নেওয়ার সময় লুকিয়ে রাখা পিস্তল থেকে তাঁর দিকে গুলি করেন বীণা দাস। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মারা যাননি গভর্নর। বীণার ওপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। শেষে বেণীমাধববাবুকেও ডেকে পাঠানো হয় মেয়েকে বোঝানোর জন্য। একটাই উদ্দেশ্য, এই পিস্তল কোথা থেকে পেল মেয়েটি। কিন্তু পুলিশ তো জানে না বেণীমাধব দাস ঠিক কেমন ধারার মানুষ! পুলিশকে সহযোগিতা তো করলেনই না; বরং মেয়েকে আরও সাহস দিলেন। বাহবা দিলেন এমন কাজ করার জন্য। বীণাও এমন ভরসার হাত পেয়ে আরও জ্বলে উঠলেন। ব্রিটিশদের প্রতিবাদে বেণীমাধব নিজেই লিখলেন ২৫ পাতার লম্বা একটি বিবৃতি। এই সাহেবদের কাছে কোনোমতেই মাথা নত করা চলবে না… 

শেষ পর্যন্ত নয় বছর কারাবরণ করে বীণা ছাড়া পান। নিজের চোখে স্বাধীনতা দেখে গিয়েছিলেন বেণীমাধব দাস। কিন্তু যা দেখতে চেয়েছিলেন, তা আর দেখা হয়নি। একটা গোটা দেশ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাংলার বুকে জ্বলে উঠল দাঙ্গার আগুন। ব্রিটিশদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড কুইট’ নীতির জালে এত সহজে পড়ে গেলাম আমরা! নোয়াখালি, কলকাতা— সব জায়গায় পড়ে আছে একের পর এক মৃতদেহ। মানুষ মানুষকে মারছে, আর তার ওপর দিয়েই আসছে স্বাধীনতা! ১৯৫২ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সেই আঘাত শরীরে-মনে নিয়ে রেখেছিলেন বেণীমাধব দাস। আর প্রিয় ছাত্রের নিরুদ্দেশ হওয়ার খবরের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া? জানা যায়নি কখনও… 
={{{{{{{{{{]{{]]{{∆∆∆∆∆∆∆{}}}{{}}}}}}}}}}}}===


Thursday, 1 September 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। ফরাসি নোবেল জয়ী কবি নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক François Charles Mauriac.Vol -845. Dt -01.09.2022. ১৫ ই ভাদ্র,১৪২৯. বৃহস্পতিবার। The blogger in literature e-magazine.



François Charles Mauriac 

Died: 1 September 1970, Paris, France

He was born in 11 October 1885,  Bordeaux, France. He studied literature at the University of Bordeaux, graduating in 1905, after which he moved to Paris to prepare for postgraduate study at the École des Chartes.

On 1 June 1933 he was elected a member of the Académie française, succeeding Eugène Brieux.

A former Action française supporter, he turned to the left during the Spanish Civil War, criticizing the Catholic Church for its support of Franco. After the fall of France to the Axis during the Second World War, he briefly supported the collaborationist régime of Marshal Pétain, but joined the Resistance as early as December 1941. He was the only member of the Académie française to publish a Resistance text with the Editions de Minuit.

তিনি ফরাসি ক্যাথলিক লেখকদের বংশের অন্তর্ভুক্ত যারা অনন্তকালীন আলোতে আধুনিক জীবনের কুৎসিত বাস্তবতা পরীক্ষা করেছিলেন। তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলি হ'ল সম্ব্রে, অবিচ্ছিন্ন মানসিক নাটকগুলি অব্যক্ত উত্তেজনার পরিবেশে সেট করে। প্রতিটি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে মরিয়্যাক পাপ, অনুগ্রহ এবং পরিত্রাণের সমস্যার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়া একটি ধর্মীয় আত্মাকে রেখেছিল।
মরিয়াক একজন ধার্মিক এবং কঠোর উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। তিনি বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯০৬ সালে প্যারিসের ইকোল নেশনালে ডেস চার্টসে প্রবেশ করেন, শীঘ্রই এটি লেখার উপযুক্ত ছিল। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনাটি লেস মেইনস জোড় (১৯০৯; "যোগদানের হাত") সূক্ষ্মভাবে উৎসাহী কবিতার একটি পরিমাণ ছিল। মরিয়াকের বৃত্তান্ত অবশ্য উপন্যাসের সাথেই রইল। এল'ফ্যান্ট চার্জ ডি চেইনস (১৯১৩ চেইন ইয়াং ম্যান অফ চেইনস) এবং লা রোবে প্রেস্টেক্সটে (১৯১৪; দ্য স্টাফ অফ ইয়ুথ) তাঁর কথাসাহিত্যের প্রথম রচনা একটি অনিশ্চিত কৌশল দেখিয়েছিলেন তবে তা সত্ত্বেও, তার পুনরাবৃত্ত থিমগুলির নমুনা স্থাপন করেছিলেন। তাঁর জন্ম শহর বোর্দোস এবং বুর্জোয়া জীবনের দৃষ্টান্ত শ্বাসরোধের কঠোরতা প্রেম থেকে বঞ্চিত চরিত্রগুলির সম্পর্কের জন্য তার অনুসন্ধানের কাঠামো সরবরাহ করে। লে বাইসর অউ ল্যাপ্রাক্স (১৯২২; দ্য কিস টু দ্য লেপার) মরিয়াককে প্রধান উপন্যাসকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাওরিয়াক লে ডেরেট ডি ল্যামর (১৯২৫; প্রেমের মরুভূমি) এবং থেরেস ডেস্কায়ারউক্সে (১৯২৬ থেরেস) এর ক্রমবর্ধমান দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, যার নায়িকা তার স্বামীর হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্বামীর হত্যার চেষ্টা চালায়। লে নয়েড ডি ভিপ্রেস (১৯৩২; ভাইপার্স টাঙ্গেল) প্রায়শই মাওরিয়াকের মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি একটি বৈবাহিক নাটক, যেখানে একজন প্রবীণ আইনজীবীর সংসারের প্রতি তার পরিবার, অর্থের প্রতি তার আগ্রহ এবং চূড়ান্ত রূপান্তর চিত্রিত হয়েছে। এটিতে, অন্যান্য মরিয়াক উপন্যাসগুলির মতো, তাঁর চরিত্রগুলি মানুষের সংস্পর্শে নিরর্থকভাবে ভালবাসা কেবল ঈশ্বরের প্রেমে পরিপূর্ণ হয়।


১৯৩৩ সালে মাউরিয়াক ফ্রেঞ্চ একাডেমিতে নির্বাচিত হন। তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলিতে আংশিক আত্মজীবনীমূলক লে মাইস্টের ফ্রেন্টেনাক (১৯৩৩; দ্য ফ্রন্টেনাক রহস্য), লেস চেমেন্স দে লা মের (১৯৩৯; অজানা সমুদ্র), এবং লা ফরিসিয়েনে (১৯৪১; ফরাসিসের এক মহিলা) এবং ধর্মীয় কপটতার বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আধিপত্য কামনা। ১৯৩৮ সালে মৌরিয়াক নাটক রচনার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন, আসমোডি (১৯৩৭ সালে অভিনয় করেছিলেন) দিয়ে শুরু করেছিলেন, যেখানে নায়ক দুর্বল প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণকারী এক জঘন্য, দাপুটে চরিত্র। এটি হ'ল কম সফল লাস ম্যাল আইমসের থিমও (1945; "দরিদ্রভাবে পছন্দসই")।

একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ, মরিয়াক তার সমালোচকদের সামনে নিজেকে ন্যায্য প্রমাণ করতে বাধ্য হয়েছেন। লে রোমানসিয়ার এট এসএস ব্যাক্তিগত (১৯৩৩; "ঔপন্যাসিক ও তাঁর চরিত্রগুলি") এবং তাঁর জার্নালের চার খণ্ড (১৯৩–-1১) পরে তিন খণ্ড মোমোয়্যারস (১৯৫৯-––) তার বেশিরভাগ অভিপ্রায়, তার পদ্ধতি, এবং সমসাময়িক নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া। মরিয়াক খ্রিস্টান লেখকের কঠিন দ্বন্দ্বকে মোকাবেলা করেছিলেন - কীভাবে তাঁর পাঠকদের সামনে প্রলোভন না রেখে মানব প্রকৃতিতে মন্দকে চিত্রিত করা যায় - ডায়ু এট ম্যামনে (১৯২৯; গড অ্যান্ড ম্যামন, ১৯৩৬)
মরিয়াক একজন বিশিষ্ট পোলমিক্যাল লেখকও ছিলেন। তিনি ১৯৩০ এর দশকে জোরভাবে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, সর্বস্ববাদে সর্বগ্রাসীতার নিন্দা করেছিলেন এবং ইতালি এবং স্পেনে ফ্যাসিবাদকে নিন্দা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি প্রতিরোধের লেখকদের সাথে কাজ করেছিলেন। যুদ্ধের পরে তিনি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক আলোচনায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি দে গলকে লিখেছিলেন (১৯৬৪; ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্স।, ১৯৬৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। ফ্রান্সের বাইরে মৌরিয়াকের খ্যাতি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়লেও তিনি অনেকেই মার্সেল প্রাউস্টের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ফরাসী ঔপন্যাসিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন।




রচনা কর্ম:

Novels, novellas and short stories

  • 1913 – L'Enfant chargé de chaînes («Young Man in Chains», tr. 1961)
  • 1914 – La Robe prétexte («The Stuff of Youth», tr. 1960)
  • 1920 – La Chair et le Sang («Flesh and Blood», tr. 1954)
  • 1921 – Préséances («Questions of Precedence», tr. 1958)
  • 1922 – Le Baiser au lépreux («The Kiss to the Leper», tr. 1923 / «A Kiss to the Leper», tr. 1950)
  • 1923 – Le Fleuve de feu («The River of Fire», tr. 1954)
  • 1923 – Génitrix («Genetrix», tr. 1950)
  • 1923 – Le Mal («The Enemy», tr. 1949)
  • 1925 – Le Désert de l'amour («The Desert of Love», tr. 1949) (Awarded the Grand Prix du roman de l'Académie française, 1926.)
  • 1927 – Thérèse Desqueyroux («Thérèse», tr. 1928 / «Thérèse Desqueyroux», tr. 1947 and 2005)
  • 1928 – Destins («Destinies», tr. 1929 / «Lines of Life», tr. 1957)
  • 1929 – Trois Récits A volume of three stories: Coups de couteau, 1926; Un homme de lettres, 1926; Le Démon de la connaissance, 1928
  • 1930 – Ce qui était perdu («Suspicion», tr. 1931 / «That Which Was Lost», tr. 1951)
  • 1932 – Le Nœud de vipères («Vipers' Tangle», tr. 1933 / «The Knot of Vipers», tr. 1951)
  • 1933 – Le Mystère Frontenac («The Frontenac Mystery», tr. 1951 / «The Frontenacs», tr. 1961)
  • 1935 – La Fin de la nuit («The End of the Night», tr. 1947)
  • 1936 – Les Anges noirs («The Dark Angels», tr. 1951 / «The Mask of Innocence», tr. 1953)
  • 1938 – Plongées A volume of five stories: Thérèse chez le docteur, 1933 («Thérèse and the Doctor», tr. 1947); Thérèse à l'hôtel, 1933 («Thérèse at the Hotel», tr. 1947); Le RangInsomnieConte de Noël.
  • 1939 – Les Chemins de la mer («The Unknown Sea», tr. 1948)
  • 1941 – La Pharisienne («A Woman of Pharisees», tr. 1946)
  • 1951 – Le Sagouin («The Weakling», tr. 1952 / «The Little Misery», tr. 1952) (A novella)
  • 1952 – Galigaï («The Loved and the Unloved», tr. 1953)
  • 1954 – L'Agneau («The Lamb», tr. 1955)
  • 1969 – Un adolescent d'autrefois («Maltaverne», tr. 1970)
  • 1972 – Maltaverne (the unfinished sequel to the previous novel; posthumously published)

Plays

1938 – Asmodée («Asmodée; or, The Intruder», tr. 1939 / «Asmodée: A Drama in Three Acts», tr. 1957)
1945 – Les Mal Aimés
1948 – Passage du malin
1951 – Le Feu sur terre
Poetry

1909 – Les Mains jointes
1911 – L'Adieu à l'Adolescence
1925 – Orages
1940 – Le Sang d'Atys
Memoirs
1931 – Holy Thursday: an Intimate Remembrance
1960 – Mémoires intérieurs
1962 – Ce Que Je Crois
1964 – Soirée Tu Danse[clarification needed]
Biography

1937 – Life of Jesus
1964 - De Gaulle de François Mauriac (French edition), 1966 English -(Doubleday)
Essays and criticism

1919 – Petits Essais de Psychologie Religieuse: De quelques coeurs inquiets. Paris: Societe litteraire de France. 1919.
1936 - “God and Mammon” in ‘Essays in Order: New Series, No. 1’. Edited by Christopher Dawson and Bernard Wall. Published in London by Sheed & Ward
1961 – Second Thoughts: Reflections on literature and on Life (tr. by Adrienne Foulke). Darwen Finlayson
François Mauriac on Race, War, Politics, and Religion: The Great War Through the 1960s. Washington, D.C.: Catholic University of America Press. 2016. ISBN 978-0-8132-2789-4. Edited and translated by Nathan Bracher.

Awards and honours

1926 — Grand Prix du roman de l'Académie française
1933 — Member of the Académie française
1952 — Nobel Prize in Literature
1958 — Grand Cross of the Légion d'honneur.

==================================