বসন্ত চৌধুরী
জন্ম : ৫ ই মে ১৯২৮ সালে হাওড়ার আন্দুলের ধনাঢ্য ভরদ্বাজ গোত্রীয় দত্তচৌধুরী কুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সিদ্ধেশ্বর চৌধুরী ও কমলা দেবীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁর ছোট ভাই ছিলেন প্রশান্ত চৌধুরী। খ্যাতিমান এ অভিনেতা নাগপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই তাঁর শৈশবকাল কাটিয়েছেন। তাঁর স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা সেখানেই সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দীন নাথ উচ্চ বিদ্যালয় নাগপুর থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ করেন। কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরে, চৌধুরী টালিগঞ্জের রাণীকুঠিতে থাকতেন।
তেরো বছর বয়সে বাবা সিদ্ধিশচন্দ্র চৌধুরীকে হারিয়েছেন তিনি। মা কমলা ও ভাই প্রশান্তকে নিয়ে পিতৃবিয়োগের পর নিজের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে, তা নিয়ে ভাসা ভাসা কিছু স্বাধীন ভাবনা ভিড় করত মনে। তাই বেরিয়ে পড়েছিলেন নিজের স্বপ্নকে সত্যি করা যায় কি না বাজিয়ে দেখতে। কলকাতা শহরের কাউকেই তিনি তেমন চিনতেন না। যদিও কলকাতার অদূরে আন্দুল গ্রামশহরে ছিল তাঁদের ‘দত্তচৌধুরী জমিদার বংশে’র ভিটেবাড়ি। একডাকে সেই পরিবারকে চেনে সারা বাংলা।
বয়স তখন ২২। নাগপুরের দীননাথ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে আগের বছরই বিএসসি (মতান্তরে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র) করেছেন সেখানকার মরিস কলেজ থেকে। তার পর কিছুটা ইচ্ছের উপর ভর করে চড়ে বসেছেন বম্বে মেল-এর থার্ড ক্লাসের একটা কামরায়। গন্তব্য কলকাতা। বাসনা, সিনেমায় অভিনয় করা। স্কুলে খেলাধুলোয় বেশ নাম ছিল তাঁর। ভাল ক্রিকেট খেলতেন। নাটকও করেছেন বেশ কয়েক বার। তখন থেকেই মনের মধ্যে অভিনয়ের প্রতি তীব্র টান অনুভব করতে শুরু করেছিলেন। গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর মুক্ত মনের বাসনাকে আগল দিতে চাননি।
চৌধুরী অবশ্য কাউকে জানতেও দেননি তাঁর বংশ পরিচয়। তাঁর তখন একটাই পরিচয়, অভিনেতা। কলকাতার বৌবাজারে বন্ধু রবি দে চাকরি করতেন একটি ল্যাবরেটরিতে। তিনি সেই ল্যাবরেটরির অফিস ঘরের একটি টেবিলে রাতে বসন্তের শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সারা দিন কলকাতার বিভিন্ন স্টুডিয়ো পাড়ায় ঘুরে পরিচালক প্রযোজকদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে, রাস্তার কোনও পাইস হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে, রাতে সেই টেবিলেই শুয়ে পড়তেন। তবে সিনেমার নায়ক হওয়ার মতো চেহারা ছিল বলে প্রযোজক পরিচালকদের চোখে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। বাংলা সিনেমায় তখন বিমল রায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নীতিন বোস, কার্তিক চট্টোপাধ্যায়, অমর মল্লিক, সুবোধ মিত্রর মতো বাঘা পরিচালকরা কাজ করলেও বি এন সরকারের নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োর দীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাসের শেষ অধ্যায় শুরু হয়ে গিয়েছে। চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে তাদের ছবি ফ্লপ হতে শুরু করেছে। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। যদিও সে সবের কিছুই তখন বসন্ত জানতেন না। তিনি কলকাতায় এসে নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োতেই প্রথম হানা দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ঘোরাঘুরির পর সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্টুডিয়ো ‘রাধা ফিল্মস’-এর মাধব ঘোষাল তাঁদের নতুন ছবি ‘মন্দির’-এর নায়কের চরিত্রে নির্বাচন করলেন বসন্তকে। ছবির পরিচালক ছিলেন দেবকী বসুর ভাইপো তথা সহকারী চন্দ্রশেখর বসু। তিন হাজার টাকার পিকচার কনট্র্যাক্ট হল। অগ্রিম হিসেবে বসন্ত পেলেন তিনশো টাকা। সেটাই তাঁর কলকাতায় এসে প্রথম রোজগার। টাকা হাতে পেয়ে তাঁর মনে হয়েছিল “আমিই বা কে আর লর্ড লিনলিথগোই বা কে!” শুটিং শুরু হল।
এমনই এক সময়ে শিল্প নির্দেশক সৌরেন সেনের সুপারিশে নিউ থিয়েটার্স থেকে ডাক এল বসন্তের। শুনলেন, নিউ থিয়েটার্সের নতুন ছবি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’র নায়কের ভূমিকায় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নায়িকা নবাগতা অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়। পরিচালক কার্তিক চট্টোপাধ্যায়। আকাশ ভেঙে পড়ল তাঁর মাথায়। তিনি সৌরেনবাবুকে ‘মন্দির’ ছবির সঙ্গেই ‘মহাপ্রস্থানের পথে’র শুটিং করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। কিন্তু সৌরেনবাবু জানালেন, নিউ থিয়েটার্সের ছবিতে কাজ করলে আর কোনও ছবিতে কাজ করা যায় না। সেটাই শর্ত। বিভ্রান্ত, দ্বিধাগ্রস্ত বসন্ত ছুটে গেলেন রাধা স্টুডিয়োর মাধববাবুর কাছে। নিউ থিয়েটার্সের ছবির প্রস্তাবের কারণে ‘মন্দির’ ছবিতে কাজ করতে পারবেন না বলে জানাতেই, মাধববাবুর দাদা কেশববাবু তিন দিনের হয়ে যাওয়া শুটিংয়ের যাবতীয় খরচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করে বসলেন।
অনেক চেষ্টায় ও দেবকী বসুর মধ্যস্থতায় ছাড়া পেয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী। শুটিংয়ের খরচ দিতে হয়নি বটে, তবে অগ্রিম হিসেবে পাওয়া তিনশো টাকা তিনি ফেরত দিয়েছিলেন। ৯ জুন ১৯৫২ মুক্তি পেয়েছিল বসন্ত চৌধুরী ও অরুন্ধতী দেবী অভিনীত কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিভাষিক সুপারহিট ছবি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ (হিন্দি নাম ‘যাত্রিক’)। ছবিটিকে বাংলা সিনেমার প্রথম ‘ট্রাভেল ফিল্ম’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। সেই সময়ের বাংলা ছবির নিরিখে এই ছবিকে অনেকেই অন্য ধারার ছবি বলে চিহ্নিত করেন।
রামশরণ দত্তর বংশধর ঈশানচন্দ্রের পুত্র অপূর্বকৃষ্ণ দত্তচৌধুরী ‘দত্ত’ পদবি ব্যবহার করতেন না। তিনি আন্দুলের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে নাগপুরে বসবাস করতে শুরু করেন ১৮৮৬ সাল থেকে। সেখানে তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর পুত্র ফণিভূষণ।
তিনি ছিলেন গণ্যমান্যবাদী অর্থাৎ গণেশ প্রতিমা, দুর্লভ মুদ্রা, কাগজের মুদ্রার বিশেষজ্ঞ সংগ্রাহক এবং কাশ্মীরি ও পারস্য শালের সংগ্রাহক ছিলেন।
তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র মহাপ্রস্থানের পথে যা ১৯৫২ সালে পরিচালক কার্তিক চট্টোপাধ্যায় নির্মাণ করেছিলেন। তার স্মরণীয় কয়েকটি চলচ্চিত্র হলেন, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য, যদু ভট্ট, আঁধারে আলো, সুচিত্রা সেনের সাথে দীপ জ্বেলে যাই, অনুষ্টুপ ছন্দ, অভয়া ও শ্রীকান্ত, রাজা রামমোহন রায়, দিবা রাত্রির কাব্য, দেবী চৌধুরাণী। তিনি অপেশাদার থিয়েটার এবং রেডিওর সাথেও জড়িত ছিলেন। নায়কোচিত অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি খলনায়কের ভূমিকাতেও কাজ করেন। দিবা রাত্রির কাব্য ছবিতে চৌধুরী নেতিবাচক চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন। এরই পাশাপাশি নবীন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম ছবি হীরের আংটিতে তার কাজ রয়েছে। চৌধুরীর বেশ কিছু সংগ্রহশালা ছিলো, যা ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা হিসেবে ব্যবহার হতো, পরবর্তীতে এটি দান করা হয়।
চলচ্চিত্রের তালিকা :
১৯৫২- মহাপ্রস্থানের পথে
১৯৫৩: নবীন যাত্রা সফর; ভগবান শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য
১৯৫৪: যদুভট্ট; বকুল
১৯৫৫: অপরাধী; পথের শেষে; ভালবাসা; দু- জনায়; দেবীমালিনি
১৯৫৬: শুভরাত্রি; শঙ্কর নারায়ণ ব্যাংক; ছায়া সাঙ্গিনী; গোবিন্দদাস; রাজপথ
১৯৫৭: শেষ পরিচয়; মধু মালতী; আঁধারে আলো; বসন্ত বাহার; হার জিত; খেলা ভাঙ্গার খেলা
১৯৫৮: যোগাযোগ
১৯৫৯: গভীর জ্বেলে যায়; শশী বাবুর সংসার
১৯৬০: ক্ষুধা; পরখ
১৯৬২: সঞ্চারিনী; অগ্নিশীখা; বধূ, নববধূ
১৯৬৩: শ্রেয়সী
১৯৬৪: কষ্টিপাথর; অনুষ্টুপ ছন্দা
১৯৬৫: আলোর পিপাসা; রাজা রামমোহন; অভয়া ও শ্রীকান্ত; একই অঙ্গে এতো রূপ; গুলমোহর
১৯৬৬: শঙ্খ বেলা; সুসন্ত শা; উত্তর পুরুষ
১৯৭০: দিবা রাত্রির কাব্য; মেঘ কালো
১৯৭১: প্রথম প্রতিশ্রুতি; সংসার; গ্রহণ
১৯৭৩: প্রান্ত রেখা
১৯৭৪: দেবী চৌধরাণী; যদি জানতেম; সঙ্গীনি
১৯৭৫: নিশি মৃগয়া
১৯৭৬: শঙ্খবিশ
১৯৭৭: বাবু মশাই
১৯৭৮: পরিচয়; ময়ূরী
১৯৭৯: চিরন্তন; জীবন যে রকম
১৯৮০: ভাগ্যচক্র
১৯৮১: কলঙ্কিনী
১৯৮২: সোনার বাংলা
১৯৮৩: ইন্দিরা; দীপার প্রেম
১৯৮৫: বৈদুর্য রহস্য; পুতুলঘর
১৯৮৭: অন্তর্জলী যাত্রা
১৯৮৮: অন্তরঙ্গ; শঙ্খচূড়
১৯৯০: রক্তঋণ; এক ডাক্তার কি মৌত
১৯৯০: সংক্রান্তি
১৯৯১: রাজ নর্তকী
১৯৯২: হীরের আংটি; আপন ঘর; সত্য মিথ্যা
১৯৯৩: কাঁচের পৃথিবী
অভিনেতা চৌধুরী ১৯৯৬ সালে বিএফজেএ কর্তৃক ১৯৬৫ সালের "রাজা রামমোহন" চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা স্টেজ শতবর্ষী স্টার থিয়েটারের পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন।
অভিনেতা কলকাতার শেরিফ ছিলেন। কলকাতায় নন্দন-পশ্চিমবঙ্গ ফিল্ম সেন্টারের চেয়ারম্যান পদেও তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল।
অভিনেতা বসন্ত চৌধুরী বেশ কিছুদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০ জুন ২০০০ তারিখে তিনি কলকাতায় মারা যান।
সারা জীবনে প্রায় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও আশ্চর্য এই যে, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র তথ্যভাণ্ডার মাত্র ৭৪টি ছবির সন্ধান দিতে পেরেছে, যার মধ্যে ৭টি হিন্দি। এর মধ্যে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’, ‘আঁধারে আলো’, ‘রাজা রামমোহন’, ‘যদুভট্ট’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘শুভরাত্রি’, ‘মেঘ কালো’, ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’, ‘অনুষ্টুপ ছন্দ’, ‘বৈদুর্য্যরহস্য’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ ‘হীরের আংটি’, ইত্যাদি ছবির জন্য বসন্ত চৌধুরীকে বাঙালি মনে রেখেছে। তাঁর অভিনীত হিন্দি ছবিগুলি যথাক্রমে ‘যাত্রিক’, ‘নয়া সফর’, ‘বকুল’, ‘পরখ’, ‘গ্রহণ’, ‘ময়ূরী’, ও ‘এক ডক্টর কী মওত’। ‘রাজা রামমোহন’ ছবির জন্য তিনি ‘বিএফজেএ’ পুরস্কার পান। দীর্ঘ মঞ্চ অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘স্টার থিয়েটার অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
কলকাতার পাবলিক থিয়েটারেও বসন্ত চৌধুরী অভিনয় করেছেন পঞ্চাশের দশক থেকেই। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরোগ্য নিকেতন’ নাটকে নবীন চিকিৎসকের প্রধান চরিত্র দিয়ে তাঁর থিয়েটার জীবনের সূচনা হয়। তার পর ‘দেনা পাওনা’, ‘বিপ্রদাস’, ‘অগ্নিকন্যা’-সহ বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। স্টারে ‘কালবৈশাখী’ ও ‘ক্ষুধা’ ৫০০ রজনী চলেছিল। ষাটের দশকে ‘শ্রেয়সী’ দর্শককে মাতিয়ে রাখত। আকাশবাণীতেও তাঁর কণ্ঠে বেতার নাটক শুনতে শুক্রবার রাত পৌনে আটটায় শ্রোতারা রেডিয়ো খুলে বসতেন।
এক সময়ে নট্ট কোম্পানির হয়ে বসন্ত চৌধুরী যাত্রা করেছেন নিয়মিত। সেখানে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, “আমার কাছে যাত্রা মানে খোলা চষা মাঠ। ধান কাটার পর খড়ের গোঁজ বেরিয়ে আছে মাঠে। তার ওপর ইউরিয়া সারের পলিবস্তা জুড়ে জুড়ে পাতনি...অমন জায়গায় তিনশো ফুট বাই তিনশো ফুট প্যান্ডেল। কমপক্ষে পঁচিশ হাজার লোক ধরে। অতগুলো লোককে ধরে রাখা সহজ কথা?”
বছর দুয়েক টানা যাত্রা করেছিলেন। এই যাত্রা করতে যাওয়ার পিছনে তাঁর আর একটা উদ্দেশ্য ছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক স্যমন্তক দাস জানিয়েছেন, “আসলে উনি যাত্রায় নাম লিখিয়েছিলেন কতকগুলো বিষয় মাথায় রেখে। যার একটা হল, পশ্চিমবঙ্গে বহু জায়গায় তিনি ঘুরেছেন, কিন্তু যাত্রায় অভিনয় করার সুবাদে আরও বহু না-জানা জায়গায় ঘোরা হয়ে যাবে, এটা ওঁর মাথায় থাকত। হয়েছিলও তাই। পুরনো মন্দির, বাড়ি, বহু জিনিসপত্র ওঁর দেখা হয়েছে। বহু গ্রামীণ সংস্কার, গ্রামীণ বিশ্বাস সম্পর্কে জেনেছেন, যা ওঁর জানা ছিল না। এর ফলে এক অন্য বসন্ত চৌধুরীর পরিচয় আমরা পেয়েছি।”
আবার বসন্ত চৌধুরী মানেই বাঙালিয়ানা, যার শুরু তাঁর পোশাকআশাক দিয়ে। কন্দর্পকান্তি চেহারার সঙ্গে আমে দুধের মতো মিশত গলার ভারী আওয়াজ। শান্ত চলন এবং গভীর চাহনি। চওড়া কপাল থেকে পায়ের বিদ্যাসাগরী চটি অবধি এক পূর্ণ বাবুটি যেন! কিন্তু এই বহিরঙ্গের আড়ালে বসন্ত চৌধুরী সাহেবও ছিলেন। থেকে থেকে চমৎকার ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা কথা, সেরা ফরাসি কনিয়াকের রুচি, নিবিড় আমেজে হাভানা চুরুটে টান, প্রাচীন মুদ্রা, ডাকটিকিট, গণেশ মূর্তি ও জামেয়ার সংগ্রহ ও তা নিয়ে পড়াশোনা, খাটাখাটনি ও অর্থব্যয়ে অপরূপ ও দুষ্প্রাপ্য সব শাল কেনা আর সর্বোপরি এক বিচিত্র, বিস্তীর্ণ বই পড়ার নেশা। তাঁর বাঙালিয়ানা সম্পর্কে রাধাপ্রসাদ গুপ্তর (শাঁটুল) মন্তব্য, “ও একটা রোবাস্ট ভদ্রলোক। অনেক দিকে মাথা খেলে। কিন্তু পল্লবগ্রাহী নয়। ভীষণ সেন্স অব হিউমার, কিন্তু কোথায় যেন একটা মেলানকলির ছোঁয়া।”
###₹₹₹₹###₹₹₹₹₹₹_₹₹₹₹₹₹₹₹_₹_₹₹₹₹₹₹₹₹
No comments:
Post a Comment