(৭ জুলাই ১৮৮৮ – ১৯ এপ্রিল ১৯৭১)
একজন বাঙালি কবি ও লেখক। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের পিতা।
বাড়িতে একজন প্রকান্ড পুরুষমানুষ ছিলেন। যাঁর দরাজ গলার হাঁকডাকে বাড়ি গমগম করত। ভোর থেকে রাত্তির অবধি মানুষজন আসত কেবল তাঁর ভালোবাসার টানে..."
সিংহের মতো চেহারা। রাজকীয় গোঁফ। দুধ সফেদ ধুতি পাঞ্জাবি। চেহারার আভিজাত্য নজর কেড়ে নেয়। কিন্তু স্বভাবটি ষোলআনা দিলদরিয়া। সরস্বতীর সার্থক বরপুত্র।
জন্ম ৭ ই জুলাই ২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ঠনঠনিয়ার তৎকালীন বনেদি ও প্রগতিশীল পরিবারে। পিতা নগেন্দ্রনাথ দেব। জ্যাঠামহাশয় উপেন্দ্র চন্দ্র ছিলেন ডিরোজিওর শিষ্য। যৌবনে জ্ঞাতি-দাদা রাজেন দেবের প্রভাবে গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দিলেও সাহিত্য-ক্ষেত্রেই জীবন কাটিয়েছেন। কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে কলেজি শিক্ষা লাভ হয়নি। তবে সারাজীবন পড়াশোনার মধ্যেই নিয়োজিত থাকেন।
ব্রহ্মবান্ধবের সান্ধ্য পত্রিকাতে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ "বসুধারা" , গল্পগ্রন্থ "চতুর্বেদাশ্রম" ও প্রথম উপন্যাস " গরমিল"। তবে 'ওমর খৈয়াম' -এর কাব্যানুবাদ ১৯২৬ সালে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার খ্যাতি বিস্তৃত হয়। কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং শিশু সাহিত্য — সর্বক্ষেত্রেই তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। 'ভারতী', 'কল্লোল', ' কৃত্তিবাস' ― বাংলা সাহিত্যের তিন যুগের এই পত্রিকাগুলির লেখকগোষ্ঠীর সঙ্গে তার সমান হৃদ্যতা ছিল। তিনি বিখ্যাত নাট্য-সাপ্তাহিক 'নাচঘরের' ও 'প্রথম চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক 'বায়োস্কোপ'-এর পরিচালক ছিলেন। ছোটদের জন্য প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা 'পাঠশালা ' তিনি দীর্ঘ পনের বৎসর সম্পাদনা করেন। সাহিত্য জীবনে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, অক্ষয় বড়াল, কান্তকবি, নজরুল, মোহিতলাল এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অন্তরঙ্গ ছিলেন। আবার সিনেমা-থিয়েটারের তৎকালীন শিল্পীরাও তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বালবিধবা সাহিত্যিক রাধারাণীর সঙ্গে তার বিবাহ সেকালের এক আলোচ্য বিষয় ছিল। এই বিবাহে রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাণী পাঠান এবং শরৎচন্দ্র উপস্থিত থাকেন। নরেন্দ্র দেবের রচিত প্রথম ছোটদের নাটক 'ফুলের আয়না 'নাট্যাচার্য শিশিরকুমার' স্টার মঞ্চে প্রযোজনা করেন।
কবিতা লিখতেন। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হল ব্রহ্মবান্ধবের একটি সান্ধ্য পত্রিকায়। ক্রমে ক্রমে মেধাবী সাহিত্যে এক মহীরুহ হয়ে উঠলেন। ভারতী, কল্লোল, কৃত্তিবাস তিন গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই সূত্রেই সাহিত্যের নক্ষত্র পুরুষদের স্নেহের পাত্র। রাধারানী দেবীর সঙ্গে বিবাহে রবীন্দ্রনাথ এবং শরৎচন্দ্র দুই বটবৃক্ষের আশীষ পেয়েছিলেন।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ--
ভ্রমণকাহিনী-
রাজপুতের দেশে
সাহেব-বিবির দেশে
উপন্যাস-
আকাশ কুসুম
মানুষের মন
কিশোর সাহিত্য-
অনেক দিনের কথা
আনন্দ মেলা
তিনি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে 'ওমর খৈয়াম' এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 'মেঘদূত' অনুবাদ করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স-সহ পশ্চিম ইউরোপ এবং ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া, ফিনল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়া ভ্রমণ করেন।
তিনি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে "মৌচাক পুরস্কার ", 'ভুবনমোহিনী স্বর্ণ পদক' এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে 'শিশিরকুমার পুরস্কার' লাভ করেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের দুবার সহ- সভাপতি, বেঙ্গল পি.ই.এন., শিশু সাহিত্য পরিষদ, শরৎচন্দ্রের সাহিত্য পরিষদ প্রভৃতির সভাপতি ছিলেন। ক্যালকাটা কেমিক্যাল ও রবীন্দ্রভারতী সঙ্গে তার যোগ ছিল।
তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে এপ্রিল ৮২ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
সত্যজিৎ রায়ও এই বইয়ের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম বলে মন্তব্য করেছিলেন।
সারা জীবন ধরে অজস্র সোনা ফলিয়েছেন। তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা কাজ পার্শি কবি-দার্শনিক ওমর খৈয়ামের পদের বঙ্গানুবাদ। অপরটি কালিদাসের মেঘদূতের বাংলা। বিদেশি সাহিত্য এবং মাতৃভাষার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন।
==================================
No comments:
Post a Comment