Friday, 19 July 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই পরিচিত। তিনি পরিবার "কাঁটাবুনে মুখুজ্জ্যে" নামে পরিচিত ছিলেন ৷ তিনি মূলত পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। Dt - 19.07.2024. Vol - 938. Saturday. The blogger post in literary e magazine.




বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
 
(১৯ জুলাই ১৮৯৯ – ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯) 





একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত।  পরিবারে তিনি "কাঁটাবুনে মুখুজ্জ্যে" নামে পরিচিত ছিল৷ তিনি মূলত পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।

বিহার রাজ্যের মণিহারীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯ জুলাই ১৮৯৯ সালে । তাঁদের আদি নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার শিয়াখালা গ্রাম।
পিতার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ও মাতা মৃণালিনী দেবী। তাঁর পিতা একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং মাতা গৃহ বধু ছিলেন। তাঁর অনুজ অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় খ্যাতনামা চিত্রপরিচালক।


প্রথমে মণিহারী স্কুলে এবং পরে সাহেবগঞ্জ জেলার সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেন। শেষোক্ত স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আই.এস.সি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন তবে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে থেকে এম.বি, ডিগ্রী লাভ করেন। প্যাথলজিস্ট হিসাবে ৪০ বৎসর কাজ করেছেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন।

 ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে কলকাতা শহরে তার মৃত্যু হয়।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম লুকোতে তিনি 'বনফুল' ছদ্মনামের আশ্রয় নেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহেবগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। শনিবারের চিঠি তে ব্যাঙ্গ কবিতা ও প্যারডি কবিতা লিখে সাহিত্য জগৎতে নিজের আসন স্থায়ী করেন। এছাড়াও নিয়মিত প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন।

লেখক হিসেবে কবি বনফুল এক হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচনাবলীসমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। 

রচনা কর্ম:
উপন্যাস

তৃণখণ্ড (১৯৩৫)
বৈতরণী তীরে (১৯৩৬)
দ্বৈরথ (১৯৩৭)
কিছুক্ষণ (১৯৩৭)
নির্মোক (১৯৪০)
মৃগয়া (১৯৪০)
রাত্রি (১৯৪১)
সে ও আমি (১৯৪৩)
জঙ্গম
প্রথম খণ্ড (১৯৪৩)
দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৪৫)
তৃতীয় খণ্ড (১৯৪৫)
সপ্তর্ষি (১৯৪৫)
অগ্নি (১৯৪৬)
নঞতৎপুরুষ (১৯৪৬)
স্বপ্নসম্ভব (১৯৪৬)
মানদণ্ড (১৯৪৮)
ডানা
প্রথম খণ্ড (১৯৪৮)
দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৫০)
তৃতীয় খণ্ড (১৯৫৫)
ভীমপলশ্রী (১৯৪৯)
নবদিগন্ত (১৯৪৯)
স্থাবর (১৯৫১)
কষ্টিপাথর (১৯৫১)
লক্ষ্মীর আগমন (১৯৫৪)
পিতামহ (১৯৫৪)
পঞ্চপর্ব (১৯৫৪)
বিষমজুর (১৯৫৪)
নিরঞ্জনা (১৯৫৫)
ভুবন সোম (১৯৫৭)
উজ্জ্বলা (১৯৫৭)
মহারাণী (১৯৫৮)
জলতরঙ্গ (১৯৫৯)
অগ্নীশ্বর (১৯৫৯)
উদয় অস্ত
প্রথম খণ্ড (১৯৫৯)
দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৭৪)
ওরা সব পারে (১৯৬০)
দুই পথিক (১৯৬০)
হাটেবাজারে (১৯৬১)
কন্যাসু (১৯৬২)
সীমারেখা (১৯৬২)
পীতাম্বরের পুনর্জন্ম (১৯৬৩)
ত্রিবর্ণ (১৯৬৩)
বর্ণচোরা (১৯৬৪)
পক্ষীমিথুন (১৯৬৪)
তীর্থের কাক (১৯৬৫)
মানসপুর (১৯৬৬)
গন্ধরাজ (১৯৬৬)
প্রচ্ছন্ন মহিমা (১৯৬৭)
গোপালদেবের স্বপ্ন (১৯৬৮)
অধিকলাল (১৯৬৯)
অসংলগ্না (১৯৬৯)
রৌরব (১৯৭০)
রূপকথা এবং তারপর (১৯৭০)
রঙ্গ-তুরঙ্গ (১৯৭০)
তুমি (১৯৭১)
সন্ধিপূজা (১৯৭২)
এরাও আছে (১৯৭২)
কৃষ্ণপক্ষ (১৯৭২)
নবীন দত্ত (১৯৭৪)
প্রথম গরল (১৯৭৪)
আশাবরী (১৯৭৪)
সাত সমুদ্র তেরো নদী (১৯৭৬)
লী (১৯৭৮)
অলংকারপুরী (১৯৭৮)
হরিশচন্দ্র (১৯৭৯)

গল্পগ্রন্থ

বনফুলের গল্প (১৯৩৬)
বনফুলের আরো গল্প (১৯৩৬)
বাহুল্য (১৯৪৩)
বিন্দুবিসর্গ (১৯৪৪) পরিমল গোস্বামীকে উৎসর্গ করেছিল
অদৃশ্যলোক (১৯৪৬)
আরো কয়েকটি (১৯৪৭)
তন্বী (১৯৫২)
নবমঞ্জরী (১৯৫৪)
ঊর্মিমালা (১৯৫৫)
রঙ্গনা (১৯৫৬)
অনুগামিনী (১৯৫৮)
করবী (১৯৫৮)
সপ্তমী (১৯৬০)
দূরবীন (১৯৬১)
মণিহারী (১৯৬৩)
ছিটমহল (১৯৬৫)
এক ঝাঁক খঞ্জন (১৯৬৭)
অদ্বিতীয়া (১৯৭৫)
বহুবর্ণ (১৯৭৬)
বনফুলের নূতন গল্প (১৯৭৬)
মায়াকানন (১৯৭৮)

গল্প সংগ্রহ

বনফুলের গল্প সংগ্রহ
প্রথম খণ্ড (১৯৫৫)
দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৫৭)
ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫৮)
ছোটদের ভালো ভালো গল্প (১৯৬১)
তিনকাহিনী (১৯৬১)
বনফুলের গল্প সংগ্রহ
প্রথম শতক (১৯৬২)
দ্বিতীয় শতক (১৯৬৫)
তৃতীয় শতক (১৯৭০)
চতুরঙ্গ (১৯৭৪)
বনফুল বীথিকা (১৯৭৪)
দিবসযামিনী (১৯৭৬)
বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৭৬)
রাজা (১৯৭৭)
বনফুলের হাসির গল্প (১৯৭৮)
বনফুলের কিশোর সমগ্র (১৯৭৮)
বনফুলের শেষ লেখা (১৯৭৯)
বনফুলের ছোটগল্প সমগ্র, দুই খণ্ডে (২০০৩)

নাটক

মন্ত্রমুগ্ধ (১৯৩৮)
রূপান্তর (১৯৩৮)
শ্রীমধুসূদন (১৯৩৯)
বিদ্যাসাগর (১৯৪১)
মধ্যবিত্ত (১৯৪৩)
দশভাণ (১৯৪৪)
কঞ্চি (১৯৪৫)
সিনেমার গল্প (চিত্রনাট্য) (১৯৪৬)
বন্ধনমোচন (১৯৪৮)
দশভাণ ও আরো কয়েকটি (১৯৬২)
শৃন্বন্তু (১৯৬৩)
আসন্ন (১৯৭৩)
ত্রিনয়ন (১৯৭৬)

কাব্যগ্রন্থ
বনফুলের কবিতা (১৯৩৬)
অঙ্গারপর্ণী (১৯৪০)
চতুর্দশী (১৯৪০)
আহবনীয় (১৯৪৩)
করকমলেষু (১৯৪৯)
বনফুলের ব্যঙ্গকবিতা (১৯৫৮)
নূতন বাঁকে (১৯৫৯)
সুরসপ্তক (১৯৭০)

অন্যান্য রচনা
ভূয়োদর্শন (রম্যরচনা, ১৯৪২)
উত্তর (প্রবন্ধ সংকলন, ১৯৫৩)
শিক্ষার ভিত্তি (ভাষণ, ১৯৫৫)
মনন (ভাষণ, ১৯৬২)
দ্বিজেন্দ্র দর্পণ (ভাষণ, ১৯৬৭)
রবীন্দ্র-স্মৃতি (স্মৃতিকথা, ১৯৬৮)
ভাষণ (ভাষণ, ১৯৭৮)
মর্জিমহল (দিনলিপি, ১৯৭৪)
চূড়ামণি রসার্ণব (রম্যরচনা, ১৯৭৬)
পশ্চাৎপট (আত্মজীবনী, ১৯৮৭)

তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি পদ্মভূষণ (১৯৭৫) উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)পান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে।


রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বনফুল প্রায়ই রসিকতা করতেন। কবিও তাঁর সঙ্গে রসিকতা করতে ভালোবাসতেন। তাঁর ছদ্মনাম বনফুল নিয়েও রসিকতা করেছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথকে একবার খোঁচা দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বনফুল। পরবর্তী সাক্ষাতে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘তোমার নাম বনফুল কে দিয়েছিল? তোমার নাম হওয়া উচিত ছিল “বিছুটি”। যা দুয়েক ঘা দিয়েছ, তার জ্বলুনি এখনো কমেনি।


ছেলেকে খুব অল্প বয়সে  হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। হোস্টেলের কড়া অনুশাসনের মধ্যেই নানা ধরনের ‘আউট বই’ পড়তেন বলাই। থার্ড ক্লাস মানে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন তিনি। ওই হোস্টেলেই সুধাংশু শেখর হালদার নামের তাঁর এক সিনিয়র ভাই ছিলেন, বলাইয়ের সঙ্গে তাঁর ছিল খুব ভাব। বলাই তাঁকে ‘বটুদা’ নামে ডাকতেন। বলাইয়ের এমন সৃজনশীল লেখালেখি দেখে সেই বটুদা তাঁকে পরামর্শ দিলেন পত্রিকায় লেখা পাঠাতে। তখন বলাই আর তাঁর বটুদা মিলে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠাতে শুরু করলেন।

এরই মধ্যে মালঞ্চ পত্রিকায় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের নামে ছাপা হয়ে গেল একটি কবিতা। স্কুলজুড়ে বলাইয়ের নাম হয়ে গেল কবি বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। সহপাঠী ও বন্ধুরা অভিনন্দন জানাতে লাগল তাঁকে। সবাই যখন খুব খুশি, তখনই এল বজ্রপাত, বলাইয়ের ডাক পড়ল প্রধান শিক্ষকের কামরায়। তিনি নিজেও কাব্যচর্চা করেন। তাঁর এক শিক্ষার্থী তাঁর মতোই কবি হয়ে গেছে, বিষয়টি হয়তো তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘তোমার বাবা যে পয়সা খরচ করে তোমাকে বোর্ডিংয়ে রেখেছেন, তা কি কবিতা লেখার জন্য?’ 
বলাই তখন খুব ঝামেলায় পড়লেন। ততক্ষণে লেখার পোকা ঢুকে গেছে তাঁর মাথায়। তাই ভাবলেন, এ বাধা পেরোতেই হবে। কোনোভাবেই থামা যাবে না। তখন আবার সেই বটুদার দ্বারস্থ হলেন তিনি। দুজন মিলে পরামর্শ করতে বসলেন, কী করা যায় তা নিয়ে। শেষমেশ বটুদা তাঁকে পরামর্শ দিলেন, ‘তুমি একটা ছদ্মনাম বের করো।’

বলাই নিজে গাছগাছালি আর অরণ্য পছন্দ করতেন। তাই নিজের নাম দিলেন বনফুল। সেই থেকে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় হয়ে গেলেন বনফুল। তরুণ বয়সে শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গকবিতা লিখতেন বনফুল। তাঁর এসব কবিতা তখন অনেককেই খেপিয়ে তুলত। ফলে ছদ্মনামটি সে সময় তাঁর খুব কাজে দিয়েছিল।
















===========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆=========

















No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...