(২৯ জুলাই ১৮৮৮ — ১২ মে ১৯৪১)
প্রখ্যাত 'কল্লোল' পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক।
জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কুঁয়রপুরে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুলাই। পিতা কৈলাসচন্দ্র দাশ ছিলেন নব বিধান ব্রাহ্ম সমাজের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও মাতা ইচ্ছাময়ী দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণা ও দৃঢ়চেতা রমণী। তাঁদের চারপুত্র (মনোরঞ্জন বিভুরঞ্জন, দীনেশরঞ্জন ও প্রিয়রঞ্জন) এবং তিন কন্যার (চারুবালা,তরুবালা ও নিরুবালা) মধ্যে তৃতীয় পুত্র ছিলেন দীনেশরঞ্জন। তিনি চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাবে কলেজ ত্যাগ করেন। কার্টুন ও ছবি আঁকা ছিল তার সহজাত গুণ। কিছু দিন আর্ট স্কুলে শিল্প শিক্ষাও লাভ করেন। কিন্তু তার অতি অল্প বয়সেই পিতা পরলোক গমন করেন এবং এরপর পরিবারের সবাই কলকাতায় চলে আসেন।
কলকাতার তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি অনুকূল না থাকার কারণে সদা চঞ্চল ছিলেন দীনেশরঞ্জন। কর্মজীবনের প্রথম দিকে এক ফ্যান কোম্পানিতে, পরে কিছুকাল কখনো ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানে কখনো ঔষধের দোকানে কাজ করেন। কিন্তু কোন চাকরি তার ভালো না লাগায় বিভিন্ন প্রকাশকের পুস্তকাদির প্রচ্ছদপট ছবি কার্টুন অঙ্কন এবং অল্প স্বল্প লেখা নিয়ে জীবন চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় যৎসামান্য অর্থে নতুন লেখকদের নিয়ে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের নববর্ষে বন্ধু গোকুলচন্দ্র নাগের সহযোগিতায় প্রকাশ করেন 'কল্লোল' নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা।[৩] প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে এই পত্রিকাটি। লেখক ও পাঠক মহলে পক্ষে-বিপক্ষে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল এর মাধ্যমে। ফলে বাংলা সাহিত্যে সেই যুগ “কল্লোল যুগ” আখ্যা লাভ করে। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তার বিখ্যাত ‘কল্লোল যুগ’ নামক গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যের এই সময়টির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্ত কিছুদিন পর যক্ষারোগে সহযোগী বন্ধু গোকুলচন্দ্রের অকালমৃত্যু ঘটলে পত্রিকা প্রকাশের যাবতীয় ভার দীনেশের উপর এসে পড়ে। 'কল্লোলে'র মালিকানা থেকে যে সামান্য আয় হত তা দিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন করাই শক্ত ছিল। কিন্তু উৎসাহের অন্ত ছিল না তার। এর মধ্যেই তিনি পটুয়াটোলা লেনে 'কল্লোল পাবলিশিং হাউস' খুলে বসেন। বিভিন্ন লেখকের বেশ কিছু বই ছাপানো হয় এখান থেকে। বইয়ের প্রচ্ছদ সজ্জা এবং কার্টুন আঁকা দু ধরনের কাজই চলতে থাকে। মেজদা বিভুরঞ্জন এক সময়ে কিছু অর্থ সাহায্য করলেও শেষের দিকে পত্রিকা চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। অর্থোপার্জনের জন্য তিনি চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইতিমধ্যে চিত্র বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথের অধীনে কাজের সূত্রে ফটোগ্রাফি বিষয়েও তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। চলচ্চিত্র সম্বন্ধে তার সে চিন্তা ও ধারণা তিনি ব্যক্ত করেছেন ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের 'কল্লোলে' র আষাঢ়, শ্রাবণ, অগ্রহায়ণ ও পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিতচলচ্চিত্র' নামক প্রবন্ধে। প্রসঙ্গত, ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যাটিই কল্লোলের শেষ সংখ্যা (৮১তম সংখ্যা) ছিল। 'কল্লোল' চালাতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে না পড়লে তিনি হয়তো ‘কল্লোল' বন্ধ করে দিতেন না। এরপর দীনেশরঞ্জন আমৃত্যু চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভালো অভিনয়ও করতে পারতেন। ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের বাসভবন 'কমল কুটীরে' কেশবচন্দ্র-রচিত 'নব বৃন্দাবন' নাটকের অভিনয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি নিউ থিয়েটার্সের অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে পরিচালক মণ্ডলীতে যোগদান করেন। সিনারিয়ো-লেখক ও পরিচালক এবং বিভিন্ন ছবিতে অভিনেতার ভূমিকাও গ্রহণ করেন। ‘আলোছায়া' তারই পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। পত্রিকা সম্পাদনা ইত্যাদির পাশাপাশি তিনি নিজে অল্প স্বল্প যেগুলি লিখতেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -
‘উতঙ্ক’ ( রূপক নাট্য) - ১৩২৭ ব
‘মাটির নেশা’(গল্পসংগ্রহ) -১৩৩২ ব
‘ভুঁই চাঁপা (গল্পসংগ্রহ) -১৩৩২ ব
‘কাজের মানুষ’ (ব্যঙ্গ রচনা)
১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত হেমচন্দ্র চন্দ্র পরিচালিত 'প্রতিশ্রুতি' ছায়াছবিতে অভিনয়ের কাজ শেষ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডিউডোনাল আলসারে আক্রান্ত হয়ে মাসখানেক রোগ ভোগের পর কলকাতায় বড়দিদি চারুবালা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলিপুরস্থিত বাসভবনে ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই মে সোমবার অকৃতদার দীনেশরঞ্জন প্রয়াত হন।
;========{{{{{{{{{{{{===}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}==
No comments:
Post a Comment