Monday, 29 July 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। হেনরি স্পেন্সার মুর । একজন ইংরেজ শিল্পী। তিনি তাঁর অর্ধ- বিমূর্ত বিশাল ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যের জন্য পৃথিবীতে পরিচিত। গণপূর্ত শিল্প ভাস্কর্যের পাশাপাশি, মুর প্রচুর চিত্রশিল্প নির্মাণ করেছেন, যার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনবাসীদের বিমান আক্রমণ থেকে আশ্রয়ের একটি চিত্র সাথে আছে কাগজে আঁকা আরও বহু চিত্রলেখ। Dt - 30.07.2024. Vol - 949. Tuesday The blogger post in literary e magazine.


হেনরি স্পেন্সার মুর 

(৩০ জুলাই ১৮৯৮-৩১ আগস্ট ১৯৮৬)


  একজন ইংরেজ শিল্পী। তিনি তাঁর তার অর্ধ- বিমূর্ত বিশাল ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যের জন্য যেগুলো পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে গণপূর্ত শিল্প হিসেবে ছড়িয়ে আছে। ভাস্কর্যের পাশাপাশি, মুর প্রচুর চিত্রশিল্প নির্মাণ করেছেন, যার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনবাসীদের বিমান আক্রমণ থেকে আশ্রয় নেওয়ার একটি চিত্র আছে, সাথে আছে কাগজে আঁকা আরও চিত্রলেখ।

জন্ম ক্যাসলফোর্ড ইয়র্কশায়ারের ওয়েস্ট রাইডিং, ইংল্যান্ডে, মেরি বেকার এবং রেমন্ড স্পেন্সার মুরের ঘরে। তার পিতা ছিলেন আইরিশ এবং প্রথমে খনির ডেপুটি পদাসীন হন এবং তারপরে ক্যাসলফোর্ডের হোয়েলডেল কয়লাখনির অধস্তন-ব্যবস্থাপক হন। তিনি একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন সাথে তিনি ছিলেন সঙ্গীত এবং সাহিত্য অনুরাগী। তার ছেলেরা খনিতে কাজ করবে না এই প্রত্যয়ে তিনি তাদের অগ্রগতির জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে একটি পথ হিসেবে বিবেচনা করেন।আট সন্তানের মধ্যে সপ্তম হেনরি ছিলেন এমন এক পরিবারের সদস্য যা প্রায়ই অসচ্ছলতার সাথে যুদ্ধ করত। তিনি ক্যাসলফোর্ডে শিশু এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন যেখানে তিনি কাদামাটির মূর্তি নির্মাণ এবং কাঠে খোঁদাই শুরু করেন। তিনি স্বীকার করেন যে এগার বছর বয়সে তিনি ভাস্কর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সানডে স্কুলে পড়ার সময়ে মাইকেলএঞ্জেলোর অর্জনের কথা জানার পর।

দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় ক্যাসলফোর্ড গ্রামার স্কুলে তিনি ভর্তি হন, যেখানে তার কয়েকজন ভাইবোন পড়ালেখা করেছেন, যেখানে তার প্রধানশিক্ষক শীঘ্রই তার প্রতিভা এবং মধ্যযুগের ভাস্কর্যে আগ্রহ লক্ষ্য করেন। তার অঙ্কন শিক্ষক তার শিল্পজ্ঞান প্রসারিত করেন এবং তার অনুপ্রেরণায়, তিনি শিল্পকে তার পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর হন; সর্বপ্রথমে স্থানীয় শিল্প কলেজে ছাত্রবৃত্তির জন্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মুরের প্রথম লিপিভুক্ত খোঁদাই কাজ- ক্যাসলফোর্ড সেকেন্ডারি স্কুলের স্কট সোসাইটির জন্যে একটি ফলক, এবং বিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়তে গিয়েছিল তাদের সম্মানে একটি রোল অফ অনার- এই সময়ে নির্মিত হয়।

তাঁর বাল্য প্রতিভা স্বত্বেও, মুরের বাবা-মা ভাস্কর হিসেবে তার প্রশিক্ষণের বিরুদ্ধে ছিলেন, যে পেশাকে তারা মনে করতেন চাকরির অল্প সুবিধার এক কায়িক পরিশ্রম হিসেবে। প্রশিক্ষণাধীন শিক্ষক হিসেবে সংক্ষিপ্ত এক সূচনার পর, মুর যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন সেখানে শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। আঠারো বছর বয়সে, মুর সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। প্রিন্স অব ওয়েলস' ওন সিভিল সার্ভিস রাইফেলস সেনাদলে তিনি ছিলেন সবচেয়ে তরুণ এবং ১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বোরলন জঙ্গলে, ক্যাম্ব্রেইয়ের যুদ্ধে একটি গ্যাস আক্রমণে আহত হন।  হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার পর, তিনি যুদ্ধের বাকি সময়টা শারীরিক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন, যুদ্ধবিরতি সাক্ষর হওয়ার পর ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি স্মৃতিচারণ করেন, "আমার জন্যে যুদ্ধটা রোমানটিক একটি অস্পষ্টতায় কেটে যায় বীর হওয়ার প্রচেষ্টায়।" এই মনোভাব বদলে যায় যখন তিনি যুদ্ধের নাশকতার কথা মনে করেন এবং ১৯৪০ সালে তিনি তার বন্ধু আরথার সেলের কাছে একটি চিঠিতে লিখেন, যে "এক বা দুই বছর পর [যুদ্ধের পরে] খাকির একটি উর্দির দেখা জীবনে যতকিছু ভুল এবং অযথা এবং জীবন- বিরোধী তা নির্দেশ করতে শুরু করে। এবং এখনও সেই অনুভূতি বিদ্যমান আছে।

মহাযুদ্ধের পর, মুর তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রাক্তন-সৈন্য হিসেবে সরকারি অনুদান পান এবং ১৯১৯ সালে তিনি লিডস শিল্পকলা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে লিডস শিল্পকলা কলেজ) ভর্তি হন, যা শুধুমাত্র তার ব্যবহারের জন্য একটি ভাস্কর্য স্টুডিও গড়ে তোলেন। কলেজে, তার দেখা হয় বারবারা হেপওয়ার্থের সাথে, একজন সহপাঠী যিনি নিজেও একজন খ্যাতনামা ব্রিটিশ ভাস্কর হয়ে উঠবেন, এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে সাথে ভদ্র পেশাদারী এক প্রতিযোগিতা যা বহু বছর ধরে টিকে থাকে। লিডসে, মুর স্যার মাইকেল স্যাডলার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আধুনিক নির্মাণের সংগ্রহের সংস্পর্শেও আসেন, যার সুস্পষ্ট প্রভাব তার অগ্রগতিতে পড়ে। ১৯২১ সালে, লন্ডনের রয়াল কলেজ অব আর্টে পড়ালেখার জন্যে মুর একটি বৃত্তি পান, হেপওয়ার্থ এবং ইয়র্কশায়ারের অন্যান্য সমসাময়িকদের সাথে। লন্ডনে থাকাকালীন, মুর আদিম শিল্প এবং ভাস্কর্য সম্পর্কে তার জ্ঞান প্রসারিত করেন, ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট জাদুঘর এবং ব্রিটিশ জাদুঘরে নৃতত্ত্ব সংগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করে।

১৯২৪ সালে, মুর ছয়মাসের একটি ভ্রমণ বৃত্তি পান যা তিনি উত্তর ইতালিতে মাইকেলেঞ্জেলো, জোত্তো দি বন্দোনে, জিওভানি পিসানো এবং আরও কতিপয় প্রাচীন গুরুদের মহান শিল্পকর্ম নিয়ে পড়াশোনা করে ব্যায় করেন। এই সময়ে তিনি প্যারিসেও যান, আকাদেমি কলারসিতে সময়ানুগ-নকশার ক্লাসের সুবিধা নিয়ে, এবং ট্রকাডেরোতে, একটি টল্টেক-মায়া ভাস্কর্যসদৃশ আকৃতির প্লাস্টারের ছাঁচ, দ্যা চ্যাক মুল, যা তিনি পূর্বে বইয়ে চিত্রলিপি হিসেবে দেখছেন তা দর্শন করেন। তার ভাস্কর্যের প্রধান প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে মুরের কাজের ওপরে শায়িত মূর্তিটির গভীর প্রভাব ছিল।


লন্ডনে ফিরে এসে, মুর রয়াল শিল্পকলা কলেজে সাত বছরের শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তাকে সপ্তাহে দুইদিন কাজ করতে হত, যার ফলে তিনি তার নিজের কাজে সময়ব্যায় করতে সক্ষম হন। তার প্রথম গণপূর্ত কাজ, দখিন হাওয়া (১৯২৮-২৯), ছিল ৫৫ ব্রডওয়েতে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের সদর দফতরের দেওয়ালের উপরে করা 'চার হাওয়ার' আটটি কারুশিল্পের একটি।[১৪] অন্য 'হাওয়ায়গুলো' সমসাম্যিক ভাস্কর যেমন এরিক গিল এবং মাটিসংলগ্ন শিল্পকর্মের নির্মাতা এপ্সটাইন দ্বারা খোদিত ছিল। ১৯২৮ দেখে মুরের প্রথম একক প্রদর্শনী, লন্ডনের ওয়ারেন গ্যালারিতে আয়োজিত।[১৫] ১৯২৯ সালের জুলাইয়ে, মুর বিয়ে করেন ইরিনা র‍্যাডেটস্কিকে, রয়াল কলেজের একজন অঙ্কন শিক্ষার্থী। ইরিনা জন্ম নেন ১৯০৭ সালে কিয়েভে ইউক্রেনিয়-পোলিশ বাবামায়ের ঘরে। তার বাবা রুশ বিপ্লব থেকে ফেরত আসেননি এবং তার মা'কে প্যারিসে উদ্বাসিত করা হয় যেখানে তিনি একজন ব্রিটিশ সেনা অফিসারকে বিয়ে করেন। এক বছর পর ইরিনা'কে লুকিয়ে প্যারিসে আনা হয় এবং সেখানে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত, যার পরে তাকে বাকিংহ্যামশায়ারে তার সৎবাবার আত্মীয়দের কাছে বাস করার জন্য পাঠান হয়।


১৯৩২ সালে, রয়াল কলেজে ছয় বছর শিক্ষকতার পর, মুর চেলসি শিল্পকলা বিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।[১৭] শৈল্পিকভাবে, প্যারিসে তাদের নিয়মিত ভ্রমণ এবং যেমন পাবলো পিকাসো, জর্জ ব্র্যাক, জা আরপ এবং আলবার্তো জিয়াকমেতি'র মত বিশিষ্ট প্রগতিশীল শিল্পীদের সংস্পর্শে আংশিক প্রভাবে পড়ে মুর, হেপওয়ার্থ এবং সেভেন অ্যান্ড ফাইভ সোসাইটির অন্যান্য সদস্যরা ধীরে ধীরে আরও বিমূর্ত শিল্প,[১৮] নির্মাণ করবেন। মুর অধিবাস্তববাদের সাথে খুনসুটি করেন, ১৯৩৩ সালে পল ন্যাশের আধুনিক শিল্প আন্দোলন "ইউনিট ওয়ান"-এ যোগদান করে। ১৯৩৪ সালে, মুর স্পেন ভ্রমণ করেন, তিনি ভ্রমণ করেন আল্টামিরার গুহা (যাকে তিনি বর্ণনা করেছেন "গুহাচিত্রের রাজকীয় একাডেমী" হিসেবে), মাদ্রিদ, টলেডো এবং প্যামপ্লোনা।[১৯]


মুর এবং ন্যাশ আন্তর্জাতিক অধিবাস্তব প্রদর্শনী, যা ১৯৩৬ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় তার সংগঠন সমিতিতে ছিলেন। ১৯৩৭ সালে, রোল্যান্ড পেনরোজ মুরের কাছ থেকে একটি পাথরের বিমূর্ত "মা এবং সন্তান" কিনে নেন জা তিনি হ্যাম্পস্ট্যাডে তার বাড়ির সামনের বাগানে প্রদর্শন করে। শিল্পকর্মটি অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে বিতর্কিত প্রতিপন্ন হয় এবং স্থানীয় পত্রিকা শিল্পকর্মটির বিরুদ্ধে পরবর্তী দুই বছর ধরে একটি প্রচারণা চালায়। এই সময়ে মুর ধীরে ধীরে স্পষ্ট খোঁদাই থেকে ব্রোঞ্জ ছাঁচের দিকে ঝুঁকে পড়েন, প্রস্তুতিমূলক অঙ্কনের বদলে প্রাথমিক নকশাকে কাঁদা বা প্লাস্টারের ছাঁচে ফেলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় চেলসি শিল্পকলা বিদ্যালয়কে নরদ্যাম্পটনে অপসারিত করা হয় এবং মুর তার শিক্ষকতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যুদ্ধের সময়ে, মুর বিমান আক্রমণ থেকে লন্ডনবাসীদের আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমানোর শক্তিশালী চিত্র অঙ্কন করেন। কেনেথ ক্লার্ক, ওয়ার আর্টিস্টস' অ্যাডভাইজরি কমিটির (ডব্লিউএএসি) সভাপতি, পূর্বে চেষ্টা করেছিলেন মুরকে একজন পূর্ণ বেতনের যুদ্ধ শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দিতে এবং এখন আশ্রয় চিত্রের কয়েকটি কিনতে রাজি হন এবং পরবর্তীতে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহারের জন্যে চুক্তি করেন। ডব্লিউএএসি যেসব আশ্রয় চিত্র কিনে সেগুলো ১৯৪০ সালের শরত এবং ১৯৪১ সালের বসন্তের মধ্যে অঙ্কিত এবং ডব্লিউএএসি-এর পরিকল্পনা দ্বারা কেনা সবচেয়ে ভাল পণ্য বলে বিবেচিত হয়। ১৯৪১ সালের আগস্টে ডব্লিউএএসি মুরকে ভাড়া করেন ইয়র্কশায়ারের হোয়েলডেল কয়লাখনি, যেখানে তার পিতা শতাব্দীর শুরুতে কাজ করেন, তার ভূগর্ভে কাজ কর্মরত খনি শ্রমিকদের চিত্র আঁকার জন্যে। মুর আশ্রয়স্থলের লোকদের চিত্র অঙ্কন করেন নিস্ক্রিয়ভাবে বিপদ কেটে যাওয়ার জন্যে অপেক্ষারতভাবে আর খনি শ্রমিকদের আঁকেন কয়লামুখে আগ্রাসীভাবে কাজ করা অবস্থায়। এইসব চিত্র যা, উদাহরণস্বরূপ ডব্লিউএএসি-এর ব্রিটেন অ্যাট ওয়ার প্রদর্শনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল যা উত্তর আমেরিকায় যুদ্ধের সময়ে সফর করে তা মুরের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে আমেরিকায়।

১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে, ঠিক পঁচিশ বছর আগে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, এনরিকো ফের্মির নেতৃত্বে পদার্থবিদদের দল সর্বপ্রথম নিয়ন্ত্রিত, স্বনির্ভর নিউক্লিয়ার চেইন প্রতিক্রিয়া অর্জন করার পর, যেখানে একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠের বসার স্থান ছিল, র‍্যাকেট কোর্টের নিচে যেখানে পরীক্ষানিরীক্ষা সঙ্ঘটিত হয় সেই স্থানটিতে মুরের নিউক্লিয়ার শক্তি-এর পর্দা উন্মোচিত হয়।[৩৬] একটি বৃহৎ, খোলা চকের মাঝখানে এই ১২ ফুট দীর্ঘ শিল্পকর্মটিকে প্রায়শ মনে করা হয় একটি মাশরুম মেঘের উপরে বিশালাকার মানব খুলি'র চিত্র, কিন্তু মুরের ব্যাখ্যা অনেক ভিন্ন ছিল। তিনি একবার এক বন্ধুকে বলেন যে তিনি আশা করেন দর্শকেরা "এর চারপাশ ঘুরে দেখবে, খোলা স্থানগুলো দিয়ে উঁকি দেবে, এবং হয়তবা তাদের মনে হবে তারা একটি ক্যাথেড্রালে আছে।"ইলিনয়ের শিকাগোতে, মুর বিজ্ঞানকে সম্মান দেখান একটি বিশাল ব্রোঞ্জের সূর্যঘড়ি দিয়ে, যার স্থানীয় নাম ম্যান এন্টারস দ্যা কসমস (১৯৮০), যা মহাকাশ অনুসন্ধান কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিতে নির্মিত হয়েছিল।

ইংল্যান্ডে মুর তার স্টুডিওতে (১৯৭৫), অ্যালান ওয়ারেনের আলোকচিত্র

মুরের জীবনের শেষ তিন দশক ক্ষুদ্র প্রবাহে বয়; পুরো পৃথিবী জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রধান অতীতসম্পর্কিত ঘটনা ঘটে, ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মে ফ্লোরেন্সের মুখোমুখি ফোর্ট ডি বেল্ভেডেরের মাঠে সঙ্ঘটিত একটি খুবই বিশিষ্ট প্রদর্শনী উল্লেখযোগ্য। ১৯৫১ সালে জন রিডের প্রযোজনায় নেতৃত্বস্থানীয় তথ্যচিত্র "হেনরি মুর"-এর পর, তিনি বহু চলচ্চিত্রে অতিথি ভূমিকায় উপস্থিত হন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬৪ সালে, আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়ারেন ফরমা কর্তৃক নির্মিত তথ্যচিত্র "৫ ব্রিটিশ ভাস্কর (কর্ম এবং আলাপ)"-এ মুরকে চিত্রিত করা হয়। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে, তার নির্মাণকে চিত্রায়ন করে এক বছরে প্রায় ৪০টি প্রদর্শনী হয়। কাজের চুক্তির সংখ্যা বাড়তে শুরু করল; তিনি ১৯৬২ সালে লন্ডনের সংসদ ভবনের কাছে কলেজ গ্রিনের জন্য ছুরির প্রান্ত দুই খণ্ড সম্পূর্ণ করেন। মুরের মতে, "যখন আমাকে হাউস অব লর্ডসের কাছে স্থান দেওয়া হয়েছিল... আমি স্থানটি এত পছন্দ করেছিলাম যে আমি যাওয়ার কষ্ট করিনি এবং হাইড পার্কে বিকল্প কোন স্থানের সন্ধানে যাইনি—একটি বিশাল পার্কে একটি একক ভাস্কর্য হারিয়ে যেতে পারে। হাউস অব লর্ডসের স্থানটি বেশ ভিন্ন ছিল। এটি একটি রাস্তার পাশে অবস্থিত যেখানে মানুষ হাঁটে এবং সেখানে কিছু বেঞ্চ আছে যেখানে তারা বসে গভীর চিন্তা করতে পারে। 

মুরের সাক্ষর হচ্ছে একটি শায়িত মূর্তি। মুরের এই আকৃতির আবিষ্কার, ল্যুভর জাদুঘরে তার দেখা টল্টেক-মায়ান মূর্তির প্রভাবে প্রভাবিত, তাকে নিয়ে যায় বর্ধিত বিমূর্তকরণের দিকে যখন তিনি তার চিন্তা নকশার উপাদান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার দিকে নিয়ে গেলেন। মুরের প্রথমদিকের শায়িত মূর্তিগুলো প্রধানত ভর নিয়ে কাজ করে, আর তার পরেরদিকের কাজগুলো ভাস্কর্যের দৃঢ় উপাদানগুলোর সাথে শুধু তাদের আশেপাশের ফাঁকা স্থানের বৈপরিত্বই দেখায় না, বরং তাদের মধ্যের ফাঁকা স্থান যেহেতু তিনি মূর্তিগুলোকে খোলা জায়গা দিয়ে বিদ্ধ করতেন।


প্রথমদিকের মূর্তিগুলো প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে বাঁকা অংগসমূহ দেহ থেকে বিচ্যুত হয়ে আবার সংযুক্ত হয়েছে। পরবর্তীগুলো, আরও বিমূর্ত মূর্তিগুলো প্রায়শই ফাঁকা স্থান দ্বারা আকারের মাধ্যমে সরাসরি দেহের ভেতর দিয়ে বিদ্ধ হয়েছে, যার মাধ্যমে মুর অবতল এবং উত্তল আকৃতি নিয়ে গবেষণা এবং অদলবদল করেন। এইসব আরও চরম ভেদন বারবারা হেপওয়ার্থের ভাস্কর্যগুলির সাথে সমান্তরালে বিকশিত হয়।[৪৩] হেপওয়ার্থ সর্বপ্রথম একটি ধড় বিদ্ধ করেন মুরের প্রথমদিকের একটি প্রদর্শনীর সমালোচনা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার পরে। টেট-এর প্লাস্টারের শায়িত মূর্তি: ফেস্টিভাল (১৯৫১), মুরের পরের ভাস্কর্যগুলোর বৈশিষ্ট্যমন্ডিতঃ একটি বিমূর্ত নারী মূর্তি শূন্যগর্ভ দ্বারা অন্তঃবিদ্ধ। যুদ্ধের পরের কাজগুলোর মধ্যে, এই ভাস্কর্যের বেশকিছু ব্রোঞ্জের ছাঁচ আছে। মুরের ভাগ্নি যখন জিজ্ঞেস করলেন কেন তার ভাস্কর্যের এমন সাধারণ উপাধি আছে, তিনি উত্তর দিলেন,

"প্রতিটি শিল্পেরই একটি নির্দিষ্ট রহস্য থাকা উচিত এবং দর্শকদের কাছে একটি দাবী থাকা উচিত। একটি ভাস্কর্য বা চিত্রকে খুব স্পষ্ট একটি নাম দেওয়ার মানে হচ্ছে সেই রহস্যটির একটি অংশ কেড়ে নেওয়া যাতে দর্শক পরবর্তী শিল্পের দিকে সরে যায়, যা সে এইমাত্র দেখল তার অর্থ কি তার ব্যাপারে কোন গভীর মনোনিবেশ না করে। সবাই মনে করে সে (পুরুষ বা নারী) দৃষ্টিপাত করে, কিন্তু আসলে তারা তা করেনা, জানো।"

মুরের খ্যাতির চরম সীমার সময়ে যে সব ভাস্কর উদিত হন, এবং তার মৃত্যুর পরে, নিজেদেরকে তার ছায়ার নিচে খুঁজে পান। ১৯৪০ সালের শেষের দিকে, মুর একজন পৃথিবীখ্যাত যশস্বী ব্যক্তি ছিলেন; তিনি ব্রিটিশ ভাস্কর্যের এবং সাধারণ ভাষায় ব্রিটিশ আধুনিবাদের কণ্ঠস্বর ছিলেন। পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিনিয়ত তার সাথে তুলনা করা হত, এবং তার উত্তরাধিকার, তার "প্রতিষ্ঠার" পরিচয়পত্র এবং তার অবস্থানকে আক্রমণ করে প্রতিক্রিয়া জানায়। ১৯৫২ সালে ভেনিস বিয়েনালে, আটজন নতুন ভাস্কর তাদের ভীতির জ্যামিতি নির্মাণ করেন মুরের সহনশীলতা, ধারাবাহিকতা, ব্রিটিশ প্যাভিলিয়নের বাইরে অবস্থিত তার ব্রোঞ্জের বৃহৎ যুগল খাড়া মূর্তির ধারণার পেছনের আদর্শের সরাসরি বিরোধিতা করে, এবং ভেতরের আরও অমসৃণ এবং আরও কৌণিক শিল্পের শক্তিশালী বৈপরীত্য দেখান।


তারপরও ব্রিটিশ এবং আন্তর্জাতিক উভয়ের কয়েক প্রজন্মের খ্যাতনামা ভাস্করদের উপরে মুরের সরাসরি প্রভাব ছিল। যেসব শিল্পী তাদের কাজে মুরের গুরুত্ম স্বীকার করেছেন তারা হলেন স্যার এন্থনি ক্যারো,ফিলিপ কিং, এবং আইজ্যাক উইটকিন,তাদের তিনজনই মুরের সহকারী ছিলেন। অন্যান্য শিল্পী যারা তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তারা হলেন হেলেইন ব্লুমেনফিল্ড, ড্র্যাগো মারিন চেরিনা, লিন চ্যাডউইক, এডুয়ারডো পাওলজ্জি, বারনার্ড মেডোস, রেগ বাটলার, উইলিয়াম টার্নবুল, রবার্ট এডামস, কেনেথ আর্মিটাজ এবং জেফরি ক্লার্ক।


বর্তমানে, হেনরি মুর ফাউন্ডেশন হার্টফোর্ডশায়ারে শিল্পীর পেরি গ্রিনের প্রাক্তন বাড়ি, ৭০ একর (২৮ হেক্টর) ভাস্কর্য ভূমি সাথে তার সংস্কার করা বাড়ি এবং স্টুডিও পরিচালনা করে পর্যটন স্থান হিসেবে। এটি লিডসের হেনরি মুর ইন্সটিটিউটও পরিচালনা করে, যা প্রদর্শনী এবং আন্তর্জাতিক ভাস্কর্য নিয়ে গবেষণা কর্ম আয়োজন করে। ইউকে'তে মুরের শিল্পকর্মে জনসাধারণের আগ্রহের পতন কয়েকজন বোধ করেন কিন্তু সাম্প্রতিককালে তা পুনর্জীবিত হয়েছে ২০১০ সালে নিয়ে টেট ব্রিটেনে এবং কিউ'তে মুর আর যথাক্রমে ২০০৭ এবং ২০১১ সালে হ্যাটফিল্ডে হেনরি মুরকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে। যে ফাউন্ডেশনে তিনি অর্থদান করতেন তা যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিদেশে বৃত্তিদান করে এবং প্রদর্শনী কর্মসূচীর মাধ্যমে সমসাময়িক শিল্প প্রচারণায় গুরুত্মপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পৃথিবীতে মুরের শিল্পকর্মের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত এবং পেরি গ্রিন, হার্টফোর্ডশায়ারে মুরের চল্লিশ বছরের নিবাসের গৃহ এবং ভূমির ৬০ একর জমিতে অবস্থিত। জায়গাটি এবং সংগ্রহ বর্তমানে হেনরি মুর ফাউন্ডেশনে মালিকানায় আছে।

২০০৬-এর ডিসেম্বরে, হেনরি মুর ফাউন্ডেশনের আঙিনায় চোর ঢোকে এবং মুরের শায়িত মূর্তির ছাঁচ ১৯৬৯-৭০ (এলএইচ ৬০৮) চুরি করে - একটি ৩.৬ মিটার (১২ ফু) দীর্ঘ, ২.১ টন (২.১ লং টন; ২.৩ শর্ট টন) ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায় যে তারা একটি ক্রেন ব্যবহার করে শিল্পকর্মটিকে একটি চোরাই সমতল ট্রাকে নামায়। এর উদ্ধারে তথ্য চেয়ে ফাউন্ডেশন একটি ভাল পরিমাণের পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০০৯ সালের মে মাসের মধ্যে, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলেন যে তারা বিশ্বাস করেন শিল্পকর্মটিকে, একসময় যার মুল্য ছিল ৩ মিলিয়ন পাউন্ড (ইউএস ডলার ৫.৩ মিলিয়ন); সম্ভবত টুকরো ধাতুর জন্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, প্রায় ৫,০০০ পাউন্ডের জন্যে।২০১২ সালের জুলাই মাসে, ২২ ইঞ্চি (৫৬০ মিমি) ব্রোঞ্জের সূর্যঘড়ি ১৯৬৫, ৫০০,০০০ পাউন্ড মুল্যের, মুর ফাউন্ডেশন থেকে চুরি হয়ে যায়। সেই বছরের শেষের দিকে, বিবিসি'র ক্রাইমওয়াচ টেলিভিশন অনুষ্ঠানের বিশদ অনুসরণ করে, শিল্পকর্মটি উদ্দার করা হয়, এবং চোরদের বার মাসের জেল দেওয়া হয়।

মুর টেট গ্যালারিকে ৩৬টি ভাস্কর্য উপহার দেন, সাথে চিত্রশিল্প, প্রাথমিক নকশা এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম।

টরোন্টোর আর্ট গ্যালারি অব অন্টেরিওতে হেনরি মুর ভাস্কর্য কেন্দ্র উন্মুক্ত হয় ১৯৭৪ সালে। এটি পৃথিবীতে জনসাধারণের জন্যে মুরের শিল্পকর্মের সবচেয়ে বৃহৎ সংগ্রহ, এর বেশিরভাগই ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে তার দ্বারা দান করা। ১৯৬৬ সাল থেকে মুরের তিন প্রণালীর শিল্প নং ২ (তীরন্দাজ) টরোন্টো সিটি হলের ন্যাথান ফিলিপস স্কয়ারে স্থাপিত।

১৯৪৮ সালে, মুর ভেনিস বিয়েনেল-এ আন্তর্জাতিক ভাস্কর্য পুরস্কার পান।তিনি ১৯৫১ সালে নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করেন কারণ তিনি মনে করেন যে পদকটি তাকে সাংগঠনিক ব্যক্তিতে পরিণত করবে এবং "এরকম একটি পদবী হয়তবা আমার সহশিল্পীরা যাদের আমার মত একই লক্ষ্য আছে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। তবে তিনি ১৯৫৫ সালে দ্য কম্প্যানিয়ন অব অনার, ১৯৬৩ সালে দ্য অর্ডার অব মেরিট এবং ১৯৬৮ সালে এরাসমাস প্রাইজ জেতেন।


তিনি ন্যাশনাল গ্যালারি এবং টেট গ্যালারি উভয়ের অছি ছিলেন। পরবর্তী প্রতিষ্ঠানটির একটি অংশ শুধুমাত্র তার শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করবে তার দেওয়া এই প্রস্তাবটি কিছু শিল্পীর মধ্যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে। ১৯৭৫ সালে, তিনি টার্নার সমিতির প্রথম সভাপতি হন, যা প্রতিষ্ঠিত হয় একটি ভিন্ন জাদুঘরের প্রচারণার জন্যে যাতে টার্নারের সম্পূর্ণ অর্পিত অর্থাৎ একত্র করা যেতে পারে, ন্যাশনাল গ্যালারি এবং টেট গ্যালারি দ্বারা যে লক্ষ্য পরাস্ত হয়।










=======∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆========

































No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...