অরুণাচল বসু
( ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ - ২৪ জুলাই ১৯৭৫)
একজন কবি এবং অনুবাদক। তিনি বর্তমান বাংলাদেশের যশোরের ডোঙ্গাঘাটায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অশ্বিনীকুমার বসু এবং মাতা লেখিকা সরলা বসু।
অরুণাচল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দীর্ঘদিন কবিতা, গান, ছড়া ইত্যাদি লিখেছেন। তিনি চীনা, তুর্কী, জাপানী এবং রুশ ভাষার অনেক কবিতা অনুবাদ করেছেন। প্রথম-জীবনে চিত্রশিল্পী হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন। এছাড়া নতুন সংস্কৃতি নামক একটি সংস্থার মূল সংগঠকও ছিলেন। অরুণাচল বসু, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহযোগী ছিলেন।
শৈশবে তিনি পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় দারুণ দক্ষ ছিলেন। বেলেঘাটার দেশবন্ধু হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বন্ধুত্ব হয়েছিল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে। এর পর থেকেই দুজনে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠেন।অরুণাচল ছোটো থেকেই আঁকা এবং লেখালেখি করতেন। মাত্র ছয়-বছর বয়েসেই কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। বেলেঘাটার দেশবন্ধু হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। অল্পবয়সেই তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন; প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে আসেন পার্টির বিভাজনের কিছু পরে। তিনি কিছুকাল ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকা ফেরি, ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় প্রুফ রিডারের চাকরি করেছেন, একসময় লন্ড্রি ব্যবসাও চালিয়েছেন।
কবির জীবদ্দশায় মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল— ‘পলাশের কাল’ ও ‘দূরান্ত রাধা’; এ ছাড়া ‘কবি কিশোর সুকান্ত’ (সরলা বসুর সাথে), ‘সুকান্ত : জীবন ও কাব্য’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অনুবাদক হিসাবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মূলত রাশিয়ান কবিতার অনুবাদ করলেও অন্যান্য দেশের কবিতাও অনুবাদ করেছিলেন। প্রায় সাঁইত্রিশ বছর তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং পাণ্ডুলিপিতে লেখালেখি করেছেন। এ ছাড়াও তার আঁকা বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রচ্ছদ আকারে প্রকাশ হয়েছিল। মৃত্যুর প্রায় সাতাশ বছর পরে ‘অরুণাচল বসুর সংকলিত কবিতা’ নামে তার রচিত কবিতা, গান ও অনুবাদ নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।
যে সমস্ত পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশ পেয়েছে, তাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হ’ল: কিশোর সভা, কিশোর, নতুন দিন, কবিতা, পরিচয়, সৃজনী, কবিকণ্ঠ, সবুজ পত্র, কেতন, দিগন্ত, অগ্রণী, ডাক, প্রান্তিক, নান্দীমুখ, উত্তরসুরি, একক, নতুন সাহিত্য, সীমান্ত, রংমশাল, সঙ্কেত, পদাবলী, স্বাক্ষর, অভিমত, ইস্পাত, বাঙলা দেশ, কালান্তর, রুশভারতী, প্রতীতি, অভিজ্ঞান, সোভিয়েত দেশ, প্রভৃতি।
তার আর একটি পরিচয়— তিনি ছিলেন সংগ্রাহক। বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দেশ-বিদেশের বেশ কিছু আঁকা ছবির কপি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। তার জীবনের অন্যতম কৃতিত্ব— ‘নতুন সংস্কৃতি’ (সাহিত্য ও সঙ্গীত বিভাগ) নামক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা। সচেতন এক মানবিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। বাংলার সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ‘নতুন সংস্কৃতি’ এক ঝলক টাটকা বাতাস বয়ে নিয়ে এসেছিল ‘আধুনিক বাংলা কবিতার সঙ্গীতরূপ’ অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। আধুনিক বাংলা কবিতার সঙ্গীতরূপ দেওয়ার ব্যাপারে তিনিই ছিলেন পথিকৃৎ। শেষজীবনে কবি থেকে তার রূপান্তর ঘটেছিল সংগঠক হিসাবে।
সংকলিত কবিতাসমগ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।:
হাজার বছরের প্রেমের কবিতা (১৯৬১) — সম্পাদনা : অবন্তী সান্যাল (তিনটি জাপানী কবিতার অনুবাদ)
একালের কবিতা (১৯৬৩) — সম্পাদনা : বিষ্ণু দে (কবিতা: তুমি তো আকাশ আজ)
প্রেমের কবিতা (১৯৬৩) — সম্পাদনা : সুকুমার ঘোষ (কবিতা: কত নীল রাত হাওয়ায় হারালো)
মৌন মিছিল (১৯৬৬) — সম্পাদনা : সুবোধ রায়, খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত (কবিতা: এত জলে)
সেরা রংমশাল (২০০৩) — সম্পাদনা : পার্থজিৎগঙ্গোপাধ্যায় (কবিতা: গান ও তীর)
প্রকাশনা
তার রচিত কয়েকটি গ্রন্থ:
পলাশের কাল
দূরান্ত রাধা
কবি কিশোর সুকান্ত
সুকান্ত জীবন ও কাব্য
সংকলিত কবিতা (কবিতা, গান ও অনুবাদ কবিতার সংকলন)
সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হয়ে অরুণাচল বসু ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই (বাংলা ৭ শ্রাবণ ১৩৮২) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆==========
No comments:
Post a Comment