Thursday, 26 September 2024

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। হীরেন বসু বা হীরেন্দ্রনাথ বসু । ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীতশিল্পী, সংগীতরচয়িতা, সুরকার, লেখক ও ঔপন্যাসিক। সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতে হীরেন বসু আর সাহিত্য জগতে অর্থাৎ বইয়ের প্রচ্ছদে তিনি হীরেন্দ্রনাথ বসু নামে পরিচিত ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের প্রবর্তক তিনি এবং প্রথম কণ্ঠদান তার নিজের। Dt -26.09.2024. Vol -1011. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

হীরেন বসু বা হীরেন্দ্রনাথ বসু
 (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ - ১৮ জুন ১৯৮৭)





  ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীতশিল্পী, সংগীতরচয়িতা, সুরকার, লেখক ও ঔপন্যাসিক। সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতে হীরেন বসু আর সাহিত্য জগতে অর্থাৎ বইয়ের প্রচ্ছদে তিনি হীরেন্দ্রনাথ বসু নামে পরিচিত। ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের প্রবর্তক তিনি এবং প্রথম কণ্ঠদান তার নিজের। 

জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতায় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতার সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনার পর 'বিদ্যাভূষণ' উপাধি লাভ করেন। এরপর সংগীত চর্চা শুরু করেন। ধ্রুপদ শেখেন রাজেন ঘোষের কাছে, খেয়াল শেখেন নগেন দত্ত, শুকদেব মিশ্র, মাস্তান গামা প্রমুখের কাছে। আর কণ্ঠ সংগীতের পরিমার্জনা পান ওস্তাদ জামিরুদ্দিনের কাছে। প্রথম প্রথম তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত,দ্বিজেন্দ্রগীতি ও রজনীকান্তের গানই গাইতেন। পরে নিজে গীত রচনা শুরু করে নিজেই সুর দিতে লাগেন।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাডান কোম্পানির প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সবাক চলচ্চিত্র "ঋষির প্রেম" ছবিতে নায়ক, গীতিকার,গায়ক ও অন্যতম সুরকার হিসেবে অবতীর্ণ হন এবং ওই বৎসরেই তিনি "জোরবরাত" ছায়াছবিতে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন। অতঃপর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের প্রথম প্রবর্তন করেন। ভারতীয়দের কাছে যখন আফ্রিকা সাহিত্য ও বিনোদনের ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে, সেই সময় ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি সম্পূর্ণ ফিল্ম ইউনিট নিয়ে রওয়ানা দিলেন মোম্বাসার উদ্দেশ্যে - 'ইন্ডিয়া ইন আফ্রিকা' বা 'অফ্রিকা মে হিন্দ' শুটিংয়ের জন্য - আফ্রিকার জঙ্গলের জীবন সংগীত ধরে আনার জন্য। আফ্রিকার পটভূমিতে নির্মিত সেই হিন্দি ছবি মুক্তি পায় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়া 'দাসী', 'তুলসীদাস', 'অমরগীতি' সহ মোট এগারোটি চলচ্চিত্রের পরিচালনা করেন ।তার মধ্যে অন্যতম হল "ইন্ডিয়া ইন আফ্রিকা"।

বেতার, গ্রামোফোন রেকর্ড, ছায়াছবি ও নাটকের জন্য অসংখ্য গান লিখেছেন এবং সংযোজন করেছেন। প্রথম জীবনে শুদ্ধ রাগাশ্রয়ী বহু গান, গীতি-আলেখ্য এবং আবহ-সংগীত রচনা করেন। পরে আধুনিক গানে নিও-ক্লাসিক্যাল সুরের প্রবর্তন করেন। বহু খ্যাতনামা শিল্পীদের কণ্ঠে তার লিরিক গীত হয়েছে। তিনি প্রায় দেড় হাজার গান লিখে গিয়েছেন। জনপ্রিয়তার নিরিখে উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-

ধীরেন্দ্রনাথ দাসের কণ্ঠে
'আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও' (১৯৩১)
মিস লাইটের কণ্ঠে -
'শেফালি তোমার আঁচলখানি বিছাও'(১৯৩২)
কানন দেবীর কণ্ঠে -
'রিনিকি ঝিনিকি ঝিনি'(১৯৩৩)
রবীন মজুমদারের কণ্ঠে-
'আমার আঁধার ঘরের প্রদীপ'(১৯৪২)
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে -
'শুকনো পাতা ঝরে যায়'(১৯৪৮)
'লিখিনু যে লিপিখানি প্রিয়তমারে' (১৯৫০)
'প্রিয়ার প্রেমের লিপি'(১৯৪৮)
'মেঘ মেদুর বরখারে' (১৯৫১)
'হংসমিথুন চলে'(১৯৫০)
'আমি তনু চন্দন বাটি'(১৯৫০)
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে -
'বাউরি হয়েছে আজ শ্রীরাধা', প্রভৃতি
সংগীতের জন্য গ্রামোফোন কোম্পানি ছাড়াও আকাশবাণী কলকাতার সূচনা পর্ব হতে তার যোগাযোগ ছিল গায়ক ও পরিচালক হিসেবে.

গল্প, কবিতা, উপন্যাসও লিখতেন। এগুলি সেসময় প্রবাসী, মানসী ও মর্মবাণী, কল্লোল, দেশ,অমৃত, দীপালি প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আফ্রিকায় শুটিংয়ে গিয়ে তিনি তার আফ্রিকা-দর্শনে কল্পনা আর রোমাঞ্চ ছাড়াও যে বাস্তবতা অনুভব করেছেন তা তুলে ধরেছেন 'বনে-জঙ্গলে' বইতে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 'সুরের ডালি' নামে গীত -সংকলন প্রকাশিত হয়। অন্য গীত সংকলন দুটি হল - ধূপধূনা ও গীতসবিতা। এছাড়া তার অন্যান্য গ্রন্থ দুটি হল -

'জাতিস্মর' আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
'ফিলজফি ইন ইন্ডিয়ান মিউজিক'।


হীরেন বসু ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন কলকাতায় পরলোক গমন করেন ।


সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে শুটিং হয়েছে। সূর্যের আলোয় ঝকমক করছে চাঁদের পাহাড়। কিন্তু বিকেলের ধূসর ছায়া বরফের উপর পড়তেই পালটে গেল রূপ। সে কি ছাড়া যায়! রাস্তার মধ্যিখানে ক্যামেরা পাতা হল আবার। দূর থেকে এগিয়ে আসছে একটা মোটরগাড়ি। কাছেই এসে পড়েছে, কিন্তু গতি কমানোর লক্ষণ নেই। এ দিকে পরিচালক, চিত্রগ্রাহক তাঁদের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা পটেলজি আচমকা দৌড়ে এসে ক্যামেরাটা কাঁধে তুলে পাশের খাদে লাফিয়ে পড়লেন!


১৯৩১ সালে আফ্রিকার মাটিতে শুট হচ্ছে প্রথম কাহিনিচিত্র ‘ট্রেডার হর্ন’, তার পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৩২ সালে সুবিখ্যাত ‘টারজান দি এপ ম্যান’। আফ্রিকা নিয়ে উদ্দীপনা তখন এ দেশে বা এ রাজ্যেও কিছু কম ছিল না। বাংলায় প্যারীমোহন সেনগুপ্তের বই ‘কাফ্রিদের দেশ আফ্রিকা’ বেরিয়ে গিয়েছে ১৯২২ সালেই। ১৯৩৩ সালে হেমেন্দ্রকুমার রায় লিখে ফেলেছেন ‘আবার যকের ধন’, ১৯৩৫ থেকে ‘মৌচাক’-এ ধারাবাহিক ভাবে বেরোতে শুরু করছে ‘চাঁদের পাহাড়’। আর ছায়াছবির জগতে তো টারজানের জাদু দিকে দিকে। ১৯৩৭-এ ওয়াদিয়া মুভিটোন বিপুল ব্যবসা করল ‘তুফানি টারজান’ ছবিতে। পরের বছরই আবার অরোরা বানিয়ে ফেলল ‘টারজান কি বেটি’।

হীরেন বসুর আফ্রিকা-চিত্র সে দিক থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিন্তু এ দেশে তখনও আর কেউ যা করেনি, সেটাই তিনি করেছিলেন, অর্থাৎ খাস আফ্রিকার লোকেশনে গিয়ে শুটিং করে এসেছিলেন। ছবিটার পিছনে একটা জাতীয়তাবাদী তাগিদও ছিল। সেটার অনেকখানি কৃতিত্ব ছবিটির প্রযোজক, তখনকার নামকরা কংগ্রেসি নেতা শেঠ গোবিন্দদাসের। বস্তুত এমন একটি ছবির আইডিয়া গোবিন্দজির মাথাতেই প্রথম এসেছিল। ‘ট্রেডার হর্ন’ ছবিটি দেখে গোবিন্দজির মনে হয়, সাহেবরা ভুল ইতিহাস শেখাচ্ছে। আফ্রিকার জনজাতিদের সঙ্গে সাহেবদের বাণিজ্য শুরু হওয়ার অনেক আগে, প্রাচীন কাল থেকে ভারতের, বিশেষত কাথিয়াবাড়ের বণিকদের সঙ্গে যে আফ্রিকার নিয়মিত বাণিজ্য ছিল, সে কথাটা কেউ তুলছেই না। গোবিন্দজি এর পর থেকেই নিজের সমস্ত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে আফ্রিকায় একটি বড় মাপের সাফারির বন্দোবস্ত করেন, ছবির টাকাও জোগাড় করেন। পাচ্ছিলেন না শুধু উদ্যমী, সাহসী পরিচালক। ১৯৩৮ সালের পুজোয় হীরেনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে সেই অভাবটুকু আর রইল না।

=======∆∆∆∆∆∆∆∆∆========












No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...