(২০ অক্টোবর ১৮৫৯ - ৩০ জুলাই ১৯৫৬)
বিজ্ঞান চর্চা, অধ্যাপনা, বাংলায় স্কুলপাঠ্য বিজ্ঞান-বই রচনা, গণিত, জ্যোতিষ ও জ্যোতিবির্দ্যার সাধন, বাংলা শব্দকোষ প্রণয়ন, লাইনো টাইপের উদ্ভাবন সহ বহুমুখী প্রজ্ঞার এবং "বিদ্যানিধি" উপাধিতে ভূষিত এক ব্যক্তিত্ব।
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় এক সদগোপ পরিবারে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ছিল হুগলি জেলার দিগড়া গ্রামে। তার স্কুলের পড়াশোনা বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়, বাঁকুড়া জেলা স্কুল ও বর্ধমান রাজ স্কুলে। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকে এন্ট্রান্স পাশের পর ভরতি হন হুগলী কলেজে (পরবর্তী কালে কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে হুগলি মহসিন কলেজে হয়)। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকে স্নাতক হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে বটানির একমাত্র ছাত্র হিসাবে দ্বিতীয় বিভাগে এম.এ পাশ করেন।
যোগেশচন্দ্র এম.এ পাশের পরই কটকের রাভেনশ' কলেজের লেকচারার হন। একটানা ৩৬ বৎসর অধ্যাপনার পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। এর মাঝে অবশ্য কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ও চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাঁকুড়ায় ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু বাঁকুড়াতেই বাস করেন। ৩৬ বৎসরের অধ্যাপনা জীবনে তিনি বারো বৎসর বাংলা ভাষাচর্চায়, বারো বৎসর জ্যোতিবির্দ্যাচর্চায় এবং বারো বৎসর দেশীয় কলাচর্চায় ব্যাপৃত ছিলেন। তিনি প্রবাসী, সাহিত্য, বঙ্গদর্শন, মডার্ন রিভিউ, ভারতবর্ষ-সহ সেকালের বিখ্যাত পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধাদি লিখতেন। তিনি গভীর নিষ্ঠায় বাংলাভাষা, সাহিত্য ও পুরাতত্ত্বচর্চায় আত্মানিয়োগ করতেন। সেকারণে, তার রচিত গ্রন্থগুলি যেমন তথ্যে সমৃদ্ধ,তেমনই মনীষায় উজ্জ্বল। "বাশুলী চণ্ডীদাস" নামের এক পুঁথি আবিষ্কার, "সিদ্ধান্তদর্শন" গ্রন্থ সম্পাদনা এবং "পূজাপার্বণ" গ্রন্থ রচনা তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ওড়িশার জঙ্গলরাজ্য খণ্ডপাড়ার জ্যোতির্বিদ চন্দ্রশেখর তথা পাঠানি সামন্ত'র জীবনচর্যা ইংরাজীতে রচনা করে ভারতীয় ধ্রুপদী জ্যোতিবিজ্ঞানীকে দেশে-বিদেশে পরিচিত করান। বাংলা বানানে দ্বিত্ব বর্জন রীতির প্রচলন এবং চারখণ্ডে "বাঙ্গলা শব্দকোষ" প্রণয়নও তার বিশেষ কীর্তি। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেছেন।
সম্প্রতি ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৭৬ বঙ্গাব্দের মধ্যে তাঁর লেখা দুর্গাপূজা বিষয়ক চোদ্দটি প্রবন্ধের সংকলন 'শ্রীশ্রীদুর্গা'প্রকাশিত হয়েছে। এক প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন-
আমরা ভাবের পূজা করি, মূর্তির পূজা করি না... আমরা দুর্গার মূর্তি বলি না, বলি দুর্গার প্রতিমা, গুণ ও কর্মের প্রতিমা।"
যোগেশচন্দ্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিশিষ্ট সভ্য, কয়েক বছর সহ-সভাপতি ও এক বছর সভাপতিও ছিলেন। বিজ্ঞান পরিষদ, উদ্ভিদবিদ্যা পরিষদ ও উৎকল সাহিত্য সমাজের সভ্য ছিলেন। তিনি বাঁকুড়ার ছাতনায় চণ্ডীদাসের নামে এক স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
যোগেশচন্দ্র তার পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সময়ে নানা উপাধি ও পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পণ্ডিত সমাজে জ্যোতির্বিদ চন্দ্রশেখরকে পরিচিত করার জন্য পুরীর পণ্ডিতসভা ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে "বিদ্যানিধি" উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়ান লাইফ গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার, পূজাপার্বণ গ্রন্থের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের 'রামপ্রাণ গুপ্ত পুরস্কার' লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক ও সরোজিনী পদক প্রদান করে। উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট প্রদান করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে এক বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে ডক্টরেট (সাম্মানিক ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করে।
যোগেশচন্দ্র ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই বাঁকুড়ায় ৯৬ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।
রচিত গ্রন্থ :
'সিদ্ধান্তদর্শন' (১৮৯৯)
'আমাদের জ্যোতিষী ও জ্যোতিষ' (১৯০৩)
'বাঙ্গলাভাষা' (৪ খণ্ড) (১৯০৭ - ১৯১৫)
'বাঙ্গলা শব্দকোষ' (৪ খণ্ড) (১৯১৩)
'পূজাপার্বণ' (১৯৫১)
'বেদের দেবতা ও কৃষ্টিকাল' (১৯৫৪)
'পত্রালি' (২ খণ্ড)
'রত্নপরীক্ষা'
'শঙ্কুনির্মাণ'
'চণ্ডীদাসচরিত'
'Ancient Indian Life'
শংকু-নির্মাণ
বাঙ্গালা ভাষা, প্রথম ভাগ (ব্যাকরণ)
বাঙ্গালা ভাষা, দ্বিতীয় ভাগ (বাঙ্গালা শব্দ-কোষ)
ক্ষুদ্র ও বৃহৎ, প্রথম খণ্ড
ক্ষুদ্র ও বৃহৎ, দ্বিতীয় খণ্ড
শিক্ষাপ্রকল্প
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-সংস্কার
পূজা-পার্বণ
কোন্ পথে?
পৌরাণিক উপাখ্যান
ধনুর্বেদ
বেদের দেবতা ও কৃষ্টিকাল
কি লিখি?
এষণা
বাঙ্গালা নবলিপি
বিজ্ঞান কলিকা
রসায়ণ প্রবেশ
আত্মচরিত।
==≠=======∆∆∆∆∆∆∆=============
No comments:
Post a Comment