(২৫ অক্টোবর ১৯৩৩ - ১২ ডিসেম্বর ২০০৫)
অসামান্য সন্দীপন’ শিরোনামে শঙ্খ ঘোষ যা লিখেছেন, সন্দীপনকেই উল্লেখ করে, ‘একক প্রদর্শনী’র ভূমিকার মতো একটি লাইনে, “আপনাদের যাঁদের গল্পটা ভালো লাগল তাঁরা অনুগ্রহ ক’রে আমাকেও ভালবাসুন, কেননা, আমি ও আমার গল্প একই। নমস্কার।” ওই বই তাঁকে উপহার দেওয়ার সময় (১৮/৬/৭১) সন্দীপন, ‘আমি ও আমার গল্প একই’ বাক্যাংশে তাঁর স্পষ্ট ও খরতাময় অক্ষরের হাতের লেখায় ‘একই’ শব্দের আগে লিখেছিলেন ‘কতকটা’
একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। বিগত বিশ শতকের পাঁচের দশকের অন্যতম গদ্যকার যিনি বিষয় নির্বাচনে ও আঙ্গিকের প্রয়োগে স্বতন্ত্র ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের 'আভাঁ গার্দ' লেখকগোষ্ঠীর অন্যতম।
সন্দীপন ছিলেন উপেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও নারায়ণী চট্টোপাধ্যায়ের সপ্তম সন্তান। 1965 সালে তিনি রিনা চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন। ত্রিনা চট্টোপাধ্যায়, তাদের একমাত্র সন্তান, 1966 সালে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথম গল্প-গ্রন্থ ক্রীতদাস ক্রীতদাসী ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস - একক প্রদর্শনী প্রকাশিত হয় দশ বৎসর পর লেখালেখির জগতে তিনি গল্প লিখেছেন ৭০টি, উপন্যাস ২১টি, এছাড়াও লিখেছেন অসংখ্য নিবন্ধ। একই সঙ্গে লিখেছেন ডায়েরি, যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তার রচনায় বিজ্ঞাপনের ভাষা, মান্যভাষা, ইতরামি ও রকের ভাষা কোনটাই তার কাছে ব্রাত্য ছিল না.
উপন্যাস :
একক প্রদর্শনী ১৯৭১
এখন আমার কোনো অসুখ নেই ১৯৭৭
আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি ১৯৮৫
জঙ্গলের দিনরাত্রি ১৯৮৮
হিরোসিমা মাই লাভ ১৯৮৯
অস্তিত্ব , অতিথি তুমি ১৯৯০
কুকুর সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমি জানি ১৯৯১
কলেরার দিনগুলিতে প্রেম ১৯৯২
রিক্তের যাত্রায় জাগো ১৯৯৩
রুবি কখন আসবে ১৯৯৩
এখন জীবন অনেক সতেজ স্বাস্থ্যে ভরা ১৯৯৪
এসো , নীপবনে ১৯৯৫
কলকাতার দিনরাত্রি ১৯৯৬
কলকাতা , তুমি কার ১৯৯৭
কোলাজ ১৯৯৮
ভারতবর্ষ ১৯৯৯
আমি ও বনবিহারী ২০০০
যখন সবাই ছিল গর্ভবতী ২০০১
ডাবল বেডে একা ২০০১
স্বর্গের নির্জন উপকূলে ২০০৩
নিষিদ্ধ স্বপ্নের ডায়েরী ২০০৩
ধ্বংস্বের মধ্য দিয়ে যাত্রা ২০০৪
ছোটগল্প সংকলন
ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী
সমবেত প্রতিদ্বন্দ্ধী ও অন্যান্য
হ্যাঁ প্রিয়তমা
এক যে ছিল দেয়াল
সোনালী ডানার ঈগল.
তাঁর 1961 সালের বই "কৃতদাস কৃতদাসী" বাংলা কথাসাহিত্যের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে এবং তার নাম তৈরি করে। কট্টর প্রতিষ্ঠা বিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং সৃজনশীল স্বাধীনতার সমর্থক সন্দীপন কিছু সময়ের জন্য বড় বড় বাংলা প্রকাশনা সংস্থাগুলির সাথে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিলেন।
1961-65 সালে হাংরি আন্দোলন হাংরি আন্দোলনের পথপ্রদর্শকদের মধ্যে একজন ছিলেন , যা হাংরি প্রজন্ম নামেও পরিচিত , যদিও তিনি বিনয় মজুমদারের সাথে শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহকর্মী সদস্য মলয় রায় চৌধুরী , সুবিমল বসাকের সাথে সাহিত্যিক মতপার্থক্যের কারণে আন্দোলন ছেড়ে দিয়েছিলেন। , ত্রিদিব মিত্র ও সমীর রায়চৌধুরী ।
তিনি তাঁর অমি ও বনবিহারী গ্রন্থের জন্য সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন । তাঁর সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস অমি ও বনবিহারী (2000), সন্দীপন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একটি বর্জন ও নীরবতার ভিত্তিতে একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম সমালোচনা করেছেন। প্রকৃত 'সাব-অল্টার্ন'—উপজাতীয় সর্বহারা। উপন্যাসটি বুধ্যাদেব ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত (যাকে উৎসর্গকারী নোটে 'কবি, নাট্যকার এবং মন্ত্রী' বলা হয়) একটি মজার সামান্য বিতর্ক! তিনি 2005 সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের অসুস্থতার পরে মারা যান।
তিনি ১৯৯৫ সালে বঙ্কিম পুরস্কার ও ২০০২ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদকও লাভ করেছিলেন।
ষাটের দশকে সন্দীপনের অভ্যর্থনা কাফকা, কামুস, সার্ত্রের ইউরোপীয় অস্তিত্ববাদী পরিসরের সাথে চিহ্নিত হয়েছিল। সন্দীপনের রচনায় প্রকৃতপক্ষে এই লেখক এবং বর্ণনামূলক পরিস্থিতির প্রতিধ্বনি রয়েছে যা অযৌক্তিক মানব অবস্থার উপস্থাপনা হিসাবে দেখা যেতে পারে। Rubi Kakhan ashbe (1993) তে রুবি অনুপস্থিতির নীতি হিসাবে স্যামুয়েল বেকেটের গডটের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং বিপ্লব ও রাজমোহনের রাজমোহন অবশ্যই আত্মহত্যার কামুর ধারণা দ্বারা প্রভাবিত।
সন্দীপন 1980-এর দশকে আজকালের একজন কর্মচারী হিসাবে যোগদান করেন এবং তার উপন্যাসগুলি আজকালের পুজো-সংখ্যায় একটি নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে তখন থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত। তাঁর সম্পূর্ণ উপন্যাসের আজকাল সংস্করণটি যেমন সাক্ষ্য দেয়, তিনি সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কাঙ্খিত দুটি পুরস্কার পেয়েছেন - 1995 সালে বঙ্কিম পুরস্কার এবং 2002 সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার । মূলধারা এবং সমান্তরাল ধারার মধ্যে পর্যায়ক্রমে, প্রতিষ্ঠা এবং এন্টি-এস্টাব্লিশমেন্ট, প্রক্রিয়ায় তাদের পার্থক্যগুলিকে ঝাপসা করে।
সংবাদপত্রে ক্যারিয়ার
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় 1981 সালে শুরু থেকে আজকাল দৈনিকের সম্পাদকীয় সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন । সেখানে তিনি সম্পাদককে ছবি এবং চিঠি প্রকাশের পথপ্রদর্শক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আজকালের সাথে তার সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। তিনি এই কাগজের সরোদ (বার্ষিক) সংস্করণের জন্য কল্পকাহিনীর বেশ কয়েকটি কাজ প্রকাশ করেছিলেন, যা পরে সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাস হয়ে ওঠে।
তাঁর লেখায় তিনি কতটা আছেন, কতটা নেই এই সংশয় তৈরি করে দিয়ে সন্দীপন থাকেনই তাঁর সমস্ত লেখায়। শঙ্খ ঘোষের লেখায় অধরা সন্দীপন ধরা পড়েন এই ভাবে: “সেই এক সময়, যার অনেকটাই জানি না, কেউ কেউ মনে করছেন সন্দীপন ফুরিয়ে যাচ্ছেন কি না, এই সংশয়ের দিনগুলি নিয়ে লেখাটি পড়তে পড়তে থেমে আবার পড়তে হয়। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে অনুভব করতে করতে এই লেখা শেষ হয়েও শেষ হয় না।”
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তাঁর ‘কিছু স্মৃতি, কিছু সন্দীপন’ শিরোনামে লিখেছেন, “…আমরা যাকে আধুনিক বলে নির্ধারিত করে থাকি সেই কবিতা আর মূল কবির সম্পত্তি নয়, জঙ্গম এক উত্তরাধিকার। আরো পিছিয়ে বলা সম্ভব, সেই কবিতা এখন পাঠকের আত্মজীবনীর অন্তর্গত। সন্দীপনই বোধহয় এই সূত্রটি প্রথম আমাদের ধরিয়ে দিয়েছিলেন…।” সন্দীপনের গদ্যরীতি নিয়ে কথা বলতেই এই কথা।
সন্দীপনের গদ্যভাষার অনুগত পাঠক দেবেশ রায় লিখেছেন তাঁর গদ্যের যে সামাজিক শিকড়, তা না চিনে নেওয়ার কথা। গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের নাগরিক ও গ্রামীণ সমাজ যে ভাবে বদলে গেছে, তার নতুন কথা বলতে পুরনো ভাষায় কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। তাই সন্দীপন।
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে এই বই তাঁরই গল্পের শিরোনাম ভেঙে: ‘…সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমরা জানি’। একচল্লিশ জন লেখকের লেখায় ভরা এই বই তাঁর পক্ষে বিপক্ষে। এঁদের কেউ তাঁর অগ্রজ শঙ্খ ঘোষ, সমসাময়িক দেবেশ রায়, উৎপলকুমার বসু, অনুজ অশোক দাশগুপ্ত, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কিন্নর রায়, রবিশঙ্কর বল, কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী প্রমুখ। এবং অদ্রীশ বিশ্বাস।
আটটি সাক্ষাৎকার কখনও হয়েছে ইঁদুর-বিলাই খেলা, কখনও সেয়ানে সেয়ানে, বা সমানে সমানে। কথার জালে তিনি জড়িয়ে নিয়েছেন, জড়িয়ে পড়েছেন। মূল্যবান সাক্ষাৎকারগুলির সন তারিখ নেই। মূল্যবান প্রয়াত সম্পাদক অদ্রীশ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলাপন। এই আলাপনেই সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে একটা দুটো নয়, অনেক কথাই পাঠকের জানা হয়ে যায়।
====={=======∆∆∆{{{{∆∆∆∆}}}}}}======
No comments:
Post a Comment