(২৫ নভেম্বর, ১৯৩৪ - ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৮)
বাংলা ও বাঙালির কালচারের সঙ্গে যাত্রা শিল্প রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে। এখন সেই যাত্রা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও এমন এক সময় ছিল যখন যাত্রা ছিলো মানুষের বিনোদনের এক বিশাল বড় অঙ্গ। গ্রামীন অনুষ্ঠান কিংবা শীতের শেষের মরসুমে যাত্রার আসার বসত দিকে দিকে। বহু দিকপাল যাত্রা শিল্পীর নাম তখন ছিল মানুষের মুখে মুখে। তাদের মধ্যে এমন ই একজন কিংবদন্তী যাত্রা শিল্পী ছিলেন ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট দরদী মনের মরমী যাত্রা পালাকার। তিনি যাত্রাপালার প্রযোজক-নির্দেশক, গীতিকার ও সুরকারও ছিলেন। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। এমন দিনে জেনে নেবো তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা।
একজন বিশিষ্ট দরদী মনের মরমী যাত্রা পালাকার। তিনি যাত্রাপালার প্রযোজক-নির্দেশক, গীতিকার ও সুরকারও ছিলেন।
জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার 'মূল' গ্রামে। মূলগ্রামেই তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তবে কিশোর বয়স থেকে বাংলার গ্রামে অনুষ্ঠিত যাত্রার প্রতি প্রেম ও নিষ্ঠা তাঁকে যাত্রাশিল্পে আকৃষ্ট করেছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দেই কলকাতার চিৎপুরের যাত্রাপালা জগতে প্রবেশ করেন। তার রচিত প্রথম যাত্রাপালা "নাচমহল" মঞ্চস্থ করে 'সত্যম্বর অপেরা'। প্রথম লেখা যাত্রাপালাতেই তিনি দর্শকদের সমাদর পান। এরপর একে একে বহু যাত্রাপালা রচনা করেন। তার রচিত যাত্রাপালার সংখ্যা প্রায় আড়াই-শো। পালা রচনার পাশাপাশি তিনি নির্দেশনার কাজেও হাত দেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের নামে দল "ভৈরব অপেরা" গঠন করে প্রযোজনাও করেছেন। দরদী মনের মানুষ ছিলেন তিনি। গরীব সাধারণ মানুষের কথা, অন্যায় অবিচার অত্যাচারের কথা তার পালা লেখনীতে ফুটে উঠেছে। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় যেমন একাধারে পালাকার, নির্দেশক ও প্রযোজক ছিলেন তেমনই ছিলেন গীতিকার ও সুরকার। যাত্রাপালার গানেও যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। তাঁর জনপ্রিয় যাত্রাপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালাগুলি হল -
'একটি পয়সা'
'পদধ্বনি'
'অচল পয়সা'
'পাগলা গারদ'
'রক্তে ধোয়া ধান'
'মাতৃঋণ'
'সাত টাকার সন্তান'
'দেবী সুলতানা'
'শ্রীচরণেষু মা'
'গান্ধারী জননী'
'ভীষ্ম জননী গঙ্গা'
'মা মাটি মানুষ'
'ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ'
'কুবেরের পাশা'
'দু টুকরো মা'
'ভিখারি ঈশ্বর'
'ঘরে ঘরে দুর্গা'
'জীবন এক জংশন'
'শান্তি তুমি কোথায়'
'স্বর্গের পরের স্টেশন'
'সত্যযুগ আসছে'
ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় সারা জীবন নিজেকে যাত্রাশিল্পের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত রেখে শিল্পের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। গ্রাম বাংলার সমাদর কুড়িয়েছেন আর অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে তার গ্রামের বাড়িতে আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলা যাত্রাজগতের জনপ্রিয় যাত্রাপালার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ডিসেম্বর (১৪০৬ বঙ্গাব্দের ১২ পৌষ) প্রয়াত হন।
===========∆∆∆∆∆∆∆∆============
No comments:
Post a Comment