¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
মালীবুড়ো (যুধিষ্ঠির জানা)
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
Doinik Sabder Methopath
Vol - 98.Dt - 13.8.2020
২৮ শ্রাবণ ,১৪২৭. বৃহস্পতিবার
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!==========!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
যুধিষ্ঠির জানা
জন্ম - ২৮ শ্রাবণ ১৩৪০ বঙ্গাব্দ
মৃত্যু- ৩ রা অক্টোবর ২০০০ খ্রিস্টাব্দ।
অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শ্রীরামপুর অঞ্চলের বরগোদা গ্রামে জন্ম। পল্লী গ্রামের শান্ত পরিবেশে দারিদ্র কে সঙ্গী করে শৈশব কাটিয়েছেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পর্বে । বাল্যশিক্ষা, গ্রামীণ পাঠশালায় সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি রওনা দিয়েছেন শান্তিনিকেতন।
ওখানে আশ্রমিক পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতার সঙ্গে তা শেষ করেন। পরে নদীয়ার শান্তিপুর থেকে সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং " মানিকা সুন্দরী" স্বর্ণপদক লাভ করেন। বাল্যকালেই প্রকৃতির নিবিড় মনোরম পরিবেশে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে "কচি সংসদ" থেকে প্রথম মেদিনীপুর জেলার কিশোরসাহিত্য সম্মেলন তিনি করেন। দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ " বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের ইতিহাস "রচনা করে গবেষক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। জীবনের প্রথম এদিকে "পল্লীজীবন" 'প্রলাপ' এবং" মেদিনীপুর পত্রিকা"য় কিশোর ও শিশুদের বিভাগ সম্পাদনা করেছেন ।সুসাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক নামে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি সর্বাধিক পরিচিত "মালীবুড়ো" নামে. সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার । দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে যেমন সাহিত্যচর্চার পরিচয় রেখেছেন তেমনি তরুণ ও প্রবীণ সব ধরনের কবি- লেখক গোষ্ঠী তৈরি করে সমধিক গুরুত্ব পেয়েছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা কর্ম : -
১) শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য,
২)বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের ইতিহাস,
৩)বঙ্গসাহিত্যে অজানা কাহিনী,
৪)তাম্রলিপ্তের ময়ূর রাজবংশ,
৫)লস্কর দিঘির মালা,
৬) উপেক্ষিতা বিষ্ণুপ্রিয়া,
৭) চৈতন্য আবির্ভাবের পটভূমি,
৮)কচ্যা বউ ,
৯) বাংলা সাহিত্যের পরিচয়
১০) প্রসঙ্গ মেদিনীপুর । প্রভৃতি।
শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য:
প্রথম প্রকাশ :
শুভ রথযাত্রার। ২০ জুন ১৯৮৫
দ্বিতীয় প্রকাশ:
( পরিবর্ধত পরিমার্জিত সংস্করণ)
২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫
তৃতীয় সংস্করণ:
( প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড একত্রে)
২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৬
চতুর্থ সংস্করণ :
৩ অক্টোবর ২০১২
পরিমার্জিত কবিতিকা সংস্করণ
অক্ষয় তৃতীয়া ২৪২৬.৭ মে ২০১৯।
ড. সুস্নাত জানা
(সুযোগ্য পুত্র)
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা :
নন্দলাল বসুর অঙ্কিত চিত্র অবলম্বনে কমলেশ নন্দ।
মহিষাদল সংস্কৃতি সভা।
প্রকাশক :
কবিতিকা, রাঙ্গামাটি, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ,৭২১১০২
মূল্য- ৪০০ টাকা.
উৎসর্গ :
বিদেহী পিতৃদেব
জীবন চন্দ্র জানা
ও
মাতৃদেবী শৈলবালা জানা
স্মৃতি বাসরে.
ISBN - 978-93-89209-00-6
গ্রন্থে প্রাপ্ত শ্রীচৈতন্যদেবের ছবি (প্রাচীন চিত্র)
শ্রীচৈতন্যদেবের ঠিকুজি (বরানগর পাঠাগার)
বৃন্দাবন দাস রচিত চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের অংশবিশেষ
"অদ্যাপিও সেই লীলা করে গৌর রায়
কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।"
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব প্রায় পাঁচশো বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন।হিন্দু মুসলমানকে বেঁধেছিলেন একসূত্রে ,জাতপাত সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে - প্রেমের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন সকল মানুষের মন। যার প্রেরণায় বঙ্গসাহিত্যে রেনেসাঁস এসেছিল। যিনি মানবধর্ম প্রচারক - বৈষ্ণব ধর্মের যুগপুরুষ' যুগাবতার। তিনি আজ গ্রামে গ্রামে সমধিক স্মরণীয়-বরণীয়। শ্রেষ্ঠ চৈতন্যজীবনীকার কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী কথায় -
"পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম
সর্বত্র প্রচার হোক চৈতন্যের নাম."
ব্যক্তি জীবন, লীলা রহস্যময় অলৌকিক মায়ায় ঘেরা। যার একই অঙ্গে দুই রূপ - রাধা ও কৃষ্ণ স্বরূপ । তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের ঐতিহাসিক যুব মানব। যার জীবনকালে ও পরবর্তী সময়ে - জাতীয় সাহিত্য- সংস্কৃতিতে প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমরা অনুভব করি. সেই যুগন্ধর মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ নিয়ে এতো রহস্য কেন ?
চৈতন্যজীবনীকারদের মতে, তার মহাপ্রয়াণ নানান ভাবে রহস্যাবৃত-
কেউ বলেছেন প্রেমের বন্যায় উন্মাদ হয়ে পুরীর পথে নাচতে নাচতে পায়ে ইটের আঘাতে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে তিনি অপ্রকট হন।
আবার কেউ বলেন তিনি পুরীর নীল সমুদ্রে কৃষ্ণ কে খুঁজে পেয়েছেন, হা কৃষ্ণ বলে সমুদ্রের জলে ঝাঁপ দিয়ে অন্তর্ধান করেন। যা নীলাচল নামে পরিচিত।
আবার কেউ বলেন তিনি পঞ্চভূতের দেহ জগন্নাথের লীন হয়েছেন।
এমন অনেক রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করেছেন মালীবুড়ো , তার এই গ্রন্থে। নানান সন্ধান অনুসন্ধান গবেষণা সংগ্রহ ও গুণী মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিরন্তর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন। যা শুধু বৈষ্ণব সাহিত্যের নয় একটি জাতীয় জীবনের আকর গ্রন্থ হয়ে উঠেছে। ভূমিকাংশ তিনি বারবার বলেছেন - " অন্তর্ধান অর্থ ছদ্মবেশে শ্রীচৈতন্যদেব পলায়ন করেছিলেন। এই মতকেও আমি অস্বীকার করিনি। সম্ভব -অসম্ভব দুইয়ের প্রতি যুক্তি দেখিয়েছি।"
মানব ধর্মের বিশ্বাসের মলে কুঠারাঘাত করলে তা তো হৃদয়ে লাগবে ! যেমন করে জরা ব্যাধের তীরের আঘাতে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছিল তাতেই তার ভগবান অর্থের কি হানি হয়েছিল ! মহাত্মা গান্ধী গুলি খেয়ে ভূতলে পতিত হলেন, তাতে কি আমাদের হৃদয়ে গান্ধীজীর গুরুত্ব কমে গেছে ! আমাদের প্রেমের অবতার, ভক্তির মন্দাকিনী ধারা বয়েছিল যার হৃদয়ে সেই শ্রীচৈতন্যদেব যদি হত্যা বা গুমখুন হন- তাতে কি তার মহিমা জগত সংসারে কমে গেছে ? এটাই লেখক মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। যথার্থ ভক্ত হৃদয় কে কলুষিত করতে পারে না কোন ষড়যন্ত্র বা গুম খুন। এই প্রসঙ্গ নিয়ে অধ্যাবসায়, অনুসন্ধান একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলছেন " মহাপ্রভু যখন অপ্রকট হইলেন তখন কাশী মিশ্র, রায় রামানন্দ, বাসুদেব সার্বভৌম - উহারা কোথায় ছিলেন। ইহারা যদি তখন বাঁচিয়া থাকেন তাহা হইলে মহাপ্রভুর অপ্রকট এর একটি শোক বাণী ও দিলেন না । গৌর ভক্তরা তখন গৌড় দেশে আ সিয়া একটি কথাও বললেন না । তার অন্তর্ধান এর পর দেখা যায় নিত্যানন্দের প্রভাব বাড়িয়া গেল। কই তিনি তার অন্তর্ধান এর পরের বছর আসিয়াছেন বলিয়া কোন সংবাদ জানা নেই।"
এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সবাইকে । তথ্য প্রমাণাদি উপযুক্ত সংগ্রহ না থাকার ফলে যুক্তিতর্কে সবকিছু টেকে না। অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়।মহাপ্রভুর অকপটে পর ভক্তরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন এমন প্রমাণ বৈষ্ণব সাহিত্যে কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া যায়। রায় রামানন্দ, প্রতাপরুদ্র ,কাশি মিশ্র মূর্ছিত হয়ে পড়েছিলেন- কোন কোন পন্ডিত বৈষ্ণব মহান্তেরা বলে থাকেন। আবার রামানন্দ, ভক্ত কবিরকে দীক্ষা দেওয়ার পর কটকের নিকট বারাণসীতে অকপট হন- তা ভক্তিরত্নাকর এ উল্লেখ আছে। আবার শ্রীনিবাস আচার্য চৈতন্যদেবের অকপট এর পর পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে এসে নাকি সার্বভৌম ও রায় রামানন্দ কে দেখে ছিলেন।
এসব কথার সত্যতা কোথায়! অনেক রহস্যময় এই অকপট বা মহাপ্রয়াণ । আজও প্রমাণ অপেক্ষায়। লেখক মালীবুড়ো সেই রহস্যকে নতুন করে উস্কে দিয়েছেন তার এই গ্রন্থ। গ্রন্থটি র বিষয় বিন্যাসে অভিনব। রহস্যময় অন্তর্ধানের গুম-খুনের' বিষয় যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনি গ্রন্থটির মধ্যে নতুন নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে - সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ,স্থান পরিচিতি, শ্রী শিক্ষাষ্টকম, শ্রী শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীরামকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব গোপী প্রেম ও স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী চৈতন্যদেবের জীবনপঞ্জী ও গ্রন্থ নির্দেশ নিয়ে গবেষণালব্ধ গ্রন্থটি আকর গ্রন্থ হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা গ্রন্থটি পাঠকদের চাহিদা এবং চৈতন্যদেব অনুরাগী ভক্তদের অনুসন্ধানের আকুতি মেটাতে চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিমার্জিত রুপ নিয়ে। আশারাখি গ্রন্থটি আরো সকলের আদরণীয় হয়ে উঠবে ।উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের মনে , চৈতন্য অনুরাগী মানুষদের মনে - রহস্যের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারবে । গ্রন্থটি সুখপাঠ্য হয়ে উঠবে।
=================================
No comments:
Post a Comment