¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
পরপারে রবীন্দ্রনাথ
পর্ব -২
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! Doinik Sabder Methopath
Vol -94 .Dt -09.08.2020
২৪ শ্রাবণ ১৪২৭.রবিবার
===========!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!============
রবিরেখা
অমৃতা খেটো
শ্রাবণ মেঘে বনান্তরালে নিবিড় বর্ষণে
আকাশ জুড়ে কাজরি গাথা
বাদল আঁধারে গোপনে ভরেছি হৃদিভন্ড
অমিয় প্রেমে .....প্রিয় কবি-
শ্রাবণ তো তোমারই প্রিয় মাস;
শ্রাবণ মানে এক অতি দীর্ঘ কবিতা....
কত বন উপবন নীপবীথি রৌদ্রছায়া-
প্রেম অপ্রেম অভিমান ক্রোধের সহাবস্থান
শ্রাবণ নামের গীতি কবিতায়-
শান্তিনিকেতনের আকাশ-বাতাস কালো করে
এলোকেশী দ্রৌপদীর ক্রোধের মত
শ্রাবণ এসে ঝাঁপিয়ে পড়তো
তুমি সেই মেয়ের একতারাটি
বাজিয়ে যেতে - গানে গানে
সুরের প্লাবন বয়ে যেতো
জীবনের শেষ বেলায় উদয়ন
থেকে নীল চশমায় চোখ ঢেকে
শান্তিনিকেতন ছাড়লে
বাইশে শ্রাবণ অন্তহীন পথের বাঁকে
মিলিয়ে গেলে গানের রেশটুকু রেখে
শেষ গানেরই রেশ নিয়ে যাও চলে
শেষ কথা যাও ব'লে
পশ্চিম গগনে ওই দেখা যায় শেষ রবিরেখা
তমাল অরণ্যে ওই শনি শেষ কেকা।।।
বাইশে শ্রাবণ
বিশ্বজিৎ মাইতি
ঠাকুর বাড়ির দাওয়ায়
লোকজন সব ভিড় জমিয়েছে
উঠোন ভর্তি ছেলে মেয়েরা সব কল কল করছে তাদের সোনার গায়ে
ঝলমলিয়ে উঠছে মণিমুক্তোর পোশাক
তাদের নীল রংয়ের কথার মধ্যে মধ্যে
বাদামী রঙের শোক, কিশোরীর ত্বকের মতো বিস্ময়
উপচে পড়েছে হাওয়ায়।
সদর দরজা খোলা হল !
ও হরি' বাবামশায়' আবার বিদেশ যাচ্ছেন আজ ।বাইশে শ্রাবণ -
অঝোর ধারায় ভিজছে সব লোকজন।।
একদিন ভোরে
বিমল মন্ডল
রোজ ভোরে জ্যোৎস্নায় স্নিগ্ধতা তোমার জানালায় ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী থেকে ঘ্রাণ আসে রাত্রির সাথে
একদিন সন্ধ্যার কাছে জেনেছি প্রভাতের মায়া
ছবি ও গানে সকাল-বিকাল কতনা ফুলের সৌরভ
শিশিরের করেছি অনুভব
মানসীতে সজল আবেগ ভুলে ব্যর্থ প্রেমের ডুবলে জলে
সোনার তরী ঠেকলে কাছে শ্রাবণ আকাশের নীচে
সব ভুলে প্রানের চিত্র আনলে প্রেমের অভিষেক
কণিকা কল্পনা কথা ও কাহিনী উদ্বোধন করলে ভোরে
নৈবেদ্য দিলে প্রীতি ভরে স্মরণে তা আজও
উৎসর্গ খেয়ার মাঝে খবর এলো সাময়িকপত্রে বিশ্বের সংসারে নোবেল শরীরে ঢেকে
জনারণ্যে জাগলে গীতাঞ্জলি সুরে
আজও সেই সুর রোজ ভোরে ভেসে আসে।।
রবীন্দ্রনাথ ও আমরা
ভবেশ বসু
দেখো আজ ফুলের বাজার খুব চড়া
ফুলমণি মোটা টাকা ঘুষ খেয়েছে
সরকার হিসাব দেখালো টাকা কোটি
মানে আজ সকালের ই আয় কিছুটা ভারি ।
অক্ষর তেল ঘষে মাখলে শরীর চকচক করে লোমকুপে যাবে তেল খোলা চামড়া থেকে মাংসে
চাবি তলা য় এসে জমা হবে
সাজলে নারী একই নারী সন্তান কোলে জননী ।
এখন কেউ আর তেল ঘষে মাখে না
ছেলে কোলের থেকে দোলায় দোল বেশী
চর্ম রোগের ডাক্তার তো বলেই দিল
রবি খুলে পড়লে গায়ে খোশ দাগ থাকত না ।
একদিন একটা ঘটনা ঘটবে ঘটবেই
সন্তান দিঘীর পাড়ে এসে দাঁড়াল
পদ্ম তুলছে হাতে এক ফোটা রক্ত নেই
মা ওঠো দেখো কি এনেছি
তুমি এইখানে বস
আজ পদ্ম ফুটবে তোমার পায়ে।
মা দেখছে ছেলেকে কতদিন দেখেনি এমন ছেলে মাথা থেকে মাটি , পা থেকে রং আবির
সন্তানের শরীরে লেখা রবীন্দ্রনাথ
চিন্ময়ী মৃন্ময়ী একটাই সাজি।।
বাইশে শ্রাবণ
মলয় পাহাড়ী
বউ ঠাকুরানীর হাট ছেড়ে নৌকা এগোয়
তিনঅধ্যায় পেরিয়ে ভালোবাসার
কবোষ্ণ আঁখি জলে বিপ্লব লুকিয়ে শেষ রাতে পাটায় এলিয়েছে এলা শরীর সকাল ।
চন্দরা উঠে এলো শাস্তির ঘাটে ।স্বামীকে
সে মরণ ব লে ডাকে এখন। পাথর আঙ্গুলে মাস্তুলে ঝুলিয়ে দেয় যত শ্লেষ। ধর্ম শাঁখার
নিচে কুমুদ পেতেছে অশ্রু যোনি
ঈশান আকাশ চিরে নামে বিজুরিশাখা
নিরুপমা স্থির মন্ত্রে উচ্চারিছে মন্দাক্রান্তা স্তব
লাবণ্যকে দাঁড়টি ধরিয়ে অন্ধকারের নাও অমিত ।বউ-ঠাকুরানীর অশ্রু বারিপাত চন্দরার কাঁচ কাটা অশ্রু
নিরুপমার অশ্রুঅভিমান কুমুদের অশ্রু গর্ভ এলার অশ্রু বিরোধ আর লাবণ্যর অশ্রুর আকাশ
সব একসাথে এসে মিশলে, নদীতে ভেসে ওঠে একটা বাইশে শ্রাবণ।
শ্রাবণ গান
মঞ্জী র বাগ
অন্ধকার রাত্রি ভেঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে
নৌকা দূরে দেখা যাচ্ছে - ত সপুরীর
আলো, অতল অন্ধকার থেকে
ডাকছি তোমায় তুমি কি শুনতে পাচ্ছ ?
ডাকছি তোমায় তোমার নন্দিত কত শতদিন
ধরে কত গান হারিয়ে গেল
পাতাল ঘরের অন্ধকার মানুষের মনে
তখন কেবল যন্ত্রের ঘরঘর কতদিন যে
মাটির ডাক শুনি না রবি ঠাকুর
গ্রীষ্মের তাপে ফুটিফাটা মাটি এখন
শ্রাবণ এসেছে অঝারা ঝরা বৃষ্টির মাঝে
জীবনের গান জীবনের রং সবুজ
সেও বড় সুন্দর তুমি তো জীবনের কবি
জীবনকে ভালোবাসো বলেই
মরনেও ভয় নেই আমার রঞ্জন কোথায় হারালো !খুঁজেছি তাকে পৌষের পার্বণে
সোনার ধানে , আজ রক্তকরবী মালা পরেছি চুলে গলায় দুলিয়েছি মালা আমার ভয় করছিল
আজ আর ভয় করে না শ্রাবণ বর্ষণ পথে
পাইনি আমার পথ দেখায় বিদ্যুতের আলো
আমায় কেবল ছুঁয়ে থাকে কবি তোমার ই গানের সুরে।।
আজ শুভ বাইশে শ্রাবণ
মনোতোষ আচার্য
বাইশে শ্রাবণ তোমার দু' চোখে মায়া
ভেসে যায় বুকে আবেগ স্নিগ্ধ জলে
সংরাগ আঁকা খরবায়ু বয়ে যায়
অর্ঘ্য সাজাই বনতেউড়ির ফুলে
বাইশে শ্রাবণ রোগ শয্যার পাশে
আরোগ্য আঁকে পরিযায়ী রামধনু
বেকার হৃদয়ে ভাঙাচোরা টেরাকোটা
খুঁটে রাখি বুকে শ্রদ্ধার পরমাণু …..
অস্তচলে রবি
মোনালিসা পাহাড়ি
শ্রাবণ বেলার বিষাদমাখা দিন
মনের কোণে বাজে বিরহ বীণ
হৃদয়পুরে ঠাকুর তোমার ছবি
আজকে শুধু অস্তগামী রবি ।
পরপারে কোন সে আলোর দেশে
কোন মায়াতে পৌঁছে গেলে শেষে
বাংলা মায়ের আঁচল উজাড় করে
বাইশে শ্রাবণ চোখের জলে ভরে ।
প্রাণের ঠাকুর, বঙ্গবাসীর মনে
আজো আছো সোনার সিংহাসনে
জীবন জুড়ে শুধুই তোমায় পাই
দুঃখ সুখে তুমি দাও ঠাঁই।
ঐ আকাশের ধ্রুব তারার মতন
চিরন্তনী পাতা তোমার আসন
নিখাদ প্রেমে তোমায় খুঁজি কবি
মাথা ঠেকাই চরণতলে রবি।
রবি ঠাকুর
রাজকুমার আচার্য
বাংলার মাটি বাংলার জল
দিলেন আলো করে
তিনি হলেন কবি রবি
বিশ্ব চরাচরে।
চার দেয়ালের স্কুল জীবন
বাঁধতে পারেনি তাঁকে
বাড়িতেই করেন লেখাপড়া
খেলার ফাঁকে ফাঁকে।
গীতাঞ্জলি লিখে ফেলেন
'নোবেল' পুরস্কার
রবি হলেন ঠাকুর রবি
আপামর জনতার ।
দুই দেশের দুই জাতীয় গীত
তাঁরই অমর লেখা
'জনগণমন-অধিনায়ক '
'আমার সোনার বাংলা'.
বাইশে
লক্ষীকান্ত মন্ডল
বাইশে শ্রাবণ এলেই নদী ছেড়ে উঠে আসে মেঘ
হারানো সহজপাঠ ;
আকাশ মাটির সেই উড়ানের সীমানায় সাজিয়ে
নিয়েছে মৃত্যুর মায়া
ধান রুয়ে দেওয়া দীঘল সারি নিয়ে হাওয়ারা পাখি হয়ে যায় অস্ত রেখায়
মাথার ভিতরে অস্থিরতা- অশ্রুপাত আনে নির্জন অপেক্ষার কাছে
দিন গড়িয়ে যায় - তোমাকে জানা হলোনা এখনও
ছোঁয়া ও সুখকর নয়
হৃদয় জুড়ে হৃদয় খাক হওয়া একলা চলার মন্ত্র জ্বলে ওঠে
প্রথম ব্যর্থতা শিখে আনন্দে র স্থান টুকু ভরিয়ে দাও হে নির্জন -
এখনো চারিদিকে ঘনিয়ে আছে মেঘ, এগিয়ে যাওয়ার অসংখ্য স্নায়ু
ভোরের দিকে তাকিয়েই সে পথ চলে যায় জল বৃষ্টির বুকের ভেতর
তুমি ছিল বলেই হাততালি দিয়ে নদীর চরের মেয়েরা গেয়ে ওঠে - মধুযামিনীরে -
অপার নৈঃশব্দ্য নিয়ে বৈশাখ আর শ্রাবণের বৃত্তাকার জলভরা মাঠ
জড়ো হয় অজস্র আনন্দ, আমাদের রবীন্দ্র না থ।।
শেকড়ের ডালপালা
শুভঙ্কর দাস
শস্যের মুখ দেখে মন্দিরের সিঁড়ি ভাঙ্গি
শেষ ধাপে গিয়ে সহসা থামি, দেখবো না পাথরের পৌরাণিক মন্ত্র সিদ্ধ ভেল সিন্দুর মুখ, অসুখ হাতের মুদ্রার মুখোশের
ঘুমাক গল্প যত অবতার আর উদ্ধারের !
সব ফেলে চাষের মাটিতে ফিরে যাই নিজে শস্য হয়ে উঠতে পারলে ক্ষুধার্তের শক্তি বেঁচে থাকার নিজস্ব রসদ হতে পারলে
আবার সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উঠে যাব শেকড়ের মত যার প্রতিটি ডালপালা বীজধানের গন্ধ নিয়ে যায় এমনকি একটি ছায়াশীতল মহা বৃক্ষের রূপ
যাকে দেখতে জীবন্ত বরাভয়ের মতো
যেখানে গেলে কেউ শূন্যহাতে ফিরে আসবে না।।
মহা মৃত্যুদিবসে
সুনীল মাঝি
অতঃপর বহ্নি জ্বালা দাউদাউ জ্বলতে লাগলো আগুন
আগুনের শিখা ছুঁয়ে ফেলল আকাশের মেঘ
মেঘের ভেতর যে বজ্র ও বিদ্যুৎ আর বাদ্যধ্বনি ছিল
কেন না যে এই মহা মৃত্যু ঢেউ ভাঙ্গা গন্ধে নিঃশব্দ
হল উদাস
সব চন্দন গাছ পূড়ে গেল চন্দন ছোঁয়া কপালে ফাটল ধরল
আমাদের মনেই পরল না কাকে চুম্বন করেছিলাম এক মহা ঝড়ে আমাদের নিকানো উঠোনে নেমে এলো ছাই
ছাই থেকে জন্ম হলো কালো পিঁপড়ে এবং অশ্রুতে ভিজে
ডানা মেলে আমাদের আকাশ ঢেকে দিল
এই ধূসরতা অসহনীয় - হে মহা সংগীত আমাদের কন্ঠ এসো
আমাদের মুখে মুখে আজ নোংরা ভাগাড়ের গন্ধ
আমরা চিনতে পারছিনা কার করতলে হাত রেখে বিনিময় হলো
শরীরের তাপ আমাদের মা আছে আমাদের বাবা নেই
আমাদের উঠোনে আসছে না অতিথি লালন
হে মহাসাগর
লোনাজলের দস্যু তরঙ্গ আমাদের লুট করে নিল অমল পিপাসা
আমাদের এই আগুনে যে আলো নেই ঠাকুর, বালো এত বড় অন্ধকার বাংলা নিয়ে আমরা বাঁচবো কেমন করে !
অন্তর্যামী
শুভ্রাশ্রী মাইতি
আমার ঠাকুর ঘরের ছোট্ট আসনে
অনেক ঠাকুরের ভিড়ে
তোমার ছোট্ট মূর্তিখানি রাখা
ধীর প্রশান্ত বদন শান্ত-সৌম্য চোখে
যেন কোন অনন্তের হাতছানি
আমি রোজ বসি তোমার পূজায়
আমার পূজার কোন মন্ত্র নেই
নেই কোনো সুগন্ধি ফুল বা চন্দন
আছে শুধু তোমারি দেওয়া একরাশ গান আর কবিতা
তোমার কথায় গানে ভিজতে ভিজতে
হারিয়ে যেতে থাকি আমি দূর থেকে আরো দূরে ..
বুকের মধ্যে জমাটবাঁধা আবেগ-অনুভূতির
পঞ্চ প্রদীপে শরীর-মন জ্বলে ওঠে আলো হয়ে
সুগভীর বেদনাবোধের মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি তে
ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় মনের সমস্ত গ্লানি
হ্যাঁ রবি ঠাকুর তুমি-
তুমি আমার ঈশ্বর
আমার অন্তর্যামী।।
জল চন্দনে জন্ম তিলক
পুষ্প সাঁতরা
চোখের ঘরে অশ্রু বুনছে বাইশে শ্রাবণ
নাগরিক অমিত বিষাদ
বিলাপের ভিড় ভেঙে ভেঙে ভুবনডাঙার মাঠ মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের গভীরে আত্মস্থ
হৃদয় সারা বার আরোগ্যমেঘ
আত্ম আবিষ্কার বাদল মেঘ শ্যামল কান্তি
মৃত্যুর নিপুণ শিল্পীর বিকীর্ণ মরণ শ্যাম
তুচ্ছ ব্যক্তিগত শোক গাথা ডুবে যায়
মৃত্যু সীমায় শ্রাবণ চাঁদে ঐশ্বরিক বিভা
সৃষ্টির শৈলীর বিশালতা
খোয়াইয়ের হাটে শ্রাবণের রূপান্তর
পঞ্চ বটির মাথায় পাতায় ধারায় নব স্নান
ভুবন ডাঙা গ্রামে রোজ পড়ে পদচিহ্ন
মাধবীলতা দোলে দোলে কৃষ্ণ চুড়া
খুন জীবনের মন্ত্র শিরায় বনবাণী সুর
বৃক্ষ আহবানে মৃত্যুশোক যায় ঝরে
রূপান্তর হাওয়া চৈতন্যের সাগর
মহাজীবনের অমৃত মরু কেতন
জাগরণ আর আগমনের শ্রাবণের
জল তিলক হৃদয়ে মাথায় আমৃত্যু
বৈষ্ণবী অক্ষরে নবজীবনের উৎসব চলে।।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment