জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
===============!!!!!!==============
Doinik sabder methopath
Vol -144 .Dt -28.9.2020
১১ আশ্বিন,১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷ $$$$$÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
"ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান"
ভগৎ সিংয়ের প্রাথমিক পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর স্কুলে পড়ার পালা। কিন্তু ভগৎ সিং তাঁর সমবয়সী ছেলেদের মতো লাহোরের খালসা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেননি। কারণ এই স্কুলে পড়াশুনা করলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয়। যে কারণে তাঁর ঠাকুরদাদা তাঁকে এখানে পড়াশুনা করাতে রাজি ছিলেন না। তিনি ভগৎ সিংকে অন্য একটি স্কুলে পড়াশুনা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই ভগৎ সিংয়ের বাবা তাঁকে আর্যসমাজের বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করান।
এই স্কুলে পড়াশুনার সময় হঠাৎ একদিন দুপুর বেলা ভগৎ সিংকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। স্কুলের সবাই বাড়ি ফিরেছে, কিন্তু ভগৎ সিংকে কোথাও পাওয়া গেল না। তিনি তখন ক্লাস সেভেনে পড়েন। বয়স মাত্র ১২ বছর। সবাই তাঁকে খুঁজতে বের হলো। ওদিকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, আতঙ্কে সবাই ছুটাছুটি করছেন। স্কুলে খবর নিয়ে জানা গেল ভগৎ সিং যথারীতি ক্লাস করেছেন; তারপর কোথায় গেছেন কেউ জানেন না। অনেক রাতে তাঁর দেখা মিলল। হাতে জালিয়ানওয়ালাবাগের শত শহীদের রক্ত মাখা মাটি।
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০- এর মত বিদ্রোহীকে হতাহত করা হয়। বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়। এটি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।
সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে ভগৎ সিং সেই মর্মান্তিক ঘটনা শোনেন, এরপর তিনি বাসে করে ৪০/৫০ মাইল দূরে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ছুটে যান। সেখানকার ত্রাস ও দুর্যোগের পরিবেশ উপেক্ষা করে কুড়িয়ে আনেন সেই রক্তরঞ্জিত মাটি। এই মাটি তাঁর কাছে সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটি বিদ্রোহের প্রতীক।
এভাবে ভগৎ সিং ছেলেবেলা থেকেই ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণা ও বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রর্দশন করেছেন। আর দেশকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজী রেখে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের দেয়া ফাঁসির রজ্জু হাসিমুখে বরণ করেছেন।
ভগৎ সিং জন্মেছিলেন ১৯০৭ সালের ২৮সেপ্টেম্বর। পশ্চিম পাঞ্জাবের লায়লপুর জেলার বংগা গ্রামে। একসময় পাঞ্জাবের ওই অঞ্চলে জলের অভাবে চাষ-আবাদ কিছুই হত না। উনিশ শতকের শেষদিকে মধ্য পাঞ্জাবের বেশ কিছু লোক উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এসে প্রচুর পরিশ্রম করে খাল কেটে চাষবাস শুরু করেন। ভগৎ সিংয়ের পূর্বপুরুষ ছিলেন তাঁদের দলে। তাঁরা ছিলেন দুঃসাহসী, কঠোর পরিশ্রমী আর স্বাধীন চিন্তার মানুষ। তাঁদের বলা হত জাঠ। ভগৎ সিংয়ের ঠাকুরদাদা অর্জুন সিংহ। তিনি দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলনে আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভগৎ সিংয়ের বাবার নাম সর্দার কিষাণ সিংহ সান্ধু এবং মা বিদ্যাবতী। তাঁর বাবা ছিলেন একজন মানবপ্রেমিক মানুষ। সমাজের মানুষের কল্যাণে নিয়েজিত থাকাই ছিল তাঁর জীবনের আসল ব্রত। ভগৎ সিংয়ের ছোটকাকা স্বর্ণ সিং ছিলেন একজন বিপ্লবী। বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। যে কারণে মাত্র ২৩ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মেজকাকা অজিত সিং ছিলেন আরেক বিপ্লবী। তিনি লালা লাজপত রায়ের খুব কাছের লোক ছিলেন। অজিত সিং পাঞ্জাবে ‘ভারত দেশপ্রেমিক সমিতি’ গড়ে তুলে বিপ্লবী কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের পুরো পরিবারই ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এমন এক দেশপ্রেমিক বিপ্লবী রাজনৈতিক পরিবেশে ধীরে ধীরে ভগৎ সিং বেড়ে উঠেন।
১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের মাধ্যমে গান্ধীজী বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদেরকে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হতে বলেন। তিনি বিপ্লবীদের জানান অসহযোগ আন্দোলন করে এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দিবেন। যদি না পারেন তাহলে বিপ্লবীরা আবার সশস্ত্র সংগ্রামে সামিল হলে তাঁর বলার মতো কিছু থাকবে না। গান্ধীজীর অনুরোধে বিপ্লবীরা সাময়িকভাবে সম্মত হন। এসময় কিশোর ভগৎ সিং অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি নিজ এলাকাতে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সহপাঠীদের সাথে নিয়ে বিলাতী কাপড় জোগাড় করে মহানন্দে পোড়াতে শুরু করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪ বছর। ওই বয়স থেকে তিনি ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের উপর পড়াশোনা করেন এবং শেষ পর্যন্ত মার্ক্সবাদে আকৃষ্ট হন।
অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় তিনি একদিন ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য তাঁর সরকারি স্কুলবই ও স্কুলের পোষাক পুড়িয়ে ফেলেন।
এক বছরের মধ্যে সারাদেশে অসহযোগ আান্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যুক্ত হয়। ১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরীচেরা গ্রামে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন হঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন কৃষক মারা যায়। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরোও করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। থানার ভিতর ২২ জন পুলিশ পুড়ে মারা যায়। এতদিন ধরে ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতের স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে সে তুলনায় এটি কিছুই নয়। এটি ছিল একটি বিক্ষিপ্ত দুঃখজনক ঘটনা। তবু গান্ধীজী এই ঘটনার কারণে অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment