¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
অনুগল্প সংখ্যা
মহাষ্টমীর পূর্ণলগ্নে প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
=≠===============================
Doinik sabder methopath
Vol -169.Dt-24.10.20
৭ কার্তিক, ১৪২৭. শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
আমার মা
দেবাংশু শেখর পড়িয়া ( ষষ্ঠ শ্রেণি)
শিশুদের জীবনের আশ্রয় তাদের প্রত্যেকের মা।
শিশুকাল, কিশোরকালের কিছু ঘটনার জন্য অনেকে মাতৃসুখ পায় না অথবা পেয়েও অবহেলা করে। শিশুদের তৃতীয় গুরু হলেন শিক্ষক মহাশয়। প্রথম গুরু হলেন মা । আর দ্বিতীয় গুরু হলেন বাবা। বিদ্যালয় সবাই পড়াশোনা করতে যায়। তাহলে প্রথম গুরু মা কি করেন ? সবাই ভাবে শিক্ষক মানে যিনি স্কুলে পড়া করান । কিন্তু প্রকৃত শিক্ষক সেই, যিনি জন্মকাল থেকে বাচ্চাদের মনুষ্যত্ব বোধের জন্ম ঘটান। এই শিক্ষক হলেন আমাদের মা ও বাবা। মা, বাবাকে অবহেলা করা মানে নিজেকে অবহেলা করা। যখন কোনো সন্তান অসুস্থ হয় তখন তার মা ও বাবা সেবা-শুশ্রূষা করে। কারণ তারা আমাদের ভালো চায় । তার মানে মা বাবাকে অবহেলা করা মানে নিজেকে অবহেলা করা। নিজের জীবনকে নষ্ট করা। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত মা'র খেয়াল রাখা।
মা'কে প্রণাম
অমিত কাশ্যপ
বর্ষার পর শরৎ। চিত্রপট পরিবর্তন হয় আকাশের। নীল আকাশ, সাদা সাদা মেঘ। মাটিতেও নানান বর্ণশোভা। কাশের বনে বাতাসের দোলা, নরম রোদের আঁকিবুকি।
পুজো পুজো গন্ধ। মা আসেন। সার্বজনীন মা, শাশ্বত মা। প্রতি বছর এই সময় মা আসেন সপরিবারে। আমাদের একান্ত ঘরের ছবি। স্বামী পুত্র কন্যা পরিবৃত সংসার। আমরা এইভাবেই পুজো করি। কখনো মা রূপে, কখনো কন্য রূপে। দুজনাই আমাদের আদরণীয়। মা আসেন জগজ্জননী রূপে, কন্যা আসে উমা রূপে। হিমালয়ের কন্যা, মেনকার কন্যা। আমাদের ঘরের উমা, তার আগমনকে ঘিরে আগমনী সংগীত। এই কন্যা, এই মা'ই অশুভ অসুর নিধন করেন। অসুরদলনী মা দুর্গা। আমাদের মনের অশুভশক্তিকে বিনষ্ট করে শুভচেতনা আনেন এই মা'ই। এই মা'কে প্রণাম।
দা
শুভ্রাশ্রী মাইতি।
আগাছা নিড়ানোর কাজ বন্ধ রেখে গরম দাটা ডোবার জলে চুবিয়ে নেয় আমিনা। মেয়ে রাবেয়ার দেখা নেই এখনও।একসাথে খেয়ে আম্মিকে কাজে সাহায্য করবে সে। লালচুলো জমিদারের কড়া হুকুম --কাজ শেষ করা চাই আজই।
পেটের আগুনটা মাথায় চড়তেই ঘরের দিকে দৌড়ায় আমিনা। দরজার কাছে আসতেই ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দ। নগ্ন রাবেয়ার এগারো বছরের নরম শরীরটার ওপর বীরবিক্রমে দুলে চলেছে অসংখ্য লাল চুলের সাপ।
আমিনার তাতাপোড়া শরীরটা আগুনের শিখা হয়ে ওঠে হঠাৎ। কোমরে গোঁজা গরম দাটা ত্রিশূলের তীব্রতায় শুধু ঝলসে ওঠে লাল সাপগুলোর ওপর অক্লান্ত আক্রোশে...
অন্য মা
জয়দেব মাইতি
বাড়ি ফিরলেই মা যেন দপ করে জ্বলে উঠে। রোজ রোজ মায়ের এই আচরণ সুমনা কে ভাবায়।
নিজেকে সংযত রেখে সুমনা একদিন বলে -মা বোঝনা কেন, অফিসে এখন কত কাজ।তাছাড়া ---
তা মানি। কিন্ত,যা সময়-
মায়ের কষ্টটা বোঝে।সে ছাড়া তার আর কেউ নেই। কিন্তু বাবা!
প্রায়দিন অফিস শেষে বাবার ওখানে যেতে হয়। কাজপাগল মানুষটিকে দেখে তার ভীষণ কষ্ট হয়।
প্রায় বিশ বছর হল,দুজন আলাদা। সুমনা বহু চেষ্টায় আজও এক করতে পারেনি।
সে ভাবে- দুজন নিজের কষ্টটা বোঝে।কিন্তু তার কষ্টটা?
মা
গোবিন্দ মোদক
দত্ত বাড়ির উঠোন ঝাঁট দিয়ে, ঘরগুলো মুছে, বাসনগুলো ধুয়ে যখন মালতি উঠে দাঁড়ালো, তখন ন'টার ভোঁ বেজে গেছে। মালতি হাঁক দিলো --- "আমি এলাম গো, বৌদিমণি। সদর দরজাটা বন্ধ করে দিও।"
--- "মালতি, শুনে যা ! আয় এখানে বোস। এই নে, এগুলো খা !" বেশ ক'খানা লুচি, ছোলার ডাল, সুজি আর মিষ্টি মালতিকে খেতে দেয় দত্ত-বউ। ততক্ষণে পাশের পুজোমণ্ডপে ঢাক বেজে উঠেছে। আজ অষ্টমী।
--- "বৌদিমণি, আমি বরং এগুলো নিয়ে যাই, বাড়ি গিয়ে খাবো।"
--- "কেন রে ? ছেলের জন্য বুঝি মন কেমন করছে ? ওরে আমিও বুঝি ! পেটে না ধরলেও আমিও তো মা ! ঠিক আছে, তুই খা ! আমি তোর ছেলের জন্য আলাদা করে দিয়ে দিচ্ছি !"
মালতির চোখে জল এসে যায় !
মৃন্ময়ী মা
নন্দিনী সরকার ।
তপন পাল কুমোরটুলি এলাকার প্রসিদ্ধ কারিগর। পুজোর কতো আগে থেকে আর কতো দূর থেকে যে মা দূর্গার মূর্তির বায়না আসে ওনার কাছে তা ভাবতে পারা যায় না। ওনার হাতে গড়া মায়ের মুখের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সাগর পেরিয়েও। শুধু অর্থের জন্য নয় ,মায়ের মৃন্ময়ী রূপ গড়ার সময় তপন বাবু প্রায় তিন মাস যেন এক ঘোরের মধ্যে থাকেন। একটু একটু করে মা সেজে ওঠেন আর উনি গড়ার আনন্দে বিভোর হয়ে যান।
সেই তপনবাবু এবছর যেন বাঁচার উত্সাহটাই হারিয়ে ফেলেছেন। করোনার কারনে সারা দেশে মায়ের মূর্তি, প্যান্ডেল ,পুজো কোনোটারই সেভাবে অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। খুব ছোটো ছোটো মূর্তি গড়া হচ্ছে নমো নমো করে পুজো করার জন্য। কয়েকটি মূর্তির বায়না পেলেও তপনবাবুর মানসিক শান্তি এতে একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। হাতে তুলি প্লেটএ রং নিয়ে বসে আছেন ছোটো ছোটো মূর্তিগুলোর সামনে। কাজের ইচ্ছেটাই নেই। একদিন এ সব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঐ কুমোরটুলিতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি আর স্বপ্নে দেখতে পাচ্ছেন ঐ ছোটো মূর্তি থেকেই ওনার কবেকার পরলোকগতা মা বেড়িয়ে এসে ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় আর তপনবাবু তাকিয়ে থাকেন ওনার তখনকার তৈরি করা ছোটো এক চালা দুগ্গামায়ের মুখের দিকে। এ কী !
ওনার নিজের মায়ের মুখ আর এই মূর্তির মুখ কি করে একাকার হয়ে যাচ্ছে? উনি ভেবে পাচ্ছেন না।
কিছুক্ষণ পরে উনি ওনার এতো দিনকার অবসাদ কাটিয়ে এক অনাবিল আনন্দে দুগ্গা মায়ের এই ছোটো একচালার ঠাকুরের কাজ শেষ করতে শুরু করেন দ্বিগুণ উৎসাহে। মাই তো তাঁকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন। চিন্ময়ী মাই তো মৃন্ময়ী মা রূপে আজ ওনাকে দেখা দিয়ে কাজের আনন্দে ভরিয়ে তুলেছেন।ছোটো বড়ো, একচালা বা ভিন্ন, দামী বা কম দামী কোনো প্রভেদ নেই, সবই তাঁর মূর্তি। জয় মা, জয় মা,জয় মা গো।।।।
আনন্দাশ্রু
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
আজ সারাদিন বাণী এখানেই থাকবে। প্রীতিলতা অনাথ আশ্রম। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এসেছে, প্রতি রোববারের মতোই। খাবার, জামাকাপড়, ওষুধ, খেলনা, কি নেই সাথে! হপ্তাভর কাজে ব্যস্ত থাকে। রোববারটা শুধু তার, আর এই আঠারোটি বাচ্চার। যারা তাকে 'মা', স্রেফ 'মা' বলেই জানে ও ডাকে। জন্মের পর বা ৩|৪ বছর বয়সে এখানে এসেছিল। তাদের নিয়ে সকালে পড়াশোনা, দুপুরে খাবার খেয়ে বিশ্রাম। বিকেলে সবাই একসাথে খেলছে। বাণীর চোখে জল- আনন্দাশ্রু। কে বলবে, সন্তানের জন্ম না হওয়ায় ডিভোর্স হয়ে যায় অক্ষয়ের সাথে। আর তাই সে আজ এতগুলো বাচ্চার ' মা'।
মা
সুবীর ঘোষ
মা বলতেন-- মানুষ মারা গেলে আকাশের তারা হয়ে যায় । আকাশটাকে একটা বিশাল পিনকুশনের মতো মনে হত । মা একরাশ ধোঁয়া আর আগুনের মধ্যে রান্না করে যেতেন । এত কেন রান্নাঘরে থাকো জিজ্ঞেস করলে বলতেন--আগুনে পুড়ে পুড়েই তো এত বছর ! আগুন আমার কী করবে ? মা যেদিন চলে গেলেন ভেবেছিলাম আগুন মায়ের কিছু করতে পারবে না । কিন্তু পরে বুঝলাম মা কথাটা আমাকে ভুল বলেছিলেন । ভেবেছিলাম আকাশে গিয়ে দেখিয়ে দেবেন কোন্ তারাটা তিনি । আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল । তবু কোনখানে মা খুঁজে পেলাম না ।
মা
ফটিক চৌধুরী
--- কি বলছেন ? কাল সকালে মাকে দেখে এলাম সম্পূর্ণ সুস্থ।
--- হ্যাঁ। আপনারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর শরীর খারাপ ছিল।আজ সকালে বারবার কড়া নাড়লেও কোন সাড়া নেই। তারপর পুলিশ ডেকে দরজা ভেঙে দেখি মারা গেছেন। মনে হয় হার্ট অ্যাটাক।
গৌরব আর উর্বশী প্রতি ররিবার নিয়ম করে দেখতে যায়। একবছরের মধ্যে গতকাল প্রথম উর্বশী তাদের ছোট্ট মেয়েকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে গিয়েছিল অনিচ্ছা সত্ত্বেও। মায়ের পীড়াপিড়ি ও গৌরবের কথায়। ফিরে আসার সময় মেয়ে বায়না ধরে ঠাম্মিকে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। কেঁদে বলেছিল ঠাম্মি ছাড়া আমার একদম ভাললাগে না। মেয়ের গায়ে হাতও তুলেছিল উর্বশী। উর্বশীকে দেখে কি গৌরবের মধ্যে বৃদ্ধা মায়ের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছিল?.
মা
সুণীপা
"ওমা! শিগগিরি এসো,ভাইয়ের হাতের বিস্কুট কাক এ নিয়ে গেলো"...সাত বছরের মেয়ে হিয়ার চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো মিতালী।তিনবছরের ছেলে শুভ তখন বিস্কুট হারিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে।"হুস,হুস" করতে করতে ছুটে গেলো ছেলের কাছে,কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বললো,"কাঁদে না সোনা,তোমায় আমি আরো অনেক বিস্কুট দেবো"।বলেই মেয়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,"তুই কি করছিলি?তাড়াতে পারলিনা?"মেয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,"আমি কি করবো?""চল ঘরে চল,অনেক হয়েছে,আর বাইরে থাকতে হবেনা"।পিছন ঘুরে রান্নাঘরে ঢুকলো ছেলে মেয়ের হাত ধরে,আর ঢুকেই তার বিস্ময় এক আর্তচিৎকারে বদলে গেলো।উনুনের পাশে রাখা মাছ ভাজার চারটে টুকরোর মধ্যে দুটো গায়েব।বুঝতে বাকি রইলনা,বিড়াল বা কুকুরের কাজ।মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো মিতালী।ওই দুটোও ত আর খাওয়া যাবেনা,ছেলে মেয়েদের কি দিয়ে ভাত দেবে আজ?!
আর ওদিকে গাছের ওপরে কাক তার ছানাদের ,আর নিচে মতি বিড়াল তার ছোট্ট মিনিটাকে খাবার খাইয়ে পরম স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
মা
সমরেশ সুবোধ পড়িয়া
বারবার শুনে মুখস্ত হয়ে গেছে, বছর তিপান্নের পুরোনো ঘটনা হলেও এখনও ঘটনাটা বেশ তাজা ভোম্বলের কাছে৷ ছোটোবেলায় দিদিদের সাথে খেলতে গিয়ে জলে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া ছয়মাসের ভোম্বল কিভাবে বেঁচে গেলো তারই এক দুঃসাহসিক আর রোমাঞ্চকর কাহিনী৷
ভোম্বলকে তার দুইদিদির কোলে দিয়ে, মা ভগবতী কলসী কাঁখে গেছে জল আনতে৷ সেই সময়কালে পানীয় জলের সমস্যা ছিল তাই দূর-দূরান্ত থেকে টিউবকল থেকে জল আনতে হতো৷ ভগবতীদেবীও নিত্যদিন জল আনতে যেতো পাড়ার শেষ প্রান্তে, কিশোরী কন্যাদ্বয় লক্ষ্মী-সরস্বতীদের কোলে ছোটো ছেলে ভোম্বলকে রেখে৷
একদিন বাড়িতে কলসী নামিয়ে বললো; ভোম্বল কোথায় রে! একাদশবর্ষীয়া বড়মেয়ে লক্ষ্মীতো ভয়ে চুপ৷ সরস্বতী বললো; ভাইতো এক্ষুনি এখানেই ছিল৷ মায়ের চোখ গেলো পুকুর ঘাটে৷ মাঝ পুকুরে কিছু একটা যেন ভেসে উঠে ডুব লাগালো৷ জীবন পরোয়া না করে ভগবতী তৎক্ষণাৎ জলে ঝাঁপ লাগালো মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা রূপে৷ টেনে তুলে আনলো ভোম্বলকে৷ ক্ষণিকের জন্য বেঁচে গেলো অসাড় ভোম্বল!
বাঁচিয়ে তুললো মা৷ "মা" তো মা'ই হন .... মায়ের কোনও তুলনা হয় না৷
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
No comments:
Post a Comment