∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
শিবরাম চক্রবর্তী
=================================
Doinik sabder methopath
Vol -221. Dt -13.12.2020
২৭ অগ্রহায়ণ,১৪২৭. রবিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
কবিতা-রচনা দিয়ে সাহিত্য-জীবনের শুরু।প্রথম কবিতা বেরোয় ভারতী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত বই দুটিও -- 'মানুস' ও 'চুম্বন' -- কবিতার। দুটিই প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। তারপর অজস্র লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ, নাটক এবং তুলনাহীন অজস্র হাসির গল্প। লিখেছেন ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা ও ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর নামের অনন্য স্মৃতিকথামূূলক দূটি বই। প্রবন্ধের বই : মস্কো বনাম পন্ডিচেরি ও ফানুস ফাটাই। নাটকের গ্রন্থ : যখন তারা কথা বলবে। বিচিত্র অবিবাহিত জীবন ছিল । রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, রাস্তায় কাগজ ফেরি করেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন । শিবরাম চক্রবর্তীর জন্ম ১৯০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কোলকাতার দর্জিপাড়ায়, নয়ানচাঁদ দত্ত লেনে, তাঁর দাদামশাইয়ের বাড়িতে । তাঁর বাবা ছিলেন মালদহের চাঁচলের রাজ পরিবারের সন্তান ৷ যদিও তাঁদের আদি নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদের চোঁয়ায় ৷
ব্যক্তিজীবন
শিবরাম চক্রবর্তীর জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর (বাংলা,১৩১০-এর ২৭ অগ্রহায়ণ) কলকাতায় মাতুলালয়ে। বিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সংস্পর্শে আসেন। এর জন্য তাকে কারাবাসও করতে হয়। এই সময় তিনি বিজলী ও ফরওয়ার্ড পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার প্রকাশক। তার জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের একটি মেসবাড়িতে। তিনি অনাড়ম্বর জীবন কাটাতেন। শেষ জীবনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার জন্য মাসোহারার ব্যবস্থা করেছিলেন।
সাহিত্য কর্ম :
উপন্যাস :
তার সর্বাধিক আলোচিত উপন্যাস বাড়ি থেকে পালিয়ে। লিখেছেন বাড়ি থেকে পালিয়ের পর, কলকাতার হালচাল, বর্মার মামা,, মনের মত বৌ, মস্কো বনাম পন্ডিচেরী সহ আরও বেশ কিছু বই। তার অমর সৃষ্টি হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের গল্প যা আজো পাঠকমহলে সমানভাবে সমাদৃত। প্রবন্ধ, গল্পের পাশাপাশি তিনি কিছু রম্য গোয়েন্দাকাহিনিও লিখেছিলেন। তার গোয়েন্দার নাম কল্কেকাশি।
গল্প :
হাতির সঙ্গে হাতাহাতি
অশ্বত্থামা হতঃ ইতি
ঘোড়ার সঙ্গে ঘোরাঘুরি
অঙ্ক সাহিত্যের যোগফল
জোড়া-ভরতের জীবন কাহিনী
হাতাহাতির পর
মন্টুর মাস্টার
নরখাদকের কবলে
পরোপকারের বিপদ
শ্রীকান্তের ভ্রমণ-কাহিনী
শুঁড় ওলা বাবা
হরগোবিন্দের যোগফল
বিহার মন্ত্রীর সান্ধ্য বিহার
পাতালে বছর পাঁচেক
বক্কেশ্বরের লক্ষ্যভেদ
একটি স্বর্ণঘটিত দুর্ঘটনা
একটি বেতার ঘটিত দুর্ঘটনা
আমার সম্পাদক শিকার
আমার ভালুক শিকার
আমার বাঘ শিকার
আমার ব্যাঘ্রপ্রাপ্তি
ভালুকের স্বর্গলাভ
কাষ্ঠকাশির চিকিৎসা
গোখলে গান্ধীজী এবং গোবিন্দবাবু
দাদুর ব্যারাম সোজা নয়
দাদুর চিকিৎসা সোজা নয়
বিজ্ঞাপনে কাজ দেয়
প্রবীর পতন
জাহাজ ধরা সহজ নয়
শিবরাম চকরবরতির মত কথা বলার বিপদ
নিখরচায় জলযোগ
নববর্ষের সাদর সম্ভাষন
কল্কেকাশির অবাক কান্ড
হর্ষবর্ধনের সূর্য-দর্শন
বিগড়ে গেলেন হর্ষবর্ধন
হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার
ডাক্তার ডাকলেন হর্ষবর্ধন
হর্ষবর্ধনের কাব্য চর্চা
ঋণং কৃত্বা
মাসতুতো ভাই
ছারপোকার মার
কল্কেকাশির কান্ড
কালান্তক লাল ফিতা
পিগ মানে শুয়োরছানা
হাওড়া আমতা রেললাইন দুর্ঘটনা
স্যাঙাতের সাক্ষাত
যাহা বাহান্ন
পণ্ডিত বিদায়
ঘটোৎকচ বধ
যখন যেমন তখন তেমন
হারাধনের দুঃখ
পঞ্চাননের অশ্বমেধ
একদা এক কুকুরের হাড় ভাঙিয়াছিল
নকুড়বাবুর অনিদ্রা দূর
বিশ্বপতিবাবুর অশ্বত্ব প্রাপ্তি
সমস্যার চূড়ান্ত
আলেকজান্ডারের দিগ্বিজয়
একলব্যের মুন্ডপাত
তারে চড়ার নানান ফ্যাসাদ
প্রকৃতিরসিকের রসিক প্রকৃতি
মহাযুদ্ধের ইতিহাস
মহাপুরুষের সিদ্ধিলাভ
পৃথিবীতে সুখ নেই
নাক নিয়ে নাকাল
নাকে ফোঁড়ার নানান ফাঁড়া
ইঁদুরদের দূর করো
নিকুঞ্জকাকুর গল্প
পাকপ্রণালীর বিপাক
অগ্নিমান্দ্যের মহৌষধ
আস্তে আস্তে ভাঙো
টুকটুকির গল্প
ম্যাও ধরা কি সহজ নাকি
চাঁদে গেলেন হর্ষবর্ধন
চেঞ্জে গেলেন হর্ষবর্ধন
গোঁফের জ্বালায় হর্ষবর্ধন
দোকানে গেলেন হর্ষবর্ধন
গোবর্ধনের প্রাপ্তিযোগ
হর্ষবর্ধনের চৌকিদারি
হর্ষবর্ধনের বিড়ম্বনা
হর্ষবর্ধনের উপর টেক্কা
মামির বাড়ির আবদার
সোনার ফসল
গোলদিঘিতে হর্ষবর্ধন
হর্ষবর্ধনের পাখি শিক্ষা
দেশের মধ্যে নিরুদ্দেশ
বাড়ির ওপর বাড়াবাড়ি
পত্রবাহক
হর্ষবর্ধনের হজম হয় না
হর্ষবর্ধনের অক্কালাভ
চোর ধরল গোবর্ধন
ধাপে ধাপে শিক্ষালাভ
বৈজ্ঞানিক ভ্যাবাচাকা
চোখের ওপর ভোজবাজি
গোবর্ধনের কেরামতি
অ-দ্বিতীয় পুরস্কার
চেয়ারম্যান চারু
ঘুমের বহর
পরিত্যক্ত জলসা
সীট+আরাম =সীটারাম
মারাত্মক জলযোগ
নরহরির স্যাঙাত
জুজু
বাসের মধ্যে আবাস
ছত্রপতি শিবাজী
প্রাণকেষ্টর কান্ড
আমার বইয়ের কাটতি
শিশু শিক্ষার পরিণাম
মই নিয়ে হৈ চৈ
ভোজন দক্ষিণা
লাভপুরের ডিম
এক দুর্যোগের রাতে
মাথা খাটানোর মুস্কিল
ঢিল থেকে ঢোল
পড়শির মায়া
ভাগনে যদি ভাগ্যে থাকে
গ্যাস মিত্রের গ্যাস দেওয়া
ডিটেকটিভ শ্রীভত্তৃহরি
ভূতে বিশ্বাস করো ?
লক্ষন এবং দুর্লক্ষন
ভূত না অদ্ভুত
এক ভূতুরে কান্ড
ধূম্রলোচনের আবির্ভাব
বাসতুতো ভাই
গদাইয়ের গাড়ি
হাতি মার্কা বরাত
ট্রেনের ওপর কেরামতি
রিক্সায়া কোন রিস্ক নেই
খবরদারি সহজ নয়
কলকাতার হালচাল
হাওড়া আমতা এক্সপ্রেস
দেবতার
কবিতা ,:
বাড়িওলার বাড়াবাড়ি
নাম বিভ্রাট
জন্মদিনের রিহার্সাল
সাবাস্ দৌড়
অমার্জনীয়
পৃথিবী বানানো
মার চিঠি
কাচা সোনার রোদ
জমাখরচ
মশার মুশকিল
কচি মুখ
নাটক:
পণ্ডিত বিদায়
মামা ভাগ্নে
ভোজবাজি
বেতন-নিবারক বিছানা
তোতলামি সারানোর স্কুল
জীবনের শেষ পর্যায় এবং মৃত্যু সম্পাদনা
অনেক অবহেলার কারণে তাঁর জীবনের বহু লেখা সযত্নে সংরক্ষণ করতে পারেন নি তিনি। তাঁর বহু মূল্যবান লেখা অবহেলায় খুঁইয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর জীবনটাও কেটেছে চরম অবহেলায়। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি গুরুতর আর্থিক সমস্যায় পড়েন। নিদারুণ অর্থকষ্টে তার জীবনটা ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়তে থাকে। অবশেষে তাঁর আর আপন বলে কিছুই ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে মাসিক ভাতা প্রদান করে। তিনি ১৯৮০ সালে কলকাতায় মারা যান।
চলচ্চিত্রায়ণ
বাড়ী থেকে পালিয়ে উপন্যাসটি ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র আকারে মুক্তি পায়।
একটি মজার ঘটনা :
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারেননি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে।
অথচ একসময় এই শরৎচন্দ্রকেই ঈশ্বরের মতো শ্রদ্ধা করতেন শিবরাম।
নিজের একটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিও নিয়ে গেছিলেন শরৎবাবুর কাছে। ‘যদি দুটো লাইন লিখে দেন ভূমিকায় তাহলে একটা প্রকাশক জোটে’ এই আশায়।
লিখেও দিয়েছিলেন কথাশিল্পী। সেই সম্পর্কই এক ঘটনায় চুরমার হয়ে গেল।
শরৎবাবু বললেন, এ টাকা শিবরাম কেন পাবে!
‘দেনাপাওনা’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন শিবরাম। নাম হয়েছিল ‘ষোড়শী’।
সকলেই জানে সে কথা। স্বয়ং লেখকও জানেন।
অথচ সেই নাটক যখন ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশ পেল সেখানে নাট্যকারের নাম বদলে শরৎচন্দ্রের নাম!
শিবরামের বদলে শরৎবাবুর নাম দিলে পত্রিকা বিক্রি হবে বেশি। সম্পাদকের যুক্তিতে চুপ থাকলেন শিবরাম। নাটক নিয়ে গেলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ীর কাছে। নাটক পড়ে উচ্ছ্বসিত নাট্যাচার্য।
‘‘অসাধারণ নাট্যরূপ দিয়েছেন! আমি করব।’’
শুরু হল শো। প্রায় প্রতিদিনই হাউসফুল। এদিকে তখন দেনার দায় জর্জরিত খোদ নাট্যকার শিবরাম।
নাট্যাচার্যকে বললেন, ‘‘শিশিরবাবু, কিছু টাকা পেলে ভাল হয়। নাটকে আমার লভ্যাংশ থেকে যদি কিছু দিতেন।’’
নাটকের বেনিফিট শোয়ের দিন শিবরামকে আসতে বললেন শিশির কুমার। গেলেন।
শো শেষে সাজঘরে গিয়ে হাত পাততেই শিশিরকুমার বললেন, ‘‘দেরি করে ফেললেন। আজ টিকিট বিক্রির সব টাকা একটি থলেতে ভরা ছিল, শো শেষ হতেই শরৎবাবু সাজঘরে এসে সব টাকা নিয়ে চলে গেলেন।’’
হয়েছে আমার নামে। এর মধ্যে শিবরাম আসছে কোথা থেকে!’ বলে টাকার থলে নিয়ে একটু বেশিই তাড়াতাড়ি চলে গেলেন শরৎবাবু। হয়তো আপনার মুখোমুখি যাতে না হতে হয় সেই জন্যই।’’
শিশিরকুমারের কাছে এই কথা শুনে চুপ শিবরাম। কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না!
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment