∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
অনুগল্প সংখ্যা ( পর্ব ০৭)
নবান্ন উৎসব
বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা
=============∆∆∆∆∆∆∆===========
Doinik Sabder Methopath
Vol -223. Dt -16/12/2020
৩০ অগ্রহায়ণ,১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১.
চালের কেকদেবার্ঘ্য মুখার্জী
আজ বড়দিন, মলিনার তিন বছরের নাতনি তিন্নি আমেরিকা থেকে এসেছে গত পরশু মামারবাড়ি ছুটি কাটাতে | সকাল বেলা দাদুর কেনা দামি ব্র্যান্ডেড ফ্রুইটস কেক কিছুতেই মুখে তুলবে না তিন্নি, এসব কেক খেয়ে খেয়ে বোর হয়ে গেছে সে | ঠিক তখনি কালো চাইনিস পাত্রে ধপধপে সাদা ধোয়া ওঠা নাবান্নর নতুন চালের পিঠে কেক আর সাথে নতুন গুড়ের সস নিয়ে ঘরে ঢোকে মলিনা | গুড়ে ডুবিয়ে একটুকরো কেকে ছোট্ট দাঁতের কামড় বসায় তিন্নি, আর বলে ওঠে ডিলিসিয়াস
-----------------------//-------
২.
নবান্ন
অমিত কাশ্যপ
মুখার্জিবাবু কর্মসূত্রে এখন শহরে। দেশের বাড়ি থেকে অনেক দিনই এসেছেন। তারপর শহর তার আত্মীয়। মাঝে মধ্যে যান দেশের বাড়ি। সেই গন্ধ বাতাস না থাকলেও কোথায় যেন এক নাড়ির টান অনুভব করেন। গ্রামের
পাল-পার্বণ, দুর্গাপুজো, নবান্ন, শীতের আমেজ যেন ডাকে। শহরে আর শীত কোথায়। যেটুকু গাছপালা ছিল তাও বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকার আর রাস্তার সম্প্রচারণে অদৃশ্য। আজ মুখার্জিবাবুর একটা ভালো লাগার দিন। শহরের মিষ্টি দোকান থেকেই কিনবেন পিঠে-পুলি-পাটিসাপটা। বাড়িতে করবেন পায়েস। আজ গ্রামের বাড়িতে দেখতেন নবান্ন উৎসব পালন।
-----+------------//-------++
৩.
অজানা উৎসব
চন্দন মাইতি
গ্রামের দীনতম পরিবারের মালিক মাধব। বয়স্ক মা, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে দুই কাঠা জমির ওপর এক জীর্ণ বাড়িতে তাদের বাস।বাংলা আবাস যোজনার যোগ্য নাকি মাধব নয়। পেশায় সে চাষি। ভাগ চাষি।দিন আনি দিন খাই সংসার। বৌ মালতী,ঝি- এর কাজ করে বাবুদের বাড়িতে।
কার্তিক মাস শেষের পথে। ঘরে অন্নপূর্নার ভান্ডার তলানিতে। মাঠে সোনালী শষ্য মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে। যেন মাধবের ভান্ডারে আসার অপেক্ষায়। মাঝে মাত্র আর ক'টা দিন। মাঠের জল একটু শুকনো হলেই ধান কেটে ঝাড়িয়ে গোলা ভর্তির পালা। যদিও রেশনের চাল পায় মাধব। তবে পাঁচ পাঁচটা পেট। দিনে দুই বেলা করে নুন ও ফ্যান ভাতেই বেসামাল। কোনো মতে দিন চলছে।
বলতে বলতে মাঠ শুকনো হয়। ধান কাটা হয়ে যায়। আজ পয়লা অগ্রহায়ন। গ্রামের ঘরে ঘরে কেমন কেমন গন্ধ। নতুনের গন্ধ। কিন্তু চির দীন মাধবের হেঁসেলে অভাবের গন্ধ নতুন নয়। আজ সকাল থেকেই মাঠে পড়ে আছে মাধব, মালতী ও মানব, তাদের ছেলে।ঘর পাহারায় বয়স্কা মা। দুপুরে তারা বাড়ি ফেরেনি। দু-মুঠো মুড়ি ঝিটিয়ে জল খেয়ে অপেক্ষা করে আছে মা। কখন মাধবরা ফিরবে।সন্ধ্যার মুখে মাঠ থেকে ফিরে আসে সকলে।সাথে বস্তা বন্দী সোনালী ফসল। গৃহলক্ষী তৎক্ষণাৎ কিছু ধান ঢেকিতে ছেটে নেয়। সন্ধ্যায় উনুন জ্বলে। মাধবের ঘরে ভেসে বেড়ায় এক অন্য গন্ধ। নবান্ন-র সুবাস। পরম তৃপ্তিতে চেঁটে পুটে খায় চারটি প্রানী। তারাও অজান্তেই পালন করে ফেলল নবান্ন উৎসব। এভাবেই বাংলার কত ঘরেই চাহিদার চাকায় পালিত হয়ে চলেছে কত উৎসব।
----------------//--------
৪.
লবান
রাজীব ঘাঁটী
বাইরে নবান্ন কবিতা উৎসব এর ব্যানার দেখে খোঁচা দাঁড়ি, ক্ষুধার্ত লোকটা থমকে দাঁড়াল, পাশের একজনকে জিজ্ঞাসা করল "ইখানে লবান দিবে? "
লোকটি জানাল এটা কবিতা উৎসব।
সম্পাদক দূর থেকে লক্ষ্য করে লোকটির কাছে এলেন, বললেন আসুন। লোকটি খেতে বসল কবিদের সাথে,ওর প্রতিটি গ্রাসে কবিতার লাইন জ্বলজ্বল করতে দেখছেন সম্পাদক। উৎসব জমে উঠেছে মঞ্চ থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত ...
---------------//-------
৫.
নবান্ন
সুবীর ঘোষ
বুলু জিগ্যেস করল---মা নবান্নর তারিখটা কী ? বুলুর মা বলল --- ঠাকুরমশাই তো বলে গেলেনঃ১৮ তারিখ নবান্ন করা যেতে পারে । রবিবারও আছে । তোদের স্কুলের ছুটি । বুলু বলল--- মা এখন সাধু ময়রার জামাই পরান খুব ভালো সন্দেশ বানাচ্ছে । এবার ওর দোকান থেকেই আনিও ।
মাঠে এখনো অনেক ধান । বুলুর বাবা প্রায় রোজই মাঠের দিকে ঘুরে যায় তার ধানগুলো ঠিক আছে কী না দেখার উদ্দেশে ।
একদিন সকালে বুলুর বাবা বরবটিসেদ্ধ পেয়াজ লংকা মেখে মুড়ি খাচ্ছিল । এমন সময় গোরুর রাখাল তাজু এসে খবর দিল—কাকা শিগগির এসো । ধানমাঠে আগুন লেগেছে ।
খাওয়া ফেলে ছুটল বুলুর বাবা । উঠোন থেকেই বুলুর মা কান্না জুড়ে দিল ।
-----------------//---------
৬.
নবান্নের চিঠি
গোবিন্দ মোদক
--- ওগো শুনছো, অপু বাড়ি আসছে ! গৃহিণী জয়ার উচ্ছ্বাসে অবাক হয়ে হেমন্ত বলে, -- কে বলল তোমাকে ?
--- কেউ বলেনি, অপুর চিঠি এসেছে ! কি লিখেছে শোনো --- পূজনীয়া মা, অতিমারীর এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাড়ি যেতে পারিনি বলে তোমাদের মন খারাপ লিখেছো, আমার মন খারাপও তোমাদের থেকে কম কিছু নয়। তবে দুঃখ করোনা, নবান্নে যাচ্ছি ! নতুন ধান উঠবে .... ! হেমন্তলক্ষ্মী ভরে দেবে ফসলের গোলা .... ! আর নতুন চালের পরমান্নের গন্ধে মাতোয়ারা হবে পাড়া .... ! আমাদের বাড়ি আর উঠোন জুড়ে হেসে উঠবে তোমার আঁকা আলপনা ! মাগো, কতোদিন তোমার হাতে রান্না খাইনা ! এবার তাই নবান্নে গিয়ে ....। থাক, বাকি কথা বাড়ি গিয়ে বলবো। তোমাকে ও বাবাকে আমার প্রণাম, খুকিকে আদর। ইতি -- তোমাদের অপু।
হেমন্ত তাকিয়ে দেখে জয়ার চোখ দিয়ে টস্ টস্ করে নেমে আসছে আনন্দাশ্রু ! হেমন্তের বুকটাও কেমন যেন চিন্ চিন্ করে ওঠে।
-----------------//----------
৭.
রক্ষাকর্তা
তপনকুমার গোস্বামী
নিষ্ফলা জমিটার দিকে তাকিয়ে আছে সহদেব। রাত পোহালেই নবান্ন। চোখের সামনে উৎসবের ছবি। হইচই, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া! এবারে প্রথমে করোনা তারপর আমফান। সবশেষ ! হঠাৎ পিঠে একটা স্পর্শ। ঘাড় ঘোরাতেই মকবুল চাচা বললেন---"উৎসব হবেই। তোমার চাষ হয়নি কিন্তু আমার তো হয়েছে ! আমফানের ক্ষতি আমাদেরও। তবে তোমাদের মতন নয়। " সহদেব অবাক। বলল---" তা কী করে সম্ভব ! " মকবুল চাচা বললেন--- "তোমরা যাকে বিসর্জন দিয়ে মাছের ভেড়ি বানিয়েছো, সেই ম্যানগ্রোভই রক্ষাকর্তা। আমাদের এই সুন্দরবন অঞ্চলে ম্যানগ্রোভই হচ্ছে প্রকৃতির ঢাল। "
--------------//------------
৮.
হায় রে পরান
দেবাশিস চক্রবর্তী
পরান মন্ডলের দেড় বিঘা জমিতে এ বছর ফসল ফলেছে দুগুন । আনন্দে পরানের বৌ চাঁপার গলার স্বর চড়েছে আরো সাতগুন ।কোলের ছেলে লখাইকে বুকে নিয়ে , গোবরজলে নিকানো পুঁছানো উঠানে পাতার জ্বাল দিয়ে রান্না করছে পিঠা - পুলি পায়েস । আজ যে ওদের নবান উৎসব ।
পূজা হবে, ধামসা মাদলের তালে নাচগান হবে, খাওয়া দাওয়া হবে । পরানকে আজ পায় কে ? হঠাৎ চাঁপা ডাক দেয় - হৈ লখাইয়ের বাপ , কুথা গেলে গো ? মহাজন আইছে গো ।
- মহাজন ? এখন !
দলবল নিয়ে এসে মহাজন সুদর্শন দলপতি বলে - আগু তিন সালের দেনা মেটা পরান, তারপর নবান উৎসব করবি ।
পরান মহাজনের মুখের পানে ভ্যাল ভ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ।
--------------------//----------
৯.
নবান্ন
সুমিত্রা সাউ গিরি
ক্লাস নাইনে পড়া , শান্তশিষ্ট মেয়ে খুশির হঠাৎই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়। পরিবার-পরিজন মনোবিদ্ এবং স্নায়ুবিশারদের শরনাপন্ন হয়। কিন্তু স্মৃতি আর ফেরেনা। একদিন খুশীর পিসিমণি নতুন চালের পায়েস নিয়ে সামনে আসে। খুশি কেমন যেন লাফিয়ে ওঠে। পায়েসের গন্ধ নিতে নিতে বলতে থাকে "কি যেন এটা কি যেন........" । "নতুন চালের পায়েস," পিসিমণি বলে। তারপর হঠাৎ খুশি বিড়বিড় করে বলে ওঠে"নতুন চাল ....সোনালি ধান....অগ্রহায়ণ ....হেমন্ত... কৃষকের আনন্দাশ্রু.. পিঠেপুলি ...ক্ষীর-পায়েস...খেজুর গুড়...কাকভোজন...মরাই..জীবনানন্দ...ধানসিঁড়ি... মনে পড়েছে মনে পড়েছে 'নবান্ন' "।
পিসিমণি বিলুপ্তপ্রায় নবান্নের কাহিনি বলতে শুরু করে। খুশির আবদারে তৎক্ষণাৎ নবান্নের আয়োজন হয়।খুশির স্মৃতি ফিরে এলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবের জন্যে । জয় নবান্নের জয় হোক।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment