জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
জাতীয় শিক্ষক
ঈশ্বর চন্দ্র প্রামাণিক
=================================
Doinik sabder methopath
Vol - 236. Dt - 30.12.2020
১৪ পৌষ,১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
অখন্ড মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার অন্তর্গত খেজুরি থানার জরারনগর গ্রামে এক দরিদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ( বাংলা ১৪ পৌষ,১৩১৯) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ধরণীধর প্রামানিক ও মাতা রাইমণি দেবীর একমাত্র সন্তান তিনি।
গ্রামে পাঠশালা না থাকায় প্রতিবেশী পঞ্চানন প্রধানের বাড়িতে আদর্শ শিক্ষক রঘুনাথ বেরা শিক্ষকতায় প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করেন পরে চতুর্থ শ্রেণীতে হেঁড়িয়া শিবপ্রসাদ ইনস্টিটিউশন এ ভর্তি হন ১৯২৫ সালে। আদর্শ শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ জানার সান্নিধ্য লাভ করে স্বদেশ সেবায় উদ্বুদ্ধ হন এবং ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৩০সালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশকে স্বাধীন করার সংকল্প গ্রহণ করেন. জড়িয়ে পড়েন লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে, বিক্রি করেন লবণ ও বুলেটিন রণভেরী, ১৯৩২ সালে তিনি প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন পড়ায় ছেদ পড়ে। পরে ঠাকুরনগরে গড়ে ওঠা শ্রীগৌরাঙ্গ জাতীয় বিদ্যালয় কিছু দিন পড়াতে থাকেন। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে ইংরেজরা স্কুল ভেঙে দেয় ফলে ঈশ্বরচন্দ্রের ঠিকানা হয় 24 পরগনার একটি রাইস মিলে হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে। ১৯৩৩ সালে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি এবং আদর্শ শিক্ষক পূর্ণেন্দু শেখর ভৌমিক ও তার অন্তরঙ্গ বন্ধু উপেন্দ্রনাথ প্রধানের পরামর্শে আবার লেখাপড়া শুরু করেন। পরে মা রাইমনি দেবীর অনুরোধে ভগবানপুর এর গান্ধীবাদী জননেতা ভীমা চরণ পাত্র ঈশ্বরচন্দ্রের জন্য দশগ্রাম এম .ই স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারের পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তিনি লেখাপড়া শুরু করার মনস্থ করায় ওখানে যোগদান না করে ১৯৩৫ সালে আই. এ পাশ করেন কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ থেকে। ওই সময় তিনি কাঁথি রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী মঙ্গল আনন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বামীজীর আদর্শে পথ চলার শপথ গ্রহণ করেন এবং স্বামী বিজ্ঞানানন্দ দীক্ষা গ্রহণ করেন পরবর্তীতে শিব জ্ঞানে জীব সেবা আদর্শ কে সামনে রেখে জীবনের পথ চলতে থাকেন। তিনি ভর্তি হন কলকাতার আশুতোষ কলেজে স্নাতক শেষ করে ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই জোগাড় করতে থাকেন একদিকে উচ্চশিক্ষার আগ্রহ অন্যদিকে সাংসারিক কর্তব্যবোধ শেষ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষায় চাকুরীতে নিযুক্ত হওয়ার সংকল্প সরকারি ও বেসরকারি নানাক্ষেত্রে সুযোগ থাকলেও তিনি শিক্ষাবৃত্তি কে গ্রহণ করেন। ফতেপুর সৃণাথ ইনস্টিটিউশন হেঁড়িয়া শিবপ্রসাদ ইনস্টিটিউশন দশগ্রাম সতীশচন্দ্র শিক্ষা সদন ঠাকুর নগর নন্দা মহিলা বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ আসীন ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তরুণ জননেতা সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ। ১২ এপ্রিল তারই আমন্ত্রণে প্রথমে তমলুক কাঁথি যাওয়ার পথে মুগবেড়িয়া এবং পরে জোড়ার নগর গ্রামে আগমন সম্বর্ধনা জ্ঞাপন এবং পরবর্তীতে তার স্মৃতিধন্য শিল্প ভারতে গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে তার জীবনে এক স্মরণীয় অধ্যায়ে সূচিত হয়। ১৮ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে সবং থানার দশগ্রাম সতীশচন্দ্র শিক্ষা সদন যোগদান করেন। সুদীর্ঘ ৪১ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ৩৯ বছর তিনি অতিবাহিত করেন এই বিদ্যালয়. অবশেষে সেই দিন আসে ১৯৬৪ সালে তিনি সম্মানিত হন রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কতৃর্ক জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা।
আজীবন ঐক্য ও সংহতির প্রতীক এই মানুষটি বৃহত্তর কল্যাণ অর্থে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতাকে জীবনের নিয়ম মেনে কাজেও কর্তব্যে এগিয়ে চলেছেন। গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই মানুষটি আবিষ্কার করেন এটম চরকা। বহুভাবে উদ্যোগ নিয়ে তিনি গান্ধীজিকে মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় এনেছেন ।এদের মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণনগর গ্রাম ৩রা জানুয়ারির ১৯৪৬ সাল.
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয় ওই বছর তিনি ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ৩১ অক্টোবর খেজুরি থানার নগরে গঠন করেন জরারনগর সুভাষ শুভাগমন স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতি। যেখানে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়, বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে আত্মনির্ভরশীলতা উপযোগী শিল্পকর্ম ,প্রাক বুনিয়াদি বিভাগ, নিম্ন বুনিয়াদী বিভাগ, উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়, সুভাষপল্লী কুঞ্জবিহারী বিদ্যাভবন, সুভাষ শিল্প শিক্ষালয়, সুভাষ স্মৃতি পাঠাগার, খাদি ও গ্রামোদ্যোগ ,নারী কল্যাণ শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবাসত্র সুভাষ ব্যায়ামাগার সংগ্রহশালা প্রভৃতি।১৯৫৭ সালে এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি রেজিস্ট্রিকৃত নাম হয় সুভাষ শিল্প ভারতী। ১৯৫১ সালে তিনি ঠাকুরনগর শ্রীগৌরাঙ্গ মেলায় প্রকাশ্য দিবালোকে জুয়া খেলা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদে অনশন সত্যাগ্রহ শুরু করেন, তদানীন্তন মহকুমা শাসককে দিয়ে আইন প্রয়োগের দাঁড়ায় প্রতিবিধান হওয়াতে ২৮এপ্রিল ইশ্বরচন্দ্র ৬৪ ঘন্টার অনশন ভঙ্গ করেন।
অন্যান্য নানা নেশার মধ্যে ফটোগ্রাফিতে তার দক্ষতা আমাদের চোখে পড়ে। মাসিক ভারতবর্ষে বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো এবং ওরা কাজ করে এবং আনন্দবাজারে ধান্য ছেদন ছবি ছাপা হয়েছিল তারই তোলা খেয়াঘাট আলোকচিত্রের প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন তিনি এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিট সংগ্রহ তার অন্যতম ছিল।
১৯৪৮ সালে মহাত্মার মহাপ্রয়াণে গ্রন্থ রচনা করেন।এছাড়া সাধ ও সদাচার ,শুদ্ধ বাংলা বানান ,বিদ্যার্থীর বিদ্যাসাগর , বিশ্ব গুরু মহাত্মা গান্ধী , পাছে ভুলে যাই, গান্ধীজি ও নেতাজি, সর্বাধিনায়ক ভীমাচরণ , শশী বাবুর সংসার প্রভৃতি রচনা করেন।
সাংগঠনিক প্রতিভার কারণে বহুবিধ সংস্থার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ,সর্বোদয় মন্ডলের সহ-সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ আচার্য কুলের সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় আচার্য কুলের কার্যকরী সদস্য, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সদস্য, ভূদান যজ্ঞ আন্দোলনের নেতৃত্ব, সুভাষ মেলা ও প্রদর্শনী সাধারণ সম্পাদক প্রভৃতি।
১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ কর্ম জীবন থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন
যদুনাথ মুখোপাধ্যায় সমাজসেবা পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ গান্ধী মেমোরিয়াল কমিটি প্রদত্ত গান্ধী পুরস্কার সাহিত্য সেবায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক পুরস্কার দূরদর্শন কলকাতা কর্তৃক প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী সম্বর্ধনা ( ১১ আগস্ট, ১৯৯৭ ) প্রভৃতি।
পরিবারের দুই পুত্র কমল কুমার প্রামাণিক ও কানন কুমার প্রামানিক ।
জীবনে বহু মনীষীও ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসেছেন।
২০০২ সালের ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ পত্রিকার পক্ষ থেকে জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে আমরা আদর্শে অনুপ্রাণিত হলাম।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment