Sunday 31 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Saturday 30 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Friday 29 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
নরেন্দ্রনাথ মিত্র=================================
Doinik sabder methopath
Vol -267.Dt -30.01.2021
১৭ মাঘ, ১৪২৭. শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
কল্লোল পরবর্তী যুগে সমাজ বাস্তবতা ও মানবিক অন্তর্মুখী ঘাত-প্রতিঘাতে গরীব নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষের চেনা সম্পর্ক নিয়ে পরিচিত সংসারের রূপকার নরেন্দ্রনাথ মিত্রকে খুঁজে পেয়েছেন বাঙালি পাঠক।বিশেষ করে চল্লিশের দশকের জটিল জীবনযন্ত্রণার মুক্তিকামী মমত্ববোধ সম্পন্ন শুভ বিশ্বাসের শিল্পীমন ছিলেন তিনি।
তিনি ১৬ মাঘ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ (৩০ জানুয়ারি, ১৯১৬)-এ জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরদিতে। ভঙ্গা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই-এ ও বি-এ পাশ করেন বঙ্গবাসী কলেজ থেকে। লেখালেখির সূচনা বাল্য কালে। প্রথম মুদ্রিত কবিতা 'মূক', প্রথম মুদ্রিত গল্প 'মৃত্যু ও জীবন'। দুটোই 'দেশ' পত্রিকায়, ১৯৩৬ সালে। বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে একত্রে প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'জোনাকি' (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ)। "নিরিবিলি" নামে আরও একটি কাব্যগ্রন্হ প্রকাশিত হয় । এরপর মাঝেমাঝেই তার লেখা কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও গ্রন্হাকারে আসেনি । প্রথম গল্প-সংগ্রহ 'অসমতল' (১৩৫২ বঙ্গাব্দ)। প্রথম উপন্যাস 'হরিবংশ', গ্রন্থাকারের নাম 'দীপপুঞ্জ' (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ)। গল্পগ্রন্থ একান্নটি আর উপন্যাসের সংখ্যা আটত্রিশটি। উপন্যাসের মধ্যে বিশেষত, 'দীপপুঞ্জ', 'চেনামহল', 'তিন দিন তিন রাত্রি' ও 'সূর্যসাক্ষী', দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশকাল থেকেই দারুণ ভাবে সমাদৃত। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান।
শান্ত-নিস্তরঙ্গ পল্লীজীবন, নগরমুখী মফস্বল শহরের ভাসমান মধ্যবিত্ত এবং মহানগরী কলকাতার সীমায়িত এলাকার অভিজ্ঞতা তার উপন্যাসগুলির মূল উপজীব্য। নিজের ‘দ্বীপপুঞ্জ’ উপন্যাসের আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, “আমার কোন রচনাতেই অপরিচিতদের পরিচিত করবার উৎসাহ নেই। পরিচিতরাই সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।”
রচনা কর্ম :
তাঁর প্রথম লেখা কবিতা "সুখ" ১৯৩৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়। ঐ বছর তাঁর রচিত প্রথম ছোটগল্প 'জীবন ও মৃত্যু' দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
উপন্যাস : (৩৫ টি)
দ্বীপপুঞ্জ রূপমঞ্জরী অক্ষরে অক্ষরে চেনামহল দেহমন দূরভাষিণী সঙগিণী অনুরাগিণী সহৃদয়া গোধুলি শুল্কপক্ষ চোরাবালি তিন দিন তিন রাত্রি পরস্পরা জলপ্রপাত কণ্যাকুমারী সুখ দুঃখের ঢেউ প্রথম তোরণ তার এক পৃথিবী সেই পথটুকু নীড়ের কথা নতুন ভূবন জলমাটির গন্ধ শিখা অনাত্মীয়া নতুন তোরণ সূর্যমুখী সিঁদূরে মেঘ নির্বাসন প্রভৃতি।
- বাঙালির মধ্যবিত্ত জীবনের কথাকার নরেন্দ্রনাথ, তাঁর উপন্যাসে এঁকেছেন - সুখ-দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষা জীবনের জটিলতা গ্রামীণ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত অন্তর্দ্বন্দ্ব চেনা জানা মানুষের ভিড়ে মানবিক নানান অনুষঙ্গ।বিশেষ করে মানবজীবনের কুসুম ও কীট দুই ই তিনি দেখেছেন, শান্ত মসৃণ পরিবেশে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
গল্প সংকলন
অসমতল হলদে বাড়ি চড়াই-উৎরাই বিদ্যুৎলতা সেতার উল্টোরথ পতাকা কাঠগোলাপ অসবর্ণ ধূপকাঠি রুপালি রেখা ও পাশের দরজা একুল ওকুল বসন্ত পঞ্চমী দেবজানি ময়ূরী বিন্দু বিন্দু একটি ফুলকে ঘিরে বিনি সুতোর মালা যাত্রাপথ চিলেকোঠা উন্নয়ন বিবাহ বাসর চন্দ্রমল্লিকা সন্ধ্যারাগ সেই পথটুকু অনাগত পালঙ্ক প্রভৃতি।
* তিনি তার নিজের রচনা সম্পর্কে বলেছেন -
" সমাজে শঠতা আছে ক্রুরতা আছে তা আমি জানি হিংসা-বিদ্বেষের অভাব নেই কিন্তু সমাজ জীবনের এই অন্ধকার দিকের সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় কম কারন আমার লেখায় জীবনের সেই সকল দিক খুব বড় হয়ে দেখা দেয় নি যতদূর মনে হয় সান্ত মধুর ভাবি আমার রচনায় বেশি মানুষের উত্থান পতন ত্রুটি অবশ্যই আছে কিন্তু তা আমার গর্বের বস্তু নয় যেখানে আমার মহৎ শক্তিমান সেখানে যেন আমাদের যথার্থ পরিচয় আছে..... আমার মেজাজ রোমান্টিক সৌন্দর্যপ্রিয় তাই মহত্বই আমার আকর্ষণ করে বেশি।"
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আর্থসামাজিক পরিমণ্ডলে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত জীবনের সংস্কার মূল্যবোধ ও নানান অভিঘাতে ক্ষতবিক্ষত তাঁর গল্পগুলি জীবন্ত ও বাস্তব । ব্যক্তিত্বের সংকটে অসহায় আবার উৎসাহে একান্ত জীবনমুখী - আমরা লক্ষ্য করি।
কবিতা সংকলন
জোনাকি
নরেন্দ্রনাথ মিত্রের সাহিত্যকর্মের মধ্যে যেগুলি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তার কয়েকটি - সত্যজিৎ রায়ের মহানগর, অগ্রগামীর 'হেডমাস্টার', 'বিলম্বিতলয়'; রাজেন তরফদারের 'পালঙ্ক'। 'রস' গল্পটির অমিতাভ বচ্চন অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের নাম 'সৌদাগর'।
- আনন্দ পুরস্কার -১৯৬২।
সিন্ধুতে বিন্দু খোঁজার মতো মৌলিকতা নিয়ে যিনি উপলব্ধি করেছিলেন চেনাজানা মানুষের মুখের ভাষায় পরিচিত মহল, মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচর্চায় প্রতিদিনের জীবনধারা, ধারাবাহিক যাপন চিত্রে আঁকা নানান রঙের ছবি, তাঁর লেখায় ধরা পড়েছে। তাই তিনি কল্লোল উত্তর তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার।
মৃত্যু _ ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ ।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
Thursday 28 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
১৮৭৬ সালে একটি নতুন বাড়ি তৈরিতে অনেক বেশি পুঁজি বিনিয়োগের পর চেখভের পিতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কারাবাস এড়াতে তিনি মস্কোতে পালিয়ে যান। সেখানে তার বড় দুই ছেলে আলেকসান্দর ও নিকলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। পরিবারটি মস্কোতে দারিদ্র্যের মাঝে বাস করছিলো। চেখভের মা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। বিষয়সম্পত্তি বিক্রি ও স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার জন্য চেখভকে তাগানরোগেই রেখে আসা হয়েছিল।
চেখভ তাগানরোগে আরও তিন বছর ছিলেন। তিনি তাগানরোগে সেলিভানভ নামের এক ব্যক্তির সাথে থাকতেন যিনি চেখভের দ্য চেরি অরচার্ড-এর চরিত্র লোপাখিনের মতোই তাদের বাড়ি কিনে নিয়ে পরিবারটিকে ঋণমুক্ত করেছিলেন।চেখভকে নিজের পড়াশোনার ব্যয় নিজেকেই বহন করতে হতো। এই খরচের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি বেশ কয়েকরকমের কাজ করতেন যার মধ্যে একটি ছিল গৃহশিক্ষকতা। এছাড়াও তিনি গোল্ডফিঞ্চ পাখি ধরে বিক্রি করতেন এবং খবরের কাগজে ছোট ছোট স্কেচ এঁকেও অর্থ উপার্জন করতেন।তিনি তার দৈনন্দিন খরচ থেকে সঞ্চিত প্রতিটি রুবল মস্কোতে পাঠিয়ে দিতেন, সেই সাথে পরিবারের সদস্যদের উদ্দীপিত করার জন্যে পাঠাতেন হাস্যরসাত্মক চিঠি।] এই সময়টাতে তিনি প্রচুর পরিমাণে পড়েছেন। পড়েছেন বিশ্লেষণাত্মকভাবে। যে লেখকদের লেখা তিনি এই সময়ে পড়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন থের্ভান্তেস, তুর্গেনেভ, গনচারভ এবং শোপনহাওয়ার।একই সময়ে তিনি ফাদারলেস নামের একটি পুরো দৈর্ঘ্যের কমেডি নাটকও লিখেছেন, যেটাকে তার ভাই আলেকজান্ডার বাতিল করে দিয়েছেন "অমার্জনীয়, যদিও নির্দোষ কল্পকাহিনী" হিসেবে। চেখভ বেশ কিছু প্রণয়ঘটিত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে একটি সম্পর্ক ছিল শিক্ষকের স্ত্রীর সাথে।
১৮৭৯ সালে চেখভ স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মস্কোতে তার পরিবারের সাথে যোগ দেন। তিনি আই.এম. সেচেনভ ফার্স্ট মস্কো স্টেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
মস্কোতে চলে আসার অল্প কিছুদিন পরেই চেখভ মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এখানেই তার শিক্ষা গ্রহণ চলে ১৮৭৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮৮৪ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত। ঐ গ্রীষ্মে চেখভ ফাইনাল পরীক্ষা দেন। এই সময়ের মধ্যে সাত সদস্যের চেখভ পরিবার কয়েকবার তাদের আবাস বদল করেছে। এবং স্থায়ী আবাসে সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার আগের কয়েক মাস তাদেরকে যে অপ্রশস্ত বাসস্থান ও দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বসবাস করতে হয়েছে তা চেখভের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।
চেখভ তার প্রথম দিকের লেখা গল্প বা অন্যান্য রচনায় যে চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন তাদের মধ্যে বিস্ময়কর সব সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। এই বিস্ময়কর সম্পর্কগুলোর সম্যক উপলব্ধি সম্ভব যদি তার শুরুর দিকে লেখা চিঠিগুলো পর্যবেক্ষণ করা যায়।
এই অর্ধ-পরিহাসমূলক, অর্ধ-অপ্রসন্নতাবোধক ভাব বিদ্যমান ছিল চেখভের শিক্ষাজীবনে লেখা চিঠিগুলোয় এবং এর পরবর্তী সময়ের চিঠিতেও। শুধুমাত্র ঘিঞ্জি পরিবেশ ও দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপনই তার লেখালেখির কাজকে বাধাগ্রস্ত করেনি, বরং অনেক সম্পাদকের উপযুক্ত সম্মানী না দেয়ার মতো অসাধু মনোবৃত্তি, লেখার দৈর্ঘ্যের উপর সীমা আরোপও এক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে।১৮৮১ সালে একটি সন্ত্রাসবাদী দল জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে গুপ্তহত্যা করলে সরকারের সেন্সর পর্ষদ অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেয় যা চেখভের লেখার কাজ আরও কঠিন করে দেয়। ১৮৮২ সালে চেখভের প্রথম ছোটগল্প সংকলন আ প্র্যাঙ্ক স্থগিত হয় এবং ধরে নেয়া হয় যে এটি হারিয়ে গিয়েছে।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে চেখভকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।.পরিবারকে সাহায্য করার জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ যোগাড় করার জন্য চেখভ সমসাময়িক রুশ জীবন নিয়ে ছোট ছোট হাস্যরসাত্মক নাটক বা রচনা লিখতেন এবং অলঙ্করণমূলক নকশা আঁকতেন। এই নকশাদার চিত্র এবং হাস্যরসাত্মক লেখার অনেকগুলোই তিনি লিখেছিলেন ছদ্মনামে। আন্তোশা চেখন্তে (Антоша Чехонте) এবং রাগহীন মানব (Человек без селезенки) হচ্ছে তেমন দুইটি নাম। তার এই চিত্রাঙ্কণ ও বিদ্রুপাত্মক ধাঁচের লেখার জনপ্রিয়তা তাকে ক্রমে ক্রমে খ্যাতি এনে দেয় রাশিয়ার সাধারণ নাগরিক জীবনের ব্যাঙ্গাত্মক ইতিবৃত্তকার হিসেবে। ১৯৮২ সালের মধ্যেই খ্যাতনামা প্রকাশক নিকোলাই লেইকিনের পত্রিকা অসকোলস্কিতে তিনি লিখতে শুরু করেন।এই সময়টাতে চেখভের লেখা গল্প ও অন্যান্য রচনার অন্তর্নিহিত ভাব বা সুর ছিল তার পরিণত সময়ের গল্প উপন্যাসের চেয়ে বেশি রূঢ়।
১৯৮৪ সালে চেখভ চিকিৎসক হিসেবে পূর্ণ যোগ্যতাপ্রাপ্ত হন। চিকিৎসা পেশাকে তিনি তার প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিলেও এ থেকে তিনি সামান্যই উপার্জন করেছেন। দরিদ্রদের চিকিৎসায় তিনি তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেননি।১৮৮৪ ও ১৮৮৫ সালে চেখভ লক্ষ্য করেন তার কাশির সাথে রক্ত পড়ছে এবং ১৮৮৬ সালে এ অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে স্বীকার করেননি যে তার ক্ষয়রোগ হয়েছে।লেইকিনের কাছে স্বীকার করেছেন, “আমি পরীক্ষানীরিক্ষা করানোর জন্য বন্ধুদের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিতে ভয় পাচ্ছি।” তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলিতে লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকলেন এবং এ থেকে তার পরিবারের জন্য উত্তরোত্তর অপেক্ষাকৃত ভাল আবাসের সংস্থান করার মতো পর্যাপ্ত অর্থও উপার্জন করে যাচ্ছিলেন। ১৮৮৬ সালের শুরুর দিকে চেখভ মিলিয়নিয়ার শিল্পপতি আলেক্সি সাভরিনের মালিকানাধীন ও সাভরিনের সম্পাদিত সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা নোভায়া ভ্রেমায়াতে লেখার আমন্ত্রণ পান। লেখার প্রতি লাইনের জন্য লেইকিন যে সম্মানী দিতেন, এই সম্পাদক দিতেন তার দ্বিগুণ এবং লেইকিন পত্রিকার যতটুকু জায়গা জুড়ে চেখভের লেখা ছাপানোর অনুমোদন করতেন, আলেক্সি সাভরিনের অনুমোদন ছিল তার তিনগুণ বেশি স্থানের। সাভরিন চেখভের বন্ধু ছিলেন আজীবন, সম্ভবতঃ সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন তিনি।
এর অনেক আগে থেকেই চেখভ সাধারণ মানুষের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন, জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তেমনি বিখ্যাত সাহিত্যিকদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তার লেখার সাহিত্যগুণের জন্য। চৌষট্টি বছর বয়স্ক নামকরা প্রবীণ রুশ লেখক দিমিত্রি গ্রিগোভিচ চেখভের ছোটগল্প দ্য হান্টসম্যান পড়ে চেখভকে লিখেছিলেন, "তোমার সত্যিকারের প্রতিভা আছে - এমন এক প্রতিভা, যা তোমাকে নতুন প্রজন্মের লেখকদের সামনের সারিতে জায়গা করে দিতে পারবে।" তিনি চেখভকে লেখালেখির পরিমাণ কমিয়ে লেখার সাহিত্যমানের প্রতি মনোযোগ দেয়ার উপদেশ দেন।
দিমিত্রি গ্রিগোভিচের চিঠির প্রতুত্তরে চেখভ লিখেছিলেন যে এ চিঠি তাকে আঘাত করেছে যেন বজ্রপাতের মতো এবং স্বীকার করেছেন, "আমি আমার গল্পগুলো লিখেছি এমন ভাবে, যেমন করে প্রতিবেদকরা কোথাও আগুন লাগলে তার বিবরণ লিখেন - যান্ত্রিক, অর্ধ-সচেতন এবং পাঠক ও আমার নিজের কোনো কিছুর প্রতি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে।"এই স্বীকারোক্তি হয়তো চেখভের জন্য ক্ষতিকর ছিল, কারণ তার পূর্ববর্তী পাণ্ডুলিপিগুলো এটাই প্রকাশ করে যে তিনি বেশিরভাগ সময়েই লিখেছেন অত্যন্ত যত্নের সাথে, লেখার পরিমার্জনা করেছেন বারবার। তথাপি গ্রিগোভিচের উপদেশ ছাব্বিশ বছর বয়সের তরুণ চেখভকে আরো গভীর, শৈল্পিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ১৮৮৭ সালে গ্রিগোভিচের গোপন প্রভাবের সামান্য প্রয়োগে চেখভের ছোটগল্প সংকলন অ্যাট ডাস্ক বহু আকাঙ্ক্ষিত পুশকিন পুরস্কার জিতে নেয় "সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্মের জন্য, যা উচ্চ শৈল্পিক মূল্যগুণে স্বতন্ত্র।
অতিরিক্ত পরিশ্রমের দরুন ক্লান্ত ও অসুস্থ চেখভ বর্তমান ইউক্রেনের বিস্তীর্ন স্তেপ অঞ্চলে সফরে বের হন ১৮৮৭ সালের বসন্তে। তিনি তাগানরোগে তাদের পুরোনো বাড়ি এবং দক্ষিণ রাশিয়ার কিছু শহর ও বর্তমান ইউক্রেন ভ্রমণ করেন। ভ্রমণকালে স্তেপ অঞ্চলের সুন্দর দৃশ্যাবলী তার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।ফিরে আসার পর তিনি উপন্যাসিকা-ব্যাপ্তির একটি ছোট গল্প ‘দ্য স্তেপ’ লিখতে শুরু করেন যা ছাপা হয় প্রভাবশালী সাহিত্য সাময়িকী ‘সাভের্ন ভেস্টনিক’ (দ্য নর্দার্ণ হেরাল্ড)-এ।গল্পের চরিত্রগুলোর চিন্তাপ্রক্রিয়ার সাথে একই সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া এই উপাখ্যানে চেখভ একটি অল্পবয়সী বালকের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন স্তেপ অঞ্চলের এপার হতে ওপারে যাওয়া এক প্রমোদভ্রমণকে। এই অল্পবয়সী বালকটিকে তার বাড়ি থেকে দূরে বসবাস করার জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং তার সঙ্গী ছিল এক পুরোহিত ও এক বণিক। দ্য স্তেপ, যাকে বলা হতো “চেখভের কাব্যশাস্ত্রের অভিধান”, সাহিত্যজগতে চেখভের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করেছে। এই গল্পটিই চেখভের পূর্ণাঙ্গ, পরিণত মানের লেখাগুলোর বৈশিষ্টমূলক গুণের বেশিরভাগের পরিচয় তুলে ধরে এবং চেখভের জন্য এনে দেয় দৈনিক পত্রিকার পরিবর্তে সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশনার সুযোগ।
১৮৮৭ সালের শরতে কোর্শ নামের এক থিয়েটার ব্যবস্থাপক চেখভকে একটি নাটক লিখতে বলেন যার প্রেক্ষিতে চেখভ এক পক্ষকালের মধ্যে ইভানভ রচনা করেন। নাটকটি সেই নভেম্বরেই মঞ্চস্থ হয় এবং এর মঞ্চস্থকরণের অভিজ্ঞতা ছিল চেখভের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর। তিনি তার ভাই আলেকজান্ডারকে এই বিশৃংখল ঘটনাবলীর কৌতুকপ্রদ বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি লিখেন। তবে বিস্ময়করভাবে এই নাটকটি অনেক জনপ্রিয় হয় এবং প্রশংসিত হয় একটি অভিনব ও মৌলিক কাজ হিসাবে। মিখাইল চেখভ ইভানভকে বিবেচনা করেছেন তার সহোদরের সাহিত্য পেশার ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের এক গুরূত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসাবে। এই নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে লেখা চেখভের গল্প, উপন্যাসগুলো থেকে একটি পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায়, যা পরে “চেখভ’স গান” হিসাবে পরিচিত হয়। ইলিয়া গারল্যান্ডের একটি কথোপকথন থেকে উল্লেখ্যঃ “যদি নাটকের কোনো অঙ্কে একটি বন্দুককে দেয়ালে ঝুলতে দেখতে পাও, তাহলে নাটকের শেষ অঙ্কে অবশ্যই এটি গুলিবর্ষণ করবে।”
১৮৮৯ সালে ক্ষয়রোগে চেখভের সহোদর নিকোলাই এর মৃত্যুর ঘটনা প্রভাবিত করে তার এ ড্রিয়েরি স্টোরি গল্পটিকে। ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত গল্পটি চিত্রিত করেছে একজন ব্যক্তিকে যিনি জীবনের শেষ সীমায় উপনীত হয়ে উপলব্ধি করেছেন যে তার জীবন ছিল একেবারে উদ্দেশ্যবিহীন। নিকোলাই এর মৃত্যুর পর চেখভের অস্থিরতা এবং বিষাদগ্রস্ততার বিবরণ দিয়েছেন মিখাইল চেখভ। এই সময়টাতে মিখাইল চেখভ আইনশিক্ষার অংশ হিসেবে কারাগার নিয়ে গবেষণা করছিলেন, এবং ঐ একই সময়ে আন্তন চেখভ তার নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সন্ধান করছিলেন। এই অবস্থায় অল্পকালের মধ্যেই তিনি কারাগার সংস্কার সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি নিয়ে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।
১৮৯০ সালে, ট্রেনে ও ঘোড়ার গাড়িতে এবং নদীপথে স্টিমারে করে এক কষ্টকর ভ্রমণে বের হন চেখভ। তিনি দূরপ্রাচ্যের রাশিয়া-অংশে (বৈকাল হ্রদ ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি) ও জাপানের উত্তরে সাখালিন দ্বীপের কাতোর্গা বা বন্দীশিবির দর্শন করেন। এখানে তিনি একটি আদমশুমারির জন্য কয়েদিদের ও বসতি স্থাপনকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তিন মাস কাটান। সাখালিনে আড়াই মাস যাবত ভ্রমণকালে লেখা চিঠিগুলোকেই তার লেখা সেরা চিঠি হিসেবে গণ্য করা হয়।
তোমস্কের অধিবাসীরা চেখভের একটি বিদ্রূপাত্মক প্রতিমূর্তি নির্মাণ ও স্থাপন করে এর শোধ নিয়েছিলেন।
সাখালিনে কয়েদিদের বেত, চাবুক দিয়ে নির্দয়ভাবে প্রহার করা হতো, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ আত্মসাৎ এবং নারীদেরকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো যা চেখভ সেখানে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এই ব্যাপারগুলো চেখভকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছিল এবং তাকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল। তিনি লিখেছিলেন, "এমন সব সময় ছিল যখন আমার মনে হতো যে আমি আমার সামনে ব্যক্তির চরম মাত্রার মর্যাদাহানি দেখছি।"বিশেষ করে বন্দীশিবিরে বাবা-মা’র সাথে বাস করা শিশুদের দুর্দশা তাকে বিচলিত করেছিল।
পরবর্তীকালে চেখভ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বদান্যতা ও চাঁদার মাধ্যমে অর্থদানই এ অবস্থার সমাধান নয়, বরং কয়েদিদের প্রতি মানবিক আচরণ ও তাদের সুচিকিৎসার জন্য অর্থ সংস্থান করার দায়িত্ব সরকারেরই। তাঁর এই অনুসন্ধানের ফলাফল ১৯৮৩ এবং ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল অস্ট্রোভ সাখালিন (সাখালিন দ্বীপ) নামে, যা কিনা সাহিত্য নয় - সমাজবিজ্ঞানের কাজ -মূল্যবান ও তথ্যবহুল।চেখভের অপেক্ষাকৃত বড় দৈর্ঘ্যের ছোট গল্প দ্য মার্ডারার এর শেষ অণুচ্ছেদে রয়েছে সাখালিন, যেখানে ফেলে আসা নিজের বাড়ির জন্যে আকুল আকাঙ্ক্ষারত খুনি লোকটি রাতের বেলায় কয়লা বোঝাই করে।১৮৯২ সালে মস্কোর চল্লিশ মাইল দক্ষিণে মেলিখোভোতে একটি ছোট জমিদারি কিনে পরিবারসহ চেখভ সেখানেই বসবাস করেন ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত। “জমিদার হওয়ার ব্যাপারটি চমৎকার”, শ্চেগ্লোভকে ঠাট্টার ছলে বলেছিলেন তিনি। কৌতুক করলেও ভূম্যধিকারী হিসেবে তার দায়িত্ব তিনি আন্তরিকতার সাথেই গ্রহণ করেছিলেন এবং স্থানীয় কৃষকদের মাঝে অল্পকালের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন নির্ভরযোগ্য ও প্রয়োজনীয়। ১৮৯২ সালের কলেরা প্রাদুর্ভাব এবং দুর্ভিক্ষ উপদ্রুতদের জন্য ত্রাণের বন্দোবস্ত করা সহ চেখভ মেলিখোভোতে তিনটি বিদ্যালয়, একটি দমকল স্টেশন ও একটি বেসরকারি চিকিৎসালয় নির্মাণ করেছিলেন। ক্ষয়রোগের নিয়মিত পুনরাবৃত্তি সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে তিনি মাইলের পর মাইল ঘুরে কৃষকদের চিকিৎসা করেছেন।
মেলিখোভোতে চেখভ পরিবারের এক সদস্য, মিখাইল চেখভ, তার ভাইয়ের চিকিৎসাসেবা দানের ব্যাপ্তি বা পরিমাণের বিবরণ দিয়েছেন এভাবেঃ
চেখভ মেলিখোভোতে যাবার প্রথম দিন থেকেই বিশ মাইল দূরের স্থান থেকেও অসুস্থ মানুষেরা দলে দলে আসতে শুরু করেছিল। কেউ এসেছিল পায়ে হেঁটে, কেউবা দুই চাকার ঘোড়ার গাড়িতে করে, এবং তাঁকে প্রায়ই রোগী দেখার জন্য দূরে যেতে হতো। কখনো কখনো খুব সকাল থেকেই কৃষক নারীরা ও তাদের শিশুরা চেখভের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতো।
ঔষধের জন্য চেখভের যা খরচ হতো পরিমাণের দিক থেকে তা খুব বেশি না হলেও অসুস্থদের দেখতে যাওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা যাবত যাত্রায় তাকে যথেষ্ট খরচ স্বীকার করতে হতো। আর এটা তার লেখার সময়কেও কমিয়ে দিয়েছিল। যাইহোক, এই চিকিৎসক-বৃত্তির কারণেই চেখভ রুশ সমাজের সব স্তরের মানুষের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে যেতে পেরেছিলেন যা পরিণামে তার লেখালেখিকে আরও সমৃদ্ধ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তিনি স্বচক্ষে কৃষকদের যে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা স্মরণ করেছেন তার কৃষকেরা ছোট গল্পে। অভিজাত শ্রেণীর সংস্পর্শেও এসেছেন চেখভ, যার বিবরণ পাওয়া যায় তার নোটবইয়েঃ "অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা? সেই একই কদর্য ব্যক্তিরা এবং শারীরিক অশুচিতা, সেই একই দন্তহীন বৃদ্ধ বয়স এবং নিদারুণ বিরক্তিকর মৃত্যু, যেমনটা হয় বাজারে-মেয়েদের।"
মেলিখোভোর ফলবাগানে নির্মিত তার বাড়িতে চেখভ দ্য সীগাল নাটকটি লিখতে শুরু করেন। সেটা ছিল ১৮৯৪ সাল। মেলিখোভোর এস্টেটে চলে আসার দুই বছরের মধ্যে তিনি বাড়িটিকে আবার ঝকঝকে ও পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে তুলেছেন, কৃষিকাজ ও উদ্যানবিদ্যা নিয়ে পড়েছেন, পুকুর ও ফলবাগানের তত্ত্বাবধান করেছেন, এবং অনেক গাছ লাগিয়েছেন, যা কিনা মিখাইলের মতে, তিনি “দেখাশোনা করেছেন … এমনভাবে যেন ওগুলো তাঁর সন্তান। তাঁর থ্রী সিস্টার্স গল্পটির কর্নেল ভার্শিনিন এর মতোই যখনই তিনি তাঁর রোপণ করা গাছগুলোর দিকে তাকিয়েছেন, তিনশ বা চারশ বছর পরে এই গাছগুলিই কেমন হবে এ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন।”
১৮৯৬ সালের ১৭ই অক্টোবর পিটার্সবার্গের আলেক্সান্দ্রিনস্কি থিয়েটারে দ্য সীগাল নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। দর্শকদের অবজ্ঞাসূচক ধ্বনির মাঝে পরিবেশিত নাটকটির প্রথম রাতটি ছিল চরম ব্যর্থ। এরই প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ চেখভ আনুষ্ঠানিকভাবে থিয়েটার পরিত্যাগ করেন।কিন্তু এই নাটকটিই থিয়েটার পরিচালক ভ্লাদিমির নেমিরোভিচ-ড্যানচেঙ্কোর মনে এতোটাই রেখাপাত করেছিল যে তিনি তার সহকর্মী কনস্ট্যান্টিন স্ট্যানিস্লাভস্কিকে মস্কো আর্ট থিয়েটারে নাটকটি পরিচালনা করতে রাজি করান। এটা ১৮৯৮ সালের কথা। মনস্তাত্ত্বিক বাস্তববাদ ও দলের সামগ্রিক অভিনয়ের শৈল্পিক ঐক্যের প্রতি স্ট্যানিস্লাভস্কির মনোযোগ লেখার মূল পাঠে লুকিয়ে থাকা সূক্ষ্ণতার উপস্থিতির বিষয়ে প্ররোচনা দিয়েছে এবং চেখভকে ফিরিয়ে দিয়েছে নাটক লেখার আগ্রহ। এরপরে মস্কো আর্ট থিয়েটার চেখভকে আরও নাটক লেখার দায়িত্ব দেয় এবং এর পরের বছরে মঞ্চস্থ হয় আঙ্কল ভানিয়া। এই নাটকটি তিনি লিখে শেষ করেছিলেন ১৮৯৬ সালে।
১৮৯৮ সালে পিতার মৃত্যুর পরে চেখভ ইয়াল্টাতে শহরের প্রান্তদেশে একখণ্ড জমি কিনে তাতে একটি বাগানবাড়ি তৈরী করেন। এর পরের বছরেই মা ও বোনের সাথে তিনি এই বাড়িতে চলে আসেন। যদিও চেখভ ইয়াল্টাতে ফুলগাছসহ নানাবিধ গাছ লাগিয়েছেন, কুকুর পুষেছেন, পোষ মানিয়েছেন সারস পাখি এবং অতিথি হিসেবে পেয়েছেন লিও টলস্টয় ও ম্যাক্সিম গোর্কির মতো সাহিত্যিকদের, তারপরেও ইয়াল্টার অতি উষ্ণ আবহাওয়া নিয়ে তার অভিযোগ ছিল এবং ইয়াল্টা ছেড়ে মস্কো ও অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ করে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন। এমনকি তাগানরোগে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা সংস্থাপনের সাথে সাথে তিনি সেখানে ফিরে যাবেন, এমন প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন। ইয়াল্টা থাকাকালীন তিনি আর্ট থিয়েটারের জন্য আরও দুটি নাটক রচনা করেন। তবে এ দুটি নাটক রচনা করতে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয় যেখানে তিনি আগের দিনগুলিতে লেখালেখির ব্যাপারে, "যেভাবে আমি এখন একটি প্যানকেক খাই, তেমনি স্থির ও শান্তিপূর্ণভাবে লিখতাম", এমন মত প্রকাশ করেছেন। থ্রি সিস্টার্স ও দ্য চেরি অর্চার্ড, এ দুইটির প্রতিটি লিখতে তিনি এক বছর করে সময় নিয়েছিলেন।
বিয়েতে তার ভীতিকে স্বীকার করে নিয়েই চেখভ ১৯০১ সালের ২৫শে মে তারিখে ওলগা নিপারকে বিয়ে করেন। নেমিরোভিচ-ডানচেঙ্কোর অনুগ্রহভাজন ও কোনো এক সময়ে তার প্রণয়ী এই ওলগা নিপারের সাথে চেখভের প্রথম দেখা হয় দ্য সীগাল নাটকের মহড়ায়।এর আগে পর্যন্ত চেখভকে বলা হতো, "রাশিয়ার সবচেয়ে পলায়নপর সাহিত্যিক অকৃতদার।
এই চিঠির কথাগুলো চেখভ ও ওলগার বিবাহিত জীবনে ভবিষ্যদ্বাণীর মতো ফলে গিয়েছিল। তিনি বেশিরভাগ সময়ে ইয়াল্টাতেই থাকতেন। ওলগা থাকতেন মস্কোতে, সেখানে তিনি তার অভিনয় পেশা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯০২ সালে সন্তানসম্ভবা ওলগার গর্ভপাত ঘটে। অধ্যাপক ডোনাল্ড রেফিল্ড, যিনি রুশ লেখকদের নিয়ে লেখা বইয়ের সম্পাদক এবং রুশ সাহিত্য-সম্বন্ধীয় বইয়ের লেখক, এই দম্পতির লেখা চিঠির ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্যপ্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেন যে ওলগা যখন সন্তানসম্ভবা হন তখন চেখভ ও ওলগা একই স্থানে বসবাস করছিলেন না। যদিও রুশ পণ্ডিতেরা ডোনাল্ডের এই দাবি তর্কাতীতভাবে ভুল প্রমাণ করেছেন।তবে একে অপরের থেকে দূরে থাকার সময়ে তাদের মধ্যে যে চিঠি বিনিময় ঘটে, তার মাধ্যমেই সংরক্ষিত হয়েছে থিয়েটারের ইতিহাসের কিছু তথ্য ও ঘটনা যা মণিরত্নের মতোই দামি। এর মধ্যে রয়েছে স্তানিস্লাভস্কির পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের পারস্পরিক অভিযোগ ও চেখভের নাটকগুলিতে ওলগাকে অভিনয়ের পরামর্শদান।
ইয়াল্টাতে চেখভ তার একটি বিখ্যাত গল্প দ্য লেডি উইদ দ্য ডগ রচনা করেন।একজন বিবাহিত পুরুষ ও এক বিবাহিত নারীর মধ্যেকার আপাতদৃষ্টিতে অপরিকল্পিত ও অনিয়মিত যোগাযোগ নিয়েই এই গল্প। গল্পের নারী ও পুরুষটি তাদের সম্পর্ক স্থায়ী হবে এমন আশা করছে না, আবার সেই সাথে এটাও আবিস্কার করছে যে এই পারস্পরিক আকর্ষণ তাদের নিজ নিজ পারিবারিক জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।১৯০৪ সালের মে মাসের মধ্যেই চেখভ প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্ষয়রোগ চরম অবস্থায় পৌঁছে যায়। সেই অবস্থার কথা মিখাইল চেখভ এভাবে স্মরণ করেছেন, "যারা তাঁকে দেখতো তাদের প্রত্যেকেই গোপনে ভাবতো যে শেষ সময়ের আর বেশি দেরী নেই, কিন্তু শেষ সময়টা যতই নিকটবর্তী হচ্ছিলো তিনি যেন এটি ততটাই কম হৃদয়ঙ্গম করছিলেন।"জুনের তিন তারিখে তিনি ওলগার সাথে জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টের ব্যাডেনওয়েইলার শহরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এই শহরটিতে থাকার সময় তিনি তার বোন মাশাকে শহরের খাবার ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বাহ্যত আনন্দপূর্ণ কিছু চিঠি লিখেন। চিঠির মাধ্যমে তিনি তার মা ও বোনকে এই নিশ্চয়তা দেন যে শারীরিকভাবে তিনি আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন। তার শেষ চিঠিতে তিনি এমনকি জার্মান মেয়েদের পোশাক পরার ধরন নিয়েও অভিযোগ করেছেন।
চেখভের মৃত্যুর ঘটনাটি পরিণত হয় সাহিত্যের ইতিহাসে এক অসামান্য দৃশ্যপটের পরম্পরায়। যা তার মৃত্যুর পর থেকে বহুবার বর্ণিত হয়েছে। প্রতিবার নতুন করে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় বিশদ বর্ণনাসহ চেখভের শেষ সময়ের ঘটনাবলী লেখা হয়েছে। কখনো কখনো এতে যুক্ত হয়েছেকাল্পনিক খুঁটিনাটি, ফলে কিছুটা হলেও বদলে গেছে প্রকৃত তথ্য। এ বিষয়ে আমেরিকান লেখক ও কবি রেমন্ড কারভারের এর্যাণ্ড ছোটগল্পটি উল্লেখযোগ্য। ১৯০৮ সালে ওলগা তার স্বামীর শেষ মুহূর্তগুলো নিয়ে লিখেছেনঃ
খুব অদ্ভুতভাবে আন্তন শায়িত অবস্থা থেকে একেবারে সোজা হয়ে উঠে বসলেন এবং জার্মান ভাষায় (অথচ তিনি জার্মান ভাষা বলতে গেলে জানতেনই না) স্পষ্ট ও জোরগলায় বলে উঠলেন, “আমি মারা যাচ্ছি।” ডাক্তার তাঁকে শান্ত করলেন। একটি সিরিঞ্জের সাহায্যে তাঁকে কর্পূরের ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করলেন এবং আদেশ দিলেন শ্যাম্পেন আনার জন্য। চেখভ একটি পুরো গ্লাস ভর্তি শ্যাম্পেন নিয়ে তা পরীক্ষা করলেন কিছুক্ষণ, মৃদু হেসে আমাকে বললেন, “বহুদিন হলো আমি শ্যাম্পেন পান করিনা।” শ্যাম্পেন শেষ করে তিনি নীরবে শুয়ে পড়লেন এবং আমি শুধুমাত্র বিছানায় ঝুঁকে পড়ে তাঁর নাম ধরে ডাকার সময়টুকু পেলাম। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। একটি শিশুর মতো শান্ত হয়ে তিনি ঘুমাচ্ছেন...
চেখভের মরদেহ মস্কোতে বহন করে আনা হয়। নোভোদেভিচে সমাধিক্ষেত্রে তার পিতার পাশেই চেখভকে সমাহিত করা হয়।
1) ১৮৮৩ সালের আগস্টে একটি সাময়িকীর সম্পাদককে কিছু গল্পের সাথে পাঠানো এই চিঠির উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
"আমাদের সর্বোচ্চ কল্পনাশক্তি প্রয়োগ করে যতটা শোচনীয় পরিস্থিতির কথা আমরা ভাবতে পারি, ঠিক ততটাই শোচনীয় পরিস্থিতিতে আমি লেখালেখি করে থাকি । আমাকে নিষ্করুণ বিরক্ত করছে আমার সামনে পড়ে থাকা সাহিত্যের সাথে সম্পর্কহীন কিছু কাজ, লাগোয়া ঘরটিতে এক শিশু বেড়াতে আসা আমার এক আত্মীয়কে দেখে তীব্র চিৎকার করছে, অন্য একটি ঘরে আমার বাবা লেসকভের দ্য সীলড এঞ্জেল থেকে আমার মা’কে উচ্চকণ্ঠে পড়ে শোনাচ্ছেন [...] আমার বিছানা দখল করে নিয়েছে বেড়াতে আসা আত্মীয়রা, তাদের কেউ কেউ আমার সাথে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে আসছেন [...] এক তুলনাহীন পরিস্থিতি।"
১৮৮৩ সালে লেখা আন্তন চেখভের একটি চিঠি থেকে .
2) পিতার নির্মম আচরণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন:
"ভুলে যেয়োনা মিথ্যা আর নিষ্ঠুরতা তোমার মায়ের যৌবনকাল ধ্বংস করে দিয়েছে। ওই একই মিথ্যা আর নিষ্ঠুরতা আমাদের শৈশবও নষ্ট করে দিয়েছে, এতটাই যে সে অতীতের কথা স্মরণ করাটাও নিদারুণ বিরক্তির ও ভীতিপ্রদ। ভুলে যেয়োনা সেই বিতৃষ্ণা আর আতঙ্কের কথা, যা আমরা আমাদের বাবার প্রতি অনুভব করতাম যখন তিনি খাবার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন এবং স্যুপে বেশি লবণের জন্য মা’কে কটু কথা বলতেন।"
3) তিনি তাঁর শৈশবকে স্মরণ করেছেন এভাবে:
"যখন আমার ভাইয়েরা ও আমি গির্জার মাঝে দাঁড়াতাম এবং ত্রয়ী গাইতাম, “আমার প্রার্থনা হোক মহিমান্বিত” বা “দেবদূতের কণ্ঠস্বর”, সবাই আমাদের দিকে আবেগভরে তাকিয়ে থাকতো আর আমাদের পিতামাতাকে ঈর্ষা করতো। কিন্তু ঐ মুহূর্তে আমরা নিজেরা যেন কিছুটা দণ্ডিত অপরাধীর মতো অনুভব করতাম।"
4)তোমস্ক শহরটি সম্পর্কে তিনি তার বোনকে যে মন্তব্যটি করেছিলেন তা ছিল এমনঃ[
"তোমস্ক একটি ক্লান্তিকর নিষ্প্রভ শহর। নেশাগ্রস্ত যে ব্যক্তিদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে এবং যে ধীশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ আমার সাথে সাক্ষাৎ করে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন তাদের থেকে এই শহরের অধিবাসীদের মূল্যায়ন করে বলতে পারি, এর বাসিন্দারাও বিরক্তিকর।"
5) তিনি একবার সাভরিনকে লিখেছিলেনঃ
তুমি যদি চাও তো আমি অবশ্যই বিয়ে করবো। তবে এই শর্তেঃ সবকিছু তেমনই থাকবে যেমনটা আছে এখন পর্যন্ত, মানে তাকে অবশ্যই মস্কোতে থাকতে হবে যখন আমি গ্রামে থাকবো, এবং আমি তাকে দেখতে আসবো... আমাকে এমন একজন স্ত্রী দাও যে হবে চাঁদের মতো, আমার আকাশে উঠবে না প্রতিদিন।
6) তিনি একবার সাভরিনকে লিখেছিলেনঃ
"তুমি যদি চাও তো আমি অবশ্যই বিয়ে করবো। তবে এই শর্তেঃ সবকিছু তেমনই থাকবে যেমনটা আছে এখন পর্যন্ত, মানে তাকে অবশ্যই মস্কোতে থাকতে হবে যখন আমি গ্রামে থাকবো, এবং আমি তাকে দেখতে আসবো... আমাকে এমন একজন স্ত্রী দাও যে হবে চাঁদের মতো, আমার আকাশে উঠবে না প্রতিদিন।"
১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। শুরুতে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টার্স, দ্য সিগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। দ্য সিগাল নাটকটি ১৮৯৬ সালে মঞ্চস্থ হলে সেটি একেবারেই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। প্রবল বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এর মঞ্চায়ন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে চেখভ থিয়েটার বর্জন করেন। পরে ১৮৯৮ সালে এই নাটকটিই কনস্তান্তিন স্তানিস্লাভ্স্কির আগ্রহে মস্কো আর্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলে তা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মস্কো আর্ট থিয়েটার চেখভের আঙ্কল ভানিয়া নাটকটি প্রযোজনাসহ তার শেষ দুটি নাটক, থ্রি সিস্টার্স এবং দ্য চেরি অরচার্ড এর প্রথম প্রদর্শনীও করে। চেখভের চারটি নাটক দর্শক ও সকল অভিনয়শিল্পীদের সমন্বিত অভিনয়,এই দুইয়েরই অনেক সময় ও মনোযোগ দাবী করে। কারণ এই নাটকগুলিতে কোনো সনাতন বাহ্যিক নাট্যক্রিয়া নেই, এর পরিবর্তে মামুলি অকিঞ্চিৎকর সব বিষয়ে করা সংলাপে রয়েছে আবেগ, অনুভূতির অন্তঃস্রোতের প্রবাহ।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার : পুশকিন পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গী : ওলগা নিপার (বি. ১৯০১)
আত্মীয়:
আলেক্সান্দ্র চেখভ (ভাই)
মাইকেল চেখভ (ভ্রাতুষ্পুত্র)
লেভ নিপার (ভ্রাতুষ্পুত্র)
ওলগা চেখভা (ভ্রাতুষ্পুত্রী)
" চেখভের গল্পগুলো এখনও তেমনই বিস্ময়কর (এবং অপরিহার্য), যেমনটা ছিল প্রথম প্রকাশের সময়ে। শুধুমাত্র তাঁর বিপুল সংখ্যক গল্পের সম্ভারই নয় - খুব কম লেখকই, যদি আদৌ তেমন কেউ থেকে থাকেন, তাঁর চেয়ে বেশি লিখেছেন - তিনি যে বিস্ময়জনক হারে সেরা গ্রন্থ ও গল্প রচনা করেছেন তা যেমন আমাদের আধ্যাত্মিক মুক্তির অনুভূতি দেয়, তেমনি আনন্দিত ও আলোড়িতও করে। তাঁর লেখা রচনা আমাদের আবেগ অনুভূতিকে যেভাবে তুলে ধরে তা শুধুমাত্র সত্যিকারের শিল্পকর্মের পক্ষেই সম্ভব।"
================================
২।
রোমা রোলাঁ
জন্ম - ২৯ জানুয়ারি, ১৮৬৬ সালে।
শিল্পকলা ও সংগীত গবেষক রোলাঁ ১৯০৩ সালে সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
Vie de Beethoven (বেটোভেন-চরিত) প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে।
এরপর ১৯০৬ সালে মিকেলাঞ্জেলোর জীবনী ও ১৯১১ সালে তলস্তয়ের জীবনী রচনা করেছিলেন তিনি। জাঁ-ক্রিস্তফ তার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য রচনা।
তিনি মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও রচনা করেছিলেন।
১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে দশ খণ্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থটির জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। রোলাঁ ছিলেন একজন ভারতপ্রেমিক ও ভারততত্ত্ববিদ্।
১৯১৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন
তিনি ছিলেন ফরাসি নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও অধ্যাত্মবিদ । যার মৃত্যু হয় ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৪ সালে।
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
Wednesday 27 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
সংগ্রহযোগ্য বইয়ের আলোচনা
পর্ব -৫
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -265. Dt -28.01.2021
১৪ মাঘ, ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১।
গত কয়েক শতাব্দিতে পৃথিবীর বুক আলোকিত করে যে কয়জন মহান ব্যক্তি জন্ম নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন এ পি জে আবদুল কালাম। ‘উইংস অব ফায়ার’ ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পৃথিবীর একজন বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবুল কালাম-এর আত্মজীবনী।
একটি অল্প শিক্ষিত পরিবার থেকে উঠে এসে প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা, পরবর্তী সময়ে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “ভারতরত্ন” অর্জন করার পথের পুরোটাই উঠে এসেছে এই বইতে। বলেছেন তাঁর তৈরি অগ্নি, পৃথ্বী, আবাশ, ত্রিশুল ও নাগ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নেপথ্য-কাহিনী।
প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যখন উচ্চশিক্ষা শেষ করে বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, তখন যতজন লোক নিয়েছিলো বিমানবাহিনী, ঠিক তার পরের পজিশনেই ছিলেন এ পি জে আবুল কালাম। ব্যর্থতাকে খুব কাছ থেকে বারবার দেখা এই মানুষটির দর্শন, জীবন-চেতনা ও হার না মানা মনোভাবের খোঁজ পেতে চাইলে এই বইটি অবশ্যই পড়তে হবে আপনাদের। কেননা, তিনিই বলেছিলেন,
স্বপ্ন তা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।
২।
দু’হাজার বছরের পুরোনো সত্যকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যে একই দিনে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। সত্যটি জানাজানি হয়ে গেলে হাজার বছরের ইতিহাস লিখতে হবে নতুন করে। সত্যটি লালন করে আসছে একটি গুপ্ত সংঘ-সেই গুপ্ত সংঘের সদস্য ছিলেন আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, বত্তিচেল্লি আর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো ব্যক্তি।
ওদিকে উগ্র ক্যাথলিক সংগঠন ওপাস দাই সেই সত্যকে চিরতরে নির্মূল করার আগেই গুপ্তসংঘের গ্র্যান্ডমাস্টার তার ঘনিষ্ঠ একজনের কাছে হস্তান্তর করে দেয় আর ঘটনাচক্রে এরকম একটি মারাত্মক মিশনে জড়িয়ে পড়ে হার্ভাডের সিম্বোলজিস্ট এক প্রফেসর।
শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা, তথ্যবহুল লেখনি আর একের পর এক ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর ঘটনার এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ এই বইটি বিশ্বজুড়েই বেস্টসেলার। থ্রিলার ঘরানার বই ভাল লাগলে ড্যান ব্রাউনের এই বইটি নিশ্চয়ই আপনাদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।
৩।
আমরা সচরাচর যা ভাবি বা করি তা সাময়িক ভাবে সুফল বয়ে আনলেও, সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনাকে ব্যহত করতে পারে। যদি টিমওয়ার্ক ঠিকমতো না হয়, অনেক ভালো পরিকল্পনাও ব্যর্থ হতে পারে। এই বইটিতে বলা হয়েছে টিমওয়ার্ক কী এবং কীভাবে টিমওয়ার্ক এর মাধ্যমে ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
প্যাট্রিক লিঞ্চিওনির লেখা এই বইটি কেবল ব্যবসাক্ষেত্রেই নয়, কাজে লাগে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও। একটি টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে কোন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করতে হয়, এমন যেকোন মানুষের জন্যেই এটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
লীডারশিপের উপর দক্ষতা বাড়াতে কিংবা নেতৃত্বের খুঁটিনাটিগুলো শিখে নিতে, নিশ্চিন্তেই বেছে নিতে পারেন এই বইটি! বইটির অনুবাদক ফারজানা মোবিনের লেখার হাতও খুব চমৎকার। ছন্দে ছন্দে লেখাটিকে করে তুলেছেন সুখপাঠ্য এবং একেঘেয়েমি মুক্ত।
৪.
স্বাধীনতা মহাকাব্যের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেকেই গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে পাঠক বঙ্গবন্ধুর জীবনী এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের এমন অনেক অজানা তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে-যা আগে কোথাও পাওয়া যায়নি।
গ্রন্থটি মূলত শেখ হাসিনা লিখিত স্মৃতিকথামূলক আত্মজৈবনিক রচনা। যাতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক অজানা তথ্য। বইটি চারটি মূল অধ্যায়ে বিভক্ত হলেও এর ভেতর প্রতি অধ্যায়ে তিনটি করে অনুচ্ছেদ আছে। প্রথম দুই অধ্যায়ে পারিবারিক স্মৃতি থাকলেও তৃতীয় অধ্যায়ে লেখিকা ড.আবদুল মতিন চৌধুরী, বেগম জাহানারা ইমাম এবং নূর হোসেনকে নিয়ে স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই বইটির চেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র আর নেই।
৫।
লিও টলস্টয়ের 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' (১২৯৬ পৃষ্ঠা)
টলস্টয়ের মহাকাব্যটি রাশিয়ার নেপোলিয়ন যুগকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্র এবং হোম ফ্রন্টের মধ্যে তিনটি কুখ্যাত চরিত্রকে ঘিরে গল্প এগিয়ে যায়।
চরিত্র তিনটি হল: পেরে বেজুখভ, একজন কাউন্টের অবৈধ পুত্র যিনি নিজের উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই করছেন; প্রিন্স আন্দ্রেই বলকনস্কি, যিনি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাঁর পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছেন; এবং নাতাশা রোস্তভ, একজন অভিজাত ব্যক্তির সুন্দরী অল্পবয়সী মেয়ে।
টলস্টয় একইসাথে সেনাবাহিনী এবং অভিজাতদের উপর যুদ্ধের প্রভাব কেমন হয়, সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন।
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
Tuesday 26 January 2021
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। মীর মশাররফ হোসেন । একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তার পুরো নাম সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম। Dt -13.11.2024. Vol -1051. Wednesday. The blogger post in literary e magazine.
মীর মশাররফ হোসেন (নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ডিসেম্বর ১৯, ১৯১২) একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তার পুরো নাম সৈয়দ মীর মশাররফ হোসে...
-
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তীতে দৈনিক শব্দের মেঠোপথ পত্রিকার উদ্যোগে পরিবারের সঙ্গে ৮ম মাসিক সাহিত্য বিকেলের আড্ডা ও বর্ণ...
-
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালে বাংলাদেশের সিলেটে। তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস নিয়ে তিনি পড়াশোন...
-
‘ কী গাব আমি কী শোনাব" গানটির সুর এখনো কানে ভেসে আসে , শিল্পী বেঁচে নেই কিন্তু তার সৃষ্টি সভ্যতা ও সংস্কৃতির অলিতে গলিতে এখনো সুরেলা ...