∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
আজিজুর রহমান
===========//////////////==============
Doinik Sabder Methopath
Vol -255. Dt -18.01.2021
৪ মাঘ, ১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷/)>)//////)>/////÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১৯৫৪ সালে আজিজুর রহমান ঢাকা বেতারে (বর্তমান বাংলাদেশ বেতার) নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে আলাপনী শীর্ষক একটি কিশোর মাসিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক পয়গামের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন।
আজিজুর রহমান দুই হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন।
জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
তিনি প্রায় ৩ হাজারের অধিক গান লিখেছেন -
ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে,
কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে ,
আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে,
পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি,
আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি,
বুঝি না মন যে দোলে বাঁশিরও সুরে,
দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো,
পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমারই দেশ ভাই রে প্রভৃতি।
গ্রন্থ
ডাইনোসরের রাজ্যে (১৯৬২)
জীবজন্তুর কথা (১৯৬২)
ছুটির দিনে (১৯৬৩)
এই দেশ এই মাটি (১৯৭০)
উপলক্ষের গান (১৯৭০)
ডাইনোসরের রাজ্যে’, জীবজন্তুর কথা, আবহাওয়ার পয়লা কেতাব’ তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদগ্রন্থ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থপঞ্জির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘আজাদীর বীর সেনানী : কুমারখালীর কাজী মিয়াজান’, পাঁচমিশালী গানের সংকলন- উপলক্ষের গান, দেশাত্মবোধক নিজস্ব গানের সংকলন- এই মাটি এই মন, ছুটির দিনে
তিনি প্রায় ৩০০-এর উপরে কবিতা রচনা করেছেন। তার মধ্যে নৈশনগরী, মহানগরী, সান্ধ্যশহর, ফেরিওয়ালা, ফুটপাত, তেরশপঞ্চাশ, সোয়ারীঘাটের সন্ধ্যা, বুড়িগঙ্গার তীরে, পহেলা আষাঢ়, ঢাকাই রজনী, মোয়াজ্জিন, পরানপিয়া, উল্লেখযোগ্য।
আজিজুর রহমান ১৯৩১ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের ফজিলাতুন নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ৩ ছেলে ৪ মেয়ে রয়েছে।
আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে যে বাড়িটিতে কবি আজিজুর রহমান বহু বছর ধরে ভাড়া থাকতেন কবির মৃত্যুপরবর্তীকালীন সে বাড়িটি বাংলাদেশ সরকার কবি পরিবারকে দান করেছিলেন l এই বাড়িটি পরবর্তীতে কবি পরিবার কর্তৃক কবির স্মৃতি সংরক্ষনস্বরুপ ‘কবি আজিজুর রহমান সাহিত্য পরিষদ” নামে প্রাতিষ্ঠানিক নামাংকিত করা হয় l
কবি আজিজুর রহমান ঢাকা বেতারের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরিতে বহাল ছিলেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত দৈনিক পয়গামের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর পিতামহ চাঁদ প্রামানিকের নামে হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বইয়ের খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তার সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল প্রবল। তিনি একাধারে কুষ্টিয়া হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া (নদীয়া) ফুড কমিটির সেক্রেটারি, বেঞ্চ অ্যান্ড কোর্ট ডিভিশনের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলা বোর্ড ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যের পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন। ছাত্র থাকা অবস্থায় মুসলিম ছাত্র আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও আজিজুর রহমানের কিছু পরিচয় আছে। অধুনালুপ্ত দৈনিক পয়গম পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিশোর মাসিক ‘আলপনী’রও সম্পাদক ছিলেন তিনি। কবি আজিজুর রহমানই প্রথম তার জন্মস্থান কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস রচনায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া ইতিহাসের বহু মূল্যবান তথ্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করেছিলেন; কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় তিনি কুষ্টিয়ার ইতিহাস রচনা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।
গীতিকার হিসেবে কবি আজিজুর রহমান এদেশের এক বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ঢাকার প্রায় প্রখ্যাত সুরকাররা যেমন আজিজুর রহমানের গানে সুর দিয়েছেন তেমন তাঁর গানও গেয়েছেন খ্যাতনামা বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্পীই। চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছেন। রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, আগুন্তক প্রভৃতি ছায়াছবিতে তিনি গান রচনা করেছেন। বস্তুতঃ গানের মাধ্যমেই তিনি অধিক পরিচিতি পান।
তিরিশের দশকে আজিজুর রহমান সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ধনাঢ্য পিতার সন্তান সাহিত্যের আকর্ষণে বিষয় সম্পত্তি পেছনে রেখে কলকাতা-ঢাকা নগরীতে উদ্বাস্তুর জীবন কাটিয়েছেন। কৈশোরে পারিবারিক পরিবেশেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট ও অন্তরঙ্গ পরিচয় ঘটে। পুঁথিপাঠ, কবিগান, মরমিয়া গীতি, যাত্রাভিনয় ইত্যাদি উপভোগ করে তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত হন এবং প্রবলভাবে সাহিত্যচর্চায় আত্ননিয়োগ করেন। সাহিত্যচর্চা শুরুর আগে নাটকে অভিনয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল বেশি। তিনি গড়ে তোলেন একটি নাট্যদল। নাট্যদলটি নাটক মঞ্চস্থ করত শিলাইদহের ঠাকুর বাড়িতে। এ কাজের জন্য সে সময় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সে কালের বিশিষ্ট অভিনেতা ধীরেন দত্ত, উপেশ ঠাকুরসহ বিভিন্ন নামিদামি অভিনেতারা অংশগ্রহণ করতেন তার নাট্যদলে। সমাজসেবায় কবি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ। ১৯৫৪ সালে কবি আজিজুর রহমান ঢাকা বেতারে গীতিকার হিসেবে অনুমোদন পান। বেতারের সাথে যোগাযোগ কবি আজিজুর রহমানের সাহিত্যিক জীবনের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কবি আজিজুর রহমান কবিতা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও গান রচনার মধ্যে তার প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। ফররুখ আহমদ তাঁকে ঢাকা বেতারে নিয়ে যান।
তিনি ১৯৭৯ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আজিজুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment