∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন
জুল গাব্রিয়েল ভার্ন
==========∆∆∆∆∆∆∆==============
Doinik Sabder Methopath
Vol - 276. Dt -08/02/2021
২৫ মাঘ, ১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆∆∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
"কল্পনার পাখায় ভর দিয়ে ভেসে বেড়াতেন তিনি। তবে তিনি তাঁর কল্পনাকে শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বজোড়া কল্পবিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকের কাছেও!"
তিনি জুল ভার্নে(Jules Gabriel Verne), ৮ ফেব্রুয়ারি ১৮২৮ সালে ফ্রান্সের পশ্চিমে বিস্কে উপসাগরের তীরে অবস্থিত নঁত নামের বন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পিয়েরে ভার্ন, এবং মা সোফি অ্যালো দে লা ফুয়। তাঁর শৈশবকাল কাটে এখানকার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তারা গ্রীষ্মকাল কাটাতেন নঁতের কাছেই ব্রে শহরে। সেখানে ভার্ন ও তার ভাই পল প্রায়ই এক ফ্রাঁ দিয়ে এক দিনের জন্য নৌকা ভাড়া নিতেন। ভার্নের মতে, নদীতে প্রচুর জলযানের চলাচলের দৃশ্য তার কল্পনাশক্তির স্ফুরণ ঘটায়। ১২ বছর বয়সে জাহাজের কেবিনবয় হিসেবে কাজ নিয়ে বাড়ী থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন এখন থেকে নিজের মনের মধ্যেই ঘুরে বেড়াবেন। বাবার ইচ্ছায় আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে বেশ প্রসার লাভ করেন। অভিযানপ্রিয় জুল ভার্ন খুব দ্রুত বিরক্ত হন এ পেশার প্রতি এবং আইন ব্যবসা ছেড়ে পাড়ি জমান আমেরিকাতে ১৮৬৭ সালে।
দাম্পত্যসঙ্গী : অনরাইন হেবে দু ফ্রাইসি দ্য ভিয়ানে (মরেল) ভার্নে।
সন্তান : মাইকেল ভার্নে এবং সৎ কন্যা - ভ্যালেন্টাইন ও সুজানে মরেল।
সাহিত্যাঙ্গনে ভার্নের প্রবেশ ঘটে মঞ্চনাটক লেখার মাধ্যমে। তার লেখা মঞ্চনাটক বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তার লেখা প্রথম বই বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ অত্যন্ত অবাস্তব বলে কোন প্রকাশক ছাপতে রাজী না হওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে এর পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়িয়ে ফেলার সময় তার স্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা রক্ষা পায়। পরে এ বইটি প্রকাশিত হলে রাতারাতি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড ঘরকুনো এই লেখক তার বাড়ীর চিলেকোঠায় বসেই লিখে গেছেন বিশ্বমাতানো সব কল্পবিজ্ঞান কাহিনী। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে ফিলিয়াস ফগ্, ক্যাপ্টেন নিমো, রোবার ও ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও নানা সাহেবের ইতিহাস আশ্রিত তার উপন্যাস টাইগার্স এন্ড ট্রেটস-এ অবিভক্ত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়।
রচনা কর্ম :
উপন্যাস :
১৮৫৯ : ভোয়াইয়াজ আ রকুলোঁ অনংলতের এ অনেকস (Voyage à reculons en Angleterre et en Écosse)-- ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে পশ্চাৎমুখী ভ্রমণ--
১৮৬২ : ল্য কোঁত দ্য শঁতলেন (Le Comte de Chanteleine)-- শঁতলেনের কাউন্ট—The Count of Chanteleine
১৮৬৩ : সাঁক সমেন অঁ বালোঁ (Cinq semaines en ballon)-- বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ-- Five Weeks in a Balloon
১৮৬০ : পারি ও ভাঁতিয়েম সিয়েক্ল (Paris au XXe siècle)-- বিংশ শতকের প্যারিস-- Paris in the Twentieth Century
১৮৬৪-১৮৬৭ : লেজাভন্তুর দু কাপিতেন আতেরা (Les Aventures du capitaine Hatteras) -- ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাসের অভিযান-- The Adventures of Captain Hatteras
১৮৬৪ : ভোয়াইয়াজ ও সঁত্র্ দ্য লা তের (Voyage au centre de la Terre)-- ভূকেন্দ্রে অভিযান-- A Journey to the center of the Earth
১৮৬৫ : দ্য লা তের আ লা লুন (De la Terre à la Lune)-- পৃথিবী থেকে চাঁদে/ চাঁদে অভিযান (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)-- From the Earth to the Moon
১৮৬৬-১৮৬৮ : লেজঁফঁ দু কাপিতেন গ্রঁ (Les Enfants du Capitaine Grant)-- ক্যাপ্টেন গ্রান্টের শিশুদের খোঁজে
১৮৬৯ : ভাঁত মিল লিও সু লে মের (Vingt mille lieues sous les mers)-- সাগরের তলে বিশ হাজার লিগ/ পাতাল অভিযান (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)-- Twenty Thousand Leagues Under the sea
১৮৬৯ : ওতুর দ্য লা লুন (Autours de la Lune)-- চাঁদ প্রদক্ষিণ-- Around the Moon
১৮৭০ : লোঁক্ল্ রোবাঁসোঁ (১৯৯৩ সালে প্রকাশিত) (L'oncle Robinson)
১৮৭০-১৮৭৪ : ল শঁসেলর (Le Chancellor)-- The Chancellor
১৮৭০ : আভঁতুর দ্য ত্রোয়া রুস এ দ্য ত্রোয়া জংলে দঁ লাফ্রিক ওস্ত্রাল (Aventures de trois Russes et de trois Anglais dans l'Afrique australe)-- তিন ইংরেজ ও তিন রুশের দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযান-- The Adventures of Three Englishmen and Three Russians in South Africa
১৮৭১ : উন ভিল ফ্লোতঁত (Une ville flottante]]-- ভাসমান শহর—The Floating City
১৮৭১-৭২ : Le Pays des fourrures-- --The Fur Country
১৮৭২ : Le Tour du monde en quatre-vingts jours—আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ—Around the World in Eighty Days
১৮৭৩-75 : L'Île mystérieuse—রহস্যময় দ্বীপ-- The Mysterious Island
১৮৭৪-75 : Michel Strogoff—মাইকেল স্ট্রগফ (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)-- Michael Strogoff
১৮৭৪-৭৬ : Hector Servadac—ধূমকেতুতে চড়ে-- Hector Sarvadac/ Off on a Comet
১৮৭৬-৭৭ : Les Indes noires—গুহার শিশুরা/ পাতাল শহর—The Black Indies/ Black Diamonds/ The Underground City/ The Children of the Cavern
১৮৭৭-৭৮ : Un capitaine de quinze ans—পনের বছরের ক্যাপ্টেন-- Dick Sand, A Captain at Fifteen
১৮৭৮ : Les Tribulations d'un chinois en Chine—ট্রিবিলিউশন অফ অ্যা চাইনিজ জেন্টেলম্যান (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)-- Tribulations of a Chinese Gentleman
১৮৭৯ : Les Cinq Cents Millions de la Bégum—বেগমের রত্নভান্ডার (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)-- The Begum's Fortune
১৮৭৯ : La Maison à vapeur—বাষ্পঘর—The Steam House
১৮৮০ : La Jangada—আমাজনে আট হাজার লিগ-- Eight Hundred Leagues on the Amazon
১৮৮১ : L'École des Robinsons—রবিনসনদের জন্য বিদ্যালয়/ স্কুল ফর রবিনসন্স (সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নাম)
১৮৮১ : Le Rayon vert—সবুজ রশ্মি-- The Green Ray
১৮৮২ : Kéraban-le-Têtu—অনমনীয় কিরাবান --Kéraban the Inflexible
১৮৮৩ : Archipel en feu—অগ্নি দ্বীপপুঞ্জ—The Archipelago of Fire
১৮৮৩ : L'Étoile du sud-- --The Vanished Diamond
১৮৮৩-৮৪ : Mathias Sandorf--
১৮৮৪ : L'Épave du «Cynthia» (André Laurie এর সহায়তায়)
১৮৮৫ : Robur le conquérant—সর্বাধিকারী রোবার—Robur the Conqueror/ The Clipper of the Clouds
১৮৮৫ : Un billet de loterie
১৮৮৫-৮৬ : Nord contre Sud
১৮৮৫ : Le Chemin de France
১৮৮৬-৮৭ : Deux ans de vacances
১৮৮৭-৮৮ : Famille-sans-nom—নামবিহীন পরিবার-- Family Without a Name
১৮৮৮ : Sans dessus dessous—উত্তর মেরুর ক্রয়—The Purchase of the North Pole
১৮৮৯ : Le Château des Carpates—কারপাথিয়ার প্রাসাদ--The Carpathian Castle
১৮৮৯ : César Cascabel
১৮৯০ : Mistress Branican
১৮৯১ : Claudius Bombarnac
১৮৯১ : P'tit-Bonhomme
১৮৯১ : La Journée d'un journaliste américain en 2890
১৮৯২ : Mirifiques aventures de maître Antifer
১৮৯৩ : L'Île à hélice
১৮৯৩ : Un drame en Livonie (revu en 1903 et publié en 1904)
১৮৯৪ : Le Superbe Orénoque
১৮৯৪ : Face au drapeau
১৮৯৫ : Clovis Dardentor
১৮৯৫ : Le Sphinx des glaces
১৮৯৬ : Le Village aérien (publié en 1901 sous le titre La Grande Forêt)
১৮৯৬ : Seconde patrie
১৮৯৭ : Le Testament d'un excentrique
১৮৯৭-৯৮ : En Magellanie, le fils de Jules Verne a modifié le manuscrit de son père et l'a édité sous le nom de Les Naufragés du « Jonathan »
১৮৯৮ : Le Secret de Wilhelm Storitz (revu en 1901 et publié seulement en 1985)
১৮৯৮ : Les Frères Kip
১৮৯৯ : Les Histoires de Jean-Marie Cabidoulin
১৮৯৯ : Bourses de voyage
১৮৯৯-১৯০০ : Le Volcan d'or (publié seulement en 1989)
১৯০১ : Le Beau Danube jaune
১৯০১ : Le Phare du bout du monde—পৃথিবীর শেষ সীমান্তের বাতিঘর—The Lighthouse at the End of the World
১৯০১ : La Chasse au météore—সোনালি উল্কার পশ্চাদ্ধাবন—The Chase of the Golden Meteor
১৯০১ : Le Pilote du Danube—দানিয়ূবের নাবিক-- The Danube Pilot
১৯০২ : L'Invasion de la mer—সমুদ্র আক্রমণ—Invasion of the Sea
১৯০২-০৩ : Maître du Monde—পৃথিবীর রাজা-- Master of the World
Recueils de nouvelles
১৮৭৪ : Le Docteur Ox
১৯১০ : Hier et demain
Conte fantastique
১৮৫৪ : Maître Zacharius ou l'horloger qui avait perdu son âme
পৃথিবীতে আগাথা ক্রিস্টির পরেই তার লেখা সবচেয়ে বেশি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা বেশ কিছু কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র ও নাটকও নির্মিত হয়েছে।জুল ভার্নের লেখনীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে তার ভবিষ্যৎ দর্শন। তিনি তার বইগুলোতে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বা আবিষ্কারের কথা কল্পনা করেছেন, যা আজকের দিনে বর্তমান ও বাস্তব। জুল ভার্ন বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন না কোনো ভূতত্ত্ববিদও। তিনি তার চিলেকোঠার ঘরটিতে বসে যে বইগুলো রচনা করেছেন তার মূল ইন্ধন জুগিয়েছে বিজ্ঞান ও ভূগোল সম্পর্কে তার অদম্য কৌতূহল আর তাতে রং ঢেলেছে তার ব্যতিক্রমী কল্পনাশক্তি। ‘টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দ্য সী’তে নটিলাস নামক যে ডুবোজাহাজের কল্পনা তিনি করেন, তার বাস্তব রূপ হিসেবে আমরা প্র্যরছি আজকের সাবমেরিন। উড়োজাহাজ তৈরী যখন কল্পনাতীত, তখন ‘ইন টু দ্য নাইজার ব্যান্ড’ বইয়ে দেখি ‘হেলিপ্ল্যান(হেলিকপ্টার+এরোপ্ল্যান)’ যন্ত্রকে উড়তে। মরুভূমিতে পানির দেখা পাওয়া যখন নিছক আকাশকুসুম চিন্তা, তখন ‘সিটি ইন দ্য সাহারা’তে জুল ভার্ন রীতিমতো একটি শহর গড়ে তোলেন! ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা রাখেন, কিন্তু তার প্রায় ১০০ বছর আগেই জুল ভার্নের কল্পনা পৌঁছে গেছিলো তাতে। ‘জার্নি টু দ্য মুন’ বইয়ে তাই তো দেখি! জগদীশ চন্দ্র যখন বেতারের ধারণাও দেন নি, ‘কার্পেথিয়ান ক্যাসল’ বইয়ে জুল ভার্ন বেতারের আভাস দেন তার পাঠকদের। জুল ভার্নের কল্পনাপ্রবণ চিন্তার প্রবলতা সত্যি সেসময়ের পাঠক হলেই বোঝা যেতো ভাল করে, কারণ এখনতো এগুলো আমাদের দৈনন্দিন বাস্তব!
বাংলাদেশের সেবা প্রকাশনী থেকে জুল ভার্নের বইয়ের অনেক অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার ‘টাইগার্স এন্ড ট্রেইটর্স’ উপন্যাসটি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও নানা সাহেবের ইতিহাস আশ্রিত একটি উপন্যাস, এতে অবিভক্ত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে।
জুল ভার্নের পুরষ্কার তালিকার শোভাবর্ধন করেছে ফ্রান্স সাহিত্য একাডেমীর ‘অর্ডার অব মেরিট’ এবং ইংল্যান্ড রয়েল একাডেমীর সম্মানসূচক সদস্যপদও।
১৯০৫ সালের ২৪শে মার্চ ফ্রান্সের আমিয়েন্সে ডায়াবেটিসের কারণে জুল ভার্ন মৃত্যুবরণ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। আমিয়েন্সে জুল ভার্নের একটি স্মারকসৌধও আছে।
ফ্রান্স সাহিত্য অ্যাকাডেমি তাঁকে "অর্ডার অব মেরিট" সম্মানে ভূষিত করে। জুল ভার্ন ইংল্যান্ড রয়াল অ্যাকাডেমির সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন।
No comments:
Post a Comment