জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
অতুলচন্দ্র গুপ্ত
বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম একটি নাম "সবুজপত্র " । ১৯১৪ সালে যার প্রকাশ কে ঘিরে নতুন সবুজ ভাবনার ক্যানভাস । এমনি ক্যানভাসের নান্দনিক অভিনন্দিত প্রকাশ "বৈজ্ঞানিক ইতিহাস" রচনাটি। লেখক অতুলচন্দ্র গুপ্ত । বৈজ্ঞানিক মনোবিষ্ট রচনাশৈলীর নান্দনিক শিল্পকর্মে উজ্জ্বল। রচনাটি প্রকাশ মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন তোলে, শুধু বন্ধু প্রমথ চৌধুরীর এই পরিচয়ে নয়, সমাজ- শিক্ষা- ইতিহাস-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে বহুমুখী রসতত্ত্ব জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা ও আলোচনা অচিরে তাঁকে সম্মানিত করেন।
তিনি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার বিল্লাইক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম উমেশচন্দ্র গুপ্ত। তিনি ছিলেন আইনজীবী। আইন ব্যবসার কারণে উমেশচন্দ্র সপরিবারে রংপুরে বসবাস শুরু করেন। এই কারণে অতুলচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় রংপুরে।১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে অতুলচন্দ্র রংপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি ও দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'কার্লাইল সার্কুলার-বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এম.এ পাশ করেন। এবং ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর কিছুদিন তিনি রংপুর জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে রংপুরেই তিনি আইন ব্যবসা শুরু করেন১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করে।১৯১৮ খ্রিষ্টব্দে তিনি কলকাতা বিশববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে রোমান ল' ও জুরিসপ্রূডেন্সের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন । ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপনা ত্যাগ করে তিনি পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে যান এবং ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবিরৃপে স্বীকৃতি লাভ করেন।
রচনা কর্ম :
১) শিক্ষা ও সভ্যতা-১৩৩৪
২) কাব্যজিজ্ঞাসা-১৩৩৫
৩) নদীপথে-১৩৪৪
৪) জমির মালিক-১৩৫১
৫) সমাজ ও বিবাহ-১৩৫৩
৬) ইতিহাসের মুক্তি -১৩৬৪
সম্মাননা ও পুরস্কার :
১ Trading with the Enemy' নামক একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অনাথনাথ দেব পুরস্কার' লাভ করেন। (১৯১৮)
২) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি.এল. উপাধি লাভ করেন (১৯৫৭)।
পেশায় ব্যারিস্টার হলেও তিনি হৃদয় ভিত্তিতে ছিলেন কোমল এবং স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ ।নগেন্দ্রনাথ সেন বাল্যকালেই তাঁর মনে দেশাত্মবোধ সঞ্চারিত করেছিলেন। তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বাধীন বিচার বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হতেন ।প্রধানত ব্যবহারজীবী তত্ত্বের ব্যাখ্যাতা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও সমাজের নানান জ্ঞানগর্ভ আলোচনা বহুমুখী প্রতিভাধর মনীষী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে ন।
কাব্যজিজ্ঞাসা গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন -" ১৩৩৩ সালের সবুজপত্র কাব্যজিজ্ঞাসা নামে আমার যে কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছিল সেই বইখানি উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না করে সেই প্রবন্ধগুলি একত্র সংগ্রহ মাত্র ।"
আনন্দবর্ধন অভিনবগুপ্ত এই দুই আলংকারিক এর মত তথা সংস্কৃত আলংকারিক দের বিচার মীমাংসার পরিচয় ওনানানা আলোচনা এখানে তিনি যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন শুধু তাই নয় -" তাদের নানা স্থানে ছড়ানো মত কথা কে একসঙ্গে সাজিয়ে থাকতে হয়েছে যার সুতোটি আমার মাঝে মাঝে তাদের কথাকে প্রাচীন পরিচ্ছদ ছাড়িয়ে হালের পোশাকে উপড়াতে হয়েছে কিন্তু জ্ঞানতঃ তাদের মদ কথাক বিকৃত করে আধুনিক মদ কথার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চেষ্টা করিনি।"
প্রাবন্ধিকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটির ৫ টি অধ্যায় - ধ্বনি, রস, কথা, ফল ও সাহিত্য। গ্রন্থটি অলংকার শাস্ত্রের আকর গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ধ্বনিবাদ এবং রসবাদ নিয়ে বিভিন্ন আলংকারিকে মত ও তাদের মতের প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উদাহরণ পাঠক মহলকে যেমন আকৃষ্ট করে, তেমনি ভারতবর্ষের প্রাচীন সাহিত্য ও সংস্কৃতি দর্শন ও প্রাচীন আলংকারিক দের প্রসঙ্গ এনে গ্রন্থটি ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ যুগিয়েছে।
এছাড়া তাঁর "রবীন্দ্রনাথ ও সংস্কৃত সাহিত্য "প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ রচনা সংস্কৃত সাহিত্যের সৌন্দর্যময় প্রতিফলন নিপুণভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে ইতিহাসের মুক্তি রচনা তিনি ভারতবর্ষের ইতিহাস ইতিহাস এর তাৎপর্য ঐতিহাসিক ও কবির পার্থক্য যুক্তি পরম্পরা প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করেছেন. তিনি আরো বলেছেন
- " মানুষ অতীতের মধ্যে নিজেকে দেখতে চায় ভবিষ্যতকে নিজের স্পর্শ দিতে চায়। ইতিহাস এই আশঙ্কার নিবৃত্তির উপায় কিন্তু যারা ইতিহাসে লেখে বা ইতিহাস পড়ে তারা একথা মানতে রাজি নয় যে ইতিহাসের কাজ মানুষ সম্বন্ধে মানুষের কৌতূহল মেটানো। "
তিনি একাধারে পন্ডিত, রসবেত্তা, যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তার জ্ঞানগর্ভ আলোচক, প্রাবন্ধিক এবং ভাষার প্রাঞ্জল স্রষ্টা ছিলেন।
১৯৬১ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik Sabder Methopath
Vol -308.Dt -12.03.2021
২৭ ফাল্গুন, ১৪২৭. শুক্রবার
=================================
No comments:
Post a Comment