Wednesday, 24 March 2021


  •              দারিও ফো

  • ১৯২৬ সালের ২৪শে মার্চ ছোট্ট শহর লেক মাগজোরের সান জানোতে জন্মগ্রহণ করেন দারিও ফো.তিনি ইতালির নোবেলজয়ী নাট্যকার । বহু গুণের অধিকারী: কমেডিয়ান, নাট্যপরিচালক, মঞ্চপরিকল্পনাকারী, গায়ক, গীতিকার, আঁকিয়ে, রাজনৈতিক প্রচারক—এ রকম নানা গুণের সমারোহে বর্ণিল ছিল তাঁর কর্মময় জীবন। আশিটিরও অধিক নাটক রচনা করেন তিনি। দারিও তাঁর অনেক নাটকই রচনা করেছেন স্ত্রী ফ্রাংকা রেইমের সঙ্গে যৌথভাবে। দারিওর মানস গঠন ও পেশাগত জীবনের সাফল্যের পেছনে কয়েকটি বিষয় সরাসরি কাজ করেছে। তাঁর পারিবারিক আবহ থেকে পেয়েছেন লেখালেখি ও নাটকবিষয়ক যাবতীয় প্রেরণা। মা পিনা রোটা ছিলেন লেখক। বাবা ফেলিস রেলওয়েতে চাকরি করলেও অবসর কিংবা ছুটিতে সময় পেলেই অভিনয় করতেন। দারিওর ছোট ভাই ফুলভিও নাটকের জগতের মানুষ। তিনি নাট্যপ্রশাসকের কাজ করেছেন। তাঁদের ছোট বোন বিয়াংকা গারামবোইসও লেখক। একই ধারায় চলে এসেছে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মও। দারিও ও ফ্রাংকার ছেলের নাম জ্যাকোপো। তিনিও একজন লেখক। আর দারিও গল্প বলার অভ্যাসটি পেয়েছিলেন তাঁর নানার কাছ থেকে এবং ইতালির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত লোম্বার্ডি এলাকার জেলেদের কাছ থেকে।
  • স্ত্রী: Franca Rame (বিবাহ. ১৯৫৪–২০১৩)
                    দারিও খ্যাতির পেছনে প্রধানত যে দুটি নাটক বেশি ভূমিকা রেখেছে, সে দুটি হলো—‘মিস্টারো বুফো’ এবং ‘অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’। পরবর্তী দশকগুলোতে ‘মিস্টারো বুফো’ বারবার পরিমার্জন করেছেন। রাজনীতি ও ধর্ম সম্পর্কে সাংঘাতিক কমেডি করেছেন এ নাটকে। নাটকটির ১৯৭৭ সালের পরবর্তী সংস্করণ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। গির্জার কর্তৃপক্ষ যথারীতি নিন্দা প্রকাশ করে। টেলিভিশনের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে জঘন্য ঈশ্বরবিরোধী নাটক বলা হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নাটকের প্রতি কর্তৃপক্ষীয় বিরূপ আচরণ সম্পর্কে নোবেল ভাষণে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার এবং আক্রমণ সহ্য করতে হয়েছে; ডানপন্থী চিন্তার লোকদের অপমানজনক আচরণ ও সহিংসতা হজম করতে হয়েছে।’ উল্লেখ্য, নাটকে পুলিশের সমালোচনা তুলে ধরার অপরাধে ইতালির ফেডারেল পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন তাঁর স্ত্রী। দারিও মানসের বিশেষ একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, মানসিক শক্তি ও কঠোরতা। নাটকে সমাজের কতিপয় মানুষের তীব্র সমালোচনা করার জন্য সমাজের অনেক শক্তিই দারিওর বিরোধিতা করেছে, নির্যাতনও করেছে কখনো কখনো। তবু চুপ থাকেননি তিনি। কখনো কখনো উচিত কথা বলতে সমাজের সংখ্যাগুরুদের বিপক্ষেও গিয়েছেন দ্বিধাহীনচিত্তে। যেমন আমেরিকার ৯/১১ আক্রমণের পরপরই মন্তব্য করে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার অর্থনীতি প্রতিবছর কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের অস্ত্রে হত্যা করে। নিউ ইয়র্কে ২০ হাজার মারা গেছে তো কী হয়েছে? সহিংসতা, ক্ষুধা আর অমানবিক শোষণের ঐতিহ্যের বৈধ ফসল হলো এই হিংস্রতা।’ এ ছাড়া তাঁর চলচ্চিত্র ‘জেরো: অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু ৯/১১’-ও ওই ঐতিহাসিক বিপর্যয় সম্পর্কে আমেরিকানদের অফিশিয়াল হিসাবের প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। বলা হয়, দারিওর এ রকম মানসিকতা তৈরিতে একটি বিষয় সক্রিয় ছিল : ছেলেবেলায় তিনি ইতালির পোর্টে ভালটাভাগলিয়া অঞ্চলে বেশ কিছুদিন ছিলেন। ইতালির মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের বেশির ভাগেরই নাকি বসবাস ওই অঞ্চলে।

বই: 
The Pope's Daughter, The Tricks of the Trade, The Virtuous Burglar, Abducting Diana, 

                একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। মিলান শহরকে কতিপয় অর্থলোভী লোকদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা হিসেবে তিনি ২০০৬ সালে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্ভীকচিত্তে বলেন, বার্লুসকোনির সহায়তা পাওয়া ‘অর্থলোভী জারজ লোকরা দশকের পর দশক ধরে এই শহর শাসন করে আসছে।’ এমন সোচ্চারকণ্ঠ ছিলেন দারিও।

১৯৫৭ সালে দম্পতি ফো-রামে থিয়েটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। মঞ্চে তাদের রাজনৈতিক ব‌্যঙ্গনির্ভর নাটকের জন‌্য প্রভূত খ‌্যাতি ও জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন করেন।

কিন্তু কখনো কখনো তাদের নাটককে রাজনৈতিক চাপ ও সেন্সশিপের কাঁচির নিচে পড়তে হয়েছে।

অন‌্যটি শুধুই ব‌্যঙ্গ কিংবা কমেডি, যা সহজেই উপভোগ‌্য। অবশ‌্য ফো’র রাজনৈতিক বক্তব‌্য প্রকাশের ধরন সম্পর্কে যাদের বোঝাপড়া রয়েছে তা এ থেকেও কাঙ্ক্ষিত বার্তা খুঁজে নিতে পারেন।

ফো সচেতনভাবেই ইতালির কমেডিয়া দেআর্তের ফর্মটি ব‌্যবহার করেছেন তার নাটক পরিবেশনায়। আর এতে করে কখনো কখনো সেগুলো তথাকথিত স্থূল অভিধাপ্রাপ্ত হয়েছে।

তবে ফোর বিবেচনায়, যে দর্শকের জন‌্য তিনি নাটক করতে চেয়েছেন তারা অভিজাত শ্রেণীর মানুষ নয়, তারা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ।

সিনেমা:
 Lo svitato, Musica per vecchi animali, Johan Padan a la descoverta de le Americhe, আরও বেশি


মারা গেলেন -১৩ অক্টোবর, ২০১৬, Sacco Hospital, মিলান, ইতালি.
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
  


 



No comments: