গুণময় মান্না
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৫ মার্চ ১৯২৫,।আড়গোড়া , ঘাটাল পূর্ব মেদিনীপুর।পিতার নাম দীননাথ মান্না, মাতা প্রাণবালা। এদের পরিবারে তখন লেখাপড়ার বিশেষ চল ছিল না। মাত্র চার বৎসর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। বেশ কয়েক বৎসর তাঁর পাঠশালায় না গিয়ে কেটে গেছে। এই সমস্ত কারণে তাঁর পড়াশোনার শুরু ও অগ্রগতি বিলম্বিত হয়। কিন্তু তাঁর মা প্রাণবালার উৎসাহে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে। মা'র অনুরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক রাসবিহারী আচার্য বিনা বেতনে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে প্রাথমিক শেষ পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে শিলাই নদী পেরিয়ে ভর্তি হন ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে। সরকারি বৃত্তি পেয়ে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়মঠে রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ. পরীক্ষায় পাশ করে বৃত্তি লাভ করেন । ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র সুবর্ণ পদক ও স্যার আশুতোষ জন্ম বার্ষিক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা সাহিত্যে এম. এ পাশ করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পি. এইচ.ডি. লাভ করেন। বিষয় ছিল রবীন্দ্র কাব্যরূপের বিবর্তন রেখা।
তাঁর কর্মজীবন শুরু ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে মাত্র ছয় মাসের শিক্ষকতা নিয়ে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজে, ১৯৫৮ - ৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহরমপুর গার্লস কলেজে এবং ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপনা হতে অবসর নেন।
ছাত্রাবস্থা হতেই তিনি লেখালেখিতে লিপ্ত থেকেছেন । তাঁর প্রথম উপন্যাস লখিন্দর দিগার প্রকাশিত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। বাংলায় তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক না হলেও, তাঁর 'কটা ভানারি', 'জুনাপুর স্টীল' ও 'লখীন্দর দিগার' এই তিন উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন । তাঁর প্রবন্ধ ও গল্পগুলিও ভিন্নমাত্রার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী প্রসঙ্গ এসেছে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ও তার পরের তাঁর লেখা গল্পে। তাঁর ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'শালবনি' উপন্যাস ইংরাজী ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। অনুবাদক পাপড়ি শ্রীরমন। তাঁর রচিত উপন্যাস ছোটগল্প ও প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল -
উপন্যাস-
লখীন্দর দিঘার ( ১৯৫০)
কটা ভিনারি (১৯৫৪)
জুনাপুর স্টীল (পূর্ব খণ্ড) (১৯৬০)
জুনাপুর স্টীল (উত্তর খণ্ড) (১৯৬২)
বিদ্ধবিহঙ্গ ( ১৯৬৬)
জননী (১৯৬৮)
অসামাজিক (১৯৭২)
শালবনি (১৯৭৮)
মুটে (১৯৯২)
ঘরানা ( ১৯৯৭)
বিদ্রোহী স্বর(১৯৯৯)
গঙ্গাপ্রবাহিনী (২০০৬)
ছোটগল্প-
নতুন প্রেমকথা ( ১৯৮৫)
এক গুচ্ছ গল্প ( ১৯৯৭)
প্রবন্ধ-
রবীন্দ্রনাথ ( ১৯৬৬)
রবীন্দ্র -কাব্যরূপের বিবর্তন রেখা (১৯৬৬)
গদ্যের সৌন্দর্য (১৯৭৪)
রবীন্দ্ররচনার দর্শনভূমি (১৯৯৩)
বাঙলা উপন্যাসের শিল্পাঙ্গিক : আধুনিক যুগ (১৯৯৫)
তিনি এম.এ পড়ার সময়ই উমা দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের চার পুত্র এবং তিন কন্যা। এঁরা সকলেই কৃতি ও উচ্চশিক্ষিত। অবসরের পর তিনি বহরমপুরে বাড়ি করে বসবাস করতে থাকেন।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গুণময় মান্নাকে বঙ্কিম পুরস্কারে সম্মানিত করে।
No comments:
Post a Comment