নারায়ণ সান্যাল
শিশু সাহিত্য থেকে সায়েন্স ফিকশন, শিল্প সমালোচনা, স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ, মনস্তত্ত্ব, প্রযুক্তি, উদ্বাস্তু সমস্যা, ইতিহাস,পশু পাখি বিষয়ক বই থেকে সামাজিক উপন্যাস পর্যন্ত ছিল তাঁর অবাধ বিস্তার।রবীন্দ্রনাথের পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের বাাঁশি কবিিতায় হরিপদ কেরানির মত আরেক হরিপদ চক্রবর্তীকে আমরা দেখি উদ্বাস্তু সমস্যায় ভাঙ্গাগড়া জীবন নিয়ে বল্মীক উপন্যাসে। পুত্রবধূ কামিনী এছাড়া পরিবারের বাবলু নমিতা ভূষণ লতিকা নতুন জীবনযাত্রায় জর্জরিত সমাধানের স্পষ্ট ইঙ্গিত নিয়ে এগিয়ে গেছেন । লেখক অভিজ্ঞতা ও
মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস বকুলতলা পি এল ক্যাম্প জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। এমনই অনেক গ্রন্থের রচয়িতা নারায়ণ সান্যাল সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গির কথাকার।
যার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে শিল্পচেতনা বিজ্ঞানচেতনা সমাজবিজ্ঞান অন্যতম সাহিত্যকীর্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর বিখ্যাত রচনা অজন্তা ইলোরা অজন্তা স্থাপত্যের বিবর্তন সূত্রের বিশ্লেষণ সৌন্দর্যের অপরূপ বর্ণনা । এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এ প্রসঙ্গে সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছেন -"লেখকের দেওয়ার নামই বিদগ্ধ পাঠক সাধারণের মুগ্ধতা ধ্বনিত করে এরকম গ্রন্থের দৃষ্টান্ত একান্ত বিরল। সেই বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে অপরূপা অজন্তা আজও তা সত্যিই অপরুপা দুর্লভ নিষ্ঠা অধ্যবসায় ও পান্ডিত্যের সঙ্গে রচনা নৈপুণ্যের সমাহারে প্রায় কিংবদন্তি কল্পনার অজন্তার প্রামাণ্য পরিচায়িকাটি স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি হয়ে উঠেছে।"
লেখকের আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। ওখানেই তিনি ১৯২৪ সালে ২৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। কৃষ্ণনগরে জন্ম হলেও তিনি কলকাতায় শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন। ম্যাট্রিক পাশ করেন আসানসোল ই আই আর বিদ্যালয় থেকে। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন।। স্ত্রী: সাবিতা সান্যাল
সিনেমা: যদি জানতেম, অশ্লীলতার দায়ে, সত্যকাম, Pashanda Pandit, Punnagai
সন্তান: মৌ সান্যাল তালুকদার, অনিন্দিতা বসু, Tirtharenu Sanyal
রচনা কর্ম:
বকুলতলা পি এল ক্যাম্প বিষের কাটা বল্মীক কাঁটায় কাঁটায় অজন্তা অপরূপা জাপান থেকে ফিরে নক্ষত্রলোকের দেবাত্মা নেতাজির রহস্য সন্ধানে আমি নেতাজীকে দেখেছি অগ্নিকন্যা মমতা মান মানে কচু প্রভৃতি।
দীপন’ পত্রিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল তাঁর। প্রতিভার মূল্যায়নে এই পত্রিকার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।
তিনি অজন্তার বিষয়েই লিখুন অথবা বৌদ্ধ যুগের পুনর্নির্মাণ বিষয়েই ভাবুন, সব সময়ই সংশ্লিষ্ট ‘উপাদান’ সংগ্রহ করে নিতেন। এত যত্ন ও শ্রম রম্যকাহিনির জন্য সতত প্রয়োজনীয় নয়। অবাক করা তাঁর বিষয়বৈচিত্র্য: ফরাসি ভাস্কর রদ্যাঁ ও কলিঙ্গের দেবদেউল কিংবা মিথুনচিত্র যদি তাঁর মনোহরণ করে তবে চমৎকৃত হই যে বাস্তুবিদ্যা বা হাতেকলমে এসটিমেট করার বিষয়ে তিনি মোটেই অন্যমনস্ক নন। উপন্যাস ও কথাসাহিত্য থেকে ভ্রমণসাহিত্য, কিশোর-আখ্যান, গোয়েন্দা-কাহিনি, সুভাষ বসু রহস্য, কোনও কিছুতেই তাঁর ক্লান্তি নেই। বিজ্ঞানাশ্রয়ী কথকতা যেমন করেছেন, তেমন ‘অরিগামি’ বা কাগজ ভাঁজের খেলা তাঁকে ভাবিয়েছে। এমনকি ‘অগ্নিকন্যা মমতা’ যখন তিনি লেখেন (১৯৯৮), তখনও ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রীর প্রসাদ পাওয়ার আশায় লেখেননি। তাঁর সমর্থন বিশ্বাসের দিক থেকেই। বস্তুত দোষ ও গুণ সত্ত্বেও নারায়ণ সান্যালের মধ্যে এমন অভিজাত অন্তরাল বাসা বেঁধেছিল যে তিনি প্রচারিত হলেও প্রচারমাধ্যমের প্রতি আনুগত্য দেখালেন না। না হলে প্রভূত আলোচনা ও পুরস্কারপ্রাপ্তি তাঁর করতলধৃত আমলকি হওয়া তো অস্বাভাবিক নয়।
পুরস্কার :
রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯
বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০
সত্যকাম চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনির পুরস্কার পান বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টঅ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে।
মারা গেছেন: ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০০৫, কলকাতা
No comments:
Post a Comment