Friday, 11 June 2021

আলোচনা পর্ব। বাংলায় শিশু কিশোর সাহিত্য। ১২.০৬.২০২১. Vol -401. The blogger in literature e-magazine

বাংলা ভাষায় শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চা



ইতিহাসে প্রায় দুশো পঞ্চাশ বছরেরও পুরনো। ১৮১৮ সালে হুগলির শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’ পত্রিকাটিকেই বাংলা ভাষার প্রথম কিশোর পাঠ্যপত্রিকা মনে করা হয়। পরে অবশ্য সখা (প্রকাশকাল ১৮৮৩), বালক (১৮৮৫), সাথী (১৮৯৩), সখা ও সাথী (১৮৯৪), মুকুল (১৮৯৫) ইত্যাদি কিশোর পাঠ্য পত্রিকা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়। আরও পরে সন্দেশ, মৌচাক, শিশুসাথী, রংমশাল, পাঠশালা, পক্ষীরাজ, রামধনু, ভাইবোন ইত্যাদি ছোটদের পত্রিকাগুলি একে একে হাজির হয় বিবিধ বৈচিত্র্য নিয়ে।

                        সপ্তম শতকে ল্যাটিন ভাষায় আদি শিশু সাহিত্য রচিত হয়। ঊনবিংশ শতকে জার্মান রূপকথা, এডওয়ার্ড লিয়ারের ‘বুক অব ননসেন্স’, ‘লুইস ক্যারলের’ ‘আজব দেশে এলিস’ প্রভৃতি শিশু সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন। প্রায় দু’শ বছর আগে অথ্যাৎ ১৮১৬ সালে বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্যে সাহিত্য রচনা শুরু হয়। অবশ্য শিশু-সাহিত্যকে সাহিত্যের ভিন্ন বিষয় হিসাবে ভাবা হয়েছে আরো অনেক পরে। ১৮৯৯ সালে যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬-১৯৩৭) সংকলিত বাংলা ভাষার প্রথম উদ্ভট ছড়াগ্রন্থের ভূমিকাতে ‘শিশু-সাহিত্য’র প্রথম সন্ধান মেলে। ভূমিকাতে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী (১৮৬৪-১৯১৯) শিশু-সাহিত্য শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৮৯১ সালে প্রকাশিত ‘হাসি ও খেলা’ নামে যোগীন্দ্রনাথ সরকার রচিত গ্রন্থটি আদর্শ শিশুতোষ গ্রন্থ 

হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

                          আমাদের প্রতেকের জীবনে শৈশব ও কৈশোরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জীবনের এই অংশকে বাদ দিয়ে কখনই জীবনকে সম্পূর্ণ করতে পারি না। প্রত্যেকের জীবনে শৈশবের সময় কাটানোর মূহুর্ত আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। শৈশবের এই মূহুর্ত গুলি আমাদের জীবন সাহিত্যের ইতিহাসকে উজ্জ্বল ও মধুর করে তোলে।তেমন ভাবে বাংলা সাহিত্য জগতে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে বাদ দিয়ে কখনোই সাহিত্যের রস অনুভব করা যায় না।বাংলা সাহিত্যে শিশু ও কিশোরদের জন্য যে সব সাহিত্য রচিত হয়েছে তা সব বয়সী মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে তাই এই সাহিত্যকে বাদ দিয়ে  বাংলা সাহিত্যের কথা ভাবা যায় না। আমরা জানি শিশু মন সব সময় অনুকরণে দ্বারা চালিত হয় তারা সেই সব বিষয় গুলিকে বেশি অনুকরণ করে থাকে যেগুলি তাদের চোখ ও মনকে আকর্ষণ করে। তাই সাহিত্য জগতে শিশুদের এই দিকের কথা মাথায় রেখে তাদের জন্য বিশেষ সাহিত্যের জগতের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সব সাহিত্যে শিশুদের মতন করে সাহিত্যিক, গল্পকার প্রমুখরা সাহিত্য ও সাহিত্যের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন।সাহিত্যের চরিত্রগুলিকে একে বারে শিশুদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আদলে সৃষ্টি করেছেন যার ফলে এই সব সাহিত্যের চরিত্রগুলি সাহিত্য গুলিকে পাঠকদের কাছে আরো আকর্ষণের বিষয় হয়ে ওঠে। 

শিশু ও কিশোর সাহিত্য বলতে কি বুঝি? 

                  এই প্রশ্নের উত্তর হিসাবে অবশ্যই বলবো বাংলা সাহিত্যে শিশু ও কিশোর সাহিত্য বলতে ছোটদের জন্য লেখা রচনাকে বুঝি। ইংরেজিতে একে Juvenile Literature বলা হয়। এই সাহিত্যে শিশু কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।প্রমথ চৌধুরী এই শিশু সাহিত্য সম্পর্কে বলেছেন —


" শিশু সাহিত্য বলতে কোনও পদার্থের অস্তিত্ব নেই এবং থাকতে পারে না।…"


এখনো আমাদের দেশে শিশু শ্রমের প্রাচুর্য রয়েছে।স্বাধীনতার এতবছর পর এসে ভারত উন্নত লাভ করলেও মানসিক দিক দিয়ে এখনও উন্নতি লাভ করতে পারেনি।তাই শিশু শ্রম আইন গত অপরাধ হলেও শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর প্রচলন আজও ঘটে চলেছে।তবে সাহিত্য জগতে শিশু সাহিত্য ও চরিত্র আমাদের কাছে আজও আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে। সাহিত্যে তাদের বিশেষ স্থান ও দেওয়া হয়েছে। 


 প্রাচীন কালের শিশু সাহিত্য :


সাহিত্যে শিশুদের অস্তিত্ব আমরা প্রাচীনকাল থেকেই দেখতে পাই।তবে প্রাচীন কালে কম হলেও যে সব সাহিত্য শিশু সাহিত্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছে তাহল - বিষ্ণু শর্মার পঞ্চতন্ত্র,হিতোপদেশ, সোমদেবের কথাসরিৎ সাগর, কালিদাসের দ্বাত্রিংশ পুত্তলিকা প্রভৃতি। আধুনিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এগুলিকে শিশু কিশোর সাহিত্য বলা চলে না তবে গল্পে ও কাহিনীর দিক দিয়ে এগুলিকে শিশু সাহিত্য বলাই যেতে পারে।

 উনবিংশ শতকের সাহিত্যিকদের শিশু সাহিত্য :


      উনবিংশ শতাব্দীর গদ্যসাহিত্যে শিশু সাহিত্যের জন্য বিশেষ পত্রিকার তৈরী করা হয়েছিল যে সব পত্রিকায় শিশু সাহিত্যের রচনাগুলি প্রকাশিত হতো সেগুলির হল - সখা, সখী, মুকুলজ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বালক পত্রিকা। এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা - " বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান " প্রকাশিত হয়। এই উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ পত্রিকা হল মুকুল। এটি শিবনাথ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। শিশু ও কিশোর সাহিত্যে এই সব পত্রিকার অবদান অস্বীকার করা যায় না। এই সব পত্র পত্রিকা ছাড়াও শিশুদের জন্য সাহিত্য ও রচিত হয়েছে সেগুলি হল রবীন্দ্রনাথের ছুটি, পোস্টমাস্টার, সুভা, শিশু, শিশুভোলানাথ, খাপছাড়া প্রভৃতি। 


      উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বেশির ভাগ রচনাই শিশু- কিশোরদের জন্যে রচিত। তিনি শিশুদের জন্য ছেলেদের রামায়ণ, ছেলেদের মহাভারত, মহাভারতের গল্প, পুরাণের গল্প, কবিতা ও গান, টুনটুনির বই প্রভৃতি রচনা করেন। তাঁর এই রচনাগুলি শিশু মনকে আনন্দ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বিষয় চেনার সহায়তা করে থাকে। তিনি টুনটুনির বই এর ভূমিকা অংশে বলেছেন -

" সন্ধ্যার সময় শিশুরা যখন আহার না করিয়াই ঘুমাইয়া পড়িতে চায়,তখন পূর্ববঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলের স্নেহরূপিনী মহিলাগণ এই গল্পগুলি বলিয়া তাহাদের জাগাইয়া রাখেন।সেই গল্পের স্বাদ শিশুরা বড়ো হইয়াও ভুলিতে পারে না। আশা করি আমার সুকুমার পাঠক পাঠিকাদেরও এই গল্পগুলি ভালো লাগিবে।"


এ থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় গল্পকার বা সাহিত্যিকরাও শিশুসাহিত্য রচনা করে বেশ আনন্দ অনুভব করেছেন।


    সুকুমার রায় শিশু ও কিশোর সাহিত্যিক হিসাবে আজও আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। সাহিত্য জগতে তাঁর ভুরি ভুরি শিশু কিশোর রচনার পরিচয় পাওয়া যায়। 


     দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার এর শিশুদের জন্য ঠাকুমার ঝুলি আজও আমাদের শৈশব স্মৃতিকে বার বার উস্কে দেয়। ছোটো বেলায় ঠাকুমাদের মুখ থেকে শোনা গল্পগুলি যেন তাঁর রচনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বাংলা সাহিত্য জগতে  শিশুদের জন্য সাহিত্যিকরা বহু রচনা সৃষ্টি করেছেন। 

শিশু ও কিশোর সাহিত্যের চরিত্র :


সাহিত্য জগতে শিশু ও কিশোর সাহিত্যের কতটা অবদান রয়েছে সেটাতো জানা হলো তাহলে এবার চলুন একটু দেখেনেই এই সব শিশু সাহিত্যের চরিত্রগুলি কতটা পাঠক, সাহিত্য জগতকে প্রভাবিত করেছে। সে কথা বলতে গেলে অবশ্যই শিশুসাহিত্য চরিত্রের কথা বলবো।এই চরিত্রগুলিকে দুভাবে দেখা হয় একটি হল রূপকথার ও লোককথার বিভিন্ন চরিত্র আর দ্বিতীয়টি হল শিশুদের জন্য ভিন্ন স্বাদের মৌলিক গল্পের নানান চরিত্র। রূপকথা ধর্মী রচনাগুলির মধ্যে রাজপুত্রের জয়, রাজকন্যাকে উদ্ধার,দুখিনী সুয়োরানি-দুয়োরানির গল্প প্রভৃতির উল্লেখ পাই। এই রূপকথার রচনা বললে আমরা কখনোই দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের ঠাকুরমার ঝুলি,ঠাকুরদার ঝুলি কথা ভুলতে পারবো না। এখানে লালকমল, নীলকমল, কিরণমালা, অরুণ, বরুন প্রভৃতি চরিত্রের পরিচয় পাই। আবার বাংলা সাহিত্যে  বিভিন্ন সাহিত্যিকরা চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে  সুকুমার সেন শিশু সাহিত্যে নতুন নতুন চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পাগলাদাশু,হ য ব র ল এর ন্যাড়া,প্রফেসার হিজিবিজবিজ, খগেন্দ্রনাথ মিত্রের ভোম্বল সর্দার, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা চরিত্র, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা, শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন প্রভৃতি চরিত্র গুলি আজও আমাদের মনে হাস্যরসের সৃষ্টি করে।

বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দা চরিত্র :


আজকাল গয়েন্দার নায়করা বাংলা শিশুসাহিত্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিটি নায়কদের মধ্যে বাঙালি আনা লক্ষ্য করা যায়। এই সব চরিত্রগুলির মধ্যে বাঙালির ঐতিহ্যকে সুন্দরভাবে খুঁজে পাওয়া যায়। এই সব চরিত্র গুলির মধ্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ, নিহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটী রায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্ণেল,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু ও সন্তু, সমরেশ বসুর গোগোল, বিমল করের কিকিরা, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা  প্রভৃতি চরিত্র গুলি কিশোরদের মনে বিশেষ এক স্থান করে নিয়েছে।

১৮৩৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলা পাঠশালা’, ১৮৪৬ সালের ১ মার্চ তারিখে প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দু হিতার্থী বিদ্যালয়’, ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ১৮৪৩ সালের ২ মে প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ’ প্রতিষ্ঠায় রাধাকান্ত দেবের অসামান্য অবদান ছিল, ‘বাংলা পাঠশালা’ এবং ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ থেকেও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮২১ সালে রাধাকান্ত দেব ‘বাঙ্গলা শিক্ষা গ্রন্থ’ রচনা করেন। তবে বাংলা শিশুসাহিত্যের প্রকৃত বিস্তার লাভ করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), মদন মোহন দত্ত (১৮১৭-১৫৫৮), এবং অয় কুমার দত্তের ‘চারুপাঠ’-এর তিনটি খণ্ড প্রকাশের মাধ্যমে।

শিশুগ্রন্থ হিসেবে খণ্ড তিনটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বোধোদয়’ শীর্ষক অনুবাদগ্রন্থ (১৮৫১), ‘বর্ণ পরিচয়’ (১ম ও ২য় ভাগ ১৮৫৫), ‘ঈশপের নির্বাচিত গল্পের অনুবাদ’, ‘কথামালা’ (১৮৫৬), অনুবাদ গ্রন্থ ‘আখ্যাণমঞ্জুরী’ (১৮৬৩) এবং মদন মোহন তর্কালঙ্কারের তিনভাগে ‘শিশুশিা’ মোদ্দাপাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়।


শিশুসাহিত্যের সমৃদ্ধ ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (১৮৬১-১৯৪১)। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১), কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬), যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬-১৯৩৭), নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (১৮৫৯-১৯৩৯), দণিারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৮৭৭-১৯৫৭), যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৮৮২-১৯৬৫), সুকুমার রায়, (১৮৮৭-১৯২৩), দীনেন্দ্র কুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩), খগেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮৪-১৯৭৮), সৌরীন্দ্র মোহন মুখোপধ্যায় (১৮৮৪-১৯৬৬) শরবিন্দু বন্দোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০), হেমেন্দ্র কুমার রায় (১৮৮৮-১৯৬৪), সুনির্মল বসু (১৯০২-১৯৫৭), বিভুতিভুষণ মুখোপধ্যায় (১৮৯৪-১৯৮৭), শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০), রবীন্দ্রলাল রায় (১৯০৫-১৯৭৮), বিমল ঘোষ (১৯১০-১৯৮২), নীহার রঞ্জণ গুপ্ত (১৯১১-১৯৮৬), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১), এয়াকুব আলী চৌধুরী (১৮৮৮-১৯৪০), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৫-১৯৮৮), বন্দে আলী মিয়া, (১৯০৬-১৯৭৯), মোহাম্মদ মোদাব্বের (১৯০৮-১৯৮৪), খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন (১৯০১-১৯৮১), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৮), নারায়ণ গঙ্গোপধ্যায়, অখিল নিয়োগী, লীলা মজুমদার, হরিসাধণ মুখোপাধ্যায়, কুদুমরঞ্জন মল্লিক- অনেকেই বাংলা শিশু সাহিত্যকে সমৃদ্ধি দান করেছেন।

প্রমথ চৌধুরী বলেছেন -


“ছেলে যাতে শীঘ্র মানুষ হয়, সেই উদ্দেশ্যে আমরা শৈশবের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি দেইনে। আজকাল আবার দেখতে পাই অনেকে তার মধ্যেও দুবছর কেটে নেবার পক্ষপাতী। শৈশবটা হচ্ছে মানবজীবনে পন্ডিত জমি; এবং আমাদের বিশ্বাস, এই পতিতজমি যত শীঘ্র আবাদ করা যাবে তাতে তত বেশি সোনা ফলবে।

‘বাবা-মা’র এই সুবর্ণের লোভবশত এদেশের ছেলেদের বর্ণপরিচয়টা অতি শৈশবেই হয়ে থাকে। এ কালের শিক্ষিত লোকেরা লোকেরা ছেলে ছেলে হাঁটতে শিখলেই তাকে পড়তে বসান। শিশুদের উপর এরূপ অত্যাচার করাটা যে ভবিষ্যৎ বাঙালিজাতির পক্ষের কল্যাণকর নয়। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই; কেননা যে শৈশবে শিশু ছিল না, সে যৌবনে যুবক হতে পারবে না। আর এ কথা বলা বাহুল্য শিশুশিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিশুর শিশুত্ব নষ্ট করা; অর্থাৎ আনন্দ উপভোগ করবার শক্তি অপরিমিত, তাকে জ্ঞানে ভোগ ভোগানো।”



∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆


No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...