"আমেরিকা বা ইউরোপের কোনও ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা বোধহয় না আমাদের মতো বছর শেষ হবার আগেই তাদের কাজে তারা যে অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে তা নিয়ে এতটা সন্তুষ্ট হতে পারে। আমাদের এ সাফল্য সত্যিই নজিরবিহীন, প্রায় অবিশ্বাস্যই বলতে হয় বিশেষত যখন এতটা সংক্ষিপ্ত সময়কালে এটা সম্ভব হয়েছে তা বিবেচনা করি।"
পোর সাহিত্যকর্মে তাঁর নিজস্ব সাহিত্যত্ত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। এই সাহিত্যতত্ত্বই তিনি তাঁর প্রবন্ধ “দ্যা পোয়েটিক প্রিন্সিপাল” এ তুলে ধরেছিলেন।] তিনি লেখায় রূপক ব্যবহার করতে কিংবা নীতিবাক্য যোগ করতে অপছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন লেখার মর্মকথা এর ভেতরেই প্রকাশ পাবে। তিনি বলতেন যে সাহিত্যে কি বলা হয়েছে তা জলের মতো পরিষ্কার সেই সাহিত্য শিল্পগুণ বিচারে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন মানসম্পন্ন সাহিত্য হবে সংক্ষিপ্ত। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন একজন লেখকের সক্ষমতা থাকবে তাঁর লেখার সবরকম অনুভূতি এবং অভিপ্রায় নিরূপন করার।
এডগার অ্যালান পো
আলান পো ১৮১০ সালে ১৯ জানুয়ারি আমেরিকার বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডেভিড পো এবং মা এলিজাবেথ "এলিজা" পো । উভয়েরই পেশা ছিল অভিনয় করা। ১৮১০ সালে তাঁর বাবা পরিবার ত্যাগ করেন চলে যান। এর পরের বছরই তাঁর মা মারা যান। পো অনাথ হয়ে পরেন। এরপর পোকে ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের জন এবং ফ্রান্সেস অ্যালান তাদের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা কখনই পোকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি যদিও ছোট্ট পোর সাথে তাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। পরবর্তীতে বড় হয়ে পো জুয়ায় আসক্ত হন এবং ফলশ্রুতিতে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। জুয়ার দেনা এবং পোয়ের পড়াশোনার ব্যয়কে কেন্দ্র করে জন এবং ফ্রান্সেস অ্যালানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তিনি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও অর্থের অভাবে এক বছর পর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। ১৮২৭ সালে তিনি ছদ্মনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এই সময়েই তিনি বেনামে তার সাহিত্যকর্ম প্রকাশ করতে শুরু করেন। একজন বোস্টোনিয়ান ছদ্মনামে প্রকাশ করেন তামেরলেন এবং অন্যান্য কবিতা (১৮২৭)। এটাই ছিলো তার প্রথম প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম। ১৮৩১ সালে যখন পো সামরিক অফিসার হতে ব্যর্থ হন তখন তাঁর কবি ও লেখক হবার ইচ্ছা আরও দৃঢ় হয়।
পো এসময় গদ্য লেখায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তী কয়েক বছর একাধিক সাহিত্য পত্রিকা এবং সাময়িকীতে কাজ করেছেন। তিনি তাঁর নিজস্ব সাহিত্য সমালোচনার স্টাইলের জন্য খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। কাজের জন্য তাকে বাল্টিমোর, ফিলাডেলফিয়া, নিউ ইয়র্ক সিটি সহ বেশ কয়েকটি শহরে থাকতে হয়। ১৮৩৬ সালে তিনি তাঁর ১৩ বছর বয়সী ফুফাত বোন ভার্জিনিয়া ক্লেমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী ভার্জিনিয়া ক্লেম যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৪৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৪৪ সালের জানুয়ারিতে পো তাঁর "দ্যা রেভেন" কবিতাটি প্রকাশ করেন যা তাঁকে তাৎক্ষণিক সাফল্য এনে দেয়। এরপর তিনি তাঁর নিজস্বপত্রিকা দ্যা পেন প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেন, কিন্তু দুখঃখজনকভাবে এটি প্রকাশের আগেই ১৯৪৯ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। অনেকে এও মনে করে যে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।
পো এবং তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে শুধুমাত্র বিশ্ব সাহিত্যই নয়
বরং মহাজাগতিক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির মতো বিশেষায়িত ক্ষেত্রগুলোও প্রভাবিত হয়েছিল। তিনি এবং তাঁর কাজ নিয়ে অনেক নাটক, চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, গান লেখা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত কয়েকটি বাড়িকে যাদুঘর ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও মিস্ট্রি রাইটার্স অফ আমেরিকা প্রতিবছর একটি পুরষ্কার প্রদান করে যা এডগার অ্যাওয়ার্ড নামে পরিচিত।
রচনা কর্ম
ছোট গল্প
"কালো বিড়াল"
"দ্য ক্যাস্ক অফ অ্যামোনটিল্যাডো"
"ম্যালাস্ট্রোর্মে অবতরণ"
"এম ভালদেমারের মামলার তথ্যসমূহ"
"হাউস অফ আশারের পতন"
"দ্য গোল্ড-বাগ"
"হপ-ফ্রগ"
"দ্যা ইমপ অব দ্যা পারভার্স"
"লিজিয়া"
"লাল মৃত্যুর মুখোশ"
"মোরেলা"
"দ্যা মার্ডার ইন দ্যা রু মর্গ"
"শয়তানকে কখনো মাথায় তুলতে নেই"
"দ্যা ওভাল পোর্ট্রেট"
"দ্যা পিট অ্যান্ড দ্যা পেন্ডুলাম"
"অকাল সমাধি"
"দ্যা পারলোইনড লেটার"
"দ্যা সিস্টেম অব ডক্টর টার অ্যান্ড প্রফেসর ফেদার"
"দ্যা টেল দ্যা হার্ট"
"লস অব ব্রেথ"
কবিতা
"আল আরাফ"
"আনাবেল লি"
"বেলস"
"সমুদ্রের শহর"
"বিজয়ী কীট"
"স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন"
"এল্ডোরাডো"
"ইউলালি"
"ভুতুড়ে প্রাসাদ"
"টু হেলেন"
"লেনোর"
"তামেরলেন"
"দাঁড়কাক"
"উলালিউম"
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ
পলিশিয়ান (1835) - পোর লেখা একমাত্র নাটক
দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পিম অফ ন্যান্টুকেট (1838) - পোয়ের একমাত্র সম্পূর্ণ উপন্যাস
"দ্য বেলুন-হোয়াক্স" (1844) - সত্য গল্প হিসাবে মুদ্রিত একটি বানানো গল্প
"রচনা দর্শন" (1846) - প্রবন্ধ
ইউরেকা: একটি গদ্য কবিতা (1848) - প্রবন্ধ
"দ্য পোয়েটিক প্রিন্সিপল" (1848) - প্রবন্ধ
"দ্য লাইট-হাউস" (1849) - পোয়ের শেষ, অসম্পূর্ণ কাজ।
পো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবার উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে এডগার এ পেরি নাম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তাঁর বয়স যদিও ছিলো ১৮ বছর , কিন্তু তিনি ২২ বছর বলে দাবি করেন।প্রথমে তিনি বোস্টন হারবারের ফোর্ট ইন্ডিপেনডেন্সে ৫ ডলার বেতনে চাকরি করতেন। এই বছরই তার কাব্যগ্রন্থ তামেরলেন ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মাত্র ৫০টি মুদ্রিত কপি বের হয়েছিল। বইটি সাড়া জাগাতে ব্যার্থ হয়।এরপর পো সাউথ ক্যারোলিনার ফোর্ট মোলট্রিতে বদলি হন এবং আর্টিলারির আর্টিফিশিয়ার পদে উন্নীত হন। ফলে তাঁর পারিশ্রমিক দ্বিগুণ হয়ে যায়। দুই বছর সামরিকবাহিনীতে কাজ করার পর পো সার্জেন্ট মেজর পদপ্রাপ্ত হন। এসময় তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন লেফটেনেন্ট হাওয়ার্ড কে তাঁর প্রকৃত নাম জানান। তিনি পোকে বলেন যে সে যদি অ্যালানের সাথে পুনর্মিলিত হয় শুধুমাত্র তখনই তাঁকে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তিনি সামরিক একাডেমীতে যোগ দিতে পারবেন। পো অ্যালানকে চিঠি লেখে। আ্যালান প্রথম কয়েকমাস পোর চিঠির উত্তর দেয়া দেখে বিরত থাকে। এরপর যখন তার স্ত্রী মারা যায় এবং তাকে সমাধিস্থকরণের পরদিন পো এসে উপস্থিত হন তখন পোর প্রতি তার রাগ কোমল হয় এবং তারা পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে।
ফলে পো ১৮২৯ সালে তাঁর সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়ে বাল্টিমোরে তাঁর আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যায়।এদের মধ্যে ছিলেন ভার্জিনিয়া ক্লেম যিনি পরবর্তীতে পোর স্ত্রী হন। ঐ বছরই পোর কবিতা খ্যাতনামা কাব্যসমালোচক জন নিল এর দ্বারা প্রশংসিত হয়।এরপর পো তাঁর একটি কবিতা নিলকে উৎসর্গ করেন।
পো ১৮৩০ সালে ওয়েস্টপয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। এসময় পোর সঙ্গে অ্যালানের সম্পর্ক পুনরায় খারাপ হতে থাকে।পোও তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করতে থাকেন এবং ১৯৩১ সালে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
এরপর তিনি নিউ ইয়র্কে যান এবং পোয়েমস নামে তাঁর তৃতীয় কাব্যসংকলন প্রকাশ করেন। এই বইটি প্রকাশে তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন ওয়েস্টপয়েন্ট মিলিটারি একাডেমির ক্যাডেটরা। বইটিতে পোর পূর্বে প্রকাশিত কবিতা তামেরলেন এবং আল আরাফ ছাড়াও ছয়টি পূর্বে অপ্রকাশিত কবিতাও ছিল। এই বইটি পো ইউ এস ক্যাডেট কোরকে উৎসর্গ করেন।
১৮৩১ সালের পহেলা আগস্ট পোর বড় ভাই হেনরি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মারা যান। এরপর পো একজন লেখক হিসেবে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা তাঁর জন্য সহজ ছিলনা। সেটা ছিল এমন একটা সময় যখন হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র আমেরিকান লেখনীর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতেন। এছাড়াও সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন না থাকায় সেখানকার প্রকাশকেরা ব্রিটিশ লেখকদের লেখা কোনো অনুমোদন ছাড়াই ছাপাতেন। ফলে তারা পারিশ্রমিক দিয়ে মার্কিন লেখকদের লেখা ছাপাতে আগ্রহী ছিলেন না।
এজন্য প্রথমে কিছুকাল কবিতা নিয়ে কাজ করলেও পো এবার গদ্যসাহিত্য লেখায় মনোযোগী হন।তিনি ফিলাডেলফিয়া প্রকাশনীতে কিছু লেখা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি তাঁর একমাত্র নাটক পলিশিয়ান লেখায় হাত দেন। ১৯৩৩ সালে ছোটোগল্প বোতলে পাওয়া পান্ডুলিপি এর জন্য তাঁকে পুরস্কারে ভূষিত করে বাল্টিমোর সানডে টাইমস।] এই ছোটোগল্পটি লিখে তিনি জন পি কেনেডি নামে একজন প্রভাবশালী লেখক ও রাজনীতিবিদের নজরে আসেন। কেনেডি পোকে সাদার্ন লিটারারি মেসেঞ্জার সাময়িকীর সম্পাদক টমাস হোয়াইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পো ১৯৩৫ সাল নাগাদ সেখানে সহকারী সম্পাদক পদে কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হোয়াইট কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পোকে বরখাস্ত করে।] পো এরপর বাল্টিমোরে ফিরে যান। ১৯৩৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফুফাত বোন ভার্জিনিয়া ক্লেমের সাথে পো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় পোর বয়স ছিলো ২৬ আর ভার্জিনিয়ার ১৩।
পোর তরফ থেকে ভাল আচরণের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরে হোয়াইট পোকে পুনর্বহাল করে এবং তিনি ভার্জিনিয়া ও ভার্জিনিয়ার মার সঙ্গে রিচমন্ডে ফিরে আসেন। তিনি ১৮৩৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেসেঞ্জারে চাকরিরত ছিলেন। পো দাবি করেন যে এসময়ের মধ্যে ঐ পত্রিকার বিক্রি ৭০০ থেকে বেড়ে ৩,৫০০ হয়ে গিয়েছিল। তিনি তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতা, বইয়ের পর্যালোচনা, সমালোচনা, ছোটোগল্প ঐ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন।
পোয়ের উপন্যাস দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পাইম অফ ন্যান্টুকেট ১৮৩৮ সালে প্রকাশিত হয়।] উপন্যাসটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ১৮৩৯ সালের গ্রীষ্মে পো বার্টনের জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদক হন। তিনি এখানে অসংখ্য নিবন্ধ, গল্প এবং সমালোচনা প্রকাশ করেন এবং মেসেঞ্জারে থাকাকালীন নিজেকে যে একজন মর্মভেদী সমালোচক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন তাঁর সেই খ্যাতি এসময় বহুগুণে বেড়ে যায়। ১৮৩৯ সালে তাঁর লেখা গ্রোটেস্ক এবং অ্যারাবিস্কের কাহিনী দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়, যদিও এর থেকে তিনি সামান্য অর্থই পেয়েছিলেন।
১৮৪০ সালের জুনে পো তাঁর নিজস্ব একটি জার্নাল শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি প্রস্তাবনা প্রকাশ করেন। তিনি পেনসিলভানিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার নামানুসারে এটিকে পেন নামকরণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে এর নাম স্টাইলাস বলে ঘোষণা করেন।জার্নালটি পোয়ের মৃত্যুর আগে কখনই পৃথিবীর আলো দেখেনি।
১৮৪২ সালের জানুয়ারি মাসে এক সন্ধ্যায় স্ত্রী ভার্জিনিয়ার মধ্যে যক্ষ্মার প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভার্জিনিয়া তখন পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন। তিনি আংশিক সুস্থ হয়ে উঠলেও পো তাঁর অসুস্থতার চাপে আরও বেশি মদ্যপান করতে শুরু করলেন। তিনি গ্রাহামস ম্যাগাজিনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরকারি চাকরির সন্ধান করছিলেন কিন্তু সফল হননি। এরপর তিনি নিউইয়র্কে যান এবং সেখানে ব্রডওয়ে জার্নালে এবং পরে মিরর এ কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন।সেখানে পো কবি হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাহিত্যকর্মে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনেন। ফলে তিনি অন্য লেখকদের থেকে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েন।] ১৮৪৫ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর "দ্যা রাভেন" কবিতাটি ইভিনিং মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পো প্রায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান।পোকে এই কবিতা প্রকাশের জন্য মাত্র ৯ ডলার সম্মানী দেয়া হয়েছিল।] কবিতাটি একই সাথে দ্যা আমেরিকান রিভিউ-এও প্রকাশিত হয়।
১৮৪৬ সালে পোর মালিকানাধীন ব্রডওয়ে জার্নাল উঠে যায়। পো সেসময় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের একটি বাংলোয় থাকতেন। ভার্জিনিয়া ১৮৪৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ঐ বাংলোতেই মারা যান।[ বাংলোটি এখন এডগার অ্যালান পো কটেজ নামে পরিচিত। সেখানে থাকার সময়ে পো নিকটবর্তী সেন্ট জনস কলেজের জেসুইট মিশনারীদের সাথে বন্ধুত্ব করেন।পোয়ের জীবনীকার এবং সমালোচকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পোয়ের সাহিত্যকর্ম তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর মা সহ জীবন থেকে চলে যাওয়া বিভিন্ন নারীর দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
স্ত্রীর মৃত্যুর পরে পো ক্রমশ অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়েন। এসময় রোড আইল্যান্ডের প্রোভেডেন্সে বসবাসকারী কবি সারা হেলেন হুইটম্যানের ও তাঁর বাগদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু পো-র মদ্যপান এবং অসংলগ্ন আচরণের কারণে এই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। এছাড়াও হুইটম্যানের মা এই সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেন।] পো এরপর রিচমন্ডে ফিরে আসেন এবং তাঁর শৈশব প্রণয়ীনী সারা এলমিরা রয়েস্টারের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্কে জড়ান।
১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর পোকে বাল্টিমোরের রাস্তায় বিকারগ্রস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
ওয়াশিংটন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই ১৮৪৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোর ৫ টায় তিনি মারা যান।
No comments:
Post a Comment