Sunday, 17 April 2022

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। অমৃতলাল বসু। ১৭.০৪.২০২২. Vol -708. The blogger in literature e-magazine.


অমৃতলাল বসু

 জন্ম ১৭ই এপ্রিল, ১৮৫৩। তিনি কলকাতার কম্বুলিয়াটোলা বঙ্গ বিদ্যালয়ে বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা করার পর তিনি ১৮৬৯ সালে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর দুই বছর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। তিনি কাশীতে হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেন।


কিছু সময়ের জন্য হোমিওপ্যাথি চর্চার পর তিনি সরকারী চিকিৎসক হিসাবে ফোর্টব্লেয়ার যান। স্বল্প সময়ের জন্য পুলিশ বিভাগেও কাজ করেছেন। তিনি ১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর জোড়াসাঁকোতে মধুসূদন সান্যালের বাড়িতে "নীলদর্পণ নাটকে অভিনয় করেন। পরে ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, মিনার্ভা, স্টার, বেঙ্গল প্রভৃতি রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করেন। তিনি মোট চল্লিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাদের মধ্যে চৌত্রিশটি হলো নাটক। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে তরুলতা (১৮৯১), বিমাতা বা বিজয় বসন্ত (১৮৯৩), হরিশচন্দ্র (১৮৯৯), এবং আদর্শ বন্ধু (১৯০০)। প্রহসন রচনায় সিদ্ধহস্ত হলেও তিনি এতে রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি তাজ্জব ব্যাপার প্রহসন রচনা করেন। একাকার প্রহসনে নিচু জাতির ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রুপ করেন। এছাড়া কালাপানি প্রহসনে হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রা এবং বাবু প্রহসনে দেশের প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রহ্মসমাজকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।

হাস্যরসাত্মক নাট্যরচনার জন্য তিনি স্বদেশবাসীর কাছে "রসরাজ" উপাধি পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের যুবরাজের আগমন উপলক্ষে উকিল জগদানন্দের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে রচিত নাটিকা পরিচালনার জন্য আদালতে দণ্ডিত হন। এই ব্যাপারে সরকার মঞ্চাভিনয়ের জন্য ১৮৭৬ সনে আইন রচনা করে।


উল্লেখযোগ্য নাটক 

(তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশ এবং তার মধ্যে নাটক চৌত্রিশ।.)

নাটক : 

তিলতর্পণ,

বিবাহবিভ্রাট,

তরুলতা (১৮৯১)

খাসদখল

ব্যাপিকা বিদায়

বিমাতা বা বিজয়বসন্ত (১৮৯৩)

হরিশচন্দ্র (১৮৯৯)

আদর্শ বন্ধু (১৯০০) প্রভৃতি।

প্রহসন রচনায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তার কয়েকটি প্রহসনের নাম:


তাজ্জব ব্যাপার

কালাপানি

বাবু

একাকার

চোরের উপর বাটপারি (১৮৭৬)

তিলতর্পণ (১৮৮১)

ডিসমিস (১৮৮৩)

চাটুজ্যে ও বাঁড়ুজ্যে (১৯০৪)


গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর উৎসাহে তিনি ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, বেঙ্গল, স্টার, মিনার্ভা ইত্যাদি রঙ্গমঞ্চে সুনামের সাথে অভিনয় করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রথম বাঙালি মহিলা এম.এ চন্দ্রমুখী বসু তার সম্পর্কিত বোন।


মৃত্যু - ২রা জুলাই, ১৯২৯। 

  তিনি প্রহসন ও ব্যঙ্গ রচনাতেই অধিক সফল হয়েছেন। সমকালের নাগরিক ও গ্রামীণ সমাজের নানা দিক নিয়ে এসব ব্যঙ্গাত্মক নাটক রচিত হয়। এর জন্য তিনি সমাজের এক শ্রেণির প্রশংসা এবং অপর শ্রেণির নিন্দার ভাগী হন। নাটক রচনা এবং নাট্যাভিনয়ে সাফল্যের জন্য তিনি জনসাধারণের কাছে রসরাজ নামে খ্যাত ছিলেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর উৎসাহে তিনি ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, বেঙ্গল, স্টার, মিনার্ভা ইত্যাদি রঙ্গমঞ্চে সুনামের সাথে অভিনয় করেন। রসরাজ অমৃতলাল বসু উনিশ শতকের পেশাদারী রঙ্গালয়ে এবং নাট্যসাহিত্যে তাঁর মৌলিক নাটক নিয়েই যা খ্যাতি পেয়েছিলেন তারপর নাট্যরূপের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু মীরকাসিম চরিত্রটির ইংরাজ বিরোধীতা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ করত। তাঁর এই নাট্যরূপায়ণ সরকারকে ক্ষুব্ধ করে এবং নাটকটির অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ।


বাংলা প্রহসনের দিকপাল অমৃতলাল বসু ১৮৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আংশিক মাস্টার, ডাক্তার ও সর্বোপরি নট আর নাট্যকার অমৃতলাল বসু একেবারে খাস কলকাতার বাসিন্দা, কম্বুলিয়াটোলার লোক। হুতোম থেকে পরশুরাম, বহু রসিকের স্মৃতিকথাতেই উঠে এসেছে সে কালের কলকাতা ৷ তবু রসবিবেচনায় একদম পৃথক অমৃতলাল বসু ৷তার পরিবার এই শহরেই প্রপিতামহের কাল থেকে বাস করছেন ৷ অমৃতলাল বসু কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাস (১৮৬৯) করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। দুবছর ডাক্তারি পড়ার পর কাশী গিয়ে তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রণালী শিক্ষা করেন এবং কলকাতায় কিছুদিন এর চর্চাও করেন। এ ছাড়া তিনি কিছুকাল স্কুলে শিক্ষকতা, পোর্টব্লেয়ারে সরকারি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন এবং পুলিশ বিভাগে চাকরি করেন। কিন্তু থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণহেতু কোনো পেশায় স্থায়ী হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন এবং কালক্রমে একজন অভিনেতা, মঞ্চাধ্যক্ষ, নাটক ও গান রচয়িতা হিসেবে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। অমৃতলাল বসু নাটক লিখতেন এবং ফরমায়েসি গানেরও জোগান দিতেন ৷ বটতলা থেকে ছাপা বইয়ের পাঁড় ভক্ত ছিলেন অমৃতলাল, তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরির জন্য তিনি পথপুস্তিকার খোঁজ করতেন, বেশি দামে পুস্তিকাগুলি কিনতেও রাজি ছিলেন তিনি ৷পুরাতন প্রসঙ্গ, পুরাতন পঞ্জিকা ও ভুবনমোহন নিয়োগী নামে তাঁর তিনটি আত্মস্মৃতিমূলক রচনা আছে। অমৃতলাল বসুর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশ এবং তার মধ্যে নাটক চৌত্রিশ। 


থিয়েটার জগতের বাইরেও অমৃতলালের পদচারণা ছিল। কবিতা ও গল্প-উপন্যাসও রচনা করেছেন তিনি। প্রথম দিকে কবির লড়াইয়ের কবিতা ও হাফ-আখড়াই গান লিখেও তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। স্যার সুরেন্দ্রনাথের সহকর্মীরূপে, স্বদেশী যুগের কর্মী এবং বাগ্মী হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। শ্যামবাজার অ্যাংলো-ভার্নাকুলার স্কুলের সেক্রেটারি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতি এবং কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য ছিলেন অমৃতলাল। তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘জগত্তারিণী’ পদকে ভূষিত করে। রসরাজ নামে খ্যাত অমৃতলাল বসু ১৯২৯ সালের ২রা জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। 


=={{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}==

No comments: