২০০০ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
অবদান :
কর্মজীবনে শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি দক্ষতার সঙ্গে মন্দিরা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
দেশ ভাগের পরে লিখেছিলেন তাঁর আত্মজীবনী
রক্তের অক্ষরে
১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়।
তিনি পরে লিখেছিলেন-
স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী (১৯৬৩)
নামে আরো একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ। গ্রন্থ দুটিতে তার বিপ্লবী ও রাজনৈতিক জীবনের নানা বিষয় উঠে এসেছে।
ব্যক্তিজীবন :
১৯০৭ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে এক বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৪ সনে তিনি ঢাকার ব্রাহ্মবালিকা শিক্ষালয় থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। এর পরে তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে আসে। কলকাতায় তিনি বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৮ সনে বেথুন কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাসে এম.এ পাস করেন। এম.এ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দল এর কতিপয় সদস্যের সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠিখেলা শিখতে আরম্ভ করেন। ১৯২৯ সালে যুগান্তর দলের নেতা রসিকলাল দাসের প্রেরণায় গান্ধীর অহিংসবাদ ছেড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য যুগান্তর দলে যোগ দেন।সহপাঠী হিসাবে ছিল কল্যাণী দাস। তিনি বীণা দাসকে রিভলবার সরবরাহ করেন যা দিয়ে তিনি ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। তিনি বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন কিন্তু প্রমাণের অভাবে প্রত্যেক সময় মুক্তি পান। ১৯৩২-৩৮ তিনি প্রেসিডেন্সি ও হিজলী বন্দী নিবাসে আটক থাকেন। হিজলি বন্দি নিবাসে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
১৯৩০ সালে তিনি বাড়ি ছেড়ে দরিদ্র নারীদের জন্য একটি হোস্টেলের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন। সেখানে তিনি বিপ্লবীদের জন্য বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতেন এবং বহন করে আনতেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়েও কারাবাস করেছেন তিন বছর (১৯৪২-৪৫)। দাংগা বিধ্বস্ত নোয়াখালী তে ত্রানের কাজ করেছেন এই বিপ্লবী।
ষাটের দশকে প্রকাশিত স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী বইটিতে তিনি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে বলছেন: ‘...তিনি...অবরোধবাসিনী মহিলাদের যে বেদনাতুর চিত্র তুলে ধরেছেন তা সমাজ-ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত হানবার জন্য প্রেরণা জাগিয়েছে। এদিক থেকে তিনি বিপ্লবী। প্রত্যক্ষ ভাবে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান না করলেও অনগ্রসর সমাজের নারীদের মধ্যে দেশানুরাগ জাগাবার যে প্রচেষ্টা তিনি সারাজীবন ধরে করে গেছেন তার মূল্য কম নয়।’ কমলা দাশগুপ্ত মন খুলেই রোকেয়াকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন। তা সত্ত্বেও হয়তো লেখকের অগোচরেই বাক্যগুলি যেন অদৃশ্য বাধায় অল্প অল্প হোঁচট খাচ্ছে, যেন শব্দের ভেতর থেকে উঁকি-দেওয়া ইতিহাস তাদের পা আটকে ধরছে।"
যে নারী মেয়েদের শিক্ষা প্রসারের কাজে জীবন উৎসর্গ করলেন, ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে বহু দিন সোচ্চার হলেন, যে নারীর সাংগঠনিক শক্তি ও অক্লান্ত ক্ষুরধার কলম, তাঁর স্বদেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ও সকলের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু ‘এ দিক থেকে’ বিপ্লবী। কমলা দাশগুপ্ত যখন ১৯৩৮-এ ‘মন্দিরা’ পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ শুরু করেন, তখন রাজনৈতিক বিপ্লবীর পরিচয় সম্বন্ধে তাঁর ধারণা একেবারে চাঁছাছোলা। তাই ষাটের দশকে লেখা বইতেও ‘বিপ্লবী’ শব্দটি যেন দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে রোকেয়ার বৈপ্লবিক ব্যক্তিত্ব ও জীবনব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে ‘প্রত্যক্ষ’ রাজনীতির সম্পর্ক করা যাচ্ছে না। ‘দেশানুরাগ’ জাগিয়েই তাঁর রাজনীতির ইতি, তাঁর ‘কুঠারাঘাত’ ‘সমাজ ব্যবস্থার মূলে’ অতএব কেবল ‘এ দিক’ দিয়েই তিনি বিপ্লবী।
বিশ্লেষণ করলে আরও জটিলতা পাওয়া যাবে। কিন্তু রাজনীতি ও সমাজের এই বিভাজন থেকেই শুরু করা যাক, এরও অনেক রূপ আছে। দেশভাগের রাজনীতির ফলে অসহায় মেয়েদের জন্য সারা জীবন কাজ করেও বহু মহিলা মনে করতেন তাঁরা সমাজের কাজ করেছেন, রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই। মেয়েদের পরিচয় গঠনে এ রকম বহুবিধ জটিলতার সূত্র শর্মিষ্ঠা দত্ত গুপ্তের চর্চার বিষয়। ইংরেজ রাজত্বের শেষ বেলায় এবং স্বাধীনতার ঠিক পরে প্রকাশিত মুখ্যত মেয়েদের প্রবন্ধ-সাহিত্যের খেই ধরে তিনি আলোচ্য বইটিতে জাগরণপ্রয়াসী মুক্তিকামী নারীর নিজেদের ও পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের আত্মবীক্ষণে স্ব স্ব সামাজিক পটভূমি, জাত, ধর্ম এবং এবং সমসাময়িক চিন্তার আবহ কী ভাবে বিধৃত হত? মেয়েদের মাতৃ-রূপ ও গৃহলক্ষ্মী-রূপ ঘরের বাইরের জগতে নারীর ভূমিকা ও কর্তব্যের ধারণাকে কী ভাবে প্রভাবিত করত? ধারণাগত ঝোঁক যে দিকেই পড়ুক, মেয়েরা তার মধ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতি করছেন, জেলে যাচ্ছেন, লেখালেখি করছেন, ঘরও করছেন, পত্র-পত্রিকাও চালাচ্ছেন এবং এ সবের মধ্য দিয়ে অন্যের প্রতি, নিজেদের প্রতি এবং কাজ ও কাজের লক্ষ্যের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে।
খেলনার কৌটোর মধ্যে কৌটোর মতো শর্মিষ্ঠা প্রশ্নের পর প্রশ্ন খুলে ধরেন ভূমিকাতে। দু’টি প্রশ্ন তাঁর গবেষণার মূলে গিয়ে পৌঁছয়: প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসে, মানে সাময়িকপত্রে, সমাজকল্যাণমূলক অধিষ্ঠানে এবং রাজনৈতিক সংগঠনে লিঙ্গভেদের কী ভূমিকা ছিল? পুরুষ ও নারীর আলাদা কাজের এবং ক্ষমতার-- ক্ষেত্র নির্ণয় করে সেগুলিকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা যে ছিল সেটা স্পষ্ট। তার সঙ্গে তাঁদের বুদ্ধি ব্যবহারের পথ ও চিন্তার উপযুক্ত বিষয় ভিন্ন করে রাখায় প্রতিষ্ঠানগুলির কী অবদান ছিল? লিঙ্গভেদ ও রাজনীতি পরস্পরকে কী ভাবে প্রভাবিত করে তার ইতিহাসের খোঁজে শর্মিষ্ঠা বেছেছেন একটি দৈনিক সহ ছয়টি সাময়িকপত্র। তাঁর বইয়ের অধ্যায়গুলি সাময়িকপত্র অনুযায়ী বিন্যস্ত।
===={=={{{{{{{{==={=={{={={={=={=={=={°}=
No comments:
Post a Comment