নীলমণি মিত্র মৃত্যু - ২৪ আগষ্ট,১৮৯৪. ৬৬ বছর বয়স। একজন ভারতীয় বাঙালি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তথা পুর-প্রকৌশলী এবং স্থপতি। যিনি ঊনিশ শতকের কলকাতার বিখ্যাত প্রাসাদের পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করেছিলেন । তিনিই ছিলেন বিহারের মধুপুরে বাঙালিদের বসতি স্থাপনের পথপ্রদর্শক । তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি ডায়মন্ড হারবার ২ নম্বর উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত বারাদা গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতা ছিলেন সুখময় মিত্র। নীলমণির শৈশব কেটেছে মামার বাড়িতে। স্কুলের পড়াশোনার শুরু হয় পাঠ কলকাতার ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারি স্কুলে। পরে ভর্তি হন তৎকালীন ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশনে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ)। তার হাতের লেখা ভালো ছিল না, সেকারণে উপযুক্ত কাজের সুযোগ না পেয়ে চলে যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজ অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাট রুরকি তে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে। তিনি প্রথম বাঙালি স্নাতক প্রকৌশলী হন। কলেজের পাঠ শেষ করে প্রথম বাঙালি হিসেবে রুড়কি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেন। সরকারি ইঞ্জিনিয়র হিসেবে শুরু করলেও পরে স্বাধীন ভাবে স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন। বাগবাজারে নন্দলাল বসুর বাড়ি, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের ‘প্রাসাদ’ ও এমারেল্ড বাওয়ার-সহ কলকাতার বহু বিখ্যাত বাড়ি তৈরি করেন তিনি। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন, কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর বাড়ি তৈরির জন্য কোনও পারিশ্রমিকও নেননি। মধুপুরে বাঙালি উপনিবেশের পথ দেখান তিনিই। ২৫ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টায় তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি ও স্মারক-ফলক বসানো হবে তাঁরই নামাঙ্কিত টালার নীলমণি রো-তে। থাকবেন হেরিটেজ কমিশনের সভাপতি শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ হিমাদ্রিশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ‘পাইকপাড়া-টালার ঐতিহ্য ও নীলমণি মিত্র’ শীর্ষক নীলমণি মিত্র স্মারক বক্তৃতা দেবেন কলকাতা-গবেষক দেবাশিস বসু। অনুষ্ঠানে জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের লেখা সর্ব্বপ্রথম বাঙ্গালী এঞ্জিনীয়র নীলমণি মিত্র বইটি প্রকাশ করবেন অনিন্দ্য কারফরমা। নীলমণি তার কর্মজীবন শুরু করেন গঙ্গা নদী প্রকল্পের গাঙ্গেয় ক্যানাল বিভাগে। এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিভাগের সহকারী স্থপতি হন তিনি। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তিরিশ বৎসর বয়সে, সহকারী প্রকৌশলী তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে উন্নীত হন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মতপার্থক্যের কারণে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। ঊনবিংশ শতকের প্রাসাদনগরী কলকাতার বহু প্রাসাদ-অট্টালিকা নির্মাণে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। কলকাতার 'সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ'এর ভবন ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন তথা বিদ্যাসাগর কলেজ ভবনের পরিকল্পনা তিনি বিনা পারিশ্রমিকে করেন। মহেন্দ্রলাল সরকারের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স’এর বৌবাজারস্থিত প্রথম ভবনটি তিনি কেবল বিনা খরচে তৈরি করেন নি, বরং বিজ্ঞান গবেষণার মহৎ উদ্দেশ্যে তিনি এক হাজার টাকা দান করেছিলেন। এছাড়াও তিনি নন্দলাল বসুর প্রসাদ, বাগবাজারের পশুপতিনাথ বসু, কীর্তিচাঁদ মিত্রের মোহনবাগান ভিলা, যতীন্দ্র মোহন ঠাকুরের প্রাসাদ এবং বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমারল্ড বোওয়ার নকশা নীলমণি মিত্রের পরিকল্পনাপ্রসূত। মাহেশের বিখ্যাত জগন্নাথ দেবের রথের নকশাও তার তৈরি। তৎকালীন বিহারের (অধুনা ঝাড়খণ্ডের) মধুপুরে বাঙালি-বসতি স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। নীলমণি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিজ্ঞানসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একটি 'করদাতা সমিতি' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উত্তর কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের পিছনে টালায় 'নীলমণি রো' তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেনিয়াটোলা অঞ্চলের গরানহাটায় একটি রাজপথ তার নামে "নীলমণি মিত্র স্ট্রিট" নামে রাখা হয়েছে। নীলমণি মিত্রের ১১৬ তম প্রয়াণ বার্ষিকীর পরেরদিন টালায় কুমারটুলির নব পাল দ্বারা ফাইবার গ্লাসে নির্মিত নীলমণি মিত্রের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনা করা হয়। |
নীলমণি'রা ছিলেন কাশীশ্বর মিত্রের অগ্রজ রূদ্রেশ্বর মিত্রের বংশধর যিনি কলকাতায় নামী ঘাটটি নির্মাণ করেছিলেন। মিত্র পরিবারের আদি নিবাস ছিল গোবিন্দপুর গ্রামে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বিতীয় ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণের সময় মিত্র পরিবার উৎখাত করলে তারা ভবানীপুর অঞ্চলের জেলেপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন।
চারুকলা অনুষদ - রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমারল্ড বোওয়ার ক্যাম্পাস।
No comments:
Post a Comment