।।। শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ ।।।
জন্ম ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার রাজধানী শহর নাইরোবিতে। তাঁর পিতা বেণীমাধব ঘোষ উগান্ডা রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা যান। পরে পিতার কর্মক্ষেত্র নাইরোবি শহরে তাঁর জন্ম হয়। সেখানে শৈশবে পিতৃ বিয়োগ হওয়ায় তাকে বারো বৎসর বয়সেই চাকরিতে ঢুকতে হয়। বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত হয় আফ্রিকাতে। সেই সুবাদে সেখানকার জংলি পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় ঘনিষ্ঠ ছিল। স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ না পেলেও তিনি স্বশিক্ষিত হন, প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ভালো খেলোয়াড় ছিলেন, সেকারণে সাহেবদের জন্য সংরক্ষিত লাইব্রেরিতে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশের দশকে বার্ড কোম্পানির চাকরি পান এবং কলকাতায় চলে আসেন।
তিনি প্রথমদিকে আফ্রিকার আদিম সোয়াহিলি ভাষাতে সড়গড় ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে বিশেষ পরিচয় ছিল না। কোন এক সূত্রে তার পরিচয় হয় কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে। তিনি পরিচয় সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার চেষ্টা ছিলেন। শ্যামলকৃষ্ণ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পরিচালনার কাজে তাকে সাহায্য করতে থাকেন। পরিচয়-এর আড্ডাতে তার উপস্থিতি নিয়মিত হয়। বেশি বয়সে তিনি বাংলা শেখেন এবং তিনি বাংলা রচনায় 'সহেলি' প্রভাবে হয়তো বেশ একটু বিচিত্র ভঙ্গি আয়ত্ত করে অনেক পাঠককে মুগ্ধ করে ফেলেন। বিদগ্ধসমাজে লেখক হিসাবে পরিচিতি পান। পরে পরিচয় পত্রিকায় প্রবন্ধাদি ও গ্রন্থসমালোচনা লিখতেন। বার্ড কোম্পানিতে চাকরির সূত্রে তাকে সিংভূম ও কেওনঝড় যেতে হয় ওই অঞ্চলে খনিজের সন্ধানে। তিনি নিজের প্রকৃতি আর পেশাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে থাকেন। একসময় তিনি ওড়িশা মাইনিং কর্পোরেশনে উচ্চপদে আসীন হন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি শান্তিনিকেতনে বসবাস করতে থাকেন। তিনি বাড়িতে কাঞ্চন ষাটোর্ধ্বদের নিয়ে আলবোলা নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। তিনি দেশ-বিদেশের বহু স্থানে ভ্রমণ করেছেন। তার রোমাঞ্চকর ভ্রমণবৃত্তান্ত শিশু-পত্রিকা "সন্দেশ" -এ প্রকাশিত হয়েছে।
- জঙ্গলে জঙ্গলে
- নাইরোবি থেকে রবি
- পরিচয়-এর আড্ডা
শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ২১ এপ্রিল কলকাতায় ৮২ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন।
তাঁর স্ত্রী ছিলেন ব্রেবোর্ণ কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রথম প্রধান অধ্যাপিকা বীণাপাণি ঘোষ।
###############################
No comments:
Post a Comment