Tuesday, 9 July 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। " আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী" - ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ । ভারতীয় উপমহাদেশের তিনি একজন বাঙালিশিক্ষাবিদ, গবেষক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, অভিধান প্রণেতা , বহুভাষাবিদ ,সাহিত্যিক, লেখক ও দার্শনিক ছিলেন। DT - 10.07.2024. Vol - 934. Wednesday. The blogger post in literary e magazine.

'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী।"



ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
 (১০ জুলাই ১৮৮৫ - ১৩ জুলাই ১৯৬৯)


 ভারতীয় উপমহাদেশের  তিনি একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ, গবেষক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, অভিধান প্রণেতা , বহুভাষাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন।

              পশ্চিমবঙ্গের  চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে ১০ জুলাই ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ (বর্তমান এইচএসসি’র সমমান) পাশ করেন। ১৯১০ সালে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে সম্মান-সহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ (১৯১২) ডিগ্রি অর্জন। এ ছাড়াও, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি (১৯২৮) লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পূর্বেই কিছুকাল তিনি ১৯১০ সালে যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন ভাষার প্রতি অতি উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একাধিক ভাষা শিক্ষা শুরু করেন।
পিতার নাম মুন্সী মফীজউদ্দীন মাতা হুরুন্নেসা।


তিনি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ, সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতিতে অনার্সসহ বি,এ এবং ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকারী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ কুমারী লাহিড়ী গবেষণা সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। অবসর গ্রহণের পরপরই বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের ফারসি ভাষার খন্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষপদের দায়িত্ব পান। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তৎকালীন “পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান” প্রকল্পের সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে বাংলা একাডেমিতে যোগদান করেন। এর পাশাপাশি ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমী কর্তৃক গঠিত বাংলা পঞ্জিকার তারিখ নির্ণয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ওই কমিটি একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক ও যুক্তি যুক্ত ব্যবহারিক বাংলা পঞ্জিকা প্রস্তুত করে যা বর্তমানেও অনুসৃত হয়ে থাকে। চর্যাপদের পদ কর্তাদের কাল ও ভাষার বৈশিষ্ট্য নির্ণয় বিদ্যাপতির কবিতার পাঠ্যোদ্ধার, চন্ডীদাস সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যে মতামত প্রদান করেছেন বলা যায় তা সর্বজন স্বীকৃত। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সারাজীবনের সাধনায় বেশ কয়েকটি ভাষাআয়ত্ত করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব পড়তে এবং সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী করতে গিয়ে তিনি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া, সিংহলি, বৈদিক, প্রাকৃত, তিব্বতি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষা আয়ত্ত করেন। তাঁর এরূপ ভাষা জ্ঞান ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ব চর্চা, ভাষার ইতিহাস রচনা, অনুবাদ কর্ম, ব্যাকরণ ও অভিধান প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির কেবল চর্চা করেই দায়িত্ব শেষ করেননি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষ্যে লেখনির মাধ্যমে ও সভা সমিতির বক্তৃতায় জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন. 



বাংলা সাহিত্যে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যঃ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, ইকবাল, আমাদের সমস্যা, বাংলা সাহিত্যের কথা (প্রথম খন্ড), বাংলা সাহিত্যের কথা (২য় খন্ড), বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত।

ধর্ম ও সংস্কৃত গ্রন্থঃ শেষ নবীর সন্ধানে, মহরম শরীফ, ইসলাম প্রসঙ্গ, কুরআন প্রসঙ্গ, হজ্জের ও রওযা পাকের জিয়ারতের দোয়া দরুদ, রোযাহ ঈদ ও ফিতরাহ।

অনুবাদগ্রন্থঃ দীওআন-ই-হাফিজ, শিকওয়াহ, ও জওয়াব-ই-শিকওআই, রুবাইয়াত-ই-উমর খইয়ম, মহানবী, বাইআত নামা, বিদ্যাপতি শতক, অমর কাব্য কুরআন শরীফ (অনুবাদ ও ভাষাসহ প্রকাশিত), বুখারী শরীফ, ঈদুল আযহা ও কুরবানীর আহকাম।

ছোটগল্পঃ রকমারী।
শিশু সাহিত্যঃ ছোটদের ইসলাম শিক্ষা, ছোটদের দিনিয়াত শিক্ষা, চরিত্র কথা, জ্ঞানের কথা, কথা মঞ্জুরী, নীতিকথা, সিন্দাবাদ সওদাগর, ছোটদের রাসুলুল্লাহ, সেকালের রূপকথা। সম্পাদিত গ্রন্থঃ পদ্মাবতী, গল্প সঞ্চয়ন, পূর্ব পাকিস্তানী আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, ইসলামী বিশ্বকোষ, উর্দূ অভিধান।

সম্পাদিত পত্রিকাঃ আল ইসলাম (মাসিক), বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা (ত্রৈমাসিক), আঙ্গুর (শিশুদের মাসিক পত্রিকা), ঞযব চবধপব (গড়হঃযষু), বঙ্গভূমি (মাসিক), তক্বীর (পাক্ষিক)
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস রচনাসহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বহু জটিল সমস্যার সমাধান করেন। বাংলা লোকসাহিত্যের প্রতিও তিনি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। গবেষণাগ্রন্থের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য এবং শিশুসাহিত্যের অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেন। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনাও করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো: সিন্দবাদ সওদাগরের গল্প (১৯২২), ভাষা ও সাহিত্য (১৯৩১), বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩৬), দীওয়ান-ই-হাফিজ (১৯৩৮), শিকওয়াহ ও জওয়াব-ই-শিকওয়াহ (১৯৪২), রুবাইয়াত-ই-উমর খয়্যাম (১৯৪২), Essays on Islam (১৯৪৫), আমাদের সমস্যা (১৯৪৯), পদ্মাবতী (১৯৫০), বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খন্ড ১৯৫৩, ১৯৬৫), বিদ্যাপতি শতক (১৯৫৪), বাংলা আদব কী তারিখ (১৯৫৭), বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (১৯৫৭), বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৫৯), কুরআন শরীফ (১৯৬৩), অমরকাব্য (১৯৬৩), সেকালের রূপকথা (১৯৬৫) ইত্যাদি। তাঁর সম্পাদিত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান এক বিশেষ কীর্তি। মুহম্মদ আবদুল হাই -এর সঙ্গে তাঁর যুগ্ম-সম্পাদনায় রচিত Traditional Culture in East Pakistan (১৯৬১) একখানা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর Buddhist Mystic Songs (১৯৬০) গ্রন্থটি চর্যাপদের অনুবাদ ও সম্পাদনা কর্ম। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রচিত; এর ধর্মতত্ত্ব নিয়েও তিনি আলোচনা করেন।



ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

বহু ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও প্রাচ্যে অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ছিলেন বহুভাষাবিদ এবং ভাষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন। তিনি ১৮টি ভাষা জানতেন; ফলে বিভিন্ন ভাষায় সংরক্ষিত জ্ঞানভান্ডারে তিনি সহজেই প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান; তাঁর ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর আন্তরিক বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ইসলামের প্রকৃত তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ-মাহফিলে বক্তৃতা করতেন। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মরণীয় উক্তি ছিল -

"আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী।"

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলা-কে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে ক-জন ব্যক্তি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।


ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়। ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ তাকে ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তান আমলে তাকে ‘ প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পদক(১৯৫৮)’ ও মরণোত্তর 'হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব' প্রদান করা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স তাকে সম্মানিত সদস্য (ফেলো) রূপে মনোনয়ন করে কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি তা গ্রহণ করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি. লিট’ উপাধি দেয়। ১৯৮০ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।তিনি ' চলন্ত শব্দ কল্পদ্রুম ' বলেও পরিচিত ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সমাধি
১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরণ করা হয়।










=======∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆\\∆∆∆∆∆∆∆====






















No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...