Wednesday, 30 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                      আলোচনা পর্ব :৫

আধুনিক যুগ যন্ত্রণায় শান্তির বার্তা "গান্ধীজির অহিংসা" নীতি.
===============¡!!!!!!!!!!¡============
                Doinik Sabder Methopath
               Vol - 147. Date - 01.10.20
               ১৪ আশ্বিন,১৪২৭. বৃহস্পতিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷®®®®®®÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷


"আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী"

"করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে "

আজীবন সংগ্রামের পায়ে হেঁটে হেঁটে মৃত্যু পার হলেন।অহিংসা এবং শান্তির দূত মোহনদাস করমচাঁষ গান্ধী। তিনি ভারতে জাতির জনক বলে সমাদৃত। সারা বিশ্ব তাঁকে জানে মহাত্মা বলে। রাষ্ট্রসংঘ বিশ্বে অহিংসা এবং শান্তির বার্তা প্রচারে তাঁর জন্মদিন ২রা অক্টোবর আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে উদযাপন করে। তিনি সত্য এবং অহিংসার ভিত্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গান্ধী বলেছিলেন মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি হল অহিংসা। ধ্বংসের কাজে নিযুক্ত সব চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের চেয়েও এটি অধিক শক্তিমান।

বিশ্বের অনেক নেতা, দেশ এবং সম্প্রদায় মহাত্মা গান্ধীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সারা বিশ্বের অনেক নিপীড়িত সমাজ সাফল্যের সঙ্গে গান্ধীবাদকে ব্যবহার করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজা মার্টিন লুথার, ভীয়েতনামের বিপ্লবী নেতা হো চি মিন এবং মিয়ানমারের আং সান সু চি মহাত্মা গান্ধীর অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

পোলান্ডের গান্ধীবাদী লেস ওয়ালেসা সেদেশের কম্যিউনিজ্‌মের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন, তাঁর ভিত্তি ছিল অহিংসার নীতি। কার্ডিনাল জেম সিনের নেতৃত্বে ফিলিপিনো জনগণের আন্দোলন রাষ্ট্রপতি মার্কোসের একনায়কতন্ত্রের পতনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। চেকোস্লোভাকিয়ায় অহিংস আন্দোলন সোভিয়েত শাসনের পতন ঘটায়।

১৯৯০এর দশকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ এবং জন প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং এর ফলেই নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পান এবং দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ম্যান্ডেলার নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল গান্ধীর অহিংস নীতিতে পরিপূর্ণ আস্থা। আর এর মাধ্যমেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যবাদের বিলোপ ঘটে। এই নীতি ম্যাক্সিক্যান-আমেরিকান শ্রম আন্দোলন এবং নাগরিক অধিকারের নেতা সিজার চাভেজের ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। অতি সম্প্রতি ২০১১র আরব স্প্রিং নামে পরিচিত গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের শান্তিপূর্ণ অভিযানে অহিংসার নীতি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। মধ্য প্রাচ্য এবং আফ্রিকায় স্বৈরাচারী এবং অত্যাচারী শাসনের অবসান ঘটে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে। উপসাগরীয় অঞ্চল এবং পশ্চিম এশিয়াতেও এই পথেই সংস্কার সাধিত হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা প্রমান করে দেখিয়েছে যে অহিংসা দ্বন্দ্বের অবসানে অধিক শক্তিশালী এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।

দালাই লামা বলেছেন আজকের লড়াই হল বিশ্ব শান্তি এবং বিশ্ব যুদ্ধের মধ্যে, মনের শক্তি এবং বস্তুবাদের শক্তির মধ্যে, গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদের মধ্যে। আর বর্তমান সময়ে এই লড়াইয়ের জন্য একান্ত প্রয়োজন হল গান্ধীবাদী দর্শনের।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার বলেছেন মানবজাতির প্রগতির জন্য গান্ধী অপরিহার্য। কিন্তু তাঁর অনুসরণকারী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, দালাই লামা, আং সান সু চি, বরাক ওবামা, দেসমন্ড টুটু এবং আর্জেন্টিনার এ্যাডল্‌ফ পেরেজ এসকুইভেল নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, তাই এটি অবধারিত যে মহাত্মা গান্ধী নোবেল পুরস্কারের উর্ধে।

অহিংসার অর্থ কেবল শান্তি বা হিংসার অভাব বোঝায় না, মহাত্মাগান্ধী যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে এটি সর্ব অর্থে সক্রিয় ভালোবাসা। গান্ধীজী অহিংসাকে সর্বাত্মকভাবে জীবনে রুপান্তরিত করতে পেরেছিলেন। মানবাধিকার এবং প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে তিনি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আজ যখন বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত, মানুষের জীবন পরমাণূ অস্ত্রের আশংকায় বিপন্ন, মহাত্মা গান্ধীর প্রেম এবং সত্য এবং অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা আরো অধিক প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

এ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং গান্ধী পরস্পরের অনুরাগী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে চিঠিপত্রের আদান প্রদান ছিল। আইনস্টাইন গান্ধীকে আগামী প্রজন্মের রোল মডেল বলতেন। আজ বিশ্ব যখন মহাত্মার সার্ধোশততম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করছে তখন গান্ধীর প্রশংসায় আইনস্টাইনের উক্তি স্মরণ করে আমাদের মনে রাখতে হবে আইন ও ন্যয় বিচারের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তই কেবল মানব জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারে। 

                                   
        ড. বিষ্ণু পদ জানা

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
 

Tuesday, 29 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆ ২০০ ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
            দ্বিশত জন্মবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে
           বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরণ কমলে
                           নিবেদিত

                     "কবিতা সংকলন"
============== ২০০ =============
               Doinik Sabder Methopath
                 Vol -145. Dt-29.9.2020
                   ১২ আশ্বিন,১৪২৭. মঙ্গলবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷!!!!!!!২০০!!!!!!!÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সম্পাদকীয় কলমে -
        আজ ১২ ই আশ্বিন, মঙ্গলবার। দ্বিপ্রহর। বঙ্গাব্দ ১৪২৭ ।
     জীবনটা ভাঙতে ভাঙতে সাগরের কিনারে এসে দাঁড়ায়। আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের ঘেরাটোপ নয়, সাংসারিক অভাব-অনটন নয় , মনের বিকার ও নয়, কোন এক আদর্শের অনাদর্শ কাজকর্ম কিংবা ব্যক্তিত্বের টানাপোড়ন, সত্যের বিকৃতি, কথায় ও কাজের অসংগতি - আমরা যে ভাবেই ধরি না কেন ! কঠোর জীবন সাধনার অনাড়ম্বর দেহাতি ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, বাংলা ভাষা ও বাঙালির জীবন বর্ণপরিচয় পরিচিত মুখ, জলের মত সরল কোমলমতি বিদ্যাসাগর মহাশয় দ্বিশত জন্মবর্ষে পূর্তি উপলক্ষ্যে নিবেদিত কবিতা সংকলন গুনমুগ্ধ অনেকের লেখায় সমৃদ্ধ। দৈনিক শব্দের মেঠোপথ পত্রিকা সেই সংখ্যা প্রকাশ করে আনন্দিত ও গর্বিত। লেখকদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
               ড. বিষ্ণুপদ জানা
                 সম্পাদক
     দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
                বিশেষ সংখ্যা
        ১২ ই আশ্বিন, ১৪২৭। ১২.০৫ মি.
             ২০১ তম জন্মদিন।

=============== ২০০ ==============
বিদ্যাসাগর নাম
      লায়েক আলি খান


বর্ণমালার ঘর পেরিয়ে
উঁকি দিলেম যেই
জল পড়ে আর পাতা নড়ে
শুনতে পেলাম যেই
সত্তা জুড়ে ছড়িয়ে গেল
বর্ষাদিনের গান
তার‌ই সাথে জড়িয়ে গেল
বিদ্যাসাগর নাম।

*************************
বিদ্যাসাগরকে নিবেদিত
সঞ্জয় সোম

আপনাকে লেখা কোথা থেকে শুরু করবো!!

ঠাকুরের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ
সাক্ষী মহেন্দ্র স্যার, মনে পড়লো ইতিহাস
কতবছর আগে ঠাকুর আপনাকে চিনেছেন
আমাদের চিনিয়েছেন
তখন তাকে সবাই পাগল বলে

নরেনের পিতৃ বিয়োগ হয়েছে
সংসারে তীব্র অভাব অনটন
নরেনের জন্য কিছু একটা করতে
ঠাকুর আপনার কাছে অনুরোধ পাঠালেন

আপনার পরিচয় আপনার কর্মজীবন
দলীয় রাজনীতি বারবার
আপনার মূর্তি ভেঙেছে
আপনাকে লিখে শেষ করা যায়?
আপনি মূর্ত থেকে বিমূর্ত
বিমূর্ত থেকে মূর্ত

আপনি বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর
আপনার কর্মজীবন আমাদের আত্মপরিচয়

আমি শিরদাঁড়া সোজা রাখা
          আপনার কাছে শিখেছি.

=============≠==========


বিদ্যাসাগর
অরবিন্দ সরকার

ইস্পাতের মত মানসিক দৃঢ়তা
ভারতীয় বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি অপ্রতিরোধ্য টান
সংকল্প রূপায়নে হিমালয় কঠিন প্রতিজ্ঞা
পড়াশুনার প্রতি সহজিয়া ভাব, স্মৃতিধর
দারিদ্র্য এসেছে ,কিন্তু তার মনকে কখনো কাবু করতে পারেনি ।
সময় জ্ঞান তুখর, প্রতিবাদী কণ্ঠ
নারী শিক্ষায় নারীদের মর্যাদা রক্ষায় অমোঘ ।
অন্তর মুখী উচ্চারণ,বাংলা ভাষার মানোন্নয়নে স্থির প্রতিজ্ঞ
সাধারণ মানুষের প্রতি মায়ের মত দরদ
দু:খে ক্লিষ্টে তাদের পাশে সকল সময় ।
আকাশের মত উদারতা
গাছেদের মত ধৈর্য শীল ।

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর আমাদের মর্ত্যলোকে র
আনন্দধ্বনি,অবিচলিত প্রবহমানতা ।

============≠=======
    
একটি আলো মৃত্যুহীন 
  অশোককুমার লাটুয়া 

জাগ্রত হৃদয়ের 
প্রাণময় প্রতিজ্ঞার শ্রদ্ধাশীল সার্বভৌম আলো 
পায়ে পায়ে হেঁটেছে 
পর্দানসিন নারীপৃথিবীর অব্যক্ত অন্তরমহলে। 
পুতুলখেলা বয়সের বালিকা বিয়ে 
বিধবা বিয়ে আর বহু বিয়ে 
সবকিছুর উপর নজর রেখে 
একটি মৃত্যুহীন আলো অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকারের চোখে আঙুল দিয়ে 
রক্ষণশীল মাতব্বরি সমাজের 
— ধূর্ত শকুন-শেয়ালের   
 দেয়াল ভেঙে দিয়ে 
গড়েছে মানবিক শতাব্দীর আধুনিক সংস্কারের ইমারত। 

একটি আলো 
সমব্যথী আলো 
হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের চেয়েও মহত্তম ঐশ্বরিক আলো। 
সে আলো 
বর্ণপরিচয়ের, বোধোদয়ের অভ্রান্ত আলো। 
এমন আলোর কাছে অপরিশোধ্য নতজানু ঋণ রেখে 
হেঁটে চলেছি আজও আমরা আলোর যাত্রী। 
*******************"*

সবার বিদ্যাসাগর
রাজীব ঘাঁটী

আমার ঈশ্বর বিদ্যাসাগর
মহামানবের মুখ
তাঁরই সঙ্গে সব বাঙালির
এগিয়ে চলার সুখ।

জীবন পথে চলতে গিয়েও
তাঁরই কথাই বলি
শিক্ষাগুরু ও দয়ারসাগর
তাঁরই পথেতে চলি।

সংস্কারে শুদ্ধ হয়ে সমাজ
গড়ে তুললেন যিনি
তাঁকেই আমরা আপোষহীন
মহাসাগর ই মানি।

মায়ের জন্য শ্রদ্ধা ছিল যাঁর
মন ছিল একাকার
তিনি সেই এক আর একক
সবার বিদ্যাসাগর।

=====================
বিদ্যা সাগর
মঞ্জীর বাগ

সেই জলের ফোঁটা এত অমূল্য ছিল
বোঝে নি কেউ; বুঝেছিল সেই বাল বিধবা
মেয়েটি। প্রতি একাদশীতে যাকে ফোঁটা জীবনের জন্য জিভ পেতে বসে থাকতে হোতো

আর বুঝে ছিলে তুমি বিদ্যাসাগর
প্রতি সাদা থান জড়ানো জীবন্ত লাশের 
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু বিন্দুতে তুমি
করুণার সাগর হয়ে গেলে
যে সাগরে লোনা নেই,  কেবল এক অমৃত আশ্রয়

পড়বে বলে যে মেয়ে উনুনের পোড়া কয়লা লুকিয়ে
রাখে;সেও তো তোমার বালিকা বিদ্যালয়ে
 তোমাকে  প্রনাম করে
তুমি মুক্ত বাতাসের মতো।। সেইদিন নারী নামের
জীবন্ত লাশের  মুখে ভাষা দিলে অক্ষর দিলে

অক্ষর মালা তোমায় প্রনতি জানায়
বর্ণমালা গান হয়ে বাজে বর্ণ পরিচয়ের পাতায়

আসলে সেই বর্ষণ  রাতে তুমি দামোদরই সাঁতরাও নি কেবল।। সাঁতরেছ ঘন ব্ষার প্রবল ঢেউয়ের মতো কুসংস্কার  অন্ধকার 

 তুমি আলো থেকে আলোময় হতে হতে
এক অনন্ত আলোর সাগর হয়ে যাও
এইঅমিয় সাগরের তীরে প্রতি বাংলা অক্ষর
অমরতার গান গায়।প্রণাম জানায়

=========================
অ  ক্ষর  অথবা
খুকু ভূঞ্যা

জন্ম কান্নায় লেখা আছে অ
ক্ষর তো প্রশ্বাসের ক্ষুধা।

জীবনের চালচিত্রে যে বর্ণমালা সাজানো
আপনার চিন্তা আঁকা নানান রঙে।

সেদিন প্রথম খড়ি স্লেট
ধান সেদ্ধ করতে করতে মা লিখে দিল শুরু
বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে চোখ ধুয়ে গেল আলোয়
হাসতে শিখলাম, ভাসতে শিখলাম
পিঠ সোজা হোলো হঠাৎ

মেঘ আসে ,মেঘ যায়
ঝড় আসে,বান আসে
অশনিফুলে ভরে যায় গাছ
আশ্চর্য আনন্দ বাজে স্নিগ্ধ জোসনায়
সসম্মানে বেঁচে আছি
প্রাণের মাঝে ধান দূর্বার আলো, আশির্বাদ--

=======================
  নীরব চাওয়া  
   পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


যতবার চেয়েছি একফালি জীবন আঁকতে
                          হয়ে যায় পাখি
               উড়ে যায় কোন সুদূরে 

যতবার একচিলতে রোদ্দুর পেতে চেয়েছি
                     ধরা দিয়েছে অন্ধকার
               ঢেকে গিয়েছে চারদিক

আর যতবার একমুঠো বালি হাতে তুলেছি 
                      অজান্তে বেড়িয়ে যায় 
                কিছু বোঝার আগেই 

তাই এবার হলুদ সকাল চাইনি 
বা ভোরের আলো চাইনি

শুধু আলোর সূক্ষ্ণগতি চেয়েছি 
বালির মসৃণ নিষ্ক্রমণ চেয়েছি

অনুশীলনে যাতে রপ্ত করে নিই
                       -  নীরব  প্রস্থান

=================
শিরোনাম - "ঈশ্বরের প্রতি"
কলমে - শ্রীলিম 
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
তোমার সাথেই পাঠশালায় প্রবেশ আর বর্ণপরিচয়,
যত বাঙালির ভিত গড়ে তুমি হ‌ও নি তো ক্ষয়। 
নিজের যা কিছু অর্জিত সহাস্যে করেছিলে দান, 
তবুও পাও নি বেলাশেষের বিদায়ী সম্মান। 
স্বদেশ আর স্বদেশীয়দের সংস্রব ছেড়ে, 
মিশে গিয়েছিলে শাল পলাশ মহুয়ার ভীড়ে। 

যাদের তুমি শেখালে জীবনের সাথে লড়াই, 
বাঁচালে প্রাণ অজস্র কন্যার আর বিধবার, 
যাদের জন্য কেঁদে উঠেছিল প্রাণ অন্তরে অন্তরে,
সেইসব অঙ্কুরেরা আজকে বটবৃক্ষ প্রায়, 
কুটিল সমাজের শতবাধা পেরিয়ে বহুবার, 
তোমার শিক্ষা ভুলে ভাবের ঘরে চুরি করে। 

এখন তো হাতেখড়ি শাসকের চাটুকারিতায়, 
মাতৃভাষার বর্ণমালাকে আর থোড়াই কেয়ার করে, 
"বাংলাটা ঠিক আসে না" এই বুলি আউড়ে, 
ঝটপট আর পটাপট উত্তর দেয় বিমাতার ভাষায়।

তুমি সহ্য কর নি কারোর চোখ রাঙানি, 
অকুতোভয়ে চপ্পল দেখিয়ে জবাব দিয়েছিলে। 
আজকে যত‌ই দেখি আশেপাশে আর চারিদিকে, 
সব নতমস্তকে স্বীকার করে জড়ো করে হাত দুখানি। 

কাপুরুষেরা তোমার মূর্তি ভাঙে কালিমালিপ্ত করে, 
তারপর বিমুগ্ধ অজ্ঞ জনতার চোখে মায়াকাজল লেপে,
মিডিয়াকে সাথে নিয়ে চলে প্রতিবাদ মিছিল।
তোমার দেওয়া জ্ঞান আর শিক্ষা আলোকিত করে, 
সেইসবকে পাথেয় করে যত‌ই এসেছি এগিয়ে,
ক্রমশ ভুলতে বসেছি বাড়াতে পারি নি এক তিল!

জীবনে কঠিন পরীক্ষার সময়েও নিজেকে দৃঢ় রেখে,
নিডরভাবে মোকাবিলা করতে হবে এও তোমার‌ই শিক্ষা।
আজ শাসকের বিমাতৃসুলভ আচরণে হাহাকার ঘরে ঘরে, 
তোমার পথের পথিকেরা সম্মান চেয়েছে চায় না তো কখন‌ও ভিক্ষা!

======================
ভুবনের গল্প
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ

স্কুল থেকে ফিরে ভুবন বলল, মাসী কোথা, মাসী কই ?
মাসী কাছে এলে, আবার বলল,মাসী এই দেখো বই।
মাসী বলে, বা বা, সুন্দর বই, এ বইটা পেলি কোথা ?
বন্ধুর বুঝি, তা বেশ তা বেশ, তোর কাছে রাখ ওটা।
এমন করেই ভুবন আনতো প্রতিদিন এটা সেটা,
তা দেখে মাসিমা বলতো, তুই এক সত্যি বাপের বেটা।
মা - বাপ না থাক আমি মাসী আছি,যদি কেউ আসে তেড়ে,
চোর বলে তোকে, আমি লাঠি দিয়ে তাকেই ফেলব মেরে।
এভাবে ভুবন যত বড়ো হলো – হলো তত বড়ো চোর,
যেদিন পুলিশ ধরল সেদিন মাসির কাটল ঘোর।
বিচারক দিল ফাঁসি ভুবনকে , ভুবন বলল, মাসী
তোমারই জন্যে আজকে আমার সুবিচারে হলো ফাঁসি।
চুরির প্রথম দিবসেই যদি ধরাতে আমার ভুল,
তাহলে আজকে আমি হতাম না সবার চক্ষুশূল।
এ বলে ভুবন হঠাৎ মাসির হাত ধরে দিল টান,
কানে কানে কথা বলার ছলেতে কেটে নিল তার কান।
বলো তো ছেলেরা বলো তো মেয়েরা, এ গল্প লেখা কার ?
এ বছর যাঁর দ্বিশত বছর এ গল্প লেখা তাঁর।
তাঁর নাম হলো ঈশ্বর আর পদবী বিদ্যাসাগর,
শুনে ছোটদের সকলের চোখ বিস্ময়ে হলো ডাগর।

===================
ঈশ্বরের ছাতা
শ্যামাপ্রসাদ লাহা


আদর্শ আহবানে এসে দেখি-
শিক্ষার শরীর জুড়ে এখন শুধুই মেকি।
সিলেবাসে বোধোদয় আসুক
দয়া পড়ুক ঝরে;
তবেই তো আসবে জ্ঞান
সবাকার হৃদ মাঝারে।
তোতা পাখি উড়ে যাক
প্রদীপ জ্বলুক জ্ঞানের
নম্বরগুলো নিপাত যাক
মূল্যায়ন হোক শুধু মানের।
নারী শিক্ষায় আসুক জোয়ার
বিদ্যাসাগর নামে-ki
সংস্কারের আসবে চিঠি
কথামালার খামে।
পরিচয় হোক বর্ণে আবার
বাঙালি তুলুক মাথা-
প্রখর রোদে ও ভয় কি আর
মাথায় যখন ঈশ্বরের ছাতা।

========================
তোমার মুখে আমার মুখে
   মনোতোষ আচার্য

তোমার মুখে আমার মুখে 
শুধুই একটি নাম
চলার পথে সাহস জোগায়
বীরসিংহ গ্রাম।

সিংহশিশু বিদ্যাসাগর
পরান জয়টিকা
আলোর পথে পা বাড়ালেন
ভারতমাতৃকা। 

বজ্রদৃঢ় বুকের পাটা
 করুণ কোমল মন
মানুষের সাথে মানুষের পাশে
আছেন সর্বক্ষণ। 

ভীষণ ঝড়ের গহন রাতে
আঁধার পাতালপুরে
মায়ের কান্না উঠলো ভরে
বঙ্গ আকাশ জুড়ে ;

ঠিক তখনই বুক পেতেছেন
পৌরুষেরই বিভা
আশায় ভাষায় মুক্তপ্রাণ
সাগর প্রতিভা।

দু'শো বছর পেরিয়ে গেল
পূরল নাকো অভাব
আমরা আজও সেই পরাধীন
কতকটা যে স্বভাব।

বিদ্যাসাগর অদ্বিতীয়
ধূলায় ধূসর চটি
তফাত শুধু মেরুদণ্ডে
মানুষ বড়ই খাঁটি। 

আমরা যারা পথ হেঁটেছি
তাঁর ছায়াতে ঋণী
মানুষ খুঁজি তাঁরই মতো
মহাত্মা মেদিনী। 

তোমার মুখে আমার মুখে  
মৃত্যু বিজয় নাম
হাজার বাধা লক্ষ বিবাদ
কাটবে মধ্য-যাম।       

====================≠==
প্রনমী তোমায় বিদ্যাসাগর
      দেবাশিস চক্রবর্ত্তী

মেদিনীপুরের পূণ্যভূমি
 বীরসিংহ গ্রামে,
জন্মেছিলেন সিংহ শিশু
বিদ্যাসাগর নামে ।

ঠাকুরদাস আর ভগবতীর
আদুরে সন্তান ,
বাড়িয়েছিলেন ঞ্জানের তেজে
বঙ্গভূমির মান ।

তখন হাজার বঞ্চনাতে 
জর্জরিত নারী,
বিদ্যাসাগর মুক্তির পথ
দেখালো তাদেরই ।

শিক্ষা এলো, আইন হলো
বিধবাদের জন্য ,
বুঝলো সবাই এই ভারতে
নয়কো নারী পণ্য ।

মানবতার মূর্ত প্রতীক
দয়ায় ভরা হৃদয়,
দু - শ বছর জন্মদিনে
প্রনমী তোমায় ।

======================
বিদ্যাসাগর-দয়ার সাগর।
প্রেমেশ পন্ডা 

বিদ্যাসাগর বুদ্ধি প্রখর 
মেধাতে ভরপুর।
পড়াশুনায় সবার সেরা
ছিলেন ভীষন চতুর। 

মর্যাদাবোধ সহজাত 
মেরুদণ্ড সোজা,
ন্যায় অন্যায় সচেতনে
ছিলেন না চোখবোজা। 

মা যে তাঁর ভীষন আপন,
মা'ই তো ভগবান,
মায়ের ডাকে বাড়ি আসতে 
দামোদর সাঁতরান। 

ভগবতী মা দয়ালু ছিলেন
ছিলেন ভাগ্যবতী,
নারী শিক্ষা, বিধবা বিয়ে
ছিল তার সম্মতি। 

বিদ্যাসাগর বেঁটে খাটো
বজ্রকঠিন স্বভাব।
জাতিবোধে,জাতিয়তায়
ছিল না কোন অভাব। 

ইংরেজদের রক্তচক্ষু 
মানতে না তিনি
তোষামুদি নয় প্রতিবাদে
সমুজ্জ্বল ইনি।

নারী অশিক্ষা বহুবিবাহের
চরম বিরোধিতায়, 
বিধবা বিয়ে আইন করলেন
ইঃরাজ সহায়তায়।

সমাজগঠনে উন্নয়নে 
তিনি সজাগ ছিলেন।
শিক্ষাহোক সবার জন্য
এটাই চেয়েছিলন। 

সংস্কৃততে তাবড় ছিলেন,
ইরাজি ও জানতেন,
গদ্যরূপে বাংলাকে তিনি
নতুন রূপ দিলেন। 

নারী অশিক্ষা কুসংস্কার
সমাজ দূষন করে,
তাই তো তিনি স্কুল খুললেন
গ্রাম -গঞ্জে শহরে। 

বিদ্যাসাগর, দয়ার সাগর
হৃদয় উদার ছিলেন,
দানধ্যান আর মানবতায়
হৃদয় জিতে নিলেন। 

দয়ার যে তার নেই তুলনা,
পরোপকারী ছিলেন,
মধুসূদনের বিপদকালে 
সব সামলে নিলেন। 

বিদেশ থেকে দেশে আনলেন 
সব ঋন শোধ দিয়ে,
কেবা আজ ও এত মহৎ
মহৎ হৃদয় নিয়ে!!

বর্ণপরিচয়,কথামালা
ব্যাকরণ কৌমুদি,
বোধদয় আর শকুন্তলা 
তিনি হলেন আদি। 

সারা জীবন শিক্ষাব্রতী 
সমাজ সংস্কারক,
এমন মানুষ ক্ষনজন্মা
ভীষন বিবেচক। 

যা ভেবেছেন তাই করেছেন
এমনি জেদী ছিলেন,
বীরসিংহের সিংহ শিশু 
জগৎখ্যাত হলেন।

*************************
অক্ষয় মনুষ্যত্বের পূজারী বিদ্যাসাগর
             নব কুমার মাইতি

কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কাল স্রোতে মানুষ দিশেহারা
প্রশাসনিক সুবিধাবাদের চোরাবালিতে ভূলুণ্ঠিত নারীর
 সম্ভ্রম, শুভ চেতনা, মানবতা সৌভ্রাতৃত্ব
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, সাইক্লোন, সুনামী
তুমি এসেছিলে অক্ষয় মনুষ্যত্ব নিয়ে
দয়া , জ্ঞান ও মানবিকতার ত্রিবেণী সঙ্গমে গড়া
তোমার জীবনবেদ‌। একদিন ঋষি অন্যদিকে মানবসেবায়
নিবেদিত প্রাণ রাজা, কল্যাণকামী ঋত্বিক, মাটির ঈশ্বর
 আজ একবিংশের সমাজে শরীরে ক্যান্সার 
ক্যান্সার দেহে-মনে, মানবিক মূল্যবোধ 
ধর্ম আজ অধীর কম্পমান, বিপন্ন বসুধা 
ধ্বংস সৃষ্টির দোলাচলে এ সভ্যতা মৃত -বৎসা উত্তরাধিকারহীন
 ভালোবাসা তোমার ধর্ম - বাল্যবিধবা বিবাহ কুসংস্কার ছিন্ন করে 
তোমার রচিত বহু গ্রন্থ মানব মুক্তির পথ দেখিয়েছে -
 জীবনের কাল যেন শেষ হয়
 এই গ্রহের জীব পালাবে কোথায় ?
 আমাদের অকরুণ পাপ, ধ্বংসময় প্রবৃত্তিহীনতা
 ওগো জ্ঞানতাপস, জাগ্রত ধ্যান, নবোদিত কল্যাণ
 তোমার গভীর মেধা, অনমনীয় প্রত্যয়
 সকরুণ ক্ষমা নিয়ে এসো
 অমারাত্রির অবসান হোক, জন্ম হোক সত্যদ্রষ্টা দেবশিশুর !

=======================
ঈশ্বর কে মনে রেখে 
সুতপা দেবনাথ


ঘরে ফেরার রাস্তা বলে দিতে পার কেউ? 
আমি বাড়ি যেতে চাই 
কুয়াশা ঘেরা বাতাস
শীতের আমেজে জড়িয়ে রাখা বাতাস 
আমার কানে কানে বলে যাচ্ছে 
ওদিকে নয় ও'দিকে নয় 
আমি দিশাহারা 

তুমি চিনিয়ে দিতে চেয়েছিলে 
আদর্শ লিপি থেকে বর্ণপরিচয় হাতে ধরিয়ে 
ইস্কুলের পথ দেখিয়ে তুমি চিনিয়ে দিতে চেয়েছিলে 
তোমার দেখানো পথে আমি বাড়ি যেতে চাই।

======================
বিদ্যাধর
মনীষা কর বাগচী

বিদ্যার সাগর তুমি ওহে বিদ্যাধর
নারীর পরিত্রাতা তুমি, তুমি দয়ার সাগর।

ওহে প্রকৃত বন্ধু অনন্ত তোমার দয়া
জ্বলন্ত চিতায় জ্বলছিল সতী জ্বলছিল তোমার হিয়া।

মায়ের আজ্ঞা পালন করা, মাকে ভালোবাসা
শিখিয়েছ তুমি মায়ের জন্য উত্তাল তরঙ্গেও যায় ভাসা। 

আরও শিখিয়েছ দেশের জন্য দশের জন্য কেমন করে বাঁচতে হয়
বুঝিয়েছ মা-ই শিশুর প্রথম গুরু তাই মেয়েকে শিক্ষা দিতে হয়। 

মায়ের জাত বিধবা হয়ে একটু একটু করে মরছিল
তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে তোমার‌ অশ্রু ঝরছিল।

উঁচু নিচুর ভেদ ভুলে সকলকে দিয়েছ ভালোবাসা
বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করে নারী মনে জাগিয়েছ আশা।

বর্ণমালার বর্ণ তুমি, তুমি শিক্ষা গুরু,
দয়া করুণা রক্তে মিশেছিল তোমার,
বাংলা গদ্যের তুমিই করেছিলে শুরু।

সমাজের কূপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলে, হৃদয়ে ছিলনা ভয়
শ্রদ্ধা, সততা, ধৈর্য্য, বীরতা, প্রতিজ্ঞায় অটল থাকা তোমার কাছেই শিখতে হয়।

হে দানবীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান
 তোমার রাতুল চরণে জানাই শতকোটি প্রণাম।

বাংলার বুকে আবার বিদ্যাসাগরের জন্ম হোক
জগৎসভায় বাঙালির মুখ সগৌরবে জ্বলজ্বল করে উঠুক।

=======================
দরদী বিদ‍্যাসাগর"
কুমার আশীস রায়


কত নদী নালা আজ‌ও বহমান এই উপমহাদেশে
নানা সম্পদে ভূষিত জলধি "ঈশ্বর" নরবেশে ।

বহু যাতনা লাঞ্ছনে ভরা সম্মুখে প্রতিকূল
শত বিরোধেও টলেনি যাহার , মতামত একচুল ।

আজন্ম বীর মৃগেন্দ্র সে নরমাঝে বিক্রমে
সমাজের তরে সংস্কারেই , প্রাণপাত করে শ্রমে ।

সধবা হলেন বিধবারা পুনঃ --- বিধানের প্রণয়নে
সক্ষম তাঁরা নবগৃহ বাঁধি , দুঃখের বিমোচনে ।

বিদেশীর রাজে তিনি বঙ্গের বিদ‍্যার চূড়ামণি
রমণীকুলের শিক্ষার তরে তোলেন জয়ধ্বনি ।

দলিত , অনাথ , আদিবাসী হতদরিদ্র দীনজনে
অকাতরে দান প্রাপ্ত ফিরেছে সকলেই খুশী মনে ।

মহৎ কর্মসাধনে প্রাপ্তি ---- পাদুকা, গালি ও পাথর
শক্ত কঠিন ছিল সে মানব , হয়নি তবুও কাতর ।

বাঙালীর ঘরে বর্ণমালার যারা পরিচয় পান
দিবারাত খেটে বিদ‍্যাসাগর করেছেন সমাধান ।

কুরীতি কুপ্রথা পালিত অযথা সমাজে আঘাত হানে
সারারাত জেগে শাস্ত্র বিচারে, সত‍্য জাগালো প্রাণে ।

আজ‌ও কি তাঁকে বুঝেছি সঠিক আছি অজানায় ঘিরে
করজোড়ে বসে চলেছে প্রয়াস , বিদ‍্যাসাগর তীরে .

======================
অলরাউন্ডার
     গৌর চাঁদ পাত্র

ক্রিকেট খেলার জগতে এখন
অলরাউন্ডারের বড়ো কদর।
ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং এ
সবেতেই হতে হবে সমান দড়।
১৮২০ র ২৬ শে সেপ্টেম্বর
বীরসিংহের ড্রেসিংরুম থেকে নির্ভীক নির্ভয়।
বেরিয়ে এলেন এক অলরাউন্ডার
খেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু জয় আর জয়।
দারিদ্র্য ধর্মান্ধতার স্পিন বলে
ব্যাটিং করেছেন অকম্প দৃঢ়তায়।
বাল ও বহুবিবাহ রোধে, বিধবাবিবাহ প্রচলনে
ইতিহাস আজ , বিরাট কোহলি- দক্ষতায়।
অশিক্ষার কালো বাউন্ডারির মাঝে-
কুশিক্ষা কুসংস্কারের ছুটন্ত বল।
স্কুল গড়ার ক্যাচ ধরতে ধরতে
অর্থাভাব- ঘুর্ণীবায়ে ও উদ্যম অটল।
গদ্যসাহিত্য রীতির বোলিং টেকনিকে
অচলায়তন উইকেট ভাঙলেন বলে।
বঙ্গসাহিত্যের প্রথম ফাস্ট বোলার
টিমকে জেতালেন সাহিত্যে অবহেলে।
১৮৯১ র ২৯ শে জুলাই
মাঠ থেকে নিলেন বিদায়।
আজও আমাদের অলরাউন্ডার কোচ
জীবন- ক্রিকেটে জেতার সহায়।

=======================
একাত্ম হও
  কৃপাণ মৈত্র

দুর্বল মাথা ঝুুঁকাও ,দৃৃৃঢ় মেরুদন্ড কাকে বলে 
দেখে নাও ।
হাতজোড়় করে ভিক্ষা নয় ,নয় মাথা নত 
 মাথা তোল অধিকার চাও
 ধর্মব্যবসায়ীর স্বার্থ চুলায় যাক,শক্ত হও
  মনের শাসনকে সানাও
  শিক্ষা শুধু পুরুষের ! পুরুষতন্ত্রের অবসান হোক।
কলকাকলিতে প্রাঙ্গণ ভরে যাক।
 অনেক শয়েছো ,পড়ে় পড়ে মার খেয়েছো
 এবার তো শির ওঠাও।
 তোমার সামনে এত বড় মহীরুহ শাখা প্রশাখায় আকাশ
 প্রাণ ভরে শ্বাস নাও।
 তোমার ভীরুতা কাপুরুষতার বিসর্জন দিয়ে
  সত‍্যের গান গাও ।
তুমি জাগো, জাগরণের বার্তা দেশে দেশে
 জনে জনে পাঠাও ।
শুধু ছবি বা মূর্তিতে নয়,মালায় বা ধূপে নয়,
প্রাণের শ্বসবায়ুতে আত্তি করে নাও।
তোমার আরামে তিনি আছেন, ঘামেও তিনি।
তুমি একাত্ম হয়ে যাও।

==========================
ঈশ্বর তুমি বিদ্যার সাগর 
সুব্রত ঘোষ / দিল্লি  

প্রণাম আমার নিও ঈশ্বর তুমি বিদ্যাসাগর 
লিখতে বসেছি তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা 
জানি তোমার নখের যোগ্য কোনোমতে আমি
                                                                 নই
বলি করজোড়ে তাই ক্ষমা করো আমার ধৃষ্টতা ।
কোন্ নক্ষত্র হতে কোন্ শুভক্ষণে এসেছিলে 
                                               ভগবতীকোলে
কতো দারিদ্র্যে কাটিয়েছিলে তুমি তোমার
                                                 বাল্যাবস্থায় 
লেখাপড়া তুমি করেছিলে রাতে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে রাস্তায় 
একদিন শেষে বিদ্যার আশে কলিকাতা গেছিলে চলে
ব্যাকরণ, বেদান্ত, কাব্য, ন্যায় জ্যোতিষে 
                     করেছিলে পান্ডিত্য অর্জন 
প্রশংসাপত্র ছাড়াও তুমি পেয়েছিলে উপাধি 
                                           ' বিদ্যাসাগর '
সুধীজনে সবে বুঝেছে তখন করেছে গুণের
                                                    কদর
 কায়মনোবাক্যে তুমি চেয়েছিলে যদিও জাতির চরিত্র গঠন ।
বহু দোষত্রুটি দেখেছিলে তদানীন্তন বাঙালি 
                                                    সমাজে
নামে ঈশ্বর মানোনি ঈশ্বরে তুমি ভালো-
                                       বেসেছিলে মানুষে
ছিলে অনন্ত দয়ার সাগর অসহিষ্ণু ধর্মের 
                                                 গোঁড়ামিতে
বহুবিবাহ রুখে বিধবার বিবাহ দিতে 
                               হেনেছিলে কঠোর কুঠার
উপেক্ষা করেছিলে ব্যাধিগ্রস্ত সমাজের 
                                  বিভৎস হুঙ্কার ।
সিংহের মতো করে গেছ কাজ তোমার 
                                      জীবদ্দশায় 
কতো গ্রন্থের সঙ্গে রচেছো উপক্রমণিকা
                                   ব্যাকরণ কৌমুদী
তবুও বাংলায় 'বর্ণপরিচয় ' রবে শিশুদের 
                                     বুনিয়াদী শিক্ষায় ।

=============================
ঈশ্বর বিহীন
    অনিমেষ মন্ডল


একটা সকাল কাঁচা সোনা রোদ, শিউলি শিশির
আর মুক্তোর মতো কুচি কুচি বর্ণের শৈশব পরিচয়
পাখিদের কিচিমিচি, দুব্বার ঘ্রাণ লাগা পাঠশালা রব
রাখালিয়া বাঁশি,সুবোধ বালক নীতিমালা এঁকে দেয়।


অভাবী মানুষের দুর্বার স্বপ্নে প্রেরণার হাওয়া লাগে
অজেয় পৌরুষের দীপ্ত চেতনায় জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ জাতি
সাগরের তীর থেকে ভেসে আসে করুণার স্পর্শ দুঃখিনী দুয়ারে
আর্ত পিড়ীতের দীর্ঘ আকুলতায় মরমী ব্যথা জাগে।


হৃদয়ের অতল পরিধি থেকে শুদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়
অথচ আজো অবজ্ঞার ঘৃণ্য পাহাড় বিদ্ধ করে অন্ত্যজ কুটির
বিদ্যাধৌত জলে স্নিগ্ধ নারী দিকে দিকে বিজয়িনী
তবু তো বাসনের স্তুপে কেটে যায় অসহায় নারী জনম।


সত্ত্বায় চেতনায় কতটুকু ধারণ করে এ ন্যুব্জ শরীর
ক্রমশ আঁধারের আড়ালে সান্ত্বনা খুঁজে চলি
এভাবে শতকের পর শতক পেরিয়ে যায় অমরত্ব নিয়ে
ছুঁতে পারিনা ও পদপ্রান্ত ক্ষুদ্র জীবন ঈশ্বর বিহীন।

,***************************

মানুষ ঈশ্বর 
শিশিরকুমার বাগ 

কালের দূরত্ব একটি মানুষকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যায় 

আমাদের বিস্ময়ও সেই উচ্চতাকে স্পর্শ করতে পারে না 

বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে 

কোটি কোটি ঈশ্বর আল্লার বাস

তপস্যা করলে দেবতা হয়তো বা দেখা দেন

কিন্তু মানুষের দেখা পাওয়া বড়োই দুষ্কর

মানুষের মতো মানুষ 

ঈশ্বরের মতো মানুষ।

============================
অনির্বান আলো 
জয়দেব মাইতি 

আলো হাতে, যে মানুষ সভ্যতার আলপথে -আজও নিরন্তর হাঁটেন-
তিনি কি কখনো বিশ্বাসঘাতক হতে পারেন? কিংবা স্বার্থপর? কখনো কি সন্ধান দেন অন্ধকারের?

আজন্ম,সত্য আর বিশ্বাসের ঝুলি নিয়ে ঐ একজন মানুষের দোরে দোরে ভাষায় আলো দেন-
আলো দেন সংস্কৃতির-
অনির্বাণ আলোকবর্তিকা নিয়ে জাগিয়ে রাখেন তাদের সভ্যতা-
শিক্ষার বিপ্লব তা তিনিই এনে দেন-

চটি পায়ে - ধূতি পরা মানুষটি আজও হাঁটেন-
সভ্যতার আলপথে ।  
হাতে অনির্বান আলো -

যে আলো অবিশ্বাসী নয়- দুঃখ ঘোচায়- আমাদের মানুষ করে --

============================{
বিদ্যাসাগর স্মরণী
র জ ত দা স

বীরসিংহ থেকে যে স্ফুলিঙ্গ কলকাতা পৌঁছালো
বাতি স্তম্ভের নীচে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সেই ঈশ্বর
শিশুর মস্তিষ্কের জন্য তোমার পরিচিত বর্ণরা
শক্তহাতে আঁকড়ে ধরে ব্যাকরণ।
নতুন শৃঙ্খলিত গদ্যের কাঠামো
মগজের মেঝেতে শুয়ে বিচিত্র বোধদয়।
অবিশ্রান্ত তুমি শতাব্দী থেকে শতাব্দী
যে জীবন চলমান প্রথম ভাগ হয়ে দ্বিতীয় ভাগে
অক্ষর নির্মাণ হয়েছে কলম কাগজে।
হাঁটা পথ রুদ্ধ হয় পিচ্ছিল স্মরণী
মাইলফলক স্পর্শ করে পুণ্যি,
মানুষের মতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দামোদর
নিরক্ষর মানুষের আক্ষেপ নিয়ে
কার্মাটাঁরে মিশেছে দয়া ও বিদ্যার সাগর।

=========================
স্ট্যাচু।
শুভ্রাশ্রী মাইতি।

ধুতি-চাদর-চটির একটা বিবর্ণ স্ট্যাচু
ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গলির মুখে
হাজার বছরের অন্ধকারকে শাসন করার অনমনীয় দৃঢ়তায়।
এইমাত্র রাবেয়ার বই-খাতা কেড়ে বিয়ের কলমা পড়ালো কাজী।
উড়ে আসা একটা বড় পাথরে স্ট্যাচুর বুকের বামপাশে একটা বড় চিড়ফাট।

কিছুক্ষণ আগে কয়েকশো বিদ্রূপের আঙুল উঠেছে 
বিধবা মিনতির লাল চেলী পরা শরীরটার দিকে।
কটা বাঁকা চোখের চটচটে চাউনি কালি লেপেছে হরিমতীর সাদা শাড়িতে।
লোহার রডটা সজোরে চিরে দিল স্ট্যাচুর উন্নত,প্রশস্ত ললাট।
এইমাত্র দশ বছরের ফুলমণি বিক্রি হয়ে গেল বিশ হাজার টাকায়
শরীর আর মনের খিদে মেটানোর অন্ধকার তাগিদে।
স্ট্যাচুটা টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেল চারপাশে।

পশ্চিমের আকাশের ঘন অন্ধকার জাঁকিয়ে বসেছে পুবের আসনে।
ভাঙা টুকরোগুলোর ভেতরেও তিনি বুক বাঁধেন আকুল বিশ্বাসে।
পুবের লাল আলোটা ফুটলেই,ঠিক ছুটে আসবে নবীন শিশুর দল
নরম হাতের মুঠোয় ধরা সেই চিরন্তনী গোলাপী বই।
হাতে হাতে কুড়িয়ে নেবে ভেঙে যাওয়া সবকটি টুকরো।
ভালোবাসার আশ্চর্য আঠায় জুড়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবেন তিনি বিশ্বাসে
ঠিক যেভাবে দাঁড়িয়ে আছেন আজ দুশোটি বছর ধরে।

=======================÷÷

মেদিনীপুরের সিংহ-শিশু
                       গোবিন্দ মোদক  

মেদিনীপুরের সিংহশিশু ইশ্বরচন্দ্র নাম ,
পদবিটা বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরসিংহ ধাম ! 
ঠাকুরদাস আর ভগবতীর পন্ডিত সেই ছেলে, 
সব বিষয়ই ফেলেন শিখে দারুণ অবহেলে ! 
ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর জন্ম, আঠারোশো কুড়ি, 
পাণ্ডিত্যে তাঁর মতো মেলে নাকো জুড়ি ! 
শিক্ষা-দীক্ষা, পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী, 
একুশ বছর বয়সে পেলেন বিদ্যাসাগর উপাধি !
অধ্যাপনার কাজ নিলেন কলকাতার কলেজে, 
যোগ্যতাটা দেখালেন স্কুল-পরিদর্শকের কাজে !
দান-ধ্যান ও পুণ্য কাজে ব্রতী হলেন তিনি,
দয়ার সাগর, বিদ্যাসাগর, করুণাসাগর যিনি ! 
মেয়েদের শিক্ষিত করতে গড়লেন ইস্কুল, 
পরোপকার, ন্যায়নীতিতে হয় নাকো তাঁর ভুল !
বাংলা গদ্যের জনক তিনি লিখলেন বই কতো,  
বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়ের মতো ! 
বাংলা সাহিত্যে গেলেন তিনি অবদানটা রেখে, 
বিধবাবিবাহ চালু করলেন নীতিতে অটল থেকে !
বিদ্যাসাগরের মতো মহান ভূ-ভারতে নাই, 
জন্মের দ্বি-শতবর্ষে তাঁকে প্রণাম জানাই !!

========================
আলোর পথিক 
কাজী সামসুল আলম 

শস্যের বীজ থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে মাটিকে আলোকিত করে দিয়ে গোটা মাঠ ফসলে উদ্বেলিত 
প্রতিটি শস্য দানায় বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা 
আলোর তলায় দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজেই সারা শহরের সমস্ত আলোকস্তম্ভ হয়েছেন, বিদ্যাসাগরের আলোয় সারা শহর আলোকিত 
অন্তর থেকে হৃদয় বের করে বিলিয়ে দিয়ে সবার হৃদয়ে নিজের নাম খোদাই করে প্রতিটি বাড়িতে একটা করে বিদ্যাসাগর গড়ে তোলা এক অবাক বিস্ময় স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্রই করতে পারেন 
সিঁথিতে সিঁদুর দিতে গিয়ে বিধবাবধূ ঈশ্বরচন্দ্রর চন্দ্র বাদ দিয়ে দুই হাতে তাঁকেই প্রণাম করেন রোজ, তাঁদের ভগবানকে 
অক্ষরের খোদাই করে দিয়ে সারা বাঙালির মুখ খুলে দিয়ে যাওয়া বিদ্যার সাগর শূন্য দিগন্তে আজীবন বিদ্যমান, 
তাঁর পথে পথিকের অভাবে আগাছায় পরিপূর্ণ, তাঁর হেঁটে যাওয়া পথে আর কোনো পথিকের দেখা নেই... দেখা নেই... দেখা নেই 

**********************





নারীর কথা
নন্দিনী সরকার

নারীর জন্য এমন করে কাঁদে নি কেউ আগে,
নারীর জন্য তেমন করে
ভাবে নি গো আগে।
জীবন জুড়ে দুঃখ নিয়ে
কাটত নারীর কাল ,
সমাজ সেবক ভাবত নিয়ম 
এইতো নারীর হাল ।
ছোট্ট মেয়ে বিধবা যে 
করে একাদশী,
জল স্পর্শ করতে মানা !
কাঁদে রবি শশী ।
দৃষ্টি পড়লে দুষ্টু লোকের
বাল বিধবাই দোষী ,
প্রায়শিত্ত করতে গিয়ে
লড়ত দিবা নিশি।
 ভগ্নী কন্যা জায়া মাতা 
ধারন করে জীবন,
নারীর প্রতি ভালোবাসায়
ভরা তাঁহার ভুবন।
বিধবাকে বিবাহ দিয়ে
দিলেন নতুন ঘর,
শিক্ষা দিলেন, মান দিলেন
তিনিই বিদ্যাসাগর।

*************************



তুমি ফিরে এসো
 সুকান্ত আচার্য্য

চারিদিকে শুধু চোখ ঝলসানো কৃত্রিমতা,
আধুনিকতার উগ্রতায় শৈশব বড় অসহায়,
'অ, আ, ক, খ' ভুলে 'এ, বি, সি, ডি' তে মজেছে ছেলেমেয়ে,
সরল 'শিশুকবিতা' হারিয়ে যাচ্ছে 'রাইমে'র ভিড়ে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'বর্ণপরিচয়' হয়ে।

দু মুঠো ভাতের লড়াই আজও জারি আছে,
আজও পথশিশু চেয়ে থাকে আস্তাকুঁড়ের দিকে,
'দানের বিজ্ঞাপনে' হারিয়ে যাচ্ছে 'প্রকৃত দান',
প্রদীপের তলায় অন্ধকার আজও আছে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'দয়ার সাগর' হয়ে।

'বইমুখী শিক্ষায়' মজেছে গোটা দেশ,
'মনুষত্ব' হারিয়ে যাচ্ছে 'উচ্চাকাঙ্ক্ষা'র চোখ রাঙানিতে,
তোমার মূর্তিও আজ কালিমালিপ্ত হয়,
অন্ধ এ সমাজকে 'জ্ঞানচক্ষু' দিতে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'জ্ঞানের সাগর' হয়ে।

***********************



এক যে আছেন বিদ্যাসাগর 
 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর ভীষণ রকম গোঁয়ার
ধাক্কা দিয়েই ভেঙেছিলেন অন্ধকারের খোঁয়াড়।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাঠাসা মাথায়
বই লিখেছেন অনেকগুলো দিস্তে দিস্তে পাতায়।

হাতে দিলেন বঙ্গজনার বর্ণপরিচয় 
শিক্ষা শুরুর প্রথম সিঁড়ি সবারই প্রত্যয়।

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তোমার এমন মন 
স্কুল করেছো জেলায় জেলায় আলোর প্রবহন।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর জ্ঞানের সাগর তিনি
তার জ্যোতিতে জ্বলে ওঠেন দেশমা গরবিনি।

এমন যে তার উদারতা পকেট উজাড় করে
দুঃখীজনা তাকিয়েছিল কেবল তোমার দোরে।

এক যে আছেন বিদ্যাসাগর মনের কোঠায় জেগে
লেখাপড়ায় আজও আলো তোমার আদর লাগে।

********************



   অগ্নিপুরুষ
অমৃতা খেটো

সমাজের মাথারা বসে বসে পরমান্ন  
খাচ্ছিলেন
তিনি এসে ভোগের থালা দিলেন সরিয়ে
খেরোর খাতা দিলেন ছিঁড়ে...
ওই খাতায় শত শত নারীর
দুর্ভাগ্যের কাহিনী লেখা ছিল,
নারীরা সমাজের যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত
এই কন্সেপ্টটা টুকরো টুকরো করে ভাঙলেন
বন্ধ করলেন বিবাহ নামের পুতুলখেলা।


অনেক সংঘর্ষ, আত্মত্যাগ আর অর্থনষ্টের পর
বন্ধ হল বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের মত কুপ্রথা,
বিধবারা পুনর্বিবাহের ছাড়পত্র পেলেন....

অক্ষর-বল্লম দিয়ে সমাজের ঘা দিলেন খুঁচিয়ে, একরোখা, জেদী বামুনটির অস্ত্র বলতে অগাধ পান্ডিত্য আর অনমনীয় মনোভাব..

তিনি না থাকলে কে আমাদের চোখে
বর্নপরিচয়ের অক্ষরপ্রদীপ জ্বালাতেন?
তাঁর দয়ায় নারীরা মানুষ হল
স্কুলে ভর্তি হল, স্বাধীন হল–
তিনি আমাদের প্রাণের মানুষ বিদ্যা সাগর....

***************************


ভারতভূমির বিদ্যাসাগর 
ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় 

জন্ম দিয়েছে এক ক্ষনজন্মা, বীরসিংহের মাটি 
সে মাটি বোঝালো, আগুন ঝরালো তীর্থভূমি খাঁটি।। 
রত্নগর্ভা ভগবতীর কোল আলো করে সেদিন জন্ম নিলো-
বাংলার বুকে হলো নবজাগরণ, বিদ্যাসাগর এলো। 

মানুষ তো হয় একটাই প্রানে, সেখানে নারী- পুরুষে ভেদ! 
সমাজপতির এমন বিধানে, ঈশ্বরের জন্মেছিল খেদ। 
পান্ডিত্যের যুক্তির তীরে ছিন্ন করে সে শিকল 
সংস্কারহীন মুক্ত সমাজ গড়তে শপথ নিল।। 

 বৃটিশ শাসকের চোখে রেখে চোখ বোঝালেন তাঁর দিশা -
নারীশিক্ষার দীপ জ্বেলে সেই বিদ্যাসাগর, কাটালেন অমানিশা ।
বর্ণপরিচয় দিল পরিচয় বঙ্গজাতির, শিক্ষা সোপানে মননে উত্তরন -
দুর্বল মানব, অবলা, বিধবা নারী পেয়েছিল, তাঁর হাতেই "নবজীবন"।। 

দুরন্ত ঐ দামোদর নত, হয়েছে সে মনিষীর মাতৃভক্তির টানে -
স্থবির, ভঙ্গুর সমাজের বুকে জ্বেলেছেন আলো, বিষম পদাঘাতে হেনে।
মাইকেল কবি, শ্রীরামকৃষ্ণ অনুভবে স্মরে, দয়ার সাগর তিনি -
ভারতভূমির সমাজ, শিক্ষা, মানবতার পাঠ সব বিদ্যাসাগরে ঋনী।।
 
***********************

তপস্যা শেষে

ভগীরথ সর্দার


এইখানে তিনি চরণচিহ্ন রেখে গেছেন ৷
এইখানে তাঁর কীর্তি পড়ে আছে ৷
ধূরোমাখা পথে ৷ ফুটপাতে ৷
অক্ষর সাজাতে সাজাতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে
কখন যেন ঘুম পেয়ে যায় ৷

অভাবের সংসার
তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কঠিন তপস্যায় 
তিনি সিদ্ধি লাভের পর দেখেন
চোখের উপর ভেসে উঠেছে
সদ্য শেখা মাইল ফলকের নম্বরগুলো ৷

*************************

পবিত্র তারা
মোনালিসা পাহাড়ী

শিক্ষকের চেয়ে বড় শিক্ষক
ছিলেন ধরাধামে,
জানো কি তোমরা সবাই তাঁকে
চিনতো কোন নামে?

দুহাত দিয়ে উপড়ে ছিলেন
কুসংস্কারের চারা,
মানুষ তো নয়,আগুন তিনি
পবিত্র এক তারা।

তাঁর পরশে ধন‍্য হলো
বাংলা মায়ের কোল,
তাঁর দয়াতেই বলতে পারি
বাংলা ভাষার বোল।

তাঁর হৃদয়ে লালিত হতো
নারীর জন্য মান,
নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহ
তাঁরই দয়ার দান।

আজও তো তাই,আমরা সবাই
তাঁর চরণে ঋণী,
দয়ার সাগর, বিদ‍্যাসাগর
নামেই তাঁকে চিনি।

**********************



আলো গল্পের সহজ সমীকরণে 
  দীপক জানা 


আলোর কথা বললে সূর্য পুজোয় দিন নামে 
অবাঞ্ছিত মেঘগল্পে ঢুকে পড়ে -
মধ্যযুগীয় অন্ধকার 
শেয়াল চোখের ভেতর গভীর সুড়ঙ্গ 

এ পথ ধরেই পুজো নিয়ে হাঁটছে অভিযাত্রী জোনাকি 
একে নাহয় জোনাকিগ্রাম বলা যেতেই পারে 
নদী পেরোলে ধুলোমাটি ইচ্ছে 
সবুজ সরল উদ্ভিদ জীবন 

বাঁশগাছ, এঁদোডোবা, খালবিল, জমি 
যদিও পাড়া ষড়যন্ত্রে ধোঁড়া, বোড়া 
ন্যায়রত্ন, তর্করত্ন বিধান পেরিয়ে 
সাদা শাড়িতে হলুদ লাগলে 
আঁচল খুঁটের সোহাগ সিঁদুরে রোদ ওঠে 
নক্ষত্র জেগে থাকে সময় পাহারায়। 
**************************


  বিদ্যাসাগর
নীতা সরকার

বীরসিংহের সিংহ তুমি বিদ্যাসাগর। 
এক দরিদ্র বাহ্মণ পরিবারে জন্ম তোমার। 

অজ্ঞাত তোমার পান্ডিত্য, জ্ঞানেরসাগর তুমি। 

দারিদ্রকে উপেক্ষা করে, বিদ্যাকে করেছ সঙ্গী। 

তেলের অভাবে পথের পাশে

গ্যাসের আলোতে বিদ্যা চর্চা করতে। 

সৌমমূর্ত্তি তেজ, অদম্য ধৈয্য তোমার। 

মনের জোরে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায়

মাইলস্টোন গুনতে গুনতে পায়ে হেঁটে এসেছিলে। 

মাতৃ আদেশ পালনের জন্য, চাকরি ছেড়ে

দামোদর নদী সাঁতরে বাড়ি ফিরেছিলে। 

তোমার বর্ণ পরিচয় দিয়ে, প্রথম অক্ষর শেখা। 

দীনের বন্ধু তুমি, দয়ার অবতার তুমি। 

হিন্দু ল কমেটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে

"বিদ্যাসাগর" উপাধিতে ভূষিত হও। 

বাংলা গদ্যের জনক তুমি, নারীশিক্ষার সৃষ্টিকর্তাও তুমি। 

তুমি ছিলে সমাজ সংস্কারক। 

মেয়েদের দুঃখে কাতর হয়ে বিধবা বিবাহ আইন প্রচলিত করো। 

তোমার জীবন রক্ষার জন্য শান্তিপুরের তাঁতিরা বলেছিলেন---

"বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে"।
*************************

বিদ্যাসাগর
প্রদীপ কুমার গোল


বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর

বীরসিংহে ঘর,

দয়ারসাগর, দানেরসাগর

নয়তো আপন পর।


বেঁটে খাটো লোক হলেও

জ্ঞান শানিত অস্ত্র,

পন্ডিতদের চোখ খুলালে

দেখিয়ে ধর্মশাস্ত্র।


নীতি শিক্ষার গল্প পড়ি

পড়ি বোধদয়,

অ আ ক খ বর্নপরিচয়

নারী শিক্ষার উদয়।


তুমিই কেবল বুঝেছিলে

বিধবাদের দুঃখ,

সমাজধংসী, ষড়যন্ত্রী

তোমার উপর রুক্ষ।


তুমিই নাকি বিধর্মী

ইংরেজের দালাল,

হেঁড়ে মাথার জশুরে কই

কতই না দিল গাল।


আজ জন্মের দু শ বছর

প্রণতি ,হে মহামানব,

ভগবতী সুত বঙ্গ সন্তান

তুমিই মোদের গরব।

********************************
এক ঈশ্বর 
সুবীর ঘোষ 

শিশুগাছের নামে শৈশব থাকলেও
দৈর্ঘ্যে সে আশি ফুট যেতে পারে। 
বিদ্যাসাগর খর্বকায় হয়েও
বাঙালির উচ্চতায় গেঁথেছিলেন গর্ব। 

সে সময় কয়েকজন
বিদ্যাসাগর থাকলেও
বাঙালির বিদ্যাসাগর
একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্রই
বিদ্যা মমতা সাহস ও সংস্কারকে একসূত্রে বেঁধেছিলেন। 

মুণ্ডচ্ছেদ করে জীবনীশক্তি
কমানো যায় না। 
কুষাণরাজ কণিষ্ক সেই দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এখনও বেঁচে আছেন। 
বিদ্যাসাগরও থাকবেন। 

পাষন্ডেরা এসব মাথামুন্ডু না জেনে শুধু মুন্ডুই ভেঙে দেয়। জল
বিদ্যাসাগর নামক শিশুগাছটির মাথার কাছে পৌঁছতে পারে না। 
************************



সাগরের বুকে
বিমল মণ্ডল

সারাটা জীবন শিক্ষার আলোতে
নিজস্ব ছায়ায় হেঁটে যাওয়া  
চন্দ্রলোকের দ্যুতি
কত সামাজিকতা লাল আকাশ জুড়ে
হাজার হাজার বর্ণ- বৈষম্য ভেদে
নিজেকে সাজিয়েছেন সাগরের বুকে

যেখান থেকে রোজ ভেসে আসে
গভীর-শ্যামল ভাবনার সুস্থির

আজকের মতোই 
শত-শত বছরের পরেও
জন্ম ও মৃত্যুতে ভেসে আসবে
তেজভরা শিক্ষার ঢেউ

যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম
হৃদয়ে থেকে হৃদয়ে 
এঁকে যাবে অক্ষর সাগর।
************************


এক আলোকিত সত্তা
 দুর্গাদাস মিদ্যা

 তখনো ভোরের আলো ফোটেনি
 ছাতার মতো মাথা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছেন এক খর্বকায় মানুষ
 পায়ে তালতলার চটি ফটফটিয়ে। 
কোথায় যেন অসহায় কান্নার রোল উঠেছে। দয়ার সাগর তিনি প্রতিবাদে মুখর। 
গৌরিদান বাল্যবিধবা এসব একেবারে একেবারে পছন্দ নয় তাঁর। 
অশিক্ষা আর কুশিক্ষায় ভরে যাওয়া দেশে 
তিনি একমাত্র মানুষ 
যিনি মানবচেতনায় দাঁড়িয়েছেন এই সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে । 
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত তিনি যেমন  
তেমনি তিনি সমস্ত শাস্ত্রীয় জ্ঞান অঞ্জলিভরে পান করেছেন অদ্ভুত বিদগ্ধ প্রজ্ঞায়।
মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠেছেন আপনার
 ক্রিয়াগুণে।। তিনি ঈশ্বরের পুত্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র পুত্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁকে প্রণাম।
**************************


আনত শির
ফটিক চৌধুরী

স্ট্রিট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
শিখেছিলে ইংরেজি সংখ্যা
স্ট্রিট লাইটে পড়তে পড়তে
বাজিয়ে দিলে জয়ডঙ্কা।
সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছ
পর্বত চূড়ার শীর্ষে
তুমি সবার বিদ্যাসাগর
বীরসিংহের বীর সে।
উপাধিটি হয়েছে নাম
ঈশ্বরচন্দ্র আর ক'জন জানে
দয়ার সাগর করুণা সাগর
কর্মাটাঁড়ের মানুষও মানে।
জানে মাইকেল জানে সবাই
জানে প্রতিটি ঘরে
জানে বালিকা বিধবা, মায়ের জন্য
পার হও ভরা দামোদরে।
দুইশত বছর অতিক্রান্ত বীরসিংহের বীর
শ্রদ্ধা জানাই তোমাকে আনত করি শির।
*************************


বিদ্যাসাগর
জন্মেঞ্জয় সাহু

সমাজ যখন নিমজ্জিত ঘন তমিস্রাতে 
বিদ্যাসাগর এসেছিলেন চেতন-প্রদীপ হাতে। 
ধর্মীয় গোঁড়ামি আর অন্ধ কুসংস্কার
সঙ্গী ছিল জাতিভেদ ও তীব্র অশিক্ষার। 
সরিয়ে দিতে সব জঞ্জাল সমস্ত ক্লেদ , গ্লানি  জীবনটাকে বাজি রেখে এগিয়ে এলেন তিনি। অজস্র লাঞ্ছনা আর অপমানও সয়ে 
 একলা পথিক পথ হাঁটলেন উন্নতশির হয়ে। অশিক্ষারূপ অভিশাপটা তুলতে সমাজ থেকে 
কত কত বিদ্যালয় যে গড়েন একে একে! 
আবিভূর্ত হয়ে তিনি নারী-ত্রাতার বেশে 
বিধবাবিবাহ চালু করেন অবশেষে। 
বালিকাবিবাহ এবং কৌলীন্য প্রথার 
 অবসানে লড়াইটাও জারি ছিল তাঁর। বাংলাসাহিত্য আর বাংলাভাষার 
 বিদ্যাসাগরই হন নবরূপকার। 
বিদ্যার সাগর যেমন, করুণারও সিন্ধু 
দুঃখীর চিরসাথী তিনি দীনবন্ধু। 
 দ্বিশতবর্ষের এই শুভ জন্মক্ষণে 
 প্রণাম জানাই আমি ঈশ্বর-চরণে।
***************************
মহৎসাগর
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র

সাগর দেখিনি তেমন একটিও
এক সে সাগর দ্যাখা!
জ্ঞানের সাগর,কথার সাগর
তাঁরই কাছে শেখা।

                  সাগর কতো গভীর হয়?
                  এ সাগর ততোধিক,
                  করুনারই সাগর তিনি
                  ঈশ্বর নির্ভিক!

সাগরের বুকে মুক্তো দেখিনি
জেনেছি বিদ্যাসাগর,
হৃদয়টা তার ভীষণ গভীর 
ভাঙে না বুকের চাঙড়!
               

               সাগরের জল কি আর স্বচ্ছ?
               ঈশ্বর নির্মল!
               পর দুঃখে হতেন কাতর
               চোখ ফেটে আসে জল!

সাগরের পলি কতো উর্বর?
করেছে মানব চড়া!
মহৎসাগর বিদ্যাসাগর
তাঁরই কাছে লেখাপড়া!
*************************


ঈশ্বরের আলো

সোনালী মিত্র 

সাগর যেখানে ছুঁয়ে চলে গভীর মননে
সেখানেই ঈশ্বরের আলো আমার ভিতরে।
যে আলো জ্বেলেছিলে হৃদয়ের মাঝে 
সেই আলোর কথা লিখে রেখে গিয়েছ সমাজের খাতার পাতাতে।
অক্ষরে অক্ষরে ভালবাসার কথা লুকিয়ে রেখে গেছো আগুনের মতো। 
পার হয়ে গেছে অনেকটা পথ
অধিকারের শব্দের ফুল নারীর শরীরে ।
ঈশ্বরের আলো কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করতে
নতুন পথ দেখাতে। 
আজ, ঈশ্বর আমার খাতায় কলমে, 
প্রথম যেদিন বর্ণপরিচয়ের আলো দুহাত ভরে পেলাম সেদিন থেকে আমার ঈশ্বর আমার সাথে।
***************************


হে বিদ্যাসাগর
সমরেশ সুবোধ পড়িয়া


জাতপাত, সতীদাহ, নারীশিক্ষা বিমুখ - 
চারিদিকে যখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ,
অখন্ড মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে জন্ম - 
ভগবতীর কোল আলো করে আজ!

দুরন্ত, সাহসী, দৃঢ়চেতা, তেজস্বী, বুদ্ধিমত্তায় - 
প্রজ্ঞায়, বাগ্মিতায়, শত প্রতিভায়, তুমি প্রণম্য,
জাতপাত ভেঙে আজ আলোকিত সমাজ -
একত্রিত হতে পেরেছি - শুধু তোমারই জন্য৷

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার;
তুমি, প্রথম বাংলা লিপি সংস্কারক,
স্ত্রীশিক্ষার প্রসার আর বিধবা বিবাহ প্রচলনে
তুমি অশরীরী আত্মার শুদ্ধিকার, 
নারীমুক্তির আসল পথ প্রদর্শক!

তুমি শুধু - লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, প্রকাশক, সংস্কারক, মানবহিতৈষী নও -
তুমি, বাংলার মহাতীর্থ, মহাজাগরণ, আদর্শ মহামানব, বাংলার গৌরবও৷

তোমার লেখা - বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী, ব্যাকরণ কৌমুদী, 
পাই কত লেখা মালা - নিয়ে বিধবা বিবাহ,
কত সুন্দর; শকুন্তলা ও বেতাল পঞ্চবিংশতি৷

তুমি, দয়ার সাগর’; দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত - দুয়ার হতে শূন্য হাতে না কখনো ফিরে যেত, 
তুমি খাঁটি রত্ন - শত পরীক্ষায় পরীক্ষিত - পবিত্র,
বাংলার প্রবাদ - তোমার বজ্রকঠিন চরিত্র৷

হে মেদিনীপুত্র, দীনময়ীর স্বামী -
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়;
তুমি পুণ্যতীর্থ, মহাতীর্থ, মহাপুণ্যবান, 
দ্বিশত বার্ষিকী জন্মতিথিতে - 
লহ মোর দ্বিশত কোটি হৃদয়ের প্রণাম৷
**********************


জীবনদেবতা
 বিশ্বজিৎ রায়

অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে যখন কিছু লিখতে বসি/
মনে পড়ে আপনার কথা,/
হাইওয়ে দিয়ে যেতে যেতে মাইলফলকগুলি দেখে /মনে পড়ে আপনার গ্রাম থেকে শহরে আসার চিত্রকথা ---/
বস্তির ছেলেমেয়েগুলো কেউ যখন ল্যাম্পপোস্টের নিচে বই খুলে পড়ে/
মনেহয়, ওদের মধ্যে বসে আছেন এক ঈশ্বর, /
খাটো ধুতি পরা কোনো স্বল্পকেশ মানুষকে কলেজস্ট্রীটের রাস্তায়/ আজও হেঁটে যেতে দেখলে ভাবি, তিনিই বিদ্যাসাগর ..../

জীবনকে কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে কখনো-
 সখনো/
শিরদাঁড়াটা ঝুঁকে পড়ে কোনো বিপন্ন মুহূর্তে---/ঠিক সে'সময়, আপনার কথা মনে করে/
শিরদাঁড়াটা সোজা করে নিতে পারি চকিতে---/
চরম অর্থকষ্ট, কুতসা, অপবাদের মুখোমুখি হলে /আপনার জীবন-জোছনা থেকে শক্তি পাই, জেগে উঠি পুনরায়, মস্তিষ্কে ---

সেই হাতেখড়ির দিন থেকে আজ অবধি/
আপনি আমার জীবনদেবতা, শিক্ষক, ছায়াসঙ্গী,/
নষ্টলোকে বেঁচে থাকার মহৌষধি ....
***********************

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
শ্রাবণী বসু

আমরা যখন নগরীর করতলে বসে 
পৃথিবী তোলপাড় করছি 
একটি বৃক্ষ আশা করছি,

আমরা যখন যন্ত্রনায় ডুবতে ডুবতে
খুঁজে চলেছি তাঁকে- যিনি অমৃতের পুত্র
 তিনি এলেন।মানুষের পাশে দাঁড়ালেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - একটি মানববৃক্ষ,
 বজ্রকঠিন অথচ কুসুমকোমল ।

শত সহস্র হাঁ মুখ থেকে তিনি-
বার করে আনলেন বিধবা বালিকাদের,
অপরিণত মুঠোয় ধরালেন সাতরঙা বর্ণালী।


জঘন্য সমাজ ব্যবস্থার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে-
 বিধবার জমাট অশ্রু কুচিয়ে ফেলে 
 পা রাখার জায়গাটুকু করে দিলেন ।

সময় যতই পেছনে সরে যাক,
তিনি সময়ের সাথে সাথে
সমভাবে গমন করছেন
কেননা তিনি মানবহিতৈষী ।

 মানবকল্যাণের জন্য যাঁরা কর্ম করেন 
তাঁরা মানুষ নয়, সত্যিই তাঁরা ঈশ্বর ।
*********************


' বিস্ময় প্রতিভা '
  লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য 

শৈশবের সঙ্গী ছিল বর্ণপরিচয়, 
বাল্য বিবাহ রোধ তুমি করলে কৈশোরে। 
বিধবার বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়
ঋণী এ যৌবন তোমায় স্মরণ করে। 
কাঁদে প্রাণ, নারীদের দুঃখ-যন্ত্রণায়
অসামান্য মাতৃভক্তি, প্রণমি তোমারে।
সাম্প্রদায়িকতা নয়, জাতিভেদ নয়
দৃঢ়নিষ্ঠ জীবন ঐ মানুষের তরে। 
ভেঙে কুসংস্কারের অচলায়তন 
বাঙালিকে আনো এক জ্যোতিষ্ক আলোতে.....
দারিদ্র দিয়েছে তোমায় তেজস্বী মন 
জয়ী হলে প্রতিকূল পরিবেশ হতে। 
বাংলা গদ্য সাজালে এক ছন্দ-স্রোতে
এনে দিলে বঙ্গদেশে নবজাগরণ।।

***************************
আলো জ্বেলে দাও
বিষ্ণু পদ জানা



আলো জ্বেলে দাও
আ আ ক খ 
বর্ণপরিচয়ের
জল পড়ে পাতা নড়ে
ঐক্য বাক্য মাণিক্য
জ্ঞানের আলো
বোধ- বুদ্ধির আলো
সময়ের আলো
সমাজের আলো
আলোকময় পথে হাঁটতে হাঁটতে যে শিশু
 ইংরেজীতে সংখ্যামান শেখে 
পথের আলোয় জীবন -পাঠ 
বাবার সাথে ঘরকন্নার কাজ 
পাণ্ডিত্যে বিদ্যাসাগর
সমাজ সংস্কারের আলো
নারী শিক্ষার প্রসার
বহুবিবাহ রহিত
বিধবাদের জীবনে আলো
মাতৃভক্তিতে অটুট
কথায় ও কাজে এক আলো
দ্বিশত বছর ধরে
আলোর আলোকে দীপ্যমান
বাংলা ভাষা ও বাঙালির জীবন আলোকে
'অজেয় পৌরুষ এবং অক্ষয় মনুষ্যত্ব' 
সভ্যতার আলো ইতিহাসে
লহ শতকোটি প্রণাম।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆





































দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
               জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য


============✓✓✓✓✓✓==========
              Doinik Sabder Methopath
           Vol -146. Dt - 30.9.2020
             ১৩ ই আশ্বিন, ১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় মানভূম জেলার রোপো গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। ১৯৫৭ সালে কলকাতার মনীন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষায় অনার্স সহ পাশ করেছিলেন। ঐ বছরেই ভারতীয় গননাট্য সংঘে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন। ১৯৫০ থেকে ৫৪-এই পাঁচ বছরে ৯টি নাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় সূত্রে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৪ তে লিখেছেন মৌলিক পূর্ণাঙ্গ নাটক 'সংঘাত'। ২ বছর পরে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। এই সংঘে ১৫টি নাটকে অংশ নেন তিনি। ১৯৬০ সালে ২৯ শে জুন প্রতিষ্ঠা করেন 'নান্দীকার'। প্রায় ৪০টি নাটকে নির্দেশক বা অভিনয় অথবা উভয় ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। তিন পয়সার পালা নাটকে নির্দেশনা ওসঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি সুনাম অর্জন করেন। সেতু বন্ধন, সওদাগরের নৌকা তার রচিত নাটক। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ এ নান্দীমুখ নামে নামে এক নতুন নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। এদের বিখ্যাত নাটক পাপপুণ্য।
অজিতেশ ১৯৬৫ সালে ছুটি চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তপন সিংহ পরিচালিত হাটে বাজারে সিনেমায় অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অজিতেশ ১৩ অক্টোবর, ১৯৮৩ সালে কলকাতায় মারা যান। তিনি আকস্মিকভাবে মারাা যান।
==≠=============================
বিশেষ প্রতিবেদন -
================================

জানা অজানা অজিতেশ
                              সম্রাট মুখোপাধ্যায়

ঝাঁকড়া চুলের এক রোগা ছেলে, মায়াভরা দু‌টো চোখ নিয়ে এ’‌শহরে এসে দারিদ্রকে হারিয়ে হয়ে উঠেছিলেন মঞ্চের সম্রাট। ব্যক্তিজীবনেও নিয়মকানুন চুরমার করে দিয়েছিলেন। এরকমই এক শারদ অবকাশে চলেও গিয়েছিলেন হঠাৎ। এক স্মৃতিকথার প্রকাশে তাঁকে ফিরে দেখা। নানা অজানা কথায়।

বুঝতে পেরেছিলেন কি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, যে সে বছর ১৪ অক্টোবরের পরে আর তাঁর জীবনে কিছু পড়ে নেই?‌ না’‌হলে তাঁর সেই খাতা, যাতে লেখা থাকত অন্তত মাসখানেকের আগাম কর্মসূচির ‘‌অ্যাপয়েন্টমেন্ট’‌, আর কিছু লেখেননি কেন সেখানে ১৪ অক্টোবরের পর!‌
১৪ অক্টোবর, ১৯৮৩। সেবার পড়েছিল দুর্গাপুজোর অষ্টমী। আর সেদিনই চলে গেছিলেন তিনি এ’‌পৃথিবী ছেড়ে। ভোররাতে। এক নিদারুণ হার্ট অ্যাটাকে। মাত্রই দু’‌সপ্তাহ পার হয়েছে তখন, ৫০ বছরের জন্মদিন পূর্ণ হবার। খবর পেয়ে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলের ছেলেরা সাত–‌আটজন ডাক্তারে ভরিয়ে দিয়েছিল ঘর। কিন্তু ততক্ষণে পাখি খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেছে।
উড়ে যাবার বা পৃথিবী ছেড়ে যাবার আগে এই মহানটের শেষ বলা কথাটি ছিল, ‘‌আমি বোধহয় মরে যাচ্ছি, তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।’‌ কথাগুলি ডাক্তার আসার আগে যাঁর হাতের মুঠি ধরে অজিতেশ বলে যাচ্ছিলেন, তিনি রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়। অজিতেশের জীবনের শেষ এক যুগের জীবন–‌সঙ্গিনী। সমাজের অনুশাসন ‘‌তোয়াক্কা’‌ না ক‌রে যাঁর সঙ্গে অজিতেশের ঘর বাঁধা ও সহবাস। বেলেঘাটার সিআইটি রোডের দু–‌কামরার এক ফ্ল্যাটে। বাগবাজার–‌এর বাড়ি (‌যে বাড়িতে প্রতিবেশী ছিলেন অজিতেশ আর রত্না)‌ ছেড়ে আসা ইস্তকই এই বাড়িই ছিল অজিতেশের আমৃত্যু বাসভূমি। পি ৮৩এ, সিআইটি রোড, কলকাতা–‌১০। অজিতেশের শেষ ঠিকানা।
সেতুবন্ধনে
‘‌অজিতেশের শেষ ঠিকানা’‌— ঠিক এই নামেই সম্প্রতি একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ পেয়েছে রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যার অনেকটাই প্রকৃত–‌প্রস্তাবে এক দিনলিপি।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামক এক ‘‌জীবন্ত–‌আগুনের–‌স্বরলিপি’‌র সঙ্গে দিনযাপনের দিনলিপি, যা রত্না লিখেছিলেন ডায়েরিতে। সেই সময়েই। একান্তই নিজস্ব স্মৃতিধারণের উপায় হিসাবে। সময় কাটাতেও কিছুটা। সেই ডায়েরি রত্নাদেবীর এক আত্মীয়সূত্রে শঙ্খবাবু (‌ঘোষ)‌, শমীকবাবুর (‌বন্দ্যোপাধ্যায়)‌ হাত ঘুরে অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে। মুখবন্ধ লিখেছেন শমীকবাবু। প্রকাশ করেছে ‘‌থীমা’‌। মাঝপথে থেমে যাওয়া ডায়েরিকে পরে লিখে অবশ্য আবার সম্পূর্ণ করেছেন রত্নাদেবী। আর সেই বই জুড়ে কত যে না–‌জানা কথা। যার উন্মোচন এই প্রথম বোধহয়। তার ভেতর প্রেম–‌দাম্পত্য–‌অভাব–‌মৃত্যু— ‌এসবেরও অতি–‌ব্যক্তিগত আখ্যান যেমন, তেমনই উঠে এসেছে অজিতেশের প্রথম জীবনে দারিদ্র‌–‌কণ্টকিত লড়াই নিজেকে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য। নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য। আবার এসেছে তাঁর নানা নাটকের তৈরি হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর নেপথ্য–‌বৃত্তান্তও। যেসব নাটক ভেবেও করা হয়নি নানা–‌সময়ে, আছে তার হদিশও। মৃত্যু যে কতকিছু কেড়ে নিয়ে যায়!‌
‌এ বই যেন আগাগোড়া নানা অনুন্মোচিত–‌অজিতেশের নতুন করে প্রকাশ পাওয়া।
হে সময়, উত্তাল সময়
নাটক করতে এ’‌শহরে আসেননি অজিতেশ। যাঁর নাম তখন অজিত, শুধু অজিত, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে এসেছিলেন পড়াশুনা করতে। কলেজে। শ্যামবাজারের মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে ইংরেজি অনার্স–‌এর ছাত্র অজিত সেসময়। নিজের বাইরের জগতের বই পড়া দিয়ে ছাত্রাবস্থাতেই যে চমকে দিতে পারে কলেজের ডাকসাইটে অধ্যাপকদের। প্রিয়ও হয়ে উঠতে পারে শিক্ষক তথা সহপাঠীদের কাছে। কালো, বেশ রোগা, ঈষৎ গ্রাম্য চেহারা, মাথাভরা ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, পরনে ঈষৎ মলিন ধুতি–‌জামা, কিন্তু চোখ দুটোর দিকে কারোর নজর গেলেই তাকে স্তব্ধ হয়ে যেতে হবে। এত গভীরতা সেখানে। আর প্রাণচাঞ্চল্য। প্রতিটা কথা বলেন আশ্চর্য উত্তাপে।
সে উত্তাপের জোগান কিন্তু আসে শুধু নাটক থেকে নয়। কলেজ জীবনেই নাটকের সূত্রপাত অজিতেশের ঠিকই, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বে, তাঁর চিন্তায় আগুন ঠেসে দেয় রাজনীতি। কলেজ তথা কলেজের বাইরে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী তখন অজিত। এতটাই যে কলেজের স্টুডেন্টস ফেডারেশন ছেড়ে তিনি একসময় হয়ে উঠেছেন দমদমে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির লোকাল কমিটির সম্পাদক। শুধু গণনাট্য সংঘ নয়, করেন শ্রমিক সংগঠনও। ইউনিট গড়তে পাড়ি দেন নতুন নতুন কারখানায়।
আর থাকেন?‌ একেবারেই ‘‌শ্রেণিচ্যুত’‌ হবার মতো এক পরিবেশে। রাজাবাজারের ভেতরে এক বস্তিতে। যে খোলার চালের ঘরে বাস, তার দেওয়ালের সবদিকেই স্পঞ্জের মতো ছ্যাঁদা, ছাদ দিয়ে জল পড়ে, চারপাশে ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ, পাশেই টিবি রোগীর বাস, এজমালি পায়খানা। ইলেক্ট্রিসিটির কথা ভাবাও এখানে স্বপ্ন!‌ খাওয়া?‌ কোনওদিন অর্থাভাবে এমনও— ‘‌পনেরো পয়সা দিয়ে রাজাবাজারের ফুটপাথ থেকে দুটো রুটি আর রুটির সঙ্গে ফ্রি হিসাবে মেলা গরুর নাড়িভুঁড়ির ছেঁচকি।’‌ তারপর পেটের জ্বলুনি কমাতে পাঁচ পয়সা দিয়ে পাতিলেবু কিনে রাস্তার জলে ধুয়ে খাওয়া। এক সময় কলেরা হয়েছে। বস্তির লোকেরা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এসেছে।
সম্বল বলতে টিউশনি। আর গল্প লিখে একটি পত্রিকা থেকে কিছু পয়সা পাওয়া। গল্প বলতে সেই পত্রিকার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সংস্কৃত গল্পের অনুবাদ। বোঝাই যাচ্ছে ইংরেজি অনার্সের ছাত্র অজিতেশ ভালরকম সংস্কৃতও জানতেন। এই গল্পগুলোর একসঙ্গে করা ‘‌ফাইল’‌ রত্না জানাচ্ছেন তাঁর কাছে আছে, যা কখনও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। পরেও অজিতেশ কিছু কিছু গল্প লিখেছেন। সেগুলো মৌলিক। লিখেছিলেন একটি উপন্যাসও। নাম ‘‌ভালো লেগেছিল’‌। 
পাশ পেপার ছিল বাংলা আর ইকোনমিক্স। তা ফাইনাল ইয়ারে ইকোনমিক্স পরীক্ষার দিন হাতে একটাও পয়সা নেই খাবার মতো। রাতে না ঘুমিয়ে, ভোর থেকে উঠে পড়ে, বেলা এগারোটা অবধি পড়ে, অর্থনীতির বইটা পুরনো বইয়ের দোকানে বেচে দিলেন অজিত। তারপর সেই পয়সার খানিকটায় পাইস হোটেলে ভাত খেয়ে পরীক্ষা দিতে ঢুকে পড়লেন হলে।
এসবের মাঝেই মাঝে মাঝে ‘‌পলাতক’‌ হতেও হত। কখনও বিপক্ষ দলের গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচতে। কখনও আবার পুলিশের হাতে পড়া থেকে বাঁচতে। পার্টির একটা মিটিং–‌এ উত্তর কলকাতায় কমল বসুর বাড়িতে আলাপ হয়েছিল জ্যোতি বসুর সঙ্গে। অনেক বছর পরে। তখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে বহু দূরের বাসিন্দা অজিতেশ। অভিনয়ই একমাত্র কাজ। সিনেমা করছেন। পরিচিতি বেড়েছে। বোম্বে আর বাংলার অভিনেতাদের প্রদর্শনী এক ক্রিকেট ম্যাচ। উদ্বোধন করতে এসেছেন জ্যোতিবাবু। মুখ্যমন্ত্রী তখন। শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় জ্যোতিবাবু অজিতেশের হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন, ‘‌আমরা তো পূর্ব–‌পরিচিত, তাই না?‌’‌
সেইসব নানা রঙের দিন

অথচ সাধের এই পার্টির সাংস্কৃতিক সেলের সঙ্গেই একসময় বিরোধ তৈরি হল!‌ ‘‌নান্দীকার’‌ তখনও কোনও নিবন্ধীকৃত গ্রুপ থিয়েটার নয়। বরং ‘‌ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’‌–‌এর ‘‌নান্দীকার’‌ শাখা। নাটক বাছা হল ইতালীয় নাট্যকার পিরানদেল্লোর ‘‌সিক্স ক্যারেক্টার্স ইন দ্য সার্চ অফ অ্যান অথর’‌। বন্ধু রুদ্রপ্রসাদের অনুবাদে যা দাঁড়াল ‘‌নাট্যকারের সন্ধানে ছ’‌টি চরিত্র’‌। প্রযোজনা প্রায় তৈরি। মঞ্চস্থ হবে। কিন্তু গণনাট্য নেতৃত্বের একাংশ আপত্তি তুললেন মূল নাট্যকার সূত্রে। লিইউজি পিরানদেল্লো ছিলেন মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট পার্টির প্রকাশ্য সমর্থক। ফলে তার লেখা নাটক কোনওভাবেই সমাজতান্ত্রিক শিবির সংলগ্ন কোনও দল করতে পারে না। করা উচিত নয়। যুক্তি দিল নেতৃত্ব। পাল্টা যুক্তি দিলেন অজিতেশ ও ‘‌নান্দীকার’‌, যে এ নাটকে বঞ্চিত ‌মানুষদের ভাঙাচোরা জীবনেরই কথা। তবু নেতৃত্ব অনড় রইলেন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে। অনড় থাকলেন অজিতেশও। ফলে নাটক রইল। ‘‌নান্দীকারও থাকল। শুধু গণনাট্যের শাখা হিসাবে আর থাকল না। আর এই এক নাটক সূত্রেই বোঝা গেল এসে গেছেন বাংলা মঞ্চে উত্তর–‌উৎপল–‌শম্ভু যুগের আধুনিকতার নতুন ভগীরথ। যিনি একের পর এক বিদেশি নাটকের (‌‌চেকভ–‌পিন্টার–‌ইউনেস্কো–‌ব্রেখট মায় তলস্তয়)‌ স্থানীকরণে ভরিয়ে দেবে বাংলা নাটকের মঞ্চ। ইংরেজি অনার্সের ছাত্রটি অধ্যাপনায় নয় মঞ্চের মাধ্যমে ইয়োরোপীয় আধুনিক নাটকের দীক্ষা দেবে বাঙালিকে।
কিন্তু সেখানেও বিতর্ক। ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় তৈরি হল ‘‌ব্রেখট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’‌। প্রথম সভাপতি সত্যজিৎ রায়। আর এর মুখপত্র ‘‌এপিক থিয়েটার’‌–‌এর তৃতীয় সংখ্যায় এই সোসাইটির সভ্যবৃন্দের বয়ানে একটি বার্তা বেরোল, যাতে লেখা কয়েকটি কথা, ‘‌.‌.‌.‌ ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবীর বুকে দুষ্টব্রণ। সমাজতন্ত্রেই সামাজিক সমস্ত শক্তির পূর্ণ বিকাশ। সংগ্রামী মানুষে বিশ্বাসী সমস্ত বিদেশি নাট্যকার আমাদের নাট্য আন্দোলনের দোস্ত। পিরানদেল্লো, ইয়োনেস্কো, বেকেট, পিন্টার অসবর্ণ এই বিচারে আমাদের নাট্য আন্দোলনের দুশমন।’‌ অর্থাৎ এই বিচারে অজিতেশ চলে গেলেন শত্রুশিবিরে এক খোঁচায়!‌ অনেকেরই ধারণা এই তীব্র বয়ানটি তৈরি করেছিলেন এই সোসাইটির প্রাণপুরুষ উৎপল দত্ত।

এর কয়েক বছর পরে অজিতেশও ব্রেখটের নাটক করেন। ‘‌তিন পয়সার পালা’‌। উৎপলবাবুর ভাল লাগেনি। ‘‌অব্রেখটীয়’‌ লেগেছিল সে প্রযোজনা। এরপর ‘‌ভালোমানুষ’‌। এবারও সমালোচনাবিদ্ধ অজিতেশ ওই শিবির থেকে। অবশ্য পাল্টা উদাহরণও আছে, উৎপল–‌নাট্যের সমালোচনা অজিতেশই আগে করেন। সে নাটক ছিল ‘‌তিতা‌স একটি নদীর নাম’‌। এর বাইরেও কথা আছে। পার্টি নির্বাচনের সময় অজিতেশকে বলেছিল পথনাটক করতে। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‌পেটে বালিশ বেঁধে অতুল্য ঘোষ সাজা তাঁর কাজ নয়।’ এমন মন্তব্য নিঃসন্দেহে উৎপল দত্তের মতো পথনাটক করা ‘‌প্রোপাগান্ডিস্ট’‌দের ক্ষুব্ধ করবেই।
কিন্তু সামনাসামনি কেমন ছিল দু’‌জনের সম্পর্ক?‌ রত্নার এই বইতে তার একটা মজাদার মুহূর্ত পাচ্ছি। একবার দু’‌জনের দেখা রবীন্দ্রসদনে এক অনুষ্ঠানে। অজিতেশের সঙ্গে রত্না। রত্নাকে অজিতেশ বললেন উৎপলবাবুকে প্রণাম করতে। রত্না বললেন,‌ ‘‌উনি তো প্রণাম নিতে পছন্দ করেন না।’‌ তবু অজিতেশের কথায় রত্না প্রণাম করলেন। উৎপলবাবুও অস্বস্তি বোধ করলেন। অজিতেশ কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন তিনি উৎপলবাবুকে কতটা শ্রদ্ধা করেন।
অসমাপ্ত পাপপুণ্য
রত্না ছিলেন অজিতেশের এক সহপাঠী তথা ‘‌‌নান্দীকার’‌ সঙ্গীর স্ত্রী। দলের ভাঙনের সময়েও এই নাট্যকার–‌অভিনেতা বন্ধু অজিতের দিকেই ছিলেন। পরে তাঁদের দুই বন্ধুর সংসারেই ভাঙন ধরল যখন ১৯৭২–‌এর ২২ মার্চ রাতের বেলায় অজিতেশ আর রত্না নিজেদের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন পথে। শুধু মাত্র ভালবাসার টানে। শুরু করলেন একসঙ্গে থাকা। সেই বেলেঘাটার বাড়িতে। যেখানে অজিতেশ রত্নাকে বলেছিলেন, ‘‌প্লিজ, জানলা দরজায় পেলমেট লাগিয়ে লম্বা লম্বা পর্দা ঝুলিয়ে আকাশটাকে ঢেকে দিও না।.‌.‌.‌ যেন ঘরের মাঝখানটাতে দাঁড়িয়েও দেখতে পাই বাইরের পৃথিবীটাকে।’‌ ‌আর এই পর্দাহীন ঘরটা থেকেই বেরিয়েছিল অজিতেশের দেহ শেষযাত্রায়। একদিন যে অজিতেশ অন্যভাবে বাঁচতে চেয়ে কোলিয়ারি ছেড়ে এসেছিলেন এ’‌শহরে। রত্নার তখন মনে পড়েছিল একসময় দীর্ঘদিন পয়সার অভাবে এই বাড়িতে তাঁরা কোনও চেয়ার কিনতে পারেননি। কোনও অতিথি এলে চেয়ার ধার করে আনতে হত প্রতিবেশীদের ঘর থেকে।
রত্না বিচ্ছেদ পেয়েছিলেন স্বামীর কাছ থেকে। অজিতেশ পাননি। অজিতেশের মা আর বোনেদের বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠি তাঁর বিপক্ষে গিয়েছিল। আর সেদিন দুপুরে রত্না দেখেছিলেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাঁকে কাঁদতে। অবিকল যেভাবে মঞ্চে তখন কাঁদতেন ‘‌পাপপুণ্য’‌ করতে গিয়ে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা উচ্চতর আদালতে গিয়েছিল। আর এর কিছুদিনের মধ্যেই তো চলে যান তিনি। সন্ধেবেলা পেশাদার মঞ্চে অভিনয় সেরে এসে। ‘‌এই অরণ্য’‌ নাটকে।
ভেবেছিলেন পেশাদার মঞ্চেই আবার ফিরিয়ে আনবেন একটি বড় মাপের নাটক তৃপ্তি মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে। হল না। ভেবেছিলেন দ্রোণাচার্য আর শকুন্তলার গল্পের আধুনিক ব্যাখ্যায় নাটক লিখবেন। হল না। সব ছেড়ে চলে গেলেন সেই মানুষটি, যিনি একই সঙ্গে ছিলেন সম্রাট ও সন্ন্যাসী।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও
 রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়
------------------------------------------------
সংগৃহীত তথ্য
    - উইকিপিডিয়া
    - আজকাল পত্রিকা
    ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆


 

 


Sunday, 27 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                   জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য


===============!!!!!!==============
           Doinik sabder methopath
          Vol -144 .Dt -28.9.2020
             ১১ আশ্বিন,১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷ $$$$$÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

"ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান"
               


                ভগৎ সিংয়ের প্রাথমিক পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর স্কুলে পড়ার পালা। কিন্তু ভগৎ সিং তাঁর সমবয়সী ছেলেদের মতো লাহোরের খালসা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেননি। কারণ এই স্কুলে পড়াশুনা করলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয়। যে কারণে তাঁর ঠাকুরদাদা তাঁকে এখানে পড়াশুনা করাতে রাজি ছিলেন না। তিনি ভগৎ সিংকে অন্য একটি স্কুলে পড়াশুনা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই ভগৎ সিংয়ের বাবা তাঁকে আর্যসমাজের বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করান।
এই স্কুলে পড়াশুনার সময় হঠাৎ একদিন দুপুর বেলা ভগৎ সিংকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। স্কুলের সবাই বাড়ি ফিরেছে, কিন্তু ভগৎ সিংকে কোথাও পাওয়া গেল না। তিনি তখন ক্লাস সেভেনে পড়েন। বয়স মাত্র ১২ বছর। সবাই তাঁকে খুঁজতে বের হলো। ওদিকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, আতঙ্কে সবাই ছুটাছুটি করছেন। স্কুলে খবর নিয়ে জানা গেল ভগৎ সিং যথারীতি ক্লাস করেছেন; তারপর কোথায় গেছেন কেউ জানেন না। অনেক রাতে তাঁর দেখা মিলল। হাতে জালিয়ানওয়ালাবাগের শত শহীদের রক্ত মাখা মাটি।


১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০- এর মত বিদ্রোহীকে হতাহত করা হয়। বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়। এটি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে ভগৎ সিং সেই মর্মান্তিক ঘটনা শোনেন, এরপর তিনি বাসে করে ৪০/৫০ মাইল দূরে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ছুটে যান। সেখানকার ত্রাস ও দুর্যোগের পরিবেশ উপেক্ষা করে কুড়িয়ে আনেন সেই রক্তরঞ্জিত মাটি। এই মাটি তাঁর কাছে সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটি বিদ্রোহের প্রতীক।

এভাবে ভগৎ সিং ছেলেবেলা থেকেই ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণা ও বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রর্দশন করেছেন। আর দেশকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজী রেখে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের দেয়া ফাঁসির রজ্জু হাসিমুখে বরণ করেছেন।
ভগৎ সিং জন্মেছিলেন ১৯০৭ সালের ২৮সেপ্টেম্বর। পশ্চিম পাঞ্জাবের লায়লপুর জেলার বংগা গ্রামে। একসময় পাঞ্জাবের ওই অঞ্চলে জলের অভাবে চাষ-আবাদ কিছুই হত না। উনিশ শতকের শেষদিকে মধ্য পাঞ্জাবের বেশ কিছু লোক উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এসে প্রচুর পরিশ্রম করে খাল কেটে চাষবাস শুরু করেন। ভগৎ সিংয়ের পূর্বপুরুষ ছিলেন তাঁদের দলে। তাঁরা ছিলেন দুঃসাহসী, কঠোর পরিশ্রমী আর স্বাধীন চিন্তার মানুষ। তাঁদের বলা হত জাঠ। ভগৎ সিংয়ের ঠাকুরদাদা অর্জুন সিংহ। তিনি দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলনে আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভগৎ সিংয়ের বাবার নাম সর্দার কিষাণ সিংহ সান্ধু এবং মা বিদ্যাবতী। তাঁর বাবা ছিলেন একজন মানবপ্রেমিক মানুষ। সমাজের মানুষের কল্যাণে নিয়েজিত থাকাই ছিল তাঁর জীবনের আসল ব্রত। ভগৎ সিংয়ের ছোটকাকা স্বর্ণ সিং ছিলেন একজন বিপ্লবী। বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। যে কারণে মাত্র ২৩ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মেজকাকা অজিত সিং ছিলেন আরেক বিপ্লবী। তিনি লালা লাজপত রায়ের খুব কাছের লোক ছিলেন। অজিত সিং পাঞ্জাবে ‘ভারত দেশপ্রেমিক সমিতি’ গড়ে তুলে বিপ্লবী কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের পুরো পরিবারই ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এমন এক দেশপ্রেমিক বিপ্লবী রাজনৈতিক পরিবেশে ধীরে ধীরে ভগৎ সিং বেড়ে উঠেন।
১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের মাধ্যমে গান্ধীজী বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদেরকে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হতে বলেন। তিনি বিপ্লবীদের জানান অসহযোগ আন্দোলন করে এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দিবেন। যদি না পারেন তাহলে বিপ্লবীরা আবার সশস্ত্র সংগ্রামে সামিল হলে তাঁর বলার মতো কিছু থাকবে না। গান্ধীজীর অনুরোধে বিপ্লবীরা সাময়িকভাবে সম্মত হন। এসময় কিশোর ভগৎ সিং অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি নিজ এলাকাতে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সহপাঠীদের সাথে নিয়ে বিলাতী কাপড় জোগাড় করে মহানন্দে পোড়াতে শুরু করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪ বছর। ওই বয়স থেকে তিনি ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের উপর পড়াশোনা করেন এবং শেষ পর্যন্ত মার্ক্সবাদে আকৃষ্ট হন।


 অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় তিনি একদিন ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য তাঁর সরকারি স্কুলবই ও স্কুলের পোষাক পুড়িয়ে ফেলেন।
এক বছরের মধ্যে সারাদেশে অসহযোগ আান্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যুক্ত হয়। ১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরীচেরা গ্রামে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন হঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন কৃষক মারা যায়। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরোও করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। থানার ভিতর ২২ জন পুলিশ পুড়ে মারা যায়। এতদিন ধরে ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতের স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে সে তুলনায় এটি কিছুই নয়। এটি ছিল একটি বিক্ষিপ্ত দুঃখজনক ঘটনা। তবু গান্ধীজী এই ঘটনার কারণে অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆




Saturday, 26 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
           জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
                         সতীনাথ ভাদুড়ী
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷$$$$$÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
            Doinik Sabder Methopath
            Vol - 143. Dt - 27.9.2020
              ১০ আশ্বিন,১৪২৭. রবিবার
========≠===©©©©©==============


" রামিয়া আর ফেরে না। অথচ ঢোঁড়াই রাত কাটিয়ে দেয় সে ফিরবে ভেবে। তবে কি পশ্চিমা এই মেয়েটাকে চেনার ভুল! বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মাফ চাইবে তার কাছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রামিয়া বসবে উনুনে আগুন দিতে, ঢোঁড়াইয়ের জন্য ভাত রাঁধতে। না না, আজ আবার ভাত রান্না কী? স্নান করে রামিয়া বসবে গম ধুতে ছটপরবের ‘ঠেকুয়ার’ জন্য। ঢোঁড়াই ধাঙড়টুলি থেকে আনবে বাতাবিলেবু, আখ, সাওজীর দোকান থেকে আনবে গুড় আর ঠেকুয়া ভাজার তেল। উঠানে বসে রামিয়াকে নিয়ে আকাশপাতাল ভাবে ঢোঁড়াই। "
                কথাশিল্পী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘চিত্রগুপ্ত’। ১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিহারে পিতার কর্মস্থল পূর্ণিয়ায় তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী ছিলেন পূর্ণিয়ার আইনজীবী।

সতীনাথ পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ (১৯৩০) ও বিএল (১৯৩১) পাস করে পাটনায় ওকালতি করেন (১৯৩২-৩৯)। এরপর কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি পূর্ণিয়ার জেলা কংগ্রেসের সেক্রেটারি হন। ১৯৪০-৪১ ও ১৯৪২-৪৫ সালে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তিনি ভাগলপুর জেলে আটক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কর্মপদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন (১৯৪৮)।১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত সতীনাথ পিতার সহকর্মীরূপে পূর্ণিয়া কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। এই সময় নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বলিপ্রথা ও মদের দোকানে পিকেটিং আন্দোলন। সাহিত্যচর্চা শুরু হয় এই সময়েই। বাড়ি বাড়ি বই সংগ্রহ করে পূর্ণিয়া গ্রন্থাগার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে পিতা ইন্দুভূষণের নামে গ্রন্থাগারটির নাম হয় 'ইন্দুভূষণ সাধারণ পাঠাগার'। বলা যায় প্রায় তার একক উদ্যমে বাংলা ম্যাগাজিন ক্লাব গঠন, সাহিত্যপাঠ, স্মরণশক্তি প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আড্ডা প্রভৃতির প্রচলন হয়। এই কাজের সূত্রেই তিনি স্বনামধন্য সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক জীবনেরও সূচনা ঘটে। গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন তাকে আকৃষ্ট করে এবং গান্ধিবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশের চোখ এড়িয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে। ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে সতীনাথ ভাদুড়ী প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন।[১] ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি দ্বিতীয়বার কারাবাসকালে জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন ; এর ফলে তাকে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়। এই কারাবাসকালীন সময়ই তার 'জাগরী' উপন্যাস রচনার প্রস্তুতিকাল। ১৯৪৪ সালে তিনি তৃতীয়বার কারাবরণ করেন। এই কারাবাসের সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফণীশ্বরনাথ রেণু, অনাথবন্ধু বসু ,ফণীগোপাল সেন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, অনুগ্রহনারায়ণ সিংহ প্রমুখ। ১৯৪৫ সালে তার সাড়া জাগানো উপন্যাস 'জাগরী' প্রকাশিত হয়। 'চিত্রগুপ্ত' এই সাহিত্যিক ছদ্মনামে তিনি পরিচিত ছিলেন। সতীনাথ পূর্ণিয়ার কিশোর আর তরুণদের জন্য ব্যায়ামাগার গঠন ও শনিবারের সাহিত্যবাসর পরিচালনা করতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বিদেশ যাত্রা করেন। বিদেশে থাকাকালীন সময়েই তিনি তার গ্রন্থ 'জাগরী'র জন্য বাংলাভাষায় প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫০) প্রাপ্তির সংবাদ পান। বিখ্যাত সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু তার জীবনী মূলক স্মৃতিকথা 'ভাদুড়িজি' রচনা করেন, যা হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ।

উপন্যাস রচনা -
জাগরী ১৯৪৫
চিত্রগুপ্তের ফাইল ১৯৪৯
ঢোঁড়াইচরিত মানস (প্রথম চরণ) ১৯৪৯
ঢোঁড়াইচরিত মানস (দ্বিতীয় চরণ) ১৯৫১
গণনায়ক, ১৯৪৮ (গল্পগ্রন্থ)
সত্যি ভ্রমণ কাহিনি ১৯৫১-ছোটগল্প
অচিন রাগিনী ১৯৫৪- ছোটগল্প
অপরিচিতা ১৯৫৪- ছোটগল্প
সংকট ১৯৫৭- উপন্যাস
আলোক দৃষ্টি ১৯৬৪- ছোটগল্প
অপরিচিতা ১৯৫৪- ছোটগল্প
চকাচকি ১৯৫৬- ছোটগল্প
পত্রলেখার বাবা ১৯৫৯- ছোটগল্প
জলভ্রমি ১৯৬২-ছোটগল্প
দিকভ্রান্ত ১৯৬৬,-উপন্যাস মৃত্যুর পর প্রকাশিত ।
ডাকাতের মা.

১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ সতীনাথ ভাদুড়ীর প্রয়াণ ঘটে। মাত্র আটান্ন বছর বয়সে কোশীর শাখানদীর শ্মশানঘাটে তার মরদেহ ভস্মীভূত হয়ে মিশে গেল পূর্ণিয়ার মাটিতে।

"জাগরী" ও সতীনাথ -

তাঁর "জাগরী’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল আছে এর পটভূমি ও বিবেচ্য সময়ের কারণেই-- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডামাডোলে অসংখ্য পরিবারের টগবগে তরুণরা অংশগ্রহণ করে, আত্ম-বলিদান দেয়। কিন্তু লেখক সকল পরিবার থেকে একটা পরিবারকে এখানে হাজির করেছেন। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন যা আগস্ট আন্দোলন নামেও পরিচিত--এই উপন্যাসে ভিন্ন সুর ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।

পুর্ণিয়া জেলের রাজবন্দী বিলু। আর তার বাবা-মাও পৃথক সেলে আটক রয়েছে। খুব ভোরে বিলুর ফাঁসি কার্যকর হবে। আদেশ হয়েছে, জল্লাদও প্রস্তুত। বিলুর বাবা, মা--যারা অপেক্ষা করে আছে তাদের নিজ নিজ আবেগ অনুভূতি সমেত। জেলগেটে ভাইয়ের শবদেহ নেবার অপেক্ষায় আছে নীলু--বিলুর সহোদর। এদিকে বিলু তার একাকী সেলে ভাবছে তার জীবনের অতীত স্মৃতি। মানসপটে ভেসে আসছে মা, বাবা, নীলু, জ্যাঠাইমা, সহযোদ্ধা রাজনৈতিক কর্মীদের কথা। আন্দোলনের কথা, স্বরাজের কথা।  

 "ঢোঁড়াই চরিত মানস " ও সতীনাথ -

রামচরিত্র মানস সরোবরের ন্যায় বিশাল। এর ভিতর রামকথারূপ হাঁস ঘুরে বেড়ায়।’ বাংলা সাহিত্যজগতের অন্যতম ইন্টেলেকচুয়াল শিল্পী সতীনাথ ভাদুড়ী ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ লিখতে গিয়ে যে বহুবিধ পাদটীকা ব্যবহার করেছেন তার প্রথমটিতেই পূর্বোক্ত উল্লেখটি পাওয়া যায়। 
কাজ ও রাজনীতির সূত্রে বিহার প্রদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুযোগ তাঁর হয়েছিল। সেই প্রান্তিকায়িত জনের মধ্যে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক ভাবনার কী প্রভাব তার বিশ্লেষণ সতীনাথের অন্তঃকরণে স্বাভাবিকভাবেই হতে থেকেছে। একদিকে রাজা ও রাজত্বের থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী প্রান্তের মানুষ ও তাদের নিজস্ব জীবনের ধাঁচ দেখছেন লেখক, অন্যদিকে নিজে যে রাজনৈতিক মতাদর্শে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত ও প্রভাবিত তার প্রভাবের স্বরূপ বুঝতে চাইছেন ওই প্রান্তিক জনজীবনে।

ফলে একদিকে তিনি ভারতের প্রাচীন মহাকাব্যের দেশকাল অতিক্রমী প্রভাব, যা কিনা অবশ্যই ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের একটি প্রকল্প, অন্যদিকে তাঁর সমকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গান্ধী – এই দুই তিনি একটি আখ্যানের মধ্যে বুনে দিতে পেরেছিলেন। কাজটি অত্যন্ত কঠিন ছিল সন্দেহ নেই। কিন্তু সতীনাথের শক্তিশালী মনন একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। গান্ধীর রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রামায়ণের দিকে তাঁর মনোযোগ টেনেছিল সহজে। আবার এও তিনি দেখেছিলেন যে রামায়ণের কী সর্বগ্রাসী প্রভাব লোকমানসে। ফলে সতীনাথ যে প্রকল্প নিয়েছিলেন তা যেমন আকর্ষণীয় তেমনই জটিল। তাঁর রাজনৈতিক সচেতনা স্পষ্ট ‘জাগরী’-তে। বিয়াল্লিশের আন্দোলন ও ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয় মধ্যবিত্ত পরিবারে তার প্রভাব এই উপন্যাসের আখ্যান। রাজনৈতিক ভাবাদর্শ মানুষের মধ্যে, এমনকি তারা একই পরিবারের হলেও, কী অনতিক্রম্য দূরত্ব নিয়ে আসে তা এই উপন্যাস দেখিয়েছে। ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ সেরকম স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের আখ্যান না হয়েও গভীরতর রাজনীতির উপস্থাপক। এই রাজনীতি আবহমান মানব সমাজের রাজনীতি। তাই একদিকে তা ছুঁয়ে থাকে অতীতের রামকথা অন্যদিকে হাত ধরে তার সমকালের গান্ধীবাদের। এই বিপুল বিস্তারের জন্যই ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ হয়ে ওঠে বর্তমান ভারতের ধ্রুপদী মহাকাব্যিক উপন্যাস।




=============!!!!!!!===============