Thursday, 9 September 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ঔপন্যাসিক অনুরূপা দেবী। ০৯.০৯.২০২১. Vol _4 90. The blogger in literature e-magazine.

মৃত্যুঞ্জয়

আপনি সন্ন্যাসী তুমি সর্বত্যাগী শিব

ভোলা ব্যোমকেশ।

তাই নিজে ভক্ত‌ পেলে তারে ও সন্ন্যাসী

সাজাও মহেশ।

আপনি শ্মশানবাসী অঙ্গে মাখ ছাই

ভিক্ষাপাত্র সার।

শ্মশানবহ্নি দাহ বক্ষে দাও তাই

ভক্তে আপনার।

উন্মাদ তান্ডব খেলা তব ....প্রলয়ের

গরজন গান...

তোমার আনন্দ গীত তাই ভকতের

রোদনের তান।

কালকূটে কন্ঠভরা তবু মৃত্যু -জয়ী

তুমি মৃত্যুঞ্জয়।

অসীম দুঃখের বিষে জর্জ্জরিত নর

তবু বেঁচে রয়। 

-----------------------------###




অনুরূপা দেবী 

জন্ম ৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮২ কোলকাতা। পিতার নাম মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায় এবং পিতামহ ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ভূদেব মুখোপাধ্যায়। তার দিদি ইন্দিরা দেবী ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং কবি। তিনি তার আইনজীবী স্বামী শিখরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে 

মজঃফরপুরে বসবাস করতেন।

অনুরূপা দেবী তাঁর পিতামহ ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও দিদি ইন্দিরা দেবীর অণুপ্রেরণায় সাহিত্য চর্চা আরম্ভ করেন। তাঁর প্রথম কবিতা ঋজুপাঠ অবলম্বনে রচিত। রাণী দেবী ছদ্মনামে তার রচিত প্রথম গল্প কুন্তলীন পুরস্কার প্রতিযোগিতায় প্রকাশিত হয়। ১৩১১ বঙ্গাব্দে তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস টিলকুঠি নবনূর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৩১৯ বঙ্গাব্দে তার উপন্যাস পোষ্যপুত্র ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি বিখ্যাত হন।

অনুরূপা দেবী একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি কাশী এবং কলকাতায় কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি একাধিক নারীকল্যাণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহিলা সমবায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। নারীর অধিকার আন্দোলনের তিনি একজন পুরোধা ছিলেন।



রচনা


তাঁর রচিত উপন্যাস মন্ত্রশক্তি, মা, মহানিশা, পথের সাথী, বাগদত্তা নাটকে রূপান্তরিত হয়েছিল। তিনি ৩৩টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। জীবনের স্মৃতিলেখা তাঁর অসমাপ্ত রচনা।

উপন্যাস

  • পোষ্যপুত্র (১৯১১)
  • বাগদত্তা (১৯১৪)
  • জ্যোতিঃহারা (১৯১৫)
  • মন্ত্রশক্তি (১৯১৫)
  • মহানিশা (১৯১৯)
  • মা (১৯২০)
  • উত্তরায়ণ
  • পথহার।

অন্যান্য

  • সাহিত্যে নারী,
  • স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি,
  • বিচারপতি,
  • জীবনের স্মৃতিলেখা

সম্মাননা

মৃত্যু 

তিনি ১৯ এপ্রিল, ১৯৫৮ সালে মারা যান।



আলোচনা - 

বাঙালি সাহিত্যিক, কবি ও সমাজসেবিকা অনুরূপা দেবী। তিনি ৩৩টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৯১১সালে তাঁর উপন্যাস পোষ্যপুত্র ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি বিখ্যাত হন। এই উপন্যাসটি সাহিত্য সমাজে ভীষণভাবে সমাদৃত হয়। এরপর তাঁর লেখনীর স্বর্ণস্পর্শে বাংলা সাহিত্যে একাধিক জনপ্রিয় উপন্যাসের জন্ম দেয়। অনুরূপা দেবী তাঁর দিদি ইন্দিরা দেবীর অনুপ্রেরণায় সাহিত্য চর্চা আরম্ভ করেন। যে যুগে মেয়েদের পড়াশোনাকে তাচ্ছিল্য করা হত, সেই যুগে এই পরিবার থেকে উঠে আসেন দুজন লেখিকা— ইন্দিরা দেবী ও অনুরূপা দেবী। নারীর অধিকার আন্দোলনের তিনি একজন পুরোধা ছিলেন। তিনি একাধিক নারীকল্যাণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহিলা সমবায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৩১ সালে উত্তর বিহার সাহিত্য সম্মেলনে কথাসাহিত্য শাখার সভানেত্রী হন। এ ছাড়াও তিনি ১৯৪৬ সালে হিন্দু কোড বিল ও ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হন। 


অনুরূপা দেবীর স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে যথেষ্ট অবদান থাকলেও মূলত তিনি ছিলেন মহিলা সাহিত্যিক। তাঁর চলচ্চিত্রায়িত উপন্যাসগুলির বিষয়বস্তু বিশেষভাবে মহিলাদের অবসরের আবেগঘন আলোচনা। যুক্ত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন নারী কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে। নারীর সমানাধিকারের লড়াইয়ে প্রথম দিকের রূপকার তিনি। বাল্যকালে অনুরূপা দেবী পিতামহ ভূদেব মুখোপাধ্যায় এর কাছে সংস্কৃতি শিক্ষা ও বাংলা সাহিত্যিচর্চার প্রেরণা লাভ করেন। তার কাছে কিছুদিন দর্শনশাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। তাঁর দিদি ইন্দিরা দেবী ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং কবি। তিনি তাঁর আইন ব্যবসায়ী স্বামী শিখরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মজঃফরপুরে বসবাস করতেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ কন্যা মাধুলী লতার সাথে এখানে চ্যাপম্যান গার্লস স্কুল নামে একটি ইংরেজি স্কুল স্থাপন ও পরিচালনা করেন।


নারী নিয়ে তাঁর রচিত ‘সাহিত্যে নারী’ (১৯৪৯) বইটি নারী রচিত সাহিত্য-আলোচনার পথপ্রদর্শক। কবিতা লেখার হাতও ছিল চমৎকার। ‘ভারতী’ পত্রিকার পৌষ ১৩১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা ‘দেবদূতের প্রতি রাজা অরিষ্টনেমি’। ঝোঁক ছিল পরীক্ষামূলক রচনা, বা একই লেখার রূপান্তরের দিকেও। নিজের কয়েকটি উপন্যাস নাটকে পরিবর্তিত করেছিলেন। স্টার থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘মন্ত্রশক্তি’, বিখ্যাত নাট্যকার অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রূপদানে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি পণপ্রথা, বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও জনমত গড়ে তুলেছিলেন। এ দিক থেকে দেখলে তিনি এক জন সমাজ সংস্কারকও। যুক্ত ছিলেন কলকাতা ও কাশীর কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয়ের সঙ্গেও। ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন যে নারীদেরও আছে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। নারী কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ শুরু করেন, প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক আশ্রম। 


ব্যক্তিগত জীবনে মাত্র দশ বছর বয়সে উত্তরপাড়ার শিখরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় অনুরূপা দেবীর। বিহারের মুজফ্‌ফরপুরে শুরু হয় সংসার জীবন। দুটি সন্তান হয়, একটি পুত্র এবং একটি কন্যা। শিখরনাথ অবসরে পড়তেন দেশ-বিদেশের সাহিত্য; সাহিত্য নিয়ে আলোচনা খুব পছন্দ করতেন। স্ত্রীকেও লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। জীবন তাঁকে দু’হাত ভরে দিয়েছে, নিয়েছে বড় কঠিন ভাবে। ১৯৩৪-এ মুজফ্‌ফরপুরের ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় তাঁর কন্যার। ভূমিকম্পে তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত। সব-হারানো মানুষের কান্না মোছাতে তৈরি করেছিলেন ‘কল্যাণব্রত সঙ্ঘ’। অনুরূপা দেবীর শেষ জীবন কেটেছিল রানিগঞ্জ শহরে। নাতি অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেখানে এক সংস্থার উচ্চপদাধিকারী। প্রায়ই দেখা যেত বাংলোর বারান্দায় বসে রোদে চুল শুকোতে শুকোতে বই পড়ছেন বা লিখছেন এক বৃদ্ধা। মাঝে মধ্যে পানের বাটা থেকে পান খাচ্ছেন। তিনিই ছিলেন মৃত্যুবরণ করেন ঔপন্যাসিক অনুরূপা দেবী। ১৯৫৮ সালের ১৯ এপ্রিল রানিগঞ্জেই মৃত্যুবরণ করেন কবি ও সমাজ সেবিকা অনুরূপা দেবী। অসমাপ্ত থেকে যায় ‘জীবনের স্মৃতিলেখা’ রচনাটি। 


=========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆=========









No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...