পোয়েট্ টেগর হন কে তোমার,
জোড়াসাঁকোতেই থাক?
বাবার খুড়ো যে হন শুনিয়াছি,
মোর কেহ হয় নাক। ....।’
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জুলাই ৭৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।
জন্ম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। তবে ঠাকুরবাড়ির খ্যাতি ও ঐতিহ্যের বাতাবরণে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন 'বিদ্রোহী'। ছোটবেলা থেকেই তার বিদ্রোহ ছিল নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে, উপনিষৎ পাঠরূপ ভগবৎ-ভজনা তথা সনাতন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, চলতি সাহিত্য এবং চিত্রকলার বিরুদ্ধে। তারই লেখার সে প্রকাশ ছিল এরকম -
'পয়েট টেগোর হন কে তোমার, জোড়াসাঁকোতেই থাকো?' বাবার খুড়ো যে হন শুনিয়াছি, মোর কেহ হয় নাকো।"
পরিবারের বিরুদ্ধে আজীবন সেই কুরুচিকর ক্ষোভ ছিল তার। শেষ জীবনে লেখা স্মৃতিকথা "বিস্মৃতিচারণা"-য়ও প্রায় সেই মেজাজই প্রকাশ পেয়েছে। নিজের বেশভূষা, আদবকায়দা, ছবি আঁকা, সাহিত্য রচনা, প্রতি ক্ষেত্রেই ফুটে উঠেছে প্রথা-ভাঙা স্বাতন্ত্র্যতা। স্বভাবতই ঠাকুরবাড়ির নির্ধারিত শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ করে আত্মীয় স্বজনের কাছে তিনি ঠাকুরবাড়ির 'কালাপাহাড়', 'বোহেমিয়ান', ইত্যাদি নামে পরিচিত হয়েছিলেন। পৈতৃক সম্পত্তির অংশ নিয়ে ঠাকুরবাড়ি ছেড়েছেন ছাব্বিশ বৎসর বয়সে। সাহিত্যচর্চা, বন্ধুপোষণ ও নানান বিচিত্র খেয়ালের বেশ কয়েক লক্ষ টাকা নিঃশেষ করে দিয়েও আক্ষেপ করেন নি। তবে উদীয়মান শিল্পী হিসাবে কলকাতার তৎকালীন সরকারি আর্ট স্কুলে দুবছর পড়াশোনা করে শৈল্পিক দক্ষতা অর্জনে লন্ডনে যান এবং কয়েক বছর কাটিয়ে ফিরে আসেন।
শিল্প ও সাহিত্যকর্ম
ছবি আঁকায় পূর্ব আর পশ্চিমের স্টাইল মিলিয়ে নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বেঙ্গল স্কুল-এর শিল্পচিন্তা থেকে দূরে সরে এসে নীরদ মজুমদার প্রদোষ দাশগুপ্ত, গোপাল ঘোষ, পরিতোষ সেন, কমলা দাশগুপ্ত , রথীন মৈত্র, প্রাণকৃষ্ণ পাল প্রমুখ তরুণ শিল্পীদের নিয়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেছিলেন ক্যালকাটা গ্রুপ। দক্ষ কলাকুশলী শিল্পী বংশীচন্দ্র সেনগুপ্তকে তিনিই আবিষ্কার করেন কাশ্মীরে। আর্ট কলেজে পড়ার সময় 'চতুরঙ্গ' পত্রিকার চার-পাঁচ সংখ্যা তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে তার সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা 'ভবিষ্যৎ' ও সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা 'অগ্রগতি' তে তার নিজস্ব ধারার দুঃসাহসিক লেখা, ছবি, পরিকল্পনা ও অঙ্গসজ্জার অভিনবত্ব ও চমকপ্রদ ছিল। তবে সাময়িকপত্রের ইতিহাসে তার শ্রেষ্ঠ অবদান শিল্পকলা সংক্রান্ত পত্রিকা " সুন্দরম"। কবি হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। কবিতায় 'অগ্রমিল ছন্দ' নামে এক নতুন ছন্দ করেছিলেন। অনেক সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে ধরে নিয়ে লেখা শুরু করতেন। কারুশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে তিনি এক বিশিষ্ট কারুশিল্প সংগ্রাহক হয়ছিলেন। ] অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকা জিনিস ছবি, মূর্তি, পট, পাটা থেকে পুরোনো আসবাব, ঝাড় লণ্ঠন, দোয়াত-কলম, দুষ্প্রাপ্য বিরল ইঙ্ক পট, মুঘল আমলের হুকা সিগারেট, চুরুটের পাইপ, পুরোনো মানচিত্র, মনীষীদের চিঠি — এরকম অদ্ভুত সব সংগ্রহে সমৃদ্ধ ছিল তার বাড়ি। কারুশিল্পের প্রতি আকর্ষণ ও অভিজ্ঞতার জন্য তিনি ভারত সরকার তাঁকে অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডিক্র্যাফস বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা নিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করতে পারেননি। ] এবং এক সময় তাঁকে ও তার শিল্প নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে - 'আর্ট অব সুভো ঠাকুর' সংকলন গ্রন্থে। শান্তি চৌধুরী 'দ্য লোনলি পিলগ্রিম' নামে তার এক জীবনীচিত্র তৈরি করেন।
রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-
মায়ামৃগ
নীলরক্ত লাল হয়ে গেছে
অলাতচক্র
অতন্দ্র আলতামিরা
প্যানসি ও পিকো ।
=={{{{{{{{{={======={{{=([{{{=========[
No comments:
Post a Comment