Friday, 25 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
          জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

      বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক কৃষ্ণা বসু
------------------//////----------------------
Doinik Sabder Methopath
Vol -233. Dt -26.12.2020
১০ পৌষ,১৪২৭.শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷\\\\\\÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
  নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য আজও রহস্যাবৃত সমগ্র ভারতবাসীর জীবনে। সেই রহস্য সন্ধানে তাঁরই পরিবারের অন্যতম প্রতিনিধি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক কৃষ্ণা বসু। সম্পর্কসূত্র তিনি সুভাষচন্দ্রের জ্যেষ্ঠভ্রাতা শরৎচন্দ্র বসুর পুত্র শিশিরবাবুর সহধর্মিনী। এই প্রসঙ্গে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ " প্রসঙ্গ সুভাষচন্দ্র" আজও আদরণীয় । 
নেতাজি পরিবারের সদস্য ছাড়াও তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক, কবি এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। বাংলার সংস্কৃতি এবং সমাজে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ‘
কৃষ্ণা বসু ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩০-এ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হচ্ছেন চারু সি. চৌধুরী জন্ম(কিশোরগঞ্জ) এবং মাতা ছায়া দেবী চৌধুরানী। তার পিতা ছিলেন সাংবিধানিক অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সচিব। তাঁর স্বামী ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরত্‍চন্দ্র বসুর পুত্র শিশির বসু। ১৯৫৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি শিশির কুমার বসুকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই পুত্র, সুমন্ত্র বসু, সুগত বসু এবং এক কন্যা শর্মিলা বসু।

তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর বি.এ ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ভাটখন্দ সঙ্গীত ইনস্টিটিউট, লখনউ, উত্তর প্রদেশ থেকে সম্মানিত সঙ্গীত-বিশারদ ডিগ্রী লাভ করেন।

তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ৪০ বছর শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং আট বছরের জন্য কলেজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি প্রথমবারের মতো ১৯৯৬-১৯৯৮ মেয়াদে ১১তম লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ১২তম (১৯৯৮–১৯৯৯) এবং ১৩তম (১৯৯৯–২০০৪) লোকসভারও সদস্য ছিলেন।তার তৃতীয় মেয়াদে, তিনি নিয়োজিত ছিলেন:
চেয়ারপার্সন, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি
সদস্য, সাধারণ উদ্দেশ্য কমিটি
সদস্য, পেটেন্টের যৌথ কমিটি (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল, ১৯৯৯
সদস্য, অফিসিয়াল ভাষা কমিটি।


রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কৃষ্ণা বসু শিক্ষাবিদও ছিলেন। কৃষ্ণা বসু ‘অ্যান আউটসাইডার ইন পলিটিক্স’, ‘এমিলি অ্যান্ড সুভাষ’, ‘লস্ট অ্যাড্রেসেস’, ‘চরণরেখা তব’, ‘প্রসঙ্গ সুভাষচন্দ্র’, ‘ইতিহাসের সন্ধানে’ ইত্যাদি গ্রন্থের লেখিকা ছিলেন।

বসু সক্রিয়ভাবে জনস্বার্থে কাজ করেছেন। তিনি কলকাতা ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট এবং নেতাজি গবেষণা ব্যুরো কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, "বিবেক চেতনা" এর প্রেসিডেন্ট – যেটি হচ্ছে অনগ্রসর নারী ও শিশুদের জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা এবং আর্ন্তজাতিক পি.ই.এন এর একজন সদস্য। কৃষ্ণা বসু ইংরেজি ও বাংলা ভাষার কিছু পত্রিকার কলামিস্ট ছিলেন। যেমন: দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, অমৃত বাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান, টেলিগ্রাফ, ইলাস্ট্রেড উইকলি অব ইন্ডিয়া। তিনি নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্যও কাজ করেছেন।


কৃষ্ণা বসু ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Thursday, 24 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ। কবিতা

∆∆∆∆∆∆∆ সাহেবের বড়দিন ∆∆∆∆∆∆∆∆
               Happy Christmas Day
                           ***2020***

                বিশেষ কবিতা সংখ্যা
                          " পিকনিক"
বনভোজন =====বনভোজন=====বনভোজন
                    Doinik Sabder Methopath
                     Vol -232. Dt -25.12.2020
                      ৯ পৌষ,১৪২৭. শুক্রবার
চড়ুইভাতি ÷÷÷÷÷÷ চড়ুইভাতি ÷÷÷÷÷চড়ুইভাতি

১.
পিকনিক 
দেবাংশু শেখর পড়িয়া 


পিকনিক হয়নিতো বহুদিন
 তাই  মন আজ ভাবনাহীন
ঘরে বসে হাড় ভাঙে কড়মড়
 রেডিওটা করে যেন ঘড় ঘড়
এখন কি যে করি
 মন থেকে আনন্দটাই গিয়েছে চুরি

 পিকনিকে গিয়েছিলাম আসাম
 খেয়েছি গরম চা হ্যান্ডসাম
 ঠান্ডায় গরম হয়েছিল গা 
 শীতে সবার কাঁপছিল পা

সেইসব দিন কেটেছে অন্যভাবে
এইসব দিনের সামনে মনমাতে

কিন্তু ভাবি আজ এলো সেইদিন
কেমন করে চলে গেল !
এমন সব দিন।
----------------------------------
২.
পিকনিক স্পট
ফটিক চৌধুরী


ধান কাটা হয়ে গেছে সারা
টুকরো ধানের শিষ কুড়িয়ে
        নিয়ে গেছে কেউ কেউ
শূন্য ধানক্ষেতে উঁকি মারছে
                 বিষন্ন নাড়াগুলো
সমগ্র আলগুলি ক্ষত বিক্ষত
করেছে ইঁদুরের খোঁজে কেউ,
হেমন্তকে বিদায় জানায় শীত।
পাশে একটি শীর্ণ নদী বয়ে গেছে
তারই পাশে আমাদের বনভোজন
পৌষের মিষ্টি রোদ্দুর মেখে।

ছোটবেলার এইসব মধুর স্মৃতিই
             আমাদের পিকনিক স্পট।
-----------------------------------------

৩.
পিকনিক
নন্দিনী সরকার


ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
চলছে রেলের গাড়ী।
থামবে গিয়ে সেই সে মুলুক
যেথায় বাগান বাড়ি ।
রানী দিপু দেবু তপু
নীতা গীতা সীতা,
আরো কতো সাথী আছে
নানান দেশের মিতা।
চাঁদা তুলে ছাতা মেলে
টেবিল চেয়ার পেতে ,
ঠাকুর মশায় রান্না করেন
যোগায় সবাই হাতে।
শুক্তো ডালের পরেই আছে
ঝিরি আলু ভাজা,
কাতলা দিয়ে কালিয়া আর
চিলি চিকেন তাজা।
চাটনি পাঁপড় পান মিষ্টি
এরাও লিস্টে আছেন,
বড়দিনে ফুর্তি ভারি
চলুন সবাই পাবেন।
আপনারা সব যাবেন।
আপনারা সব যাবেন।।।।।
----------------------------------------


৪.
বনভোজন
অমিত কাশ্যপ


ঝমঝম করে রবিবার নেমে পড়ল রাস্তায় 
শাল-সোয়েটারের ওপর শীতের আমেজ
বর্ণশোভার শহর, শহরে আজ কার্নিভ্যাল
বনভোজনের গাড়ি ছুটছে শহর কাঁপিয়ে 

এখন বন কোথায়, সাজানো গাছপালা আর বাংলোবাড়ি
ভোজনের সেই উন্মাদনা নেই
কাঠের আগুন আর শালপাতার গন্ধ 

হারিয়ে যাচ্ছে সেই সোনালি দিন 
শীত মানেই পিকনিক, পিকনিক মানেই বড়দিন.
------------------------------------


৫.
পিকনিক
নীতী সরকার


              
শীতের শিশিরভেজা সকালে
    কিচির মিচির করেচলি পিকনিকে
কুয়াশার সকালেও চোখ ঢাকি সানগ্লাসে
    গায়ে পড়ি পশমের কার্ডিগান।

নৌকা বিহারে আমরা চলি
    বনভোজনের উদ্দেশে বন অনুসন্ধানে
বনের কাঠ দিয়ে উনুন জ্বালিয়ে চলো
   ভুড়িভোজনের আয়োজন। 

প্রথম ভোজনে থাকে লুচি, তরকারি, মিষ্টি
   তারপর থাকে শীতের রঙিন লেবু
লেবুর রসে তৃষ্ণা মিটিয়ে
   চলে, গল্প, আড্ডা, খেলাধূলা।

রান্নার মাঝে মাঝে থাকে
   চা, কফি, পকোড়া
শীতের রৌদুরে পিঠে তাপ দিয়ে
  বন্ধুদের সাথে মজা করা

একটা আলাদা আনন্দ খুঁজে পাওয়া
   শেষে পাঠার মাংস আর পোলাও খেয়ে
সারাদিনের আনন্দের অনুভূতি আর মুক্তবাতাস
হ্নদয়ে বহন করে বাড়ী ফিরি। 
----------------------------------

৬.
পবিত্র দিন 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


আমার তোমার সবার দিন, যেন আজ-
এক মিলনের দিন, প্রভু যীশুর জন্মদিন।
নিজগুণে সত্যিই যেন সবার প্রিয় বড়দিন,
রঙবেরঙের সাজে বেরোনো কত মানুষ, 
আর বেলুনের ভীড়, যেন রঙীন প্রজাপতি-
উড়ে বেড়ায় চোখের সামনে,আনন্দে মেতে।

যীশুর ন্যায় ও কল্যাণের আদর্শ ও নীতিবোধে,
বিশ্ব যেন এক শান্তি পায়, স্বস্তি ফিরে আসে
সবার মনে, সবার প্রাণে, জীবনে ও যাপনে-
বেঁচে থাকার মূল্যবোধ আর সমাজের কল্যাণে।
ধনী গরিব সবাই ভাসে আনন্দের জোয়ারে,
গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা, বনভোজনের তালে।
--------------------------------

৭.
বনভোজন
 গোবিন্দ মোদক 


শীত পড়েছে চলো এবার বনভোজনে যাই, 
সামনেই বড়দিনের ছুটি, তাই চিন্তা কিছু নাই !
যাওয়া যেতে পারে দূরে, বকখালি বা দীঘায়,
কাছে-পিঠে সবুজ-দ্বীপ কিংবা বিশ-বিঘায় ! 
সেইখানেতেই সবাই মিলে হবে চড়ুইভাতি, 
শীতের বাতাস আম্রকুঞ্জে করবে মাতামাতি !
বাগানেতে থাকবে ফুটে মরশুমি ফুল কতো, 
কিচিরমিচির ডাকবে এসে পাখিরা সব যতো ! 
আমরা সবাই টিফিন খাবো লুচি আলুর দম, 
ডিম-সিদ্ধ, কমলালেবু আর কেক নানারকম !
রান্না-বান্না হতে থাকবে মাইকে বাজবে গান, 
সবাই মিলে নাচা-গাওয়া, খেজুরের রস পান !
দুপুর হতেই মাছের কালিয়া, মাংস কষা দিয়ে, 
ফ্রাইড-রাইস সবাই মিলে খাবো খুব জমিয়ে !
খাওয়ার শেষে বোটিং করা কিংবা একটু খেলা, 
ঢলবে সূর্য পশ্চিমেতে .... , ফুরিয়ে যাবে বেলা !
কফি-পকৌড়া খেয়ে তখন ফিরে আসার পালা, 
থাকবে মনে বনভোজনের হাজার স্মৃতির মালা !!
--------------------------------

৭.
পিকনিক
 চন্দন মাইতি


ব‍্যাস্ততার রথে চড়ে
সবাই যখন এদিক ওদিক,
তখনই তাদের মিলিয়ে দেয়
ছোট্ট একটা পিকনিক।

জড়ো হয় কোনো ফাঁকা মাঠে
কিংবা নদীর ধারে,
আনন্দেতে লেগে পড়ে
যে যা কাজ পারে।

গল্প-গাথা গান বাজনা
চলতে থাকে সবই,
কবিতা পাঠ বাদ যায় না
থাকেন যদি কবি।

মিলনের আনন্দেতে
জমে যায় বেশ ভোজ,
কাঁচা হাতে তৈরি পদেও
মেলে স্বাদের খোঁজ।

হইহুল্লোড় করে যখন
চড়ুইভাতি শেষ,
হাত-পা গুলো ক্লান্ত হলেও
মেজাজ টা খুশ বেশ। 
-----------------বনভোজন ------------------




Wednesday, 23 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
         জন্মদিনের ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধার্ঘ্য

"যদি শান্তি চাও, মা, কারো দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার ক'রে নিতে শেখ, কেউ পর নয়, মা; জগৎ তোমার।"
সবার মা সারদা মা।
============!!!!!!!!!!!!!!!=============
       Doinik Sabder Methopath
      Vol - 231. Dt -24.12.2020
         ৮ পৌষ, ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
++++++++++++++++++++++++++++++++++

মা সারদা পরম দয়াময়ী মা ৷ মায়ের কৃপায় সন্তানের জীবনে আলোর জোয়ার আসে ৷

জয়রামবাটির সারদামণি পরবর্তীকালে সবার প্রিয় সারদা মা হয়েছিলেন ৷

মা সারদা তিনি সব সময়েই ছেলেদের বলতেন তিনি সতেরও মা তিনি অসতেরও মা ৷

ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মিনী জগজ্জননী মা পাতানো মা নন বা মুখে বলা মাও নন, তিনি সত্যিকারের মা ৷

সারদা মা, কামারপুকুরের বাড়ি থেকে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির ৷ এক অন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন ৷ ভক্ত সন্তানদের কখনই তাঁর দুয়ার থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে দিতেন না ৷

মা আবির্ভূত হয়েছিলেন,১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর, বাংলা ১২৬০ সনের ৮ পৌষ, অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণা সপ্তমী তিথিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম জয়রামবাটীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে সারদা মা রূপে। তাঁর পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। সারদা দেবীর পিতৃকূল মুখোপাধ্যায় বংশ পুরুষানুক্রমে ভগবান শ্রীরামের উপাসক ছিলেন। সারদা দেবী ছিলেন তাঁদের জ্যেষ্ঠা কন্যা তথা প্রথম সন্তান। জন্মের পর প্রথমে সারদা দেবীর নাম রাখা হয়েছিল “ক্ষেমঙ্করী”। পরে “ক্ষেমঙ্করী” নামটি পালটে “সারদামণি” রাখা হয়। রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কৃষিকাজ ও পুরোহিতবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করতেন এবং তিন ভাইকে প্রতিপালন করতেন। দরিদ্র হলেও রামচন্দ্র ছিলেন পরোপকারী ও দানশীল ব্যক্তি। কথিত আছে, সারদা দেবীর জন্মের আগে রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরী উভয়েই অনেক দিব্যদর্শন করেছিলেন। সারদা মায়ের জন্মের পর রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরীর কাদম্বিনী নামে এক কন্যা এবং প্রসন্নকুমার, উমেশচন্দ্র, কালীকুমার, বরদাপ্রসাদ ও অভয়চরণ নামে পাঁচ পুত্রের জন্ম হয়।বাল্যকালে সাধারণ গ্রামবাসী বাঙালি মেয়েদের মতো সারদা দেবীর জীবনও ছিল অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে। ঘরের সাধারণ কাজকর্মের পাশাপাশি ছেলেবেলায় তিনি তাঁর ভাইদের দেখাশোনা করতেন, জলে নেমে পোষা গোরুদের আহারের জন্য ঘাস কাটতেন, ধানখেতে ক্ষেতমজুরদের জন্য মুড়ি নিয়ে যেতেন, প্রয়োজনে ধান কুড়ানোর কাজও করেছেন। সারদাদেবীর প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা একেবারেই ছিল না। ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে পাঠশালায় যেতেন। তখন তাঁর কিছু অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্রী লক্ষ্মী দেবী ও শ্যামপুকুরে একটি মেয়ের কাছে ভাল করে লেখাপড়া করা শেখেন। ছেলেবেলায় গ্রামে আয়োজিত যাত্রা ও কথকতার আসর থেকেও অনেক পৌরাণিক আখ্যান ও শ্লোক শিখেছিলেন। ছেলেবেলায় পুতুলখেলার সময় লক্ষ্মী ও কালীর মূর্তি গড়ে খেলাচ্ছলে পূজা করতেন। সেই সময় থেকেই তাঁর বিবিধ দিব্যদর্শনের অভিজ্ঞতা হত। স্বয়ং ভগবান যে তার কপালে ঈশ্বর রূপ রেখা রেখে গেছে, সে কারণেই,তিন বছরের বালিকা সারদার সঙ্গে এক গানের আসরে প্রথম দেখা রামকৃষ্ণের। নবীন গায়ক দলের দিকে সারদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তুমি কাকে বিয়ে করতে চাও’। বালিকা তার ছোট্ট তর্জনী অন্য দিকে রামকৃষ্ণের দিকে নির্দেশ করে বলল— একে। এরপর পাঁচ বছরের বালিকা সারদার বিবাহ হল চব্বিশ বছরের যুবক রামকৃষ্ণের সঙ্গে। রামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীর মন্দিরের পূজারি।



শ্রীরামকৃষ্ণের প্রয়াণের দুই সপ্তাহ পর লক্ষ্মী দেবী, গোপাল মা প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহস্থ ও সন্ন্যাসী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে সারদা দেবী উত্তর ভারতের তীর্থ পর্যটনে যাত্রা করেন। রামচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত অযোধ্যা ও কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করেন তারা। পরে তিনি দর্শন করেন কৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন। কথিত আছে, এই বৃন্দাবনেই সারদা দেবীর নির্বিকল্প সমাধি লাভ হয়েছিল। এবং এই বৃন্দাবন থেকেই গুরু রূপে তার জীবনের সূত্রপাত হয়। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, যোগেন মহারাজ প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের তিনি মন্ত্রদীক্ষা দান করেন। বৃন্দাবনেই শ্রীশ্রীমা রূপে তার সত্তার সূচনা ঘটে।তার জীবনীকার ও শিষ্যদের মতে, তাকে মা বলে ডাকা কেবলমাত্র সম্মানপ্রদর্শনের বিষয়ই ছিল না। যাঁরাই তার সাক্ষাতে আসতেন, তারাই তার মধ্যে মাতৃত্বের গুণটি আবিষ্কার করতেন।


তীর্থযাত্রার শেষে সারদা দেবী কয়েকমাস কামারপুকুরে বাস করেন। এই সময় একাকী অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্যে দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। ১৮৮৮ সালে এই খবর শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী শিষ্যদের কানে পৌঁছলে তারা তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। স্বামী সারদানন্দ কলকাতায় তার জন্য স্থায়ী বাসভবন নির্মাণ করান। ‘মায়ের বাটী’ নামে পরিচিত বাগবাজারের এই বাড়িটিতেই জয়রামবাটীর পর সারদা দেবী জীবনের দীর্ঘতম সময় অতিবাহিত করেছিলেন।] এই বাড়িটিতে স্থাপিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলা মাসিক মুখপত্র উদ্বোধন পত্রিকা তথা মিশনের বাংলা প্রকাশনা উদ্বোধন কার্যালয়ের প্রধান অফিস। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত এই বাড়িতে তার দর্শন, উপদেশ ও দীক্ষালাভের আশায় ভিড় জমাতেন। তার মাতৃসমা মূর্তি ও মাতৃসুলভ ব্যবহার সকলকে মানসিক শান্তি দিত। তার নিজের সন্তানাদি না থাকলেও, শিষ্য ও ভক্তদের তিনি মনে করতেন তার আধ্যাত্মিক সন্তান।

১৯০৬ সালে মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর মৃত্যুর পর সারদা দেবী কার্যত পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। বিধবা ভাতৃজায়া সুরবালার ভার গ্রহণ করলেন নিজের হাতে। সুরবালা সেই সময় রাধারানি নামে একটি সন্তানের জন্ম দেন। রাধু নামে সর্বাধিক পরিচিত রাধারানি ছিল একগুঁয়ে এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না সারদা দেবীর। রাধুর কাছে তিনিই ছিলেন মা। আর মায়ের মতোই ধৈর্য সহকারে তার দেখভাল করতেন তিনি।

শ্রীমা রামকৃষ্ণ সংঘ ও ভক্তসমাজে সর্বাধিক শ্রদ্ধার আসনটি লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজের প্রয়াণের পর রামকৃষ্ণ আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং ভক্তদের বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা দেবীর সত্তায় কোনো পার্থক্য আরোপ না করতে। বলা হয়, কয়েকজন শিষ্যও তার দর্শন লাভের পর আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রাপ্ত হন। কেউ কেউ তার সাক্ষাৎ দর্শনের পূর্বেই দেবী রূপে তার দর্শন লাভ করেন। আবার কেউ কেউ স্বপ্নে তার থেকে দীক্ষা লাভ করেন বলেও কথিত আছে। এইরকমই একটি উদাহরণ হল, বাংলা নাটকের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, যিনি মাত্র উনিশ বছর বয়সে স্বপ্নে তার কাছে থেকে মন্ত্র লাভ করেছিলেন। অনেক বছর পরে যখন তিনি সারদা দেবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন, তখন অবাক হয়ে দেখেন তার স্বপ্নে দেখা দেবী আসলে ইনিই।

উদ্বোধন ভবনে শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যারা তার সঙ্গ দিতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গোপাল মা, যোগিন মা, গৌরী দিদি ও লক্ষ্মী মা।
১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমা জয়রামবাটী যাত্রা করেন এবং সেখানেই এক বছর কাটান। জয়রামবাটীতে অবস্থানের শেষ তিন মাস তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি অশক্ত অবস্থায় তাকে কলকাতায় আনা হয়। পরের পাঁচ মাস তিনি রোগযন্ত্রণায় অত্যন্ত কষ্ট পান। মৃত্যুর পূর্বে এক শোকাতুরা শিষ্যাকে তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন,যদি শান্তি চাও, মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপন করে নিতে শেখ। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার। মনে করা হয় এই উপদেশটিই বিশ্বের উদ্দেশ্যে তার শেষ বার্তা। ১৯২০ সালের ২০ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে তিনি মহাসমাধী লাভ করেন পশ্চিমবাংলার কলকাতার বাগবাজার মায়ের বাড়িতে।মা জে আজো আমাদের ছেড়ে যাননি ,আমাদের মধ্যে রয়ে গেছেন তিনি। সেই কারণেই বরানগর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে দুর্গারূপে পূজিতা হন মা সারদা। হাওড়ার আমতার খড়িয়পে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ প্রেমবিহারেও মা দুর্গার সঙ্গে আরাধ্যা স্বামী বিবেকানন্দের ‘জ্যান্ত দুর্গা’ মা সারদাও। সেই ১৯৪৪ সাল থেকে মা সারদার প্রতিকৃতিকে দুর্গারূপে পুজো হয়ে আসছে বরানগর আশ্রমে। আর খড়িয়পে প্রেমবিহার প্রতিষ্ঠার পর থেকে অর্থাৎ বিগত ১৯ বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে।বরানগরে চারদিন চার রূপে পুজো করা হয় মা সারদাকে। মা সারদাকে দুর্গারূপে পুজো শুরু হওয়ার পর বিসর্জন রীতি উঠে গিয়েছে আশ্রমে। বরানগরে মহাসপ্তমীর দিন সারদা মায়ের রাজরাজেশ্বরী বেশ। মাথায় থাকে সোনার কিরীট, বেনারসী ও আভরণে সুসজ্জিতা মা। অষ্টমীতে যেগিনী বেশী সারদা মা যেন তপস্বিনী উমা। গৈরিকবসনা, শিবস্বরূপা জটাজুটসমাযুক্তা তাঁর রূপ।আর নবমীর দিন তিনি কন্যারূপে আবির্ভূতা। এইদিনই কুমারী রূপে তাঁর পুজো করা হয়। দশমীতে মায়ের ষোড়শী বেশ। মা দুর্গা এদিনই পাড়ি দেন কৈলাসে। চারদিন বৈচিত্রের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় এই অভিনব পুজো। প্রতিমার বিসর্জন হয় না। এই আশ্রমে শুধু ঘট বিসর্জনই রীতি। এইসব রীতি-রেওয়াজ মধ্যেই মা সারদা হলেন ব্রহ্মবিদ্যা-র আঁধারস্বরূপ। তাঁর মাধ্যমে রামকৃষ্ণ তত্ত্ব অবগত হওয়া যায়। দক্ষিণেশ্বরে মা ঠাকুরের পদসেবা করার সময় বিনীত প্রশ্ন পেশ করেছেন, ‘আমাকে কি বলে মনে মনে হয়।’ শ্রীশ্রী ঠাকুরের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘যে মা মন্দিরে আছেন এভং ভবতারিনী নামে আমার পূজা গ্রহণ করছেন- তিনিই এখন শ্রীমা সারদা হয়ে আমার পদসেবা করছেন।’ শ্রীমা সারদা ঈশ্বরী। গা্যত্রী জননী। তিনি ছিলেন অগ্নি ন্যায় তেজদৃপ্ত। তৎকালীন সময় দেশব্যাপী ইংরেজ হটাও আন্দোলন। মা কিন্তু আমার মাতৃভূমি এমন ভাবাবেগে আপ্লুত হননি বা প্রশ্রয় দেননি। অথচ নিজস্ব যুক্তি ও চিন্তায় স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং নিজেও প্রত্যয়ী থেকেছেন। যেমন উদাহরণস্বরূপ উল্ল্যেখ করা যায় ইংরেজ সরকার প্রতিমুহূর্তে মায়ের বাড়ির প্রতি কড়া নজর রেখেছিল, যদিও সাহসে কুলোয়নি মা-কে ঘাটানোর। ‘শ্রীশ্রীমা’-র কাছে কোন কিছু অজ্ঞাত ছিল না, তবে অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী ‘মা’ দৃঢ় অথচ শান্তি আচার আচরণে রাজশক্তিকে উপেক্ষা করে গেছেন, তাঁর স্নেহের ছত্র ছায়ায় বহু বিপ্লবী আশ্রয় নিয়েছেন। নীরবে-নিভৃতে কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছেন। স্বামীজী শিবানন্দজীকে চিঠিতে লিখলেন, ‘যার মা-র ওপর ভক্তি নেই তার ঘোড়ার ডিম হবে। সোজা বাংলা কথা। ঠাকুর বরং যাক। ঠাকুরের থেকে মা বড়ো দয়াল। মা-কে তোমরা বোঝনি। মায়ের কৃপা লক্ষগুণ বড়ো।’তাই মায়ের বিকল্প আর কোনো বড় শক্তি হতে পারে না এ যুগেও।মায়ের অন্তর শক্তির ঊর্ধ্বে আজও আমরা যেতে পারিনি কেউ, মায়ের চেতনার সেইরূপ।
রামচন্দ্র প্রশ্ন করেন-‘কেগো তুমি’; বালিকার উত্তর: এই আমি তোমার কাছে এলুম। যারা পূর্ব পূর্ব অবতারদের লীলা সঙ্গিনী রূপে এসেছিলেন, যদি ঐতিহাসিক দৃষ্টি দিয়ে বিচার করি তাহলে অধ্যাত্মিক অভ্যুত্থানের জন্যে তাদের অবদানের স্বল্পতা দেখে বিস্মিত হই। কিন্তু শ্রীশ্রী মা যে ভাবে ঠাকুরের ভারধারাকে চারিদিকে প্রসারিত করতে সমর্থ হয়েছেন তা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। ঠাকুর নিজেও মাকে শরীর ত্যাগের আগে বলেছিলেন: “এ (শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে) আর কি করেছে তোমাকে এর অনেক বেশি করতে হবে”। সেই অনেক বেশি কাজ শ্রীমা করেছেন তাঁর মৃতু ¯েœহের মাধ্যমে। ঠাকুরের সন্তানরা মাকে ঠাকুর থেকে পৃথকরুপে দেখতেন না। ঠাকুরেরই মাতৃরুপে আর একটি অভিব্যক্তি দেখতেন। শ্রীশ্রীমা নিজেও বলেছেন: “ঠাকুরের জগতের প্রত্যেকের উপর মাতৃভাব ছিল। সেই মাতৃভাব জগতে বিকাশের জন্যে আমাকে এবার রেখে গেছেন।” তবেই সারদাদেবী সম্বন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন: ‘ও সারদা-স্বরস্বতী-জ্ঞান দিতে এসছে। রূপ থাকলে পাছে অশুদ্ধ মনে দেখে লোকের অকল্যান হয়। তাই এবার রূপ ঢেকে এসেছে’। ও (সারদা) জ্ঞানদায়িনী, মহাবুদ্ধি মতী। তেলোভেলোর মাঠে এক দস্যুদম্পতি সারদাদেবীকে কালীরুপে দেখেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুস্পপুত্র শ্রীমায়ের স্বমুখেই শুনেছিলেন যে, শ্রী শ্রী মা স্বয়ং মা-কালী, জয়রামবাটীতে মায়ের বাড়িতে একটি বিড়াল ছিল। ব্রহ্মচারীগন তখন মায়ের সেবক। তিনি বিড়ালটিকে আদর যত্ন তো করতেনই না, বরং মাঝে মাঝে একটু-আধটু প্রহারাদিই করতেন। মাতা জানতেন, রাধু ও শ্রীশ্রীমায়ের ¯েœহে বিড়ালের বংশবৃদ্ধি হয়েছিল। একবার কলকাতা আসার সময় ব্রহ্মচারীকগণকে ডেকে মা বললেন: জান বেড়াল গুলোর জন্য চাল নেবে। যেন কারও বাড়ি না যায় গাল দেবে, বাবা। তারপর ভাবলেন শুধু এই টুকু বলাই বেড়ালের জগৎ ফিরবেনা। তাই আবার বললেন: দেখ জান বেড়ালগুলোকে মেরোনা। ওদের ভেতরেও তো আমি আছি “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতী” তিনিই যে আমাদের শ্রীশ্রীমা হয়ে এসেছেন নিজ মাতৃভাবকে অবলম্বন করে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মা স্বমুখে বলেছেন: আমার শরৎ যেমন ছেলে, এই আমজাদ ও তেমন ছেলে। শরৎ স্বামী সারদানন্দ হলেন রামকৃষ্ণ মিশনের কর্ণধার, সম্পাদক, আর আমজাদ একজন ডাকাত। মা বলেছেন-“আমি সতের ও মা, অসতের ও মা”। মা যে বাস্তববাদী ছিলেন আর সে কারণেই স্বামী বীরেশ্বরানন্দ ‘শ্রীশ্রীমা’ সম্পর্কে লিখছেন-একবার দুজন যুবক এল। দুজনেই রাজদ্রোহী। মা তাদের স্নান করতে পাঠালেন, তারা স্নান করে এলে তাদের দীক্ষা দিলেন। তারপর তাদের খাইয়ে দাইয়ে তাড়াতাড়ি অন্যত্র যেতে বললেন। এসব ছেলেদেরও দীক্ষা দিতে মা এতটুকু ভয় পেতেন না। মা তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দীক্ষা দিয়ে গেছেন। মা যখন উদ্বোধনে অত্যন্ত অসুস্থ তখন একদিন এক পারসী যুবক এসে উপস্থিত। তিনি মঠে অতিথি হয়ে কয়েকদিন ধরে বাস করছিলেন। এখন মায়ের কাছে এসেছেন তাঁকে দর্শন করতে এবং তাঁর কাছে দীক্ষা দিতে নিতে। মায়ের তখন এত অসুখ যে দর্শন একেবারে বন্ধ। এই যুবক নিচে বসে রইলেন। তাঁকে দোতলায় যেতে দেওয়া হল না। মা কিন্তু কিভাবে জেনে গেলেন যে, এই যুবকটি নিচে তাঁর দর্শনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি তখন একজনকে বললেন তাকে তাঁর কাছে ডেকে নিয়ে আসতে। মা তাকে দীক্ষা দিয়ে নিচে পাঠালেন। স্বামী সারদানন্দ এই ঘটনার কথা জানতে পেরে মন্তব্য করলেনঃ ‘মায়ের যদি এক পারসী শিষ্য করার ইচ্ছে হয়ে থাকে তাহলে আমার আর কি বলার আছে?’ এই পারসী যুবকটি আর কেউ না, চিত্র জগতের বিখ্যাত অভিনেতা ও প্রযোজক বম্বের সোরাব মোদি। সেইজন্যে বিবেকানন্দের মতো ঠাকুর-অন্ত প্রাণ ভক্ত বার বার বলেছেন, মায়ের স্থান ঠাকুরেরও উপরে। হঠাৎ একটু খটকা লাগতে পারে। রামকৃষ্ণের আদর্শ সারা পৃথিবীতে প্রচার করার ভার যে বিবেকানন্দের উপর ঠাকুর দিয়ে গিয়েছেন, তাঁর মুখে এ কী কথা? কিন্তু বিবেকানন্দ উপলব্ধি করেছেন, মায়ের মাধ্যমে ঠাকুর স্বয়ং নির্দেশ দিচ্ছেন। বিবেকানন্দ তাই গুরুভাইদের ডেকে ডেকে বলছেন, ওরে, তোরা এখনও মাকে চিনলি না।বিবেকানন্দ বিশ্বজয় করে ফিরে এলেন দেশে। পার্লামেন্ট অব রিলিজিয়নে তাঁর বক্তৃতা সকল শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলল। ফিরে আসার পর মায়ের সঙ্গে তাঁর একটি সুন্দর সাক্ষাৎকারের বিবরণ আছে। স্বামীজি সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন মায়ের পায়ে। কত দিন পরে তাঁকে দেখে মায়ের চোখে পুত্রস্নেহ। উপস্থিত সকলে এক অপূর্ব স্বর্গীয় পরিবেশ উপলব্ধি করলেন।পাশ্চাত্যের রমণীদের সঙ্গে মায়ের সখ্যের উপর আছে কৌতূহলজনক আলোচনা। গ্রামের মেয়ে সারদা, এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কিন্তু চমৎকার আলাপচারিতা চালিয়ে যান সারা বুল, মিস ম্যাকলয়েড বা সিস্টার নিবেদিতার সঙ্গে। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, কিন্তু আহার করেন এঁদের সকলের সঙ্গে। সিস্টার নিবেদিতা বলেন, মা, তুমি আমাদের কালী। মা বলেন, না না, তবে তো আমাকে জিভ বার করে রাখতে হবে। নিবেদিতা বলেন, তার কোনও দরকার নেই। তবু তুমি আমাদের কালী, আর ঠাকুর হলেন স্বয়ং শিব। মা মেনে নেন। নিজ হাতে রঙিন উলের ঝালর দেওয়া হাতপাখা বানিয়ে দেন নিবেদিতাকে। নিবেদিতার সে কী আনন্দ এমন উপহার পেয়ে, সকলের মাথায় হাতপাখা ছোঁয়াতে থাকেন। মা বলেন, মেয়েটা বড় সরল। আর বিবেকানন্দের প্রতি আনুগত্য দেখবার মতো। নিজের দেশ ছেড়ে এসেছে গুরুর দেশের কাজে লাগবে বলে। নিবেদিতার ভারতপ্রেম অতুলনীয়। এসব ছিল মায়ের মহিমা। মা ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা দের পরাস্ত করেছিলেন।ব্রিটিশ গোয়েন্দাপ্রধান চার্লস অগস্টাস টেগার্ট-এর রিপোর্টের (১৯১৪) ভিত্তিতে বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল বিপ্লবীদের সাহায্য করা এবং আশ্রয় প্রদানের অভিযোগে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কার্যালয় বেলুড় মঠকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য ১৯১৬-র ১১ ডিসেম্বর বিশেষ বৈঠক ডেকেছিলেন। সে-খবর পেয়েই শ্রীমা চটজলদি মঠের তৎকালীন সম্পাদক সারদানন্দ এবং জোসেফিন ম্যাকলাউডকে পাঠালেন কারমাইকেলের কাছে। মা বুঝিয়ে বলতে বলেন যে, বেলুড় মঠকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তা ব্রিটিশ সরকারেরই বিড়ম্বনা বাড়াবে। শেষ পর্যন্ত কারমাইকেলের হস্তক্ষেপে ব্রিটিশ সরকার বেলুড় মঠকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা থেকে বিরত হয়। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের বিশেষ নজর ছিল বেলুড় মঠ, উদ্বোধন, জয়রামবাটী, কোয়ালপাড়া ইত্যাদি স্থানের উপরে। সেই সময়ে অনেক বিপ্লবী মায়ের অনুমতি নিয়েই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তরুণ বিপ্লবীদের জন্য তাঁর ভালবাসার অভাব ছিল না।স্বামী প্রেমানন্দ একটি চিঠিতে লিখেছেন, ‘শ্রীমার আদেশ পালনই আমাদের ধর্ম, কর্ম। আমরা যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী। যাকে যা বলবেন, সে তাই করতে বাধ্য।’ প্রেমানন্দের শ্রীমা সারদা সম্পর্কিত অভিমত এই যে, রাজরাজেশ্বরী মা শাক বুনে খাচ্ছেন, ভক্তের এঁটো কুড়োচ্ছেন, কাঙালিনী সেজে ছেঁড়া কাপড় তালি দিয়ে পরছেন। 


ত্রিভুবনের জাগ্রত মাতৃশক্তি, সকলের জন্মদাত্রী তিনি। যুগে যুগে অবতার যিনি জগৎজননী মা সারদা৷ কখনও তিনি দেবী সরস্বতী বা কখনও মা লক্ষ্মী দেবী রূপে আবির্ভূতা। মা সারদা সাক্ষাৎ জগদ্ধাত্রী৷ মায়ের কৃপায় পাহাড় সমান বাধাকে দূরীভূত করা যায়৷ মায়ের কৃপায় সংসারে অভাব দূর হয়ে থাকে৷ মা সারদা আবার অন্নদাত্রী অন্নপূর্ণা৷ যেখানেই মায়ের পায়ের ধুলো পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে এক একটি তীর্থ ক্ষেত্র। সেই জায়গা গুলো হল জয়রামবাটি, কামারপুকুর, দক্ষিণেশ্বর, বাগবাজার, সিমলা স্ট্রিট। এক কথায় যেখানে যেখানে পায়ের পায়ের ধুলো পড়েছে সেখানে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে এক একটি তীর্থক্ষেত্র।।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Tuesday, 22 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                সংগ্রহযোগ্য গ্রন্থ 
                           এবং
                     আলোচনা

=================================
          Doinik Sabder Methopath
          Vol -230.Dt - 23.12.2020
           ৭ পৌষ,১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১.


নকশাল-আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সমকালে ও পরবর্তীকালেও অসংখ্য বাংলা ছোটোগল্প রচিত হয়েছে। কোনও আন্দোলন ইত্যাদিকে মাথায় রেখেই লেখা গল্প অনেকসময় তেমন শিল্প-সফল হয় না। উদ্দেশ্যমূলকতা, প্রচারধর্মিতা গল্পের শিল্প-রসকে ক্ষুন্ন করে কখনও-কখনও।
কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে এই শ্রেণীর গল্প-সন্ধান ও পঠন-পাঠনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাচ্ছি, নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অসংখ্য ভালো গল্প বাংলা সাহিত্যে লেখা হয়েছে। ঐ বিশেষ প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেও শিল্পোত্তীর্ণ বেশ কিছু ভালো গল্প লিখেছেন খ্যাত, কমখ্যাত ও অখ্যাত-জনও।
সত্তরের স্বপ্ন, মুক্তির আকাঙক্ষা, ঘরে ফেরা-না-ফেরার সেই উথাল-পাথাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দিনগুলিব জীবন্ত ছবি উঠে এসেছে এই গল্পগুলিতে।
এই সঙ্কলনে নির্বাচিত গল্পগুলি গল্প হিসেবে কতখানি সার্থক এবং নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই লেখা কিনা, সেটাই ছিল আমার একমাত্র বিচার্য বিষয়। ফলে স্বভাবতই ঐ আন্দোলনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয়দিকই গল্পগুলিতে এসেছে। এই দুই মলাটের মধ্যেকার গল্পগুলোর গাঁথা মালা থেকে সেই উত্তাল সময়ের সামগ্রিক, পরিপূর্ণ একটা ছবি এখানে তুলে ধরতে পেরেছি বলে মনে করি।
সঙ্কলনটিতে গল্পগুলি সাজিয়েছি গল্পকারদের বয়সের ক্রম মেনেই।

এই সঙ্কলনে বিভিন্ন লেখকের মোট ৮০টি নকশাল-আন্দোলন সংক্রান্ত গল্প সংকলিত হয়েছে।
-------------------------/--------------
২.

বর্তমান যুগে ভারতীয় নারী অন্তঃপুর থেকে বাহির হয়ে সমস্ত কাজ পুরুষের সাথে সমানভাবে করে যাচ্ছে। শুধু বর্তমান সময়ে নয়, প্রাচীনকালে নারীর সামাজিক স্থান ঠিক এমনি ছিল। দানে, ধর্মে অথবা জমিদারী বা শাসন কার্যে - ভারতের নারীরা এক বিশিষ্ট স্থান দখল করেছিল। সংযুক্তা, পদ্মিনী, মীরাবাঈ, রাণী ভবানী, অহল্যা বাঈ, লক্ষীবাঈ, রাণী রাসমণি - সমাজের বিভিন্ন পরিমন্ডলে বিশিষ্ট এই সাতজন নারীর জীবন দৃষ্টান্ত দেখে বর্তমান যুগের পুরুষরা নারীকে উপযুক্ত সন্মান দিতে শিখবেন, আর নারীরা পাবে জীবনে চলার প্রেরণা। সংগ্রহ করুন জনশিক্ষা গ্রন্থমালা'র এই বইটি।

সংযুক্তা (সংযোগিত)- ১১৭০—১১৯৩ খ্র:। জয়চন্দ্রের কন্যা, পৃথ্বীরাজের মহিষী।
পদ্মিনী- ১৩শ শতক! পিতা হামির শঙ্খ, স্বামী ভীমসিংহ।
মীরাবাঈ— ১৫শ শতক। রাণা কুম্ভের পত্নী। মীরাবাঈয়ের ভজন ভারতবিখ্যাত।
রাণী ভবানী- ১৮শ শতক। স্বামী নাটোরের রামকান্ত। দানের জন্য বিখ্যাত।
অহল্যাবাঈ— ১৭৩৫–১৭৯৫ খ্রী:। দানশীলা মারাঠী রমণী। পিতা আনন্দরাও সিদ্ধে, স্বামী খাণ্ডেরাও।
লক্ষ্মীবাঈ— শাসনকাল ১৮৫৩-১৮৫৮ খ্রীঃ। ঝাঁসির বীর রাণী। স্বামী গঙ্গাধর রাও।
রাণী রাসমণি— মৃত্যু ১৮৬১ খ্র:। দানশীলা রমণী। স্বামী রাজচন্দ্র মাড়
-------------------------/----------------
৩.



অনুবাদক-কাননবিহারী মুখোপাধ্যায় যিনি বিশ্বভাবতীর বাংলা সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপক ও মহাজাতি সদনের প্রথম কর্মসচিব। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শশালার প্রাক্তন অধ্যক্ষ। “মানুষ রবীন্দ্রনাথ” প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক।

যেসকল অনুবাদ গল্পগুলি এই বইতে রয়েছে-
জন গলওয়ারদি-র লেখা: আপেল গাছটি
অ্যালফনস দদে এর লেখা : বারলিনের অবরোধ
হান্স ক্রিসটিয়ান অ্যানডারসন-এর লেখা: ছোট্ট জলকুমারী
“সাকি”-র লেখা : খোলা জানালা।
অনরা দ্য বালজাক-এর লেখা : মরুর দেশে মোহিনী মায়া
কনরাড বারকোভিচি-র লেখা : ভালুকশিকারীর মেয়ে
লিও নিকোলায়েভিচ টলসটয়-এর লেখা: ককেশাসের বন্দী

এই অনুবাদ বইটির সাত আটটি কাহিনীর বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বেশ একটি মিল রয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তু ঘনীভূত হয়েছে এক-একজন কিশোরীকে কেন্দ্র করে। প্লট গুলির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কিশোর হৃদয়ে বিচিত্র রূপের রঙিন আলপনা। “আপেল গাছটি”, “ছোট্ট জলকুমারী”, “ভালুকশিকারীর মেয়ে” এবং “ককেশাসের বন্দী” এই চারটি গল্প ত প্রত্যক্ষভাবে কিশোরী-নারীর প্রথম প্রেমের কড়চা। কিশোরী চিত্তের আর-একটি ভিন্ন স্তরের রূপ হচ্ছে অমেয় ভক্তি এবং নিবিড় মমতা। এ কথা ত আমাদের অজানা নয় যে, যৌবনকাল থেকে শেষের দিন পর্যন্ত নারীজীবন প্রবাহিত হয় প্রধান দুটি আবেগকে আশ্রয় করে—প্রেম ও বাৎসল্য। নারীর প্রকৃত রূপ হচ্ছে সে একদিকে প্রিয়া আর একদিকে মা। স্বভাবতঃ কৈশোরই এই দুটি আবেগের উন্মেষ-ঋতু।
“বাবলিনের অবরোধ” গল্পটিকে বঙে-বসে সার্থক কবে তুলেছে বৃদ্ধ ঠাকুরদামশাই-এর প্রতি প্রণোজ্জ্বল একজন কিশশোরী কন্যার ভক্তিপূর্ণ মমতা। বৈষ্ণব সাহিত্যে মানব হৃদয়ের যে চরম আর্তিকে কৃষ্ণপ্রেম আখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেই কষ্টিপাথরে বিচার করে এ ইঙ্গিত করা যেতে পাবে যে, এই ঠাকুরদামশাই এর নাতনীর হৃদয়ের স্বভাবজাত সুনিবিড় আকর্ষণ হচ্ছে প্রেমেরই আর-এক স্তরের রূপান্তর। আর “মরুর দেশে মোহিনী মায়া” কাহিনীর নায়িকা কিশোরীবাঘিনীর যে ছবি বালজাক এঁকেছেন, তা যে পুরোপুরি মানুষের প্রেমের সমগোত্রায়—এ কথা ত প্লটের অগ্রগতির নানা সুযোগে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘সাকী’র লেখা “খোলা জানালা”র নায়িকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। এর মধ্যে প্রেম, ভক্তি, ভালবাসার কোন সম্পর্ক নেই। আছে কিশোর হৃদয়ের সম্পূর্ণ অন্যজাতের আর-এক আত্মপ্রকাশ। যে পদ্মকুঁড়িটির মধ্যে সবেমাত্র জীবনের পাপড়ি উন্মোচন আরম্ভ হয়েছে, নব-চেতনার বন্যায় উচ্ছল সেই সত্তার কৈশোর-লীলার এক অতি আকর্ষণীয় চটুলতার ছবি।
প্রধান চরিত্র হিসাবে যে চারজন কিশোরীকে আমরা পাই, তারা এক দেশের মেয়ে নয়—ইংল্যাণ্ড, ডেনমারক, পোলাও, রাশিয়া প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মেয়ে। তাদের চরিত্র আঁকা হয়েছে বিভিন্ন জাতির মহাশিল্পীদের তুলির সাহায্যে। তবু চরম বিশ্লেষণে মনে হয়, তারা যেন সকলে মূলতঃ একই ধরনের সত্তার অধিকারিণী । অবশ্য, পরস্পরের মধ্যে বয়সের কিছু তারতম্য আছে, ভালবাসা প্রকাশের ভঙ্গীতে এবং আচরণে বেশ কিছু জাতিগত এবং শ্রেণীগত স্বাতন্ত্রও রয়েছে। তবু এদের চরিত্রে ফুটে উঠেছে ভালবাসার আদিতম যে রূপ, তার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা সন্দেহ।
বিশেষভাবে বিচার করলে বোঝা যায়, এই কিশোরী কন্যা গুলির হৃদয়ে আছে একটা সাংসারিকতাহীন সরলতা। সে সরলতা কিন্তু বোধশূন্য অবুঝের সারল্য নয়। বাস্তবের প্রতি এদের চেতনা বেশ তীক্ষ্ণ অথচ এরা নিজেদের
অজ্ঞাতে পরমের স্বপ্নে বিভোর। কৈশোরের আবির্ভাবে এদের জীবনের ভেতরে বাইরে ঘটল ঋতুবদল। এরা হয়ে পড়ল যেন “অকারণে চঞ্চল”। অবচেতন মনে এল স্বতঃস্ফুর্ত প্রেমের অনুভব। তেমনি এদের প্রথম প্রেম নিবেদনের মধ্যে নেই কোন প্রচ্ছন্ন কৃত্রিম ছলাকলার খেলা। দেখা যায়, পল্লীবাসিনী কিসান কন্যা মেগান, লণ্ডন শহরে প্রতিপালিত স্টেলা আর জিপসী-কিশোরী সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতাহীন, স্কুল-পরিবেশে লালিতা মার্গারিটার চরিত্রে কৈশোর রহস্যের এক মৌলিক রূপ প্রতিফলিত হয়েছে। প্রত্যেকেই নিঃশেষে নিজেকে দিতে চায় কিন্তু এদের নেবার আগ্রহে প্রখরতা নেই। এরা সকলেই ত্যাগে যত উদ্যত,
প্রাপ্তির জন্যে তত লালায়িত নয়। মেগানকে যখন অসহাবস্ট বললে, 'মেগান, আমি তোমাকে বিয়ে করব’, মেগান তখন যা উত্তর দিয়েছিল তার মর্ম হচ্ছে, সে শুধু অ্যাসহারস্টের কাছে থাকতে চায়, তার বেশি কিছু নয়। কাছে থাকতে না পেলে ও যে মারা যাবে ! এই ওর সবচেয়ে বড় ভয়।
জলকুমারীর রূপকে মানবসমাজের একজন কিশোরীর ভালবাসাই প্রচ্ছন্নভাবে আঁকা হয়েছে। অ্যানডারসনের জলকুমারীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ছিল সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠস্বর সমূলে ডাইনীকে উপহার দিয়ে ও লাভ করেছিল মানুষের দুটি পা
যাতে ও রাজকুমারের সঙ্গলাভ করতে পারে। তারপর পায়ের দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেও রাজকুমারের সঙ্গলাভে যেটুকু চরম স্তরের পরিতৃপ্তি পেয়েছিল, তাতে নিজেকে ধন্য মনে করেছিল।
“ককেশাসের বন্দী” গল্পের নায়িকা তাতারী-কিশোরী দীনা ভালবাসার পাত্রকে কেবলই দিয়েছে। পরিস্থিতি, স্থান ও কালের কথা মনে রাখলে নিশ্চয়ই বলা যায় যে, তার ক্ষুদ্র হৃদয়ের সেই দানগুলো ক্ষুদ্র এবং সামান্য ছিল না। দীনা প্রেমাস্পদের কাছ থেকে কখনো কিছু চায় নি, হয়ত কিছু পাবার জন্যে দুঃসহ কোনো প্রত্যাশাও ওর হয় নি।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখযোগ্য, এইসব কিশোরীদের মহিমা-ভরা-প্রেম কাহিনী পড়তে পড়তে আমার মনে জেগে উঠেছিল বাংলা সাহিতের চিরকিশোরী অভাগী রতনের কথা। বোধ হয়েছিল, অন্তরের অন্তস্থলে সে যে এদেরই সমগোত্রীয় । তার গভীর আকর্ষণে, তার পরম সারল্যে, অকুন্ঠিত সেবার মধ্যে দিয়ে তার বেহিসেবী আত্মনিবেদনের আগ্রহে। মেগানের মত সেও তার কলকাতায় ফিরতি-মুখী মনিব পোস্টমাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “দাদাবাবু, আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?” তার এই প্রশ্নের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছিল এই কামনা যে, সে তার দাদাবাবুব কাছে থাকতে চায় তার সেবা করতে চায়। মাত্র এইটুকুই তার চাওয়া, এই চাওয়ার মধ্যে বেশি কিছু দুরাশা ছিল না।

এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, যে কয়জন মহাশিল্পীর সেরা রচনা বইখানিতে সংকলিত হয়েছে, তাঁরা সাহিত্যরসিক বিশ্বমানুষের অন্তরের তৃষ্ণাকে পরম পরিতৃপ্তিতে ভরিয়ে দেবার উদ্দেশেই এই সৃষ্টি কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
-------------------------/-----------------
৪.


প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ দৈহিক মৃত্যুর পরও একটি সূক্ষ্ম অস্তিত্বে বিশ্বাস করত। সেইজন্য মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা নরগোষ্ঠীর মধ্যে বিচিত্র ধরনের পারলৌকিক ক্রিয়া ছিল- যে ক্রিয়াগুলি আধুনিক মানসের কাছে যে-কোন রোমহর্ষক উপন্যাসের কাহিনী অপেক্ষাও চমকপ্রদ। সেই জন্য বর্তমান গ্রন্থের প্রথমভাগে পৃথিবীর সকল নরগোষ্ঠীর ও ধর্মের মানুষের মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা দেওয়া গেল।
*এছাড়াও আপনারা এই বিষয়ের উপর আররো বই সংগ্রহ করিতে পারেন, যেমন-
  > পরলোকের বিচিত্র কাহিনী- সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়
মৃত্যুর পর কোন সূক্ষ্ম অস্তিত্ব থাকে কিনা তা নিয়ে মানুষের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সেইজন্য আধুনিক বিজ্ঞান ও অধিমনোবিজ্ঞান এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে যে সূক্ষ্ম অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছে, বর্তমান গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে সেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিস্তৃত আলোচনাও সন্নিবেশিত হল। তৃতীয় অংশে এ বিষয়ে ভারতীয় যোগীরা যা প্রত্যক্ষ করেছিলেন লেখক স্বীয় যোগবললব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সেই কাহিনীও ব্যক্ত করেছেন। দেখা যাচ্ছে যে, প্রাচীন মানুষের সূক্ষ্ম আত্মা সম্পর্কিত চিন্তা এবং ভারতীয় যোগীদের অভিজ্ঞতা লব্ধ সত্যজ্ঞান বর্তমান বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে। মৃত্যু ও পরলোক নিয়ে এমন বিস্তৃত আলোচনা বঙ্গ সাহিত্যে ইতিপূর্বে আর কখনও হয়নি। পাঠকের ত্রিমাত্রিক চিন্তাধারায় এই গ্রন্থ সুনিশ্চিতভাবে নতুন ভাবনা যুক্ত করবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পরলোক সম্পর্কিত এক চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরার দায়িত্ববোধ থেকেই বর্তমান গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
------------------------/-------------
৫.


দৃষ্টিকোণ-
“শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তম”এর অগণিত পাঠক-পাঠিকা কৃষ্ণের উপর আরোপিত ঈশ্বরত্ব নিয়ে অনেককাল ধরে চিঠিপত্রে নানা প্রশ্ন ও অনুরোধ করে আসছেন। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রকাশিত হলঃ “কৃষ্ণস্তু ভগবান”।

ভগবান আছেন কি নেই, তা নিয়ে নানান সংশয়। কারণ, ভগবানকে চোখে দেখা যায় না। তিনি প্রত্যক্ষ নন। তিনি শূন্য নিরাকার। তবু অনাদি, অনন্তকাল ধরে মানুষের মনের মধ্যে, তার বিশ্বাসের মধ্যে তিনি ভীষণভাবে আছেন। আজও আছেন। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষের তিনি পরম আশ্রয়।

মানুষের চোখে ভগবান পরম করুণাময়, মঙ্গলময়, প্রেমময়। তিনি কোন বিভেদ জানেন না। সকলকেই তিনি কোল দেন। দুঃখী, দুর্গত, অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর দরদ ও সহানুভূতির অন্ত নেই। ক্ষমতায়, প্রেমে, মহত্বে, ত্যাগে তিনি সুন্দর। ভগবান হল ভালবাসার আর এক নাম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “দেবতারে যাহা দিতে পারি তাই দিই প্রিয়জনে/ প্রিয়জনে যাহা দিতে পারি, তাই দিই দেবতারে।/ দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।” অথাৎ কিনা, ভগবানের কাছে মানুষ যা প্রত্যাশা করে, মর্তের মানুষের মধ্যে হঠাৎ কালেভদ্রে যখন তা পায় তখন সাক্ষাৎ ভগবান হয়ে উঠে সে। ভগবান অলৌকিক, কিন্তু মানুষরূপী ভগবান প্রত্যক্ষ এবং লৌকিক !

কোন কোন মানুষ বিশেষ গুণ, কর্ম এবং আদর্শের জন্য শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠেন। শ্রদ্ধা ও অনুরাগের পূজাঞ্জলি দিয়ে ভগবানের মত তাকে পূজা না করলে আমরা স্বস্তি পাই না। এইভাবেই রক্ত-মাংসের বরণীয় মহান মানুষ স্মণীয় হয়ে যুগ-যুগান্তর ধরে পূজিত হন। রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, সারদা, প্রমূখ মানব-মানবী তিরোধানের অব্যবহিত পরেই ভগবানরূপে বন্দিত হলেন। একালে সুভাষ বসু, গান্ধীজী, লেনিন প্রমুখ মনীষীরা গুণ ও কর্মের জোরে পূজার পাত্র হয়ে উঠলেন।

এই গ্রন্থে আমি বোঝাতে চেয়েছি, ভগবান হয় না, ভগবানের গুণগুলি নিয়ে মানুষ ভগবান হয়ে যায়। একদিন মহাভারতের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ একইভাবে ভগবানের গুণ ও কর্মগুলি নিয়ে মানুষের ভগবান হয়ে গেলেন। কৃষ্ণ একদিনে ভগবান হয়ে যাননি। বহু শতাব্দী ধরে ভগবান হওয়ার জন্যে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। এবং একটু একটু করে তাঁর উপর ঈশ্বরত্ব আরোপিত হয়েছে।

মহাভারতের প্রথম অবস্থায় কৃষ্ণ দেবতা নন। তিনি একজন অসাধারণ প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক নেতা। এক আশ্চর্য সুন্দর মানুষ। পরহিতার্থে তাঁর জীবন উৎসর্গীকৃত। নিজের জন্য কিছুই আকাক্ষা নেই তাঁর। তিনি নির্লোভ। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও ভোগে নিষ্পৃহ। পরিবর্তে অপরের দুঃখ দুর্দশাকে আপন ভেবে প্রতিকারে যত্নবান হয়েছেন। তার পরহিতৈষণা, মহত্ত্ব, ত্যাগ শত্রুকেও অবাক করেছে। প্রেমে এবং মহত্বে তাদের বশ করেছেন। তাঁর অসাধারণ পৌরুষ, চরিত্র মাধুর্য, নম্র স্বভাব, স্নিগ্ধ আচরণ, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় হয়েছে। তাই শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র মানুষের অন্তরকে বিকশিত করল। শ্রদ্ধার স্বণ সিংহাসনে বসিয়ে ভক্তির শতদলে পূজা করল শত্রুমিত্র নির্বিশেষে। মানুষের হৃদয়ের পূজা পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান, মানুষের প্রাণের ঠাকুর। শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব মানুষের সৃষ্টি। ভক্ত ও প্রেমিক মানুষের পুজাঞ্জলি। এই পূজা পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে উঠলেন মানুষের প্রাণের ঠাকুর।

ভক্তির এই অর্ঘ্য নিবেদিত হল মহাভারতের দ্বিতীয় স্তরে। তৃতীয় ও তার পরবর্তী স্তরে সেই ভক্তি ও পূজা এক পারমার্থিক দার্শনিক স্তরে পেীঁছল। ভক্তিই কৃষ্ণপ্রাপ্তির উপায় । মহাভারতের কর্মমার্গের উপর ভক্তিমার্গ প্রতিষ্ঠিত হল। এই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অমানুষী লীলা ও তাঁর দিব্যকর্ম বর্ণিত হল, হরিবংশে, বিষ্ণুপুরাণে, ও শ্রীমদ্ভাগবতে, আর শ্রীমতী রাধিকার তত্ত্ব বিখ্যাত হল ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে |

“শ্রীকৃষ্ণ পরষোত্তম”-এ যেসব কাহিনী অলৌকিক বলে বর্জিত হয়েছিল, আলোচ্য উপন্যাসে সেই অলৌকিক কাহিনীগুলির ক্যানভাসে কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব নিরূপণ করেছি। কারণ যে চরিত্রগুণে ও ব্যক্তিত্বের জোরে কৃষ্ণ ধীরে ধীরে মানবসন্তান থেকে এক অলৌকিক শক্তিধর লীলাময় ভগবানে উত্তীর্ণ হলেন, তার জ্যোতি বিকীর্ণ হয়েছে এই কাহিনীগুলিতে। তাই এগুলি এড়িয়ে যাইনি। বরং কীভাবে, কেমন করে জীবনের ঘটনা অলৌকিক হয়ে উঠল তার একটা পরিবেশ অঙ্কন করেছি। আধুনিক ধর্মপ্রাণ মানুষের শিক্ষা, চিন্তা, রুচি ও মেজাজের প্রতি লক্ষ্য রেখে সেগুলির সঙ্গে কৃষ্ণের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিবল, মনোরঞ্জনক্ষমতা, পরহিতৈষণা, করুণা, মমতার এক আশ্চর্য সমীকরণ হয়েছে উপন্যাসের আঙ্গিকে.
-------------/------------------------


*# বই নিয়ে মজার কিছু তথ্য #*

১.হার্ভার্ড 
   বিশ্ববিদ্যালয়ের 
   লাইব্রেরীতে ৪ খানা 
   বই আছে যা মানুষের 
   চামড়া দিয়ে বাঁধাই 
   করা।

২.মাথা পিছু বই পাঠের 
   দিকে শীর্ষে হলো 
   আইসল্যান্ড।

৩.বই পড়া মানুষের 
   অ্যালজাইমার রোগে 
   আক্রান্ত হবার 
   সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত 
   কম।

৪.ব্রাজিলের কারাগারে 
   প্রতি একটি বই 
   পাঠের জন্য ৪ দিন 
   সাজা মওকুফ হয়।

৫.ভার্জিনিয়া উলফ 
   তাঁর সব বই দাঁড়িয়ে 
   লিখেছিলেন।

৬.সবচেয়ে চুরি হয় যে 
   বইটি সেটা হলো 
   বাইবেল।

৭.রুজভেল্ট প্রতিদিন 
   গড়ে ১ টি বই 
   পড়তেন।

৮.শুধুমাত্র দাবা খেলার 
   উপরই ২০০০০+ বই 
   আছে।

৯.ভিক্টর গুগোর লা 
   মিজারেবল বইয়ে 
   একটি বাক্য আছে 
   যেখানে ৮২৩টি শব্দ।

১০.হারি (Hurry), 
     এডিকশন 
     (Addiction) এসব 
     শব্দ শেক্সপিয়ারের      
     আবিস্কার।

১১.নিউইয়র্ক পাবলিক 
      লাইব্রেরীর সব বই 
      একসাথে লাইন 
      করে রাখলে ৮ 
      মাইল লম্বা হবে।

১২.লেভ তলস্টয়ের 
      বিশাল উপন্যাস 
      ওয়ার এন্ড পিসের 
      পান্ডুলিপি তাঁর স্ত্রী 
      হাতে লিখে ৭ বার 
      কপি করেছিলেন।

১৩.নোয়াহ ওয়েবস্টার 
      তাঁর প্রথম 
      ডিকশনারী লিখতে 
      সময় নিয়েছিলেন 
      মাত্র ৩৬ বছর।

১৪.আর 'বঙ্গীয় 
      শব্দকোষ' নামক 
      অভিধানটি তৈরি 
      করতে হরিচরণ 
      বন্দ্যোপাধ্যায়ের 
      কতদিন লেগেছিল? 
      প্রায় গোটা জীবন। 
      সেইসঙ্গে ছিল 
      প্রতিকূলতার 
      বিরুদ্ধে লড়াই।

*১৫. পৃথিবীতে* 
        *একটি মাত্রা বই* 
        *আছে যেটা* 
       *কোনো ভাষাতে* 
       *অনুবাদ করা* 
       *যায়নি বহু চেষ্টা* 
       *করেও, বইটির* 
       *নাম - সুকুমার* 
       *রায় এর "* 
       *আবোল*
       *তাবোল"*

১৬ . মহাভারত পৃথিবীর 
        মধ্যে এক মাত্রা বই 
        বা মহাকাব্য যার 
       মধ্যে ১২০০ শোর 
       বেশি চরিত্র আছে

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Monday, 21 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
       জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

                 নাট্যকার মনোজ মিত্র
≠===============================
     Doinik Sabder Methopath
      Vol -228. Dt -22.12.2020
       ৬ পৌষ, ১৪২৭. মঙ্গলবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

নাট্যকার মনোজ মিত্র : সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
--------------------------------------------------------
     মনোজ মিত্র সাম্প্রতিক কালের একজন বিখ্যাত নট ও নাট্যকার। তাঁর জন্ম ২২ ডিসেম্বর ১৯৩৮ সালে অধুনা বাংলাদেশের সাতক্ষীরা গ্রামে। সম্পর্কে তিনি হলেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক অমর মিত্রের দাদা। তিনি কোলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে। সুদীর্ঘকাল অধ্যাপনার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের শিশিরকুমার ভাদুড়ি অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি অবসর গ্রহণ করেন। লেখক জীবনে তিনি গল্প দিয়ে সাহিত্যিক জীবন শুরু করলেও নাটক রচনা করেই তিনি বিখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি একাধারে নট, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক, প্রযোজক, চলচ্চিত্রাভিনেতা এবং নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক। যেমন অভিনয়ে, নাট্যরস সৃজনে তাঁর দক্ষতা অবিসংবাদিত। বিদেশী নাটকের অনুবাদ নয়, তিনি মৌলিক নাটক রচনা করেই সর্বাধিক কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। 

     তিনি নাট্যজগতে প্রবেশ করেন একাঙ্ক নাটক রচনার সূত্র ধরে। তাঁর প্রথম একাঙ্ক নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তার আগে এই নাটকটি ১৯৫৯ সালে থিয়েটার সেন্টার আয়োজিত একাঙ্ক নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম অভিনীত ও পুরস্কৃত হয়। এছাড়া তাঁর রচিত বিভিন্ন একাঙ্ক নাটকগুলি হলো ‘পাখির চোখ’ (১৯৬৭), ‘টাপুর টুপুর’ (১৯৬৯), ‘প্রভাত ফিরে এসো’ (১৯৮৭), ‘অশ্বত্থামা’, ‘পাখি’, ‘কালবিহঙ্গ’, ‘কাকচরিত্র’, ‘বেকার বিদ্যালঙ্কার’, ‘আমি মদন বলছি’, ‘পুঁটি রামায়ণ’, ‘দেবী সর্পমস্তা’, ‘শিবের অসাধ্য’ ইত্যাদি। তাঁর ‘মৃত্যুর চোখে জল’ একাঙ্ক নাটকটি বৃদ্ধ বঙ্কিমের জীবনে বেঁচে থাকার উদগ্র বাসনাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন একাঙ্ক নাটকগুলি হাল্কা কমেডির ঢঙে রচিত। তাঁর বিভিন্ন নাটকে কৌতুক রস পরিবেশন করার সাথে সাথেই সেইসব নাটকগুলিতে দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, কামনা-বাসনা, প্রকাশিত হয়েছে। এরই সাথে সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আর্তবেদনা প্রকাশিত হয়েছে।

     তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হলো ‘মৃত্যুর চোখে জল’ (১৯৬০), ‘নীলকণ্ঠের বিষ’ (১৯৬৫), ‘পাখির চোখ’ (১৯৬৭), ‘টাপুর টুপুর’ (১৯৬৯), ‘অবসন্ন প্রজাপতি’ (১৯৬৭), ‘চাকভাঙা মধু’ (১৯৭১), ‘পরবাস’ (১৯৭৫), ‘সাজানো বাগান’ (১৯৭৭), ‘মেষ ও রাক্ষস’ (১৯৮০), ‘প্রভাত ফিরে এসো’ (১৯৭৮), ‘চোখে আঙুল দাদা’, ‘টু-ইন-ওয়ান’, ‘কেনারাম বেচারাম’, ‘অলকানন্দার পুত্রকন্যা’, ‘নৈশভোজ’, ‘দর্পণে শরৎশশী’, ‘গল্প হেকিম সাহেব’, ‘কিনু কাহারের থেটার’ ইত্যাদি। নাট্য রচনার প্রথম থেকেই তিনি বাংলার মাটির কাছাকাছি চলে গেছেন। সেজন্য তাঁর নাটক মধ্যবিত্ত স্বভাবের বাইরে ‘সাজানো বাগান’ নাটকে কৃষক জীবনের এবং ‘চাকভাঙা মধু’ নাটকে লোকজীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষারই কথা বিশেষ করে ফুটে উঠেছে। তাঁর নাটক যে কৌতুকরস তা যেমন সহজ সরল তেমনি অর্থপূর্ণ।

     মনোজ মিত্রের ‘নীলকণ্ঠের বিষ’, ‘তক্ষক’ (১৯৭৯) এবং ‘কামধেনু’ও মনস্তত্ত্বমূলক নাটক। সবগুলিই মঞ্চসফল নাটক। ‘তক্ষক’ নাটকে আমরা দেখতে পাই, রোমান ক্যাথলিক গীর্জার পাদরী লংম্যান একজন মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে একটি গীর্জার বিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ পরিবেশে পরিত্যক্ত হল। তবুও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অটুট থাকল। ঘটনাচক্রে এই পাদরী কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করতে গিয়ে নিজেই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। এজন্যই নাটকের নামকরণ। 

     মনোজ মিত্রের ‘চাকভাঙা মধু’ একটি বহুজন সমাদৃত নাটক। এই নাটকটি ১৬ই মে ১৯৭২-এ রঙ্গনা থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হয় বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনায়। এই নাটকের কাহিনি হলো সুন্দরবন অঞ্চলের মহাজনের অত্যাচারে পীড়িত এক ওঝা পরিবারের কথা। তাঁর ‘সাজানো বাগান’ নাটকটি কৃষকজীবন কেন্দ্রিক। একটি সাধের বাগানকে কেন্দ্র করে একপক্ষের লোভ এবং অন্যপক্ষের স্বপ্ন-সম্ভাবনা কেমন আকার নিয়েছিল, তা-ই নাটকে বিবৃত হয়েছে। ‘সাজানো বাগান’-এর মালিক ছিল হতদরিদ্র ও হৃতবল বাঞ্ছারাম। বাঞ্ছারামের মাটির প্রতি এতই ছিল যে, সে দারিদ্র্যের মধ্যেও কোনোদিন তার বাগানটিকে হাতছাড়া করতে চায়নি। প্রচুর প্রলোভন সত্ত্বেও নয়। তাঁর ‘নরক গুলজার’ (১৯৭৬) থিয়েটার ওয়ার্কশপের সুপ্রযোজিত নাটক। প্রথম অভিনীত হয় ২৭-এ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালে রঙ্গনা থিয়েটারে। মানিক ও ফুল্লরার দুঃখদারিদ্র্যপীড়িত জীবন অবলম্বনে কিছু করুণ রসের বিস্তার এই নাটকে লক্ষ করা যায়। 

     নাট্যকার মনোজ মিত্র একাধিক নাট্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যেমন, ‘সুন্দরম’, ‘গন্ধর্ব’, ‘বাতায়ন’, ‘থিয়েটার ওয়ার্কশপ’, ‘প্রতিকৃতি’, ‘স্বপ্নসন্ধানী’ প্রভৃতি। তিনি হলেন ‘সুন্দরম’ নাট্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক ও অভিনেতা। ‘দেশ’ পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত নাটক রচনা করেছেন। এছাড়া তিনি অভিনয় বিষয়ক আলোচনা গ্রন্থও রচনা করেছেন। তাঁর নাটক বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ছোটদের জন্যে লেখালেখিতেও তিনি সমান জনপ্রিয়। অভিনেতা হিসেবেও তিনি সবার প্রিয় মানুষ। তিনি বাংলা চলচ্ছিত্র ও দূরদর্শনের একজন নিয়মিত সুদক্ষ শিল্পী। বিশেষ করে ‘সাজানো বাগান’-এর বাঞ্ছারাম চরিত্রাভিনয়ে তাঁকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দান করে। নাট্যরচনা ও অভিনয়ের জন্য তিনি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৫-তে নাটক রচনার জন্যে জাতীয় স্তরে সংগীতনাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর নাটকগুলি জীবনসত্যের রূপায়ণে, তথ্যের স্বচ্ছতায় ও নাটকীয়তায় আকর্ষণীয় হয়েছে।  

সহায়ক গ্রন্থ : 
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ, ১৯৫০ – ২০০০) – ড. দেবেশ কুমার আচার্য্য। 

লেখক পরিচিতি : 
শ্রী লিল্টু মণ্ডল
সহ কলেজ শিক্ষক
বাংলা বিভাগ, সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Sunday, 20 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

গোলাম মোস্তফা

==========∆∆∆∆∆==============

Doinik Sabder Methopath

Vol -227.dt -21.12.2020

৫ পৌষ,১৪২৭. সোমবার

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

   "লক্ষ আশা সন্তরে লক্ষ আশা অন্তরে

 ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে"


     গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালের ২১ শে ডিসেম্বর যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তারা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। তার তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তার নাতিনী।গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজি স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।১৯২০ সালে জানুয়ারী মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৪ সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্যকর্ম

রক্তরাগ (১৯২৪), খোশরোজ (১৯২৯), কাব্য-কাহিনী (১৯৩২), সাহারা (১৯৩৬), হাস্নাহেনা (১৯৩৮), বুলবুলিস্তান (১৯৪৯), তারানা-ই-পাকিস্তান (১৯৫৬), বনিআদম (১৯৫৮), গীতিসঞ্চালন (১৯৬৮) ইত্যাদি তাঁর মৌলিক কাব্য এবং মুসাদ্দাস-ই-হালী (১৯৪১), কালামে ইকবাল (১৯৫৭), শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া (১৯৬০) অনুবাদকাব্য। তিনি আল-কুরআনও (১৯৫৮) অনুবাদ করেন। তাঁর গদ্যরচনার মধ্যে বিশ্বনবী (১৯৪২), ইসলাম ও কমিউনিজম (১৯৪৬), ইসলাম ও জেহাদ (১৯৪৭), আমার চিন্তাধারা (১৯৫২), পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ইত্যাদি প্রধান। তাঁর বিশ্বনবী গ্রন্থখানি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এতে তিনি হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে ঐতিহাসিক মহামানব হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।

গোলাম মোস্তফার কাব্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ও শিল্পসম্মত প্রকাশভঙ্গি এবং ছন্দোলালিত্য। তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন এবং সেগুলি অবিভক্ত বাংলায় খুবই সমাদৃত হয়েছিল। তাঁর কয়েকটি কবিতা স্কুলপর্যায়ে পাঠ্য ছিল।


তিনি গীতিকার ও গায়ক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর গানের বিষয় ছিল ইসলামি সংস্কৃতি ও দেশপ্রেম। পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমিকায় বহু ইসলামি ও দেশাত্মবোধক গান তিনি রচনা করেন। তাঁর রচিত কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর নিজের সুরারোপিত কয়েকটি গানের রেকর্ডও পাওয়া যায়। তার মধ্যে আববাসউদ্দীনের সঙ্গে গাওয়া রেকর্ডও রয়েছে। ব্যক্তিজীবনে গোলাম মোস্তফা ছিলেন খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যশোর সংঘ কর্তৃক ‘কাব্য সুধাকর’ (১৯৫২) এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ (১৯৬০) উপাধি লাভ করেন। [শহিদুল ইসলাম]

মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি গোলাম মোস্তফার অবদান বাংলা সাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত। স্কুল জীবনেই এই কবির সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। এ সময় তাঁর ‘আর্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ কবিতাটি মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘রক্ত রাগ’ প্রকাশিত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিচের দু’লাইন কবিতার মাধ্যমে কবিতার মাধ্যমে কবিকে অভিনন্দিত করেছিলেন-

“তব নব প্রভাতের রক্তরাগখানি মধ্যাহ্নে জাগায় যেন জ্যোতির্ময়ী বাণী।”

তাঁর পরবর্তী গ্রন্থাবলীর মধ্যে ‘হাসনাহেনা’ (কাব্যগ্রন্থ) ‘খোশরোজ’ (কাব্যগ্রন্থ), ’সাহারা (কাব্যগ্রন্থ)’, ‘বুলবুলিস্তান’ (কাব্যচয়ন) ও ‘রূপের নেশা’ ‘ভাঙ্গাবুক’ ‘একমন একপ্রাণ’ ইত্যাদি উপন্যাসগুলি বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

অনুবাদক হিসেবেও কবি গোলাম মোস্তফার বিশেষ খ্যাতির পরিচয় পাওয়া যায়। আরবী ও উর্দু সাহিত্য হতে নিম্নলিখিত গ্রন্থগুলি ভাষান্তরিত করে বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। ‘ইখওয়ানুস সাফা’, ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’,- ‘কালাম-ই-ইকবাল’, ‘শিকওয়া’ ও ‘আল-কুরআন’ তার ভাষান্তরিত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এছাড়া, চিন্তামূলক ও যুক্তিবাদের উপর লিখিত আরও কিছু গ্রন্থাবলী তিনি রচনা করেছিলেন। ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’, ‘ইসলামে জেহাদ’, ‘আমার চিন্তাধারা’, এগুলি তার গভীর চিন্তাধারার জ্ঞানলব্ধতার ফসল।


কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ একটি আশ্চর্য রকমের সফল সৃষ্টি। এই অমর গ্রন্থখানি গদ্যে রচিত হলেও সে গদ্যও কবিতার মত ছন্দময় এবং মধুর। গ্রন্থখানা বিশ্বনবী হয়রত মুহম্মদ এর একটি সার্থক জীবন চরিত]। গ্রন্থটিতে হৃদয়ের আবেগ, আন্তরিক অনুভূতি যে ভাবে বর্ণিত হয়েছে তার তুলনা আমাদের বাংলা সাহিত্যে নিতান্তই বিরল। এর পরবর্তীকালে তিনি কোর-অনিক ঘটনার অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘বনি আদম’ নামে একটি মহাকাব্য লিখেছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যে এক অমর ও অক্ষয় কীর্তি।

সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। গায়ক ও গীতিকার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে ইসলামী গান, গজল ও মিলাদ মাহফিলের বিখ্যাত ‘কিয়ামবাণী’ (রসুল আহবান বাণী) রচনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তার অনেকগুলি গান আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠেও রেকর্ড হয়েছিল। এছাড়া নিজের কণ্ঠেও তিনি বেশ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন। তার রেকর্ডকৃত গানগুলোর প্রথম লাইনগুলি নিম্নরূপ :

হে খোদা দয়াময় রাহমানুর রাহিম

বাদশা তুমি দীন ও দুনিয়ার নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি

আমার মুহম্মদ রাসুল

মৃত্যু :

বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তার শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Saturday, 19 December 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                 জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

         কবি ও সম্পাদক নমিতা চৌধুরী
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
           Doinik Sabder Methopath
          Vol -227. Dt -20 .12.2020
           ৫ পৌষ, ১৪২৭. রবিবার
=================================
"দুইটি বালিশ
আজীবন নির্বিবাদী
মাথার খাটের পাশে বাজুতে ধ্বনিহীন উপস্থিতি
যথার্থই অনুমোদিত উড়োজাহাজের কালো বাক্সের ছক
সমস্ত জলিতা কর্কশতাগুম খুন এবং প্রেমের পাশাপাশি শুয়ে
 দুইটি বালিশ নির্ঘুম রাতের কিছু কথা
 তুলোর মধ্যে গুঁজে রাখে বেশ"
                        (বিষয় বালিশ)
  বিশ শতকের সাতের দশকে নির্বিবাদী ধ্বনিহীন উপস্থিতিতে যে কবিকে আমরা অনুমোদিত করি সরল বিশ্বাস ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে, তিনি কবি ও সম্পাদক নমিতা চৌধুরী।


জন্ম : ২০-১২-১৯৪৯
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন কলকাতায়। পড়াশোনা কলকাতার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে এম.এ পাশ করেন। উত্তর আধুনিক বাংলা কাব্য কবিতার ধারায় সত্তরের দশকে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য মৌলিকতার অবদান রেখেছে।

পেশা : অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।

কাব্যগ্রন্থ : ১৬টি।
দুর্ভিক্ষের জ্যোৎস্নায় , উটের শহর, সবুজ ঘাসের রোদ্দুরে প্রভৃতি।

সম্পাদিত গ্রন্থ : ৬টি। 

সম্পাদক : 
নান্দীমুখ পত্রিকা ।

২০১৩ সালে তাঁর সহ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মহিলা কবিদের বাংলা কবিতা সংকলন "দামিনী" .

সম্মান প্রাপক :
১) ছন্দনীড় আবৃত্তি সংস্থা।
২) বৈশাখী উদ্যম পরিশীলন, 
৩)কবিতাপাক্ষিক,
৪) আমি সাহিত্য পত্র, 
৫)শিল্পীন্দ্র সাহিত্য পত্র, 
৬)বিভূতিষণ-স্মারক সম্মান, 
৭)শতক একুশ, 
৮)পারনি, 
৯)রূপশালী ইত্যাদি।

বিদেশ ভ্রমণ : 
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, লন্ডন, প্যারিস, জার্মানী, কানাডা, পোল্যান্ড, ইটালী, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইস্তামবুল, আমস্টারডাম, ফিনল্যান্ড।

শান্তি সংস্কৃতি ও নারী সমস্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আজীবন যুক্ত আছেন।

সদস্যঃ 
পাকিস্তান ইন্ডিয়া পিপলস্ ফোরাম ফর পিস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ভাইস প্রেসিডেন্ট)
কলকাতা আন্তর্জাতিক শিল্প ও সাহিত্য কেন্দ্র।
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব কমিটির সদস্য।


উল্লেখযোগ্য কবিতা :
১.
নীল শাড়িটির বিষয়ে

এই ঘননীল তাঁতের শাড়িটির মধ্যে
যে দূরবর্তী তাঁতি টির স্পর্শ লেগে আছে
কে জানে হয়ত তার সলজ্জ স্ত্রীর চাহনিতে
 এই রং ধরা পড়েছিল
মনে মনে তাঁত বুনের সেই নারী পড়েছিল 
এই নীল আঁচলের ছায়া
       (সংক্ষিপ্ত)

২.
একটি গল্পের বিকেল

বৃষ্টিতে সুপারি গাছ গুলি খিলখিল করে হাসছে
কাঁঠাল ও নিমগাছটিও বেশ উল্লসিত
আজ বিকেলের এই রোদ বৃষ্টির ভুলভুলাইয়া থেকে
বেরিয়ে এল একটি সবুজ টিয়া
ও এখন পেয়ারা গাছটির মাথায় বসবে
এই যে হা হা করে এসে বৃষ্টি বাতাস একটা গল্প বানাল
এর জন্য কি আমরা সকাল থেকেই তৈরি ছিলাম
কেউ কেউ হয়তো মনে মনে ভেবেছিলাম
হোক এভাবেই বিকেলটা অন্য রকমের কিছু
গল্প নয়তো কবিতার বিন্দুবিন্দু ঘামে ছবি আঁকা হোক স্বতন্ত্র কোন‌ও বিকেলের
খুব কিছুতো গল্প নেই তবু একটি লাল রং
মিলে কালোর মধ্যে একটা লম্বা লম্বা দাগ হয়ে
 হিরনের ছবির মতো মিশে যাক....


   সদাহাস্যময় অত্যন্ত মিশুকে  নম্র ভদ্র যে কবির মন অতলান্ত শান্তি কামনায় সদাচারী,  অভাবনীয় শব্দচয়নে মাধুর্য্যময় কবিতার শরীরের এঁকে দেন সভ্যতার ছাপ, মনের প্রতিচ্ছবি। মধুর আলাপ চারিতায় গড়ে তোলেন উষ্ণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজীবন কবিতার কাছে ঋণী অন্যতম শক্তিমান মহিলা কবি । আজ শুভ জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করতে পেরে আমরা গর্বিত আনন্দিত। 
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆



শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ।‌ একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। Dt -26.11.2024. Vol -1059. Tuesday. The blogger post in literary e magazine.

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়   (২৬ নভেম্বর ১৮৯০ — ২৯ মে ১৯৭৭)  একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ.  মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্...