Friday, 31 July 2020

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

££££££££££££££££££££££££££££££
 হেমন্তের তারাভরা রাতে একটি
 নক্ষত্র -আয়ু অম্বুজ বসু
                            ড. বিষ্ণু পদ জানা।
£££££££££££££££££££££££££££££££££
                 Doinik Sabder Methopath
                 Vol - 86 Dt - 01.8.2020
                 বাং - ১৬ ই শ্রাবণ, ১৪২৭ ।
££££££££££££££££££££££££££££££££

                            ১৯৩১ সালের ১লা অগাস্ট উত্তর 24 পরগনার এক মফ:স্বল শহরে তাঁর জন্ম। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা টাকি শহরের তাঁর বাল্য জীবন কাটে . পরে স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে ভর্তি হন , পরে স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং আরো পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ।ছাত্রজীবন থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সান্নিধ্যে এসে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হন । সেই মনোভাবের সার্থকতা বিবিধ গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা মধ্য দিয়ে । পরে আরামবাগ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং চার দশক ওখানে কর্মজীবন নির্বাহ করেন। নিম্ন দামোদর এলাকায় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন ।তিনি বিদ্যাসাগর, রামমোহন মনীষীদের সাহিত্য ও সমাজ কর্মের ওপর গবেষণামূলক জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ রচনা করে বিখ্যাত হন। এইসব প্রকাশ, সম্পাদনা, পত্র-পত্রিকায় কবিতা ,গল্প, নিবন্ধ লেখা - তাঁর বিস্তৃত সাহিত্যিক জীবনের প্রসার ঘটে  । আজকের সমাজ -শিল্প-  সাহিত্যে  তাঁর সৃজনশীল গুণাবলী র  প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করি । এদিক থেকে তিনি শক্তিমান কবি ,প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও গবেষক । তাঁর অন্যতম সাহিত্য কীর্তি -  রবীন্দ্র উত্তর আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের আলোকময় প্রতিভার মূল্যায়ন ,ব্যাখ্যা বিশ্লেষণধর্মী অন্যতম আকর গ্রন্থ " একটি নক্ষত্র আসে"।

               তিনি আবার  আরামবাগ সাহিত্য পরিষদের একদা প্রাণপুরুষ ছিলেন।  অঞ্চলের ইতিহাস ছিল তাঁর নখদর্পণে। বাংলার মন্দির টেরাকোটা-র ইতিহাস রচয়িতা ডেভিড ম্যাককাচ্চন আরামবাগে কাজ করার সময় পেয়েছিলেন তাঁর প্রভূত সাহায্য। ব্যক্তিজীবনে লাজুক ও সংবেদনশীল মানুষটি আমাদের ছেড়ে পূব আকাশের সন্ধ্যাতারা হয়ে গেলেন। কিন্তু রেখে গেলেন - আর এক মহান নক্ষত্রকে ।  প্রায় চার দশক আগে জীবনানন্দ চর্চা যখন প্রত্যুষের অন্ধকারে অবচেতন মনের গভীরে আত্মমগ্ন তখন আধুনিক মনস্ক লেখক বিশ শতকের নির্জনতম কবি, জীবন থেকে পলায়ন বাদী কবি, মৃত্যু চেতনার কবি, পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দের কবিতার ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করে, নতুন ভাবনার জন্ম দিলেন, এক আশ্চর্য দর্শনের জন্ম দিলেন। মনের গভীরে লালিত পালিত ভাব সহজ সরল ভাষায়  সৃজনে মর্মমূলে রচনা করে চলল 'আলো-আঁধারের চিত্রনাট্যের'- জীবনানন্দীয় আবেশ ও আবেগ নিয়ে । যার সবটাই এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত । প্রথম বইতেই স্বনামধন্য যে লেখক , তিনি তো হেমন্তের তারাদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মহানক্ষত্রের  ১৯৬৫-তে প্রকাশিত ।  "একটি নক্ষত্র আসে।"


প্রথম প্রকাশ - 
কার্তিক ১৩৭২ বঙ্গাব্দ।

প্রকাশক
অনুপ কুমার মাহিন্দার
পুস্তক বিপণি
২৭ বেনিয়াটোলা লেন
কলকাতা -    ৯

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
সোমনাথ ঘোষ

মুদ্রক
ডেজ অফ সেট
১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট
কলকাতা  - ৭৩

ISBN - 81-85741-64-9

মূল্য - ২০০ টাকা।

উৎসর্গ-
" মা ও বাবাকে"
                  
                আলোচ্য গ্রন্থের অন্তর্গত প্রবন্ধগুলি ১৯৫৭ - ১৯৬৪ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে - পুনর্ণবা,  মানস, জয়শ্রী, ধ্রুপদী, পূর্বপত্র, সমীপেষু ও নতুন পরিবেশ প্রভৃতি পত্রিকায়। রবীন্দ্র উত্তর আধুনিক বাংলা কাব্য কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি  জীবনানন্দ চর্চার আদি পর্বের এই সুপরিচিত বইটির ১৯৮৩-তে  দ্বিতীয় সংস্করণ ও ১৯৯৯-এ তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়. 
                               প্রখ্যাত অধ্যাপক , সমালোচক ও জীবনানন্দের বিশেষ পরিচিত ড অমলেন্দু বসু গ্রন্থটির ১ম খন্ডের  ভূমিকায় যা লিখেছিলেন -

  
         গ্রন্থটির নামকরণ প্রসঙ্গে  নাম কবিতাটি একবার দেখে নেওয়া যাক -

                 "  একটি নক্ষত্র আসে "
                        জীবনানন্দ দাশ

একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ'লে
ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে

সে আসবে মনে হয়; - আমার দুয়ার অন্ধকারে
কখন খুলেছে তার সপ্রতিভ হাতে!
হঠাৎ কখন সন্ধ্যা মেয়েটির হাতের আঘাতে
সকল সমুদ্র সূর্য সত্বর তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাত্রি হতে পারে
সে এসে এগিয়ে দেয়;
শিয়রে আকাশ দূর দিকে
উজ্জ্বল ও নিরুজ্জ্বল নক্ষত্র গ্রহের আলোড়নে
অঘ্রানের রাত্রি হয়;
এ-রকম হিরন্ময় রাত্রি ইতিহাস ছাড়া আর কিছু রেখেছে কি মনে।

শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন
জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ;
চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়;
সে অনেক ক্লান্তি ক্ষয় অবিনশ্বর পথে ফিরে
যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর
পুরোনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে।

 (সাতটি তারার তিমি ,রচনা কাল :১৩৩৫-  ১৩৫০ প্রথম প্রকাশ : অগ্রহায়ণ ১৩৫৫.)

                     লেখক  এই গ্রন্থে খুব সচেতনভাবে  জীবনানন্দের কবিতায় ব্যবহৃত ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও পুরাপ্রসঙ্গের একটি পরিচিতিমূলক তালিকা পেশ করেছেন যেন । বিষয়সূচির দিকে তাকালে আমরা সেই আলো দেখতে পাই - 


* প্রাগ্ ভাষ 

** বিকাশের ধারা -

উন্মেষ * বিকাশ * উত্তরণ* নব নিরীক্ষা * মাত্রা চেতনা

*** ইতিহাস চেতনা - 

নির্জনতা * ব্যাপ্তি * ইতিহাস চেতনা * গতিধারা * আলোকের পাখি

**** সমাজ চেতনা - 

স্বপ্নপ্রয়াণ  * সন্ধিকাল * গ্রন্থিমোচন * পথনির্দেশ

***** প্রেম - 

প্রেম ও মৃত্যু *  প্রেমিক * প্রেম * নায়িকা * নারী * শেষ পর্ব

****** প্রকৃতি -

প্রকৃতি *  দেশ *  বিচিত্র * ঋতু * প্রসঙ্গ * আলো * ইন্দ্রিয় চেতনা

******* প্রতীক ও বাক্ প্রতিমা -

বোধি * কবিতা * প্রতীক * সাররিয়ালিজম্ * বাকপ্রতিমা * চিত্রকল্প *  মায়াদর্পণ * রূপকল্প * উপমা * উত্তরণ

******** মরমিয়া - 

মরমিয়া *  আলো - কণা * আলো অন্ধকার * তিমির - পিপাসা *  সূর্যতামসী * মহাজিজ্ঞাসা

এছাড়া 

কাব্যস্মৃতি ( ১), কাব্যস্মৃতি (২) , হাস্যরস,  বর্ণবৈভব , বাক্ শিল্প , ছন্দোভাবনা,  বিক্ষিপ্ত চিন্তা , কথাশিল্পী -(কথাসাহিত্য,  উপন্যাস উপক্রম- পূর্ণিমা, কল্যাণী , জীবনযাপন, মৃণাল, বিভা, বিরাজ , পেতনীর রূপকথা,  জীবন প্রণালী , কারুবাসনা , বাসমতি উপাখ্যান , জলপাইহাটি , সুতীর্থ , ও মূল্যবান), 

 ** প্রবন্ধ সাহিত্য - 

কবিতার কথা  * এবং অন্যান্য

*** কবি কথা -

জীবন প্রসঙ্গ * জীবন বৃত্ত

  ** পরিশিষ্ট   ।    প্রভৃতি।

     একজন ব্যক্তি ও তাঁর সাহিত্যকর্ম কে সম্পূর্ণ ভাবে জানতে গেলে, সঠিকভাবে জানতে গেলে ,   অনুভূতির উপলব্ধিতে বুঝতে গেলে - যে জাতীয় বিষয়সূচি  কিংবা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা ও  বিশ্লেষণ প্রয়োজন , লেখক সেদিকে নজর রেখে সবকিছু রচনা করেছেন। এদিক থেকে গ্রন্থটি জীবনানন্দীয় গবেষকদের আকর গ্রন্থ । 

        ব‌ইটিতে দুর্লভ কিছু ছবি আছে - যা পাশ্চাত্যের আধুনিক শিল্প- সহিত্য  আন্দোলনের প্রতীকী বিষয় ভাবনা সঙ্গে যুক্ত। ছবিগুলি সংযুক্ত করলাম। 












!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!¡!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

Thursday, 30 July 2020

অনুগল্প সংখ্যা । পর্ব -২

 ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                   অনুগল্প সংখ্যা
                        পর্ব -২
**************"*****************************
             Doinik Sabder Methopath
                  Vol. -85. Dt - 31.7.20
==================================।          সূচিপত্র :
      জীবন থেকে বড়- বীরকুমার শী
       পুকুর কথা -সুধাংশু রঞ্জন সাহা
       যখন একা- গোবিন্দ মোদক
      স্বর্গে করোনা- সমরেশ সুবোধ পড়্যা
       তকমা- বিষ্ণুপদ জানা
       আশীর্বাদ- কাজী শামসুল আলম
        একটি চারা গাছ - মতিলাল দাস
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

জীবন থেকে বড়
বীর কুমার শী

             আঙুলে আঙুল রেখে অমিতেশ বলেছিল - সু,  'তোমার জন্য জীবন দিতে পারি আমি' ! অমিতেশের বাবা বলল - তুই যদি ওই মেয়েকে বিয়ে করিস , তাহলে আমার বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।
          জীবন দিতে হয় তো পারতো কিন্তু বাবার সম্পত্তি হারাবার ভয় - অমিতেশকে সু' কাছ থেকে সরিয়ে দিল।

-------------------------------------




পুকুরকথা                            
-------------------------
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

আমি নন্দনকাননের পুকুর । আমাকে ঘিরে রোজ মানুষের কোলাহল ! ঘাটে বসে কেউ ।  কেউ স্নান করে । কেউ সাঁতার কাটে । কেউ মাছেদের খাবার দেয়। মাছেদের সেকী উল্লাস ! 
#
আজ পাঁচ মাস । কেউ ভুলেও ঘাটে আসেনি। সাঁতার কাটেনি ! কচুরিপানা আর শ্যাওলায় ভরে গেছে আমার বুক । আমাকে ঘিরে শুধু একাকিত্বের ছায়া । জানি না কবে ফিরবে সুদিন !
--------------+-----------+------------+------






যখন একা....
                      গোবিন্দ মোদক 

       দশ বাই বারোর এই ঘরটি থেকে বের হলেই গলি ----- গলি থেকে রাজপথ। প্রতিদিন অফিস টাইমে দরজায় তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে এসে রিক্সায় চাপতাম। একাই। পঞ্চবটী মোড় থেকে তুমি উঠতে। তখন দু'জন। সহজেই পথটা ফুরিয়ে যেত। আজও আমি অফিস যাই ; ঘর থেকে গলি ---- গলি থেকে রাজপথ ---- রাজপথ থেকে গন্তব্য ---- তবে একা!
----------+++++++---------------+------------




স্বর্গে করোনা
সমরেশ সুবোধ পড়্যা

কারখানা বন্ধ তাই ব্রহ্মাজীর আর গণেশজীর মাস্ক পাওয়া মুশকিল৷ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকদের মর্ত্যধামে আসাটাই হচ্ছেনা এবছর৷ এককোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা৷ মনসা ও শীতলা রেগে কাঁই,
ফাল্গুনের শুরুতে ওঁদের পূজাটাই বন্ধ৷

স্বর্গপুরীর নির্দেশে কৈলাশ থেকে বেরোনো'তে একশ' চুয়াল্লিশ জারি - নন্দী, ভৃঙ্গী সহ মহেশদের!

২০২১শে কি হয়! চিনের মুন্ডুপাত আর কী?
~~~~~~~~~~~~~~


তকমা
 বিষ্ণুপদ জানা
                
           অভি এলি নাকি ?
       ভাঙ্গাচোরা বুড়ি গলায় আদুরে ডাক- বারে বারে.....
     মহামারী করোনা র প্রকোপে, ছেলে অভির বাড়ি ফেরা হয় না। শেষে পরিযায়ী তকমায় জেনারেল কামরা- শুকনো কাশি ও জ্বর -ভোর রাতে বাড়ি ফেরা.
          এসেছি মা ....
মা,  চোখ খোলে.... দূর থেকে ছেলেকে দেখে স্নেহের পরশ বলে ....আয়,  আয়, কাছে আয়।
          না মা ......দূরেই ভালো.
    ভোরে ছেলে কোয়ারেন্টাইন এ চলে যায়।
                           রক্তের সম্পর্ক  এই তকমায় কি মুছে যাবে !
-------------+--------------+------------------


আশীর্বাদ 
   ........ কাজী সামসুল আলম 

বহুদিন পর অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মী নিতাইবাবুকে ফোন করলেন রহমত আলি, "দাদা কেমন আছেন?" 
"খুব ভালো নেই, আমফানের ঝড়ে ঘরের টালির চাল উড়ে গেছে, বাঁশের মাচার মাটির ছাদ ভেঙে ঘর লন্ডভন্ড, ভাইয়ের বাড়িতে আছি, ঘর সারাবার মত আর্থিক অবস্থা নেই ।"
বিডিও অফিসের গ্ৰুপ সি কর্মী নিতাইবাবু বরাবর সৎ ছিলেন, দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে এক নাতিকে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর সংসার, পুত্র হয় নি ।
"দাদা কিছু মনে না করলে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাবো?" 
উনি শুনে ফোনে কেঁদে ফেলে রহমতকে আশীর্বাদ করলেন |









একটি চারাগাছ 
মতিলাল দাস 

ক্ষুদ্রকে ক্ষুদ্র ভেবে তাচ্ছিল্য করতে নেই, ক্ষুদ্রের মধ্যেও বিরাট শক্তি আছে। বৃহৎকে ভাঙলে পরে ক্ষুদ্রই অবশিষ্ট থাকে। ছোট ছোট স্বপ্নগুলো সব আশা পূর্ণ করেনা, তবে এরাই আবার বড় স্বপ্নে পৌঁছে দেবার ঠিকানা দেখায় যেমন একটি চারাগাছ। ছোট হলেও চারাগাছ সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে বৃক্ষে পরিনত হয়ে সুবিশাল রঙীন পৃথিবী গড়ে তোলে।  


∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Wednesday, 29 July 2020

বাঙালির সংস্কৃতিতে ঝুলন একাদশীর গুরুত্ব ।

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

বাঙালির সংস্কৃতিতে ঝুলন একাদশীর গুরুত্ব।

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

Doinik Sabder Methopath

Vol - 84. Dt - 30.7.2020

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ঝুলন একাদশী : 
            " শ্রীমদ্ভগবদগীতা" তে উল্লেখ আছে ভগবান কৃষ্ণ হলেন পরম ভোক্ত । চাতুর্মাস্য বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের মাস। ভগবানের আনন্দ দানে,  নানান উৎসবের আয়োজন করে থাকেন ভক্তেরা। এমনই একটি আনন্দ উৎসবের নাম ঝুলন যাত্রা। শ্রাবণ মাসের একাদশী তিথিতে এই যাত্রা শুরু হয় শেষ হয় ঝুলন পূর্ণিমা তথা রাখি পূর্ণিমায়। ভগবান কৃষ্ণের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির চেষ্টায় ভক্তরূপ গোপীরা আনন্দ দানের মধ্য দিয়ে আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে এই আয়োজন করে থাকেন। ভগবানের তৃপ্তিতে ভক্তের আনন্দ। পরমাত্মার তৃপ্তিতে জীবাত্মার আনন্দ লাভ। ঋতুভিত্তিক আনন্দ লাভের নানান অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।  ঝুলন অনুষ্ঠানের কতগুলি বৈশিষ্ট্য - ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী রাধিকা কে ভক্তরা এক আসনে প্রত্যক্ষ করেন - নিজেদের মাঝে। ভক্ত ভগবানের একটি সম্বন্ধ তৈরি হয়. শাশ্বত সম্বন্ধ, যা নিত্য , এটি এক রসের সম্পর্ক, যা মৃত্যুর পরেও টিকে থাকে। পাঁচ দিন ধরে ভগবানের উদ্দেশ্যে সেবাদান। দোলনার দড়ি ধরে দোল দেওয়া এক পরম সেবাদান। মা করে তৃপ্তি লাভ করেন ভক্তেরা। তাই দোলনা কে খুব সুন্দর সাজে সজ্জিত করেন। চারিপাশ মনোরম পরিবেশ রচিত হয়-  মনি মুক্তা খচিত দোলনায় যুগল মূর্তি প্রত্যক্ষ করে জীবজগৎ পূর্ণ্য অর্জন করেন। তাই এটি পূর্ণ্য অর্জনের বিশেষ একাদশী তিথি। একাদশী তিথি কি এবং কেন তা আমরা পালন করব ?  ইহলৌকিক জীবনের এর গুরুত্ব কি ? আমাদের জেনে রাখা ভালো।

Bogvan Bisnu একাদশী তিথি : 

 " কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ।       অতএব মায়া তারে দেয় সংসারদুঃখ।। " 
                   শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণ আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন। ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্রি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বোত্তম।
 স্বরূপ :  
        শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভক্ত্যাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগীতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য ও শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যেকোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য পালন : 
         সঙ্কটজনক অবস্থা বা জন্মমৃত্যুর অশৌচে কখনও একাদশী পরিত্যাগ করতে নেই। একাদশীতে শ্রাদ্ধ উপস্থিত হলে সেইদিন না করে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিত। শুধু বৈষ্ণবেরাই নয়, শিবের উপাসক, সূর্য-চন্দ্র-ইন্দ্রাদি যেকোন দেবোপাসক, সকলেরই কর্তব্য একাদশী ব্রত পালন করা। দুর্লভ মানবজীবন লাভ করেও এই ব্রত অনুষ্ঠান না করলে বহু দুঃখে-কষ্টে চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয় ।  অহংকারবশত একাদশী ব্রত ত্যাগ করলে যমযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। যে ব্যাক্তি এই ব্রতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, জীবিত হয়েও সে মৃতের সমান। কেউ যদি বলে “একাদশী পালনের দরকারটা কি?” সে নিশ্চয় কুন্তিপাক নরকের যাত্রী। যারা একাদশী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শনির কোপে তারা বিনষ্ট হয়। একাদশীকে উপেক্ষা করে তীর্থ স্থান আদি অন্য ব্রত পালনকারীর অবস্থা গাছের গোড়া কেটে পাতায় জল দানের মতোই।
      মাহাত্ম্য :  
             একাদশী কে বাদ  দিয়ে যারা দেহধর্মে অধিক আগ্রহ দেখায়, ধর্মের নামে পাপরাশিতে তাদের উদর পূর্ণ হয়। কলহ-বিবাদের কারণেও একাদশী দিনে উপবাস করলে অজ্ঞাত সুকৃতি সঞ্চিত হয়। পুণ্যপ্রদায়িনী সর্বশ্রেষ্ঠ এই ব্রত শ্রীহরির অতি প্রিয়। একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয়, অশ্বমেধ, রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞদ্বারাও তা হয় না। দেবরাজ ইন্দ্রও যথাবিধি একাদশী পালনকারীকে সম্মান করেন। একাদশী ব্রতে ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। অনাহার থেকে হরিনাম, হরিকথা, রাত্রিজাগরণে একাদশী পালন করা কর্তব্য। কেউ যদি একাদশী ব্রতে শুধু উপবাস করে তাতে বহু ফল পাওয়া যায়। শুদ্ধ ভক্তেরা এই দিনে একাদশ ইন্দ্রিয়কে শ্রীকৃষ্ণে সমর্পণ করেন। একাদশীতে শস্যমধ্যে সমস্ত পাপ অবস্থান করে। তাই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, সরিষা আদি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য একাদশী দিনে বর্জন করা উচিত। নির্জলা উপবাসে অসমর্থ ব্যক্তি জল, দুধ, ফল-মূল, এমনকি আলু, পেপে, কলা, ঘিয়ে বা বাদাম তেল অথবা সূর্যমুখী তেলে রান্না অনুকল্প প্রসাদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন। রবিশস্য (ধান, গম, ভুট্রা, ডাল ও সরিষা) ও সোয়াবিন তেল অবশ্যই বর্জনীয়। 
        নিয়মাবলী : 
                   ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।”  একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।  একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।
                       বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে-
  ১. উৎপন্না একাদশী  -   
  ২. মোক্ষদা একাদশী
  ৩. সফলা একাদশী ,  -   
  ৪. পুত্রদা একাদশী
  ৫. ষটতিলা একাদশী -   
  ৬. জয় একাদশী 
  ৭. বিজয়া একাদশী   -   
   ৮. আমলকী একাদশী
   ৯. পাপমোচনী একাদশী -
   ১০. কামদা একাদশী 
   ১১. বরুথিনী একাদশী    - 
  ১২. মোহিনী একাদশী 
   ১৩. অপরা একাদশী      
- ১৪. নির্জলা একাদশী
 ১৫. যোগিনী একাদশী    -
 ১৬. শয়ন একাদশী 
১৭. কামিকা একাদশী     - 
১৮. পবিত্রা একাদশী
১৯. অন্নদা একাদশী        -
 ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী
 ২১. ইন্দিরা একাদশী       -
  ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী 
২৩. রমা একাদশী           - 
২৪. উত্থান একাদশী 
                   কিন্তু  যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।

একাদশীর আবির্ভাব

              পদ্মপুরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপদ তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়েই নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন,উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই উরু-গুরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক।এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখমোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন? যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন-আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল।

          শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ট এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত। কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা! আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।

             হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দুর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।  

                   ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত ককোটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন- হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না। 

Tuesday, 28 July 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆=====∆∆∆=====∆∆∆=====∆∆∆=====∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন-
        ( ইংরেজি মাস অনুসারে)
****************!!!!!!!!!!!!!!!!****************

১) জানুয়ারি
              অদ্বৈত মল্লবর্মণ, জসিমউদ্দিন, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, আশাপূর্ণা দেবী, দেব শংকর হালদার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, তিলোত্তমা মজুমদার, স্বামী বিবেকানন্দ, নবনীতা দেবসেন, মহাশ্বেতা দেবী, তারাপদ সাঁতরা, সুকুমার সেন, ক্ষেত্র গুপ্ত, বিমল মিত্র, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ।
----------------------------------------------------
২। ফেব্রুয়ারি 
              শামসুল হক, পূর্ণেন্দু পত্রী, চিত্তরঞ্জন মাইতি, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, নবীনচন্দ্র সেন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, গোপাল হালদার, কালীকৃষ্ণ গুহ, জীবনানন্দ দাশ, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, হুমায়ুুন কবির, কালীপ্রসন্ন সিংহ, ভিক্টর হুগো, গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
-----------------------------------------
৩। মার্চ
         কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, দিব্যেন্দুু পালিত, ঈশ্বর গুপ্ত, সমরেশ বসু, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, সরোজ দত্ত, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, অন্নদাশঙ্কর রায়, রাজশেখর বসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, স্টিফেন মালার্মে, আলোক সরকার, বরুণ চক্রবর্তী ,মল্লিকা সেনগুপ্ত, পবিত্র্র সরকার, ম্যাক্সিম গোর্কি, উৎপল দত্ত, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
----------------------------------------------------
৪। এপ্রিল
            এমিল জোলা, মৃদুল দাশগুপ্ত ,উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, চার্লস বোদলেয়ার, অমিয়় চক্রবর্তী, দেবারতি মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মজুমদার, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, উইলিয়াম শেক্সপিয়র, শরৎচন্দ্র পণ্ডিত প্রমুখ।
-------------------------------------------------
৫। মে
          সত্যজিৎ রায়, পুলক চন্দ, পান্নালাল প্যাটেল, তপন রায়চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,ডেভিড হিউম , রবার্ট ব্রাউনিং,  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী , দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বার্ট্রান্ডড রাসেল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাস্কিন বন্ড, ভাষা আন্দোলনের শহীদ, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রাজা রামমোহন রায়, বব ডিলান, সৌমেন চন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম, ওয়াল্টার হুইটম্যান প্রমুখ।
-----------------------------------------------
৬। জুন
          অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত প্রমথনাাথ বিশী, ইয়েটস্ , হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়, মন্মথ রায়, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, বেগম সুফিয়া কামাল, নির্মলেন্দুু গুণ, কালিদাস রায়, নবারুণ ভট্টাচার্য, বঙ্কিমচন্দ্রর চট্টোপাধ্যায়, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, রতনতনুু ঘাটী, আহমদ ছফা প্রমুখ।
-------------------------------------------------------
৭। জুলাই
             ড. বিধানচন্দ্র রায়, ফ্রানৎস কাফকা, প্রবোধকুমার সান্যাল, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ঝুম্পাা 
লাহিড়ি, অমিতাভ ঘোষ, আল মাহমুদ, পাবলো নেরুদা, মতি নন্দী, মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, অক্ষয় কুমার দত্ত, বিজন ভট্টাচার্য,  বিষ্ণু দে,  দ্বিজেন্দ্রলাল রায় , বনফুল , শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত,  প্যারীচাঁদ মিত্র , ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় , তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,  প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় , জিম করবেট, মনোজ বসু, রজনীকান্ত সেন, জর্জ বার্নার্ড শ, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
---------------------------------------------
৮। আগস্ট
            অম্বুজ বসু ,প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ভূমেন্দ্র গুহ পি বি শেলী, প্রমথ চৌধুরী, মালী বুুড়ো, সুকান্ত ভট্টাচার্য ,শম্ভু রক্ষিত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, শঙ্করীপ্রসাদ বসু, শম্ভু মিত্র ,সজনীকান্ত দাস ,তসলিমা নাসরিন মাদার টেরিজা প্রমুখ।
---------------------++-------------------
৯। সেপ্টেম্বর
               বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বজেন্দ্র লাল শীল প্রেমেন্দ্র মিত্র ,সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ, প্রবোধকুমার ভৌমিক,  ব্রহ্মাময় নন্দ, রাজনারায়ণ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ,আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ,বিনয় বসু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সৈয়দ মুজতবা আলী, সুবোধ ঘোষ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দিনেশ দাস, বিনয় মজুমদার, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বিমল কর, অজিত দত্ত ,বিভাস চক্রবর্তী, ব্রাত্য বসু, ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি, সতীনাথ ভাদুড়ী, ভগৎ সিং , ড. রামচন্দ্র মন্ডল, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
------------------------------------------
১০. অক্টোবর
       মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মণীন্দ্র রায় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, সমর সেন, অনিতা অগ্নিহোত্রী ,প্রচেত গুপ্ত, কবিতা সিংহ রায় , ড. প্রবাল কান্তি হাজরা,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অতুলপ্রসাদ সেন , কোলরীজ, শামসুর রহমান, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল মোহিতলাল মজুমদার, ভগিনী নিবেদিতা, সুকুমার রায় ,সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ,অরুণকুমার সরকার, এজরা পাউন্ড, জন কিটস প্রমুখ।
-----------------------_-------------------
১১. নভেম্বর
            দীনবন্ধু মিত্র, অনিল ঘড়াই, অরুণ মিত্র শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ,শ্যামল কান্তি দাস ,ঋত্বিক ঘটক, চিত্তরঞ্জন দাস, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ,আলবার্ট কামু, জয় গোস্বামী ,মীর মশাররফ হোসেন, হরিপদ মন্ডল , শক্তি চট্টোপাধ্যায় ,অমিতাভ দাশগুপ্ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, জগদীশচন্দ্র বসু, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ।
----------------------------------------------
১২. ডিসেম্বর
                 গণেশ বসু, ক্ষুদিরাম বসু, দীনেশ গুপ্ত মণিশংকর মুখোপাধ্যায় ,নোয়াম চমস্কি, বেগম রোকেয়া, জেনস মিল্টন, সমরেশ বসু ,শিবরাম চক্রবর্তী, দেবেশ রায় ,নমিতা চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা, শ্রীজাত, মনোজ মিত্র, রানী রাসমণি অমিতাভ গুপ্ত ,রমাপদ চৌধুরী ,কৃষ্ণা বসু, ঈশ্বর চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

এছাড়াও প্রতি মাসে জন্মদিনের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন পর্ব প্রতিনিয়ত  সংযোজিত হবে, তথ্য সংগ্রহ চলছে .....
################################
            













দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

      ####################

             স্মৃতির স্বর্ণরেণু   

################################
              Doinik Sabder Methopath
               Vol -83.  Dt -29.7.2020
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
    *****  কবি বিষ্ণুপদ জানা 'র ইংরেজিতে 
                অনূদিত ৫ টি কবিতা।
      ** INTERNATIONAL BENGALI POETRY                FESTIVAL, Kolkata য়  
                 বিভিন্ন বছর প্রকাশিত পত্রিকা - 
                   Poetry World.এ ছাপা। 
+++++++++++++++++++++++++++++++++
        1.   Poetry World , Vol - III
      ( a collection of world poetry)
        6th World Poetry Festival ,2012
                      January6,2012     
 
2.   Poetry World , Vol - IV
      ( a collection of world poetry)
      7th World Poetry Festival ,2013
               January18,2013

           3.  Poetry World , Vol - V
      ( a collection of world poetry)

          8th World Poetry Festival ,2014  
              Februry 6-8 ,2014  

       
         4. Poetryy World , Vol - VI
      ( a collection of world poetry)

         9th World Poetry Festival ,2015
                  January 2-1-,2015

         .5.   Poetry World , Vol - VII
      ( a collection of world poetry)

   The 10th World Poetry Festival ,2016
                      January8 ,2016
==================================
  * 1st poem -Translated by Suman Laskar .                   ( Respected School Teacher )
* 2nd , 3rd & 4th poem  - Translated by   
                               Indrajit Bera . 
               ( A scholler Students in English) 
* 5th poem - Translated by Alok    
                         Bandyopadhyay . (Writer) 
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
                               Thanks
!!====!!!!!!!======!!!!!!!!======!!!!!!!!====!!

Monday, 27 July 2020

আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস। পর্ব - ১

@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
         আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস
                     পর্ব - ১ 
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                  Doinik Sabder Methopath
                  Vol - 82. Dt - 28.7.2020
¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥
                       পূর্ব মেদিনীপুর জেলা
++++++++++++++++++++++++++++++++++
                       ১।    পটাশপুর থানা : 
 !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
                    
                      ** পটাশপুর দর্পণ **
                     

            " নিজের দেশকে ভালো করিয়া জানার চর্চা নিজের দেশকে যথার্থভাবে প্রীতির চর্চার অঙ্গ।"
                                 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রাচীন জনপদ পটাশপুর থানা। আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চা ও সমানভাবে জেলায় সমাদৃত। থানার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বার্ষিক সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা যেভাবে দিন দিন হয়ে আসছে। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে উৎসাহী অনেকে ভাবলেন এক অঞ্চলের খবর আরেক অঞ্চলে জেলায় রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে গেলে পৌঁছে দিতে গেলে আমাদের এমন কিছু করা দরকার। এই চিন্তা কে সামনে রেখে সাহিত্য-সংস্কৃতির সংবাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নাম রাখা হয় - পটাশপুর দর্পণ - দর্পণ তথা আয়না তে যেমন আমরা নিজেদের মুখ দেখেই ঠিক তেমনি সমগ্র পটাশপুর থানার মুখ - পটাশপুর দর্পণ। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমবায়় নেতা প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠী মহোদয়ের সম্পাদনায় প্রথম পাক্ষিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হল ১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে। এলাকার সাহিত্য সংস্কৃতি ,উৎসব- অনুষ্ঠান খেলাধুলা, সমাজসেবা ,বৃক্ষরোপণ ,রক্তদান ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভালো-মন্দ ,গ্রামের কথাসহ নানান বিষয় নিয়ে প্রায় ১০ বছর পত্রিকাটি প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। 
               প্রায় অর্ধশত পর পত্রিকাটি দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাসে,  কিছুটা রূপ পরিবর্তন করে। পাক্ষিক থেকে মাসিক এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২ অথবা ১৬ । বছরে দু'টি বিশেষ সংখ্যা - নববর্ষ ও পূজা ।  বিশেষ সংখ্যার পৃষ্ঠা ৩০/৪০. প্রসন্ন বাবুর অনুগামী সমবায় নেতা বরেন্দ্রনাথ পাত্র, প্রতাপদীঘি, পূর্ব মেদিনীপুর, পিন - ৭২১৪৪০. মহোদয় প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী হলেন আর সম্পাদনার দায়িত্বে এলেন প্রখ্যাত শিক্ষক ও সাহিত্যিক শ্রী মন্মথনাথ দাস। সহ সম্পাদনায় শ্রী বিনোদ বিহারী জানা ও শ্রী প্রভাত কুমার চন্দ। অফিস সেক্রেটারি শ্রী গোলোকেশ নন্দ গোস্বামী। মুদ্রণের দায়িত্ব নিউ অ্যাসেস্ট টেকনোলজি। প্রতাপদীঘি ।পূর্ব মেদিনীপুর। মূল্য - ৫ টাকা। 
RNI NO - WBBEN/2016/69278 .
               নতুন ভাবে এই পত্রিকায় পটাশপুর থানার নানান খবরাখবর এর পাশাপাশি জেলা ভত্তিক,  রাজ্যভিত্তিক নানান খবর ও ছাপা হতে লাগলো। পরিধি বিস্তৃত হল। গ্রাহক সংখ্যা ও অনেক বাড়তে লাগলো। এমন অবস্থায় ২৩.৬.২০১৯ তারিখ প্রকাশক মহোদয়ের অকাল প্রয়াণে সবাই মর্মাহত ‌ও শোকস্তব্ধ হলেন।
                 মাসিক পত্রিকা প্রকাশের নতুন দায়ভার গ্রহণ করলেন মাননীয় ভবেশ চন্দ্র বেরা, গোবর্ধনপুর , কাটরঙ্কা, পূর্ব মেদিনীপুর। সম্পাদকের দায়িত্বে এলেন মাননীয় সুমথ নাথ দাস, মঙ্গলচক , ইটাবেড়িয়া , পূর্ব মেদিনীপুর। মুদ্রণ - অমরাবতী প্রেস। প্রতাপ দীঘি,  পূর্ব মেদিনীপুর। বার্ষিক মূল্য - ৮০ টাকা। নবপর্যায় পটাশপুর দর্পণের প্রথম সংখ্যা - বরেন্দ্রনাথ স্মরণ সংখ্যা। 
        পত্রিকার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন - বাদল কুমার দিন্ডা,  গোলোকেশ নন্দ গোস্বামী, ধরণীধর গায়েন, পরমেশ্বর মহাপাত্র, বিনোদবিহারী জানা, প্রভাত কুমার চন্দ প্রমূখ। 
       সম্পাদক ছিলেন - প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠী, মন্মথনাথ দাস । 
              মাননীয় মন্মথবাবু সময়কালে পত্রিকাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল এলাকার মানুষজনের কাছে। ছাত্র-যুব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠেছিল মাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন ধরনের খবরা খবর নিয়ে। সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার নানাবিধ ধারা সবিস্তারে উল্লিখিত হতো। পত্রিকার পাঠক সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল তেমনি মন্মথ বাবুর প্রেরণায় তরুণ ছাত্র ছাত্রীরা লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সবদিক থেকে পত্রিকাটির গুরুত্ব অপরিসীম।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
  ২। খেজুরী থানা 
#################################

                          ** খেজুরি দর্পণ **
হুগলি নদীর মোহনায় আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে,  নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে দুই                
বন্দর গড়ে ওঠে। নিচু অচাষযোগ্য জমিতে প্রায়  লবণ জলের জোয়ার-ভাটা খেলে বল , প্রাচীন  এই জায়গা " মালছি ঝিটা নামে  পরিচিত ছিল। পরে নানান সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝাা ক্ষয়ক্ষতি সামলে হিজলি ও খেজুরী বন্দর পরাধীন ভারতবর্ষের অন্যতম বাণিজ্য বন্দর হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে নানান বিদেশিদের আগমন, জনজাতির বসত গড়ে ওঠা ,  চাষবাস,  ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে থাকে। সুলতানী আমলে তাাঁঁজ খাঁ রাজত্ব হিজরী বন্দরের গতি প্রকৃতি পাল্টে। মসনদ-ই-আলা নাম নিয়ে এই বন্দর গড়ে ওঠে। দুই বন্দর এর মাঝে প্রবাহিত কাউখালী নদী ধীরে ধীরে মজে যায়। হিজলি ও খেজুরি একত্রে মিলিত হয়ে অধুনা খেজুরি থানা গঠিত। দীর্ঘদিন এই প্রাচীন জনপদ সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় অবদান রেখেছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলন , ৪২ এর আন্দোলন প্রভৃতিতে পথ দেখিয়েছে। মোট ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দুটি ব্ল্্ক্ নিয়ে এই জনপদের নানান সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক খবরা-খবর সম্মিলিত একটি পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১লা বৈশাখ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দে। সম্পাদনাার দায়িত্বে প্রখ্যাত রবীন্দ্রর গবেষক ও সাহিত্যিক , শিক্ষক ড. প্রবাল কান্তি হাজরা, দেউলপোতা, খেজুরী , পূর্ব মেদিনীপুর। প্রকাশক শ্রী সুব্রত কুমার মাঝি। কামারদাা।  খেজুরী।  পূর্ব মেদিনীপুর। মাসিক এই পত্রিকা প্রতি বাংলা মাসের ১লা প্রকাশিত হয়। ১২/১৬ পৃষ্ঠা জুড়ে। মূল্য  - ৫ টাকা. পত্রিকা প্রকাশের সহযোগী যারাা আছেন -
     মুদ্রণের দায়িত্ব ও পত্রিকার স্বত্বাধিকারসহ ঠিকানা -
  বিশেষ করে প্রতিমাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যারা অবদান রেখেছেন , তাদের যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, এমনি বিশেষ বিশেষ দিন সম্পর্কিত লেখাও ছাপা হয়। শুধুমাত্র খেজুরীর নানান বিষয়, নানান দিক তুলে ধরা,  এই পত্রিকার অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। দীর্ঘ চার বছরে একটিমাত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে - খেজুরীর বিশেষ লোকশিল্প ও শিল্পী সংখ্যা।
খেজুরীর নানান গ্রামের কথা, প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন, আঞ্চলিক শব্দ, খেজুরী নিয়ে কুইজ, খেজুরীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, খেজুরীর দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে খেজুরী,  খেজুরীতে বিদেশিদের আগমন, খেজুরীর স্বাধীনতা সংগ্রামী, খেজুরীর গুণী মানুষ, খেজুরীর সাহিত্য সংস্কৃতির নানান খবরা-খবর, খেজুরীর উৎসব-অনুষ্ঠান মেলা পার্বণ, খেজুরীর লৌকিক দেবদেবী, খেজুরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেজুরীর গবেষক, খেজুরীতে অনুষ্ঠিত বইমেলা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিমাসে। খেজুরীবাসীর কাছে এই পত্রিকা যেন সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যতম সংবাদমাধ্যম। গ্রাহক সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। নানান বিষয় নিয়ে খেজুরীকে জানার তে আগ্রহ ছাত্র-যুব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলের আগামীতে আরও বেড়ে উঠবে এই আশা রাখি।খেজুরীর আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস যেভাবে এই পত্রিকাটি সুন্দরভাবে প্রকাশ করে চলেছে,  আগামী দিনে খেজুরীর অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে - এই বিশ্বাস রাখি।

=========|||||||||=======||||||||==========

Sunday, 26 July 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
অপরিণত ব্যক্তি বৈভবে কালিদাস
(সংস্কৃত সাহিত্য)
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆Doinik Sabder Methopath
Vol - 81.  Dt - 27.7.2020
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
*****************************************
" হে মোর চিত্ত ,পূণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে-
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে
হেথায় দাঁড়ায়ে দু'বাহু বাড়ায়ে 
নমি- নরদেবতারে 
উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।।"
                        ( ভারততীর্থ ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

" ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম। আমরা রয়েছি সেই সূর্যের দেশে।" পূতপবিত্র ভারত পূর্ণ্যভূমিতে  যুগে যুগে মহান মানবাত্মার জন্ম হয়েছে। যারা  গৌরবের সঙ্গে আপন কীর্তিকে স্বাক্ষরিত করেছেন মহানুভবতার সঙ্গে। সাহিত্য-সংস্কৃতি ন্যায়-নীতি - কাব্য- দর্শন -ব্যাকরণ বিবিধ ধারায়। আর প্রত্যেক জাতির সভ্যতা প্রকাশ পেয়েছে সাহিত্যের ধারায়। যে জাতির সাহিত্য যত প্রাচীন,  তার সভ্যতা ততদিনের। য়ুরোপীয় জাতি যখন ওক বৃক্ষের বল্কল পরিধান করে পর্বতে কান্তারে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছে , তখন ভারতবর্ষ , যে প্রাচীন সভ্যতার শীর্ষদেশে আরূহ হয়ে নিজ গৌরব  বিস্তার করে চলেছে ; একথা অবিসংবাদিত সত্য । আবার একথাও সত্য যে রাষ্ট্রে সুদীর্ঘকাল শান্তি প্রতিষ্ঠা না থাকলে সাহিত্য সৃষ্টি,  কবি-সাহিত্যিকদের আবির্ভাব কখনো সম্ভব নয় । প্রাচীন গুপ্ত বংশের রাজা বিক্রমাদিত্যের বিদ্বৎ পরিষদ নবরত্ন খচিত মনিমুক্তায় বিভূষিত, তার প্রমান।  সেই নবরত্নের অন্যতম রত্ন ভারত গৌরব মহাকবি কালিদাস।

ধ্রুপদী সাহিত্য,  সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম দুই ব্যক্তিত্ব বাল্মীকি ও ব্যাসের পরে তিনি যে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় কবি ও নাট্যকার , এ বিষয়ে প্রায় সকলেই নিঃসংশয়। যার আবির্ভাবের কাল বা সময় পর্ব এবং জন্মস্থান নিয়ে পন্ডিত মহলে বিতর্কর ঝড় এখনো রয়েছে । কিন্তু কিভাবে , কোনো মহাকবি - লোককবিতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠেন !  কি অনন্য পারম্পর্য্য ! তাঁকে নিয়ে গড়ে ওঠে  শত সহস্র কিংবদন্তি কালিদাস অথবা       " কালিদাস মিথ"  তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এখন  জেনে নিতে হবে ব্যক্তি কালিদাস , কেমন ছিলেন । আমরা প্রায় সকলেই জানি,  ভারত গৌরব কালিদাস বিদূষিণী রাজকন্যা কাছে প্রত্যাখ্যাত,  অপমানিত হওয়ার পর পরিণত ব্যক্তি মানুষ হয়ে ওঠার সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন। কারণ তিনি রাজকন্যাকে অন্তর থেকে  ভালোবেসে ছিলেন। অন্তঃকরণে সেই অপমান শুধু মর্মস্পর্শী নয় , হৃদয়বিদারক ও।
  আজকের আলোচনা ঠিক তার পূর্বের ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা। যা   তাঁর ব্যক্তিত্বের অপরিণত রূপ বলে মনে হয়। আলোচনার নামকরণ সেই দিক থেকে প্রদত্ত ।

জন্ম : 
কালিদাসের জন্মের সময়কাল সম্পর্কে পণ্ডিতমহলে মতভেদ আছে। একদল বলছেন - আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতক । কারণ তাঁর অন্যতম রচিত নাটক "মালবিকাগ্নিমিত্রম্ " এর নায়ক অগ্নিমিত্র ছিলেন পুষ্যমিত্র শৃঙ্গের পুত্র।
 শৃঙ্গবংশীয় রাজাবংশের রাজত্বকাল ছিল , খ্রিস্টপূর্ব - ১৮৪ - ১৪৯  অব্দ। রাজা অগ্নিমিত্রের সম্মানার্থে নাটকটি রচিত।আবার একদল বলেন- খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতক থেকে ৬ ষ্ঠ শতকের মধ্যে তাঁর জন্ম। কারণ তাঁর রচিত অন্যতম নাটক "বিক্রমোর্বশীয়" এর নায়ক বিক্রমাদিত্য, উজ্জয়িনীর গুপ্তবংশের রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তথা বিক্রমাদিত্য। ঐ রাজসভায় নবরত্নের মধ্যে কালিদাস অন্যতম ছিলেন।  সেই বংশের রাজত্বকাল -  খ্রিষ্টীয় ৩৭৬- ৪১৪ অব্দ । এইসব বিতর্কের মীমাংসায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তব্য‌ই প্রণিধানযোগ্য - 
"হায়রে,  কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল , পণ্ডিতেরা বিবাদ করে লয়ে তারিখ সাল।"
( সেকাল,  ক্ষণিকা)
নানান বর্ণিত তথ্যের ভিত্তিতে আনুমানিক  খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতক থেকে  খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের কোনো এক সময়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ব্যক্তি পরিচয় :
পিতা সদাশিব মিশ্র। ভৃগুগোত্রসম্ভূত বংশজাত। প্রাচীন উজ্জয়িনীর নিকটবর্তী পৌণ্ড্রগ্রামে তাঁর  জন্ম ( এ নিয়ে ও মতভেদ আছে )। পিতা পণ্ডিত প্রবর সাত্মিক মানুষ ছিলেন। প্রত্যহ কূলদেবী  মা সরস্বতীর পূজাহ্নিক সেরে জল গ্রহণ করতেন।  এমন পণ্ডিতবংশের ছেলে স্বভাব চরিত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন।
বাল্যকাল :
" নাই তাই খাচ্ছো,থাকলে কোথা পেতে 
কহেন কবি কালিদাস পথে যেতে যেতে। "
বহুল প্রচলিত এই একটি ছড়া,  প্রাচীনকাল থেকে লোক মুখে মুখে উচ্চারিত। কিন্তু কবি কালিদাস এমন করে পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন কেন ? এর উত্তর সকলের বোধগম্য নয় বা না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি তাঁর বাল্যকালের দিকে তাকাই , তাহলে দেখতে পাব জীবনের কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি পথে পথেই দিন কাটিয়েছেন। তাঁর আচার - ব্যবহারে  ও অত্যাচারে  ভদ্রাদ্র সকল লোকই অতিষ্ঠ ছিলেন। যেমন - গ্রামের কারোর গাছে অসময়ে আমের মুকুল নষ্ট করা,  ক্ষেতের পাকা শস্যাদিসহ ফসল গরুতে খাইয়ে দেওয়া, দুগ্ধবতী গাই গরুর দুধ বাছুরকে পান করিয়ে দেওয়া, পাকা পেঁপের গাছকে কেটে ফেলা প্রভৃতি নানাবিধ নষ্ট , ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে নিজেকে সারাদিন ব্যপ্ত রাখা  যেন তাঁর খুব আনন্দ এবং উৎসাহের বিষয় ছিল। এই সমস্ত কর্ম যে তিনি একা  সম্পাদন করতেন তা নয় , রীতিমত একটি দল ছিল সেই দলে তিনি নেতৃত্ব দিতেন। গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে পিতার কাছে নালিশ করতেন পিতা কিছুতেই পুত্রক  এ বিষয় থেকে নিবৃত্ত করতে পারতেন না।
কালিদাস যথাসময়ে পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিল কিন্তু সেখানে কখনো তাকে দেখতে পাওয়া যায়নি যদি কোনদিন দেখা যেত সেদিন গুরুমহাশয় " তদ্দিনং দুর্দ্দিনং মন্যে " মনে করে ইস্ট দেবতকে স্মরণ করতেন
 কারণ সেদিন পাঠশালায় অপর ছাত্ররা পড়াতো করত না , অধিকন্তু অনেক ছাত্র প্রহৃত হতো, তার হাতে। গুরুমহাশয় ভয় তাকে বিশেষ কিছুু বলতেেন না কারণ কালিদাসের পিতা এই পাঠশালার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। আবার যেদিন গুরুমহাশয় অতিষ্ঠ হয়ে তাকে প্রহার দিতেন সেই দিন এমন চিৎকার করতেন যে লোকে মনে করত বিশেষ কিছু  ঘটেছে। পুত্রের এই দুর্দান্ত আচরণে পিতা মনে মনে রাগ করলে ও 
মিষ্টি কথায় , পরে তিরস্কারে আরো পরে প্রহার করে লেখাপড়ায় মন সংযোগ করতে বাধ্য করতেন। কিন্তু শেষ চেষ্টা করেও কোনমতে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করাতে ব্যর্থ হতেন। একমাত্রর ভরসা হিসেবে - কূলদেবী মা সরস্বতী মায়ের কাছে আকূল প্রার্থনা করতেন। " মা! এ বংশ তোমার কৃপা আশ্রিত । এই বংশে - আমার কোন অপরাধে - এমন মূর্খ পুত্র জন্মগ্রহণ করিল ! কৃপা করো মা,  কৃপা করো। আমার মুখ রক্ষা করো। আমার পূর্বপুরুষের গৌরব অক্ষুন্ন রাখো। " ১৪ বছর বয়সে কালিদাস পিতৃহারা হলেন।  কিছুদিনের জন্য স্থির হলেন। ৮  বছর বয়সে যথাবিহিত নিয়ম মেনে তাঁর উপনয়ন কর্ম সম্পন্ন হয়েছে। ফলে গ্রামীণ সমস্ত যজমান ও জমিদার তাকে বললেন  " এতদিন যা যা করেছ,  তা শোভা পেয়েছে,  এখন কর্তা স্বর্গীয় হয়েছেন। তোমাকেই সংসার চালাতে হবে। গ্রামের সকলেই তোমার যজমান। এক বছর কালাশৌচ এর সময় তুমি ক্রিয়াকর্ম সব কণ্ঠস্থ করো,  তাহা হলে তোমার সংসার সচ্ছন্দে চলে যাবে  । " কিন্তু এসব কথাতে ও কোন কাজ হয়নি।
কালিদাস অতিশয় মাতৃভক্ত ছিলেন। মায়ের আদর যত্নে বড় হয়ে অনেক কথাই শুনতেন। আবার অবাধ্য‌ও হতেন। মায়ের কথায় কিছুটা সময় স্থির হলেও পরক্ষণে আবার আগের মতই নানান উপদ্রব শুরু করতেন। মায়ের কথার উত্তরে কালিদাস এটুকুই বলতেন - " আজ হইতে পাঠশালায় যাইয়া লেখাপড়াই করিব কিন্তু পথে বাহির হইয়া আর সে কথা মনে থাকিত না , পাঠশালাগামী সতীর্থকে ভুলাইয়া লইয়া ভাঙা শিবমন্দিরে বা নির্জন জলাশয় তীরে খেলায় মত্ত হইতাম ।" এদিকে সংসার আর চলে না। আয়ের উপায় নেই। ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এর ঘরে সঞ্চয় বলে কিছু নেই। চেয়ে চিনতে দুবেলা শাকান্ন সংস্থান করতেন মা। ঘরে অন্ন নেই, চালে খড় নেই তাতে কালিদাসের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, তিনি যেমন ছিলেন তেমনই। 
জীবনের একটি সময় এলো যখন কালিদাস অতিশয় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন বিবাহের জন্য। কিন্তু এরূপ মূর্খ,  দুর্দান্ত গন্ডগোলে কাজকর্মহীন ছেলেকে কন্যা সম্প্রদান করবে কে ! মায়ের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। মা দেখলেনেএই সুযোগ , বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে ছেলেকে সংসারমুখী করতে হবে। তাই বললেন " কালিদাস , তুইতো বিবাহের জন্য ব্যস্ত হয়েছিস, কিন্তু সংসারের অভাবের দিকে তো কোন রূপ দৃষ্টি নাই। তুই যদি সংসারের কাজে মনোনিবেশ করিস তাহলে আমি তোর বিবাহের চেষ্টা করিতে পারি।" কালিদাস মায়ের কথায় সাগ্রহে বললেন " তুমি যা বলিবে আমি তাই করিব।" মা বললেন - " তুই যদি কাঠ  আনিতে যাস, তাহা হইলে তোর বিবাহ নিশ্চিত।" কালিদাস মায়ের কথামতো কুঠার হাতে সেই প্রথম সংসারের কাজে কাঠ সংগ্রহ করতে নিকটবর্তী অরণ্যে গেলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক বড় গাছে শুকনো কাঠ দেখে কাটার জন্য গাছে উঠলেন ,যে ডাল কাটবেন সেই ডালের আগার বসেছেন।  এতোটাই মূর্খ তিনি। আসলে এই জাতীয় কাজ তিনি কখনো করেননি , অভিজ্ঞতাও জীবনে সঞ্চয় করেননি । বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে যা হয়। পরের ঘটনা স্বাভাবিক, আমাদের সকলের জানা। গৌড়ের দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজা মাণিকেশ্বর সিংহ। রাজার একমাত্র কন্যা বিদ্যানুরাগী। তাই তাঁর নাম বিদ্যাবতী কমলা। বাল্যকাল থেকে একমাত্র কন্যার ইচ্ছা অনুসারে তিনি সবকিছু সম্পন্ন করেছেন। কন্যাকে বিবাহ প্রস্তাবে রাজি করেছেন। বিদ্যাপতি কমলা পিতাকে শর্ত দিয়েছেন - " যে ব্যক্তি আমাকে বিচারে পরাজিত করিতে পারিবে আমি তাহাকেই বরমাল্য প্রদান করিব।শুধু মৌখিক বিচার কেন , যদি কেহ মৌণ বিচারে বা আকার ইঙ্গিত দ্বারা বিচার করিতে প্রবৃত্ত হন । তাহলে আমি তাহাতে প্রস্তুত আছি। " রাজ্যের অতিশয় পণ্ডিতেরা 
যখন রাজকন্যা বিদ্যাবতীর দ্বারা অপমানিত পরাজিত - তখন উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিরোধী দল গঠন করেন এবং মনে মনে সংকল্প করেন, কোন মহামূর্খের সঙ্গে রাজকন্যাকে বিবাহ দেবেন। পণ্ডিতেরা চারিদিকে সেই খোঁজ করছিলেন। বনে কালিদাসের সঙ্গে দেখা হয় - 
তাদের বিবেচনায় রাজকন্যার যথার্থ পাত্র হিসেবে, কালিদাসেই যোগ্য।  সেইমতো কালিদাস কে গাছ থেকে নামিয়ে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছে না তখন একজন প্রস্তাব দিলেন - রাঙা বউ দেব,  বিয়ে করবে? কালিদাসের ভাব বিপর্যয় ঘটলো সঙ্গে সঙ্গে সব কথায় রাজি হয় পণ্ডিতদের সঙ্গে বাসায় গেলেন। পণ্ডিতদের বিস্তর আলোচনা পর,  সিদ্ধান্ত হলো - কালিদাস মৌনভাবে রাজকন্যার সঙ্গে বিচারে যাবেন। রাজসভায় প্রবেশ মাত্র অপরাপর পণ্ডিতেরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানাবেন। পূর্ব কল্পিত সমস্ত পরিকল্পনার রুপায়ন হলো। কালিদাস কে রাজসভায় পণ্ডিতবেশে নিয়ে যাওয়া হল। রাজা সহ পণ্ডিতেরা দাঁড়িয়ে সম্মান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেন। রাজকন্যা তো অবাক। মনে মনে ভাবলেন  - বড় পন্ডিত মানুষ হবেন। আর কালিদাস প্রথম দর্শনে রাজকন্যাকে ভালোবেসে ফেললেন। ঘোষণা হল এই মহা পন্ডিত মৌন বিচারে প্রস্তুত আছেন। রাজকন্যা ও রাজি। কালিদাস উদ্ভিন্নযৌবনা নববসন্ত সমাগত প্রফুল্ল সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়ে দুই হাতের দুই তর্জনী উত্তোলন করে রাজকন্যার দুটি কর্ণভূষণকে নির্দেশিত করলেন। রাজকন্যা মনে করলেন ইনি দ্বৈতবাদ এর কথা বলছেন। তৎক্ষণাৎ তিনি একটি আঙ্গুল উদ্যত করে অদ্বৈতবাদ এর কথা বোঝালেন।  অমনি পন্ডিত মন্ডলী বিদ্রুপ করে উঠলেন । রাজকন্যা অপ্রতিভ হলেন। রাজকন্যার পরাজয়। শর্ত মেনে কালিদাসের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হল। পণ্ডিতেরা সাগ্রহে দেখতে চাইলেন,  উভয়ের প্রথম সাক্ষাৎ। বিবাহিত কালিদাসের ফুলশয্যা। রাজবাড়ী বিচিত্র পুষ্প সমাহারে সজ্জিত পুষ্পের সুরভি সৌরভে আমোদিত ফুলশয্যার 
কক্ষ। বিধাতার কি বিচিত্র লীলা ! একদিকে মহামূর্খ কালিদাস অপরদিকে রাজকন্যা দীর্ঘসময় মৌনব্রত। ধৈর্যের সীমা পরিসীমা উভয়ের যেন আর সয় না। রাজকন্যা ভাবছেন - উনি কথা বলছেন না কেন,!  উনার তো মৌনব্রত শেষ হয়েছে। কালিদাস ভাবছেন-  কথা বলতে গিয়ে যদি তাঁর সব কিছু ধরা পড়ে যায়। অবশেষে বিধাতা যেন উপায় করে দিলেন ! অদূরে একটি উষ্ট্র ডেকে ওঠায়,  রাজকন্যা ভয় পেলেন। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কালিদাস কে জিজ্ঞাসা করলেন- ওটা কি ডাকিতেছে? কালিদাস  নীরব। পুনরায় রাজকন্যা বিস্মিত হয়ে বললেন। তবুও নীরব। অবশেষে নিরুপায় কালিদাস প্রথম কথা বললেন - উট্র। বিস্ময় ব্যাকুল চিত্তে রাজকন্যা আবার জিজ্ঞাসা করলেন । উত্তর এল - উষ্ট। রাজকন্যা সব বুঝতে পেরে নিজের প্রতি নিজের আক্রোশে নীরব হলেন।
" উষ্ট্রে লুম্পতি রং বা  জং বা 
তস্মৈ  দত্তা নিবিড়নিতম্বা !! "
পাশে থেকে বিদ্রুপ বিকট হাসি। পরক্ষণে সমস্ত নীরব। রাজকন্যা বুঝতে পারলেন হীন প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। কালিদাসের সবকিছু সত্য পরিচয় জেনে রাজকন্যা নিজেকে ক্ষমা করতে পারলেন না। উদ্ধত কণ্ঠে বললেন- " তুমি দূর হও ".
রাজকন্যা গভীর অনুতাপে কাঁদতে লাগলেন পাশাপাশি কালিদাস‌ও বিস্তর কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আর বললেন - আমি তোমায় বড় ভালোবাসি। আমি মূর্খ। তুমি আমাকে শিক্ষা দিয়া তোমার উপযুক্ত করিয়া লও। তুমি দয়া করো।" উত্তরে রাজকন্যা বললেন " তুমি যাও সরস্বতী দেবীর আরাধনা করো। যদি তাহার প্রসাদ লাভ করিতে পারো। তবেই ইহজন্মে তোমায় আমায় মিলন সম্ভব হইবে। নচেৎ নয়।" পিতা বলতেন - সরস্বতীর আরাধনা করো , একমাত্র ভালোবাসার পাত্রী রাজকন্যা ও বললেন - সরস্বতীর মায়ের আরাধনা করো। কালিদাসের মনে বিষয়টি গুরুত্ব পেল। মনে মনে ভাবলেন রাজকন্যার চোখের জল ,  রাজকন্যার জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া - এসবের জন্য তাঁর কৃতকর্ম দায়ী। তীব্র অপমানে অপমানিত কালিদাস বিস্মিত,  হতবাক হয়ে অপরিণত মনোভাব থেকে পরিণত মনোভাবের সূচনা বিন্দুতে এলেন। এভাবেই জীবনে কোন গভীরতর আঘাত‌ই পারে জীবনের মোড় পাল্টে দিতে, জীবনে সম্মান স্বীকৃতি এনে দিতে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত -  মহাকবি কালিদাস। 
                ড. বিষ্ণু পদ জানা।

তথ্যঋণ - ১) সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, 
                        ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।  
২) মহাকবি কালিদাসের ইতিহাস - সতীপতি ভট্টাচার্য, সম্পাদনায় - বারিদবরণ ঘোষ।৩) উইকিপিডিয়া।
################################