Sunday, 17 July 2022

শুভ প্রয়াণ দিবস। শুভো ঠাকুর। Vol -798. Dt - 17.07.2022. ৩২ আষাঢ় ১৪২৯. রবিবার। The bolgger in litareture e-magazine


সুভো ঠাকুর
 


পোয়েট্‌ টেগর হন কে তোমার,
জোড়াসাঁকোতেই থাক?
বাবার খুড়ো যে হন শুনিয়াছি,
মোর কেহ হয় নাক। ....।’

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জুলাই ৭৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।

 জন্ম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। তবে ঠাকুরবাড়ির খ্যাতি ও ঐতিহ্যের বাতাবরণে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন 'বিদ্রোহী'। ছোটবেলা থেকেই তার বিদ্রোহ ছিল নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে, উপনিষৎ পাঠরূপ ভগবৎ-ভজনা তথা সনাতন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, চলতি সাহিত্য এবং চিত্রকলার বিরুদ্ধে। তারই লেখার সে প্রকাশ ছিল এরকম -

'পয়েট টেগোর হন কে তোমার, জোড়াসাঁকোতেই থাকো?' বাবার খুড়ো যে হন শুনিয়াছি, মোর কেহ হয় নাকো।"

পরিবারের বিরুদ্ধে আজীবন সেই কুরুচিকর ক্ষোভ ছিল তার। শেষ জীবনে লেখা স্মৃতিকথা "বিস্মৃতিচারণা"-য়ও প্রায় সেই মেজাজই প্রকাশ পেয়েছে। নিজের বেশভূষা, আদবকায়দা, ছবি আঁকা, সাহিত্য রচনা, প্রতি ক্ষেত্রেই ফুটে উঠেছে প্রথা-ভাঙা স্বাতন্ত্র্যতা। স্বভাবতই ঠাকুরবাড়ির নির্ধারিত শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ করে আত্মীয় স্বজনের কাছে তিনি ঠাকুরবাড়ির 'কালাপাহাড়', 'বোহেমিয়ান', ইত্যাদি নামে পরিচিত হয়েছিলেন। পৈতৃক সম্পত্তির অংশ নিয়ে ঠাকুরবাড়ি ছেড়েছেন ছাব্বিশ বৎসর বয়সে।  সাহিত্যচর্চা, বন্ধুপোষণ ও নানান বিচিত্র খেয়ালের বেশ কয়েক লক্ষ টাকা নিঃশেষ করে দিয়েও আক্ষেপ করেন নি। তবে উদীয়মান শিল্পী হিসাবে কলকাতার তৎকালীন সরকারি আর্ট স্কুলে দুবছর পড়াশোনা করে শৈল্পিক দক্ষতা অর্জনে লন্ডনে যান এবং কয়েক বছর কাটিয়ে ফিরে আসেন।

শিল্প ও সাহিত্যকর্ম

ছবি আঁকায় পূর্ব আর পশ্চিমের স্টাইল মিলিয়ে নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বেঙ্গল স্কুল-এর শিল্পচিন্তা থেকে দূরে সরে এসে নীরদ মজুমদার প্রদোষ দাশগুপ্ত, গোপাল ঘোষ, পরিতোষ সেন, কমলা দাশগুপ্ত , রথীন মৈত্র, প্রাণকৃষ্ণ পাল প্রমুখ তরুণ শিল্পীদের নিয়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেছিলেন ক্যালকাটা গ্রুপ। দক্ষ কলাকুশলী শিল্পী বংশীচন্দ্র সেনগুপ্তকে তিনিই আবিষ্কার করেন কাশ্মীরে। আর্ট কলেজে পড়ার সময় 'চতুরঙ্গ' পত্রিকার চার-পাঁচ সংখ্যা তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে তার সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা 'ভবিষ্যৎ' ও সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা 'অগ্রগতি' তে তার নিজস্ব ধারার দুঃসাহসিক লেখা, ছবি, পরিকল্পনা ও অঙ্গসজ্জার অভিনবত্ব ও চমকপ্রদ ছিল। তবে সাময়িকপত্রের ইতিহাসে তার শ্রেষ্ঠ অবদান শিল্পকলা সংক্রান্ত পত্রিকা " সুন্দরম"। কবি হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। কবিতায় 'অগ্রমিল ছন্দ' নামে এক নতুন ছন্দ করেছিলেন। অনেক সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে ধরে নিয়ে লেখা শুরু করতেন। কারুশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে তিনি এক বিশিষ্ট কারুশিল্প সংগ্রাহক হয়ছিলেন। ] অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকা জিনিস ছবি, মূর্তি, পট, পাটা থেকে পুরোনো আসবাব, ঝাড় লণ্ঠন, দোয়াত-কলম, দুষ্প্রাপ্য বিরল ইঙ্ক পট, মুঘল আমলের হুকা সিগারেট, চুরুটের পাইপ, পুরোনো মানচিত্র, মনীষীদের চিঠি — এরকম অদ্ভুত সব সংগ্রহে সমৃদ্ধ ছিল তার বাড়ি। কারুশিল্পের প্রতি আকর্ষণ ও অভিজ্ঞতার জন্য তিনি ভারত সরকার তাঁকে অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডিক্র্যাফস বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা নিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করতে পারেননি। ] এবং এক সময় তাঁকে ও তার শিল্প নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে - 'আর্ট অব সুভো ঠাকুর' সংকলন গ্রন্থে। শান্তি চৌধুরী 'দ্য লোনলি পিলগ্রিম' নামে তার এক জীবনীচিত্র তৈরি করেন। 

 রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-

মায়ামৃগ
নীলরক্ত লাল হয়ে গেছে
অলাতচক্র
অতন্দ্র আলতামিরা
প্যানসি ও পিকো । 

=={{{{{{{{{={======={{{=([{{{=========[

Friday, 15 July 2022

শুভ প্রয়াণ দিবস। জার্মান নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক হাইনিরিখ বয়েল।(Heinrich Böll) Vol -797. Dt - 16.07.2022. ২৯ আষাঢ়,১৪২৯. শনিবার। The bolgger in litareture e-magazine

Heinrich Böll,
 in full Heinrich Theodor Böll, 

মৃত্যু 16 জুলাই, 1985, Bornheim-Merten, কোলোনের কাছে, পশ্চিম জার্মানি. 

German writer, winner of the Nobel Prize for Literature in 1972. Böll’s ironic novels on the travails of German life during and after World War II capture the changing psychology of the German nation.


একজন মন্ত্রিপরিষদ নির্মাতার ছেলে, বয়েল 1937 সালে হাইস্কুল থেকে স্নাতক হন। তাকে 1938 সালে বাধ্যতামূলক শ্রম পরিষেবাতে ডাকা হয়েছিল এবং তারপরে রাশিয়ান এবং অন্যান্য ফ্রন্টে যুদ্ধ করে একটি ব্যক্তিগত এবং তারপরে জার্মান সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল হিসাবে ছয় বছর কাজ করেছিলেন। 

Böll was born 21 December 1917  
in Cologne, Germany, to a Roman Catholic and pacifist family that later opposed the rise of Nazism. Böll refused to join the Hitler Youth during the 1930s.He was apprenticed to a bookseller before studying German studies and classics at the University of Cologne.

Conscripted into the Wehrmacht, he served in Poland, France, Romania, Hungary and the Soviet Union.

In 1942, Böll married Annemarie Cech, with whom he had three sons; she later collaborated with him on a number of different translations into German of English language literature.

During his war service, Böll was wounded four times and contracted typhoid. He was captured by US Army soldiers in April 1945 and sent to a prisoner-of-war camp.

After the war he returned to Cologne and began working in his family's cabinet shop and, for one year, worked in a municipal statistical bureau, an experience which he did not enjoy and which he left in order to take the risk of becoming a writer instead.

Böll became a full-time writer at the age of 30. His first novel, Der Zug war pünktlich (The Train Was on Time), was published in 1949. He was invited to the 1949 meeting of the Group 47 circle of German authors and his work was deemed to be the best presented in 1951.

Many other novels, short stories, radio plays and essay collections followed.
বোলের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা - আহত হওয়া, ত্যাগ করা, যুদ্ধবন্দী হওয়া - একজন লেখকের শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল যিনি "একজন সৈনিক হওয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতি এবং যুদ্ধটি হেরে যেতে চান।" যুদ্ধের পর তিনি তাঁর জন্মস্থান কোলনে বসতি স্থাপন করেন।

বোলের প্রথম দিকের সাফল্য ছোটগল্প নিয়ে এসেছিল, যার প্রথমটি 1947 সালে প্রকাশিত হয়েছিল; এগুলি পরে Wanderer, kommst du nach Spa (1950; Traveller, If You Come to Spa)-এ সংগ্রহ করা । তাঁর প্রথম উপন্যাসে ডের জুগ ওয়ার পাঙ্ক্ক্লিচ (1949; দ্য ট্রেন ওয়াজ অন টাইম) এবং ও ওয়ার্স্ট ডু অ্যাডাম? 
(1951; অ্যাডাম, কোথায় তুমি?), তিনি সৈন্যদের জীবনের করুণতা এবং হতাশার বর্ণনা দিয়েছেন। 
বাস্তবতার অস্বস্তি খুঁজে পাওয়া যায় একজন মেকানিকের জীবনে Das Brot der frühen Jahre (1955; The Bread of Our Early Years) এবং Billard um halb zehn (1959; Billiards at Half-Past Nine) এর স্থপতিদের পরিবারে। 
যা, তার অভ্যন্তরীণ একক এবং ফ্ল্যাশব্যাক সহ, তার সবচেয়ে জটিল উপন্যাস। 
জনপ্রিয় Ansichten eines Clowns (1963; The Clown), নায়কের মদ্যপানের মাধ্যমে অবনতি ঘটে একজন ভাল বেতনের বিনোদনকারী থেকে ভিক্ষাকারী রাস্তার সঙ্গীতশিল্পীতে।


বোলের অন্যান্য লেখার মধ্যে রয়েছে Und sagte kein einziges Wort (1953; Acquainted with the Night) এবং Ende einer Dienstfahrt (1966; End of a Mission), যেখানে একজন পিতা ও পুত্রের বিচার শহরবাসীর চরিত্রকে প্রকাশ করে। 
তাঁর দীর্ঘতম উপন্যাস, Gruppenbild mit Dame (1971; Group Portrait with Lady), বোল বিশ্বযুদ্ধ থেকে 1970-এর দশক পর্যন্ত জার্মান জীবনের একটি প্যানোরামা উপস্থাপন করেছেন এমন অনেক লোকের বিবরণের মাধ্যমে যাঁরা তাঁর মধ্যবয়সী জীবনকে চিত্রিত করেছেন " 
মহিলা," লেনি ফিফার। 
Die verlorene Ehre der Katharina Blum (1974; The Lost Honor of Katharina Blum) আধুনিক সাংবাদিকতা নীতির পাশাপাশি সমসাময়িক জার্মানির মূল্যবোধকে আক্রমণ করেছে। জুংগেন ব্লস ওয়ার্ডেন কি সোল আউস ডেম ছিল?; oder, Irgendwas mit Büchern (1981; What’s to Become of the Boy?; or, Something to Do with Books) হল 1933-37 সময়ের একটি স্মৃতিকথা। 
ডার এঙ্গেল স্কুইগ (দ্য সাইলেন্ট এঞ্জেল) উপন্যাসটি 1950 সালে লেখা হয়েছিল কিন্তু প্রথম মরণোত্তর 1992 সালে প্রকাশিত হয়েছিল; 
এতে একজন জার্মান সৈনিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কোলোনে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। ডের ব্লাসে হুন্ড (1995; দ্য ম্যাড ডগ) পূর্বে অপ্রকাশিত ছোট গল্প সংগ্রহ করেছিল, যখন আরেকটি প্রাথমিক উপন্যাস, ক্রুজ ওহনে লিবে ("ক্রস উইদাউট লাভ"), 2003 সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল.

Works :

(1949) Der Zug war pünktlich (The Train Was on Time) – novel
(1950) Wanderer, kommst du nach Spa… – short story
(1951) Die schwarzen Schafe (Black Sheep) – short story
(1951) Nicht nur zur Weihnachtszeit (Christmas Not Just Once a Year) – short story
(1951) Wo warst du, Adam? (And where were you, Adam?) – novel
(1952) Die Waage der Baleks (The Balek Scales) – short story
(1953) Und sagte kein einziges Wort (And Never Said a Word) – novel
(1954) Haus ohne Hüter (House without Guardians ; Tomorrow and Yesterday) – novel
(1955) Das Brot der frühen Jahre (The Bread of Those Early Years) – novel
(1957) Irisches Tagebuch (Irish Journal) – travel writing
(1957) Die Spurlosen (Missing Persons) – essays
(1958) Doktor Murkes gesammeltes Schweigen (Murke's Collected Silences, 1963) – short story
(1959) Billard um halb zehn (Billiards at Half-past Nine) – novel
(1962) Ein Schluck Erde (A Mouthful of Earth) – play
(1963) Ansichten eines Clowns (The Clown) – novel
(1963) Anekdote zur Senkung der Arbeitsmoral (Anecdote Concerning the Lowering of Productivity) – short story
(1964) Entfernung von der Truppe (Absent Without Leave) – two novellas
(1966) Ende einer Dienstfahrt (End of a Mission) – novel
(1971) Gruppenbild mit Dame (Group Portrait with Lady) – novel
(1974) Die verlorene Ehre der Katharina Blum (The Lost Honour of Katharina Blum) – novel
(1979) Du fährst zu oft nach Heidelberg und andere Erzählungen (You Go to Heidelberg Too Often) – short stories
(1979) Fürsorgliche Belagerung (The Safety Net) – novel
(1981) Was soll aus dem Jungen bloß werden? Oder: Irgendwas mit Büchern (What's to Become of the Boy?) – autobiography of Böll's school years 1933–1937
(1982) Vermintes Gelände
(1982, written 1948) Das Vermächtnis (A Soldier's Legacy) – novel
(1983) Die Verwundung und andere frühe Erzählungen (The Casualty) – unpublished stories from 1947–1952
Posthumous
(1985) Frauen vor Flusslandschaft (Women in a River Landscape)
(1986) The Stories of Heinrich Böll – U.S. release
(1992, written 1949/50) Der Engel schwieg (The Silent Angel) – novel
(1995) Der blasse Hund – unpublished stories from 1937 & 1946–1952
(2002, written 1946–1947) Kreuz ohne Liebe
(2004, written 1938) Am Rande der Kirche
(2011) The Collected Stories – reissues of translations, U.S. release
Translations
More than seventy translations of Annemarie and Heinrich Böll are listed in the bibliography published in 1995 by Werner Bellmann: works of Brendan Behan, Eilis Dillon, O. Henry, Paul Horgan, Bernard Malamud, J. D. Salinger, George Bernard Shaw et al.

Das harte Leben (The Hard Life, Brian O'Nolan), translated by Heinrich Böll, Hamburg, Nannen, 1966, 79. Illustrations by Patrick Swift.

Awards:

Böll was extremely successful and was lauded on a number of occasions. In 1953 he was awarded the Culture Prize of German Industry, the Southern German Radio Prize and the German Critics' Prize. In 1954 he received the prize of the Tribune de Paris. In 1955 he was given the French prize for the best foreign novel. In 1958 he gained the Eduard von der Heydt prize of the city of Wuppertal and the prize of the Bayerische Akademie der Schönen Künste (Bavarian Academy of Fine Arts). In 1959 he was given the Great Art Prize of the State of North-Rhine-Westphalia, the Literature Prize of the city of Cologne, and was elected to the Academy of Science and the Arts in Mainz.

In 1960 he became a member of the Bavarian Academy of Fine Arts and gained the Charles Veillon Prize.

In 1967 he was given the Georg Büchner Prize.

In 1972 he received the Nobel Prize for Literature "for his writing which through its combination of a broad perspective on his time and a sensitive skill in characterization has contributed to a renewal of German literature".

He was given a number of honorary awards up to his death, such as the membership of the American Academy of Arts and Letters in 1974, and the Ossietzky Medal of 1974 (the latter for his defence of and contribution to global human rights).

Böll was President of PEN International, the worldwide association of writers, from 1971 to 1973.

Böll was elected to the American Philosophical Society in 1983 and the American Academy of Arts and Sciences in 1984.

={{{{{{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}=

শুভ প্রয়াণ দিবস। বেঙ্গলি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা হেরাসিম লেবেদেফ। Vol -796. Dt -15.07.2022. ২৮ আষাঢ়,১৪২৯. শুক্রবার। The bolgger in litareture e-magazine


হেরাসিম লেবেদেফ

জুলাই ১৫, ১৮১৭সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি মারা যান। 

একজন রুশ অভিযাত্রী, ভাষাবিদ, অনুবাদক, সংগীতজ্ঞ এবং লেখক।এছাড়াও তিনি ছিলেন ভারতবিদ্যা বিষয়ের পণ্ডিত। এবং বেঙ্গলি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা। 

 জন্ম রাশিয়ার ইউক্রেনের এক যাজক পরিবারে। পিতা স্তেফান লিয়েবেদেফ এবং মাতা পারাস্কোভিয়া লিয়েবেদেফ। সংগীতে দক্ষতার জন্য তিনি যৌবনে এক রাজপুরুষের সংস্পর্শে আসেন এবং তার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে প্যারিস হয়ে লন্ডনে পৌঁছান। সেখানে তিনি ভারতীয় পণ্যসম্ভারে পূর্ণ দোকান দেখেন। এখান থেকেই এক যাত্রীবাহী জাহাজে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট মাদ্রাজ বর্তমানে চেন্নাই পৌঁছান। এখানকার মেয়র কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন এবং কয়েকটি আসরে সংগীত পরিবেশন করে কিছু অর্থ সংগ্রহ করেন। কিন্তু এখানে রক্ষণশীল সমাজে প্রবেশাধিকার না পেয়ে ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় আসেন। এই শহরের একমাত্র রুশ চিকিৎসকের সাহায্যে স্থানীয় সমাজে সংগীতজ্ঞরূপে প্রতিষ্ঠা পান। তার আসরের টিকিট মূল্য ছিল বারো টাকা। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য যন্ত্রে ভারতীয় সুর বাজিয়ে শোনান। 

২৫ নং ডোমতলায় ১৭৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর গেরাসিম লেবেদেফের বাংলা নাটক " সংবদল " - এর প্রথম প্রদর্শনীর বাংলা ভাষায় লেখা নাট্য বিজ্ঞাপন পত্র। এটিতে লেবেদেফের নিজের হাতে লেখা মন্তব্যও সন্নিবেশিত হয়েছে

প্রথম বাংলা নাটকের রচয়িতা ও পরিচালক গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেফ কলকাতায় "দ্য বেঙ্গলি থিয়েটার" নামে একটি থিয়েটার গড়ে তোলেন। ২৫ নম্বর ডোমতলায় (এজরা স্ট্রীট) একটি বাড়িতে গড়ে উঠে এই থিয়েটার। দ্য ডিজগুয়িজ (The disguise) এর অনুবাদে প্রথম অনুদিত বাংলা নাটকটির নাম "সংবদল"। এটি ১৭৯৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর প্রথম প্রদর্শিত হয়। এই সময় বিশিষ্ট ইংরেজদের জন্য মূল্যবান আসনের দু-টি থিয়েটার ছিল। লেবেডেফের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ইংরেজগণ প্রত্যক্ষভাবে জোসেফ ব্যাটেল নামে সিন পেন্টার ও মি হে নামে এক রাজকর্মচারীর সাহায্যে লেবেডেফের থিয়েটারে আগুন লাগিয়ে নষ্ট করে দেয়।

কলকাতায় থাকাকালীন তিনি পণ্ডিত গোলক নাথ দাসের নিকট এদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেন, বিশেষত বাংলা ও সংস্কৃত ভাষা ও ভারতচন্দ্র রায়ের কাব্যের সংস্পর্শে আসেন। এদেশে আসার আগেই অবশ্য তিনি কালিদাসের রচনার সাথে পরিচিত ছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলার ব্যাকরণ নিয়ে প্রথম চিন্তাভাবনা করেন বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তিনি ভালো ভায়োলিন বাজাতে পারতেন।

একজন ইংরেজ মহিলার সঙ্গে প্রণয় ও ব্যর্থতা লেবেডেফের জীবনের অন্যতম বিপর্যয়। ঋণের দায়ে তাঁকে আদালতে যেতে হয়। সবশেষে ব্রিটিশ কোম্পানির কর্তৃপক্ষ তাঁকে কলকাতা ত্যাগ করতে বাধ্য করে। শেষজীবনে স্বদেশে ফিরে পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেন। রুশদেশে ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচারের জন্য তিনি সম্রাটকে পত্র দিয়েছিলেন। 

তার জীবনী নিয়ে মামুনুর রশীদ লেবেদেফ নামের একটি নাটক রচনা করেছেন. 

লেবেডেফের নিত্য সঙ্গী ছিলেন গোলকনাথ দাস। তাঁরই সহযোগিতায় তিনি নাটকে মহিলা চরিত্রে বাঙালি অভিনেত্রী নিয়োগে সচেষ্ট হয়েছিলেন। সাহেবি থিয়েটারে ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমতী ব্রিস্টোর আবির্ভাবের পূর্বে পুরুষরাই স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করতেন। সুতরাং লেবেডেফের অভিনয়ে স্ত্রী লোকের ভূমিকায় স্ত্রীলোক গ্রহণ অবশ্যই অভিনয়ের একটি আকর্ষণীয় দিক। গোলকনাথ দাস শুধু বাঙালি অভিনেতা ও অভিনেত্রী সংগ্রহ করে দেননি—তিনি তাঁদের অভিনয়—শিক্ষাও দিয়েছিলেন। খিদিরপুর ডক অঞ্চলের বারবনিতারাই তখন অভিনেত্রীর ভূমিকা গ্রহণ করত। কিন্তু যাত্রা রসরসিক গোলকনাথ দাস, যারা তখন ঝুমুরগান গাইত, সারিগান, জারিগান গাইত এবং কীর্তনাদি গাইত তাদের মধ্যে থেকেই অভিনেত্রী নির্বাচন করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়।

লেবেডেফের ইচ্ছা ছিল শুধু কলকাতা নয়, গ্রামাঞ্চলেও তাঁর নাটকের অভিনয় করেন, এবং এইমর্মে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর এই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তাঁর অভিনয়ের জনপ্রিয়তায় ইংরেজি থিয়েটারের কর্তৃপক্ষেরা খুশি হতে পারেননি। তৎকালীন সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট বিলেতি থিয়েটারের কর্তৃপক্ষরা নানাভাবে তাঁরই ক্ষতিসাধন করতে চেষ্টা করেন। লেবেডেফ তাঁর অভিনয়ে জোসেফ ব্যাটল নামে একজন ইংরেজ দৃশ্যপট শিল্পীর সাহায্য লাভ করেছিলেন। কিন্তু জোসেফ বন্ধুভাবে তাঁর দলে যোগ দিলেও লেবেডেফের দল থেকে অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভাঙাতে এসেছিলেন। তাঁকে বন্ধুর বেশে এই শত্রুতা করতে পাঠিয়েছিলেন লেবেডেফের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী টমাস রোয়ার্থ। তাঁরই চক্রান্তে একে একে প্রায় সকলেই লেবেডেফের দল ছেড়ে চলে যায়। লেবেডেফ আইনের সাহায্য নিতে গিয়ে দেখেন যে টমাস রোয়ার্থের প্রভাবে কোনো আইনজীবীই তাঁকে সাহায্যে করতে অনিচ্ছুক। শেষে তিনি থিয়েটারের যাবতীয় সাজসরঞ্জাম বিক্রি করে দিয়ে লন্ডন হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।লণ্ডনে অবস্থানকালে তিনি Grammar of the Pure and Mixed East Indian Languages গ্রন্থটি প্রকাশ করেন

।১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

অবদান :

১। পরবর্তী বাংলা নাট্যশালার ধারাবাহিকতার সঙ্গে তাঁর অভিনয়ের স্পষ্ট যোগ না থাকলেও তৎকালীন যাত্রার ওপর তাঁর অভিনয় রীতি কিছু প্রভাব বিস্তার করেছিল। 

২। সামাজিক ও রসাত্মক বিষয় অবলম্বনের মধ্যে দিয়েই বাংলার নাট্যশালা যে একদিন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এ ইঙ্গিত তাঁর প্রচেষ্টায় আভাসিত হয়ে উঠেছিল।

৩। নাচ ও গান বাংলা নাট্যশালায় যে দীর্ঘকাল আধিপত্য বিস্তার করে আসছে তা লেবেডেফেরই অবদান। 

। যাত্রার মধ্যে দৃশ্যবিভাগ ও গর্ভাঙ্ক রচনার মূলেও লেবেডেফের নাটকের প্রভাবের কথা অনুমান করা হয়। 

৫। সর্বোপরি, বাংলা রঙ্গালয়ের আজ এই যে রমরমা ভাব তা মূলত লেবেডেফের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে একথা ভুললে চলবে না।

তই বলতে হয়, বাংলায় ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দর্শক থেকে যেসব যাত্রার অভিনয় হয়েছে, সেগুলি নানা বিষয়ে নৃতনত্বের জন্যে ‘নূতন যাত্রা’ নামে অভিহিত হয়েছে। লেবেডেফের যুগান্তকারী অভিনয়ের পরেই যাত্রার মধ্যে এইসব পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে,

‘The Disguise-এর বাংলা অনূদিত নাটকের অভিনয়-প্রভাবেই এই পরিবর্তন। অতএব তিনিই যে বাংলা রঙ্গমঞ্চের ক্ষেত্রে কিংবদন্তী পুরুষ সেকথা অত্যুক্তি নয়।



==============={{{{{{{{{}}}}}}}}}}}}}{{{{{{{{{

 




 


Wednesday, 13 July 2022

গ্রন্থালোচনা । শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত। শ্রীম । Vol -795. Dt -14.07.2022. ২৭ আষাঢ় ,১৪২৯. বৃহস্পতিবার। The blogger in literature e-magazine.

লেখকের শুভ জন্মদিনে পরম পবিত্র বইটি নিয়ে বিশেষ আলোচনা - 

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত


বইতে উনিশ শতকের হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথোপকথন ও কার্যকলাপের বিবরণী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কথামৃত-এর পাঁচটি খণ্ড যথাক্রমে ১৯০২, ১৯০৪, ১৯০৮, ১৯১০ ও ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়।

লেখক পরিচিতি

মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত । যিনি "শ্রীম" ছদ্মনামে রচনা করেন। তিনি  কলকাতার রিপন কলেজের অধ্যাপক। কলকাতার একাধিক স্কুলে তিনি শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৩ বছর বয়স থেকে তিনি ডায়েরি লিখতেন। ১৮৮২ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তার আলাপ হয়। রামকৃষ্ণের ব্যক্তিত্বে আকর্ষিত হয়ে মহেন্দ্রনাথ তার কথোপকথন ও কার্যকলাপের স্টেনোগ্রাফিক রেকর্ড রাখতে শুরু করেন নিজের ডায়েরিতে। 

এই রেকর্ড পরবর্তীকালে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত 

নামক বইয়ের আকার নেয়।প্রথম দিকে মহেন্দ্রনাথ যখন ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিলেন, তখন তার সেটি প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। রচনাপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, "বাড়ি ফেরার পর স্মৃতি থেকে সব কিছু লিখে রাখতাম। মাঝে মাঝে সারা রাতও জেগে থাকতে হত...মাঝে মাঝে টানা সাত দিন বসে থেকে লিখতে হত। গানগুলিকে স্মরণে আনতে হত, কোনক্রমে সেগুলি গাওয়া হয়েছিল, সেগুলিও মনে করতে হত, সমাধি ও অন্যান্য সব ঘটনার কথা মনে করতে হত।" কথামৃতের প্রতিটি পরিচ্ছেদে মহেন্দ্রনাথ তথ্যের পাশাপাশি সময় ও স্থানের উল্লেখ করেছেন। 

গ্রন্থ সম্পর্কিত:

"কথামৃত" শব্দটি বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থ ভাগবত পুরাণ-এর ১০।৩১।৯ সংখ্যক শ্লোক থেকে গৃহীত।

"কথামৃত-এর প্রথম খণ্ড (১৯০২) প্রকাশের আগে আ লিফ ফ্রম দ্য গসপেল অফ শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৯৭) নামে একটি ছোট ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসের মৃত্যুর পর তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে মহেন্দ্রনাথ নিজের ডায়েরিটি প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তিনি ভেবেছিলেন এর মাধ্যমে রামকৃষ্ণের চিন্তাভাবনার কথা সঠিকভাবে লোকসমক্ষে প্রচার করা যাবে। ডায়েরি প্রকাশের আগে তিনি সারদা দেবীর অনুমতিও নেন। ১৮৯৮ থেকে ১৯০২ সালের মধ্যে তার ডায়েরির অংশবিশেষ বঙ্গদর্শনউদ্‌বোধনহিন্দু পত্রিকাসাহিত্য পত্রিকাজন্মভূমি প্রভৃতি প্রথম সারির সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়। কিন্তু ‘কথামৃত’ শব্দটি প্রথমে ছিল না। তত্ত্বমঞ্জুরী পত্রিকায় নাম ছিল ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলামৃত’ পরে নাম হল ‘ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণপরমহংসের কথা’ ১৮৯৯ থেকে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতম্’। প্রথম চারটি খণ্ড যথাক্রমে ১৯০২, ১৯০৪, ১৯০৮ ও ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয়। মহেন্দ্রনাথের অসুস্থতার জন্য পঞ্চম খণ্ডটির প্রকাশ বিলম্বিত হয়। অবশেষে ১৯৩২ সালে পঞ্চম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়।১৯৩২ সালে মারা যাওয়ার আগে মহেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন ছয় বা সাতটি খণ্ড পর্যন্ত প্রকাশের পর তিনি গোটা বইটির বিষয়বস্তু কালানুক্রমিকভাবে সাজাবেন।

আলোচনা:

শ্রীম কথিত রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনের দিনপঞ্জি, কথোপকথন, ধর্মোপদেশের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ (১৮৮২ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ১৮৯৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের) যেমন বইটিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তেমনই সমকালীন বহু মনীষীর সঙ্গে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের বাক্যালাপ ও সাক্ষাতকারের বিবরণ, বহু ধর্মসঙ্গীত, পরমহংসদেব কথিত গল্প ও উপদেশাবলী বইটিকে অমরত্ব দিয়েছে।

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত (প্রথম ভাগ)

সূচিপত্র

উপক্রমণিকা - ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের সংক্ষিপ্ত চরিতামৃত

প্রথম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ

দ্বিতীয় খণ্ড - শ্রীযুক্ত কেশবচন্দ্র সেনের সহিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নৌকাবিহার,আনন্দ ও কথোপকথন

তৃতীয় খণ্ড - সিঁথি ব্রাহ্মসমাজ-দর্শন ও শ্রীযুক্ত শিবনাথ প্রভৃতি ব্রাহ্মভক্তদিগের সহিত কথোপকথন ও আনন্দ

চতুর্থ খণ্ড - শ্রীযুক্ত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও অন্যান্য ভক্তের প্রতি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ।

পঞ্চম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর-কালীবাড়িতে শ্রীযুক্ত অমৃত, শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য প্রভৃতি ব্রাহ্মভক্তের সঙ্গে কথোপকথন

ষষ্ঠ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর-কালীবাটীতে ভক্তসঙ্গে ব্রহ্মতত্ত্ব ও আদ্যাশক্তির বিষয়ে কথোপকথন — বিদ্যাসগর ও কেশব সেনের কথা।

সপ্তম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

অষ্টম খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সিঁদুরিয়াপটী ব্রাহ্মসমাজে আগমন ওশ্রীযুক্ত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রভৃতির সহিত কথোপকথন

নবম খণ্ড - শ্রীযুক্ত জয়গোপাল সেনের বাড়িতে শুভাগমন

দশম খণ্ড - শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রের বাগানে মহোৎসব

একাদশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পণ্ডিত দর্শন

দ্বাদশ খণ্ড - সিঁথির ব্রাহ্মসমাজ পুনর্বার দর্শন ও বিজয়কৃষ্ণ প্রভৃতি ব্রাহ্মভক্তদিগকে উপদেশ ও তাঁহাদের সহিত আনন্দ

ত্রয়োদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর ভক্তসঙ্গে

চতুর্দশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তগৃহে আগমন ও তাঁহার সহিত নরেন্দ্র, গিরিশ, বলরাম, চুনিলাল, লাটু, মাস্টার, নারায়ণ প্রভৃতি ভক্তের কথোপকথন ও আনন্দ 

পঞ্চদশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণের ঈশান, ডাক্তার সরকার, গিরিশ প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে শ্যামপুকুরের বাটীতে আনন্দ ও কথোপকথন

ষোড়শ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণের সহিত বিজয়কৃষ্ণ, নরেন্দ্র, মাস্টার, ডাক্তার প্রভৃতি ভক্তের কথোপকথন ও আনন্দ

সপ্তদশ খণ্ড - শ্যামপুকুর বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

অষ্টাদশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণ,নরেন্দ্র, গিরিশ ঘোষ,ডাক্তার সরকার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে কথোপকথন ও আনন্দ

পরিশিষ্ট - ১ - বরাহনগরের মঠ

পরিশিষ্ট - ২ - মাস্টার কে অশ্বিনী কুমারের চিঠি  ।

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত (দ্বিতীয় ভাগ)

সূচিপত্র 

প্রথম খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্রাদি অন্তরঙ্গ সঙ্গে

দ্বিতীয় খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব।

তৃতীয় খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে — শ্রীযুক্ত অধর সেনের দ্বিতীয় দর্শন

চতুর্থ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সুরেন্দ্র ভবনে উৎসব মন্দিরে

পঞ্চম খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতায় ভক্তমন্দিরে 

ষষ্ঠ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি মধ্যে

সপ্তম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে ভক্ত সঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ 

অষ্টম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে মন্দিরে ভক্ত সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

নবম খণ্ড - ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে

দশম খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও কমল কুটীরে শ্রীযুক্ত কেশবচন্দ্র সেন

একাদশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-কালীমন্দিরে ভক্তসঙ্গে

দ্বাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে ভক্তসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ

ত্রয়োদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে প্রাণকৃষ্ণ, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

চতুর্দ্দশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ভক্তসঙ্গে ও কলিকাতায় চৈতন্যলীলা-দর্শন।

পঞ্চদশ খণ্ড - সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণ — দুর্গাপূজা দিবসে

ষোড়শ খণ্ড - রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

সপ্তদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে নবমীপূজা দিবসে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

অষ্টাদশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণের অধরের বাড়ি আগমন ও ভক্তসঙ্গে কীর্তনানন্দ

উনবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

বিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা মহানিশায় ভজনানন্দে- সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ

একবিংশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মারোয়াড়ী ভক্ত মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

দ্বাবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে পঞ্চবটীমূলে শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

ত্রয়োবিংশ খণ্ড - দোলযাত্রাদিবসে শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ভক্তসঙ্গে

চতুবিংশ খণ্ড - শ্রীরামকৃষ্ণের কলিকাতায় ভক্তমন্দিরে আগমন —শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষের বাটীতে উৎসব

পঞ্চবিংশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরে ভক্তসঙ্গে

ষড়বিংশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কাশীপুর বাগানে ভক্তসঙ্গে

সপ্তবিংশ খণ্ড - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে কাশীপুরের বাগানে

পরিশিষ্ট - ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তহৃদয়ে।


শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত (তৃতীয় ভাগ)

সূচিপত্র 

প্রথম খণ্ড - বিদ্যাসাগর ও ঠাকুর রামকৃষ্ণ 

দ্বিতীয় খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে মণি প্রভৃতি সঙ্গে 

তৃতীয় খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে মণি, বলরাম প্রভৃতি সঙ্গে 

চতুর্থ খণ্ড - অধর, ৺যদু মল্লিক ও ৺খেলাত ঘোষের বাটীতে 

পঞ্চম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে মণি প্রভৃতি সঙ্গে 

ষষ্ঠ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, হাজরা, মণি প্রভৃতি সঙ্গে 

সপ্তম খণ্ড - ঈশান মুখোপাধ্যায়ের বাটীতে ভক্তসঙ্গে 

অষ্টম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্র, সুরেন্দ্র, ত্রৈলােক্য প্রভৃতি সঙ্গে 

নবম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে পণ্ডিত শশধর প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে ।

দশম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে অধর, বিজয়, মণি প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

একাদশ খণ্ড - প্রহলাদচরিত্রাভিনয় দর্শনে বাবুরাম,মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

দ্বাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে বাবুরাম, ছােট নরেন, মাষ্টার,পলটু, তারক প্রভৃতি(সম্ভবামি যুগে যুগে’) 

ত্রয়ােদশ খণ্ড - অন্তরঙ্গ সঙ্গে বলরাম মন্দিরে ও দেবেন্দ্রের বাটীতে

চতুর্দশ খণ্ড - বলরাম মন্দিরে গিরিশ, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

পঞ্চদশ খণ্ড - বলরাম মন্দিরে নরেন্দ্র, ভবনাথ, গিরিশ প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

যােড়শ খণ্ড - ভক্তসঙ্গে ভক্তমন্দিরে, রামের বাটীতে 

সপ্তদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে দ্বিজ, পণ্ডিতজী, মাষ্টার, কাপ্তেন, ত্রৈলােক্য, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

অষ্টাদশ খণ্ড - কলিকাতায় শ্রীনন্দ বসু প্রভৃতির বাটীতে 

উনবিংশ খণ্ড - শোকাতুরা ব্রাহ্মণীর বাটীতে ভক্তসঙ্গে 

বিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুর বাটীতে সুরেন্দ্র, মণি,ডাঃ সরকার, গিরিশ প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

একবিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুর বাটীতে ডাঃ সরকার, নরেন্দ্র, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

দ্বাবিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুরে কালীপূজা দিবসে ভক্তসঙ্গে 

ত্রয়ােবিংশ খণ্ড - কাশীপুর বাগানে নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে 

চতুর্বিংশ খণ্ড - কাশীপুরে নরেন্দ্র, রাখাল প্রভৃতি সঙ্গে (এর ভিতর থেকে যা কিছু ) 

পঞ্চবিংশ খণ্ড - কাশীপুর বাগানে নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে (বুদ্ধদেবতত্ব) 

ষড়বিংশ খণ্ড - কাশীপুর বাগানে শশী, রাখাল, সুরেন্দ্র প্রভৃতি সঙ্গে 

পরিশিষ্ট - বরাহনগর মঠ, নরেন্দ্রাদি ভক্তগণ।


শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত (চতুর্থ ভাগ )

সূচিপত্র 

প্রথম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, প্রাণকৃষ্ণ প্রভৃতি সঙ্গে 

দ্বিতীয় খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, রাম নিত্যগােপাজা প্রভৃতি সঙ্গে 

তৃতীয় খণ্ড - বলরাম মন্দিরে নরেন্দ্র, রাখাল, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

চতুর্থ খণ্ড - নন্দনবাগান ব্রাহ্মসমাজে রাখাল, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

পঞ্চম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর রাখাল, রাম, তারক প্রভৃতি সঙ্গে 

ষষ্ঠ খণ্ড - পেনেটীর মহােৎসবে রাখাল, রাম, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

সপ্তম খণ্ড - দক্ষিণেশ্নরে রাখাল, মাষ্টার, লাটু প্রভৃতি সঙ্গে 

অষ্টম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভক্তসঙ্গে 

নবম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, রাম, কেদার প্রভৃতি সঙ্গে 

দশম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, লাটু, মাষ্টার, মহিমা প্রভৃতি সঙ্গে 

একাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখা, মাষ্টার, মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে 

দ্বাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, রাম. নিত্য, অধর প্রভৃতি সঙ্গে 

এয়ােদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে জন্মােৎসবদিবসে বিজয় কেদার, সুরেন্দ্র প্রভৃতি সঙ্গে 

চতুর্দশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে সুরেন্দ্র, ভবনাথ, রাখাল, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

পঞ্চদশ খণ্ড - বলরামমন্দিরে মাষ্টার, বলরাম, শশধর প্রভৃতি সঙ্গে 

ষােড়শ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, মাষ্টার, লাটু, শিবপুরের ভক্তগণ প্রভৃতি সঙ্গে 

সপ্তদশ খণ্ড - অধরের বাটীতে নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে 

অষ্টাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাম, বাবুরাম, অধর প্রভাত সঙ্গে 

ঊনবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বয়ে নরেন্দ্র, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে 

বিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে মহেন্দ্র, রাধিকা গােস্বামী প্রভৃতি সঙ্গে 

একবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে লাটু, মাষ্টার মণিলাল, মুখুয্যে প্রভৃতি সঙ্গে 

দ্বাবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে বাবুরাম, মাষ্টার, নীল কণ্ঠ, মনােমোহন প্রভৃতি সঙ্গে 

ত্ৰয়ােবিংশ খণ্ড - বলরাম মন্দিরে নরেন্দ্র, নারাণাদি সঙ্গে 

চতুবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, মাষ্টার, মহিমাচরণ প্রভৃতি সঙ্গে 

পঞ্চবিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, পণ্ডিত শ্যামাপদ প্রভৃতি সঙ্গে 

ষড়বিংশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে জন্মাষ্টমী দিবসে নরেন্দ্রাদি প্রভৃতি সঙ্গে 

সপ্তবিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুরে ডাক্তার সরকার, নরেন্দ্র, শশী, মাষ্টার, গিরিশ, শরৎ প্রভৃতি সঙ্গে 

অষ্টবিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুরে ডাকার সরকার, নরেন্দ্র প্রভৃতি সঙ্গে 

ঊনত্রিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুরে নরেন্দ্র, মণি প্রভৃতি সঙ্গে 

ত্রিংশ খণ্ড - শ্যামপুকুরে মিশ্র, হরিবল্লভ, নরেন্দ্র প্রভৃতি সঙ্গে 

একত্রিংশৎ খণ্ড - কাশীপুর উদ্যানে নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

দ্বাত্রিংশৎ খণ্ড - কাশীপুর উদ্যানে নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

ত্রয়ত্রিংশৎ খণ্ড - কাশীপুর উদ্যানে নরেন্দ্র, লাটু প্রভৃতি সঙ্গে 

বরাহনগর মঠ - নরেন্দ্র, রাখাল প্রভৃতি মঠের ভাইদের ৺ শিবরাত্রি ব্রত


শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত (পঞ্চম ভাগ)

সূচিপত্র 

প্রথম খণ্ড - বলরাম মন্দিরে রাখাল, নিত্যগোপাল, বলরাম প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে , প্রাণকৃষ্ণের বাটীতে মহােৎসব। রাম, কেদার, মনোমোহন প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে ,কমলকুটীর-কেশব, সমাধ্যায়ী, ত্রৈলােক্য প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

দ্বিতীয় খণ্ড - দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে—রাম, মনােমোহন, রাখাল, সুরেন্দ্র, মাষ্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে,শ্যামপুকুর বিদ্যাসাগর স্কুলে ; গড়ের মাঠে সার্কাস দর্শন—পরে বলরামের বাটী-বলরাম, মাষ্টার প্রভৃতি সঙ্গে ,গরাণহাটায় ষড়ভুজ দর্শন ; রাজমােহনের বাড়ি , মনােমােহনের বাড়ি হইয়া সুরেন্দ্রের বাড়ি সুরেন্দ্র, মাষ্টার, সদরওয়াল সঙ্গে 

তৃতীয় খণ্ড - সিন্দুরিয়া পটীতে মণি মল্লিকের ব্রহ্মোৎসবে—বিজয়, মণিলাল, মাষ্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে,দক্ষিণেশ্বরে রাম, মাষ্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

চতুর্থ খণ্ড - বেলঘরে গােবিন্দ মুখুয্যের বাড়ি—মহােৎসব,দক্ষিণেশ্বরে রাখাল, মাষ্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

পঞ্চম খণ্ড - সিঁথির বাগানে মহোৎসব,কাসারি পাড় হরিভক্তি-প্রদায়িনী সভায়,দক্ষিণেশ্বরে—মাষ্টার, মনােহর সাঁই, গােস্বামী সঙ্গে

ষষ্ঠ খণ্ড - কলিকাতায় বলরাম ও অধরের বাড়ি—সঙ্কীৰ্ত্তনানন্দে, দক্ষিণেশ্বর, মন্দিরে-রাখাল, মাষ্টার, কিশােরী প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

সপ্তম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে—অধর, মাষ্টার, রামলাল প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে,বলরামের বাটী—মাষ্টারাদি ভক্তসঙ্গে,দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে—রাখাল, লাটু, কিশােরী প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে,বলরাম মন্দিরে ও পরে অধরের বাড়ি 

অষ্টম খণ্ড - অধরের বাড়ি—ঈশান, রাখাল প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

নবম খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে—রাখাল, হাজরা প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

দশম খণ্ড - অধরের বাড়ি—দুর্গাপূজা মহােৎসবে ভক্তসঙ্গে ।

একাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে-রাখাল, মাষ্টার, ঈশান, কিশােরী প্রভূতি ভক্তসঙ্গে 

দ্বাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে—রাখাল, মাষ্টার, ঈশান, কিশােরী প্রভৃতি ভক্ত সঙ্গে 

ত্রয়ােদশ খণ্ড - রামচন্দ্রের কাকুড়গাছির বাগানে ও সুরেন্দ্রের বাগানে শ্রীরামকৃষ্ণের আগমন,দক্ষিণেশ্বরে—রাখাল, মাষ্টার, লাটু প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

চতুর্দশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে—মাষ্টার, বলরাম, রাখাল প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে 

পঞ্চদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে-ফল হারিণী পূজা দিবসে 

ষােড়শ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে-- জন্মোৎসব দিবসে 

সপ্তদশ খণ্ড - গিরিশ-মন্দিরে ও পরে স্টার থিয়েটারে 

অষ্টাদশ খণ্ড - দক্ষিণেশ্বরে—মেনাবলম্বী শ্রীরামকৃষ্ণ 

পরিশিষ্ট - শ্রীরামকৃষ্ণ ও নরেন্দ্র 

পরিশিষ্ট (ক) শ্রীরামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম 

পরিশিষ্ট (খ) শ্রীরামকৃষ্ণ কেশবের সহিত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে 

পরিশিষ্ট (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ সুরেন্দ্রের বাটীতে 

পরিশিষ্ট (ঘ) শ্রীরামকৃষ্ণ মনােমােহন মন্দিরে 

পরিশিষ্ট (ঙ) শ্রীরামকৃষ্ণ রাজেন্দ্র মিতের বাটীতে 

পরিশিষ্ট (চ) শ্রীরামকৃষ্ণ জ্ঞান চৌধুরীর বাড়িতে ব্রহ্মোৎসবে । 

বিশেষত্ব :

গ্রন্থকার ছদ্মনামের অন্তরালে নিজ ব্যক্তিত্বকে অবলুপ্ত করে পরমহংসদেবের জীবন ও চরিতকথা অসামান্য নৈপুণ্যের সাথে তুলে ধরেছেন।


ভক্তের উদ্দেশে শ্রী শ্রী মা (Sri Maa Sarada) চিঠিতে লিখেছিলেন, "তাঁহার নিকট যাহা শুনিয়াছিলে সেই কথাই সত্য। ইহাতে তোমার কোন ভয় নাই। একসময় তিনিই তোমার কাছে ওই সকল কথা রাখিয়াছিলেন। এক্ষণে আবশ্যকমত তিনিই (Sri Ramkrishna) প্রকাশ করাইতেছেন। ওই সকল কথা ব্যক্ত না করিলে লোকের চৈতন্য হইবে নাই জানিবে। তোমার নিকট যে সমস্ত তাঁহার কথা আছে তাহা সবই সত্য। আমি একদিন তোমার মুখে শুনিয়া আমার বোধ হইল যে, তিনিই ওই সমস্ত কথা বলিতেছেন।"



"আমি ও আমার এই দুটি অজ্ঞান। ‘আমার বাড়ি’, ‘আমার টাকা’, ‘আমার বিদ্যা’, ‘আমার এই সব ঐশ্বর্য’ — এই যে-ভাব এটি অজ্ঞান থেকে হয়। ‘হে ঈশ্বর, তুমি কর্তা আর এ-সব তোমার জিনিস — বাড়ি, পরিবার, ছেলেপুলে, লোকজন, বন্ধু-বান্ধব — এ-সব তোমার জিনিস’ — এ-ভাব থেকে জ্ঞান হয়।"


মৃত্যুকে সর্বদা মনে রাখা উচিত। মরবার পর কিছুই থাকবে না। এখানে কতকগুলি কর্ম করতে আসা। যেমন পাড়াগাঁয়ে বাড়ি — কলকাতায় কর্ম করতে আসা। বড় মানুষের বাগানের সরকার, বাগান যদি কেউ দেখতে আসে, তা বলে ‘এ-বাগানটি আমাদের’, ‘এ-পুকুর আমাদের পুকুর’। কিন্তু কোন দোষ দেখে বাবু যদি ছাড়িয়ে দেয়, আর আমের সিন্দুকটা লয়ে যাবার যোগ্যতা থাকে না; দারোয়ানকে দিয়ে সিন্দুকটা পাঠিয়ে দেয়। (হাস্য)


“ভগবান দুই কথায় হাসেন। কবিরাজ যখন রোগীর মাকে বলে, ‘মা! ভয় কি? আমি তোমার ছেলেকে ভাল করে দিব’ — তখন একবার হাসেন; এই বলে হাসেন, আমি মারছি, আর এ কিনা বলে আমি বাঁচাব! কবিরাজ ভাবছে, আমি কর্তা, ঈশ্বর যে কর্তা — এ-কথা ভুলে গেছে। তারপর যখন দুই ভাই দড়ি ফেলে জায়গা ভাগ করে, আর বলে ‘এদিকটা আমার, ওদিকটা তোমার’, তখন ঈশ্বর আর-একবার হাসেন, এই মনে করে হাসেন; আমার জগদ্ব্রহ্মাণ্ড, কিন্তু ওরা বলছে, ‘এ-জায়গা আমার আর তোমার’।”

বিশ্বাস আর ভক্তি চাই — বিশ্বাসের কত জোর শুনঃ একজন লঙ্কা থেকে সমুদ্র পার হবে, বিভীষণ বললে, এই জিনিসটি কাপড়ের খুঁটে বেঁধে লও। তাহলে নির্বিঘ্নে চলে যাবে; জলের উপর দিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু খুলে দেখো না; খুলে দেখতে গেলেই ডুবে যাবে। সে লোকটা সমুদ্রের উপর দিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিল। বিশ্বাসের এমন জোর। খানিক পথ গিয়ে ভাবছে, বিভীষণ এমন কি জিনিস বেঁধে দিলেন যে, জলের উপর দিয়ে চলে যেতে পাচ্ছি? এই বলে কাপড়ের খুঁটটি খুলে দেখে, যে শুধু ‘রাম’ নাম লেখা একটি পাতা রয়েছে। তখন সে ভাবলে, এঃ, এই জিনিস! ভাবাও যা, অমনি ডুবে যাওয়া।

“কথায় বলে হনুমানের রামনামে এত বিশ্বাস যে, বিশ্বাসের গুণে ‘সাগর লঙ্ঘন’ করলে! কিন্তু স্বয়ং রামের সাগর বাঁধতে হল!

“যদি তাঁতে বিশ্বাস থাকে, তাহলে পাপই করুক, আর মহাপাতকই করুক, কিছুতেই ভয় নাই।”



Tuesday, 12 July 2022

শুভ প্রয়াণ দিবস। বিশিষ্ট সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী। Vol -794. Dt -13.07.2022. ২৬ আষাঢ়,১৪২৯. The blogger in literature e-magazine



আশাপূর্ণা দেবী 


১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই আশাপূর্ণা দেবীর মৃত্যু হয়৷।

আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কারসহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। বিশ্বভারতীর শ্রেষ্ঠ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ থেকে অজস্র সম্মানিক ডক্টরেট আর সোনার মেডেল পেয়েছেন তিনি৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৬৬ সালে ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসের জন্য তাঁকে প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার । ১৯৫৪ সালে তিনি ‘লীনা পুরস্কার’ পান৷ ১৯৬৩ সালে ‘ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন ৷ ১৯৭৬ সালে তিনি ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ পেয়েছেন এবং একই বছর তিনি ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত হন৷ ১৯৭৪ সালে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করেন। 



১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার পটলডাঙ্গায় মামাবাড়িতে আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, তখনকার বিখ্যাত বাংলা পত্রিকাগুলিতে তিনি ছবি আঁকতেন। তৎকালীন বিখ্যাত সি. ল্যাজারাস কোম্পানিতে নক্‌শা আঁকার কাজ করতেন তাঁর বাবা। মা সরলাসুন্দরী দেবীর কাছে সাহিত্যপাঠই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র উপভোগ্য। তিনি ছিলেন স্বনামধন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জ্ঞানপ্রকাশ লাইব্রেরি ও চৈতন্য লাইব্রেরির সদস্যা। আশাপূর্ণা দেবী তাঁর বাবা-মায়ের নয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান ছিলেন। তাঁর চার বোন যথাক্রমে স্নেহলতা, রত্নমালা, সম্পূর্ণা ও লেখা এবং চার ভাই যথাক্রমে বীরেন্দ্রনাথ, ধীরেন্দ্রনাথ, হীরেন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথ। আশাপূর্ণার আদি বাড়ি ছিল হুগলির বেগমপুরে। তবে কলকাতায় তাঁরা থাকতেন আপার সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে। ১৯২৪ সালে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয়৷ তাঁদের তিন সন্তান যথাক্রমে পুষ্পরেণু, প্রশান্ত ও সুশান্ত।

আশাপূর্ণা দেবীর পড়াশোনা প্রথাগতভাবে এগোয়নি। আশাপূর্ণা একটি দিনের জন্যও কোন ইস্কুলে পড়েন নি। তার নিজের কথায়,- "আমাদের বাড়ি খুব রক্ষণশীল ছিল। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পাট ছিল না। স্কুলে যাওয়ার সুযােগ হয়নি। তবে পড়েছি সর্বদাই। সেই পড়াটি বাড়িতে এবং শুধুই গল্প উপন্যাস।" তাঁর এই সাহিত্যপ্রীতির ব্যাপারে মায়ের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। কেননা আশাপূর্ণার মায়ের ছিল ভীষণ সাহিত্যপ্রীতি। তখনকার দিনে প্রকাশিত সমস্ত গ্রন্থাবলীই তাঁর ছিল এবং প্রতিনিধি-স্থানীয় সমস্ত পত্রিকাও তার বাড়িতে আসত। অতএব আশাপূর্ণা মায়ের দৌলতেই পেয়ে যেতেন অফুরন্ত মনের খােরাক।

তাঁর ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর কঠোর অনুশাসনে পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনার পথ বন্ধ ছিল। পড়াশোনা করলে মেয়েরা বাচাল হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁর ঠাকুরমা কোনোদিন নারীশিক্ষাকে প্রশ্রয় দেননি এবং তাঁর দাপটের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষমতা পরিবারে আর কারো ছিলও না। তবুও এই পরিবেশেও মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে দাদাদের পড়া শুনে শুনে তিনি নানা পাঠ আয়ত্ত করেছিলেন। তাঁর মা সরলাসুন্দরী দেবী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সূত্রে ‘সাধনা’, ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘সবুজপত্র’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘বসুমতী’, ‘সাহিত্য’, ‘বালক’, ‘শিশুসাথী’, ‘সন্দেশ’ প্রভৃতি ষোলো-সতেরোটি পত্রিকা এবং দৈনিক পত্রিকা ‘হিতবাদী’ প্রভৃতি পত্রিকা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আশাপূর্ণা। তাছাড়াও বাড়িতে সেযুগের সমস্ত বিখ্যাত বইয়ের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। সাহিত্যের এই আবহেই মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই মায়ের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনা করেন আশাপূর্ণা দেবী।


সাহিত্য জগতে তাঁর পদার্পণ ১৯২২ সাল থেকে৷ তেরো কিংবা চোদ্দ বছর বয়সে তিনি ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় ‘বাইরের ডাক’ নামে একটি কবিতা পাঠান৷ এই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পরই তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ শুরু হয়৷ এটিই ছিল তাঁর লেখা প্রথম কবিতা। তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘পাশাপাশি’। ‘শিশুসাথী’র পাশাপাশি ‘মৌচাক’, ‘রংমশাল’, ‘খোকাখুকু’ ইত্যাদি সমস্ত পত্রিকায় তিনি লিখতে থাকেন। ‘খোকাখুকু’ পত্রিকায় একবার ‘স্নেহ’ বিষয়ে কবিতা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় যেখানে আশাপূর্ণা নিজে ‘স্নেহ’ নামে একটি কবিতা পাঠান। এই কবিতা লেখার জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। মন্মথ সান্যালের অনুরোধে শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম বড়োদের গল্প লেখেন তিনি। কমলা পাবলিশিং থেকে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘প্রেম ও প্রয়োজন’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। ‘কথাসাহিত্য’ পত্রিকার পক্ষ থেকে ধারাবাহিক উপন্যাস লেখার জন্য সুযোগ আসে তাঁর কাছে। এমনকি ‘মিত্র ও ঘোষ’ প্রকাশনা থেকে শ্রী ভানু রায় তাঁকে একটি বড় উপন্যাস লেখার অনুরোধ করেন। এই সব তাগিদেই তিনি লিখে ফেলেন যুগান্তকারী উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’। ১৯৬৪ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়। আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বিখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাসের প্রথম উপন্যাস এটিই। ১৯৬৫তে এই উপন্যাসটি রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হয়। তবে তাঁর প্রথম গ্রন্থ ছিল ‘ছোটঠাকুর্দার কাশীযাত্রা’ যা ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বৃন্দাবন ধর এণ্ড সন্স পাবলিশিং থেকে। এই বইটি আসলে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ছোটদের গল্পসমূহের সংকলন ছিল।

আশাপূর্ণা দেবীর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ১৭৬টি উপন্যাস। এছাড়াও ছোটগল্প সংকলন, ছোটদের বই সহ মোট তেষট্টিটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছিলেন তিনি। কবিতা, রম্য রচনা, স্মৃতিমূলক রচনায় তিনি পারদর্শিতার নিদর্শন রেখেছেন। তাঁর রচনার মধ্য দিয়ে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেগেছেন তিনি। ছোটো থেকে বড় যেকোনো বয়সের মানুষের মনেই তাঁর লেখা ছাপ ফেলেছে। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- প্রেম ও প্রয়োজন, মিত্তির বাড়ি, অগ্নিপরীক্ষা, যোগ বিয়োগ, ছাড়পত্র, নবজন্ম, সমুদ্র নীল আকাশের নীল, নদী দিকহারা, মেঘ পাহাড়, তিন ছন্দ, নির্জন পৃথিবী, কল্যাণী, শশীবাবুর সংসার প্রভৃতি। সমাজে মেয়েদের অবরোধ, বন্দীদশা ঘোচাতে তাঁর উদ্বেগ ছিল মাত্রাধিক। তিনি দেখেছেন সমাজে সর্বত্রই নারীর অনধিকারের অস্তিত্ব আর এই অনধিকারের প্রশ্ন থেকেই তিনি লেখেন ট্রিলজি — ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’ এবং সবশেষে ‘বকুলকথা’ যা আজও সমাদৃত। তিনটি যুগের চিত্র যেন তিনটি প্রজন্মের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে এই লেখাগুলিতে। আবার সর্বত্রই মেয়েদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি তিনি, ঠিক এবং ভুলের তফাতটুকু তুলে ধরেছেন তিনি৷ এক জায়গায় লিখছেন, ‘‘মেয়েরা সবের প্রতিই বড় বেশি আসক্ত। তুচ্ছ বস্তুর প্রতিও আসক্তি। আবার মানুষের প্রতিও এক ধরনের তীব্র আসক্তি। স্বামী-সন্তান এরা একান্তই ‘আমার হোক’। …যত দিন না তারা এই ‘আসক্তি’ ত্যাগ করতে পারবে, ততোদিন মুক্তি আসবে না।’’ তাঁর স্মৃতিকথামূলক রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার সাহিত্যচিন্তা’, প্রভৃতি।


তাঁর লেখা ছোটগল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ছিন্নমস্তা’ যেখানে নতুন যুবতী বউয়ের ছেলেকে ক্রমশ দখল করে নেওয়ার রাগে একমাত্র সন্তানের মৃত্যুকামনা করে বসে বিধবা মা জয়াবতী। আবার ‘স্থিরচিত্র’ গল্পটিতে বিমান দুর্ঘটনায় সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া একমাত্র ছেলের মৃত্যুসংবাদে শোকে পাথর মা ছেলের চিঠি পেয়ে যখন জানতে পারেন দুর্ঘটনায় চার হাত পায়ের তিনটিই সে হারিয়েছে, তখন তিনি অপরিচিত অদ্ভুত জীব হিসেবে তাঁকে কল্পনা করেন৷ এভাবেই তাঁর লেখা ‘কসাই’, ‘পদাতিক’, ‘ভয়’, ‘ইজিচেয়ার’ ইত্যাদি ছোটগল্পগুলিতে চেনা সম্পর্কের ওপরে সাঁটা অদৃশ্য মুখোশগুলো তিনি খুলে দিতে চেয়েছেন। ভারতের নানা প্রাদেশিক ভাষায় তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্পগুলি অনূদিত হয়েছে। হিন্দির পাশাপাশি ওড়িয়া, মালয়ালম, অসমিয়া, মারাঠি এবং ইংরেজিতেও তাঁর লেখার অনুবাদ হয়েছে। আশাপূর্ণা দেবীর লেখা সব থেকে বেশি অনূদিত উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ যা প্রথম ১৯৭২ সালে হিন্দিতে অনূদিত হয়। তাঁর ‘শশীবাবুর সংসার’, ‘যোগবিয়োগ’, ‘কল্যাণী’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘ছায়াসূর্য’, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘বকুল কথা’, ‘বলয়গ্রাস’ ইত্যাদি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। হিন্দিতে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ অবলম্বনে উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত ছবি ‘ছোটি সি মুলাকাত’। পরিসংখ্যানের বিচারে ১৭৯টি উপন্যাস, ৩২টি ছোটগল্প সংকলন, ৪৯টি ছোটদের বই লিখেছেন আশাপূর্ণা। এগুলির মধ্যে ১৬টি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, ৭টি উপন্যাসের নাট্যরূপ মঞ্চে উপস্থাপিত হয়েছে। অনুবাদের মধ্যে ৪৯টি উপন্যাস হিন্দিতে, ১টি অসমিয়ায়, ওড়িয়া ভাষায় ৪টি, মালয়ালম ভাষায় ৫টি এবং ইংরেজিতে ২টি উপন্যাসের অনুবাদ হয়েছে এখনও পর্যন্ত।   


সমালােচক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, "আমাদের সাহিত্যে ঐ ছন্দটিকে সর্বপ্রথম ধরিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পগুচ্ছের গল্পের মধ্যে। ... .. মনের এ্যালকেমি-গুণে চোখে দেখা, কানে শােনা সামান্যটুকু অসামান্য রূপ পরিগ্রহ করেছে। সেখানেই প্রতিভার প্রকাশ। আমরা যাকে পঞ্চেন্দ্রিয় বলি তার প্রত্যেকটিই অশেষজ্ঞানের উৎস। যাঁরা জাত লিখিয়ে, জাত শিল্পী, তাঁদের শিক্ষা একদিকে ইন্দ্রিয়গত, অপরদিকে হুদয়গত।..একথা আশাপূর্ণা দেবীর বেলায় যতখানি সত্য এমন সকলের বেলায় নয়।"

বাঙালী পাঠক সমাজে শরৎচন্দ্র এবং পরবর্তীকালে তারাশংকর এবং বিভূতিভূষণ যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিক কালে আশাপূর্ণা দেবী সেই জনপ্রিয়তার অধিকারিণী। বলা বাহুল্য জনপ্রিয়তাই সার্থকতার একমাত্র প্রমাণ নয়। জনপ্রিয়তার সঙ্গে উৎকর্ষ যুক্ত হলে তবেই সে জনপ্রিয়তা স্থায়িত্ব লাভ করে। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, রাজারাজড়ার জয়-পরাজয়, রাজত্বকাল, কর্মকাণ্ডের সন-তারিখের জটিলতায় প্রকৃত ইতিহাসের অনুসন্ধান নিষ্ফল। ঘরে বসে মানুষ যেখানে সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় নিত্যদিনের জীবন যাপন করছে সেখানেই মানুষের সত্যিকার ইতিহাস রচিত হচ্ছে। আমরা যাকে কথাসাহিত্য বলি তার উপকরণ সেই যথার্থ জীবনের ইতিহাস থেকেই সংগ্রহ করতে হয়।


আশাপূর্ণার ছােটোগল্পে সমাজই মুখ্য। সামাজিক নানা সংস্কারের অনর্থক অত্যাচারের দিকটি তিনি তুলে ধরেন তার গল্পে। যে নারীরা অত্যাচারিত হয়, তারা সংস্কার-মুক্ত নয়। সমাজশৃঙ্খলিত অবস্থাই তাদের বিনষ্টির কারণ হয়ে ওঠে। যেমন দেখি 'একটি মৃত্যু ও আরেকটি', 'পরাজিত হুদয়', 'কার্বন কপি' প্রভৃতি গল্পে। 'কার্বন কপি', গল্পে নির্জন প্রবাসগৃহে পুরােনাে প্রণয়ীর উপস্থিতিতে রাত্রিবাস অর্ণব হয় আধুনিকা উত্তর-ত্রিশ ডিভাের্সীর পক্ষে। 'পরাজিত হুদয়' গল্পে ধর্ষিতা সন্তানকে কোল নিতে সাহস পান না আধুনিক বাবা-মা। কিংবা 'বঞ্চক' গল্পে জামাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েও মা তরুণী কন্যাকে সংবাদ না দিয়ে তাকে উপহার দেন বিয়েবাড়ির একটি সন্ধ্যা। বাহ্যিক দিক থেকে আধুনিক হয়েও আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ যে এখনও পুরােনাে সংস্কারের সীমানা পেরােতে পারেনি, তার নানা দৃষ্টান্ত আশাপূর্ণা তুলে ধরেন কখনাে কৌতুকে, কখনাে নির্মমতার সঙ্গে 'সবদিক বজায় রেখে’, ‘বে-আ’, ‘স্বর্গের টিকিট', 'বড় রাস্তা হারিয়ে', 'ঘূর্ণমান পৃথিবী' প্রভৃতি গল্পে। আশাপূর্ণা দেবীর ছোট গল্প সম্পর্কে সাম্প্রতিক কালের কথাসাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন মন্তব্য করেছেন— "বড়াে কথা ছােটো করে বলায় তিনি ওস্তাদ, মনুষ্যজীবনের বড় বড়াে ধাক্কাগুলিকে ছােটোগল্পের ছােটো পরিসরের মধ্যে ধরে ফেলায় তার অনায়াস নৈপুণ্য।"



=={{{{{{{{{{{((({∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}})}}}=====


 

Monday, 11 July 2022

পত্র পত্রিকা সম্বাদ। নবযুগ। ১৯২০ এর ১২ জুলাই। Vol -793. Dt -12.07.2022. ২৬ আষাঢ়,১৪২৯ . মঙ্গলবার। The blogger in literature e-magazine.

নবযুগ 

সে সময়ে সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতা ছিল না। তা সত্তেও নজরুলের সংবাদ তৈরির কাজ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং নজরুলের সংবাদ লেখন এবং শিরোনামের গুণে পত্রিকাটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

একটি সান্ধ্য-দৈনিক রাজনৈতিক পত্রিকা।

কাজী নজরুল ইসলাম ও রাজনীতিবিদ কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি নিজ অর্থে এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। তবে পত্রিকাটিতে সম্পাদকের নাম থাকার বদলে পরিচালকের নাম থাকতো।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের প্রথম দিকে, ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটস্থ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'র অফিসঘরে থাকতেন কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদ। এঁরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে নিজেদের মতো একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। সে সময়ে এঁদের প্রধান পরামর্শক ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী। এছাড়া সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী ও মঈনুদ্দীন হোসাইন-এর সাথে পরামর্শ করেছিলেন।

একই সময়ে ফজলুল হক তাঁর কৃষক-প্রজা পার্টি'র মুখপত্র হিসেবে একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা এই সময়ে ভাবছিলেন। ফজলুল হকের সমস্যা ছিল পত্রিকা পরিচালনা এবং লেখার জন্য উপযুক্ত লেখক। এই অবস্থায় তিনি- বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হকের শরণাপন্ন হন এবং ফজলুল হক তাঁর ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে মোজাম্মেল হককে ডেকে পাঠান। তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশের সম্পাদনা এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য উপযুক্ত লোকের অভাবের কথা বলেন। এই আলোচনায় মোজাম্মেল হক পত্রিকার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম, মুজাফ্ফর আহমদ-সহ আরও কিছু লোকের কথা বলেন। এরপর এঁদের সবাইকে নিয়ে ফজলুল হক একটি সভা ডাকেন।

ফজলুল হক তাঁর ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে নতুন পত্রিকার জন্য আলোচনা সভায় উপস্থিত হন কাজী নজরুল ইসলাম, মুজাফ্ফর আহমদ, মোজাম্মেল হক, নবনূর পত্রিকার প্রাক্তন ম্যানেজার উমেদ আলী মিয়া, নূর লাইব্রেরির মালিক মঈনুদ্দীন হোসাইন, সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী ও করুণা বাঁশদোহার। মোজাম্মেল হক ছাড়া বাকি ছয় জনকে সম্পাদক পদে নেওয়া হয়েছিল। এঁদের প্রত্যেকের বেতন নির্ধারিত হয়েছিল মাসিক ৬০ টাকা। এর ভিতরে ওয়াজিদ আলী'র নামে পত্রিকার ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছিল।

এই আলোচনা শেষে পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদকে। প্রথম পত্রিকার নাম নির্বাচন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। শেষপর্যন্ত নজরুলের প্রস্তাব অনুযায়ী পত্রিকার নাম রাখা হয় 'নবযুগ'।

এই পত্রিকা প্রকাশের জন্য তিনি একটি প্রেস কিনেছিলেন। তবে এই প্রেসটি পত্রিকা প্রকাশের উপযোগী ছিল না। তাই ফজলুল হক অনেক টাকা করে প্রেসটিকে পত্রিকা প্রকাশের উপযুক্ত করে তোলেন। এই সময় লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে এই পত্রিকার সংশ্রব ত্যাগ করেন। তবে তিনি তাঁর নামে পত্রিকার ছাড়পত্র গ্রহণে আপত্তি করেন নি।

পত্রিকা প্রকাশের বড় অসুবিধা ছিল সংবাদসমূহ পত্রিকার উপযোগী বাংলা ভাষায় লেখা। এরূপ লেখায় ফজলুল হক অভ্যস্ত ছিলেন না। এই সমস্যা অন্যান্য সম্পাদকদেরও ছিল। এই কারণে সে সময়ে সম্পাদকীয় লেখার জন্য সে সময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ভাবা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদের পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়েছিল। তবে সম্পাদক হিসেবে এঁদের নাম পত্রিকায় থাকতো না। কিন্তু প্রধান পরিচালক হিসেবে ফজলুল হকের নাম ছাপ হতো।

তবে এই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের লেখা সম্পাদকীয় সরকারে রুদ্র রোষে পড়ে। ভারতের স্বাধীনতা ও গণজাগরণ-বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হওয়ার জন্য, ব্রিটিশ সরকার পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সতর্ক করে দেয়। তারপরেও এই জাতীয় লেখা প্রকাশের কারণে, এক পর্যায়ে পত্রিকার জামানতের জন্য প্রদেয় ২,০০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২,০০০ টাকা জামানত দিয়ে নবযুগ পুনরায় প্রকাশিত হতে থাকে।

কিন্তু এর কিছুদিন পর ফজলুল হকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে এক বছরের মধ্যে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

এই পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়গুলো নজরুলের যুগবাণী নামক প্রবন্ধ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো-

আমাদের শক্তি স্থায়ী হয় না কেন?
উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন
কালা আদমিকে গুলি মারা
গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ
ছুতমার্গ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় শিক্ষা
ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ
ধর্মঘট
বাংলা সাহিত্যে মুসলমান
বাঙালির ব্যবসাদারি
ভাব ও কাজ
মুখ বন্ধ
মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?
রোজ কেয়ামত- বা প্রলয় দিন
লাট-প্রেমিক আলি ইমাম
লোকমান্য তিলকের মৃত্যুতে বেদনাতুর কলিকাতার দৃশ্য (স্মৃতি)
সত্য-শিক্ষা
শ্যাম রাখি না কুল রাখি

এর দুটি প্রবন্ধ দুটি 'বকুল পত্রিকা'য় প্রকাশিত হয়েছিল।
জাগরণী [বকুল পত্রিকা। আষাঢ় ১৩২৭]
নবযুগ [বকুল পত্রিকা। আষাঢ় ১৩২৭]



১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর উদ্যোগে এবং কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় পুনরায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে খুলনার মাওলানা আহমদ আলী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুবছর পত্রিকাটি চালু থাকার পর, ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

একবার ইরাকের রাজা ফয়সালকে নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল সেই সংবাদের শিরোনাম করেছিলেন,

‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরান সখা ফয়সুল হে আমার।’

=={{{{{{{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}}}}}===

Sunday, 10 July 2022

শুভ প্রয়াণ দিবস। ৪০এর বিশিষ্ট কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। Vol --793. dt -11.07.22. ২৫ শা আষাঢ় ১৪২৯. সোমবার। The bolgger in litareture e-magazine

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে  ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ শে জুলাই ৬৫ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।


"তুমি মাটির দিকে তাকাও প্রতীক্ষা করছে
তুমি মানুষের হাত ধরো সে কিছু বলতে চায়."

৪০ এর শক্তিমান কবি সমাজ ও সময়ের স্রোতে হাঁটতে হাঁটতে খুঁজে পেয়েছেন বাস্তবের পলি মাটি, নির্মাণ করেছেন অতি বিরল বিদ্রোহের প্রতিবাদের আক্রশের রোমান্টিকতার কবিতা- তথা তাঁর কাব্য ভুবন। গর্জে উঠেছেন ফুটপাতে ন্যাংটো ছেলেদের অনাহার ক্লিষ্ট অবস্থা দেখে আবার কখনো সহজাত জীবনকে ভালোবেসে রচনা করেছেন তিন পাহাড়ের স্বপ্ন কাব্যগ্রন্থ ।‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ভুখা  মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে প্রতিবাদে প্রতিসরে চিৎকার করে উঠেছেন জ্বলুক সহস্র চিতা এ পাড়ায় ও পাড়ায় আবার কখনো তিনি বলে উঠেছেন খাদ্য সংকটের হাহাকারে - ৭৬ এর মন্বন্তরের অবস্থা দেখে  - মুন্ডহীন ধড়গুলি আহ্লাদে চিৎকার করে। ধর্ম ও অধর্মের পাশা খেলায় মানুষের জীবন যখন বিপন্ন অসহায় ধর্মান্ধতার গলিতে মাথা খুঁড়ে মরে সাধারণ মানুষের বোধ বুদ্ধি জীবনচরিত তখনও কবি কে বলতে শুনি-  রাস্তা কারুর একার নয়।। অথচ ভারতবর্ষ তাদের এমনও কবি র স্লোগান  যেন মিছিলের মুখ হয়ে ওঠে । আবার কারুকার্যময় শিল্প ময়তায় কবির কাব্য ভাষা আঙ্গিক একটি নতুন মাত্রা এনে দেয়। যেখানে চল্লিশের দশকের কবিদের দুটো ধর্মই প্রধান -এক) সমাজ বাস্তবতা এবং দুই)  উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তিরিশের কবিদের প্রতি মন ও মেজাজ। মূলত কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সমাজ বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষ স্বদেশ ও মানবিকতাকে তার কাব্য কবিতায় প্রধান গুরুত্ব দিয়েছেন। আজীবন তিনি খুঁজে বেড়িয়েছেন সেইসব মানুষের সুখ দুঃখময় ইতিহাস বিশেষ করে শোষিত মানুষ অমল মানুষ স্রষ্টাশীল মানুষ তার কবিতায় জায়গা পেয়েছে নতুন মাত্রা নিয়ে। আবার তিনি রোমান্টিকতায় যেমন ভালোবেসে নারীকে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছেন তেমনি সহজাত প্রকৃতির অপূর্ব মায়ায় সাঁওতাল জীবনকে একাত্ম করে নিয়েছেন প্রকৃতিকে দেখেছেন তিনি কখনো আশ্রয় কখনো প্রতিরোধে কখনো সৌন্দর্য বোধে কখনো বিশ্বাসে আবার কখনো নির্জনতায়। এমনতর কবির আজ মহাপ্রয়াণ দিবস। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণ কমিটি দোসরা সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন যেমন সাড়ম্বরে পালন করেন আজকের দিনটিও ঘরোয়া ভাবে হলেও তারা পালন করেন বিশেষ করে জামাতা অমিত রায়। এবং ছোট কন্যা মিত্রা চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে অনেক গুণমুগ্ধ সহৃদয় পাঠক কবি বন্ধুরাও যুক্ত থাকেন। চট্টোপাধ্যায় একটা বিশেষ বাংলা সাহিত্যে ঘরা না এই ঘরানা মূলত মানুষের মূল্যবোধ ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সৃষ্টির মহিমায় গড়ে তোলে রচনার অমরাবতী। শুদ্ধ কবিতা গুলোর প্রতি একটু নজর দেব -

ন্যাংটো ছেলে আকাশ দেখছে

ঘর ফুটপাথ
আহার বাতাস,
ন্যাংটো ছেলেটা
দেখছে আকাশ ।

সেখানে এখন
টেক্কা সাহেব
বিবি ও গোলাম—
রাজ্যের তাস

সবাই ব্যস্ত ;
সবাই করছে
চাঁদ-সূর্য ও
তারাদের চাষ ;

সবাই চাইছে
রাজত্ব, আর
সবাই লিখেছে
দারুণ গল্প ।

সেই শুধু ফুট-
পাথের ন্যাংটো
ছেলে, তাই তার
বুদ্ধি অল্প—

দূর থেকে তাই
দেখেছে দৃশ্য,
দেখছে এবং
দিচ্ছে সাবাস!


রাস্তা কারও একার নয়

 ধর্ম যখন বিজ্ঞানকে বলে রাস্তা ছাড়াে!’ বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?

 পােপের ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। সারাদিন
 একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে পায়চারি করতেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই ;
 তাঁকে পাহাড়া দেবার জন্য বসে থাকতাে একজন ধর্মের পেয়াদা, যার
 চোখের পাতা বাতাসেও নড়তাে না।
 বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল? তীর্থের পাণ্ডাদের হই হই, তাদের লাল
 চোখ কি পেরেছিল পৃথিকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে, সূর্যকে
 তার চারদিকে ওঠবােস করাতে?
 ধর্ম যতদিন দুঃখী মানুষকে বেঁচে থাকার সাহস দেয়, ততদিন
 রাস্তা নিয়ে কারও সঙ্গে তার ঝগড়া থাকে না। রাস্তা কারও
 একার নয়।
 বরং তাকেই একদিন রাস্তা ছাড়তে হয়, যার স্পর্ধা আকাশ 
 ছুঁয়ে যায়।
 বিজ্ঞান যখন প্রেমের গান ভুলে ভাড়াটে জল্লাদের পােশাক গায়ে চাপায়, আর
 রাজনীতির বাদশারা পয়সা দিয়ে তার ইজ্জত কিনে নেয়,
 আর তার গলা থেকেও ধর্মের ষাঁড়েদের মতােই কর্কশ
 আদেশ শােনা যায় : ‘রাস্তা ছাড়াে! নইলে –
 পৃথিবীর কালাে সাদা হলুদ মানুষের গান, তাদের স্বপ্ন
 এক মুহূর্ত সেই চিঙ্কার শুনে থমকে তাকায়।

তারপর যার যেদিকে রাস্তা, সেদিকে মুখ করেই তারা সামনে, 
আরও সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
কেউ কারােকে রাস্তা ছেড়ে দেয় না, যতদিন এই পৃথিবীতে গান থাকে, 
গানের মানুষ থাকে, স্বপ্ন থাকে..



 ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে

যদি আমি সমস্ত জীবন ধ’রে
একটা বীজ মাটিতে পুঁততাম
একটা গাছ জন্মাতে পারতাম
যেই গাছ ফুল হয়, ছায়া দেয়
যার ফুলে প্রজাপতি আসে, যার ফলে পাখিদের
ক্ষুধা মেটে ;

ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে
যদি আমি মাটিকে জানতাম !

আশ্চর্য ভাতের গন্ধ রাত্রির আকাশে

আশ্চর্য ভাতের গন্ধ রাত্রির আকাশে
কারা যেন আজও ভাত রাঁধে
ভাত বাড়ে, ভাত খায়।

আর, আমরা সারা রাত জেগে থাকি
আশ্চর্য ভাতের গন্ধে
প্রার্থনায়, সারা রাত।








রচনা কর্ম :

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ ঘটে কবির বাইশ বছর বয়সে। কাব্যটির নাম 'গ্রহচ্যুত' (১৯৪২)। এরপর থেকে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলি কাব্য রচনা করেছেন। তাঁর কাব্যগুলির নাম যথাক্রমে- 'গ্রহচ্যুত' (১৯৪২), 'রাণুর জন্য' (১৯৫১), 'উলুখড়ের কবিতা' (১৯৫৪), 'মৃত্যুত্তীর্ণ' (১৯৫৫), 'লখিন্দর' (১৯৫৩), 'জাতক' (১৯৫৮), 'তিন পাহাড়ের স্বপ্ন' (১৯৬৩), 'সভা ভেঙে গেলে' (১৯৬৪), 'মুখে যদি রক্ত ওঠে' (১৯৬৪), 'ভিসা অফিসের সামনে', 'মহাদেবের দুয়ার' (১৯৬৭), 'ওরা যতই চক্ষু রাঙায়' (১৯৬৮), 'নভেম্বর-ডিসেম্বরের কবিতা' (১৯৬৮), 'মানুষের মুখ’ (১৯৬৯), 'শ্রেষ্ঠ কবিতা' (১৯৭০), 'মুণ্ডহীন ধড়গুলি আহ্লাদে চিৎকার করে' (১৯৭১), 'আমার রাজা হওয়ার স্পর্ধা' (১৯৭২), 'রাস্তায় যে হেঁটে যায়' (১৯৭২), 'মানুষ-খেকো বাঘেরা লাফায়' (১৯৭৩), 'এই জন্ম, জন্মভূমি', 'জ্বলুক সহস্র চিতা অহােরাত্র এপাড়া ও-পাড়ায়' (১৯৭৩), 'ভিয়েৎনাম ও ভারতবর্ষ' (১৯৭৪), 'বাহবা সময় তাের সার্কাসের খেলা' (১৯৭৪), 'পৃথিবী ঘুরছে' (১৯৭৫), 'শীত বসন্তের গল্প' (১৯৭৬), 'বেঁচে থাকার কবিতা' (১৯৭৭), 'ন্যাংটো ছেলের সূর্য নেই' (১৯৭৭), 'সায়েরী' (১৯৮০) 'ন্যাংটো ছেলে আকাশ দেখছে’ (১৯৭৮), 'নীলকমল-লালকমল' (১৯৭৮), 'দিবস রজনীর কবিতা' (১৯৭৮), 'আমাদের ইতিহাসের স্যার এবং তাপ্পি আর ওভারকোটের গান' (১৯৭৮), 'আমার কবিতা' (১৯৮৫), 'অফুরন্ত জীবনের গান' (কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত, ১৯৮৬)।



জীবনে অনেক কবিতা রচনা করেছেন, কাব্যও প্রকাশিত হয়েছে অনেক। কিন্তু সম্বর্ধনা ও পুরস্কার খুব বেশি জোটেনি। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তার শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। কবি তার কবিতার সম্ভার নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে তিনি হয়তাে পৌঁছুতে পারেননি-তবে এতে তার ক্ষোভ ছিল না। তিনি এজন্য দায়ী করেছেন স্বার্থপর মানুষদের সমাজব্যবস্থাকে—সাধারণ মানুষকে নয়।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় কবির বাইশ বছর বয়সে। তখনাে কবির কাব্য-প্রতিভার সম্যক বিকাশ ঘটেনি। কবির প্রথমদিকের রচনাগুলিতে কবি বিষ্ণু দের প্রভাব লক্ষ করা যায়। কবি নিজেও একাধিক প্রসঙ্গে কবি বিষ্ণু দের নিকট তার ঋণ স্বীকার করেছেন—তবে তিনি সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠেছেন ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'লখিন্দর' কাব্য থেকে। এই কাব্যে কবির কবি-প্রতিভার স্বাতন্ত্র্য সুস্পষ্টভাবে লক্ষিত হয়।



কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাস্তববাদী কবি ; বাস্তব জীবনের প্রতি আকর্ষণ তাকে কল্পনার জগতের দুরধিগম্যতা থেকে নামিয়ে এনেছে মাটির কাছাকাছি। তিনি প্রজাপতির পাখির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে অভিভূত হতে চাননি-তিনি মগ্ন হতে চেয়েছেন কৃষক-শ্রমিকের দারিদ্র লাঞ্ছিত কুটিরের উঠোনে জন্মানাে আগাছার রূপে। বিশ্বসংসারের নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা মানুষের জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়--কবি ছুটে চলেছে সেই বেদনা-খিল্প জীবনের রূপ আবিষ্কারে। তাই তাঁর কবিতায় বেদনার ছবি-হতাশার দীর্ঘশ্বাস। 



কবি মানুষের ব্যথা-বেদনার রূপকার ; তিনি তাঁর কবিতায় ব্যথার ছবি এঁকেছেন—ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত মনকে প্রবােধ দিয়েছেন। কিন্তু ব্যথা-বেদনার নিকট আত্মসমর্পণ করেননি। এবং গড়ে তুলতে চেয়েছেন নতুন আশার পৃথিবী। 'লখিন্দর' কাব্যের ‘বেহুলা' কবিতায় বেহুলার আশার পৃথিবীকে কবি তুলে ধরেছেন—



‘সে জাগবে। জাগবেই। আমি তাকে কোলে নিয়ে 

বসে আছি রক্ত-পুঁজে মাখামাখি রাত্রি

ভেলায় ভাসিয়ে।'



লখিন্দরের মৃতদেহ তাে আজকের পৃথিবীর আশাহত মানুষের রূপক—স্বার্থান্ধ মানুষের অত্যাচার-অবিচারে প্রাণ দিতে হয় যে লখিন্দরদের, তাকে বাঁচিয়ে আনতে হবে বেহুলাকে। বেহুলার বুকের আশায় কবি ভাষা দিয়েছেন—তাই কবি বীরেন্দ্র দুঃখবাদী হয়েও আশাবাদী।



কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরাণের নতুন মূল্যায়নের ওপর মাত্রা আরােপ করেছে। পুরাণ কাহিনির মধ্যে তিনি লক্ষ করেছেন জীবনের সনাতন সত্যকে ; সেই সত্যকে তিনি রূপায়িত করতে চেয়েছেন বর্তমান জীবনের পটভূমিকায়। তিনি আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করেননি ; জীবনের যন্ত্রণা ও তার উপশমের উপায়কে বিশ্বাস করেছেন। কবি তাই তার অধিকাংশ কবিতায় জীবনের যন্ত্রণাকে প্রতিফলিত করেছেন। 'লখিন্দর', 'জাতক' প্রভৃতি কাব্যে এই জীবনযন্ত্রণার রূপায়ণ ঘটেছে। সেইসঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে ব্যথাদীর্ণ মানুষের কাছে কবির আশা ও আকাঙ্কার বাণী যে বাণী মানুষকে আকৃষ্ট করবে ভবিষ্যতের স্বপ্নের পৃথিবীর কল্পনায়।

কবি সমকালীন জীবনের চিত্র অঙ্কন করেছেন ; এই চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন পৃথিবীর মানুষের ক্ষুধার রূপ। অগণিত মানুষের ক্ষুধার জ্বালা আজ পৃথিবীর বুকে হাহাকার ছড়িয়ে দিচ্ছে—ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে মানুষকে আজ যন্ত্রের শিকারে পরিণত হতে হয়। স্বার্থান্ধ ক্ষমতালােভী মানুষেরা গ্রাস করছে পৃথিবীর শাস্তির মাটি মানুষকে তারা টাকার বিনিময়ে পণ্যের মত কিনে নেয়। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উচ্চকণ্ঠে তাঁর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কবি যদিও জানেন, তাঁর এই প্রতিবাদ মদগর্বিত মানুষদের কানে গিয়ে পৌঁছবে না-তবু কবি বিশ্বাস করেন একদিন পৃথিবীতে নেমে আসবে শান্তির মন্দাকিনী। তবে তা সাধিত হবে ক্ষয়-মৃত্যু-ধ্বংসের মধ্য দিয়ে—জন্মান্তরের মধ্য দিয়ে সূচিত হবে নবজন্মের উন্মেষ।



পৃথিবীকে বড় বেশি ‘অবাক’ যেমন মনে হয়েছিল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের, তেমনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবনধারণ করে বেঁচে থাকাটাই কবি বীরেন্দ্রবাবুর কাছে ‘অদ্ভুত’ বলে মনে হয়। এ কারণেই কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রেমের প্রকাশভঙ্গি বদলে যায়, ছাপ পড়ে চারপাশের চলমান জীবনের ছবি—

মাঝে মাঝে মালটানা গাড়ির শব্দ,

কুকুরের কান্না!

তোমার রাতের ঘুমের পাশে আমার রাত্রি জাগরণ। 


অদ্ভুত এই পৃথিবীতে জীবনধারণ।



‘অকাল’ কবিতাতে কবি বীরেন্দ্র সময়-সঙ্কটকালের যে অবক্ষয়ের মূল্যবোধহীন সমাজের চালচিত্র তুলে এনেছেন তার জবাব নেই। বলতে কুণ্ঠা নেই এভাবে সমাজের ধ্বস্ত সময়ের ছবি তার মতোন সহজ-সরলভাবে তাঁর যুগে কোনো কবি অঙ্কন করেছেন কিনা সন্দেহ। শিক্ষকদের করুণ অবস্থার চিত্রণ তুলে ধরে কবি এ কবিতাটিতে সমাজের বিকৃত রূপটিকেই আমাদের কাছে স্পষ্ট করেছেন, আবার একইসঙ্গে কবি যেন মাতৃভূমির নাম-এ শপথের কথা ভুলে যাওয়ার জন্য নিজে যেমন নীরবে বেদনায় দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেছেন, তেমনি খোঁচাও দিয়েছেন গলিত সমাজব্যবস্থার বসবাসকারি আমাদের ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে।



“গ্রহচ্যুত” কাব্যগ্রন্থের ‘কেয়া ঝড়' কবিতাটিতে আবার লক্ষ্য করা যায় কবি এলিয়টের মতোন বন্ধ্যাসময়ের ছবি এঁকেছেন। কবিতাটিতে এসেছে এলিয়টীয় গন্ধ। কবি বীরেন্দ্র কিন্তু তার সমসাময়িক কবিদের মতোন শুধু বন্ধ্যাসময়ের জন্য হতাশায় নিমজ্জিত ও বিষাদগ্রস্ততায় আচ্ছন্নতায় কেবল একাকী আর বেদনার ছবি এঁকে কবি কলমকে দূষিত করেননি। এ কারণে তিনি বদলালেন নিজেকে, নিজের কবিমানসের অভিজ্ঞানকে। প্রাণের গতিপ্রবাহকে তিনি চলমান দেখতে পছন্দ করেন, জনজাগরণকেই তিনি তাঁর কবিতায় মুখ্য বিষয়বস্তু করে নেন।


 
গ্রহচ্যুত” কাব্যগ্রন্থের সমকালেই কবি এ কবিতাটি রচনা করেন। বসন্তকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যৌবনের দূত।' একথা মনে রেখেই কবি বীরেন্দ্র যাত্রা করেন যুগের অন্ধকার সরাতে যৌবনশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অগ্নিফুলিঙ্গের মতোন জ্বলে উঠতে। কবির আশাবাদের সুর এখানেই শোনা যায়। চারপাশের যান্ত্রিক ক্লিষ্ট নষ্ট সময়ের ধ্বস্ত ছবিগুলিয়ে সরিয়ে দিয়ে একক পাখির গান তাঁর কাছে নতুন গতিময় সময়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। কবি বীরেন্দ্র তাই কোনো ভণিতা না করেই তার মনের আশাবাদকে স্পষ্ট করতে ছাড়েন না এই কবিতাটির অপর কটি পংক্তিতে—

কানাকানি, দীর্ঘশ্বাস আর সতর্কতাকে এড়িয়ে

পাখির গান এগিয়েই চলেছে; 

অদ্ভুত মিষ্টি ওর সেই ডাক



যেন আহ্বান প্রিয়াকে”



'পৃথিবী ঘুরছে' (১৯৭৫) কাব্যে কবি পৃথিবীকে ক্ষুধার রুটি রূপে দেখেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাছে 'চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি', কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পৃথিবীটাও তেমনি গােল একখানা রুটি—যে রুটির জন্য মানুষ পাগল হয় ; সে রুটি কামড়ে খেতে চায় মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে অনাহারগ্রস্ত মানুষের দল। কবি বলেন—



'অনাহারে মৃত্যু নয়। অনাহারে মৃত্যু নয়।

কাল সারারাত তুমি

পৃথিবীকে ইচ্ছেমতাে কামড়ে ছিড়ে খেয়েছ।

সমস্ত রাত।

তার শান্তি...শান্তি!..শান্তি।'

অথবা,

'আমার ভারতবর্ষ চেনে না তাদের

মানে না তাদের পরােয়ানা ;

তার সন্তানেরা ক্ষুধায় জ্বালায়,

শীতে চারদিকে প্রচণ্ড মারের মধ্যে,

আরাে ঈশ্বরের শিশু, পরস্পরের সহােদর।'



কবি ষাটের দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের শরিক হয়েছেন—ফলে যাট ও সত্তরের দশকে রচিত অনেকগুলি কবিতায় তার রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় ধরা পড়েছে। রাজনৈতিক চেতনা বিষয়ক কবিতাগুলি কোথাও কোথাও উগ্র প্রচারধর্মী হয়ে উঠেছে- শাণিত বক্তব্যে ঋজু ও প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। কবির ভাব যখন প্রচারের বাহন হয়ে উঠতে চায়, তখন তার মধ্যে হৃদয়ধর্মিতার ভাটা পড়ে কবিতা হিসেবে তার আকর্ষণ কমে যায়। ইস্তাহারের ভাষা আর সাহিত্যের ভাষা কখনাে এক হয় না। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংগঠনের তাগিদে কখনাে প্রচারের কবিতা লিখেছেন ; কিন্তু সেগুলির রসগ্রাহিতা ক্ষুন্ন হয়েছে, সন্দেহ নেই। সেগুলি প্যাময্লেটের গুণ লাভ করেছে। রাজনৈতিক প্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর অনেক শ্রেষ্ঠ কবির কাব্য রচিত হয়েছে—কিন্তু প্রত্যয়কে কাব্যরূপ দেবার জন্য যে অনুভূতির রস নির্বেদ প্রয়ােজন, তা কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে অনুপস্থিত।



কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর অগ্রজ কবিদের ন্যায় এলিয়টকেই কাব্যগুরু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এলিয়ট মানুষের জীবনের রিক্তৃতার ছবি এঁকেছেন, Wasteland-এর প্রস্তরকঠিন রূপ মানুষের সমাজে দেখেছেন। তিনি তার চারপাশে দেখেছিলেন Hollow Man দের। এই Hollow Man-রা ফাপা বুলি দিয়ে মানুষকে ভােলাতে চায়মানুষকে শুষে নিতে চায়। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও তেমনি দেখেছেন তার চারপাশে স্বার্থান্ধ মানুষদের, যারা মিথ্যার ফাঁপা বুলি দিয়ে মানুষকে গ্রাস করতে চায়। কবি এঁদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করেছেনবিদ্রপের কশাঘাতে এঁদের জর্জরিত করতে চেয়েছেন। তাই কবি বীরেন্দ্রর অধিকাংশ কবিতায় বিদ্রপের ঝাজ, বেদনাহত জীবনের রূপ অঙ্কন করতে গিয়ে বিপকেই তিনি প্রধান হাতিয়ার করে নিয়েছেন।



বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার রূপশিল্প:
কবির বেশিরভাগ কবিতা স্বল্পাকৃতির একটি মুহূর্তের আবেগকে রূপায়িত করতে গিয়ে স্বল্পকথায় তাকে প্রকাশ করতে হয়েছে। অনেকগুলি কবিতা সনেটধর্মী ; অথচ সেগুলি সনেটের লক্ষণ বহন করে না। কেউ কেউ মনে করেন, অনেক সময় লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকের অনুরােধে তাকে ছােটো ছােটো কবিতা লিখতে হয়েছে। আবার অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার প্রয়ােজনে Pamphlet জাতীয় কাব্য রচনা করতে হয়েছে, তবে সেগুলিতে টুকরাে কথার চালচিত্র রচিত হলেও তার মধ্যে চিরকালের মানবহৃদয়ের ব্যথা-বেদনার সংগীত ও কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। জীবনসংগ্রামের ছবি এবং সমাজের অবক্ষয়ের রূপটি যেন তার এই শ্রেণির কবিতার ফ্রেমে ধরা আছে।



কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কিছু বড়া কবিতা আছে, আবার মাঝারি ধরনের কবিতা আছে। চিরকালের সমাজসমস্যার রূপ, মানুষের অন্তরজগতের রহস্য, পুরাণ কাহিনীর নবরূপায়ণ। প্রভৃতি মূলত এই শ্রেণির কবিতার উপজীব্য বিষয়। কিছু রাজনৈতিক কবিতাও ইস্তাহারের ভঙ্গিতে রচিত হয়েছে। তবে এই জাতীয় কবিতায় কবির ভাবপ্রকাশের স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশিত না। হলেও চিত্রকল্প সৃষ্টিতে তার নৈপুণ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন,—



"মনের সারস হাঁটে

মন্থর সন্ধ্যায় একাকী।"



তানপ্রধান ও ধ্বনিপ্রধান ছন্দেই তিনি তার বেশিরভাগ কবিতা রচনা করেছেন। কিছু ছােটো সাইজের কবিতায় শ্বাসাঘাতপ্রধান বা স্বরবৃত্ত ছন্দের প্রয়ােগ লক্ষিত হয়। লঘুচালের ছন্দ মূলত তিনি ব্যবহার করেছেন ব্যঙ্গের শাণিত তরবারির প্রয়ােজনে। এ-জাতীয় কবিতা যতটা শ্রতিমধুর, ততটা যে ভাবগভীর নয়, তা সহজেই বােঝা যায়।



সময়ের/গায়ে জ্বর/

ফাটা ভিজে/ছাই চাপা/ঠোট দুটি/চাটছে।

মনের সারস/তবু হাঁটছে



অক্ষরবৃত্ত ছন্দে কবির ভাবগাম্ভীর্য যেমন, প্রকাশভঙ্গিতে তেমনি অনবদ্যতা কোথাও কোথাও রস-সংবেদ্য হয়ে উঠেছে। চিন্তার গভীরতা কবির বাক্‌-প্রতিমাকে কত সহজ ও স্বচ্ছন্দ করেছে, তার উদাহরণ অনেকগুলি কবিতাতেই প্রকট। যেমন,—



'কত রাজ্য আসে যায় ইতিহাসে, ঈর্ষা আর দ্বেষ

আকাশ বিষাক্ত করে

জল কালাে করে, বাতাস ধোঁয়ায় কুয়াশায়

ক্রমে অন্ধকার হয়.....।'

অথবা,

'একটি পাখীর বাসা গড়ে তােলার মতাে সামান্য আশ্রয় 

একটি ঘাসের দাঁড়িয়ে থাকার মাটি

আজ আমাদের অতীত ইতিহাসের স্বপ্ন, ঠাকুরমার মুখের রূপকথা।'



কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় যতিচিহ্নের প্রয়ােগ অপেক্ষাকৃত কম ; আবেগপ্রবণ কবিতাগুলিতে কবির আবেগ ঝর্ণার মুক্তগতির মতাে ছুটে চলেছে বলেই যতিচিহ্ন দিয়ে তার গতিকে ব্যহত করতে চাননি কবি। কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের কবিতার ভঙ্গীতে যেন অনেকটা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
=========[[[[[[[[[[[[[[[[∆∆∆∆]]]]]]]]]]]]]]]=====


শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ।‌ একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। Dt -26.11.2024. Vol -1059. Tuesday. The blogger post in literary e magazine.

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়   (২৬ নভেম্বর ১৮৯০ — ২৯ মে ১৯৭৭)  একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ.  মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্...